এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০২+০৩

0
287

গল্প:-#এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০২+০৩
লিখা:- AL Mohammad Sourav

সুমিকে তাঁর শ্বাশুড়ি মোবাইল হাতে দিয়ে বলে। তোমার বাবাকে ফোন করে বলে দাও আগামী কালকের মধ্যে ছাগল পাঠিয়ে দিতে। সুমি মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছে এখন কি করবে? সুমি যখনি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি সৌরভ এসে বলে।
সৌরভ:- সুমি তুমি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছো? যাও গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
সুমি:- হ্যা যাচ্ছি বলে ওর শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি সৌরভ কিছুটা দমকের সরে বলে।
সৌরভ:- সুমি আমার খিদা লাগছে। দাঁড়িয়ে আছো কেনো! যাও গিয়ে তাঁড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।
সুমি:- হ্যা আমি এখুনি জটফট ফ্রেশ হয়ে আসতেছি। মা নেন আপনার মোবাইল আমি পরে বাবার সাথে কথা বলবো। সুমি হাত বাড়িয়ে ওর শ্বাশুড়ির দিকে মোবাইল এগিয়ে দিছে। তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি তোমার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই?
সুমি:- হ্যা আছে।
সৌরভ:- তাহলে আম্মার মোবাইল নিলে কেনো? যখন সুমি কিছু বলতে যাবে তখনি সুমিকে থামিয়ে দিয়ে ওর শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ আমি সুমিকে মোবাইল দিয়েছি ওর বাবাকে ফোন করতে।
সৌরভ:- এত রাতে ওর বাবকে কেনো ফোন করবে? কোনো সমস্যা হয়ছে ওদের বাড়ীতে?
শ্বাশুড়ি:- নাহ কোনো সমস্যা হয়নি।
সৌরভ:- যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে এত রাতে ওর বাবাকে ফোন কেনো করবে?
শ্বাশুড়ি:- কুরবানির ঈদ তো চলে এসেছে। এখনও সুমির বাবা ছাগল পাঠায়নি তাই বলেছি ফোন করে বলতে আগামী কালকে ছাগল কিনে পাঠিয়ে দিতে। ঠিক তখনি সৌরভ কিছুটা মুচকি হেসে একদম শান্ত হয়ে ওর মায়ের হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসেছে। সৌরভের এমন কান্ড দেখে ওর পরিবারের সবাই তাকিয়ে আছে। তখনি সৌরভ ওর মায়ের দুইটা হাত এক সাথে ধরে বলে।
সৌরভ:- আম্মা সুমিদের আর্থিক অবস্থা কেমন এটা তো আমরা সবাই জানি। তাও কেনো আপনি এসব চাচ্ছেন? তখন আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- দেখ সৌরভ এটা গরীব বা বড়লোক বলে কথা না। এটা হচ্ছে নিয়ম। বিয়ের প্রথম বছর মেয়ের বাড়ী থেকে ওর শ্বশুর বাড়ীতে ছাগল দিবে। এসব নিয়ম না মানলে সংসার জীবনে অমঙ্গল হয় বাবা। আমার বাপের বাড়ী থেকে দিছে আর তুই তো দেখেছিস তোর বড় ভাই সফিকের শ্বশুর বাড়ী থেকে দুইটা ছাগল দিয়েছে। তোর শ্বশুর বাড়ীর আর্থিক অবস্থা খারাপ দেখেই আমি বলেছি নিয়মটা পালন করার জন্য একটা ছাগল দিলেই হবে।
সৌরভ:- ভাবির বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো তাই দুইটা দিয়েছে। কিন্তু যাদের পরিবারের অবস্থা আর্থিক অবস্থা অনেকটা দূর্বল তাড়া কি করবে? তাহলে কি তাড়া তাদের মেয়ে বিয়ে দিবে না? আর যদিও বিয়ে হয় তাহলে এসব ফালতু নিয়মের জন্য প্রতি নিয়ত শ্বশুর বাড়ীর লোকের কাছে কথা শুনবে! আর এমনকি কিছু জানোয়ার টাইপের ছেলেরাও এসব ফালতু নিয়মের জন্য বৌকে চাপ সৃষ্টি করবে! আম্মা আমরা কি পারিনা এসব অযথা নিয়মের ফাদ থেকে বেড়িয়ে আসতে?
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ আমি নিশ্চিৎ তোকে তোর বৌ আর তোর শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা তাবিজ করেছে। তুই বিয়ের সময় তেমন কোনো নিয়ম রীতি পালন করিস নাই। আর বিয়ের পরেও সমাজের নিয়ম অমান্য করতে চাচ্ছিস? এসব নিয়ম আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি। যারা এসব নিয়ম পালন না করে তাদের সংসারে অশান্তি লেগে থাকে। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তোর বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখ। তখনি আমার শ্বশুর বলে।
শ্বশুর:- সৌরভ তোর মা যা বলেছে তা একদম ঠিক বলেছে। এসব নিয়ম না মানলে সত্যি সংসারে অশান্তি লেগে থাকে। আর বিবাহিত জীবনে কখনো সুখ পাওয়া যায়না।
সৌরভ:- বাবা আপনিও আম্মার মত বলছেন?
শ্বশুর:- দেখ সৌরভ যদি তোর শ্বশুর এই বছরে না দিতে পারে তাহলে সামনের বছরে দিবে। কিন্তু এইটা দিতে হবে না দিলে তোর আর বৌমার জন্য অমঙ্গল হবে।
সৌরভ:- আমি আমার শ্বশুর বাড়ী থেকে এসব কোনো কিছুই নিবো না। যদি অমঙ্গল হয় তাহলে হবে। আচ্ছা আপনাদের সবার বড় চাচার মেয়ে শিউলি আপুর কথা মনে আছে নিশ্চই?
