#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি🤍
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🤍
— পর্বঃ০২
________________
ভরা ভার্সিটির সম্মুখে দাঁড়িয়ে শ্রাবণ নামক এক সিনিয়র ভাইকে প্রপোজ করে বসলো আদ্রিজা। আর আদ্রিজার এমন কান্ডে শ্রাবণের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার মুখের দিকে। তাঁরা ভাবতেও পারে নি হুট করে এই আন্টি টাইপ মেয়েটা শ্রাবণকে ভালোবাসি বলতে আসবে।’
কয়েক মুহূর্ত আগে এক বুক সাহস নিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে হাতে একটা সুন্দর লাল গোলাপ সাথে চিঠি নিয়ে শ্রাবণকে প্রপোজ করতে আসলো আদ্রিজা। শ্রাবণ হলো আদ্রিজার ভার্সিটির সিনিয়র ভাই। দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। কিন্তু সুন্দরের পাশাপাশি দেমাকটাও চওড়া খুব। আর এই দেমাগি ছেলেটাকেই গত দু’বছর যাবৎ ভালোবেসে চলেছে আদ্রিজা। কখনো সাহস করে বলা হয় নি মনের কথা। কিন্তু কাল রাতে তুষার নামক ছেলেটির কথা শুনে কেন যেন বলতে মন চাইলো আদ্রিজার। তাই আজ সকাল সকালই এক বুক সাহস নিয়ে শ্রাবণকে ভালোবাসি কথাটা বলতে এসেছে আদ্রিজা। আচমকাই সকলের উচ্চস্বরে হাসার শব্দ কানে আসতেই নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আদ্রিজা। আদ্রিজার হাতে থাকা চিঠিটা ছো মেরে নিয়ে গেল শ্রাবণের এক বন্ধু। রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো,
‘ দেখি তো খালাম্মায় কি লিখে নিয়ে আসছে?
আদ্রিজা ধমকালো, ভড়কালো, ভয় পেল খুব। হয়তো মনে মনে যে ভয়টা পেয়েছিল সে সেটাই হতে চলেছে তাঁর সাথে।’
এদিকে শ্রাবণের সেই বন্ধু চিঠিটা খুলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই ওর হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলো শ্রাবণ। বললো,
‘ কি করছিস কি?’
উওরে পিছন থেকে শ্রাবণের বান্ধবী তিশা বলে উঠল,
‘ কি আর করছে তোর লাভ লেটারটা আমাদের সবাইকে পড়ে শোনাচ্ছিল মাত্র।’
বলেই হেঁসে ফেললো মেয়েটি। মেয়েটার দেখাদেখি সবাই হাসলো। যা দেখে শ্রাবণ বলে উঠল,
‘ হচ্ছেটা কি থামবি তোরা?’
সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল সবাই। সবাইকে থামতে দেখে শ্রাবণ এগিয়ে গেল আদ্রিজার দিকে। শ্রাবণকে নিজের দিকে আসতে দেখে ভয়ে বুক কাঁপছে যেন আদ্রিজার। না জানি কি হয় এখন?’
শ্রাবণ একটু একটু করে যতই সামনে আসছে আদ্রিজার বুক যেন ততই কাঁপছে। অতঃপর শ্রাবণ এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো আদ্রিজার। পা থেকে মাথা অবদি স্ক্যান করলো একবার। একদমই সাদামাটা পোশাকে দুইদিকে নিচু করে দুটো ঝুঁটি করে চুল বাঁধা সাথে চোখে চশমা। শ্রাবণ কিছুক্ষন আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ কোন ইয়ার?”
উওরে মাথা নিচু করেই বললো আদ্রিজা,
‘ জ্বী সেকেন্ড।’
‘ কোন গ্রুপ?’
‘ ম্যানেজম্যান্ট।’
‘ চিঠিতে কি লেখা আছে?’
সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো আদ্রিজা। এখন কি বলবে সে। আদ্রিজা ভাবলো এখানে আর দাঁড়াবে না। আর জীবনেও এই ছেলের ধারে কাছেও ঘেঁষবে না সে। নিজের ভাবনায় অটুট থেকেই উল্টো দিকে পা ফেলার উদ্যোগ নিলো আদ্রিজা। কিন্তু তার সেই ভাবনাতে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে বলে উঠল শ্রাবণ,
‘ কি হলো কথা বলছো না কেন?’
আদ্রিজা দাঁড়িয়ে পড়ে একবুক সাহস নিয়ে বললো,
‘ আই এম সরি।’
আদ্রিজার কান্ডে হতাশ শ্রাবণ। হতাশ হয়েই বললো,
‘ সরি ফর হোয়াট, তুমি যদি এই চিঠির জন্য সরি বলো তাহলে শুনে রাখো আমি তোমার সরি নিচ্ছি না। আর এর ভিতরে কি লেখা আছে সেটা যেহেতু তুমি বলতে চাইছো না তবে আমি নিজেই পরে নিবো। এটা পড়ে তোমার উওরও জানাবো।’
এই বলে আদ্রিজার হাতে থাকা গোলাপটা ছো মেরে নিয়ে নিলো শ্রাবণ। তারপর নাকে ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে বললো,
‘ নাইস। শোনো কাল বিকেল পাঁচটায় ভার্সিটির গেটের সামনে অপেক্ষা করো তোমার উওর তুমি পেয়ে যাবে। আর হ্যাঁ গোলাপটা কিন্তু খুব সুন্দর।’
আদ্রিজা অবাক হলো,ভয়ংকরভাবে অবাক হলো। তাঁর যেন বিশ্বাসই হলো না শ্রাবণের কথা। যেখানে শ্রাবণে বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে উপহাস করলো সেখানে শ্রাবণ তাঁকে অপেক্ষা করতে বলছে। আদ্রিজা বেশি ভাবলো না। উল্টোদিক ঘুরে নিজের ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সে।’
আর শ্রাবণ আদ্রিজার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গোলাপটা নাকে নিয়ে আরেকবার গন্ধ শুকলো। এমন সময় ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠল তিশা,
‘ তুই কি এই আন্টিটাইপ মেয়েটাকে দেখে ইমপ্রেস হলি?’
তিশার কথা শুনে শ্রাবণ হাসলো, শব্দ করে হাসলো। শ্রাবণের হাসি দেখে তিশা অবাক হয়ে বললো,
‘ তুই হাসছিস কেন? মতলবটা কি তোর?’
‘ মতলবটা কিছুই না শুধু টাইম পাস।’
‘ তাঁর মানে তুই এই মেয়েটার সাথেও,
‘ কিছুই করবো না।’
প্রতি উওরে হেঁসেই বললো তিশা,
‘ তুই আর ঠিক হলি না।’
তিশার কথা শুনে রহস্যময়ী হাসলো শ্রাবণ। তবে কিছু বললো না।’
_____
ভার্সিটির নিজ ক্লাস রুমে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বসে আরু। আর তার পাশেই গোল হয়ে বসে আছে শরীফ,সিফাত,তুলি, বুশরা আর আশিক। মুলত আরুর রাগ এই পাঁচজনের উপরই। কারন এঁরা পাঁচজনের কেউই কাল তাঁর বার্থডে তে আসে নি। কেন আসে নি সেই কইফয়েতই দিচ্ছে সবাই। কিন্তু সকলের বাহানা শুনতে নারাজ আরু। এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসলো আদ্রিজা। তাঁর বন্ধমহলকে দেখেই চটজলদি এগিয়ে গেল সে সেদিকে। ভাগ্যিস কেউ কিছু দেখেনি। আদ্রিজাকে দেখেই আশিক বলে উঠল,
‘ ওই তো আমাদের নিরিবিলি আদ্রিজা আফা চলে এসেছে?’
আশিকের কথা শুনে সবাই তাকালো আদ্রিজার দিকে। আদ্রিজা খানিকটা বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে বলো,
‘ কিছু কি হয়েছে?’
