কাব্য গোলাপ পর্ব-০৩

0
306

#কাব্য_গোলাপ

#Neel

এই রাহি চুপ কর। না হয় ক্লাসের ভেতর খাবি কিল। কিলিয়ে আচার বানাবো। আড়চোখে একবার এমপির বেটার দিকে তাকালাম, আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা বাঁকা হাসি দিল ( সত্যি বলতে, আজ বেটা কে সত্যি ই সুন্দর লাগছে) হঠাৎ করেই আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
কাব্য কে দেখে হচকচিয়ে তাকালাম। সাইড কেটে যেদিক যাচ্ছি, সেদিক ই পথ আটকাচ্ছে। বাধ্য হয়ে দাড়িয়ে গেলাম।

বললাম- ব্যাপার কি ? সামনের থেকে সরছেন না কেন?

কাব্য আমার কথায় গুরুত্বপূর্ণ না দিয়ে, আমার গ্যাঙের লোক কে বলল- তোমরা যাও। আমার গোলা..(থেমে গেল)রোজীর সাথে কথা আছে।

কাব্যের কথা শুনে বাকিরা চলে গেল। আমি ভুরু কুঁচকে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললাম – বেপার কী?পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমার ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে।

কাব্য তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল – আমার ইজ্জত এর ফালুদা বানিয়ে তো দিয়েছো , তো এর মাশুল দিবে না?

কাব্যের কথা শুনে চমকে উঠলাম। কাগজ টা তো আমার দেওয়া কালকের কাগজ টা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে না, এটা আমার ই কাগজ,যেটা আমি কালকে কাব্যের পিছন এ চিপকে দিয়েছিলাম। কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি একটা বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে বললাম – এটা কি? আমি কি কি করে করেছি? আমমি কিছু করিনি।( তোতলিয়ে)

কাব্য আমার দিকে একটু এগিয়ে এলো। ভয়ে আরো একটি ঢুক গিললাম। কাব্য বলল- খুলে দেখবি না কাগজ টা।

কাব্যের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা খুললাম। আমার লেখা সেই কবিতা। কাব্যের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে একটা হাসি দিলাম। বললাম -বাহ্ খুব সুন্দর তো কবিতা।

কাব্য – হা সুন্দর তো , তোর কবিতা তো তোর কাছে সুন্দর লাগবেই।আমাকে নিয়ে গবেষণা করবি তো কর না। সাদ, মূলা,পাদ এগুলো কি? (একটু ঝুঁকে আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে) আচ্ছা, আমাকে নিয়ে এতো ভাবিস? এতো? একদিনের পরিচয়েই, সামনে থেকে আরো পরিচয় বাড়বে, তখন? তাহলে আরো একটু বেশি ই করে ভাব, কাব্য_গোলাপ কে নিয়ে!!

কাব্যের এতোটা কাছে আসা আর ফিসফিস করে বলা কথা শরীরের রন্ধে রন্ধে এক অচেনা অনুভূতি ঘিরে ধরলো। শরীরের লোম শিউরে উঠলো। ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালাম। বললাম – এই কাব্য_গোলাপ কী?কাব্য তো আপনার নাম, কিন্তু গোলাপ তো ফুলের নাম, ফুলের সাথে আপনার সম্পর্ক কী?

কাব্য মুচকি হাসলো। তার গোলাপ ফুল দুষ্টু কিন্তু বড্ড বোকা। নিজের নামের অর্থ ই বুঝে না। বলল – বুঝতে পারবি তুই ও। সময় আসুক। এখন ক্লাসে যা। আর আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসিস না, আজ ছেড়ে দিয়েছি, সামনে থেকে ছাড়বো না, আমি কিন্তু বড্ড ভয়ংকর।

ভয়ংকর। মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম।

___
ক্লাসে… কোন ভাবেই মন দিতে পারছি না। এমনিতেই আমি খুব একটা ভালো স্টুডেন্ট না। মোটামুটি লেভেলের।তার উপর আজ মাথা থেকে কাব্যের বলা ঐ কথাটি মিলাতে পারছি না। #কাব্য_গোলাপ।(গল্পের নাম কাব্য_গোলাপ, রাইটার -নীল)

কোনমতে তথ্য ক্লাস শেষ করলাম। এবার ইংরেজি ক্লাস। মা গো, এই একটা ক্লাস,কথা শুনলেই ভয় করে। আমি বুঝি না বাপু,আমরা বাঙালি, যেই ভাষায় জন্য যুদ্ধ করলাম আবার ও আমাদের দেশে আমাগো রে ই অন্য ভাষা শিখতে হয়। বেপার টা লজ্জাজনক।যদি ভাষা শহিদেরা জানতে পারে ,কবর থেকে উঠে এসে আমাদের গলা চেপে ধরে জিজ্ঞেস করবে, আমাদের জীবন ফিরিয়ে দে। তোদের জন্য জীবন দিয়ে কোন লাভ ই হয় নাই, সেই তোরা অন্য দেশের ভাষা ই পরোস।

নিজে নিজে বকবক করে ই যাচ্ছি। কিন্তু ইংরেজি ক্লাস হওয়ার নাম ই নেই।রাহি আমাকে চুপচাপ নিজের সাথে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করল – এই চুন্নি,তোর কী হয়েছে? নিজে নিজে পাগলের মত বকবক করছিস কেন?

রাহির দিকে তাকিয়ে মুখটা দুঃখিত ভাব করে বললাম – চিন্তা, চিন্তা রে। বিয়ে সাধী হয় নাই, বাচ্চার মা ও হই নাই, আজ ইংলিশ ক্লাস ও হয় নাই, তবুও আমার মাথা থেকে কাব্যের চিন্তা নামছে না।

রাহি চমকে উঠল, বলল – কাব্য?? ওও ওয়েট ওয়েট, আমার ক্রাশ তোর সাথে কি কথা বলল রে। আমাকে তো পাত্তা ই দেয় না।বল না, তোকে কি বলল?

