এক টুকরো মেঘ পর্ব-০৯

0
510

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৯

— আজ দু’জনে এই বৃষ্টির ধারায় ভিজে একে অপরের ভালোবাসায় রাঙাবো।। আমাদের এই সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষি হয়ে থাকবে ,, এই এক পশলা বৃষ্টি।।( একটু থেমে আবার) থামবে না তুমি আমার পাশে!!

— তুই কি একটুও আমার উপর রাগ করতে পারিস না।। আমি তোর সাথে কতো বাজে বিহেব করি ,,আর তুই তবুও আমার কাছে আছিস ।। আমার পাশে থাকতে চাস ।। আচ্ছা আমার ভেতরে এমন কি আছে ।। ( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অরিশ)

— কে বললো আমি তোমার উপর রাগ করতে পারি না।
সত্যি কথা কি জানো অরিশ ভাইয়া,,, আমি তোমার উপর রাগ করি ঠিকই ।। কিন্তু তোমার এই মুখটা দেখে যেন আমার সব রাগ ,, অভিমান,, অভিযোগ দূর হয়ে যায়।।

— যা আজকের পর থেকে আর কখনো তোর গায়ে হাত তুলবো না।। বকবো না ,, শান্ত ভাবে কথা বলবো !!

,– একটা কথা মনে রেখে কখনো যদি আবার তুমি আমার সাথে বাজে বিহের করো ,, তাহলে আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।। কখনো ফিরে আসবো না।।

— হম ,,ঠিক আছে।। তোর মনে আছে একটু আগে আমি কি বলেছিলাম ।।( কৌতূহল নিয়ে অরিশ)

— মনে আছে তুমি কি বলেছিলে ।। বলেছিলে তো কালকে থেকে যাতে তোমার সাথে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কথা না বলতে ,, আজকে বলতে তো বারন করো নি !!

— হে!! আমার তো বড্ড ভুল হয়ে গেছে।। আচ্ছা যা তোর ইচ্ছেতে ভিজতে পারমিশন দিলাম ।। তবে একটু সময় ,, নাহলে জ্বর চলে আসবে!! (আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অরিশ)

আমিও ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।। আস্তে আস্তে বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো।। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ভিজে একবারে কাক ভেজা হয়ে গেলাম।। ভাইয়ার মুখে পড়া পানি ,আমার মুখে পড়ছে।। দু’জনে একসাথে লেপ্টে আছি ,,একে অপরের শরীরের সাথে।। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে অন্যদিকে ফিরে বললেন…..

— যা এবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে নয়তো জ্বর চলে আসবে।।।

— আরেকটু ভিজি না ভাইয়া ।। আবার কবে না কবে তোমার সাথে ভিজবো,, এভাবে ভিজবো।। ( অরিশকে আমার দিকে ফিরিয়ে,, তার কাঁধে হাত রেখে )

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার তিনি একবারও আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না ,, দৃষ্টি তার আকাশের দিকে।। তাই জোর করে আমি,, তার মুখটা আমার দিকে ফিরিয়ে নিলাম।।আমি কিছু বলতে নিবো ,, আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিয়ে…..!!

— ঋনি প্লিজ তুই এখান থেকে চলে যা।। ( অরিশ আমার দিকে তাকিয়ে)

তার কেমন নেশাগ্ৰস্থ চাওনি ,, তার চাওনি অনুসরন করে নিজের দিকে তাকাতেই থমকে গেলাম আমি।। টি শার্ট আর প্ল্যাজু শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।। যা দিয়ে স্পষ্ট শরীরের প্রতিটি ভাজ দেখা যাচ্ছে।। তা দেখে আমি ভাইয়ার কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে ,, তার থেকে কিছুটা দূরে সরে এলাম।।

— ভাইয়া আমি রুমে গেলাম ,, তুমিও গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও ঠান্ডা লেগে যাবে ।।

বলেই পিছু হাঁটতে গিয়ে ,,ঠাস করে ছাদে পরে গেলাম।।
বৃষ্টির পানি‌ থাকার কারনে বেশি একটা ব্যাথা পেলাম না ।। সামনে তাকিয়ে দেখলাম ,, ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে হেসেই যাচ্ছে।। তাই তার পায়ে জোরে কিক করতেই তিনি পায়ে হাত দিলেন ।।এই ফাঁকে তার হাত ধরে ফেলে দিলাম।। ঘটনাচক্রে তিনি এসে আমার উপর পরলেন।। ভাইয়া চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,তা দেখে আমি হাসতে লাগলাম।।হুট করেই তিনি আমার হাতের আঙ্গুল ভাজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দিলেন।।
তক্ষনাথ আমার হাসি যেন উড়ে গেল।।আমি একটা একটা ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তাকালাম।। হঠাৎ তিনি আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলেন।।সাথে সাথে আমি চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলাম।।

