এক টুকরো মেঘ পর্ব-০৮

0
509

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৮

ঠাস করে একটা চড় পড়লো আমার গায়ে।।গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আমি!! চোখ থেকে ২ ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ছে।। সামনের দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই।।

— কি মনে করিস তুই নিজেকে।। তোর এই বেশি বোঝার জন্য আজ আমার বোনের এই অবস্থা।। যে বোনের ভালোর জন্য আমি সব করতে পারি ।। আজ তাকে নাকি সিগারেটের ধোঁয়ায়।। ছিঃ ছিঃ,,আমি তোকে সোজাভাবে জানিয়ে দিচ্ছি,, আজকে পর থেকে আমার বোনের আসেপাশে যেন তোকে না দেখি আমি ।। কথাটা মাথায় থাকে যেন !!( আমার কাঁধে হাত দিয়ে জাঁকিয়ে কথাগুলো বললো)

আমাকে ছেড়ে দিয়ে পেছনে একবার তাকাতেই ছেলেগুলো ওখানে থেকে চলে গেল।। তারপর অরিশ ভাইয়া আরশির হাত ধরে বাইকে বসিয়ে স্টাট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।।
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।। কিভাবে পারলো আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে ।। আমি জানি ,, এখান থেকে বাড়িতে যেতে সর্বোচ্চ ২ মিনিট লাগবে।। তারপরও কেন ছেড়ে গেল।। ভুল তো সবাই করে তাই বলে।। একবার নিজের ক্ষত স্থানটার দিয়ে তাকিয়ে বাড়ির উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম।। নিজের এইক্ষতটার কথা না বলতেই তিনি যা রিয়েকশন দিলো ,, যদি বলতাম তাহলে হয়তো ঐ ছেলেগুলোর কাছেই আমাকে দিয়ে আসতো।।
বাড়ি থেকে সামান্য কিছুটা দূরত্বে ছোট একটা নদী।। যখন মন খারাপ হয় । কাউকে বলতে পারি না।। এমনকি আরশিকেও না তখন আমি নদীর তীরে এসে নিজের মনের সব কথাগুলো এখানে শেয়ার করে হালকা হই।। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।। নদী তীরে থাকা ঘাসগুলোর উপর বসে ,, নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে দিলাম।। চোখজোড়া বন্ধ করে নিলাম।।

____________

বাইক এসে বাড়ির সামনে থামতেই অরিশ হনহন করে ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।। কিন্তু আরশি এক ধ্যানে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে,, তরিনের আশার অপেক্ষায়।। কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসলো অরিশ,, তারপর আরশিকে বললো..

— কি হয়েছে তোর ভেতরে যা।। আর একবারও যদি ঋনির সাথে তোকে দেখি তাহলে তোরও খবর আছে ।।( চোখ গরম করে অরিশ)

— ভাইয়া প্লিজ এমন করো না।। আমি সত্যি বলছি আমি ওর সাথে আর কথা বলবো না।। শুধুমাত্র ,, আজকে একটু তরিনের পাশে থাকতে দাও ।। সিগারেটে ওর হয়তো অনেকটা জ্বলছে।।( করুন সুরে আরশি)

সিগারেটে জ্বলছে কথাটা শুনে অরিশ চরম অবাক হলো।। নিজের কৌতুহল মেটাতে আরশিকে প্রশ্ন করলো সে।।

— সিগারেটে জ্বলছে মানেটা কি আরু। কি হয়েছে ঋনির !!

