কি আশায় বাঁধি খেলাঘর পর্ব-০৯

0
264

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (০৯)

রশ্মির মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে।চন্দ্র যখন জিজ্ঞেস করলো,”কেনো এভাবে ভেঙে দিলে আমার আব্বা আম্মার সংসার খালামনি?”

তারপর থেকেই রশ্মি যা তা বলে যাচ্ছে চন্দ্রকে।চন্দ্র চুপ করে রইলো।
রশ্মি চন্দ্রর নিরবতা সহ্য করতে পারলো না।চিৎকার করে বললো,”তোর বাপে ছিলো একটা কুলাঙ্গার,তার মেয়ে হয়ে তুই ভালো হবি তার আশা করাও বৃথা।গোবরে তো কখনো পদ্মফুল ফোটে না।”

নিজের আব্বাকে নিয়ে এরকম বাজে কথা চন্দ্র সহ্য করতে পারলো না। খুন চেপে গেলো মাথায়।প্রচন্ড রেগে গেলো,চন্দ্রর দুই গাল কান লাল হয়ে উঠলো। এতোক্ষণ ধরে রশ্মি অনেক কিছু বলেছে কিন্তু চন্দ্র পাত্তা দেয় নি।এবার চন্দ্রর আব্বাকে নিয়ে বলায় চন্দ্রর মনে হলো কেউ ওর কলিজা এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়েছে।
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চন্দ্র ব্যাগ থেকে কাঁচি বের করে রশ্মিকে ধাক্কা মেরে কাত করে ফেলে দিলো সোফায়।
রশ্মির গলা চেপে ধরে বললো,”আর একবার যদি আমার বাবাকে নিয়ে একটা বাজে কথা বলিস তাহলে তোর জিহবা আমি কেটে নিবো।সোজাসাপটা কথা বলবি।”

চন্দ্রর এই আক্রমণ রশ্মির কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো রশ্মির কাছে।রশ্মি ভীষণ ভয় পেলো।ভয়ে রশ্মির শরীর কাঁপতে লাগলো। চন্দ্রর এই রণমুর্তি রশ্মির ভাবনার বাহিরে ছিলো।
রশ্মির হঠাৎ করে মনে হলো বাঘের ঘরে বাঘ-ই হয়,বেড়াল হয় না।

রশ্মির শরীরের কাঁপুনি কমতেই চন্দ্র ব্যাগ থেকে
নীল রুমালটা বের করলো।
রুমাল দেখার সাথে সাথে রশ্মির কপালে ঘামের রেখা দেখা দিলো।গলা শুকিয়ে এলো রশ্মির।
চন্দ্র দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রশ্মি কাঁপা-কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,”এই রুমাল তুই কোথায় পেলি?”

চন্দ্র বললো,”প্রশ্ন সেটা নয় আমি কোথায় পেয়েছি,প্রশ্ন এটা যে এই রুমাল কেনো দিলে তুমি আমার আব্বাকে?”

রশ্মি বললো,”গিফট হিসেবে দিয়েছি,দোষ হয়েছে না-কি তাতে?”

চন্দ্র হেসে বললো,”না দোষ না, প্রেমের সম্পর্ক গড়ার উদ্দেশ্যে গিফট দিলে অবশ্যই সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ”

রশ্মি বললো,”আমি শুধু দুলাভাই হিসেবে দেখেছি তোর বাবাকে,দোষ আমার না তোর বাবার ছিলো।তোর বাবার চরিত্রে সমস্যা ছিলো।”

চন্দ্র কঠিন গলায় বললো,”আমার আব্বার চরিত্র খারাপ এটা কি সবাই আম্মার বিয়ের সময় থেকেই জানতো? ”

রশ্মি যেনো বুকে বল ফিরে পেলো।চড়া গলায় বললো,”অবশ্যই জানতাম আমরা সবাই।এজন্যই তো কেউ তোর বাবা মা’র সম্পর্ক মেনে নেয় নি,তোকেও কেউ ভালো চোখে দেখছে না তাই।ছি ছি ছি!
বিয়ের আগেই তোর মা পেট বাঁধিয়ে ফেললো,আবার সেই মেয়ে হয়ে তুই বড় গলায় কথা বলছিস?”

চন্দ্র এবার ফিক করে হেসে ফেললো। হেসে বললো,”খালামনি,আমার আব্বা যখন এতোই খারাপ লোক ছিলো,আমার মা ও খারাপ ছিলো তবে কেনো তুমি আমার আব্বাকে এরকম ভালোবাসা মাখানো একটা রুমাল দিলে?
কেনো এতো ঘনঘন আমাদের বাসায় যেতে খালামনি?তোমার তো তখন সংসার ছিলো,তুমি বিবাহিতা ছিলে।”

রশ্মি নিজের কথার জালে নিজে আটকে গেলো।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চন্দ্রর দিকে।রশ্মির বারবার মনে হতে লাগলো এই মেয়ে বাপকা বেটি।

চন্দ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রশ্মির দিকে।রশ্মির মনে হতে লাগলো চন্দ্র যেনো ওর মনের সব কিছু পড়ে নিচ্ছে।
চন্দ্রকে রশ্মির ভয় হলো কিছুটা,সেই সাথে নিজের অপরাধের কথাও মনে হলো।
রশ্মির হঠাৎ মনে হলো চন্দ্র সব জানে,সব বুঝে গেছে চন্দ্র।

