এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০১

0
475

গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০১
লেখা:- AL Mohammad Sourav

বৌমা কুরবানির ঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকী এখনও তোমার বাবার বাড়ী থেকে ছাগল পাঠায়নি! তুমি তোমার বাবাকে ফোন করে বলো একটু বড় আর মোটা তরতাঁজা দেখে ছাগলটা কিনে আগামীকালের মধ্যে যেনো পাঠিয়ে দেয়। কি বলেছি তুমি শুনেছো তো?
হ্যা মা আমি শুনেছি। আমি রাতে বাবার সাথে কথা বলবো।
রাতে কথা বলো আর এখন কথা বলো আগামীকালকের মধ্যে ছাগল আমাদের বাড়ীতে আসলেই হলো।
মা আমি বাবাকে বলবো আগামীকালের মধ্যে ছাগল কিনে পাঠাতে।
হ্যা তাই যেনো হয়। আর শুনো?
হ্যা মা বলেন?
তোমার বিয়ের সময় তোমার বাবার বাড়ী থেকে যে সকল আসবাপত্র দিয়েছে সেই সব একদম কমদামী আর সস্থা জিনিস পত্র দিয়েছে। এগুলা আমাদের সাথে একদম জায়না। তাও সৌরভের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি। এবার যদি তোমার বাবা ছোট মুটো রুগা সুগা ছাগল পাঠায় তাহলে কিন্তু আমি কিছুতেই মানবো না। তোমার বাবাকে বলো ছাগলটা যেনো মোটা তরতাজা দেখে কিনে।
মা আপনি তো জানেন আমাদের আর্থিক অবস্থা। তবে বাবা বলেছে ছয় সাত হাজার টাকার মধ্যে একটা ছাগল কিনে পাঠিয়ে দিবে। ঠিক তখনি আমার শ্বাশুড়ীমা রেগে মেগে আগুন হয়ে বলে।
তোমার বাবাকে বলবে বিশ হাজার টাকার নিচে যদি ছাগল কিনে পাঠায় তাহলে ছাগল তো ফেরত দিবো সাথে তোমাকেও ছাগলের সাথে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে দিবো। তুমি তোমার বাবাকে বলবে আমার শ্বাশুড়ী এই কথা বলেছে।
ঠিক আছে মা!
আর শুনো তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দেয় এসব কথা একদম সৌরভের কাছে বলবে না এমনিতেই আমার ছেলেটার মাথাটা খেয়েছো। আবার এসব বলে সংসারে অশান্তি তৈরি করো না বলে দিলাম।
ঠিক আছে মা আপনি যা বলেছেন তাই হবে। এই বলে আমি আমার রুমে এসেছি। রুমে এসেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাবার নাম্বারটাই কল করবো তখনি সৌরভ ভিডিও কল করেছে। মুখে একটা হাঁসি নিয়ে কলটা রিসিভ করেছি তখনি সৌরভ বলে।
তুমি আজ সন্ধায় রেডি হয়ে থেকো। আমরা দুজনে আজকে একটু বেরুবো সন্ধার পরে কেমন?
সন্ধার পরে কোথায় যাবেন?
আমার বন্ধু রাজ ওর আজকে বউ ভাতের অনুষ্টান। রাজ অনেক রিকুয়েষ্ট করছে তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে। আর তাছাড়া আমাদের বিয়ের বয়স দুই মাস আজ পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে তো কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি।
কেনো আমার সাথে আমাদের বাড়ীতে গেছেন না?
হ্যা তা তো গেছি। তবে অন্য কোথাও তো যায়নি? আর শুনো এত কথা না বলে আমি যা বলেছি তাই করো। তুমি তৈরি হয়ে থেকো আমি এসেই তোমাকে নিয়ে বেরুবো।
ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে থাকবো। তা আপনি লাঞ্চ করছেন?
হ্যা করেছি। তুমি খাবার খেয়েছো?
হ্যা। এখন কোনো কাজ নেই আপনার?
কাজ আছে। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তাই ফোন করেছি। আচ্ছা তোমার চেহারাটা কেমন মলিন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তুমি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছো?
আমার চেহারা মলিন হয়ে আছে! কই না তো। আর তাছাড়া আমি কিসের চিন্তা করবো! আপনার মতন এত ভালো বর থাকতে আমার কোনো চিন্তা থাকতে পারে?
তাও আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে। সত্যি করে বলো কিছু হয়ছে বাড়ীতে?
