কাব্য গোলাপ৷ পর্ব-০২

0
369

#কাব্য_গোলাপ

#Neel

তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সম্পূর্ণ করে দূরে সরে দাঁড়ালাম। মাথা নিচু করে। এমপির বেটা আমাকে দেখে এমন রিয়েকশন করলো যেন আমি ফেলনা পারসন এই পৃথিবীতে।এর থেকে মানুষ পশু পাখিকে দেখেও ভালো রিয়েকশন দেয়।

কাব্য – তুমি ইইইইই??

তো? আমি ইইইই, আমি বলে কিছু হয়েছে? নিউক্লিয়ার বোম কি ফেটেছে? নাকি , আপনি যে খাম্বা তা ভেঙে দুভাগ হয়ে গেছেন।

কাব্য – এই মেয়ে তুমি কি জন্ম থেকেই বেশি কথা বলো নাকি? আর তোমার সাথে যখন ই আমার দেখা হয় তখন ই আমি মুসিবতে পরি!!

ঐ এমপির বেটা, আমাকে এই মেয়ে এই মেয়ে বলছেন কেন‌? আমার নাম হুমাইরাতুজ রোজী।আর কি বললেন? আমার সাথে দেখা হলেই মুসিবতে পরেন? ইশ্ আইছে, অমুসিবত ওয়ালা লোক রে আমার, যেন জীবনে কখনো মুসিবতে পরে নাই।

কাব্য – এই এই কিসের এমপির বেটা? আমার নাম আছে!! সাদমান হোসাইন কাব্য।বুঝছো।কাল মনে নেই? কাল কী করেছিলে…

শিপু, নয়ন , হাসান,রাহি চারজন ই বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে আর কি হবে।

হঠাৎ শিপু বলল – কাব্য ভাই আপনি থামেন ভাই। এরা হচ্ছে বেডি মানুষ।হা হা হা ।(ফেইসবুকের ঐ কার্টুন গুলোর মতো স্টাইল করে)

এই শিপু কি বললি তুই??

শিপু একটা বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে বলল – বেডি মানুষ। কেন রে রোজী তোর কি বেডা হওয়ার ইচ্ছা আছে? প্লাস্টিক সার্জারি করবি মন্টি রয়ের মতো?

সবাই হেসে উঠল। আর আমার গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। উফ্ এই শিপুরে নিয়ে যে কি করি।

বললাম – শিপুর বাচ্চা রেএএ (দাঁত মুখ খিচে) তুই দাঁড়া। তোকে তো…

শিপু ওখান থেকেই দিল দৌড়, সাথে পিছনে পিছনে আমি। আমার পিছনে আমার গ্যাঙের সবাই। কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।

কাব্য ভাবছে, দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। সে তার গ্রামে ফিরেছে তো এই রোজ না না না তার গোলাপের জন্য ই। তার গোলাপ ফুল হয়তো তাকে চেনে না, জানে না, সে তো সব ই জানে। সে জানে তার গোলাপ ফুল বারি দুষ্টু।

এগুলো ভাবছে আর কাব্য হাসছে। কাব্য যত হাঁটছে , মানুষ তত হাসছে। কাব্য বুঝতে পারছে না, মানুষ কেন হাসতেছে। সে তো তার গোলাপ ফুলের কান্ড দেখে হাসতেছে , মানুষ কি তাকে দেখে হাসতেছে! কিন্তু কেন?
হয়তো,তার হাসিতে গ্রামের মানুষ জন ও খুশি।

অন্যদিকে দৌড়াতে দৌড়াতে শিপু রে ভাগে পেয়েছি। শিপুরে পেয়ে ই দিলাম কয়েক গা কিল। ধুম ধাম।

শিপু – মাগো ওও। ফুফি গোওও। এই ছেমরি রে ফুফি কি খাওয়াইয়া বড় করতেছে। কিল দেয় না ফুল দিয়ে বারি দেয়।
(আচমকা শিপু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল)
বলল – এই রোজী, তোর হাতে জোর কি স্লো নাকি রে। একটা কিল ও জোরে লাগে নাই। হরলেক্স খাইস।

শিপুওওও (চিল্লিয়ে)

