কাব্য গোলাপ পর্ব-০৪

0
255

#কাব্য_গোলাপ

#Neel

এখনো চোখ বন্ধ করেই ভাবছি, হলো টা কী? রাস্তার মাঝে খাম্বা এলো কি করে। চোখ খুলতেই সামনে কাব্য কে দেখতে পেলাম। বাহ্ রে , যেখানেই যাই সেখানেই এই এমপির বেটা কে দেখতে পাই , বুঝি না বাপু, উনি কি আমাকে ফলো‌ করে নাকি?

উঠে দাঁড়ালাম। বললাম – আপনি ইইইই?

কাব্য – হে আমি ইইইই। আমি বলে কিছু হয়েছে? নিউক্লিয়ার বোম কি ফেটেছে?নাকি তুমি যে চোখে দেখোনা, তা প্রমাণ হয়ে গেছে।

বড় বড় চোখ করে তাকালাম। ভাবলাম, কি লোক রে বাবা, আমার সেদিনের কথা আমাকেই বলছে। মুখ ফুটে কিছু বলবো তার আগেই লায়ন পাগলা আমার হাত ধরে টান দিল।

লায়ন পাগলা কে আমার হাত ধরতে দেখে আমি ভয় পেয়ে কাব্যের হাত খামচে ধরি। অন্যদিকে বেচারা কাব্য বুঝতে পারছে না, এক পাগলকে দেখে রোজী এরকম করছে কেন।

থরথর করে শরীর কেঁপে উঠলো। লায়ন পাগলা বলল-ওও রোজী তোমাকে আমি আবার ও পেয়েছি। গোলাপ ফুল, তুই বড় হয়ে গেছিস রে, অনেক ভোমরা তোর পেছনে লেগেছে, কিন্তু তুই গোলাপে কাঁটা ও আছে।

লায়ন পাগলার হাত ধরাতে আমার আগের কথা মনে পড়ে গেল। এইতো স্কুলের গণ্ডি পার করে সবে কলেজে ভর্তি হলাম। আমি আর রাহি শাড়ি পড়েছি। আমি আর রাহি প্রায় শাড়ি পড়ি। তবে তা সর্বদা বাসা পর্যন্ত ই। কিন্তু সেদিন রাহির জোরাজুরি তবে আমি বাধ্য হয়ে শাড়ি পড়ে বাইরে হাঁটতে বের হই।
হাঁটতে হাঁটতে মজনুদের বাগান এর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে যেন এই লায়ন পাগলা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
এতো দিন প্রায় প্রায় দেখতাম এই পাগলা আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো না হয় তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসতো।
কখনো দেখতাম আমি বাড়ি থেকে বের হলে পিছু পিছু আসতো। কিন্তু সেদিন আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতে মোটা একটা লাঠি।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে, খুব বিরক্ত হয়ে গেছিলাম। বললাম – এই পাগল, লায়ন পাগলা , সর এন্তে,আমার সামনে থেকে সর ।

লায়ন পাগলা উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।বলল – ও গোলাপ ফুল, তুমি চেত কেন। তুমি খুব সুন্দর। আহামরি না, তবে অনেক মায়াবী। গোলাপ ফুল তুমি তো ফুটে গেছ। উমমম আমার মন খারাপ হয়ে গেলো গো।

রাহি – এই লায়ন‌ পাগল, সামনে থেকে সর। কি বক বক করছিস। ওর নাম রোজী, গোলাপ ফুল নয়।

লায়ন পাগলা রেগে গেল। হাতের লাঠি দেখিয়ে বলল- যা দূর হ তুই (রাহি)।

রাহি ভয়ে দূরে সরে দাঁড়াল। এতোক্ষণ ভয় না পেলেও এখন ভয় করছে।
লায়ন পাগলা হলদে কালো দাঁত বের করে হাসতে শুরু করলো, বলল – ভয় পাস নে , ভয় পাস নে। তোকে ভয় পেলেও সুন্দর লাগে। আমি তোকে বিয়ে করবো, খুব যত্নে লুকিয়ে রাখবো। চল।

হাত ধরবে এর আগেই আমি পিছু ফিরে দৌড় দিতে চাইলাম কিন্তু লায়ন পাগলা আমার শাড়ীর আঁচল ধরে টান দিতেই আমি নিচে পড়ে যাই।