শ্বশুর:- হ্যা মনে আছে। আর মনে থাকবে না কেনো?
সৌরভ:- সিউলি আপুর শ্বাশুড়ি আর ওর জামাই মিলে এই ছাগলের জন্য কি করেছে তা নিশ্চই মনে আছে?
শ্বাশুড়ি:- হ্যা সব মনে আছে।
সৌরভ:- আম্মা আপনার হাতের বালা জোড়া বাড়ী থেকে চুড়ি হয়ে গেছিলো তা মনে আছে?
শ্বাশুড়ি:- হ্যা মনে আছে। তোর দাদীর শেষ স্মৃতি ছিলো আমার কাছে। সেই বালা জোঁড়া অনেক আগেই চুড়ি হয়ে গেছে।
সৌরভ:- আম্মা সত্যি বলতে বালা জোঁড়া সেদিন বাড়ী থেকে চুড়ি হয়নি বরং আমি নিয়ে বালা জোঁড়া বিক্রি করে সেই টাকা বড় চাচাকে দিয়েছিলাম। আর বড় চাচা সেই টাকা দিয়ে সিউলি আপুর শ্বশুর বাড়ীতে ছাগল কিনে দিয়ে ছিলো। ছাগল দেওয়ার পরেও কিন্তু সিউলি আপু ওনার শ্বশুর বাড়ীতে থাকতে পারেনি। শেষে বাধ্য হয়ে সিউলি আপু ওর স্বামীকে ডির্ভোস দিয়ে চলে গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করতেছে।
সফিক:- সৌরভ তুই সেদিন আম্মার বালা জোঁড়া চুড়ি করেছিস?
শ্বাশুড়ি:- তুই এমনটা করতে পারলি তোর দাদীর শেষ স্মৃতি ছিলো? আর এতদিন পরে এখন বলতেছিস?
সৌরভ:- আম্মা আজকে এসব বলার কারণ হলো সেদিন সিউলি আপুর শ্বশুর বাড়ীতে ছাগল দেওয়ার পরেও কিন্তু সিউলি আপু সংসার করতে পারেনি। মাঝে থেকে আম্মাকে দাদীর দেওয়া শেষ স্মৃতি টুকু আমি চুড়ি করে বিক্রি করেছি। আম্মা আব্বা এসব নিয়ম কখনো সমাজের জন্য কল্যানকর বয়ে আনবে না। বরং সমাজের জন্য ক্ষতি করবে। আমি বলিকি এসব নিয়ম আমাদের মত মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। এমন নিয়ম কিন্তু আমাদের ধর্মগ্রন্থে কোথাও লিখা নেই। তাহলে আমরা কেনো এসব নিয়মের পেছনে পড়ে আছি বলেন?
শ্বশুর:- সফিকের মা সৌরভ যে কথাটা বলেছে ঠিকই বলেছে। আমাদের উচিত এসব অযথা নিয়ম থেকে বেড়িয়ে আশা। আর সমাজের মানুষকে উৎসাহ প্রধান করা।
শ্বাশুড়ি:- ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম কিন্তু সমাজ কি মেনে নিবে? যখন সমাজের মানুষজন যখন জানতে চাইবে সৌরভের শ্বশুর বাড়ী থেকে ছাগল দিয়েছে কি*না তখন কি বলবো আমি?
সৌরভ:- সমাজের মানুষ কি বলবে সেইটা বড় কথা না। কথা হচ্ছে আমরা নিজেরা কি ভাবে বিষয়টা দেখবো। আম্মা প্লিজ এসব নিয়ম থেকে আমরা নিজেরা সরে আসি তখন আমরা সমাজকে বলবো এবং বুঝাবো একটা সময় আসবে তারাও সরে আসবে এসব ফালতু নিয়ম থেকে। তাঁর জন্য কোনো একজনকে নিয়ম পরিবর্তন করে দেখাতে হবে আর সেইটা না হয় আমরা প্রথমে শুরু করি!
শ্বাশুড়ি:- ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম। তবে আজকে তোর আমাকে সবার সামনে কথা দিতে হবে। আমি যা বলবো তুই তাই করবি।
সৌরভ:- এইটা কথা দিতে হবে কেনো আমি তো সবসময় আপনার কথা শুনি।
শ্বাশুড়ি:- তারপরও তুই কথা দে আমি যা বলবো তুই তা করবি?
সৌরভ:- ঠিক আছে কথা দিলাম। এখন তো একটু হাসেন তখনি আমার শ্বাশুড়ি হেসে উঠেছে। আর সৌরভ ওর মাকে জড়িয়ে ধরেছে। তবে এখন আমার কাছে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। সবাই সবার মত করে যার যার রুমে চলে গেছে। রাত প্রায় ১টা বেজে গেছে। তখনি আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- রাত অনেক হয়ে গেছে তোরা দুজনেও কিছুই খাসনি। সুমি তুমি ভাত তরকারি রুমে নিয়ে যাও। দুজনে রুমে বসে খেয়ে নিও কেমন? (হঠাৎ করে আমার শ্বাশুড়ি এমন কথা কেনো বলেছে আমি জানি কারণটা হলো সৌরভকে বুঝাচ্ছে ওনি আমাদের দুজনকে অনেক খুশি দেখতে চান। তাও আমি বলেছি)
সুমি:- ঠিক আছে মা। আমি গিয়ে দেখি তরকারি একদম ঠান্ডা হয়ে আছে। তাই তরকারি গুলা একটু গরম করে খাবার গুলি আমার রুমে নিয়ে এসেছি। আমি রুমে ঢোকে দেখি সৌরভ বসে আছে অনেকটা রাগি ভাব নিয়ে। আমি এখন কিছুই বলিনি সোজা ওয়াশ রুমে গিয়ে জটফট শাওয়ার নিয়ে একদম ফ্রেশ হয়ে এসেছি। দেখি ওনি মোবাইলে কথা বলছে আর বার বার সরি সরি বলছে। মনে হচ্ছে ওনার বন্ধু রাজকে ফোন করেছে হ্যা আমার আইডিয়াটা ঠিক আছে ওনি রাজকে ফোন করছে। আমি এই ফাকে খাবার সাজিয়ে বসে আছি। ওনি কথা শেষ করে আমার ঠিক উল্টো দিকে বসেছে। তখনি আমি বলি। কি হলো এত ধূরে বসেছেন কেনো? সৌরভ কিছু বলছেনা তাও আবার বলি আমার উপর রেগে আছেন তাইনা?