রাহি – তোরা থাম একটু। ঐ চুন্নি, আমার ক্রাশের পিছনে ওগুলি কি লিখছোস। তোর পিছন পিছন তো চলে আসলাম। বল তো সত্যি করে। তোকে বিশ্বাস নেই, আজ নিশ্চই আমার ক্রাশের বারো টা বাজবে।

রাহির কথা শুনে হাসি পেলো। হাসতে হাসতে নিচে বসে পড়লাম।হাসি থামছে ই না। হঠাৎ করেই পিঠে ধুম করে একটা কিল পড়লো। সাথে সাথে ই বেঁকে গেলাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম কে মারলো। আমি জানতাম এই ছেমরা ই মারবে। এটা ওর বাজে স্বভাব। কখনো ই আমাকে হাসতে দেখতে পারে না। ছেড়া মানুষ।হা হা হা।

বললাম – এই নয়নার জামাই নয়ন।শালা নান্নু মিয়া। দিলি তো , মাগো এই ছেড়া কি খায়।ঐ তুই, কি খাইয়া হাত লোহার মত বানাইছোস।

নয়ন – আবার নান্নু মিয়া। রোজ এর বাচ্চা রোজী। আরেকটা খা। খাইয়া শক্তি বানা। না হয় বোবা হয়ে যা, তবুও নান্নু মিয়া বলবি না।

হাসান – থাম, আগে বল এমপির বেটার পিছনে কি লিখছোস?

কিছুই না শুধু একটা কবিতা। আমি কি এখনো সেই আদিম যুগের মানুষের মতো আছি নাকি? আমি আধুনিক যুগের মানুষ। তবে টেকনিক টা একটু আদিম ই।

রাহি – এই চুন্নি, তোরে বক্তব্য দিতে কে কইছে রেএ। কি লিখছোছ তাড়াতাড়ি বল। আমার ক্রাশের জন্য চিন্তা হচ্ছে রে। আমার ওয়ান এন্ড ওয়ানলি ক্রাশ।

এএএ আইছে।ওয়ান এন্ড ওয়ানলি ক্রাশ। এটা কয় নম্বর আমাগো সবার জানা আছে। শোন তোর ক্রাশের নাম যেন কী? সাদ ! সাদমান হোসাইন কাব্য।
আমি তার পিছনে একটা কবিতা লিখে আটা দিয়ে চিপকে দিছি।
°কবিতা°

মূলার রং সাদা
সাদবিলাই গাধা
গাধায় দেয় হাঁক
সাদ দেয় পাদ
পাদে অনেক গন্ধ
সাদের কারনে কলেজ আজ বন্ধ!!

ওমা একি, এটা বলতেই গ্যাঙের সবাই হাসতে হাসতে বসে পড়ল। রাহির ক্রাশ , তাও রাহি হাসছে।হু, রোজীর কান্ড বলে কথা , হাসবে না, অবশ্যই হাসতে হবে।

___
কাব্য বন্ধু মহলে আসতেই হাসির রোল পড়ে গেল। কাব্য ভুরু কুঁচকে তাকালো আর বললো – ঐ তোরা হাসছিস কেন? সত্যি করে বলতো। আমি যার সামনে পড়ি সে ই হাসে। পিচ্চি পোলাপাইন ও হাসা বন্ধ করে না।আর ওরা পাদ পাদ কেন বলছে রে।

বন্ধু মহলের হতে একজন উঠে গিয়ে কাব্যের পিছন থেকে কাগজটা খুলে কাব্যের হাতে দিয়ে বলল – এটা পড়। আর আজ তুই নিশ্চিত রৌজীর কবলে পড়েছিলি। তাই না?

কাব্য – তোরা গোলাপ ফুল না না রৌজী কে চিনস?

সবাই একসাথে হেসে উঠলো। এর মধ্যে রবি বলল- এই মাইয়া রে কে না চিনে। পুরো গঞ্জে একমাত্র এই মেয়ে আর ওর গ্যাঙ রে সবাই চিনে আর ওর কান্ডে ওরে ভয় ও পায়।

কাব্য – কিহ্।এই পিচ্চি নাদুসনুদুস মিষ্টি মেয়ে কে ভয় পায়।

রবি – ওর চেহারার মানে ওর মিষ্টি ফেইসে পইরো না। ও আমাদের ও গাঙের জলে নাক চুবানি খাইয়েছে। ও কথা তোরে পরে বলবো।
ঐ দেখ রাত আসছে।এই কাগজটা ওরে দে। দেখ ও কি বলে।

