গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৪+৫

0
397

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম
— পর্বঃ০৪
________________

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা শ্রাবণের দিকে। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না শ্রাবণ তাঁর সামনে এইভাবে হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করবে। পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা শ্রাবণের মুখের দিকে।

কিছুক্ষন আগে,

শ্রাবণের ভয়েস শুনে পিছন ঘুরে তাকাতেই শ্রাবণকে নিচে বসে হাতে গোলাপ নিয়ে প্রপোজ করার ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো আদ্রিজা। আদ্রিজাকে অবাক করে দিয়েই বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ আমি জানি তুমি হয়তো আমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করো নি। হয়তো ভাবোও নি আমি এমন কিছু করবো। কিন্তু এটাই সত্যি তোমাকে দেখার পর থেকেই রাতে ঘুম হয় না আমার। তোমার চিঠি পড়েই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমি। তাই বলছি শোনো আমিও ভালোবাসি তোমায়। আই রিয়েলি লাভ ইউ,

অবাক হলো আদ্রিজা, ভীষণ অবাক। আর সেই অবাকের রেসটাই এখনও যেন কাটে নি তাঁর। পুরো হা হয়েই তাকিয়ে আছে আদ্রিজা শ্রাবণের দিকে। এদিকে আদ্রিজাকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর ভাবনার মাঝেই বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো এবার তো পা ব্যাথা করছে আদ্রিজা?’

শ্রাবণের কথা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিজা। তক্ষৎনাত নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রাবণের হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে বললো,

‘ সরি,

শ্রাবণ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বললো,

‘ ইট’স ওঁকে, ভাগ্যিস তুমি গোলাপটা নিলে না হলে তো পাটা আজ শেষই হয়ে যেত।’

আদ্রিজা শুনলো শ্রাবণের কথা। তবে সেই কথার কোনো উওর না দিয়ে বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আপনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসেন শ্রাবণ?’

আদ্রিজার কথা শুনে শ্রাবণ অবাক হয়ে বললো,

‘ তোমার আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।’

‘ আসলে তা নয়,

‘ তাহলে কি?’

প্রতি উওরে কিছু বলতে পারলো না আদ্রিজা চুপ করে রইলো।’

_____

অফিসে মিটিং রুম ছেড়ে মাত্র মিটিং সেরে নিজের রুমে ঢুকলো অভ্র। গায়ের কোটটার বোতামগুলো খুললো হাঁটতে হাঁটতে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে নিজেকে। অভ্র তাঁর চেয়ারের বসে গা এলিয়ে দিলো নিমিষেই। চোখ দুটো বন্ধ করলো মাত্র। এমন সময় তাঁর রুমের দরজায় নক করলো তুষার। বললো,

‘ আসবো অভ্র ভাই?’

হুট করে তুষারের ভয়েস কানে আসতেই চোখ খুললো অভ্র। অবাক চোখে তাকালো সামনে। সত্যি সত্যি নিজের রুমের বাহিরে তুষারকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুই এখন আমার অফিসে,

অভ্রের কথা শুনে ভিতরে ঢুকলো তুষার। বললো,

‘ হুম তোর সাথে কিছু কথা ছিলো,

তুষারের কাজে খানিকটা অবাক হয়েই বললো অভ্র,

‘ এখন কথা?’

তুষার হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসলো অভ্রের কাছে। বেশি কিছু না ভেবেই অভ্রের মুখোমুখি টেবিলের এপাশের চেয়ারে বসলো সে। তারপর বললো,

‘ ব্যস্ত খুব।’

‘ না তেমন কোনো ব্যাপার নয় ব্যস্ত ছিলাম মাত্রই মিটিং রুম ছেড়ে এসেছি। ওসব বাদ দে তুই বল কি বলবি?’

প্রতি উওরে নিজের পকেট থেকে আদ্রিজার দেওয়া রুমালটা বের করে দিয়ে বললো তুষার,

‘ খুব বেশি জরুরি কিছু নয় এটা জাস্ট দিতে এলাম।’

অভ্র নিলো তুষারের হাত থেকে রুমালটা। বললো,

‘ এটা তো?’

