কি আশায় বাঁধি খেলাঘর পর্ব-০৩

0
345

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (০৩)

হাসনাত সাহেব আর নিষাদ বাসায় পৌছালো ৯ টার দিকে।মনোয়ারা বেগম বেশ চিন্তিত ছিলেন এতো দেরি দেখে।
স্বামী সন্তান কে দেখার পর যেনো তার শান্তি হলো।
মনোয়ারা বেগম অস্থির প্রকৃতির মানুষ। অল্পতেই তার প্রেশার বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।

সকালের রাগটা অনেক চেষ্টা করে ধরে রেখেছেন এতোক্ষণ,কিন্তু কিছু বলার আগেই দেখলেন বাপ ছেলে দুজনের মুখই শুকনো।
ছেলের পাশে বসে চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হয়েছে বাবা তোর?”

নিষাদ জবাব দিলো না।আগের মতোই চুপ হয়ে রইলো।মনোয়ারা বেগমের অস্থিরতা বাড়তে লাগলো।
পায়ের জুতো খুলে নিষাদ দুইটা দুই দিকে ছুঁড়ে মারলো।

মনোয়ারা বেগম স্বামীর পাশে গিয়ে বসলেন,সকালের রাগ ভুলে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কী হয়েছে তোমাদের? ”

হাসনাত সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,”এতোদিনে আমার ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে মনু,কিন্তু কপাল খারাপ। মেয়েটার কোনো ঠিকানা জানা যায় নি।”

মনোয়ারা বেগমের প্রেশার বেড়ে গেলো,হাসনাত সাহেব উঠে গিয়ে ঔষধ এনে দিলেন।

ধাতস্থ হয়ে মনোয়ারা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।তারপর বললেন,”কি মানুষ তুমি বলো তো আমাকে?
আমার ছেলেটা না হয় এতোকিছু বুঝে না,তুমি তো বুঝো।তুমি কি পারো নাই মেয়ের বায়োডাটা কালেক্ট করতে?
এটুকু জ্ঞান কি নেই তোমার?
মাথায় সব তো দেখছি তোমার গোবরে ভর্তি,আজকেই বাজার থেকে টমেটো বেগুনের গাছ আনবে,তোমার মাথায় চাষ করবো আমি।”

হাসনাত সাহেব নিরবে স্ত্রীর ভৎসনা শুনে গেলেন।কিছু বললেন না।
বললেন না মানে বলার সুযোগ পেলেন না তার আগেই মনোয়ারা বেগম কাঁদতে বসে গেলো।চোখের পানি মুছে বললো,”ভেবেছিলাম এতোদিনে ছেলের একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে যখন আল্লাহ আল্লাহ করে মেয়েটাকে বউ করে নিয়ে আসবো বাসায়।কি সর্বনাশ হলো গো আমার,এখন এই মেয়েকে আমার ছেলে কোথায় খুঁজে পাবে গো আল্লাহ?
আমার ছেলে বুঝি আজীবন এরকম সিংগেল থাকবে আল্লাহ?”

হাসনাত সাহেব স্ত্রীর সাথে সুর মিলিয়ে বললেন,”রহম করো আল্লাহ,রহম করো।মেয়েটাকে মিলিয়ে দাও আল্লাহ।এই অধমের আর্জি কবুল করো।”

মনোয়ারা বেগম চোখ মুছে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,”তোমরা দোষ,তোমার জন্য এরকম হয়েছে।তুমি ৮-১০ টা প্রেম করায় আমার ছেলের কপালে প্রেম নেই,আল্লাহ গো,আমার ছেলের কপালে বুঝি বউ জুটবে না এবার আর…..”

বাবামায়ের এরকম কান্নাকাটি নিষাদের ভাল্লাগেনা।নিষাদ উঠে গেলো নিজের রুমের দিকে।মাথায় ঘুরছে মেয়েটার কথা।

বিছানায় ধপাস করে পড়লো নিষাদ চেঞ্জ না করে।
.
.
.
চন্দ্র বসে আছে নিজের রুমে গোমড়া মুখে। আজ সোহানের সাথে কথা বলতে পারে নি।
হতাশায় মন ছেয়ে গেছে তাই।
বাকীটা দিন কাটলো চন্দ্রর বিষণ্ণতায়। এরমধ্যে বিকেলে ছোট খালামনি কল দিলেন।

অনেক দিন পর ছোট খালামনির কল পেয়ে চন্দ্র কিছুটা অবাক হলো। খালামনির সাথে শেষ কথা হয়েছে চন্দ্রর মাস ছয়েক আগে।তাও রাগারাগি করে খালামনি ফোন রেখে দিয়েছে।
বুকের ভিতর কিসের একটা সুক্ষ্ম ব্যথা চিনচিন করে উঠলো।
হয়তো অভিমানে কিংবা একাকিত্বের জন্য।

চন্দ্র কল রিসিভ করে সালাম দিলো।
ওপাশ থেকে চন্দ্রর খালামনি রশ্মি বললো,”কিরে,কেমন আছিস তুই?”

