গোধূলি বেলায় পর্ব-০৫

0
337

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্বঃ৫

“সিফাত ঝাঝালো কন্ঠে বললো
‘তুমি কিছু জানো না। আরবিন কে আমি খু’ন করিনি। খু’ন করেছে নারী পাচার কারীর দলের লিডার।’

‘ তুমি মিথ্যা বলছো আমি ভিডিও দেখেছি তুমি নিজে আরবিনকে খু’ন করেছো।এখন তুমি নিজেকে বাচানোর জন্য মিথ্যা বলতেছো।’
আলিয়া রেগে বললো।

‘ আমি কিছু মিথ্যা বলছি না। আরবিন যেইদিন মা’রা যায় তার দুইদিন আগে আমি আর আরবিন জানতে পারি ** এই ঠিকানায় নারী পাচার হচ্ছে। সাথে সাথেই আমি আর আরবিন সেই জায়গায় যাই। আমরা আমাদের গার্ডদের নিয়ে পুরো গোডাউন ঘিরে ফেলি।

আমরা গোডাউনের ভিতরে যেয়ে দেখি ১০০ জন নারী। আমি আর আরবিন তাদেরকে উদ্ধার করি। আমরা শুধু রায়হানকে ধরতে পায় তাছাড়া সবাই পালিয়ে গিয়েছে। নারী পাচার কারীর দলের লিডার সে এইগুলো যানতে পেরে রেগে যায়। কারন এতে তার অনেক লস হয়েছে। আর রায়হান যদি একবার মুখ খুলে। আমি আর আরবিন মেয়ে গুলোকে তাদের বাসাই পৌঁছে দেয় আর রায়হানকে নিয়ে আমাদের গোডাউনে বে’ধে রাখি। এইভাবেই চলতে থাকে কিছুদিন কিন্তু হঠাৎ করে আরবিনকে কে যেনো বা’জে ভাবে খু’ন করে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে আর কেউ নয় নারী পাচার কারী দলের লিডার। বিশ্বাস করো আমি ওকে খু’ন করেনি।’
একদমে বলে শ্বাস নিলো সিফাত।

আলিয়া এতোক্ষন সিফাতের কথা শুনলো। সে ভাবতেছে তাহলে তার দেখা ভিডিও কিভাবে মিথ্যা হবে ভিডিওতে তো স্পষ্ট দেখা গেছে সিফাত আরবিনকে খু’ন করেছে আলিয়া এইগুলো ভাবতেছে সিফাত বললো কি ভাবতেছো?

‘ তোমার কথা যদি সত্য হয় তাহলে আমার ফোনে আসা সেই ভিডিওটা কিভাবে মিথ্যা বলবো সেই ভিডিওতে তো স্পষ্ট দেখা গেছে তুমি আরবিনকে খু’ন করেছো।’
আলিয়া বললো

‘ তোমাকে কে ভিডিও দিয়েছে?
সিফাত চিন্তিত হয়ে বললো।

আলিয়া শ্বাস নিয়ে বললো
‘ আরবিনের খু’ন হওয়ার পরের দিন আমার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা ছিলো তুমি কি নিজের ভালোবাসার খু’নিকে দেখতে চাও? আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বললাম হ‍্যা।

তারপর অচেনা নাম্বার থেকে ভিডিও আসে আমি ভিডিও অন করে দেখি তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুমি আরবিনকে খু’ন করেছো। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু অচেনা নাম্বার থেকে ফোন দেয় আমি কল রিসিভ করতে পুরুষালি কন্ঠে অচেনা লোকটা বলে এই ভিডিওটা সত্য। তুমি কি চাও না নিজের ভালোবাসার মৃ’ত্যু’র প্র’তি’শো’ধ নিতে?

তার কথা শুনে তোমার প্রতি আমার ঘৃ’ণা জন্মায়। আমি শুধু অপেক্ষা করেছি কখন আমি প্র’তি’শো’ধ নিবো।


” সাইমা চাচি শাশুড়ির কথা শুনে মাথা নিচু করে রইলো। সাইমার চোখ দিয়ে পানি পরছে।

‘ আমি কিছু জানি না আমার চেইন যেখান থেকে হোক তোমাকে এনে দিতে হবে তা না হলে আমি পুলিশকে খবর দিবো।’
লিনা রাগে ফুসফুস করতে করতে বললো।

‘ লিনা তুই কিন্তু ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে দিচ্ছিস। সাইমাকে কিনা শেষ মেশ চুরির অপবাদ দিলি ছিহ্ তোকে আমার মেয়ে ভাবতেই লজ্জা করছে।’
প্রচন্ড রেগে বললো শাশুড়ি।

সাইমা লিনার কথা শুনে শান্ত ভঙ্গিতে বললো ‘ আচ্ছা। আমি যদি নিয়ে থাকি নিশ্চয়ই আমার রুমে থাকবে।

‘ হ‍্যা সাইমা তোর রুম এখন আমরা খুজঁবো এবং হাতেনাতে চো’র ধরবো।’
চাচি শাশুড়ি বললো।

ঠিক আছে ছোট মা আমি যদি নিয়ে থাকি তাহলে আমার রুম খুজেন সমস্যা নাই। তারপর সবাই সাইমার রুমে চেইন খুজলো কিন্তু পেলো না। লিনা ঝাঝালো কন্ঠে বললো তুই নিশ্চয়ই চেইনটা বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিস?