আর কিছু বলার আগেই তুষার বলে উঠল,

‘ আদ্রিজার কাছে ছিল তাই তো?’

‘ হুম, তা এটা তোর কাছে কোথা থেকে এলো?’

‘ সকালে আদ্রিজা বাড়ি এসেছিল তুই তখন ঘুমিয়ে ছিলি। তোকে কিভাবে ফেরত দিবে বুঝতে না পেরে আমার কাছে দেয়।’

তুষার কথা শুনে শুধু এতটুকুই বলে অভ্র,

‘ ওহ।’

‘ হুম এখন তুই বল তোর রুমাল আদ্রিজার কাছে কি করে গেল?’

‘ সে লম্বা এক গল্প।’

‘ ছোট করে বল আমিও তো শুনি যে ছেলে নিজের কলমটা পর্যন্ত অন্যকে দিতে চায় না সেই ছেলে নিজের পারসোনাল রুমাল আদ্রিজাকে দিয়ে দিল। হাউ ইস পসিবল?’

তুষারের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো অভ্র,

‘ এমনভাবে বলছিস যেন তোকে কোনোদিন কোনো কিছু দেই নি আমি,

‘ দেস নি কখন বলেছি নতুন কিনে দিয়েছিস কিন্তু নিজের ব্যবহার করা জিনিস কাউকে দেস নি সেটার কথা বলেছি।’

অভ্র অবাক হলো। তুষারের কথার প্রতি উওর হিসেবে কি বলবে বুঝতে পারলো না। এটা তো ঠিক সে নিজের জিনিস কাউকে দেয় না। লাবন্যকেই দিলো না কখনো। তাহলে হুট করে কাল কি করে দিয়ে দিলো নিজের রুমালটা ওই ব্ল্যাকবেরিকে। কই কাল তো একবারও কোনো সংকোচ ফিল হয় নি তাঁর বা মনে হয় নি নিজের রুমালটা আদ্রিজাকে দেওয়া যাবে না। নানান কিছু ভাবনায় মগ্ন ছিল অভ্র। অভ্রের ভাবনার মাঝেই বলে উঠল তুষার,

‘ কি হলো কি ভাবছিস?’

‘ না কিছু না।’

‘ তাহলে বল কেন তুই তোর রুমাল আদ্রিজাকে দিলি?’

‘ এত জেনে তুই কি করবি?’

‘ তুই বুঝতে পারছিস না, না জানলে রাতে ভাত খেতে পারবো না। এমনিতেও দুপুরে খেতে পারি নি।’

তুষার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না অভ্র। নির্বিকার হয়ে বললো,

‘ কি, সামান্য কিছু কথা জানার জন্য তুই দুপুরে ভাত খেতে পারিস নি।’

‘ তা নয় তো কি? এখন বল প্লিজ আমি রাতে পেট ভরে খেতে চাই।’

তুষারের কাজে হাসলো অভ্র। বললো,

‘ ঠিক আছে।’

এতটুকু বলে কাল বিকেলের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা সব খুলে বললো তুষারকে। তুষার তো সব শুনে অবাক। সে ভাবে নি অভ্র আর আদ্রিজার মধ্যে এমন কিছু ঘটে ছিল।’

______

রাত দেড়টার কাছাকাছি বিছানায় শুয়ে ফোনে শ্রাবণের সাথে কথা বলছে আদ্রিজা। জীবনে প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি হয়তো এমনই। নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। গাছের পাতারা নড়ছে বারংবার। জানালার পর্দা চিঁড়ে আসছে শীতল ভেজা বাতাস। অতঃপর রাতের জোৎসা ভরা আলোর মাঝে প্রেম আলাপন করছে আদ্রিজা। প্রথম ভালো লাগার অনূভুতি বইছে তাঁর মাঝে, বারিয়ে দিচ্ছে বাড়িতে লুকিয়ে কারো সাথে গোপনে কথা বলার সাহসীকতা, প্রথম রাত জেগে কারো সাথে কথা বলা শিহরন। নানান জিনিসে মগ্ন হয়ে কথা বলতে ছিল আদ্রিজা। সে নিজেও জানে না তাঁর প্রথম ভালোবাসার গল্পটা ঠিক কতদূর যাওয়ার মতো। শ্রাবণ বলছে নানান কিছু জিজ্ঞেস করছে আদ্রিজাও বলছে। ঘুমে চোখ ভেসে আসছে তাঁর তারপরও ফোন কেটে ঘুমানোর কথা বলতে পারছে না শ্রাবণের সাথে। ভয় হচ্ছে যদি রাগ করে শ্রাবণ।’

‘ আচ্ছা প্রথম ভালোবাসার অনুভূতিগুলো কি এমনই হয়?’