কী আর বলবো? বেটা কালকের করা আমার কুটনৈতিক কান্ড সম্পর্কে জেনে ফেলেছে। আহ্, এই দুঃখ কই রাখি। আমি বাপ্পারাজ এর মতো শেকা খাইলাম রেএএ।

এর মধ্যেই নয়ন, হাসান,শিপু এসে যোগ দিল। নয়ন আমার অভিনয়ের মধ্যে ই মাথায় একটা টোকা দিল।
ইশ্ বাপু রেএএএ।মাথাটা ঝিমঝিম করছে এখুনি। নয়নের দিকে তাকিয়ে হাতে থাকা ইংলিশ বই টা দিয়ে ওর মাথা বরাবর ঠাস করে একটা বারি দিলাম।

নয়ন – ও মা গো। এই ছেমরি তোর শরীরে জোর নাই। তুই এক কাজ করিস লায়ন পাগলার পিছু পিছু ঘুরিস, কি খায় কি করে নকল করবি, তুই তো আবার নকল করতে এক্সপার্ট। শক্তিশালী হয়ে যাবি।

নয়ন রেএএএ। নয়নার জামাই নান্নু মিয়া। দূর হ। চোখের সামনে থেকে। এক গ্লাস পানির ভেতর ডুবে মরবি, এটা আমি তোরে অভিশাপ দিলাম। হু।

শিপু – আহ্,বেডি মানুষ। অভিশাপ ছাড়া আর কিছু ই পারে না।ওমেন হা হা হাহা।

আমি শিপুরে কিছু বলতে যাবো, তার আগেই রাহি বলল – এই থাম থাম। তুই বলতো আমার ক্রাশ কি কইছে।

আমি কাব্যের বলা সব কথা ওদের বলে দিলাম। বললাম – কাব্য_গোলাপ কী?

এর মধ্যেই আমাদের বাংলা স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলো। সবাই সবার জায়গায় ঠিক মতো বসলাম।স্যার বলল – আজ আমি ক্লাস নিতে আসি নাই। ইংলিশ ক্লাসের টিচার ১৫ দিনের ছুটি তে আছেন। তাই তার ক্লাস আজ হয় নি। কিন্তু তার পরিবর্তে কাল আমাদের এক প্রিয় ছাত্র ক্লাস নিবে এই ১৫ দিন । ঠিকাছে। (সবাই একসাথে চিল্লিয়ে বলল-ঠিকাছে)
স্যার চলে গেল। ক্লাস শেষ। কলেজ ও ছুটি। সবাই বাসার দিকে রওনা দিলাম।
আজ কলেজ একটু তাড়াতাড়ি ই ছুটি হয়েছে। সবাই যার যার মতো চলে গেছে। বাকি টা রাস্তা আমাকে একা যেতে হবে।

হঠাৎ পিছন থেকে পিচ্চি দের দল ডাক দিলো। পিচ্চি দল হলো, মিনা, নিঝুম, দ্বীপ আর রাহুল।

দ্বীপ – রোজী আপু , আপনি তো আমাদের ভুলে গেলেন। দুইদিন তো আপনার খোঁজ ই পেলাম না?

ইরেএএ। সত্যি ই তো। এই দুই দিন ওদের কথা ভুলে ই গেছিলাম। সারাদিন মাথায় কাব্য কাব্য ঘুরছে। বেটা তালগাছ খাম্বা কোথাকার।

বললাম – সরি রেএএ একটু বিজি ছিলাম।তাই তোদের সাথে যোগ দিতে পারি নাই। আচ্ছা বল , কি খবর তোদের? হঠাৎ সাঙ্গু পাঙ্গু দল কোথায় যাচ্ছিস এক হয়ে।

মিনা – আম চুরি করতে। মজনুদের আম বাগানে অনেক পেয়ারা হয়েছে। ইশ্, কাঁচা কাঁচা আম, আমার তো এখন ই জ্বিবে জল আসছে। চল না, তুমি ও।

নিঝুম – ও রোজী আপু চলো না? তোমাকে বাসায় খোঁজতে গেছিলাম, আন্টি আমাদের কে দৌড়ানি দিছে। ভালোই হয়েছে রাস্তায় তোমাকে পেয়ে গেছি।

বললাম – এই থাম থাম। দাঁড়া ভেবে দেখেছি। ইশ্ কাঁচা কাঁচা আম, কী মজা। আচ্ছা চল। তাহলে।

মজনুদের বাগান এ আম পাড়ছি। হঠাৎ দেখি লায়ন পাগলা দৌড়ে আসছে। চোর চোর বলে। কি আর আম পাড়াপাড়ি , যা পেড়েছি তা নিয়ে ই দৌড়।

ওমা আমরা কি দৌড় দিলাম। আমাদের থেকে দ্রুত লায়ন পাগলা আমাদের পিছনে দৌড়ে আসছে। পিচ্চি গ্রুপ এদিক ওদিক দিয়ে কেটে পড়লো।লায়ন পাগলা আমার পিছনে পড়ছে।
এমনিতেই এই পাগলা বেটার মাথা পাগল, তার উপর আজ ভাগে পেয়েছে । এখন কি করি। চোখ মুখ খিচে দিলাম দৌড়। অবশেষে মাঝ রাস্তায় কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।
এখনো চোখ বন্ধ করেই ভাবছি, হলো টা কী? রাস্তার মাঝে খাম্বা এলো কি করে। চোখ খুলতেই….

চলবে…