গোপন কথা পর্ব-০৪

0
452

#গোপন_কথা
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



এসব কী হ্যা?এসব কী?’
নোরা জোর গলায় বললো।অনেকটা চিৎকার বলা যায় একে।
ওরা ভীষণ রকম চমকে উঠলো।দীপা তাড়াহুড়ো করে কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকলো। খানিকটা লজ্জাও পেলো। ফাহাদের মেজাজ গেল বিগড়ে।সে বিছানা থেকে নেমে এসে রাগী রাগী চোখে তাকালো নোরার দিকে। তারপর উচ্চ স্বরে বললো,’কী সমস্যা তোমার?কথা নাই বার্তা নাই হুট করে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করছো এসব কী?এসব কী?’
নোরা বোকা ভনে গেল।বড় অদ্ভুত কান্ড তো! তার স্বামী একটা পর নারীর সাথে যৌনতায় মেতে উঠেছে আর সে এসে দেখে ফেলায় তার অপরাধ হয়ে গেল?কী আজব দুনিয়া!
নোরা চুপ করে ছিল।ওর চুপ থাকার সুযোগ নিয়ে দীপা বললো,’কী হয়েছে নোরা? কোন সমস্যা নাকি? হঠাৎ যে এলে?’
নোরা ওদের কথার ধরণই বুঝতে পারছে না।সে কী বলবে না বলবে বুঝতে পারছে না।
দীপা ঠোঁট টিপে হাসলো। ফাহাদ পদ্ধতিটা ভালো জানে।সে এবার সুযোগ বুঝে ইচ্ছে মতো কিছু নিতি বাক্য কপচে দিলো। বললো,’ভাই বোন এক ঘরে বসে গল্প সল্প করতেই পারে। শুধু গল্প সল্প করা না। তারা শপিংয়ে,পার্কে কিংবা অন্য কোথাও বেড়াতে যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য এভাবে তুমি হুট করে এসে এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে ফেলতে পারো না!এটা অন্যায়।এটা অপমানের শামিল।’
তারপর দীপা ফাহাদকে বললো,’ভাই,তুই থাক তোর বউ নিয়ে। তোদের মাঝে আমি আর ঝগড়া ফ্যাসাদ লাগাতে চাই না।আমি চাই না আমার জন্য তোদের সম্পর্ক মলিন হোক। যেখানে বিয়ের সপ্তাহ না যেতেই তোর বউ তোকে এভাবে এসে সন্দেহ করছে।আমি তোর বয়সে বড় কাজিন হওয়া সত্ত্বেও আমায় আর তোকে নিয়ে খারাপ ধারণা করছে, এখানে থাকার আমার কোন প্রশ্নই আসে না। আমার ভুল হয়েছে।বড় ভুল হয়েছে। নিজের ভাই নাই। খালার ছেলেকে আপন ভাই ভেবে তার নতুন বউ দেখতে এলাম।আর এসে এই অপমান!’
দীপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ফাহাদ অনুরোধের গলায় বললো,’দীপা কান্না করিস না।আমি ওকে শাসন করবো।নেক্সট আর এমন হবে না!’
দীপা তবুও কাঁদছে। কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না।
ফাহাদ এবার নোরার দিকে এগিয়ে গেল।আর রাগে লাল হয়ে উঠা চোখে বললো,’ওর কাছে গিয়ে মাফ চাও। এক্ষুনি।কোয়িক!’
নোরা বললো,’কিছুতেই না। এমন কিছু করার কোন প্রশ্নই আসে না।আমি চোখে যা দেখেছি তা ভাই বোনের মধ্যে কিছুতেই হতে পারে না!এটা অনৈতিক।এটা অন্যায়!’
ফাহাদ রাগের গলায় বললো,’কী দেখেছো তুমি হ্যা?কী দেখেছো?ভাই বোনের মধ্যে হতে পারে এমন কী দেখেছো?’
নোরা বললো,’তোমরা নোংরামো করছিলে।আমি স্পষ্ট দেখেছি।’
ফাহাদ সঙ্গে সঙ্গে ওর গালে চড় বসিয়ে দিলো। এবং একটা বকা দিয়ে বসলো। তাছাড়া হুমকিও দিলো।বললো,’আরেকবার এমন বাজে কথা বললে ঘাড় ধরে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবো!’
নোরা এবার বললো,’এ বাড়িতে থাকার এমনিতেও আমার কোন রকম ইচ্ছে নাই। তবে আপাতত যাচ্ছিও না।সময় হলেই এখান থেকে যাবো। তবে অসম্মান নিজের কাঁধে নিয়ে যাবো না বরং অসম্মানিত করে যাবো।’
ফাহাদের রাগ আরো বাড়ছে।সে এবার ওর গায়ে হাত তুলতে চায়লো। তখনই এসে তাকে থামিয়ে দিলো দীপা।বললো,’থাক মারিসনে।কম বয়স। বুঝতে পারেনি। ভুল বুঝেছে।ছোটরা ভুল করতেই পারে। এই জন্য তো তাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। সুন্দর করে কথা দিয়ে বোঝ দিতে হবে!’
দীপা ছলে বলে কৌশলে নোরাকে কনভিন্স করে ফেলতে চায়লো। কিন্তু নোরাও তো সহজে হাল ছাড়ার মেয়ে নয়।সেও পাছে বলে দিলো,’চোর ধরা পড়লে সাত পাঁচ বলে বেঁচে যেতে অনেক কিছুই করে! কিন্তু আমি বোকা না।বয়স কম হলেও এইটুকু জ্ঞান আমার আছে।আমি এটা বুঝি যে কোনটা বোনকে আদর করা আর কোনটা যৌনতায় মেতে উঠা!’