উওর খুঁজে পায় না আদ্রিজা।’

____

ল্যাপটপে লাবন্যের কিছু ছবি দেখতে ব্যস্ত অভ্র। অফিসে ব্যস্ত থাকায় তেমন একটা দেখার সময় পায় না সে। আজ দেখছে, অভ্র বুঝে উঠতে পারে না ঠিক কিভাবে লাবন্যকে তাঁর ভালোবাসার কথা বললে লাবন্য বুঝবে তাঁকে। হঠাৎই অভ্রের ভাবনার মাঝে ঘুম ঘুম কন্ঠে ওর পাশে শুয়ে থাকা তুষার বলে উঠল,

‘ শুধু রাত জেগে ললিতা সুন্দরীর ছবি দেখলেই হবে ভালোবাসি কথাটা মুখ ফুটে বলতেও তো হবে অভ্র ভাই?’

অভ্র চমকালো। তক্ষৎনাত ল্যাপটপটা বন্ধ করে বললো সে,

‘ তুই এখনও ঘুমাস নি?’

‘ ঘুমিয়েছি তো কখন শুধু উঠেছি মাত্র।’

‘ মানে,

‘ কিছু না। বলছি কি এইভাবে আর কত দেখে যাবি এবার তো বলে দে ভাই তুই ললিতা সুন্দরীকে ভালোবাসিস? পরে কিন্তু সত্যি সত্যি লেট হয়ে যাবে বলে দিলাম।’

প্রতি উওরে কিছু বললো না অভ্র। শুধু ভাবলো,

‘ হয়তো এবার সত্যি সত্যি লাবন্যকে তাঁর ভালোবাসার কথা বলে দেওয়া উচিত। এরপর যদি সত্যি দেরি হয়ে যায় তখন?’

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৫
________________

আচমকা সূর্যের আলো মুখে পড়তেই খানিকটা বিরক্ত হয়ে কাঁথাটা জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম গলায় বললো আদ্রিজা,

‘ উম মা কি করছো কি?’

মেয়ের কথা শুনে স্বাভাবিক গলায় বললো আদ্রিজার মা,

‘ কি আবার করছি জানালার পর্দা সরাচ্ছি।’

‘ এখনই সরানো লাগে আমি ঘুমাচ্ছি তো মা।’

‘ আর কত ঘুমাবি এবার তো ওঠ ভার্সিটি যেতে হবে তো নাকি।’

বিরক্ত হলো আদ্রিজা। ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। তবে চোখ খুলতে পারছে না। ঘুমে চোখ একদম জুড়িয়ে যাচ্ছে তার। আদ্রিজা বসে বসেই আবারো ঘুমিয়ে পড়ছিল। যা দেখে আদ্রিজার মা বলে উঠল,

‘ কি হলো ঢুলছিস কেন ওঠ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি যাবি না নাকি,,

প্রতি উওরে ঘুম জড়ানো গলায় বললো আদ্রিজা,

‘ আজ যেতে ইচ্ছে করছে না আমি ঘুমাবো মা।’

বলেই বিছানায় আবারো গা এলিয়ে দিলো আদ্রিজা। মেয়ের এমন কান্ডে চরম অবাক আদ্রিজার মা। অবাক হয়েই বললেন উনি,

‘ তুই কি কাল রাতে ঘুমাস নি?’