উওরে তুলি বলে উঠল,
‘ হুম হয়েছে তো দেখ না আরু আমাদের কারো সাথে কথা বলছে না।’
তুলির কথা শুনে আদ্রিজা অবাক হয়ে বললো,
‘ কেন?’
এবার বুশরা বললো,
‘ কেন আবার ওই কালকে যাই নি বলে তুই একটু বুঝিয়ে বল না আরুকে এবারের মতো মাফ করে দিতে।’
আদ্রিজা বুঝলো আরুর দিকটা। কারন সে দেখেছে কাল আরুর মুখটা। তারপরও আরুকে কিছু বোঝানোর জন্য মুখ খুলতে নিলেই আরুর কড়া গলায় বললো,
‘ তুই যদি ওদের হয়ে এক লাইনও বলিস তাহলে তোর সাথেও আর কথা বলবো না বলে দিলাম আদ্রিজা।’
সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল আদ্রিজা। নিরাশ হয়ে তাকালো সবার মুখের দিকে।’ আদ্রিজার চাহনী দেখে বাকি সবাইও নিরাশ। হঠাৎই সেই নিরাশার বাধন ছিন্ন করে শুকনো কাশি দিয়ে এক কান চেপে অন্য হাত মেলে দিয়ে গান গাওয়ার ভঙ্গি নিয়ে বলে উঠল আশিক,
‘ ওগো আমার আরু ছুনা,
এভাবে রাগ করে না
তুমি রাগিলে যে প্রানডা আর সহে না।’
সারাদিন তোমার কষ্টে ভাসতে ভাসতে
রাতে ঘুমাতে পারি না কাশতে কাশতে
তুমি কেন বুঝো না?”
ওগো আমার আরু ছুনা
এভাবে রাগ করে না।’
আশিকের কবিতা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। আর আরু রাগী গলায় বললো,
‘ তুই মরোস না কেন?’
‘ যা শালা এত সুন্দর কবিতা শুনালাম তুই দাম দিলি না কোথায় নুবেল ছুঁড়ে মারবি তা না মরতে কস আমায়? আমি মরলে কত লস জানোস তুই?’
‘ কচুর লস আরো লাভ হবে তোর দেড় টাকা দামের কবিতা শুনে অকালে মৃত্যুর হাত থেকে আমরা বেঁচে যাবো।”
আরুর কথা শুনে আশিক কাঁদো কাঁদো ফেস করে চোখের পানির মোছার ভান করে বললো,
‘ এইভাবে বলতে পারলি? যেদিন আমি সত্যিকারে কবি হবো সেদিন দেখবি আমার বাড়ির ঘর মোছার কাজের বেডিও তোরে বানামু না।’
‘ যা ভাগ তো। তোর বাড়ির কাজের লোক তোর বউরে বানা।’
আশিকের কথা শুনে বুকে হাত দিয়ে বললো আশিক,
‘ বউরে বানামু ক্যান বউরে তো আমি বুকে জড়াই ধইরা হাঙ্গাদিন ঘুমামু আর সুন্দর সুন্দর কবিতা শুনামু। বলমু,
ও আমার বউজান
তোমার জন্য মনডা আমার পাগলপান।হৃদয়ডা খালি কয় তোমারে ভালোবাসিজান, তোমারে ভালোবাসিজান।’
তোমায় চিন্তায় হইছে কাশি তুমি বুঝো না তোমারে কতডা ভালোবাসি।’
বলতে বলতে সত্যি সত্যি কাশি উঠে গেল আশিকের। আশিকের কান্ডে এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না আরু। উচ্চস্বরে হেঁসে দিলো সে। আরুর হাসি দেখে সবাই একসাথে বলে উঠল,
‘ এই তো আরু হাসছে।’
সবার কথা শুনে আশিক কাশতে কাশতেই বলে উঠল,
‘ এই তো দেখছো আমার কবিতার কি পাওয়ার আরু ছুনা হাসছে।’
আশিকের কথা শুনে আরু বলে উঠল,
‘ তোর ওই কাশি মার্কা কবিতা শুনে কে আবার হাসবে না বলতো ছাগল একটা।’
