এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
133

#এ_কেমন_ভালোবাসা?🤗
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
🌹৬🌹
কলেজ থেকে ফিরছে আদিবা,তানহা আর নীলা।১৫ দিন হয়ে গেছে আদিবা এখন হাটতে পারে।অনেক আগেই হাটতে পারছিলো কিন্তু কেউ তাকে কলেজে যেতে দেইনি।এটা না-কি আদ্র এর হুকুম।আর যেহেতু আদ্র এর হুকুম তাই দুনিয়া উল্টে গেলেও সেই হুকুমের নড়বড় হবে না।আদ্র ঢাকা চলে গেছে আজ পাচদিন হলো।কিন্তু তাতে কি দূর থেকেও সে আদিবার যত্ন নিতে পিছ পা হচ্ছে না।আদিবার প্রতি তার তীক্ষ্ম নজর সব সময়ই বিদ্যমান।
আদিবারা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।তিন বান্ধবী টুকিটাকি বিষয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে।এমন সময় তাদের সামনে হাজির হয় বখাটে লিমন।আস্তো একটা ছেচরা ছেলে।কতো শতো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে হিসাব নেই।শহরে থাকতো আজ ৩ দিন ধরে গ্রামে এসে আদিবার উপর তার নজর পরে।সেদিন থেকেই আদিবাকে বিভিন্নভাবে জ্বালাতন করে আসছে।এতে আদিবা চরম বিরক্ত।লিমন বিস্রীভাবে আদিবার দিক তাকিয়ে আছে।আদিবা একটু নড়েচড়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে রাগী গলায় বলে,
–“,কি হয়েছে?এইভাবে পথ আগলে রাখার মানে কি?”
লিমন সেইভাবেই তাকিয়ে বলে উঠে,
–“সুন্দরি কি আগুন লাগাইছোস মনে তিন দিন ধরে এই আগুন যে নিভতাছে না।এহন এই আগুন নিভাইতে যে তোরে লাগবো।চল না এক রাতের লাইজ্ঞা।আমি তোরে বিয়া করমু টেন্সন নিস না।”
তানহা লিমন এর এইসব কথা শুনে চিৎকার করে বলে,
–” মুখ সামলে কথা বলুন।আপনি জানেন কাকে কি বলছেন?ওকে এইসব বলেছেন আদ্র ভাইয়া যদি জানে মেরে বালি চাপা দিয়ে দিবে!”
লিমন সহ তার চ্যালারে হেসে উঠে। লিমন বললো,
–“, আদ্র!!ওই হালারে গ্রামে আইতে কো!ওর সামনেই ওর প্রেমিকারে নিয়া আমরা ফূর্তি করুম।[আদিবাকে উদ্দেশ্য করে]কিগো আদ্র এর প্রেমিকা রেডি থাইকো।নিজের আশিকের সামনে নিজের সম্মান হারানোর জন্য।”
বলেই বিশ্রীভাবে হাসতে হাসতে লিমন আর তার চ্যালারা চলে গেলো।এইদিকে লিমন এর মুখ থেকে নিজের বিষয়ে এইসব কথা শুনে আদিবার সারা শরীর ঘিনঘিন করছে।অস্রুগুলো অঝর ধারায় ঝরছে।আদিবাকে কান্না করতে দেখে নিলা বলে,
–” আদু কান্না করিস না।আমরা আদ্র ভাইয়াকে বলে দেবো এই লিমন এর ব্যাপারে দেখবি ভাইয়া মেরে হাড় গোর ভেংগে দিবে!”
আদিবা কান্না করতে করতেই বলে,
–” বাড়ি চল।আমার ভাল্লাগছে না এখন আর এইসব আদ্র ভাইয়াকে বলা লাগবে না!চল!!”