প্রতিউওরে কোনো জবাব দিলো না আদ্রিজা। সে গভীর ঘুমে মগ্ন তখন। মেয়ের জবাব না পেয়ে হতাশ হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রিজার মা।’

ঘুমের ঘোরেই আদ্রিজা টের পাচ্ছে তাঁর ফোনটা লাগাতার বেজে চলেছে। হঠাৎই শ্রাবণ ফোন করেছে কথাটা মাথায় আসতেই বিছানা ছেড়ে সটান হয়ে উঠে বসলো আদ্রিজা। তক্ষৎনাত ফোনটা দেখলো সে। কিন্তু উপরে শ্রাবণের জায়গায় আরুর নাম্বার দেখে খানিকটা হতাশ হয়ে ফোনটা তুললো আদ্রিজা। বললো,

‘ হুম বল,

আদ্রিজার ‘হুম বল’ শুনে অপর প্রান্তে আরু হতাশ হয়ে বললো,

‘ বলবি তো তুই এখনো আসিস নি কেন বাসায় ভার্সিটি যাবি না নাকি?’

‘ আজ ভার্সিটি যেতে মন চাইছে না।’

‘ কেন?’

‘ এমনি।’

‘ আধ ঘন্টার মধ্যে আমি তোর বাড়ি আসছি তৈরি থাক,

‘ কিন্তু আরু,,

আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলো আরু। আর আদ্রিজা হতাশ হয়ে হ্যালো হ্যালো বললো দু’বার। এবার হয়তো সত্যি সত্যি বিছানা ছেড়ে উঠতে হবে তাঁকে।’

_____

অফিসে বসে ল্যাপটপে কিছু জিনিস দেখছে অভ্র। সাথে ভাবছে কিভাবে লাবন্যকে প্রপোজ করা যায়। অভ্রের ভাবনার মাঝেই অভ্রের ফোনটা বেজে উঠল উপরে লাবন্যের নাম দেখে তক্ষৎনাত খুশি হয়ে ফোনটা তুললো সে। বললো,

‘ হ্যালো,

অভ্রের হ্যালো শুনে অপরপ্রান্তের লাবন্য নিজের রুমের বিছানায় বসে বলে উঠল,

‘ কি করছিস?’

‘ অফিসে আছি তুই?’

‘ আমি তো বাড়িতে বসে আছি।’

‘ ওহ!’

‘ হুম।’

হঠাৎই অভ্র কিছু একটা ভেবে খুব সিরিয়াস ভাবেই বলে উঠল লাবন্যকে,

‘ তোর সাথে কিছু কথা ছিল?’

‘ হুম বল না,

‘ এইভাবে নয়,

অভ্রের কথা শুনে লাবন্য অবাক হয়ে বললো,

‘ মানে?’

‘ মানে ফোনে নয় সামনাসামনি,

‘ ওহ এই ব্যাপার ঠিক আছে আমি আসছি তোর অফিসে,

লাবন্যের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো অভ্র। হতভম্ব গলায় বললো,

‘ আরে না না এখনই নয়। আর যা বলবো তা অফিসে বসে বলা যাবে না।’

‘ তাহলে,

অভ্র কিছুক্ষন ভেবে বললো,

‘ আমি তোকে একটা হোটেলের এড্রেস দিচ্ছি আজ বিকেল পাঁচটায় পৌঁছে যাস আমি ওখানে বসেই সব বলবো তোকে, খুব স্পেশাল কিছু আসিস কিন্তু?’

অভ্রের কথা শুনে বেশি কিছু না ভেবেই খুশি মনে বললো লাবন্য,

‘ ঠিক আছে।’

‘ অপেক্ষায় রইলাম এখন তবে রাখি।’

‘ ঠিক আছে রাখ।’

অতঃপর ফোন কাটলো অভ্র। বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ফেললো বার কয়েক। কেমন যেন কথা আঁটকে যাচ্ছিল তাঁর। অভ্র জানে না আধও তাঁর মনের কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারবে কি না লাবন্যকে। তবে চেষ্টা করবে গুছিয়ে না হলেও অগোছালোভাবেই বলবে সে। যেভাবেই হোক আজ বিকেলে লাবন্যকে প্রপোজ করেই ছাড়বে অভ্র। অভ্র তাঁর ফোনটা হাতে নিলো আবার তারপর তুষারকে মেসেজ করলো লিখলো,