— ওদের মধ্যে একজন তরিনের পেটে সিগারেট চেপে ধরেছিলো ।। ( নিচের দিকে তাকিয়ে আরশি)

আর কোনো কথাই কানে গেল না অরিশের ।। আরশিকে ওখানে রেখেই বেরিয়ে গেল সে।। যেখানে তরিনকে ফেলে চলে এসেছিলো আবার সেখানে গেল কিন্তু কোনো খবর পেল না।। ভয়ে যেন হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার ।। চারপাশটা খুঁজে যখন তরিনের দেখা মিললো না ,, তখন হতাশ হয়ে পড়লো সে।। হঠাৎ করেই মাথায় তার নদীর কথাটা আসতেই ।। ছুটে বেরিয়ে গেল সে।। নদীর তীরে একজনকে বসে থাকতে দেখে শান্তির দীর্ঘ শ্বাস নিলো সে।। এতক্ষন আটকে রাখা নিশ্বাস ছাড়ায় যেন প্রান ফিরে পেল সে।। আর দেরি না করে তরিনের পাশে বসে তরিনের কাঁধে হাত রাখলো সে।।

কারো হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে চোখ খুললাম আমি ।। পাশে তাকাতেই চমকে উঠলাম।। অরিশ ভাইয়া এখানে কি করছে ,, সেটাই ভাবছি আমি।। তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।। হঠাৎ করেই আমার পেটের কাছ থেকে শাড়িটা সরিয়ে হাত রাখলো সে।তার স্পর্শে কেঁপে উঠলাম।।।প্রথমে চমকে উঠলেও পড়ে বুঝতে পারলাম আরশি বলেছে ।। কিছু বলার আগেই আমার হাত দুটো ধরে টানতে টানতে নিয়ে বাইকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বাইকে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।। বাড়ির রাস্তা পেড়িয়ে চলছে ,, কোথায় যাচ্ছে ,,কিছুই বুঝতে পারছি না।।

— ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি আমরা ।। বাড়ি তো পেছনে ফেলে এসেছো।।

ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকাতেই চুপশে গেলাম আমি।। কিছুক্ষণ পর গাড়ি থামলো এসে একটা তিনটা ছেলের সামনে।। তাদের চিনতে বাকি রইলো না আমার।। ভাইয়া নেমেই আমার হাত ধরে ওদের সামনে নিয়ে গেল।। কি করতে চাইছে তিনি ,,কিছুই বুঝতে পারছি না।।

— গতবার মেয়েদের ইপ্টিজিং করার দায়ে তোকে তোদের কি অবস্থা করেছিলাম সব ভুলে গেছিস দেখছি।। আজ আবার আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।। তাকে স্পর্শ করেছিস ।। তোদের কি অবস্থা করবো আমি নিজেও জানিনা।।

বলেই এদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো তিনি।। সামনাসামনি এমন এক্সশন দেখা জীবনেও হয়নি আমার।। প্রথমবার দেখছি ।। ভাইয়া সবাইকে একের পর এককে মেরেই চলেছে।। আর আমি দাঁড়িয়ে সিটি দিচ্ছি।। কিন্তু বিপদ ঘটলো অন্যজায়গায় ।। ওদের মধ্যে একজন ভাইয়া দিকে রাস্তার কোনা থেকে ইট নিয়ে আসা দেখা ,, আমি চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে নিলাম।। সেই চোখজোড়া আর খুলতেই পারলাম না।। ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালাম।। তলিয়ে গেলাম অন্ধকার।।

🍁 🍁 🍁

নিজের পেটে কারো শিতল স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম আমি।। আমার সামনে অরিশ ভাইয়া বসা।।তিনি আমার ক্ষত স্থানে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে।। ভালোভাবে চারপাশটা খেয়াল করে দেখলাম ,, আমি এখন আমার রুমে শুয়ে আছি।। একটু আগের ঘটনা মনে পড়তেই উঠে বসে ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি।। আমি বলতে লাগলাম….