সৌরভ:- আজ থেকে কোনো কথা বলবে না আমার সাথে। তুমি সবসময় আমার কাছ থেকে সবকিছু লুকিয়ে রাখো।
সুমি:- কি লুকিয়ে রাখছি!
সৌরভ:- দেখো কত কিছু লুকিয়ে রাখছো।
সুমি:- আচ্ছা সরি আর এমনটা হবে না। কিন্তু জনাব আজকে আপনিও তো দেরী করে বাড়ীতে এসেছেন তাইনা?
সৌরভ:- আমি কখন দেরী করে এসেছি? আমি তো রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বাড়ীতে এসেছি। বাড়ীতে এসে দেখী তুমি রুমে নেই ওয়াশ রুমে নেই। তোমার মোবাইলে ফোন করেছি কিন্তু তুমি মোবাইলটা রুমে রেখে গেছো।
সুমি:- সরি আমি তাড়াহুরার কারণে ভুলে মোবাইল রুমে ফেলে চলে গেছি।
সৌরভ:- আম্মাকে বাড়ীতে দেখছি না। আম্মার মোবাইলে ফোন করেছি রিসিভ করে না। আমি তো মনে করেছি তুমি আম্মার সাথে কোথাও গেছো কিন্তু রাত সারে এগারোটার দিকে আম্মা যখন একা এসেছে তখন তো ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে গেছে। যখন আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছি তখনি আম্মা বলে তুমি স্টোর রুম পরিষ্কার করতে গেছো। ঠিকই আমি স্টোর রুমে গিয়ে তোমাকে পেলাম।
সুমি:- এই কান ধরেছি আর এমনটা হবে না। বলেই আমি হেসে দিয়েছি তখনি ওনি বলে।
সৌরভ:- তুমি আবার হাসতেছো? দেখো সুমি আমি তোমাকে কতবার বলেছি যা কিছু হবে সব আমাকে বলবে। যদি তুমি আমাকে না বলো তাহলে কাকে বলবে? আমি তোমাকে এই বাড়ীতে এনেছি তোমার সুখে দুখে সবসময় পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
সুমি:- ঠিক আছে জনাব এখন থেকে সবকিছু বলবো কথা দিলাম। এখন আসেন খাবার খেয়ে নেন। আমার কিন্তু অনেক খিদা লাগছে।
সৌরভ:- হ্যা আসো। সৌরভ একদম আমার পাশে এসে বসেছে। একটা প্লেট আমরা দুজনে খেতে আরম্ভ করেছি। মাঝে মাঝে ওনি আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আমি ওনাকে খায়িয়ে দিতেছি। দুজনের খাবার শেষ করে দুজনে শুয়ে পড়েছি। ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙ্গছে।
সুমি:- এই যে জনাব উঠেন আযান দিচ্ছে নামাজ পড়তে যান।
সৌরভ:- আরেকটু ঘুমাতে দাও আমার পচন্ড ঘুম পাচ্ছে।
সুমি:- তা হবে না উঠেন বলেই ওনাকে টেনে তোলে দিলাম। ওনি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে গেছে আর আমি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে কিছুটা কুরআন পড়ে নিলাম। তারপর নিচে গিয়ে রান্না ঘরে ঢোকে সকালের নাস্তা তৈরি করতে আরম্ভ করেছি। এই বাড়ীতে আশার কিছুদিন পরেই কাজের মেয়ে শাহানা ওর মায়ের অসুস্থের কথা বলে বাড়ীতে গেছে। এরপর থেকে এ যাবৎ আমি বাড়ীর সবার জন্য সকালের নাস্তাটা তৈরি করি। দুপুরবেলা বড় ভাবি কিছুটা সাহায্য করে তবে সবকিছু আমার করতে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে নাস্তা তৈরি করে খাবার টেবিলের উপরে নিয়ে রেখে দিয়েছি। এক এক করে সবাই টেবিলে এসে বসেছে।
শ্বাশুড়ি:- সুমি চা কোথায়?
সুমি:- আপনারা নাস্তা করেন আমি চা বসিয়ে দিয়েছি।
শ্বাশুড়ি:- আজকেও তুমি ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছো?
সুমি:- মা আমি তো ঠিক সময় উঠেছি। আর তাছাড়া একা একা সবকিছু করতে গেলে তো একটু দেরী হবে।
শ্বশুর:- বৌমা তুমি একা কেনো শাহানা কোথায়?