চন্দ্র বললো,”আমার আব্বা যা করেছে তা খুবই খারাপ আমি জানি খালামনি,কিন্তু আম্মা তার পরিবারের কথায় যদি আব্বাকে ছেড়ে যাবার মতো সিদ্ধান্ত না নিতো তবে আব্বা এরকম অন্যায় কাজ করতো না কিছুতেই।
আর তার ফলস্বরূপ আব্বা কি পেয়েছে বলো?
আম্মা চেয়েছিলেন এবরশন করিয়ে ফেলতে কিন্তু আব্বা দেন নি।তাৎক্ষণিক বিয়ে করে নিয়েছে।
আব্বা আম্মাকে বিয়ে করার সাথেসাথেই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো।
তুমি চেয়েছিলে আব্বাকে বিয়ে করতে।নানা মামাদের কাছে আম্মা আব্বার সব খবর তুমিই পাচার করতে।আমার আম্মা যদিও এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নি কিন্তু আমি খুব সহজেই বুঝে গেছি আম্মার ডায়েরি পড়ে।
আমার বিশ্বাস আমার আব্বাও বুঝতে পেরেছিলেন এই বিষয়টা,তাই তিনি তোমাকে এড়িয়ে চলতেন।
আব্বার এই এড়িয়ে যাওয়ায় তুমি সহ্য করতে পারো নি।
আব্বা আম্মার বিয়ের পর ও তুমি আমাদের বাসায় যেতে শুধুমাত্র আম্মাকে ফুঁসলাতে এবং আব্বাকে বশ করতে।

আমি কি ভুল বলেছি খালামনি?”

রশ্মির মাথা ঘুরতে লাগলো। চন্দ্র এতো সহজে সব বুঝে রশ্মির ভাবনাতে ছিলো না এটা।চন্দ্র উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলো রশ্মিকে।
রশ্মির মনে হলো পুরো দুনিয়া ঘুরছে।তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে নিলো রশ্মি।মনে পড়ে গেলো অতীতের কতো কথা।এক সময় কতো কায়দা করেছে রশ্মি বোনের জামাইয়ের থেকে সুযোগ নিতে।
কিন্তু তার রাগী চোখের সামনে টিকতে পারে নি।আজ আবারও রশ্মির মনে হচ্ছে সেই চোখ দুটোই তার দিকে তাকিয়ে আছে একরাশ ঘৃণা নিয়ে।

একটু থেমে দম নিলো চন্দ্র।তারপর আবার বললো,”তুমিই তো আম্মাকে বুঝিয়েছিলে খালামনি আমাকে যেনো আব্বার কাছে যেতে না দেয়,আমার জন্য আম্মার যেহেতু আব্বাকে সবার অমতে এসে বিয়ে করতে হয়েছে তাহলে আব্বাকে কষ্ট দিতে হলে আমাকে আব্বার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।
আমার বোকা আম্মা স্বামীর চাইতে বোনকে বেশি বিশ্বাস করতো।
আর তাই তোমার কথা ধরেই আব্বার অন্যায়টা আম্মা ক্ষমা করতে পারেন নি।
আব্বাকে প্রতিনিয়ত শাস্তি দিয়েছে।সেই সাথে আমাকে ও শাস্তি দিয়েছে আম্মা।আমি পেটে না এলে তো আর আম্মার এতো বড় সর্বনাশ হতো না।
তুমি এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চেয়েছো।

আম্মার মনে যখন আব্বার সম্পর্কে প্রচন্ড ঘৃণা জন্ম নিলো তখন তুমি আবার আব্বার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে।
আব্বাকে বুঝালে এভাবে জীবন চলে না।আম্মাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত আব্বার।

আব্বা শেষ পর্যন্ত আম্মার দেয়া এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে নি।আব্বা যখন বুঝলো আমাদের পারিবারিক সব অশান্তির কারণ তুমি,তখন আব্বা তোমাকে ধমক দিলো আম্মাকে সব বুঝিয়ে বলবে।
তুমি তখন দেখলে তোমার সব চাল ব্যর্থ হলো।

তারপর তুমি সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজটা করলে।আম্মাকে বললে আব্বা তোমাকে রেপ করেছে।
আর আমার আম্মা জিদের বশে খুন করলো আব্বাকে সেই রাতে।”

রশ্মির কথা বলার শক্তিটুকু রইলো না।বলার মতো কিছু নেই ও।চন্দ্র যা বলেছে সব সত্য।
ঢকঢক করে গ্লাসের বাকি পানিটুকু খেয়ে নিলো রশ্মি।
চন্দ্র উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,”আমি আবার আসবো খালামনি,এরপর যখন আসবো তখন তোমার যমদূত হয়ে আসবো।আমার মায়ের সোনার সংসার তুমি নষ্ট করেছো।তোমাকে আমি বেঁচে থাকতে দিবো না।আমি যা বলেছি সব কিছুই সত্যি,তোমার ছেলেমেয়েদের সামনে তোমার এই মুখোশ আমি উন্মোচন করবো।”

চন্দ্র চলে গেলো। বাসায় গিয়ে সবে চেঞ্জ করে বসেছে তখনই রেশমা কল দিলো চন্দ্রকে।কল দিয়ে বললো,রশ্মি গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে।

চন্দ্রর মনে হলো শরীরে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলেছিলো তা এতক্ষণে নিভেছে।তবে চন্দ্র বেশি খুশি হতো যদি নিজ হাতে রশ্মিকে খুন করতে পারতো।

চলবে…..
লিখা:জাহান আরা