সত্যি করে বলছি জনাব আমার কিছুই হয়নি।
আচ্ছা এখন রাখি হাতে কাজ চলে আসছে বলে কলটা কেটে দিছে। সত্যি আমি খুব ভাগ্য করে এমন বর পেয়েছি। পাগল একটা আমার দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারে আমার মন খারাপ না ভালো। আরে আমি তো ভুলেই গেছি বাবাকে তো ফোন করতে হবে। বাবাকে ফোন করেছি কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরে ফোনটা মা রিসিভ করেছে। ওপাশ থেকে মা বলেন।
সুমি কেমন আছিস?
হ্যা মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
আছি আমরা সবাই ভালোই। তা জামাই আর তোর শ্বশুর স্বাশুড়ি সবাই ভালো আছে?
হ্যা মা সবাই ভালো আছে। তা মা তোমরা ছাগল কবে পাঠাচ্ছো আমার শ্বশুর বাড়ীতে? মা কিছুটা চুপচাপ থেকে বলে।
সুমি তুই একটু জামাই বাবাকে বুঝিয়ে বলিস এই বছর আমরা ছাগল দিতে পারবো না। তোর বিয়ের জন্য যে টাকা খরচ হয়ছে আর সবকিছু তো ঋণের উপর হয়ছে। তুই একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে তোর জামাইকে বলিস। সামনের বছরে যত কষ্ট হোক আমরা ছাগল পাঠিয়ে দিবো।
মা তুমি কোনো চিন্তা করো না। আর বাবাকেও বলো এসব ব্যাপারে কোনো চিন্তা না করতে। আমার শ্বশুর বাড়ীর কেউ তো এসব কথা মনে করেনি। আমি নিজে থেকেই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।
আমি জানি তুই কেমন নিজে থেকে জিজ্ঞেস করবি? নিশ্চই তোর শ্বাশুড়ি এসব বিষয় নিয়ে তোকে বলছে তাই তুই বলেছিস।
নাহ মা ওনি কিছুই বলেনি।
সুমি তুই তো সবটা জানিস তাও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তোর বিয়ের সময় অনেক টাকা ঋণ করতে হয়ছে। এখনও ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি তার উপর বর্তমানে ছাগলের যে দাম। তাই তোর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছর কুরবানির ইদের সময় ছাগল কিনে দিয়ে দিবে।
মা তুমি এসব ব্যাপারে কোনো চিন্তা করো না। আর বাবাকেও বলো এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমাকে ছাগলের ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি। আচ্ছা মা আমি এখন রাখি। মাকে বলে কলটা কেটে দিয়ে একটা বড় চিন্তার মধ্যে পরে গেলাম। মনে মনে ভাবছি কেনো জানি মেয়ে হয়ে জন্ম হয়ছে। যদি ছেলে হতাম তাহলে বাবা মায়ের কষ্টটা দূর করতে পারতাম। বিয়ের সময় এত কিছু দিয়ে দিলো আর এখন দুই মাস পেরুতে পারেনি আবার বিশ হাজার টাকার ছাগল দিতে হবে। এসব নিয়ম কেনো জানি তৈরি হলো! যদি আমি ছেলে হতাম তাহলে এসব ফালতু নিয়মে লা*থি মারতাম। এসব মনে মনে ভাবছি তখনি আমার ননদি সোনালী এসে বলতেছে।
ভাবি তুমি কি ফ্রি আছো?
হ্যা ফ্রি আছি। কিছু বলবে?