সুমি:- শাহানা তো ওর মায়ের অসুখের কথা বলে যে গেছে আজ এক মাস ধরে আসার কোনো নম গন্ধ নেই।
শ্বাশুড়ি:- সাহানা আর আসবে না। ওর মা বলেছে শাহানার বিয়ে ঠিক হয়ছে। কুরবানির ঈদের এক সাপ্তাহ পরে বিয়ে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে।
শ্বশুর:- শাহানার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর তাছাড়া এতদিন ধরে আসে না। তাহলে অন্য কোনো কাজের লোক দেখ। সুমি একা এত কাজ কি করে করবে?
শ্বাশুড়ি:- আমি কি বসে আছি! কাজের লোকের এখন যে ডিমান্ড! আমি খুঁজতেছি কাওকে পায়না। আর তাছাড়া সুমি একা কোথায় সব কাজ করে? সকালের নাস্তাটা যা তৈরি করে দুপুরবেলা আমি আর বড় বৌ তো সব কাজ করি। তখনি সৌরভ এসে বলে।
সৌরভ:- সুমি আমি বেরুলাম। তুমি নাস্তা করে নিও আমি বাহিরে কোথাও নাস্তা করে নিবো কেমন!
সুমি:- ঠিক আছে। সৌরভ চলে গেছে তখন আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- এখন বৌই সব মায়ের কোনো দাম নেই। বিয়ের আগে কত সুন্দর আমাকে বলতো। আর এখন বৌকে সব বলে। আমি নাস্তা করবো না বলেই শ্বাশুড়ি উঠে চলে গেছে। তখন আস্তে আস্তে সবাই নাস্তা শেষ করে ওনার এক এক করে বাকীরাও চলে গেছে। আমি একা একা বসে নাস্তা করতেছি তখনি আমার শ্বশুর এসে বলে।
শ্বশুর:- বৌমা একটা কথা বলবো?
সুমি:- হ্যা বাবা বলেন!
শ্বশুর:- বৌমা কথাটা কি করে বলি! যদিও এসব বলা ঠিক না তাও বলি। বৌমা আসলে তোমার শ্বাশুড়ির একটু রাগ বেশী। এতদিনের সংসার নিজের হাতে গড়া এখন যদি এসবে এসে কেউ ভাগ বসায় তাহলে কিছুটা অশান্তি হবে। সফিকের বৌকে এত পছন্দ করার কারণ হচ্ছে সফিকের বৌ সবসময় তোমার শ্বাশুড়ির প্রশংসা করে থাকে। তুমিও চেষ্টা করো তোমার শ্বাশুড়ির সাথে একটু সুসম্পর্ক তৈরি করতে। আর ছোট বেলা থেকেই সৌরভ পরিবারের সবার কাছ থেকে কিছুটা ধূরে ধূরে থাকতে পছন্দ করে। এখন যদি সৌরভকে তুমি সংসারের ছোট হাটু ঝগড়ার বিষয়ে বলো তাহলে আরও অশান্তি তৈরি হয়ে যাবে। আমি বলিকি বৌমা সারাদিন বাড়ীতে কি হয় আর না হয় এসব কিছু সৌরভকে বলার কোনো দরকার নেই। বাড়ীতে বৌ শ্বাশুড়ির মধ্যে অনেক কথা হবে সব কথা সৌরভকে বলার কোনো দরকার নেই কেমন?
সুমি:- ঠিক আছে বাবা আমি আপনার কথা গুলি মানার চেষ্টা করবো। তখন শ্বশুর চলে গেছে। আমি নাস্তা করে রুমে গেছি। অনেক ক্লান্ত লাগছে আমি খাটের উপরে শুয়ে আছি তখনি সোনালী এসেছে।
সোনালী:- ভাবি ঘুমিয়ে আছো? কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাও বলেছি।
সুমি:- নাহ সজাগ আছি বলো কি বলবে?
সোনালী:- আমার একটা কাজ করে দিবে?
সুমি:- কি কাজ?
সোনালী:- তুমি আগে বলো কাওকে কিছু বলবে না। আমার মাথা ছুঁয়ে কথা দিতে হবে।
সুমি:- আচ্ছা বলবোনা কাওকে এখন বলো কি কাজ করে দিতে হবে।
সোনালী:- আমি আমার ফুপাত ভাই ইমরানকে অনেক ভালোবাসি। ইমরান ভাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
সুমি:- ভালোবাসো ভালো কথা তাহলে তুমি তোমার বাবা মা অথবা ভাইদেরকে বলো।
সোনালী:- বাবা মা ভাইয়াদের বলা যাবে না। কারণ ইমরান ভাইয়া মানে বড় ফুপির সাথে আমাদের সম্পর্কটা এখন একদম ভালো নেই। তোমার বিয়ের পরে ফুপি আর এই বাড়ীতে আসেনি। তোমাদের বাড়ী থেকে যেসব কাপড় দিয়েছিলো সেসব কাপড়ের জন্য ফুপি কি জেনো বলেছে। আর সৌরভ ভাইয়া এসব শুনে ফুপিকে যাতা বলেছে। এসব বলার পরে ফুপির সাথে আমাদের সম্পর্কটা এখন আগের মতন নেই। প্লিজ তুমি একটু বাড়ীর সবাইকে রাজি করাও।
সুমি:- সোনালী যেহেতু সবাই মানবে না তাহলে তোমাদের উচিত আলাদা হয়ে যাওয়া। আর তাছাড়া তোমার বয়স একদম কম এখন তোমার পড়া লেখার প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার।
