এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
152

#এ_কেমন_ভালোবাসা?🤗
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
🌺৫🌺
আদিবা ডায়নিং রুমে সোফায় বসে মোবাইলে গেম খেলছে পায়ের নিচে একটা বালিশ দেওয়া।অবশ্য আদ্রই তাকে এখানে এনে বসিয়েছে সাথে ছিলো তাজবী।আদ্র ওকে কোলে নিয়েছে আর তাজবি ওর পা আগলে রেখেছিলো নাহলে আদিবা পায়ে ব্যাথা পেতো।এখানে এনে বসার পর থেকেই সে ফোনে গেম খেলছে।এদিকে সারা রাগে ফোসফোস করছে আদিবার প্রতি আদ্র এর এতো যত্ন দেখে। হঠাৎ সে কিছু একটা ভেবে শয়তানি হাসি দিলো।
–“এইটাই সময় আদ্র ও বাড়িতে নেই।চল সারা এই আদিবাকে তো একটা শিক্ষা দেওয়া লাগে।”
আবারো চিৎকার করে বললো,
–“রত্না একগ্লাস জুস দিয়ে যা।”
বলেই দুলতে দুলতে গিয়ে দাড়ালো আদিবার সামনে আদিবা তখনো গেম খেলায় ব্যস্ত।সারা এদিক ওদিক তাকিয়ে একেবারে আদিবার পায়ের উপর বসে পড়লো।ব্যাথায় আদিবা ঠাস করে ফোন টাফেলে দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলে,,
–“আল্লাহ্ গোওওওওওওওওওওও!!!মায়ায়ায়ায়ায়া।”
আদিবার চিৎকার শুনে সারা শয়তানি হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে অভিনয় শুরু করে দিলো,,
–” আদিবা আ’ম সরি আদিবা আমি দেখি নি যে তোমার পা এখানে ছিলো।আ’ম সরি।”
এদিকে আদিবার চিৎকার শুনে সবাই আদিবার কাছে এসে দাড়ালো।অনন্যা দেখে আদিবা ব্যান্ডেজ রক্ত ভিজে গেছে।জেরিন,রিক্তা কান্না করছে,জাহানারা অস্থির হয়ে গেছেন মেয়েকে এমন দেখে।ফারজানা গিয়ে আদিবাকে জরিয়ে ধরলো,,
–“ও মা কষ্ট হচ্ছে মা তাকা আমার দিকে তাকা দেখ তোর মামুনি এখানে তাকা।”
আদিবা ক্লান্ত হয়ে গেছে কান্না করতে করতে শরীর ও প্রচন্ড দূর্বল আজকে সারাদিনে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে।অনন্যা জেরিন কে আদ্রকে কল করে বলতে বলে সে আবার আদিবার ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।এদিকে জেরিন কল দিলো আদ্রকে। আদ্র কল রিসিভ করতে জেরিন অস্থির হয়ে বলে,,
–” হ্যালো আদ্র ভাইয়া।”
আদ্র চিন্তিত হয়ে বলে,
–” হ্যালো জেরিন কি হয়েছে?”
হঠাৎ পাশ থেকে চিৎকার শুনে আদ্র এইবার জোড়ে বলে,
–” এই এই জেরিন এতো চেচামেচি কেন? কি হয়েছে? আদিবা! আদিবা ঠিক আছে তো?”
জেরিন কান্না করতে করতে বলে,
–” নাহ নাহ ভাইয়া আদিবা ঠিক নেই!”
–” কি হয়েছে বলছিস না কেন?”
–” ভাইয়া আদিবার পা থেকে আবারো ব্লিডিং হচ্ছে?”
–“ওয়াট!!!! আমি এক্ষুনি আসছি রাখি।”
ফোন কেটেই তাজবী,মেহেদি আর আসিফকে উদ্দেশ্য করে আদ্র বলে,,
–” ভাইয়া এক্ষুনি বাড়ি চল!কুইক!”
–“কি হয়েছে ভাইয়া?” মেহেদি প্রশ্ন করলো।
আদ্র চিৎকার করে বলে,,
–” আমি যা বলছি তা কর!”