নাহ তেমন কিছু না। আসলে আমার বান্ধবীর আগামীকাল জন্মদিন একটা গিফট দিতে হবে। তোমার কাছে কি পাঁচশত টাকা হবে! আমি আবার পরে তোমাকে দিয়ে দিবো। সোনালী এর আগেও আমার কাছ থেকে পাঁচশত টাকা নিয়েছে। এবারও চাচ্ছে তাহলে কি অন্য কোনো কারণ আছে! আমি কিছুটা ভেবে চিন্তে বলি।
সোনালী আমার কাছে তো এত টাকা নেই। তোমার ভাই বাড়ীতে আসলে আমি বলবো তোমাকে পাঁচশত টাকা দিতে। কথাটা শেষ করতে পারিনি তখনি সোনালী বলে উঠে। ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা নিতে গেলে তোমাকে বলে দিতে হবে কেনো? থাক তোমার আর টাকা দিতে হবে না। আমার বুঝতে ভুল হয়ছে তোমার মত গরীবলোকের মেয়েদের কাছে টাকা থাকবে কি করে? তার চাইতে বরং আমি গিয়ে বড় ভাবির কাছে টাকাটা চাই ওনার বাবা ভাইয়েরা ওনাকে প্রতি মাসে কত টাকা দেয়। আমি চাইলে কখনো বারণ করে না। আর শুনো আমার ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে দিতে হবে না আমার ভাইয়ার থেকে আমি নিজেই চেয়ে নিবো। ছোট লোকের ঘরে কেনো জানি সৌরভ ভাইয়া বিয়েটা করেছে। এসব বলতে বলতে ননদি চলে গেছে। আর আমি মুখ বুঝে সব সহ্য করছি। কারণ আমি তো গরীব ঘরের বড় মেয়ে। ওদের সবকিছু সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ পাক নিজের হাতেই দিয়ে থাকেন। সোনালী চলে গেছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ছয়টা বাজে। আরে ওনি তো বলেছে বেরুবে আমাকে নিয়ে। যাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সাজগুজ করে নেই। ওয়াশ রুমে ঢোকে শাওয়ার শেষ করে বেড়িয়েছি তখনি শ্বাশুড়ির ডাক। সুমি রুমে আছো?( আমি ভেজা চুল গুলি টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে সামনে গিয়ে বলি)
হ্যা মা বলেন কি বলবেন?
তুমি এই অবেলা গোসল করেছো কেনো?
আপনার ছেলে বলেছে আজকে আমাকে নিয়ে একটু বেরুবে। ওনার বন্ধু রাজের বউ ভাতের অনুষ্টান আছে। তাই শাওয়ার করেছি।
ওহ এই কথা? আমার ছেলের মাথাটা দেখছি একদম পুরাপুরি খেয়েছো! সৌরভ কখনো আমাদের সাথে কোথাও যেতে চায় না। আর দুই দিন হলো বিয়ে করেছে এখন বউ নিয়ে বন্ধুর বউ ভাতের অনুষ্টানে যাবে! যাক তাহলে এই দুই মাসে আমার ছেলেটাকে ভালোই কব্জা করেছো?
মা আমি তো কিছু বলেনি ওনি নিজেই ফোন করে আমাকে বলছে তৈরি হয়ে থাকতে।
তোমাকে বলেছে আর তুমি ডেব ডেব করে রাজি হয়ে গেছো? বাড়ীতে কত কাজ পড়ে আছে তোমার সেই দিকে কোনো খেয়াল আছে? যাও আগে গিয়ে স্টোর রুমটা পরিষ্কার করো তাঁরপর যেখানে খুশি সেখানে যাও।
মা স্টোর রুমটা তো আগামীকালকে পরিষ্কার করলে হবে?
আগামীকাল আরও অনেক কাজ আছে। সমস্থ বাড়ী পরিষ্কার করতে হবে। এখন আগে গিয়ে স্টোর রুমটা পরিষ্কার করে এসো।
মা এখন তো সাঁতটা বেজে গেছে কিছুক্ষণ পর ওনি চলে আসবে। আর এসে যদি দেখে আমি তৈরি হয়নি তাহলে ওনি তো রাগ করবে আমার সাথে!
রাগ করবে কি করবে না সেটা পরে দেখা যাবে। এখন তোমাকে আমি যা বলেছি তুমি সেইটা গিয়ে করো। আর শুনো তুমি এত বেশী বুঝতে যেয়োও না। তোমাকে এখন যা বলেছি সেই কাজটা তুমি করবে বলে দিলাম। এই নাও স্টোর রুমের চাবি। চাবিটা আমার হাতর ধরিয়ে দিয়ে শ্বাশুড়ি যেতে যেতে বলছে। ঢং কত আমার ছেলের সাথে ঘুরতে যাবে। আমি কিছুটা চিন্তা করে চাবিটা নিয়ে ছাদের উপরে স্টোর রুমে চলে গেছি। স্টোর রুমে ঢুকে দেখি ধূলো ময়লা দিয়ে একাকার। মনে হচ্ছে অনেক বছর ধরে কেউ এই রুমে আসে না। আমি জানি স্টোর রুমটা কেনো আমাকে পরিষ্কার করতে বলেছে। সৌরভের সাথে আমি বাহিরে যাবো এইটা আমার শ্বাশুড়ির সহ্য হয়নি তাই ইচ্ছে করে আমাকে এই কাজটা দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে আমি কি বলবো? সৌরভ এই প্রথম আমাকে নিয়ে বেরুবে বলছে তাও আমি বেরুতে পারবো না। সৌরভ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ। মনে মনে কথা গুলি বলেই কাজে নেমে পড়ি যেই কথা সেই কাজ। আমি শাড়ীর আচলটা কমোড়ে গুজে পরিষ্কার করতে আরম্ভ করেছি। আচ্ছা আমি রুম পরিষ্কার করি আর এই ফাকে আপনাদেরকে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেয়। (আমি