— ভাইয়া তোমার কিছু হয়নি তো।। কোথায় লেগেছে আমাকে বলো আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছি।।

তারপর ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে তাকে চেক করতে লাগলাম ।। তিনি আমার কাজগুলোতে অনেকটা বিরক্তি হচ্ছে,, আর না পেরে হাত দুটো ধরে জোরে জোরে বললো…

— বলছি তো আমার লাগেনি ।। তোর লেগেছে।। আমাকে আঘাত করতে দেখেই তুই সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলি ।। যদি কিছু হয়ে যেতে তাহলে যে কি হতো আল্লাহ মালুক।। আচ্ছা বাদ দে ..!! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একবার ছাদে আয় তো ।।

বলে উঠে যেতে নিলে আমি হাত ধরে বসিয়ে দিলাম।।
ভাইয়া বলা কথায় যেন শান্তি পেলাম।।

— বাড়ির কাউকে যে দেখছি না।। ওরা কোথায়??

— সবাই ঘুমিয়েছে।। আমি ফোন করে বলেছি,, তুই আমার সাথে আছিস ।। চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়তে ।। তাছাড়া এম্ভুলেন্স ফোন করে ওদের তুলে দিতে ,, তোকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে অনেক সময় লাগবে ,, ততক্ষণ কি সবাই জেগে থাকবে।। তার দরজা খোলাই ছিলো।। তাই সমস্যা হয় নি।। বুঝলি,, এবার ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় তো।।

বলেই একটু নিচু হয়ে আমার পেটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেলেন।। আমার তার স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের শাড়ির আঁচলটা মুচড়ে ধরে আছি।। চোখ মেলে ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পেলাম না।। তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা চেন্জ করে একটা টি শার্ট আর প্ল্যাজু পড়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।। তিনি এখন ছাদে বসে ,, পা জোড়া নাচাচ্ছেন।। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম।।

— কি এমন বলবে তুমি ,, যা রুমে বলা যেত না !! ( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— এমন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে এতো রাতে একঘরে থাকা ভালো দেখায় না তাই তোকে ছাদে আসতে বললাম।। ( অরিলের মাথাটা আমার কাঁধে রেখে আলতো জরিয়ে ধরে )

— ও আচ্ছা।।তাহলে বলো ,,কি বলবে।।

— ঋনি আমি জানি,, তুই আমাকে পছন্দ করিস !! ভালোবাসিস কিনা জানা না।। আর এটা তুই নিজেও জানিস না।। এটা হতে পারে তোর মোহ কিংবা আবেগ।।তুই সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে ভাবিস ,, যাতে তোর পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে।। আর ৪ দিন পর তোর ফাইনাল এক্সাম।। এমন করতে থাকলে তো তুই ফেলে করবি !! আমি চাই না,, তুই ফেল করিস।। ( নরম সুরে অরিশ)

— তার মানে তুমি বলতে চাইছো ,, তুমি আমাকে ভালোবাসি না।। কিন্তু সেদিন তো বললে ,, তুমি তৃনাকে ভালোবাসো না।। তাহলে কি আমি ধরে নিবো ।। তুমি মিথ্যা বলছিলে!!!(ভাইয়ার মাথার উপর মাথা রেখে)

— আমি একবারও বলিনি আমি তোকে ভালোবাসি কিংবা তৃনাকে ভালোবাসি।। তুই জানতে চাস ,, আমি কাকে ভালোবাসি ।। আগে তোর এইচএসসি এক্সাম শেষ হতে দে ।। তারপর ।।আর হে আজকে পর থেকে তোর সাথে আমার পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কথা হবে না ।।( আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)

— কিন্তু!!!

— কোনো কিন্তু না ।। এতোদিন তো অপেক্ষায় ছিলি পাড়বি না আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে!!(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অরিশ)

আমি নাড়ালাম , যার অর্থ হ্যা।। পারবো।। তারপর অরিশ ভাইয়া দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।। আজকের পর আর কথা হবে না,, ভাবতেই খারাপ লাগছে।। তাতে কি,, কিছুদিন পর তো হবে ।। এই ভেবে নিজেকে শান্ত করে ভাইয়ার বুকে মাথা রাখলাম।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই জুমজুম বৃষ্টি নেমে গেলে।। ভাইয়া আমাকে উঠতে বলছে আর ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বললাম….

চলবে…💞💞

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)