‘ আজই লাবন্যকে ভালোবাসি কথাটা বলবো তুষার?’ আর এর জন্য আমার তোর সাহায্য চাই।’

এতটুকু লিখে পাঠিয়ে দিলো অভ্র। পরে আরো কিছু লিখবে এরই মাঝে তুষার রিপ্লাই দিলো,

‘ গুড ডিসিশন আই এম কামিং ব্রো।’

প্রতি উওরে আর কিছু লিখলো না অভ্র। মুচকি হাসলো সে। কারন সেও তুষারকে আসার কথাই বলতো। অভ্র ফোনটা টেবিলের উপর রেখে থ্রাইগ্লাস ভেদ করে তাকালো আকাশ পথে। ভাবলো কিছু আনমনে, তপ্ত নিশ্বাস ফেললো তক্ষৎনাত।’

____

ক্যান্টিনের পুরো একটা টেবিল জুড়ে বসে আছে শরীফ, সিফাত, তুলি, বুশরা, আশিক, আরু আর আদ্রিজা। সবাই বক বক করছে আর আদ্রিজা ঝিমাচ্ছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তাঁর। চোখদুটোও লাল হয়ে আছে অল্প স্বল্প। কয়েক ঘন্টা আগে আরু গিয়ে তাঁকে না আনলে আজ সত্যি ভার্সিটি আসতো না আদ্রিজা। তাও বারন করেছিল একবার কিন্তু আরু শোনে নি। এক প্রকার জোর জবরদস্তি করেই নিয়ে এসেছে তাঁকে। যার ফলস্বরূপ এখন ঝিমানো লাগছে আদ্রিজাকে। কাল শ্রাবণের সাথে কথা বলে প্রায় সকালের দিকে ঘুম দেয় আদ্রিজা। আদ্রিজা নিজেও জানে না এত কথা কোথা থেকে আসলো তাঁর। বাপরে বাপ কথা যেন শেষই হতে চায় না। আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই ওর হাবভাব দেখে বলে উঠল আশিক,

‘ আজ আমাদের নিরিবিলি আফা এত ঝিমাচ্ছে কেন?’

আশিকের কথা শুনে আরু বলে উঠল,

‘ কি জানি আজ তো ভার্সিটি আসতেই চাইছিলো না আমি তো একপ্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছি।’

আশিক কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার মুখের দিকে। তারপর হঠাৎই গান ধরলো সে,

‘ আরে পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না গোলেমালে গোলেমালে পিরিত করো না।’

আচমকা আশিকের এমন পিরিতির গান শুনে হকচকিয়ে উঠলো আদ্রিজা। হতভম্ব হয়ে তাকালো সে সবার মুখের দিকে। আদ্রিজা তাকাতেই আশিকের পাশাপাশি বাকি সবাইও গাইতে লাগলো,

‘ গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না। আরে পিরিতি কাঁঠালে আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না।’

সবার বার বার একই লাইনের আহামরি গান শুনে হতাশ হলো আদ্রিজা। বললো,

‘ কি হয়েছে কি তোদের এই অদ্ভুত গান গাইছিস কেন?’

আদ্রিজার কথা শুনে তুলি বলে উঠল,

‘ আমাদের কিছু হয়েছে নাকি তোর কিছু হয়েছে?’

তুলির কথা শুনে আদ্রিজা অবাক হয়ে বললো,

‘ আমার কিছু হয়েছে মানে, কি হয়েছে।’

‘ যদি কিছু নাই হয়ে থাকে তাহলে ঝিমাচ্ছিস কেন?’

‘ সেটা তো কাল রাতে ঘুম হয় নি তাই।’

আদ্রিজার কথা শোনার সাথে সাথেই বুশরা বলে উঠল,

‘ ঘুম কেন হয়নি শুনি রাত জেগে কোন প্রেমিকের সাথে প্রেমআলাপে মগ্ন ছিলিস তুই?’