‘ তোমাদের মতো নিচু মন মানসিকতা আমার নেই। আর কার কাছে চেইন সেটা না হয় এখনই যানতে পারবে। তোমার রুমে চলো।’
‘ সাইমা কাটকাট জবাব দিলো।

‘ কেনো? আমার রুমে যাবি কেনো?
থমথমে গলায় বললো লিনা।

‘ ভয় পাচ্ছো কেনো?
সন্দেহ চোখে বললো সাইমা।

‘ কোথায় আমি ভয় পাচ্ছি আচ্ছা চল, তারপর সাইমা লিনার রুমে আসলো। লিনার রুমে এসে ড্রেসিং টেবিল খুলে সাইমা খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো না তার আলমারি খুজলো পেলো না। লিনা বললো আমার রুমে নেই। সাইমা লিনার কথার জবাব না দিয়ে বিছানায় উল্টিয়ে দেখে নেই। সাইমা এবার পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখে চেইন…!

——————-

” তোমাকে দেখানো ভিডিওটা ফেক। আমার মনে হচ্ছে আমাকে ফাসানোর জন্য ওই নারী পাচার কারী দলের লিডার তোমাকে এই ফেক ভিডিও দিয়েছে।’
সিফাত বললো।

‘ সরি সিফাত আমি তোমাকে এতদিন ভুল বুঝে প্রতি’শো’ধ নিতে চেয়েছি। তোমার অনেক ক্ষ’তি করার চেষ্টা করেছি।আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিও।’
অপরাধি কন্ঠে বললো আলিয়া।

‘ তুমি কোনো দোষ করোনি। তোমাকে যা বোঝানো হয়েছে তুমি তাই করেছো।’
শান্ত চাহনিতে বললো সিফাত।

‘ আচ্ছা সিফাত আমরা কিভাবে ওই লোকটাকে ধরবো? ওনার নাম বা অন্য কোনো কিছু যানো তুমি..?
আলিয়া বললো।

‘ ওনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারিনি। ওনার নাম জানি না। ওনি কোনো ক্লু রাখেনি যার কারনে আমরা ওই সুত্র ধরে ওনাকে খুজবো। ওনি প্রচুর চালাক লোক।’
সিফাত বললো।

‘ তাহলে কিভাবে খুঁজবো?
চিন্তা করতে করতে বললো।

‘আমার কাছে একজনের খোঁজ আছে ওই বলতে পারবে নারী পাচার কারীর লিডার কে
সিফাত বললো।’

‘তাহলে আমাদের তার কাছে যাওয়া উচিত।’
আলিয়া বললো।

‘হুম!
তারপর আলিয়া আর সিফাত নিজের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দিলো।

এদিকে
সাইমা চেইনটা লিনার সামনে ধরে বললো
‘ এই যে তোমার চেইন।

লিনা থতমত গলায় বললো
‘ আসলে কি আমি ভুলে ওইখানে রেখেছি পাচ্ছি না তাই ভেবেছি তুমি নিয়েছো। কারন তুমি তো রুম গুছাও

‘ এই বাড়িতে কিছু হারালে দোষ হয় আমার। একটা কথা কি জানো গরিবদের সবাই ভাবে তারা চু’রি করে। তারা টাকা দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারে না। আমার পরিবার কখনো আমাকে চু’রি করার শিক্ষা দেননি। আমি এই বাড়িতে এসেছি তোমরা তো আমাকে দেখেছো কিভাবে মনে হলো তোমাদের যে আমি চু’রি করতে পারি। এই পরিবারটাকে আমি নিজের মনে করে সব কিছু সহ‍্য করে গিয়েছি।

মানুষ বলে প্রেম করে বিয়ে হলে নাকি সুখ পাওয়া যায়। বড়লোকদের সাথে বিয়ে হলে নাকি সে সুখী হয়। কিন্তু সব মিথ্যা কিছু বড়লোকরা গরিবদের মানুষ বলে মনে করে না। কাজের লোকের মতো মনে করে। বিশ্বাস করো আমি যে এই বাড়ির বউ আমার মনেই হয় না।

আমি আর পারছি না দম বন্ধ হয়ে আসছে।
ভেজা কন্ঠে বললো সাইমা। আজ সাইমার নিজেকে অনেকটা অসহায় মনে হচ্ছে। একটা মেয়ে কিভাবে এতো কিছু সহ‍্য করবে। সাইমার কথা শুনে সবাই চুপ করে আছে। সাইমা আর কিছু না বলে কান্না করতে করতে রুমে চলে গেলো।

‘ লিনা আজ তোর জন্য সাইমা কান্না করলো। তুইও তো একটা মেয়ে কিভাবে পারিস ওর সাথে এমন করতে? একটুও কি বিবেকে বাধে না?
শাশুড়ি এই বলে চলে গেলো।

লিনা রাগে ফুসফুস করতে করতে চাচি শাশুড়িকে বললো ছোট মা কিছুতেই তো সাইমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে পারছি না। এতো কিছু বলি তাও কিভাবে থাকে।

‘ এই মেয়ে সিফাতের জীবন থেকে সহজে যাবে না। একটু ধৈর্য ধর। এই গুটিটা না হলে কি হবে আমরা অন্য গুটি চালবো।
রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো চাচি শাশুড়ি।

এদিকে
অন্ধকার রুমে একটা লোক চেয়ারে বসে আছে। লোকটা টেবিল থেকে মদের বোতল থেকে গ্লাসে ঢাললো।

#চলবে…..