আরুর কথা শুনে আশিকা বেশ ভাব নিয়ে বললো,
‘ তুমি কি করে বুঝবে আরু ছুনা।
কাশির কি নাম? একখান সিরাপের আশি টাহা দাম।’
আশিকের কথায় শুনে মাথায় হাত সবার। এই ছেলে সুধরাবার নয়।’
_____
বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট সব ময়লা কাঁদা পানিতে টুইটুম্বর পুরো। কাল একদম শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি নেমেছিল খুব তারওপর দুপুরেও বৃষ্টি নেমেছিল অল্প যার দরুন পিছলে যাওয়া রাস্তাঘাট আরো পিছলে আর স্যাতসেঁতে হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটায় বিকেল চারটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই হবে। মাথায় হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল আদ্রিজা। শ্রাবণ কাল কি বলবো তাঁকে? কি উত্তর দিবে সেই চিন্তাতেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে যেন আদ্রিজা। এমন সময় আদ্রিজার ভাবনার মাঝে হুট করেই পাশ দিয়ে একটা গাড়ি যেতেই রাস্তায় জুড়ে থাকা সব কাঁদা পানি ছিঁটকে লাগলো আদ্রিজার চোখে মুখে। আকস্মিক এমন কান্ডে চমকে উঠলো আদ্রিজা। তক্ষৎনাত ঘাবড়ে গিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে সে।’
এদিকে,
খানিকটা তাড়া নিয়েই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল অভ্র। হঠাৎই কিছু একটা ভেবে গাড়িটা থামালো সে। কাকে যেন দেখলো বলে মনে হলো। অভ্রের পিছনে যাওয়ার দরুন আবারো রাস্তায় জমে থাকা ময়লা কাঁদা পানি ছিটকে লাগলো আদ্রিজার গায়ে। পরপর দু’বার একই কান্ডের রিপিট টেলিকাস্ট হতেই রাগ উঠলো আদ্রিজার। সামনের গাড়িটির চালকের উদ্দেশ্যে কিছু বলবে এরই মাঝে ড্রাইভার সিটে আরুর ভাই অভ্রকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ আপনি?’
#চলবে…..
#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম
— পর্বঃ০৩
________________
হা হয়ে তাকিয়ে আছে অভ্র আদ্রিজার দিকে। এই ভরা রাস্তার মাঝে কেউ কাঁদায় ভূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে এটা যেন কল্পনার বাহিরে ছিল তাঁর। অভ্র অবাক হয়ে বললো আদ্রিজাকে,
‘ মিস ব্ল্যাকবেরি এ কি অবস্থা করেছো নিজের? সার্কাস দেখিয়ে ফিরছো নাকি?’
অভ্রের কথায় রাগ উঠলো আদ্রিজার। একই তো নিজে দু দু’বার গাড়ি আগে পিছনে এনে কাঁদায় ভূত বানিয়ে দিয়েছে তারওপর আবার বাজে কথা বলছে। আদ্রিজা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে এরই মাঝে পকেট থেকে নিজের রুমালটা বের করে আদ্রিজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো অভ্র,
‘ এটা নেও?’