লায়ন পাগলার চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেল। বলল – পালাচ্ছিলি, তুই ও ওর মতো পালাচ্ছিলি? কেন ? কেন রে। ও আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারে নাই, মরে গেছে ও মরে গেছে। আমি ও খুন করে ফেলছি , পাগল হয়ে গেছি , পাগল। আমি পাগল, পাগল (বলেই লাফাতে শুরু করলো)

এদিকে আমার অবস্থা খারাপ। আমি এমনিতেই ভয় পাওয়ার মেয়ে নয় তবে এই পাগল কে ভয় পাই। মিনিট দুয়েক পর লাফানো বন্ধ করে দিল। আমার দিকে তাকালো, এক গনবিরোধি চিৎকার দিলো।(রাহি ভয়ে দৌড়ে চলে গেল)

বললো – পালাবি, পালা। কোথায় পালাবি।

শাড়ি টানছে, আমার সব কিছু ই বুঝা যাচ্ছে। হাজার হোক আমি মেয়ে। সবে কৈশোরীর ছোঁয়া লেগেছে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

আবার ও আজ সেই লায়ন পাগলা। কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্যের দিকে অস্ফুট স্বরে বললাম – আমাকে বাঁচান।(সাথে সাথে সেখানেই ঢলে পড়লাম)

____

যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে নিজের রুমে পাই। পাশে মা বাবা ভাই আর কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।

মা – আমার মেয়ে কবে থেকে ভিতু প্রকৃতির হলো। তুই আবার ও লায়ন পাগলা কে দেখে জ্ঞান হারিয়েছিস। তুই জানিস না,সে পাগল। পাগলে কি না বলে।

সত্যি ই , ওনি তো পাগল। আমি ভয় পাই দেখে আমাকে ভয় দেখায়। আমি ও না। কিন্তু সে তো পাগল ই। পাগল দেখলে এমনিতেই আমি ভয় পাই।

মা বাবা চলে গেল। রাত ভাইয়া ও তাদের সাথে চলে গেল। শুধু কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। কাব্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। কাব্য ভাইয়া ও চলে গেল।

____

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেস হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কাব্য ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাতে হবে তো। আজ কলেজ গেইট পর্যন্ত চলে এলাম কোথাও কাব্য ভাইয়া কে দেখি নাই।

ক্লাসে মুড অফ করে বসে আসি। হঠাৎ গ্যাং এর সবাই এলো।

রাহি- ঐ চুন্নি, চুপচাপ বসে আছোস কেন? আজ তো কথাই বল্লি না? সত্যি করে বলতো কী করছোস আর কি হইছে।

ক্লাসে স্যার নেই। তাই ভাব নিয়ে উঠে বাহিরে চলে আসলাম। সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে বসলাম। সবাই আমার পিছু পিছু এলো।

শিপু – এই বেডি এতো ঢং করোস কেন? এই বেডি গো একটা অভ্যাস খারাপ, পেটের ভিতর থাকে এক কথা বাহিরে কয় আরেক কথা। এই রৌজী ,কইবি কি হইছে।বা/ল টেনশনে মাথা নষ্ট।

মন খারাপ করে সবটাই বলে দিলাম কাল থেকে আজ কী কী হইছে।

রাহি হাসতে হাসতে এখানে ই বসে পড়লো। ক্যান্টিনের বাকি মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
দাঁত চেপে বললাম – রাহি কুত্তি চুপ কর।

রাহি হাসতে হাসতে বলল – কেমনে চুপ করি তুই বল। এক বছর আগেও এই পাগল তোর পিছন পড়ছিলো। আজ আবার ও। ভাই রে ভাই।

আমি বললাম – একটু সিরিয়াস হ না। এই পাগল কে দেখলেই আমার ভয় করে। কিছু কর না?

হাসান – তাই বলে তুই বলতে চাস আমরা পাগলের সাথে যুদ্ধ করি ,তোর জন্য।

আমি মাথা উপর নিচ করে বললাম – হু।

নয়ন – ইশ্ , আইছে। তোর চামচা আমরা।

আমি কিছু বললাম না, রাগ করে ওদের ওখান থেকে চলে আসলাম। এসেই, ক্লাসে ঢুকবো, তার আগেই আমি চমকে উঠলাম। ক্লাসে….

চলবে…