এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৭

0
143

#এ_কেমন_ভালোবাসা?
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
__________________.৭.__________________
চৌধুরী বাড়ির ফার্ম হাউস এর বাগানে গাছের সাথে বাধা লিমন আর তার লোকদেরও হাত পা বেধে হাটু গেড়ে মাটিতে বসানো হয়েছে।ভয়ে থরথর করছে কাপছে তারা।আর তাদের সামনেই হকিস্টিক হাতে দাড়িয়ে আছে আদ্র।চোখ মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে কপালের রগগুলো ফুলে নীল হয়ে আছে দাতে দাত চেপে রাগী চোখ লিমন এর দিক তাকিয়ে।প্রচন্ড হিংস্র দেখাচ্ছে তাকে।কাল রাত্রে আদিবা থেকে সব জেনেছে আদ্র।রাগে থর থর করে কাপছিলো।কাল রাত্রে মেহেদী আর আসিফ বহু কষ্টে ওকে সামলিয়েছে।এই বলে যে লিমনরা বাড়িতে নেই।তারা কাল সকাল অব্দি লিমনকে ধরে এনে দিবে।তারপর যা করার আদ্র করবে।তাই আদ্র কিছুটা শান্ত হয়েছিলো।কিন্তু সকাল হতেই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় আর লিমনকে ধরে এখানে নিয়ে আসে।মেহেদী আর আসিফ,আদ্র এর বন্ধু শান্ত,জাহিদ আর সাহিলকে কল করে সব বলে।কারন এই মূহুর্তে ওরা ছাড়া আদ্রকে কেউ সামলাতে পারবে না। আদ্র তার বন্ধু শান্তকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“আদিবাকে এই জানোয়ারটা কি কি বলেছে আবারো একটু বল তো!”
শান্ত উঠে দাড়িয়ে আদ্র এর কাধে হাত দিলো বললো,
–“দেখ আদ্র শান্ত হো।আদিবা কিন্তু তোর এই রূপ টা দেখেই ভয়ে তোর কাছে আসে না।”
আদ্র রাগে চিৎকার করে বলে,
–“ডু হুয়াট আই সেইড ড্যাম ইট!”
আদ্র এর চিৎকারে শান্ত,জাহিদ,সাহিল ভয়ে পেয়ে গেলো।তাই ওরা ভয়ে ভয়ে বলে,
–” ও আদিবাকে বলেছে ওর সাথে একরাত থাকতে আর টেন্সন করতে না ও না-কি আদিবাকে বিয়ে করবে।পরে তানহা তোর কথা বললে ও বলে যে তোর সামনেই না-কি আদিবাকে….”
আর বলতে পারলো না সাহিল এইসব কথা মুখ আনলেও ঘিন্না লাগছে।আদিবাকে তারা অনেক ভালোবাসে বোন হিসাবে।তাদেরও অনেক রাগ লাগছে কিন্তু আপাতত আদ্র এর জন্য ওরা শান্ত আছে।আদ্র গর্জন দিয়ে লিমন কে বেধরক পিটাতে পিটাতে বলে,
–“কু***বা** তোর এতো বড় সাহস। তুই আমার সামনে আমার আদিবা কে! ভাবতে পারলি কি করে।তোর কলিজাটা একবারো কাপলো না।হারামী তোকে আজ মেরেই ফেলবো।ইউ ব্লাডি বিচ তোর জিহ্বা কেটে দিবো আমি।”
ইচ্ছামতো মারছে লিমন আর ওর লোকদের।অবস্থা বেগতিক দেখে শান্ত,জাহিদ আর সাহিল ওকে আটকালো বহু কষ্টে।জাহিদ বললো,
–“শান্ত হো ভাই।আর মারলে ওরা মরে যাবে।”
–“মরে যাক ওদের মতো জানোয়ারদের বেচে থাকার অধিকার নেই।”শান্তভাবে বললো আদ্র।
তারপর উঠে দাড়ালো।জ্যাকেট টা পড়তে পড়তে সামনের দিক হাটা দিলো।সাহিল জিজ্ঞেস করলো,
–“কোথায় যাচ্ছিস আদ্র?”
বিনিময়ে আদ্র কিছু বললো না।সোজা জীপগাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।শান্ত,সাহিল আর জাহিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আদ্রকে নিয়ে তারা অনেক চিন্তায় থাকে।গ্রামে এইসব ছেলেদের সাথেই একবার আদ্র মারামারি করতে গিয়ে একজনকে আদ্র শুট করে মেরেফেলেছিলো।আর এই ঘটনা আদিবা নিজ চোখে দেখেছিলো।এরপর থেকেই সে আদ্রকে অনেক ভয় পায়।আগেও পেতো কিন্তু ওই ঘটনার পর সে একেবারে আদ্র এর সামনে আসাই বন্ধ করে দেয়।তাই এটা ভেবেই ওরা ভয় পাচ্ছে না জানি আদিবা আবারো আদ্রকে ভূল বুজে।
____________________________
কলেজে ক্লাস করছিলো আদিবা।কাউছার স্যার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংক বুজাচ্ছিলো আদিবাও ক্লাসে খুব মনোযোগী হয়ে বসে আছে।এই অংকটা সে ১০ বার চেষ্টা করেও পারেনি।তাই আজ পণ করেছে এটাকে একেবারে মাথায় সেট করে নিবে।আদিবা যখন অংক বুজতে ব্যস্ত।হঠাৎ ঝড়ের গতিতে আদ্র এসে ওকে সবার সামনে টেনে গটগট পা ফেলে নিয়ে যেতে লাগলো।আদিবা আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে আছে