সুমি ইসলাম। আমরা তিন বোন আর এক ভাই। আমি সবার বড় আর ছোট দুইটা বোন এরপর সবার ছোট আমার ভাই। আমাদের গ্রামের বাজারে বাবার একটা ছোট্ট দোকান আছে আর তার পাশাপাশি আম্মা কিছুটা সেলাই কাজ করে আমাদের সংসার আর চার ভাই বোনের পড়া শোনার খরচ যোগায়। আমি ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ি। যদিও এখন বলতে পারছি না আমার আর পড়া শোনা হবে কিনা? সাহোস করে সৌরভকে বলতেও পারিনা যে আমাকে পরীক্ষাটা দেওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিন। আরে আমি তো আমার বরের পরিচয়টা দেয়নি। আমার স্বামীর নাম আল মোহাম্মদ সৌরভ। ওনারা তিন ভাই এক বোন আমাদের দিক থেকে উল্টা। ওনি ভাইদের মধ্যে মেজু ওনার বড় ভাই আছে। ওনি নিজেই ব্যবসা করে আর ওনি বিয়ে করেছে অনেক বড় ঘরের মেয়েকে। আর সৌরভের ছোট এক ভাই ভার্সিটিতে পড়ে আর ছোট বোন এবার নিউ টেনে পড়ে। তবে আমার শ্বশুর এখনো চাকরি করে আর আমার শ্বাশুড়ি বাড়ীতে থাকেন। একদিন কলেজ থেকে বাড়ীতে অটোতে করে আসতেছি তখনি সৌরভের সাথে দেখা। আর সে আমার পিছু পিছু এসে বাড়ীটা চিনে যায়। তাঁরপরের দিন বিকালে ওর বাবা মা ভাই বোন ভাবি সহ সবাই এসে আমাদের বাড়ীতে এসে হাজির। আমাদের বাড়ী ঘর যদিও সৌরভের পরিবারের কেউ পছন্দ করেনি তাও সৌরভের জোড়াজুড়িতে তাড়া সবাই এক প্রকার রাজি হয়ছে আমাকে তাদের বাড়ীর পুত্র বধূ বানাতে। আমার বিয়েতে ওনাদের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া না থাকলেও একটা কথা ঠিকই বলেছে। আমাদের কোনো কিছু লাগবে না আপনারা মেয়ের সাথে খুশি হয়ে যা দেন। আমার বাবাও ওনার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে আমার সাথে দিয়ে দিতে। তাও তাদের মন ভরেনি বিয়ের দিনেই আমার ফুপি শ্বাশুড়ি বলে ছিলো। কোন ফকিরে মেয়েকে বিয়ে করিয়ে আনছিস সবকিছু তো একদম সস্থা আর লোকাল মার্কেট থেকে কিনে দিছে। আমরা এত কমদামী কাপড় পড়ি না এমন কি আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়েটাকেও এর থেকে বেশী দামী কাপড় পড়াই। আমি সব শুনে অনেক কান্না করেছি। কোনো কিছুই বলিনি তবে সবকিছুর মধ্যে একটা ব্যাপার আমার মনটাকে জয় করে নিয়েছে আর সেইটা হলো সৌরভের কথাবার্তা আর ওর ব্যবহার। সৌরভ স্বামী হিসাবে আমাকে সবসময় সাপুট করে গেছে ওর কারণে আমি সবকিছু হাসি মুখে মেনে নেই।) রুম পরিষ্কার করতেছি তখনি সৌরভের ডাক।
সৌরভ:- এই সুমি তোমাকে কি বলেছি আর তুমি কি করছো এসব? তোমাকে বলেছি তুমি সাজগুজ করে তৈরি হয়ে থাকতে আর তুমি কি*না স্টোর রুম পরিষ্কার করছো? (আমি কিছু বলছিনা একদম স্থীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছি তখনি সৌরভ আবার বলে) কি হলো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কি বলেছি তাঁর উত্তর দাও। তখনি আমি আস্তে করে বলি।
সুমি:- আমি তো শাওয়ার নিয়ে তৈরি হতেছিলাম। মা এসে আমাকে স্টোর রুম পরিষ্কার করতে বলেছে। তাই আমি তৈরি হয়ে থাকতে পারিনি।
সৌরভ:- তুমি আম্মাকে বলোনি আমি তোমাকে নিয়ে বেরুবো।
সুমি:- হ্যা বলেছি!( কথাটা বলেই একদম বোকা হয়ে গেলাম। আমি এইটা কি করেছি তখনি সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে) আরে এমন ভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে! ওনি কোনো কথা বলছে না। কোনো কিছু না বলে সোজা টেনে আমাকে নিচে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এসেছে। ড্রয়িংরুমে সবাই বসা তখনি সৌরভ তার মাকে বলে।
সৌরভ:- আম্মা আপনাকে সুমি বলেছে আমার সাথে বেরুবে তাও কেনো আপনি ওকে স্টোর রুম পরিষ্কার করতে বলছেন? তখনি আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- বৌমা তুমি কখন বলেছো আমাকে যে তুমি সন্ধায় সৌরভের সাথে বেরুবে? আমাকে যদি তুমি বলতে তাহলে আমি কি কখনো তোমাকে বলতাম স্টোর রুম পরিষ্কার করতে যেতে? (আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি তখনি সৌরভ বলে)
সৌরভ:- এই সুমি এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বলো আম্মাকে তুমি কখন বলেছো আমার সাথে বেরুবে?