অভ্রের কান্ডে আদ্রিজা খানিকটা সাহসী গলায় বললো,
‘ আপনি মানুষটা তো ভাড়ি ফাজিল একই তো নিজেই গাড়ি চালিয়ে কাঁদায় ভূত বানিয়ে দিয়েছেন তারওপর কাটা গায়ে নূনের ছিঁটে দিচ্ছেন।’
আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বিস্মিত গলায় বললো,
‘ নূনের ছিঁটে কোথায় দিলাম আমি তো তোমায় সাহায্য করার জন্যই রুমালটা দিলাম।’
‘ লাগবে না আপনার রুমাল যান তো।’
‘ এই তো ভালো কথা বললাম কানে নিলে না,এরপর যখন আশেপাশের লোকজন তোমায় দেখে হাসবে তখন বুঝবে।’
‘ সব তো আপনার জন্যই হয়েছে।’
‘ আমি ইচ্ছে করে কিছু করেছি নাকি আচ্ছা ঠিক আছে তুমি গাড়িতে ওঠো আমি তোমায় তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।’
‘ তার কোনো দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো।’
‘ বেশি বুঝো কেন? আর তা ছাড়া আমার জন্যই যখন তুমি প্রবলেমে পড়েছো তখন আমি তোমায় হেল্প করছি তাই কথা না বারিয়ে চলো আমার সাথে।’
‘ বললাম না লাগবে না আপনার হেল্প,
বলেই এগিয়ে যেতে লাগলো আদ্রিজা। আর অভ্র নিরাশ হয়ে গাড়িটাকে আবারো পিছনে নিয়ে যেতে লাগলো যার দরুন আবারো কাঁদার ছিঁটে লাগলো আদ্রিজার গায়ে। এবার আদ্রিজা পারুক কেঁদে ভাসিয়ে দিক। এই লোকটা কি আজ তাঁকে পুরোপুরি কাঁদায় ভূত বানানোর শপথ করেছি নাকি। অভ্র আবারো আদ্রিজার পাশ দিয়ে গাড়ি থামালো। আবারো সেইম জিনিস করে খুব লজ্জিত সে। অপরাধী গলায় আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আই এম সরি, প্লিজ গাড়িতে ওঠো আমি তোমায় সত্যি তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিবো।’
এবার আদ্রিজা না চাইতেও মানা করতে পারলো না। কারন এবার সত্যি বাজে অবাক অবস্থা তাঁর। গায়ের জামাটাও বাজে ভাবে কাঁদায় মেখে গেছে। হতাশায় আঁটকে গেলো আদ্রিজা।’
___
গাড়ি ছুটছে তাঁর আপন গতিতে। শহরের অলিগলি পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আদ্রিজা আর অভ্র। আদ্রিজা তার হাতে মুখে লাগা কাঁদাগুলি অভ্রের রুমাল দিয়ে মুছে নিয়েছে অনেক আগেই। রুমালটা আর ফেরত দেয় নি মুঠো ভর্তি করে চেপে ধরে আছে সেটা। হঠাৎই গাড়ি চালাতে চালাতে বলে উঠল অভ্র,
‘ আচ্ছা মিস ব্ল্যাকবেরি তুমি কি সবসময় এমন সাদামাটা ভাবেই থাকো?’
অভ্রের কথা শুনে ভড়কালো আদ্রিজা। বললো,
‘ মানে?’
‘ মানে এটাই একদমই সাজ সজ্জা ব্যতীত থাকতেই কি পছন্দ করো তুমি?’
আদ্রিজার সরাসরি জবাব,
‘ হুম।’
আদ্রিজার জবাব শুনে আর কিছু বললো না অভ্র। এগিয়ে গেল নিজেদের গন্তব্যের দিকে। হঠাৎই আদ্রিজা বলে উঠল,
‘ আচ্ছা আপনি তো কোথাও যাচ্ছিলেন আমার জন্য এখন আপনার লেট হবে না?’
আদ্রিজার কথা শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো অভ্র,
‘ একটু হয়তো লেট হবে তবে টেনশন নিও না আমি ম্যানেজ করে নিবো।’
উওরে আর কিছু বললো না আদ্রিজা। চুপ করে রইলো সে। আদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্রও আর কিছু বললো না। মনোযোগ দিলো ড্রাইভিংয়ের দিকে।’
অতঃপর কিছুক্ষনের মাঝেই অভ্রের গাড়ি এসে থামলো আদ্রিজার বাড়ির সামনে। বাড়ির কাছে আসতেই আদ্রিজা নেমে পড়লো তক্ষৎনাত। বাড়ির দিকে যেতে গিয়েও আবার পিছন ঘুরে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আসুন আমাদের বাড়ি চা বা কফি খেয়ে যাবেন আনে?’