সোনালী:- ভাবি প্লিজ আমি তোমার পায়ে পড়ি। তুমি যদি বারণ করে দাও তাহলে আমার ম*র*ণ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ভাবি আমি প্রেগন্যান্ট আজ এক মাস পনেরো দিন ধরে। প্লিজ ভাবি তুমি যেভাবে হোক খুব দ্রুত আমাদের বিয়ের ব্যবস্থাটা করো।
সুমি:- কি বলছো তুমি এসব কেনো করতে গেলে? তখনি সুমির শ্বাশুড়ির ডাক সুমি দুপুরবেলার রান্নাবান্না করতে হবে তো নাকী? বেলা এগারোটা বাজতে চলছে সেই খেয়াল কি আছে এই কথা বলে রুমের ভিতরে ঢোকে দেখে সোনালীও আছে।
শ্বাশুড়ি:- সোনালী তোকে না বারণ করেছি সুমির সাথে বেশী একটা মিশতে যাবি না। তোর যদি কথা বলার ইচ্ছে হয় তাহলে তোর বড় ভাবির সাথে কথা বলবি। তোর বড় ভাবি অনেক শিক্ষিত আর অনেক বড় ঘরের মেয়ে। বড় ভাবির সাথে মিশলে ভালো কিছু শিখতে পারবি। আর সুমির সাথে মিশলে শিখতে পারবি। কি করে স্বামীকে তাবিজ করা যায় এসব ব্যাপারে।
সোনালী:- মা আমার যার সাথে খুশি তাঁর সাথে মিশবো কথা বলবো। এই কথা বলে সোনালী বেড়িয়ে গেছে।
শ্বাশুড়ি:- সুমি তোমাকে বলি আমার মেয়ের সাথে তুমি কথা বলবে না। তোমার মত পরিবারের মেয়েদের কাছ থেকে ভালো কিছু শিখার আসা করা যায় না। তুমি সবসময় সোনালীর থেকে ধূরে ধূরে থাকবে। আমার অনেক ইচ্ছে সোনালীকে ডাক্তার বানাবো।
সুমি:- ঠিক আছে। তখন সুমির শ্বাশুড়ি চলে গেছে। সুমি চিন্তায় পড়ে গেছে। সোনালী ওদের এক মাত্র বোন আর ওর কিছু হলে বাড়ীর সবাই অনেক কষ্ট পাবে। আমি যেভাবে হোক ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করবো। কিন্তু কার কাছে এই কথাটা বলবো সৌরভকে বলবে! যদি সৌরভ সব শুনে রেগে যায় মাথাটা হ্যাঙ্গ হয়ে আসছে। কি করবো কি করবো না এসব ভাবতে ভাবতে আমি গিয়ে দুপুরবেলার রান্নাটা বসালাম। বড় ভাবি এসে কিছুটা সাহায্য করছে। আজ আমার মাথায় শুধু বার বার সোনালীর কথা গুলি মনে পড়ছে। কোনো মতে রান্না শেষ করে সোনালীর রুমে গেছি তখন দেখী সোনালী রুমে নেই। আমি সোনালীর রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দুপুরবেলার খানা খেয়ে কিছুটা ঘুমাবার চেষ্টা করেছি। কিছুটা প্ল্যান করেছি কি করে সোনালীর বিয়ের কথাটা সবার সামনে তুলে ধরবো এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি। আর ঘুম ভাঙ্গছে মাগরের আযান শুনে। আমি ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে নিচে গেলাম। দেখী বড় ভাবি সোনালী আর মা বসে বসে চা খাচ্ছে আমাকে দেখে শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- কি তোমার ঘুম ভাঙ্গছে?
সুমি:- গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত সজাগ ছিলাম যে তাঁর কারণে মাথাটা কেমন ব্যথা করছিলো। তাই একটু ঘুমিয়ে ছিলাম।
শ্বাশুড়ি:- আল্লাহ তোমাকে চাঁন কপাল দিয়ে দিছে। তোমার মত সুখী মানুষ আর কয়জন হতে পারে। শ্বাশুড়ি আরও কিছু কথা বলেছে। আমি কিছুই বলিনি তবে সোনালীকে আমি ইশারা দিয়েছি উপরে আসতে তখন সোনালী ইশারা করে বুঝিয়েছে আমাকে ফোনে সব বলবে। আমি আর কিছু বলিনি রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাবাকে ফোন করেছি। রিং হওয়ার পরে আজকেও মা রিসিভ করেছে।
মা:- সুমি কেমন আছিস?
সুমি:- হ্যা মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বাবা মোবাইল সাথে নিয়ে যায়নি?
মা:- তোর বাবা ভুলে মোবাইল বাড়ীতে ফেলে গেছে। তা তুই জামাইকে বলেছিস ছাগলের কথাটা?
সুমি:- মা আমি এইটা বলার জন্য ফোন করেছি। মা তোমাদের জামাই সবাইকে রাজি করিয়েছে। ছাগল দিতে হবে না। আর কোনো সময় দেওয়া লাগবে না। এসব ফালতু নিয়ম টিয়ম তোমাদের জামাই একদম মানতে রাজি না। তুমি বাবাকে বলে দিও। এই কথা বলে ফোনটা রেখেছি তখনি সোনালী এসেছে।
সোনালী:- ভাবি তুমি একটু ইমরান ভাইয়ার সাথে কথা বলবে। ওনি বিশ্বাস করছে না তুমি যে বলেছো আমাদের সাহায্য করবে।
সুমি:- আমার কথা বলতে হবে!