ফাহাদের আর সহ্য হচ্ছে না। এবার সে সত্যি সত্যি মারলো নোরাকে।ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গেল বিছানার কাছে। তারপর বিছানার সাথে তার মুখটা নিচে ফেলে অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখলো।নোরার তখন মনে হতে লাগলো এই বুঝি তার দম আটকে আসছে।
দীপা এবারও ছাড়িয়ে নিলো।বললো,’করছিস কী তুই হ্যা? নতুন বউয়ের সাথে কেউ এমন করে রে?তুই যা।ঘর থেকে এখন বেড়িয়ে যা।রাগ থামলে আসিস।আমি নোরার সাথে কথা বলছি।দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
ফাহাদ আলনা থেকে এষ রঙা শার্টটা নামিয়ে গায়ে দিতে দিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।ও চলে গেলে দীপা এসে নোরার হাত ধরতে চাইতেই নোরা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো।ও বললো,’একবার গা কেঁটে দিয়ে গিয়ে এবার লবণ নিয়ে এসেছেন!মানে সাপও আপনি ওজাও আপনি!’
দীপা ওর মুখোমুখি বসলো। বসে বললো,’দেখো নোরা, তুমি সত্যিই আমাদের ভুল বুঝছো। আসলে ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।আমি ওর এক বছরের বড় হলেও আমরা ছিলাম সব সময় বন্ধুর মতো। আমাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক ছিল যে আমরা মাঝেমধ্যে ভুলেই যেতাম আমরা আলাদা জেন্ডারের।আর মাথায় ওরকম কিছু আসতোও না। অনেক দিন পর ওর সাথে দেখা।সময় সুযোগ মিলে না বলে আসতে পারি না। অনেক দিন পর সুযোগ মিলায় এবার আসতে পারলাম।তাই আজ দু’ ভাই বোন মিলে খাটে শুয়ে থেকে সুখ দুঃখের আলাপ করছিলাম।আর তুমি আমাদের দেখে খারাপ কিছু ভেবে নিলে!বোকা মেয়ে, শুনো চোর কখনো দিনে দুপুরে দরজা খুলে রেখে এভাবে চুরি করবে না। তাছাড়া আমি ওর এক বছরের বড়।দুজনই মেরিড। আমার একটা তিন বছর বয়সী ছেলেও আছে।এই বয়সে এসে আমি কেন ওসব করবো!’
নোরা কেন জানি মুখ ফুটে কিছু বললো না।সে এমন ভাব করলো যেন দীপার কথাগুলো যৌক্তিক। কিন্তু সে মনে মনে ঠিকই বললো,আপনি আসলে চোর না। আপনি ডাকাত।ডাকাতেরা দরজা বন্ধ করে মালামাল লোট করে না। মালিকের সামনে থেকেই কেড়ে নিয়ে যায়!
দীপা ওর শান্ত মৌন ভাব দেখে বুঝতে পারলো নোরা ওকে বিশ্বাস করেছে। কনভিন্স হয়ে গেছে ও।দীপা তাই প্রশান্তির হাসি হাসলো। হেসে বললো,’দেখো আবার বোকামি করে এই কথা কারোর কাছে বলে দিও না যেন! মানুষ তখন খারাপ ভাববে। আর তুমি তো চাও না তোমার হাসব্যান্ডকে নিয়ে কেউ চরিত্রহীনতার প্রশ্ন তোলুক?’
নোরা এবার কথা বললো।বললো,’সে যদি সৎ চরিত্রের হয় তবে আমি ওর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করবো না কখনো!’
দীপা আবার হাসলো। হেসে নোরার হাত ছুঁয়ে বললো,’আরে বোকা মেয়ে, তোমার হাসব্যান্ড শতভাগ সৎ।মনে রেখো সন্দেহ খুব খারাপ অসুখ। হাসব্যান্ড যদি তার ওয়াইফকে আর ওয়াইফ যদি তার হাসব্যান্ডকে সন্দেহ করে তবে সেই সংসার হয় নরকের মতো!ধরো তোমার দুলাভাই যে সেই সুদূর ইতালিতে আছে , ওখানে কী করছে না করছে আমি কিন্তু জানি না। ওইসব দেশ আমাদের দেশের মতো না। ওখানে খুব সহজেই মেয়ে পার্টনার পাওয়া যায়। ওদের সাথে বেড শেয়ার করা যায়।এতে কেউ কিছু মনেও করে না।ওসব নিয়ে আলোচনাও হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস ও এমন না। এই যে বিশ্বাস এই বিশ্বাসের নামই ভালোবাসা।এই বিশ্বাসের নামই ঘর কিংবা সংসার।তোমাকেও এমন হতে হবে। চোখ বুজে হাসব্যান্ডকে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের মা চাচীরা তো এমনি এমনি আর বলে না স্বামী দেবতার মতো।এই কথা মিথ্যে না। তুমি তোমার হাসব্যান্ডকে বিশ্বাস করে দেখো।কী পরিমাণ ভালোবাসা পাও।আর যদি অবিশ্বাস করো। তার সাথে খারাপ আচরণ করো। তবে তো আজ দেখলেই কী হলো! তুমি এ বাড়ির নতুন বউ হয়েও মার খেয়েছো!আর কখনো এমন করো না। ঠিক আছে?’
নোরা মাথা উপর থেকে নিচে ঝুঁকিয়ে বললো,’ঠিক আছে।’

