কাব্য গোলাপ পর্ব-০৫

0
252

#কাব্য_গোলাপ

#Neel

আমি কিছু বললাম না, রাগ করে ওদের ওখান থেকে চলে আসলাম। এসেই, ক্লাসে ঢুকবো, তার আগেই আমি চমকে উঠলাম। ক্লাসে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।সাথে , বাংলা টিচার ও।
কাব্য কে আমাদের ক্লাসে দেখবো ভাবতে পারি নাই। খুশিতে আত্মহারা হয়ে কাব্য কে বলেই ফেললাম – যাক ফাইনালি আপনাকে পেলাম কাব্য। আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।

এই বলে ক্লাসের দিকে পা বাড়াতেই,কাব্য হাতের ইশারায় থামতে বলল। একটু ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি বুঝতে পারলাম না হুট করে কাব্য চেঞ্জ চেঞ্জ লাগছে কেন?

কাব্য -আর এক পা ও ক্লাসে দিবে না। আর হা, ডোন্ট সে কাব্য। ইটস্ কাব্য স্যার ‌।রিসপেক্ট দিয়ে কথা বল। আমি এই ক্লাসের ইংলিশ টিচার।নাউ সে, হু আর ইউ?

কাব্যের দিকে ভ্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছি। ক্লাসের সবাই হাসতেছে । বাংলা টিচার এর ইশারায় থেমে গেল। কিন্তু আমার শত্রুর দল মানে অপজিট দল এখনো মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বুঝতে পারছি না হচ্ছে টা কি। ইংরেজি স্যার কাব্য।বাট কেসে হুয়া এ।

বাংলা টিচার বললেন – আরে , রৌজী যে, ভেতরে এসো।
স্যারের কথা শুনে আমি হচকচিয়ে উঠলাম, মাথায় হা সূচক ইশারা করে ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমার সাথে সাথে রাহি , নয়ন, হাসান,শিপু ও প্রবেশ করলো।

বাংলা টিচার সবাই কে বললেন, আগামী ১৫ দিনের জন্য কাব্য ইংলিশ ক্লাস নিবে। কাব্য শহরে বড় ভার্সিটিতে ইংলিশ সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করছে। পিন্সিপালের রিকোয়েস্ট এ কাব্য ক্লাস নিতে রাজি হয়েছে।(রাইটার -নীল)

এই বলে বাংলা টিচার ও চলে গেল । কেবলমাত্র কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের অনেক মেয়েরা কাব্য কে দেখে ক্লাস খাইছে। ফুসর ফুসুর করছে ই। আমি আড়চোখে কাব্য কে দেখছি।

কাব্য -সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ
কর। আমার কথা মন দিয়ে শুন। আমি সাদমান হোসাইন কাব্য। ইংলিশ এ অনার্স করছি।এবার থার্ড ইয়ারে। আমার পরিচয় তো দিয়ে ই দিলাম এখন তোমরা একে একে আমাকে পরিচয় দাও।দ্রুত পরিচয় দিবে কিন্তু। আমাকে তো ক্লাস স্টার্ট করতে হবে।রাইট!!

একে একে সবাই পরিচয় দিচ্ছে।এক পর্যায়ে আমার পালা এলো। আমি প্রথমে ভাবলাম, আমাকে তো চিনে ই , পরিচয় দিব কী দিব না?

কাব্য – কী হলো , তুমি কি পরিচয় দিতে ভয় পাও? নাকি পরিচয় দিতে পার না?

ক্লাসের সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। কাব্যের প্রতি রাগ হচ্ছে । আমি মনে মনে ভেবে নিয়েছি, যতই হেল্প করুক এই বেটা কে আমি, আমি হুমাইরাতুজ রোজী ধন্যবাদ জানাবো না। মুখ গম্ভীর করে বললাম – আমি হুমাইরাতুজ রোজী।

এটুকু বলে বসে পড়লাম। আস্তে আস্তে সবাই পরিচয় পর্ব শেষ করলো। সারা ক্লাসে আর কোন কথা বলি নাই। কাব্য নিজ মতো ক্লাস করিয়ে চলে গেল।

ক্লাস শেষ হতেই কাব্য চলে গেল আর আমাকে রাহি খোঁচাচ্ছে।এর মধ্যেই মিতু এলো। বলল – তুই কাব্য স্যার কে আগে থেকেই জানতি। বেচারি, তোকে অপমান করাটা জোস ছিল।(বলেই, হাসতে লাগলো)

হঠাৎ করেই শিপু এসে মিতুর মাথায় টোকা দিল।মিতু উফ্ বলেই মাথা ধরে পিছনে ফিরে তাকাল।