সোনালী:- হ্যা ভাবি আমি তোমার নাম্বারটা ইমরান ভাইকে দিয়েছি। তোমাকে ফোন করলে তুমি বুঝিয়ে বলে দিও প্লিজ।
সুমি:- ঠিক আছে বলবো। সোনালী তুমি এখন যাও আমি পড়ে কথা বলবো কেমন? তখন সোনালী চলে গেছে আমি বসে বসে সৌরভের ছবি গুলি দেখছি। আর মনে মনে বলছি আমাকে বিয়ে করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। এসব ভাবতেছি তখনি সৌরভ এসেছে আমি কাছে গিয়ে ওনার সার্টের বোতাম খুলতেছি তখনি ওনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে ছোট করে কিস করে দিয়ে বলে।
সৌরভ:- সুমি তোমাদের বাড়ীর সবার জন্য কাপড় কিনে দিবো নাকী টাকা দিয়ে দিবো।
সুমি:- কিছুই দিতে হবে না।
সৌরভ:- কেনো?
সুমি:- মা জানতে পারলে পরে অশান্তি করবে।
সৌরভ:- কাওকে কিছু জানিয়ে দেবার কি দরকার। এক কাজ করো দশ হাজার টাকা দিয়ে দাও ওনারা ওদের মত পছন্দ করে কিনে নিবে। আমরা কিনে দিবো যদি ওনাদের পছন্দ না হয়। তাঁর চাইতে ভালো হবে ওনাদের টাকা দিয়ে দেয়। ওনারা যার যার পছন্দ মত কাপড় কিনে নিবে।
সুমি:- আপনি যা ভালো মনে করেন।
সৌরভ:- আমার হাতে তো সময় নেই তাহলে টাকা দিয়ে দেয় কেমন! তখন আমি মাথাটা নেড়ে হ্যা বলেছি। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি বলে সৌরভ ওয়াশ রুমে গেছে। আমি ওনার সার্ট বাছ করে রাখতেছি তখনি আমার মোবাইলে রিং বাজতেছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার রিসভ করতে চায়নি কিন্তু তখনি মনে পড়ছে সোনালী যে ইমরানকে আমার নাম্বার দিছে মনে হয় ইমরান ফোন করেছে। আমি রিসিভ করতেই বলে।
ইমরান:- ভাবি আমি ইমরান সোনালী নাম্বারটা দিয়েছে আপনার।
সুমি:- আমি তোমাকে পড়ে ফোন করবো। এখন কাজে আছি বলে ফোনটা কেটেছি তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি কার ফোন ছিলো? আর তুমি মিথ্যা কথা বলে ফোন কাটছো কেনো? তোমার তো এখন কোনো কাজ নেই? আমি কিছুটা চুপ থেকে বলি।
সুমি:- আমার বান্ধবী রিতার ফোন ছিলো তখনি সৌরভ আমার কাছে এসে বলে।
সৌরভ:- মোবাইলটা দাও তো দেখী তোমার কোন বান্ধবী ফোন করেছে এই বলে সৌরভ আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়েছে।

চলবে,,,

গল্প:- #এমনটা_কথা_ছিলো_না (পর্ব:-০৩)
লেখা:- AL Mohammad Sourav

তোমার কোন বান্ধবী ফোন করেছে দেখী বলেই মোবাইলটা আমার হাত থেকে নিয়ে গেছে সৌরভ। আমার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আশার উপক্রম হচ্ছে। কি বলবো এখন আমি এসব চিন্তা করতেছি তখনি সৌরভ আমার মোবাইল থেকে নাম্বারটা নিয়ে সৌরভের মোবাইলে নাম্বার উঠাতেই বলে।
সৌরভ:- সুমি ইমরান কেনো তোমার কাছে ফোন করেছে? কি হলো চুপ করে আছো কেনো?
সুমি:- এমিনিতেই ফোন করে ছিলো।
সৌরভ:- সুমি তুমি আমার কাছে আবার কিছু লুকাচ্ছো? প্লিজ সুমি বলো ইমরান তোমাকে কেনো ফোন করেছে আর তোমার নাম্বারটা ইমরান কি করে পেলো?
সুমি:- আগে আপনি আমাকে কথি দিন সবটা শুনে মাথা ঠান্ডা রাখবেন।
সৌরভ:- কি এমন হয়ছে! আর তাছাড়া ইমরান তোমাকে কিছু বলছে?
সুমি:- আগে আমার মাথা ছুঁয়ে বলেন আপনি সবকিছু শুনার পর মাথা ঠান্ডা রাখবেন।
সৌরভ:- ঠিক আছে এই তোমার মাথায় হাত রেখে বলতেছি। এবার বলো কেনো তোমাকে ইমরান ফোন করেছে?
সুমি:- সোনালী আর ইমরান দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তখনি সৌরভ পচন্ড রেগে বলে।
সৌরভ:- ওর এত বড় সাহোস আমার বোনের সাথে এসব করে। আমি ওকে খু*ন করে ফেলবো। আজকে ওর খবর আছে বলেই মোবাইলে কাকে যেনো ফোন করতেছে। তখনি আমি মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে গেছি। সুমি মোবাইলটা দাও বলছি।
সুমি:- আগে আমার কথা শেষ করতে দিন পরে যা খুশি তা বলিয়েন। আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন আমাকে যে মাথা ঠান্ডা রাখবেন। প্লিজ মাথাটা ঠান্ডা করেন প্লিজ।
সৌরভ:- ঠিক আছে মাথা ঠান্ডা করেছি। তবে আজ থেকে সোনালীর মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ। ওর মোবাইল এখুনি আমি নিয়ে নিবো বলে সৌরভ বেড়িয়ে যেতে ছিলো তখনি আমি বলি।
সুমি:- সোনালী প্রেগন্যান্ট। তখনি সৌরভ দাঁড়িয়ে যায়। আর ঘুরে আমাকে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আমি থাপ্পড় খেয়ে সোজা বসে পড়ি।
সৌরভ:- আমার বোনের নামে এত বড় মিথ্যা কথা বলতে তোমার একটুও মুখে বাধেনি। ছিঃ সুমি তুমি এতটা নিচে নামতে পারলে?