সেদিন কলেজ থেকে তিশা আর ওর মা ফিরে এলে নোরা ওদের কাছে কিছুই বললো না। সবকিছুই চেপে গেল। কেন চেপে গেল তা বোঝা গেল না।নাকি সে আবার ভীতু হয়ে গেল!অন্য আট দশটা মেয়ের মতোই এই সাধারণ সত্যিটা মেনে নিলো যে স্বামী দেবতার মতো।তার কোন ভুল ধরা যাবে না। তাকে সন্দেহ করা যাবে না। সন্দেহ করলে সংসার সুখের হবে না।নরক হয়ে যাবে সংসার!
দীপা এমনটিই ভেবেছে।ভেবেছে নোরা ওর সব কথাই মেনে নিয়েছে।ও আর কোনদিন মুখ খুলবে না। ফাহাদও নিশ্চিন্ত হলো।যেহুতু সেই রাতে নোরা তাকে কাছে ঘেঁষতে বাঁধা দিলো না তবে তো এটা বলাই যায় নোরার মনে আর কোন রাগ অভিমান নাই তার প্রতি।
নোরাও ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে।যেন আর ওদের ভেতর কোন রাগ অভিমান কিংবা সন্দেহের দেয়াল নাই।

এতে সাহস আরো বেড়ে গেল ওদের। এবার কিন্তু ওরা যখন তখন ছাদে উঠছে। খানিক ফাঁক ফোকর পেলেই গা ঘষাঘষি করছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করছে নোরা।সে ওদের বুঝাচ্ছে সে কিছুই মনে করছে না।যেন এসব হওয়ার ছিল।এতে তার মন খারাপ করা কিংবা রাগ করার কিছু নাই!
ফিরোজা বেগম অবশ্য এসবের কিছুই ধরতে পারেননি। আদতে তিনি সহজ সরল মানুষ। এসবের কিছুই বোঝেন না।ভাবেন ওরা সম বয়সী। তাছাড়া কাজিন। একসাথে বড় হয়েছে।দুজনই বিবাহিত। ওদের মধ্যে যা হয় তা গল্প গুজব। অতীতের সব কথাবার্তা বলে ওরা। আনন্দ করে। হাসাহাসি করে এই তো!
কিন্তু আরেকজনের নজরে ঠিকই পড়ে যায় ওদের নোংরামো গুলো। একদিন নোরার কাছে এসে—

#চলবে