–“কিন্তু আদু তুই বুজছিস…”
নিলাকে বলতে না দিয়ে আদিবা নিজেই বলে,
–“,তোরা যাবি না-কি আমি একাই চলে যাবো।” বলেই আদিবা একা একা হাটা ধরলো।তানহা আর নিলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ওরাও আদিবার পিছে পিছে হাটা ধরলো।
বাড়িতে এসে আদিবা কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।ব্যাগটা ঠাশ করে সোফার উপর ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে ঝর্না ছেড়ে দিলো।ঝর্নার পানি দিয়ে নিজের অস্রুগুলো লুকাবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো।কান্না করতে করতে ঝর্নার নিচে বসে পড়লো।প্রায় এক ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বের হলো আদিবা চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।রুমে আসতেই শুনতে পায় তার ফোন বাজছে।আদিবা ফোনটা তুলে দেখে আদ্র এর ৩
৩০+ কল আর ১০০+ মেসেজেস। হা করে তাকিয়ে আছে আদিবা ফোনটার দিকে।আদিবা কাপা কাপা হাটে লাস্ট মেসেজ টা ওপেন করে পড়া শুরু করলো।আদিবা ভয়ে রিতিমতো কাপছে মেসেজটা দেখে। মেসেজ টা এইরকম,,
“”Toke 30+ call’s ar 100+ message diyechi.but tui dekhis ni.amake jota cintay rakhli tar theke beshi toke bhugte hobe adiba.be prepared for your punishment.. Am coming to you soon..Ar matro koyek ghonta ami ashchi..amake ignore korar moja toke hare hare bhujabo..boddo sahosh hoyeche tor taina..sahosher pakha ami kete dibo..just wait for me adu bby..”””
____আদিবা সেই মেসেজ পরার পর থেকে আর রুম থেকেই বের হয়নি।জাহানারা কতোবার মেয়েকে ডেকে গেছে। মেয়ের সাফ মানা সে আজ এই ঘর থেকে বের হবে না। কিছুতেই না।গলা বারবার শুকিয়ে যাচ্ছে।এই নিয়ে ৩ লিটার পানি শেষ করে ফেলেছে সে তাও বড্ডো তেষ্টা পাচ্ছে আদিবার।আবারো পানি খেতে নিয়েই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে মুখ থেকে সব পানি ফুসস করে বের হয়ে গেলো তার।জাহানারা বেগম বলছে,
–“আদিবা আমি তোর মামাদের বাড়ি যাচ্ছি।কি বলে দরকারি কথা আছে না-কি!তুই কি যাবি?”
আদিবা এক ঢোক গিললো সে কিছুতেই যাবে না ও বাড়িতে।আদ্র তাকে ধরার জন্যই এইসব করছে সে ভালো মতোই জানে।আদ্র এর বিছানো ফাদে আদিবা কিছুতেই পারা দিবে না।তাই আদিবা সাফ মানা করে দিয়েছে যে সে যাবে না।আদিবা তো মহা খুশি যে সে আদ্র এর কাছ থেকে বেচে গেলো।কিন্তু তাও সে এই ঘর থেকে বের হবে না।তাই সে একেবারে কাথা মুরো দিয়ে নাক মুখ ঢেকে সুইয়ে পড়লো আল্লাহ আল্লাহ করে।
__________________ঘুমের মাজে আদিবার মনে হচ্ছে যেন তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।কিছু একটার নিচে মনে হয় সে চাপা পড়ে আছে।জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো আদিবা।তাকিয়েই যা দেখলো মূহুর্তেই চোখ দুটো রসগোল্লা সাইজ করেই দিলো এক গলাফাটা চিৎকার।ওর চিৎকার শুনে আদ্র চোখ মুখ কুচকে ওর মুখ চেপে ধরলো।আদিবা উম উম করছে।আপনারা ভাবছেন তো আদ্র কিভাবে এলো।আসলে আদ্র যখন আদিবাকে কলে বা মেসেজে পাচ্ছিলো না। তখনই সে শহর থেকে গ্রামে আসার জন্য রওনা দিয়ে দেয়। এসেই প্রথমে ভাবে একেবারে আদিবার কাছে যাবে।কিন্তু পরক্ষনে নিজেই বুদ্ধি করে জাহানারাকে ডেকে ওদের বাড়ি নিয়ে যায়।