সুমি:- আপনি আমাকে মারতে পারলেন?
সৌরভ:- ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেছে। তুমি সবকিছু আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখো। তোমার সাথে তো আমার এমন কথা ছিলো না। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম সবসময় সুখে দুঃখে তোমার পাশে থাকবো। আর আমরা কেউ কারও কাছ থেকে কোনো কিছুই লুকাবো না। তাও তুমি আমার কাছ থেকে সবকিছু লুকিয়। রাখো।
সুমি:- আমি ইচ্ছে করে কোনো কিছুই লুকায়নি। তবে আপনাকে আজ আমি যা বলেছি তা একদম সত্য। সোনালী নিজে এসে আমাকে সবকিছু বলেছে। দেখুন মাথাটা ঠান্ডা করেন মানুষ জানাজানি হলে অনেক বড় সমস্যা হবে। তখন সৌরভ নিচে বসে গেছে আমি ওনার কাছে গিয়ে ওনার মাথার উপর হাত রেখে বলি। এক কাজ করেন ইমরানের সাথে সোনালীর বিয়েটা দিয়ে দিন।
সৌরভ:- সোনালী এমন কাজ কেনো করতে গেলো? ওকে নিয়ে আমাদের সবার কত স্বপ্ন আর ও কি করেছে এটা?
সুমি:- দেখুন ভুল করে ফেলেছে। এখন আপনি সবাইকে কথাটা একটু বুঝিয়ে বলেন।
সৌরভ:- ঠিক আছে আমি বলবো তবে তোমাকে আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলি। তুমি এই ব্যপারে কাওকে কিছু বলবে না। ইমরানের নাম্বার ব্লকলীষ্টে ফেলে দিবে। মনে থাকবে সুমি তোমার এই কথা গুলি?
সুমি:- ঠিক আছে তাই করবো। তবে এখন যা করবেন খুব ভেবে চিন্তে করতে হবে।
সৌরভ:- সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। এখন চলো নিচে যায়।
সুমি:- হ্যা চলেন। আমরা দুজনে খাবার টেবিলে গিয়ে বসেছি। সবাই এসেছে খাবার টেবিলে। তখনি আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- কুরবানির গরু কিনতে হবে। সফিক ত্রিশ হাজার টাকা দিবে। তা সৌরভ তুই কত দিতে পারবি?
সৌরভ:- আমি পনেরো হাজার টাকা দিয়ে দিবো।
শ্বশুর:- আর বাকী যেইটা লাগবে আমি ব্যবস্থা করে কিনে নিবো।
শ্বাশুড়ি:- ঠিক আছে তাহলে তো হয়ে গেলো। সোনালী আর সবুজ তোরা কি টাকা নিবি নাকী কাপড় কিনে দিবো? ওরা দুজনে এক সাথে বলে উঠে আমরা এখন ছোট নেই। আমরা আমাদের কাপড় নিজেরাই কিনতে পারবো। আমাদের টাকা দিয়ে দিয়েন। তখন শ্বাশুড়ি রাজি হয়েছে। আর সফিক সৌরভ তোরা তোদের বউকে সাথে নিয়ে যার যার মত করে কেনাকাটা করে নিস।
সৌরভ:- সোনালী তোর সাথে আমার কথা আছে। খাবার শেষে তুই একটু ভাইয়ের রুমে আসিস।
সোনালী:- ঠিক আছে। তখনি চেয়ে দেখী সোনালী আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাকে এখন কাঁচা গিলে খেয়ে ফেলবে। সবাই খানা শেষ করে চলে গেছে। আমি সবকিছু গুচিয়ে রুমে যাচ্ছি তখনি সোনালী আমাকে ডাক দিয়ে বলে।
সোনালী:- ভাবি তুমি ভাইয়াকে সব বলে দিয়েছো?
সুমি:- আমি কিছু বলিনি তবে তোমার ভাই সব জেনে গেছে। ইমরান যখনি ফোন করেছে তখন তোমার ভাই রুমে ছিলো।
সোনালী:- ভাবি তোমাকে আমি বিশ্বাস করেছি আর তুমি সেই বিশ্বাসের মর্যাদাটা ভেঙ্গে দিলে। আর বলছো কার কাছে সৌরভ ভাইয়ার কাছে যে কি*না ইমরান ভাইদের নাম শুনলে রেগে যায়। আমার ভুল হয়ছে কেনো জানি তোমাকে বলতে গেলাম।
সুমি:- সোনালী আমাকে বিশ্বাস যেমন করেছো তেমনি আমি তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিবো। তোমার ভাই যা বলবে তুমি শুধু শুনবে প্রথমে গিয়ে পায়ে পড়ে যাবে। তোমার ভাই তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এসো আমার সাথে। সোনালীকে সাথে করে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি সৌরভ মোবাইল টিপাটিপি করছে। আমাদের দেখে সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সোনালী এসেছি বস এখানে সোনালী বসেছে তখন সৌরভ অনেকটা বিনিয় হয়ে সোনালীর সামনে গিয়ে বলে। সোনালী আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি? সোনালী চুপ করে আছে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিছে তখন আবার সৌরভ বলে। সোনালী কথা বল আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি?