হচ্ছেটা কি তার সাথে সে বুজতে পারছে।যখন তার মস্তিষ্ক জানান দিলো যে আদ্র তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে চেচিয়ে উঠলো,
–“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ছাড়ুন আমাকে।আমার ক্লাস আছে।স্যার কি মনে করবে।স্যার আমাকে প্যানিস করবে কলেজ থেকে বের করে দেবে।প্লিজ ছাড়ুন আমাকে আমার লাগছে।স্যার আমাকে টিসি দিয়ে দিবে।”
আদ্র চোখ গরম করে আদিবার দিকে তাকালো,,
–“ফোর ইউর কাইন্ড ইনফোরমেশন ভূলে যাস না এই কলেজ টা আমাদের ওই।তাই তোকে এই কলেজ থেকে বের করে দেবে এতো সাধ্য কারো নেই।সো এখন চুপচাপ আমার সাথে চল। নাহলে এক থাপ্পর মেরে তোর গাল কপাটি ছুটিয়ে ফেলবো।”
আদিবা সাথে সাথে নিজের গালে হাত দিলো।যার মানে এই সে কিছুতেই আদ্র এর হাতের ঢাই কিলো ওয়ালা থাপ্পর খেতে চায় না।আদ্র আবারো আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে চললো।এদিকে কলেজের মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে আদ্র এর দিকে।আদিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।তার প্রচন্ড রাগ লাগছে এই মেয়েরা আদ্র এর দিকে এইভাবে তাকানোর কারনে।আদিবা মেয়েদের একটা মুখ ভেংচি দিয়ে।আদ্র এর হাত থেকে বহু কষ্টে নিজের হাত ছাড়ালো। আদ্র থেমে গিয়ে রাগী চোখে তাকালো।আদ্রকে অবাক করে দিয়ে আদিবা নিজেই আদ্র এর হাতটা ধরে মেয়েদের দিকে তাকালো।তারপর আদ্রকে বললো,
–“চলুন দাড়িয়ে আছেন কেন?”
আদ্র এখনো অবাক হয়ে আছে।এই মেয়ের হলোটা কি?যে মেয়ে নিজ ইচ্ছায় ওর সামনে আসে না।আর এখন সে নিজে সেচে তার হাত ধরেছে।ব্যাপারটা হজম করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ওকে।পরিমুহুর্তে আবার আশেপাশে চোখ পড়তেই ভ্রু-কুচকে তাকালো।দেখে সব মেয়েরা তার দিকে তাকিয়ে আছে।এতোক্ষনে আদ্র বুজতে পারলো তার পিচ্চি পাখি জেলাস ফিল করছে এই মেয়েরা তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে।আদ্র আদিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তার পিচ্চি বড়ো হয়ে গেছে তাকে নিয়ে জেলাসি ফিল করে।ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে গেলো আদ্রর।সব রাগ যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো।মুচকি হেসে আদিবাকে নিয়ে গাড়ির দিক আগালো।আদিবাকে বসিয়ে দিয়ে নিজে বসে পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আদিবা আড়চোখে তাকাচ্ছে আদ্র এর দিকে।এতোক্ষন লোকটা তো একেবারে রেগে টমেটো হয়ে ছিলো।আর এখন মুচকি মুচকি হাসছে।ব্যাপার কি পাগল টাগল হয়ে গেলো না-কি?আদিবা অবাক করে দিয়ে আদ্র বললো,
–“পাগল হইনি আমি।আমার মুড ভালো হয়ে গিয়েছে তাই মুচকি হাসছি।আজ যে অনেক বড় কিছু পেয়েছি আমি।আমার পিচ্চি বড় হয়ে গেছে।তাই আমি অনেক খুশি। ”
প্রথমে আদিবা আদ্র এর কথা বুজতে পারলো না।পিচ্চি বড় হয়ে গিয়েছে মানে?পিচ্চিতো আদ্র আদিবাকে ডাকে তাহলে।পরে মনে পড়ে গেলো সে একটু আগে কি করেছে।নিজ ইচ্ছায় আদ্র এর হাত ধরেছে।আচ্ছা তার এতো রাগ লাগছিলো কেন মেয়েরা আদ্রকে দেখছিলো বলে?কেন মন চাচ্ছিলো মেয়েগুলোর চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে।এই মেয়েদের উপর রাগ করে সে আদ্র এর হাত ধরেছে।ইসসস!! লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।এইসব ভাবতেই মূহুর্তেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে উঠলো আদিবা।আড়চোখে বার বাত তাকাচ্ছে আদ্র এর দিকে।
–“এইভাবে ব্লাসিং হওয়া ওফ কর।নাহলে তোকে আবার ভূলে স্ট্রোবেরি ভেবে আমি কামড়ে খেয়ে ফেলবো।”
আদ্র এর কথায় আদিবা আৎকে উঠে চোখ বড়বড় করে তাকালো আদিবা।চোখ গুলো যেন অক্ষিকোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।আর এদিকে আদ্র মুচকি হেসে নিজ মনে গাড়ি চালাচ্ছে।

চলবে,,,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।