কল্পনায় হলেও শুধু আমারি থেকো পর্ব-০৩

0
703

#কল্পনায়_হলেও_শুধু_আমারি_থেকো💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
#পর্ব_০৩
মেঘ খেয়াল করে দেখলো টিভিতে আমান আর মেঘের বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট এর ছবি দেখানো হচ্ছে। আর কোরিয়ান ভাষায় সংবাদ পাঠ করা হচ্ছে।
মেঘ অবাক হচ্ছে সব কিছু দেখে
কিন্তু আমান তাকে তোয়াক্কা না করে মেঘকে নিয়ে বাইরে এসে সোজা গাড়িতে উঠলো।
সে উঠতে রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়া হলো
আর গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে।
চারিদিকে উঁচু উঁচু বিল্ডিং ছাড়া কিছুই দেখা সম্ভব না।
বেশ কিছু সময় গাড়ি চলার পরে একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামতে বিশাল এক গেট খুলে দেওয়া হয়।
গাড়ি ভেতরে যায়।
আমান নেমে মেঘকে নিয়ে বাসার ভেতরে যায়।
–ওয়েলকাম টু your নিউ হোম মিসেস.খান।
কিন্তু মাত্র ২ বছরের জন্য।
আমানের কথায় মেঘকে সব কিছুই মনে করিয়ে দিচ্ছে পূর্বের কি কি হয়েছে।
মেঘ চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
একটাই প্রশ্ন করে,
–কেন করছেন এমন আমি কি দোষ করেছি।
একটু বলুন।
–সময়ের সাথে সাথে দোষ খুঁজে পাবে।
তার আগে বলি এটা সাউথ কোরিয়া।
আমার দেশ এটা।
এতোটা সময় তোমার দেশে ছিলাম তাই হয়ত তোমার কোন ক্ষমতা থাকলেও থাকতে পারত। কিন্তু এখন এখানে শুধুমাত্র আমার রাজত্ব। কারন এটা আমার দেশ।
এই বাড়িটা দেখছো প্রতিটা ইট ও আমায় খবর দিবে যদি তুমি পালাতে চাও।
জাস্ট চেষ্টা করবে না পালানোর।
তুমি এখান থেকে একা বাংলাদেশ ফিরতেও পারবে না তোমার পাসপোর্ট ভিসা সব আমার কাছে।
এই বাড়ির বাউন্ডারি থেকে তুমি বার হতে পারবে না কখনো না।
তাই চেষ্টা ও করবে না আসা করি।
আমান মেঘকে একটা বিশাল রুমে বসিয়ে কথা গুলো বলো,
আর বেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে,
মেঘের বুঝতে বাকি নেই যে লোকটা বাংলাদেশি না।
মনের মাঝে হাজার রকমের প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে।
,
কিন্তু হাজার রকম ক্লান্তি ত ভেতরে ভর করেছে।
বিছনার এক কোনে গুটি মেরে বাচ্চাদের মতো শুয়ে পরলো মেঘ।
প্রায় ২ দিন চললো প্রচন্ড চিন্তা।
না খাওয়া।
নির্ঘুম।
বিনা গোসল তাকে গ্রাস করেছে ভিশন ভাবে।
বিন্দুমাত্র শক্তি নেই অন্য কিছু করার।
কারোর সাথে কথা বলার ইচ্ছে ই নেই এখন।
,
কিছু সময় পর কিছু কাপড় হাতে আমান মেঘের রুমে আসে,
বাচ্চা দের মতো এক পাশে নিজেকে গুটিয়ে শুয়ে আছে।
ক্লান্তি তার মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে
আমান মেড দের দিয়ে মেঘের ঘরটা গুছিয়ে দেয়।
আর একটা ফ্রগ আর জিন্স খাটের পাশে রেখে একটা চিরকুট দিয়ে চলে যায়।
,
সকাল গড়িয়ে বিকাল,
ঘুম ঘুম চোখ দুটো মেঘের খুলেছে।
না খেয়ে আর থাকা সম্ভব না তার পক্ষে।
পেটের মধ্যে মনে হচ্ছে সবি ফাঁকা।
কিছুই নেই।
পাশে থাকা বোতল থেকে পানি খেয়ে নেয় মেঘ।
বিছনা থেকে উঠে পাশে একটা কাপড় দেখতে পায়।
সাথে একটা চিরকুট।
মেঘ চিরকুট টা হাতে নেয়,
–মিসেস.খান গোসল করে নিন।
কাপড় টা পরে নিচে আসুন অপেক্ষা করছি।
আমান।
মেঘের কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছে নেই।
এমনিতেও গোসল তাকে করতে হবে।
কাপড় নিয়ো সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়।
ফ্রেস হয়ে বের হয়।
রুমে এসে দেখতে পায় অনেক রকম খাবার রাখা হচ্ছে তার সোফার সামনের টেবিলে।
আমান পায়ে পা তুলে বসে আছে।
–খেয়ে নেও।
আর বলো না যে খাবো না আমি এক কথা দুইবার বলবো না।
মেঘ চুপচাপ খেয়ে নেয়।
আমান কিছুটা অবাক হয়।