উওরে অভ্র হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ আজ নয় অন্য আরেকদিন এমনিতেও আমি একটু তাড়াই আছি। তুমি যাও তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নেও না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।’
‘ তা নয় হবো আপনি প্রথমবার আমাদের বাড়িতে আসলেন এইভাবে দরজার সামনে দিয়ে চলে গেলে ভালো দেখায় বলুন।’
‘ অন্য আরেকদিন আসবো এখন আমায় সত্যি যেতে হবে।’
আদ্রিজা আর জোর করলো না। হয়তো সত্যি ভীষণ তাড়ায় আছে মানুষটা। আদ্রিজা বুঝলো। বললো,
‘ ঠিক আছে অন্য আরেকদিন এলে বাড়ি কিন্তু যেতে হবে আপনায়?’
আদ্রিজার কথা শুনে খুশি মনে বললো অভ্র,
‘ নিশ্চয়ই আজ তবে আসি?’
‘ হুম।’
প্রতি উওরে আর কিছু বললো না অভ্র। চটজলদি গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়ে এগিয়ে গেল সামনে। আর আদ্রিজাও কিছুক্ষন অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিল বাড়ির ভিতরে। হঠাৎই খেয়াল আসল আদ্রিজার হাতে এখনো অভ্রের দেওয়া রুমালটা রয়েছে তাঁর। আদ্রিজা ভাবলো কিছু পরক্ষণেই ধুয়ে সুন্দর মতো পরিষ্কার করে পরে ফেরত দেওয়ার কথা ভাবলো সে। কারন রুমালটায় কাঁদা আছে অনেক। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো আদ্রিজা। বেশি না ভেবে এগিয়ে গেল সে বাড়ির ভিতর।’
কলিং বেল বাজাতেই আদ্রিজার মা এসে দরজা খুলে দিলো। মেয়ের এমন কাঁদায় ভূত হওয়া অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বললেন উনি,
‘ এসব কি করেছিস তুই নিজের?’
উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ ফ্রেশ হয়ে এসে বলছি মা।’
বলেই নিজের রুমের দিকে ছুটে গেল আদ্রিজা।’
_____
পরেরদিন সকালে,
আরুদের বাড়ির সোফায় বসে আছে আদ্রিজা। মুলত আরুর সাথে ভার্সিটি যাওয়া জন্যই এখানে এসেছে সে। তবে শুধু আরুর সাথে ভার্সিটি যাওয়াটাই মূল কারন নয়। আর একটা কারন আছে আর সেটা হলো অভ্রের রুমালটা ফেরত দেওয়া। যেটা কাল রাতেই সাবান দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে রেখেছিল আদ্রিজা। কিন্তু কিভাবে ফেরত দিবে সেটাই যেন বুঝতে পারছে না আদ্রিজা। এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল তুষার। সামনেই আদ্রিজাকে দেখে বললেন উনি,
‘ আরে আদ্রিজা যে কখন এলে নিশ্চয়ই আরুর জন্য বসে আছো?’
তুষারের কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিজা। বললো,
‘ জ্বী ভাইয়া।’
আদ্রিজার কান্ডে হাসলো তুষার। বললো,
‘ আমি কোনো ভার্সিটির প্রফেসর নই আদ্রিজা যে তুমি দাঁড়িয়ে সম্মান জানাবে।’
খানিকটা ভড়কালো আদ্রিজা। মাথা নিচু করে ফেললো নিমিষেই। যা দেখে তুষার বললো,
‘ আরে আমি এমন কিছু বলি নি যাতে তুমি লজ্জা পাবে। যাইহোক তুমি বসো আমাকে একটু বের হতে হবে।’
বলেই বাড়ির দরজার দিকে যেতে নিলো তুষার। হঠাৎ আদ্রিজা কিছু একটা ভেবে ডাক দিল তুষারকে। বললো,
‘ তুষার ভাইয়া?’