রাত আসতেই কাব্য রাতের হাতে কাগজটা দিল। রাত এটা পড়েই হাসতে শুরু করলো।বলল – তুই আবার ও আমার বোনের খপ্পরে পড়ছোস? তোরে আরেকবার ও (হাসতে লাগলো)

কাব্য – তুই বুঝলি কীভাবে,এটা তোর বোনের কান্ড।

রাত – এই এলাকায় আর কারো মাথায় এমন শয়তানি বুদ্ধি পাবি না, যতটা আমার বোনের মাথায় পাবি। আমার বাপ ওরে আদরে আদরে বাঁদর বানিয়েছে। আগে বল কীভাবে কি হলো?

কাব্য সব খুলে বলল। রাত বলল-তুই কালকে ওর কথা আমাকে বলেছিলি, আমি তার পরিবর্তে ওকে এক কন্ডিশন ফ্রি তে আমি নোট কম্পিলিট করছি,তার প্রতিশোধ এভাবে নিল।

কাব্য তার গোলাপ ফুলের এহম দুষ্টুমি তে‌ অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেল।ভাবলো গোলাপ ফুলের দেখা পেয়েই এতো টুকু তে দুবার বাজিমাত দিয়েছে, যখন জীবনে, মনে আরো কাছে যাবে তখন কি করবে?

____

পরের দিন, আজ থেকে কলেজ আবার ও শুরু। রেডি হয়ে নিচে নেমে টেবিলে বসে বললাম – মা মা নাস্তা দাও।

মা রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল – আমার লাক্স সাহেবের মেয়ে আইছে, কাজে কামে কোথায় মারে একটু সাহায্য করবে তা না, খালি খাই আর পাড়া ঘুরি টই টই।

মাকে বললাম – লাক্স সাহেবের মেয়ে নাই , ওটা ভুল বলছো, লাক্স সাবান আছে। আচ্ছা আজকে আমি কলেজ থেকে ফেরার পথে কিনে এনে দেখাবো।আর…(কিছু বলার আগেই..)

পিছন থেকে ভাই বলল- খেয়ে কি করবি ? তুই তো পাদ,মূলা আর সাদকে নিয়ে গবেষণা করতে নেমেছিস।
বলেই আমার পাশে টেবিলে বসল।

আমি ভাইয়ের দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বললাম – জেন গেছো। ভালো । তোমার সময়ের অপেক্ষা করো। দেইখো কি করি।(একটা ভাব নিয়ে)

মা খাবার টেবিলে দিয়ে বলল – এখন খাইয়া চুপচাপ কলেজ যা। সময় বেশি নেই। আজ যদি কলেজ মিস যায় খবর আছে। কলেজ এ যাওয়ার সময় ও দুষ্টুমি আছেই। আল্লাহ তোরে দুষ্টুমির মাটি দিয়ে বানাইছে।
(মা বক বক করতে করতে আবার রান্নাঘরে চলে গেল )

আর কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত খেয়ে কলেজের দিকে রওনা হলাম। কলেজ বেশি দূরে নয়। হেঁটে যেতে দশ মিনিট। এখনো আমার হাতে আধা ঘন্টা সময় আছে। যেতে যেতে রাস্তায় আমার গ্যাঙ এর সাথে দেখা হয়ে গেল। কলেজ এ পৌঁছে গেলাম। ওমা একি, আজ কলেজ গেইট এর সামনে এমপির বেটা দাঁড়িয়ে আছে কেন?
কালকের ঘটনায় আমার উপর সন্দেহ করছে নাকি? আমি ভয়ে গ্যাঙ দলের মাঝে এসে গেলাম? কাল ভয় করে নাই, আজ একটু ভয় করছে।

রাহি – ইশ্ আমার ক্রাশ টা কে কত সুন্দর দেখা যায় রে। কালো শার্ট, হাতে ঘড়ি, ইশ একদম সেই।

এই রাহি চুপ কর। না হয় ক্লাসের ভেতর খাবি কিল। কিলিয়ে আচার বানাবো। আড়চোখে একবার এমপির বেটার দিকে তাকালাম, আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা বাঁকা হাসি দিল ( সত্যি বলতে, আজ বেটা কে সত্যি ই সুন্দর লাগছে) হঠাৎ….

চলবে…