সোনালী:- ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দে।
সৌরভ:- দেখ সোনালী ইমরান ছেলে হিসাবে একদম ভালো না। তুই ভাইয়ার সাথে হাসপাতালে চল। ভাইয়া তোকে এভশন করিয়ে নিবো। কাওকে এসব কথা শুনতে দিবো না। আর ইমরানকে আমি নিজে শায়েস্থা করবো।
সোনালী:- ইমরানকে আমি ভালোবাসি। ভাইয়া আমাকে ওনার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দে।
সৌরভ:- সোনালী এর জন্য তুই প্রস্থাবি। তাঁর চাইতে ভালো তুই ভাইয়ার কথা শোন।
সোনালী:- ভাইয়া আমি তোর পায়ে পড়ি বলেই সৌরভের পায়ে পড়ে গেছে সোনালী। সৌরভ ওকে পা থেকে তোলে বলে।
সৌরভ:- ঠিক আছে তুই যেহেতু বিয়ে করতে চাস আমি বিয়ে দিবো। কিন্তু এর জন্য কখনও আমাকে দোষারূপ করতে পারবি না।
সোনালী:- ঠিক আছে।
সৌরভ:- এখন যা ঈদের দুইদিন পরে সবকিছু আমি ম্যানেজ করবো। সোনালী চলে গেছে সৌরভ অনেকটা চিন্তায় পড়ে গেছে। কি ভাবে কি করবে এসব চিন্তা করতেছে। আমি ওনাকে সাহোস দিতেছি। ওনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখছি।
সুমি:- যা হবার হয়ে গেছে তবে এখন যা করতে হবে সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে।
সৌরভ:- হ্যা ঠিক বলেছো। তখনি ওনি আমার কুলে মাথাটা রাখছে আর আমি মাথা টিপে দিতেছি। ওনি কেমন একটা চোখ বন্ধ করে রাখছে আমি চুল গুলি এলোমেলো করতেছি। নিজের কাছে কেমন একটা অংকার হচ্ছে ওনাকে স্বামী হিসাবে পেয়ে। সৌরভ আমাকে বড্ড বেশী ভালোবাসে। মনে মনে আজকে একটা কথা ঠিক করেছি। আজ থেকে আর কোনো কিছুই লুকাবো না ওনার কাছ থেকে। তখনি ওনি বলে। সুমি ঘুমাবে কখন দেখি উঠো ঠিক করে শুয়বো।
সুমি:- আজকে আমার কুলে মাথা রেখে ঘুমান আমি আপনার মাথা টিপে দেয়।
সৌরভ:- আমার মাথা ব্যথা করছে না। দেখি ঠিক করে শুয়তে দাও। সৌরভ গিয়ে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। আমি ওনার বুকের উপরে মাথা রাখছি। ওনি ছোট ছোট কিস করে দিছে। দুজনে দুষ্টমি করে ঘুমিয়ে গেছি। প্রতি দিনের মত আজকেও ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাংগছে। দুজনে নামায পড়ে নিলাম। আগামীকাল ঈদ তাই আজকে সারাদিন বাড়ী গুচানো নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। আর ওনারা বাবা ছেলেরা গিয়ে গরু কিনে আনছে। তবে সকালে এক ফাকে আমাদের বাড়ীতে ওনি দশ হাজার টাকা দিয়ে ছিলো। আমি বাবাকে ফোন করে বলেছিলাম তোমাদের জামাই দিয়েছে। সারাদিন অনেক দখল গেছে। রাত আটটার দিকে ওনি আমাকে নিয়ে মার্কেটিং করতে নিয়ে গেছে। আমার জন্য দুইটা চুড়িদার কিনেছে ওনার পছন্দে।
সুমি:- আপনার জন্য তো কিছু কিনেন!
সৌরভ:- আমার কিছু লাগবে না। চলো বাবা মায়ের জন্য কিছু কিনে নেই। ওনি গিয়ে ওনার বাবার জন্য পাঞ্জাবী আর মায়ের জন্য শাড়ি কিনে নিয়েছে। রাত বারোটার দিকে বাড়ীতে এসেছি। ওনি ওনার বাবা মাকে কাপড় গুলি দিয়ে এসে রাতের খাবার খেয়ে আমরা দুজনে শুয়ে আছি তখনি আমি বলি।
সুমি:- সোনালীকে আমরা একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিলে ভালো হতোনা।
সৌরভ:- কেনো?
সুমি:- সোনালী যদি মিথ্যা বলে?
সৌরভ:- সোনালী নিজের সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা কেনো বলবে? আচ্ছা তুমি কি চাও বলবে?
সুমি:- দেখুন আমরা কেউ তো সোনালীর সাথে ডাক্তারের কাছে যায় নি। এমন কি আমরা কোনো পরীক্ষা করে দেখিনি এমনও হতে পারে সোনালী হয়ত মনের ভুলে এমনটা বলছে। অথবা সোনালীকে ইমরান এমনটা বলতে বলছে।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাহলে ঈদের পরের দিন সোনালীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। এখন ঘুমাও। তখন আমরা দুজনে ঘুমিয়ে গেছি। প্রতি দিনের মত আজও ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়েই দিনটা শুরু করেছি। ঈদের দিন কুরবানির মাংস নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করেছি। পরের দিন সকালে আমি নিচে নামতেছি হঠাৎ করে শুনতে পেলাম। সৌরভের বড় ভাবি সোনালীকে বলতেছে। সোনালী তোমাকে যেভাবে কাজটা করতে বলেছি তুমি কি সেই ভাবে সবকিছু করেছো?
সোনালী:- হ্যা ভাবি সবকিছু প্ল্যান মতে কাজ হয়ছে। আমি কিছু বলবো বলবো তখনি কেউ আমার কাঁদের উপর হাত রেখেছে আমি চেয়ে তো অবাক হয়ে গেছি।

চলবে,,,