মেয়েটা ত্যাড়া আসা ছিলনা এতো সহজে মেনে নিবে।
মেঘের খাওয়া দেখে আমান বুঝতে পারলো ওর প্রচুর খুদা পেয়েছিল।
মনে মনে খুব খারাপ লাগে তার উচিত হয়নি এভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া।
,
,
,
–সাউথ কোরিয়ার একজন অতি প্রভাব শালি সফল বিজনেসম্যান আমান খান।
বিক্ষাত এই বিজনেসম্যান এর বাবা সাউথ কোরিয়ান হলেও মা ছিলেন বাংলাদেশি।
তরুন প্রজন্মের মেয়ে গুলোর কাছে সে এক জন আইডল।
এমন কোন তরুনি নেই যে তাকে চিনবে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক তিনি বাংলাদেশি কোন এক নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
যার জন্য চারিদিকে সোরগোল।
গতকাল বাংলাদেশ টু সাউথ কোরিয়ান সফরে তার সাথে ছিল একটি মেয়ে।
যাকে সে তার স্ত্রী এর রূপে উপস্থাপন করেছে।
টিভিতে সংবাদে মেঘের ছবি দেখে মাহিমা রহমান আর রিমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কি দিয়ে কি হলো।
–মা এগুলো কি হচ্ছে।
–আমি কিছু জানি না।
ইয়া আল্লাহ এগুলো সত্যি অবিশ্বাস্য কর।
আমার মেয়ে।
মাহিমা রহমান কান্নায় ভেঙে পরে।
সত্যি ই কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই কারোর।
হুট করে কি হচ্ছে।
,
,
সূর্য অস্ত্র যাচ্ছে।
পকেটে হাত রেখে সূর্যের শেষ কিরন টা দেখছে।
কাঁচের জানালা ভেদ করে আলো ভেরতে আসছে।
এই শহর টা ভিশন বড়ো।
চারিদিকে বড়ো বড়ো কাঁচের তৈরি ইমারত।
কেউ সখের বসে গাছ লাগালে তাই শুধু দেখা যায়।
বাংলাদেশ থেকে এক দম আলাদা।
নিজের ২৪ বছর বয়সে এই প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমণ ছিল আমানের।
তার মায়ের দেশ টা যে ঠিক এমন হবে তা ভাবে নি সে।
খুব ইচ্ছে ছিল মায়ের বাড়িতে যাওয়া৷। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না তার আগেই অন্য এক নতুন সত্যের মুখোমুখি হয়েছে সে।
,
আমনের ফোনটা হটাৎ বেজে ওঠে পকেট থেকে ফোনটা বের করে
নাম্বার টা দেখে একটা বাঁকা হাসি দেয় আমান যেন এতো সময় এই ফোনটারি অপেক্ষায় ছিল সে,
–এতো সময় পরে ফোনটা আমার কাছে এলো ভেবেছিলাম এয়ারপোর্টে ঢোকার কিছু সময় পরেই আমি ফোনটা পাবো।
–(……….)
ওপাশের কথা শুনে আমান আবারো অট্ট হাসিতে মেতে ওঠে,
–ওয়াউ ওয়াউ ওয়াউ।
মিসেস.চৌধুরী।
এতো কেন তেজ আপনার বলুন ত৷।
মেঘ কে কিন্তু আমি আমার স্ত্রী করে নিয়েছি বিয়ে এক দিক দিয়ে হয়ে গেছে শুধু ঘটা করে আমার দেশে করা বাকি।
তাই এতো বেশি উত্তেজিত হবেন না।
আমার দেশে আপনি কিছুই করতে পারবেন না।
সো চেষ্টা ও করবেন না।
আর একটা কথা।
আমার স্ত্রী থেকে যতো দুরে থাকবেন এটা আপনার জন্য ই ভালো হবে।
কথাটা বলে আমান ফোন কেটে দেয়।
,
আর সোজা মেঘের রুমে চলে আসে,
মেয়েটা বসে বসে কাঁদছে।
নামাজের পাটিতে বসে কাঁদছে।
দু-হাত তুলেছে সৃষ্টিকর্তার কাছে।
মেঘের কান্না কেন জানি না আমানের সহ্য হচ্ছে না৷
কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার কান্না দেখে।
বুকের ভেতর ভেঙে আসছে।
কিন্তু কিছু একটা মনে হতে নিজেকে সামলে নেয় আমান।
মেঘ হাত নামিয়ে আমিন বলে জায়নামাজ উঠিয়ে রাখে।
পেছনে ফিরে আমানকে দেখে কিছুটা চমকে ওঠে।
–কি হলো ভয় পেলে কি?
–(…..নিশ্চুপ)
–কাল সকালে আমাদের বিয়ে মানে হলো ঘটা করে বিয়ে যাকে বলে।
প্রেস থাকবে।
পৃথিবী জানবে তুমি আমার স্ত্রী।
সো নিজেকে সামলে নেও।

–আমার সামলানো না সামলানো তে আপনার কি আসে যায়।
আমি ত আপনারি পুতুল মনে করবেন আপনি যেভাবে চালাবেন সেভাবেই চলবে।
মেঘের কথার মানে আমান বুঝতে পারে।
একপা করে মেঘের দিকে এগোতে থাকে।
মেঘ চোখ শক্ত করে আমানের দিকে তাকিয়ে রয়।
হয়ত ভয় গুলোও সব কেটে যাচ্ছে।
চলবে,