আর জাহানারা থেকে ওদের ঘরের চাবি নিয়ে আসে ফলে সহজেই বাড়িতে ডুকে যেতে পেরেছে।কিন্তু যখনি আদিবার রুমের সামনে আসলো দেখে আদিবার রুম লক করা।আদ্র একটা বাকা হাসি দিয়ে নিজেত প্যান্টের পকেট থেকে আদিবার রুমের চাবি বের করলো।আদ্র এর কাছে আদিবার রুমের ডুপ্লিকেট চাবি ছিলো তাই অনায়াসে ডুকে পড়ে আদিবার রুমে। রুমে গিয়ে দেখে আদিবা কাথা মুড়ি দিয়ে সুয়ে আছে। আদ্র আদিবার সামনে গিয়ে ওর মুখের উপর থেকে কাথাটা সরাতেই আৎকে উঠে আদ্র। একি অবস্থা তার আদিবার চেহারা লাল হয়ে আছে।চোখ দুটোও ফুলে আছে দেখে বুজাই যাচ্ছে যে আদিবা কান্না করেছে।আদ্র অস্থির হয়ে গেলো কি হলো তার আদিবার কেন তার আদিবা কান্না করেছে। একবার ভাবলো আদিবাকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করতে কেন কেদেছে সে।আবার পরক্ষনে আবার আদিবার ঘুমন্ত মুখ দেখে চিন্তা করলো আদিবা ঘুম থেকে উঠলেই জিজ্ঞেস করবে তাই সাত পাচ না ভেবে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে পড়লো।এর পরের কাহিনি তো আপনারা জানেন।
________আদ্র আদিবার মুখ চেপে ধরে আছে।আর আদিবা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে লাফালাফি করছে আদ্র থেকে ছাড়া পাবার জন্য।আদ্র ওর লাফালাফি দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
–” কেন এতো লাফাচ্ছিস?জানিস আমি না চাওয়া পর্যন্ত তুই আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবি না।সো স্থির হয়ে থাক।নাহলে তুলে এক আছাড় মারবো।”
আদিবা শান্ত হয়ে বসলো।চোখ দিয়ে ইশারা করলো নিজের মুখ থেকে আদ্র এর হাত সরাতে।তা বুজতে পেরে আদ্র বললো,
–“ছাড়বো বাট আর চিৎকার করবি না। আর আমি যা জিজ্ঞেস করবো তার সোজা উত্তর দিবি।”
আদিবা বাধ্য হয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ালো।আদ্র আদিবার মুখ ছেড়ে দিতেই আদিবা জোড়ে জোড়ে নিস্বাস নিতে নিতে বলে,
–“, আপনি কি পাগল এইভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে আর একটু হলে মরেই যেতাম।”
–“তো চিৎকার করলি কেন?”ভ্রু-কুচকে বললো আদ্র।
আদিবা ভয়ে ভয়ে বলে,
–“আপনাকে দেখে ভয় পেয়েছিলাম।”
–“তো এমন কাজ করিস কেন?যার জন্য আমার ভয়ে রুমের ভীতর দরজা আটকে বসে থাকা লাগে?”
আদিবা মাথা নিচু করে নিলো। দেখা যাবে এখন আদিবা কোন কিছু উল্টাপাল্টা বললে এক থাপ্পরে তার রূহ্ আকাশে উঠিয়ে দিবে।আদিবাকে চুপ করে থাকতে দেখে আদ্র আবারো বললো,
–“এইবার ভালোই ভালোই বল আমার ফোন রিসিভ করিসনি কেন?মেসেজ এর রিপ্লাই দিস নাই কেন?”
আদিবা আসতে করে বলে,
–“কলেজ থেকে এসে শাওয়ার নিচ্ছিলাম।”
–“হুম! তা বুজলাম! তবে দেড়ঘন্টা শাওয়ার কেন নিয়েছিস?”,
আদিবা চুপ করে রইলো।আদ্র রেগে এইবার আদিবার গাল চেপে ধরলো জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,
–” খুব বেশি বড় হয়ে গেছিস তাই না।আমার থেকে কথা লুকাস!মেরে ফেলবো একদম!বল কেন এতোক্ষন শাওয়ার নিয়েছিস।আর মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট থিং ইজ তুই কেন কান্না করেছিস?”
আদ্র এর গাল চেপে ধরায় আদিবা অনেক ব্যাথা পাচ্ছে আবার লিমন এর বলা কথা গুলোও মনে পড়ছে।তাই আদিবা জোড়ে কান্না করে দিলো।

চলবে,,,