তুষার পিছন ঘুরে তাকালো তক্ষৎনাত। তারপর বললো,
‘ হুম বলো,
‘ আমার একটা কাজ করে দিবেন ভাইয়া?’
আদ্রিজার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো তুষার,
‘ কাজ কি কাজ?’
উওরে নিজের ব্যাগ থেকে অভ্রের রুমালটা বের করে দিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ এইটা আরুর ভাই আইমিন অভ্র ভাইয়াকে দিয়ে দিবেন প্লিজ। আসলে আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে এইটা ওনাকে ফেরত দিবো।’
তুষার ভড়কালো,চমকালো। অবাক হলো খানিকটা। বললো,
‘ অভ্রের রুমাল তোমার কাছে কি করে চলে গেল?’
উওরে আদ্রিজা কিছু বলবে এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আরু। চাকচিক্য পোশাক পড়ে, সুন্দর মতো তৈরি হয়ে এসেছে সে। আরু আদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ আদ্রিজা আমার হয়ে গেছে চল,
হুট করে আরুর ভয়েস শুনে হাল্কা চমকে উঠলো আদ্রিজা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
‘ তুই এগো আমি আসছি।’
উওরে আরুও বেশি না ভেবে বললো,
‘ ঠিক আছে আয় তাড়াতাড়ি।’
‘ হুম।’
আরু চলে গেল। আরু যেতেই আদ্রিজা তুষারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ এটা ওনাকে মনে করে ফেরত দিয়ে দিবেন। আর এটা আমার কাছে কি করে এলো তাও ওনার কাছ থেকে জেনে নিয়েই ভাইয়া। আরুর আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমি তবে যাই এখন, মনে করে রুমালটা দিবেন কিন্তু ভাইয়া।’
বলেই দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রিজা। আর তুষার জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার যাওয়ার পানে। সে সত্যি বুঝলো না অভ্রের রুমালটা আদ্রিজার কাছে কি করে গেল!’
আশ্চর্য তো!’
_____
ভার্সিটি শেষ করে বাড়ি না গিয়ে ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। একরাশ ভয়, একরাশ টেনশন, একরাশ অস্থিরতা ফিল হচ্ছে তাঁর না জানি শ্রাবণ তাঁর চিঠি পড়ে কি উওর দিবে। তবে আদ্রিজা সেইরকম মনোবল নিয়েই এসেছে যে শ্রাবণ যদি তাঁকে রিজেক্ট করে দেয়। তবে ভেঙে পড়বে না যথাসম্ভব শক্ত পক্ত রাখবে নিজেকে। ‘যত যাই হোক একটা ছেলের জন্য কখনো কোনো মেয়ের জীবন থেমে থাকতে পারে না’,, জীবন তো চলতেই থাকবে জীবনের মতো কারণে অকারণে নিরালয়ে।’ ভাগ্যিস তাঁর বন্ধুমহল জানে না শ্রাবণের বিষয়ে তাই শ্রাবণ রিজেক্ট করে দিলেও খুব একটা প্রবলেম হবে না হয়তো। কিন্তু যদি, আর ভাবলো না আদ্রিজা যতই শ্রাবণের কথা ভাবছে ততই যেন হাত পা শরীর কাঁপছে তাঁর। আদ্রিজা বুঝতে পারছে না আধও শ্রাবণ আসবে কি না?’ এমন সময় হঠাৎই পিছন থেকে ভেসে আসলো শ্রাবণের গলা। বললো সে,
‘ আদ্রিজা,
সঙ্গে সঙ্গে বুক সমেত কেঁপে উঠলো আদ্রিজার। থমকালো সে, ভয় করছে একটু কি হয় কি হয়?’ শ্রাবণ কি সত্যি তাঁকে ফিরিয়ে দিবে?’ আদ্রিজা ভয়ে ভয়ে পিছন ঘুরে তাকালো। এরই মাঝে শ্রাবণ যা করলো তাতে আদ্রিজার চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম,,
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️