সবাই বুজলো কোন সিরিয়াস ম্যাটার তাই তারা জলদি জিপে উঠে রওনা দিলো।
–” ড্রাইভ ফাস্ট মেহেদি!” চিৎকার করে বললো আদ্র।
মেহেদি ওর চিৎকার শুনে জলদি ড্রাইভ করতে লাগলো।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
ফারজানা আদিবাকে বুকে জরিয়ে রেখেছে।আদিবা একদম নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে আর ওর চোখ দিয়ে টিপটপ করে পানি পড়ছে। অনন্যা বলে,
–“আজকে সারাদিনে আদিবার প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে তাই প্রচুর দূর্বল ওর শরীর।”
ফারজানা বেগম আদিবাকে জড়িয়ে ধরে নিয়েই বলে,
–” মেয়েটার সাথেই কেন এমন হয় বুজিনা।ওর উপর দিয়েই যতো ঝড় তুফান যায়।”
সারা ন্যাকা কান্না করে বলে,
–” মামুনি আ’ম সরি আমি দেখি নি ওর পা টা যে এখানে ছিলো নাহলে আমি এমনটা করতাম না।”
ফারজানা বেগম হতাস হয়ে বলেন,
–” ইট’স ওকে তুমি তো ইচ্ছে করে করোনি।এটা ওর ভাগ্যের ব্যাপার।”
এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে আদ্র বাসায় ডুকলো।এসেই সবার আগে আদিবার কাছে গেলো,,
–” আদিবা এই আদিবা কি হয়েছে?তাকা আমার দিকে আদিবা।”
আদ্র এর ডাক শুনে আদিবা চোখ পিটপিট করে তাকালো। পরিমূহুর্তেই আদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আদ্র ওকে আস্তে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো,
–” আদুপাখি কান্না থামা।আমি আছি তো! চুপ কর কিছু হবে না।”
–” ভাইয়া ব্যাথা করছে অনেক!”কান্না করতে করতে বললো আদিবা।
আদ্র এক ঢোক গিললো ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে আদিবার কান্না দেখে।,
–” তুই না আমার আদুপাখি। আর আমার আদুপাখি তো এতো কান্না করে না।ইউ আর আ স্ট্রোং গার্ল নাউ স্টোপ ক্রায়িং।”
আদ্র এর কথা শুনে আদিবা নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর আদ্র বুজতে পারলো আদিবা ঘুমিয়ে গেছে। আদ্র খুব সাবধানে আদিবাকে সোফায় সুইয়ে দিলো।এরপর সিংগেল সোফায় বসে মাথা দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে কিছুক্ষন বসে রইলো।সবাই ভয়ে আছে না জানি আবার আদ্র কি করে বসে।হঠাৎ আদ্র শান্ত স্বরে বলে,
–“, আদু’র এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে?আর আমাকে সত্যি কথা বলবা সবাই!”
এদিকে সারার অবস্থা খারাপ,ভয়ে একেরপর ঢোক গিলছে।কাপা কাপা গলায় বলে,
–” আসলে আদ্র আমি সোফায় বসার সময় ওর পা টা খেয়াল করিনি তাই এরকম হয়েছে।”
আদ্র মাথা তুলে তাকালো সারা’র দিকে। আদ্র এর চোখ গুলো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে সে চিৎকার করে বলে,
–” টেল মি দ্যা ট্রুট ড্যাম ইট!”
ফারজানা ছেলেকে এমন করতে দেখে বলেন,
–” আদ্র শান্ত হো।এখানে আদিবা আছে ও ভয় পাবে!”
মা’র কথা শুনে আদ্র কিছুটা শান্ত হলো।তারপর বলে,
–” আমাকে সত্যিটা বল সারা।”
এইবার রত্না এগিয়ে এসে বলে,
–” আদ্র ভাইজান একখান কথা কই?”
রত্নাকে দেখে সারা ধমক দিয়ে বললো,
–” তুই চুপ থাক তোর এই জায়গায় কি কথা!
–” ইউ জাস্ট সাট আপ সারা! ওকে বলতে দেও।[ রত্নাকে উদ্দেশ্য করে] রত্না তুই বল।”
রত্না গর গর করে বলতে শুরু করলো,
–“ভাইজান সারা’ আপু আমার কাছ থাইকা জুস চাইতে আমি উনার লাগি জুস আইনা উনারে দিতে যাইয়া দেখি উনি ছোডাঅাপু মনির পায়ের দিকে চাইয়া আছে।হেরপর নিজের ইচ্চায় হের পায়ের উপরে বইসা পড়ছে হেরপর ওইতো ছোড আপুমনি ওমনি চিল্লান দিয়া উঠলো।”
রত্নার কথা শুনে সবাই অবাকের শেষ পর্যায়ে। সারা ভয়ে ভয়ে বলে,
–” রত্না কককি বববলছিস তততুই?আমি কককেন এএএএরকম ককরবো?”বিশ্বাস করো আদ্র……”
সারা আর কিছু বলার আগে আদ্র ওকে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পর মারলো।সারা থাপ্পর খেয়ে ওর মায়ের গায়ের উপর পড়লো।সারা’র ঠোঁট কেটে গেছে থাপ্পর খেয়ে
এদিকে আদ্র রাগে থরথর করে কাপছে। পারলে এক্ষুনি সব ধ্বংস করে দেয়। আদ্র দাতে দাত চেপে বলে,
–” সারা বল তো এখন তোকে আমি কি করতে পারি?আমার তোকে এক্ষুনি মেরে ফেলি কিন্তু আফসোস আমি মেয়েদের সাথে এতোটা খারাপ বিহেভ করতে পারি না।”
সারা ভয়ে শেষ,
–” দেখো আদ্র রত্না মিথ্যা বলছে ওর দেখায় ভূল হয়েছে আমি এসব করি নি। তুমি আমাকে শুধু শুধু মারলে।”
–” তুই কি করতে পারিস কি পারিস না আমি তা খুব ভালো করে জানি।”
–” তুমি সামান্য এই গাইয়া মেয়েটার জন্য আমার সাথে এইরকম বিহেব করছো?”