___________

দেখতে দেখতে আমাদের এইচএসসি এক্সাম শেষ।। আজ,, একটু আগেই শেষ হলো।। প্রতিটা এক্সামই খুব ভালো হয়েছে।। এইকয়দিনে অরিশ ভাইয়ার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি আমার ।। এটা নয় যেন ইচ্ছে হতো না।। যখন খুব ইচ্ছে হলো।।তখন সেদিন ভাইয়ার সাথে কাটানোর দিনটার কথা মনে করতাম।। ভাইয়াও তার কথা রেখেছে,, আর আমাকে একদম বকে নি।। সারাদিন বই নিয়ে বয়ে থাকতাম আমি ।। একটাই লক্ষ্য ছিলো আমার,, আমার অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে ।। আর এক্সামের সময় আরশির সাথে আমার সিট পড়ে নি।। আমি এক ক্লাসে আর আরশি অন্যক্লাসে।।
এইকয়দিনে আরশির মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি আমি ।। কেন জানি আরশি আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ।। যতোবারই আমি ওদের বাড়িতে যেতাম , আরশিকে তখন কারো সাথে কথা বলতে দেখতাম।। কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলতো,, ওর নতুন ফ্রেন্ড।। তাই আমি আর কোনো প্রশ্ন করিনি।।

এখন আমি আরশির জন্য অপেক্ষা করছি ।। কোথাও দেখা পাচ্ছি না তার ।। হঠাৎ কোথা থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির হলো আমার সামনে….!!

— এইনে আমার ফাইল ।। তুই বাড়ি চলে যা।। আমার ফিরতে অনেক সময় লাগবে!? আর ভাইয়াকে বলিস,, আমি ফ্রেন্ডদের সাথে আছি !! ( ফাইলটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরশি)

— ভাইয়াকে বলবো মানে ?? কোথায় যাচ্ছে সেটা তো বলে যা!!!( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— সেটা ফিরে এসে বলবো !!!

বলেই এক দৌড় দিয়ে চলে গেল।। আমিও আর পেছন থেকে ডাকিনি ওকে ।। মেইন গেটের সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলাম ভাইয়া বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।। পড়নে ব্ল্যাক জিন্স,,ওয়াইট শার্ট।। গলায় আইডি কার্ড।। মাথায় হেলমেট পড়া,,যেটা একটু আগে হাতে নিয়েছে ,, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ ।। শার্টটা ঘামে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।। চোখে মুখে বিরক্তিকর একটা ভাব।। আমি এগিয়ে গিয়ে গায়ের হিজাবটা খুলে ভাইয়ার কপালের ঘাম মুছে দিলাম।। তিনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে ,, হাত থেকে হিজাবটা আরেকটু টেনে নিয়ে গলায় থাকা ঘামগুলোও মুছে নিলো।। আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বাইককে উঠে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরলাম।।

— আরুকে দেখছি না যে ।। ও কোথায়!! ( কৌতূহল নিয়ে অরিশ)

— আরু একটু ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুড়তে গেছে‌।। আমাকে তোমার সাথে বাড়ি চলে যেতে বলেছে ।।

— তুই গেলি নাযে!!(হেলমেটটা আমার হাতে দিয়ে অরিল)

— না গেল না।।কারন আরশি ছাড়া আমার আর কোনো ফ্রেন্ড নেই।। আর যদি থাকতো ,, তাহলেও আমি যেতাম না।। তোমার সাথে সময় কাটানোর চেয়ে আমার কাছে আর কিছুই বড় নয় !! (উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার গালে একটা চুমু দিয়ে)

— ভালোই হয়েছে,, আজ তোকে নিয়ে অনেক দূরের দেশে পাড়ি জমাবো আমি।। আজকে আবার তোর মাঝে হারাবো আমি ।। তাহলে যাওয়া যাক!!

ভাইয়া কথায় অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম আমি।। লজ্জা মাথাটা তার পিঠের সাথে ঠেকিয়ে দিলাম।। তারপর ভাইয়া বাইক চালাতে শুরু করলো।।
আজকে সূর্যটা যেন মাথার ঠিক উপরে অবস্থান করছে ।। গরমে একটু সময়ের মধ্যে আমিও যেন ঘেমে একাকার হয়ে গেছি।। গলাটাও যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।।
এখন একা বাইকে বসে আছি ।। একটু আগে আমাকে একা রেখে কোথাও একটা চলে গেছে।। যাওয়ার আগে আমার হাতে তার ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে গেছে,,আর আমাকে গেমস খেলতে বলেছে।।
হঠাৎ ফোনটা কেউ হাত থেকে নিয়ে গেছে,, তাকিয়ে দেখি,, অরিশ ভাইয়া।। ফোনটা পকেটে রেখে আমার হাতে একটা চাঠি আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো।। কাঠি আইসক্রিম আমার খুব ফ্রেবারেট ।। তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে পুরোটা মুখে পুরে নিলাম।। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাইক চালাতে মন দিলেন।।বাইক চালানোর কারনে মুখে থাকা আইসক্রিমটা খেতে পারছে না ।। তাই আমি নিজের আইসক্রিম টা শেষ করে ,, ভাইয়ার মুখ থেকে আইসক্রিম টা নিয়ে নিলাম।। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বাইক চালাতে লাগলেন।। আর আমিও নিজের হাতে আইসক্রিমটা তাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।।

প্রায় ৩ ঘন্টা ভাইয়ার সাথে বাইককে ঘুরে বাড়ি চলে এলাম।। এসেই শাওয়ার নিয়ে বেডে শুয়ে শুয়ে ভাইয়া কথা ভাবছি।।।মনের ভেতরে অনেক আনন্দ হচ্ছে।। আজকে আমি জানতে পারবো ,, ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কিনা ।।।

চলবে….💞💞