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ দেখছিস কেমন মিথ্যা কথা বলে। আমি তো তোর বড় ভাবিকে কতদিন বলেছি যে সফিকের সাথে মাঝে মাঝে বেরুতে যাবে। আর তাছাড়া আমি তো তোকেও বলেছি তোর বৌকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে। ঘুরতে গেলে মন ভালো থাকবে। আর আমি কি*না তোর সাথে ঘুরতে যাবে বলার পরেও স্টোর রুম পরিষ্কার করতে দিবো। এমন মিথ্যা কথা তুমি বলতে পারলে? (তাও আমি চুপ করে থাকলাম। কারণ আমি এখন যদি বলি তাহলে পরে ওনি আমার উপর দিয়েই রাগটা ঝারবেন)
বড় ভাবি:- সৌরভ আমার মনে হয় সুমি মিথ্যা বলছে। মা আমাকে অনেকবার বলেছে তোমার ভাইয়ের সাথে নিয়ে বাহিরে গিয়ে ডিনার করতে। দুপরে লাঞ্চ করতে। মনে হচ্ছে সুমি মাকে বলেনি তোমার সাথে ঘুরতে যাবে। আমার মনে হয় সুমি ভুলে গেছে তুমি যে বলেছো তৈরি হয়ে থাকতে আর নয় তোমার সাথে যেতে চাচ্ছে না।
সৌরভ:- সুমি তোমাকে নিয়ে এই প্রথম আমি বেরুতে চেয়েছি আর তাও তুমি যেতে রাজি হলে না।
সুমি:- আসলে আমার ঠিক মনে নেই আপনি যে আমাকে বলেছেন?
সৌরভ:- তোমার মনে নেই এইটা বলে দিলে আর হয়ে গেলো তাইনা? এখন আমি রাজকে কি বলবো বলো? রাজ কতবার রিকুয়েস্ট করছে তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে আর তুমি কি করেছো?
সুমি:- আচ্ছা আমি জটপট করে তৈরি হয়ে আসছি।
সৌরভ:- এখন রাত কয়টা বাজে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো। (আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত বারোটা বাজে) তখনি সৌরভ আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে। তুমি এইটা ইচ্ছে করেই করেছো তাইনা?
সুমি:- বলেছি তো আমার মনে নেই। তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- যাক ভালো করেছো। তবে তুমি আজ যেইটা করেছো সেইটার জন্য আমার যে কতটা ক্ষতি হয়ছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। এই কথাটা বলেই সৌরভ সোজা চলে গেছে। আর আমার শ্বাশুড়ি মুচকি মুচকি হাসতেছে। যখনি আমি চলে আসবো তখনি শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সুমি তুমি কি তোমার বাড়ীতে ফোন করে তোমার বাবাকে বলেছো ছাগলের কথা? যদি না বলে থাকো তাহলে আমার মোবাইল থেকে এখুনি তোমার বাবাকে ফোন করে বলে দাও আগামীকাল যেনো ছাগলটা পাঠিয়ে দেয়। নাও ধরো মোবাইল ফোন করো তোমার বাবাকে। সুমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবছে কি করবে এখন?
চলবে,,,