চন্দ্র জবাব দিলো,”ভালো আছি।”

“শোন,একটা খুশির খবর আছে তোর জন্য।তোর খালুজান যাবে আজকে তোর হোস্টেলে,তোকে আর হোস্টেলে থাকতে হবে না।আমার কাছে থাকবি তুই এখন থেকে।”

চন্দ্রর গলা শুকিয়ে গেলো এই কথা শুনে।হোস্টেল থেকে চলে যেতে হবে চন্দ্রকে?
কেনো?
জীবনের এতোগুলা বছর কাটিয়েছে হোস্টেলে হোস্টেলে,এখন কেনো বাড়ি নিতে চায় খালামনি?
চন্দ্র আঁচ করতে পেরেছে খালামনির উদ্দেশ্য, তবু সরেস নিয়ে কিছু না বলে জবাব দিলো,”আমি হোস্টেলেই ঠিক আছি,আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।”
রশ্মি বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো,”ভাববো না কেনো,কি বললি তুই এটা,আমি ছাড়া কে আছে আর তোর?
তোর মা আমার হাতে দিয়ে গেছে তোকে,আমি-ই তো চিন্তিত হবোই তোকে নিয়ে।বেশি কথা বলিস না,বিকেলেই চলে আসবি।আমি তোর জন্য রুম গুছিয়ে রেখেছি।বাসায় আসলে বাকি কথা হবে।”

চন্দ্র কিছু বলার আর সুযোগ পেলো না।

চন্দ্র জানে বাকি কথা কি বাকি আছে।ভাবতেই চন্দ্রর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।এতো সোজা না চন্দ্রকে ফুঁসলিয়ে নিজের স্বার্থ আদায় করা।যার মনে যাই থাকুক না কেনো চন্দ্র নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে।

বিকেলেই চন্দ্রর যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেলো। প্রভা একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে চন্দ্রকে।কোঁকড়া চুলের এই অপূর্ব সুন্দর মেয়েটা এখন থেকে আর ওর পাশে শুবে না,যেকোন সময় মন খারাপ হলে এই মেয়েটা আর গান গেয়ে শুনাবে না।
ধুমধাম করে রাগের সময় সব কিছু ভাঙবে না।যেকোনো কাজে আর সাহায্য করবে না।
বড়বড় দুটো নীল চোখ দিয়ে প্রভার দিকে তাকিয়ে বলবে না,”প্রভারে,তোর ও কেউ নেই এই দুনিয়ায়,আমারও কেউ নেই।তাই আমি তোর সব,তুই আমার সব।”
প্রভার বাবা মায়ের ডিভোর্সের পর থেকে বাবা মা কেউই প্রভাকে কাছে রাখে নি।মাঝেমাঝে এসে দেখা করে যায় দুজনেই,দুজনেই নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
ইদানীং বাবা টাকাপয়সা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।মাও প্রভাকে বলে দিয়েছে নিজের ব্যবস্থা নিজে করতে,তিনি আর পারবেন না।

এসব ভাবতে ভাবতে প্রভার চোখে জল এলো।চন্দ্র এগিয়ে গিয়ে প্রভার চোখ মুছে দিলো।প্রভা অবাক হয় মাঝেমাঝে দেখে,চন্দ্রর ওর প্রতি ভালোবাসা দেখলে।
প্রভাকে জড়িয়ে ধরে চন্দ্র বললো,”ভাবিস না কিছু প্রভা,খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।তোকে আমার কাছে নিয়ে যাবো আমি।”

প্রভা কিছুই বুঝতে পারলো না এই কথার।চন্দ্র সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
.
.
.
পরদিন ফজরের আজান হতেই নিষাদ ছুটলো পার্কের উদ্দেশ্যে।
সারা সকাল কাটালো পার্কে কিন্তু মেয়েটাকে আর পেলো না।

দুপুরে বাড়ি ফিরলো নিষাদ ভাঙা মন নিয়ে।

চন্দ্র রেডি হচ্ছিলো ভার্সিটির জন্য,রশ্মি তখন চন্দ্রর রুমে গেলো।
কোনো ভণিতা না করে সোজা বললো,”উকিলের সাথে কথা বলেছিস? ”

চন্দ্র ঠান্ডা গলায় জবাব দিলো,”কিসের কথা বলবো?”

রশ্মির গলা চড়ে গেলো,চিৎকার করে বললো,”কি বলবি তুই জানিস না,আমার সাথে ভান করছিস তুই চন্দ্র,চালাকি করবি না আমার সাথে তুই খবরদার। ”

রশ্মি চিৎকার করতে করতে বের হয়ে গেলো।
রেডি হয়ে চন্দ্র রশ্মির রুমের সামনে যেতেই শুনতে পেলো খালু বলছে,”এরকম চেঁচামেচি করে কাজ আদায় হবে না,কৌশলে ওর থেকে সব বের করতে হবে,আমি খবর নিয়েছি শুধু ওর মা’র নামেই আছে চারটা ৮ তলার বিল্ডিং,বুঝো অবস্থা।সোনার ডিম পাড়া হাঁস ও,উল্টো চাল চাললে হিতে বিপরীত হবে।আদর সোহাগ দিয়ে বশে আনতে হবে।”

রশ্মি কি বললো চন্দ্র আর শুনার জন্য দাঁড়ালো না।মুচকি হেসে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।ক্লাসের আজ দেরি হয়ে গেছে ওর অনেক।

চলবে…..?

লিখা: জাহান আরা