শিপু – সর এখান থেকে। ওরে ডিস্টাব করবি না।

মিতু – তোদের দেখে নিব।

এই বলে চলে গেল। চুপচাপ সারাটা ক্লাসে ছিলাম। আসলে কাব্য আমার মন খারাপ করে দিসে।ক্লাস শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

রাহি , শিপু নয়ন হাসান এটা ওটা বলেছে। যেন আমার মুড ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সত্যি ই আজ আমি বন্ধুদের পাশে থেকে ও মুড ঠিক করতে পারছিই না।

শিপু – রৌজী , তুই কি জানিস লায়ন পাগলা তোর পিছু পিছু আবার ও আসছে, ঐ দেখ। দৌড়া।(রাইটার -নীল)

শিপুর দৌড়া বলতে সময় নেই আর আমার দৌড়। আমি দৌড় দিলাম, কিন্তু পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই, ওরা হাসতেছে।
আমি কোমরে হাত রেখে শিপুর দিকে তাকিয়ে আছি।
শিপু হাসতে হাসতে বলল- সরি সরি , এটা ফান ছিল। আর আর (আবার ও হাসতেছে)

রেগে শিপুর চুল গুলো টেনে ধরলাম। বললাম – শিপুর বাচ্চা, শকুন্না। তুই আবার ও ঐ পাগলা খাটাশটার নাম নিছোস। ভয়ে আমার কলিজা এখনো লাফাচ্ছে। আজ তোর একদিন আমার যতদিন লাগে। তোর চুল ছিঁড়ে আমি বাসায় নিয়ে শাক রানমু।

নয়ন – রৌজী , ছেড়ে দে রে। চুল ছেলেদের সম্বল। না থাকলে মেয়েরা পাত্তা দেয় না রে। শিপুর চুল না থাকলে কেমন লাগবো।

রাহি- কেমন লাগবো আর ,ছোলা বান্দর। বুইড়া শকুন্না লাগব।যা শালা, এই শিপুরে তখন কে বিয়ে করবো।

রাহি এ কথা বলতে নেই, শিপু আমার হাত থেকে ছুটে রাহির পিছনে দিল ধুম কিল।রাহি গেল বেঁকে।

রাহি – আল্লাগো কই তুমি। এই ছেমরা কিল দিলি কে? আমার পিঠ টা গেল।গেল রেএএ।শালা শকুন্না কি খাস রেএএ..

শিপু – চুপ ছেমরি চুপ। এই মাইয়া গো এক দোষ, না পারলেই হলো। লড়াই তে না পাড়লে , আমরা বেশি খাই আর কথায় না পাড়লে শকুন্না। বেডি মানুষ হা হা হা।

হাসান সবসময় শান্ত শিষ্ট স্বভাবের। তাই ও বলল – এই তোরা চুপ করবি। রৌজী কে যা জানাতে এসেছিলাম তা তো ভুলেই গেছোস। আগে ওটা বলে নেই ‌।

আমি বললাম – কী আর জানাবি।

রাহি – লায়ন পাগলা। (আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম, মনে মনে বললাম এই খাটাশ পাগলা আবার ও)

নয়ন – শোন আজ থেকে আমাদের গ্রামে আর লায়ন পাগলা কে দেখা যাবে না। সে পাগলা গারদে আছে। তার যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।

বললাম – তোরা সত্যি বলছোস?(খুশিতে এক লাফ দিলাম) এ কাজ টা কে করলো?

হাসান – কাব্য ভাইয়া। তুই জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর কাব্য ভাইয়া পাগল টাকে মেরেছে। গ্রামের সবাই একত্র হয়ে গেছিল। গ্রামের সবাই কাব্য ভাইয়া কে যখন বলল ওনি পাগল।২বছর আগে আমাদের গ্রামে ওনাকে দেখা যায় । শরীরে রক্তাক্ত ছিল।দিন রাত চিৎকার করতো। আর বলতো , ভালোবাসি কিন্তু ও হারিয়ে গেছে। আমরা ধরে নিছি,প্রেমিকার মারা যাওয়ার পর মাথার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তারপর ই পাগল হয়ে যায়। কিন্তু ও একমাত্র রৌজী কে দেখলেই কেন এমন করে কেউ জানে না।
তারপর কাব্য ভাইয়া তার ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করেন।(রাইটার -নীল)

ওরা এমন কিছু কথা বলে চলে গেল । আমি ও কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে গেছি। মনে মনে ভাবছি, কাব্য কত্তো ভালো। হঠাৎ মনে পড়ল আজকের ঘটনা গুলো।

____

সন্ধ্যায় আবার ও গ্যাং এর সাথে এক জোট হলাম। শপিং এ যাবো। কাল জুনিয়র দের নবীন বরণ। শপিং মলে এসে পৌঁছলাম সবাই। শপিং মল ঘুরে ঘুরে দেখছি তখন ই…..

চলবে…