আদ্র যথা সম্ভব নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে কারন এখানে আদিবা আছে সে চাচ্ছে না এখানে কোন সিন ক্রিয়েট করতে।
আদ্র ওর বাবা মানে হাসাদ চৌধুরি কে বলে,
–” বাবা তোমার বোনের মেয়েকে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে যেতে বলো নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।ও কাকে গাইয়া বলছে আমি কিন্তু ওর জিভ টেনে ছিরে ফেলবো।ওকে যেতে বলো বাবা।”
সারা’র মা বলে,
–” ভাই তুমি তোমার ছেলেকে কিছু বলবা না।সে কিন্তু রিতি মতো আমাদের অপমান করছে।”
হাসাদ চৌধুরি খুবি শান্তভাবে বলেন,
–” এখানে আমার কিছু করার নেই। তোর মেয়ে যে কান্ড ঘটিয়েছে এর পর আদ্র এতো শান্ত আছে এটা শুকরিয়া আদায় কর।”
–” এতো দরদ কেন আদ্র এর আদিবার জন্য।কই আমার মেয়ের জন্য তো এরকম করে না।সেখানে সারা ও তো ওর ফুফাতো বোন।”
–“, তুই ভালো করেই জানিস আদিবা আদ্র এর জন্য কি।ইনফেক্ট আমরা সবাই জানি যে আদ্র আদিবাকে ভালোবাসে।শুধু মাত্র আদিবা জানে না।তো আদিবার প্রতি আদ্র এর এতো সেন্সিটিভ হওয়া কোন ব্যাপার না।আশা করি বুজেছিস।”
–” তাই বলে তুমি আমাকে এইভাবে অপমান করে তারিয়ে দিচ্ছো।ভাই ভুলে যেওনা এই বাড়িতে আমারো অধিকার আছে।”
আদ্র একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
–” ফুপ্পি তুমি কোন অধিকার এর কথা বলছো?অধিকার আছে ছোট ফুপ্পির কারন সে তার জায়গা সম্পত্তি সব বাবা আর চাচ্চুদের দিয়ে গেছে।আর তুমি নিজের গুলা সব বিক্রি করে ফেলেছো।সো তোমাকে এখানে যতোটুকু সম্মান দেওয়া হয় আমি মনে করি তাই তোমার জন্য অনেক বেশি।”
সারা’র মা রেগে মেগে বলে,
–” আদ্র ভূলে যাস না আমি তোর বড় ফুপ্পি।আমার সাথে ভালো করে কথা বল।”
–” তুমি আমার বড় ফুপ্পি দেখেই আমি যথেস্ট ভদ্র ভাবে কথা বলছি আর তোমার মেয়েকেও কিছু বলছি না।তোমাদের জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি তাদের এতোক্ষনে মাটিতে পুতে দিতাম।”
তারপর তাজবী, মেহেদি আর আসিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–” তোরা একটু আমাকে আদিবাকে নিতে হেল্প কর।আমি একাই নিতাম কিন্তু আমি একা নিলে ওর পায়ে ব্যাথা পাবে।”
ওরা ৩ জন সাই দিয়ে আদ্রকে হেল্প করলো আদিবাকে নিয়ে যেতে।
এদিকে আদ্রদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সারা’র মা বলে,
–“, ভাই এটা একদম ঠিক করলে না।আর বড় ভাইয়া, ছোট ভাইয়া তোরাও কিছু বললি না।এই অপমান আমি মনে রাখবো।”
তাজবী আর মেহেদির বাবারা চুপ করে রইলেন তাদের কিছু বলার নেই।কারন তারা জানে এখানে সম্পূর্ণ দোশ সারা’র আম্মুর।তাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছেন।
বাকি দুইভাইদের কাছ থেকেও কোন জবাব না পেয়ে সারা’র মা সারাকে নিয়ে চলে গেলেন।

চলবে,,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।