বুশরার কথা শুনে প্রায় হতভম্ব আদ্রিজা। এবার কি বলবে সে। সে তো সত্যি কাল রাতে প্রেমআলাপে মগ্ন ছিল। আচ্ছা সবাইকে কি সত্যি বলে দিবে এখনই। নাকি পড়ে বলবে। আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই আরু বলে উঠল,

‘ রাখ তো তোদের প্রেম আলাপ আদ্রিজা ওইরকম মেয়েই নয় যে রাত জেগে কারো সাথে প্রেম আলাপ করবে।’

আরুর কথা শুনে সিফাতও বলে উঠল,

‘ সেটাই হবে। হয়তো কাল রাত জেগে পড়াশোনা করেছিল তাই হয়তো ঘুম হয় নি তাই না আদ্রিজা?’

উওরে আদ্রিজাও মাথা নাড়িয়ে হা সমর্থন দিলো। আদ্রিজার কথা শুনে আশিক বলে উঠল,

‘ ওহ। আচ্ছা এই খুশিতে একটা কবিতা শুনাই খাঁড়া,

আশিকের কথা শুনে আরু টেবিলের উপর থেকে সসের বোতলটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ তুই একবার খালি কবিতা ক আজ তোর মাথায় এই সস ঢালমু আমি।’

আরুর কথা শুনে আশিক গলাটা হাল্কা ঝেড়ে বলে উঠল,

‘ তুমি এমন কেন ছুনা
আমার কবিতার একটুও দাম দেও না।’
সস নিয়ে হাতে
তুমি শুধু শুধু রাগ কেন দেখাও আমার কবিতার সাথে,,

আশিকের কথা শুনে আরু রাগী কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ বান্দর পোলা তোরে থামতে কইছি, তোর কবিতার গুষ্টি তুষ্টি।’

সঙ্গে সঙ্গে তুলি আর বুশরা ধরলো আরুর হাত। যা দেখে আশিক আবারো বলে উঠল,

‘ যতই ভয় দেখাও ভয় আমি পাবো না,
সস নিয়ে যতই রাগ দেখাও
কবিতা আমি ছাড়বো না।’
বুঝলে ছুনা।’

আশিকের কাজে মাথায় আগুন উঠে গেল আরুর। ঝড়ের গতিতে নিজের জায়গা থেকে উঠে তেরে গেল সে আশিকের দিকে। কঠিন গলায় বললো,

‘ আজকে তোর কবিতা বার করছি দাঁড়া ,

আরুর কাজে আশিক বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,

‘ ও আমার সুন্দরী ছুনা
আমার কবিতা নিয়ে এত রাগ করো না।’
নুবেল যেদিন পাবো আমি,,

বাকিটা পরে কমু আগে আমি পলাই।

বলেই আশিক দৌড়ে বেরিয়ে গেল ক্যান্টিন থেকে। আর আরু কতদূর এগিয়েও আবার দাঁড়িয়ে পড়লো চুপচাপ। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো কয়েক বার।’

এদিকে আরু আশিকের কান্ডে সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে দিলো। এই দুজন এমনই সারাদিন ঝগড়া করে। আর আরুর সাথে আশিকের বেশিরভাগ ঝগড়ার মূল টপিক হলো আশিকের কবিতা।’

পুরো টেবিল জুড়ে হাসাহাসির রোল পড়ে গেল সবার। সবার হাসাহাসির মাঝে বলে উঠল শরীফ,

‘ এই আশিক ঠিক হওয়ার নয়।’

উওরে বুশরাও বলে উঠল,

‘ ঠিক কইসো।’

হঠাৎই এই হাসাহাসির মাঝে আদ্রিজার ফোনটায় টুং করে একটা শব্দ হলো। মেসেজ এসেছে তাঁর। আদ্রিজা দেখলো মেসেজটা। শ্রাবণ পাঠিয়েছে। যেখানে একটা হোটেলের এড্রেস দেওয়া আছে। সাথে লিখে পাঠিয়েছে শ্রাবণ,

‘ ঠিক বিকেল ৫ঃ০০টায় এই এড্রেসে চলে এসো একটা সারপ্রাইজ আছে।’

‘সারপ্রাইজ’ কথাটা দেখতেই অবাক হলো আদ্রিজা। মনে মনে ভাবলো,

‘ কি সারপ্রাইজ দিবেন আমায়,শ্রাবণ?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️