গ্রামের লাজুক মেয়ে পর্ব-০২

0
1442

#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ২…

√- অবশেষে সেই অপেক্ষা শেষ করে শুক্রবার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। সকাল ৮ এটায় এসি বাসের টিকিট কেটে বাসের মধ্যে বসে আছি। এখন তো টেনশন আরো বাড়তে লাগলো, কেমন দেখতে হবে রিতু? ফর্সা নাকি কালো, নাকি আমার থেকে খুব লম্বা নাকি খাটো… ?
কি টেনশন রে বাবা, আবার মনে হচ্ছে নিশ্চিত ভাবির বোনের কেনো খারাপ দোষ আছে, নাহলে এতো তাড়াতাড়ি বোন দিতে রাজিই বা হল কেনো?
আজেবাজে চিন্তায় আমাকে ঘিরে ধরলো।

বাস ছেড়ে দিলো, কিন্তু টেনশন আর ছাড়লো না। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা করে এক টানা গাড়ি চলার পর অবশেষে ঢাকা গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে বাস থামলো। পুরো রাস্তা আজেবাজে চিন্তা করে আসাতে খুব ক্লান্ত লাগছে। বাস থেকে নেমে CNG ধরে লালবাগ কেল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ভাবিদের বাসা কেল্লার পাশেই। ৪০ মিনিট পর ভাবিদের বাসায় গিয়ে উঠলাম।

হাটার আর শক্তি নেই, খুব ক্লান্ত। আধা মরা লাগছে নিজেকে। ভাবির আম্মু মানে আন্টি বাসার মধ্যে নিয়ে গেলো আমায়। ফ্রেশ হলাম, হালকা নাস্তা করে শুয়া মাত্র কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি মনেও নেই। এতোটা ক্লান্ত যে আন্টিদের বাসায় গিয়ে আমি রিতুর কথাও ভুলেই গিয়েছিলাম।

বেশ আরামে ঘুম হচ্ছে।
যখন ঘুম ভাঙ্গছে তখন হালকা হালকা অন্ধকার হয়ে এসেছে। সব থেকে মজার কথা হল, আমি ঘুম থেকে উঠে মনে করছি সকাল হয়ে গিয়েছে।

ব্রাশ কিনতে বাইরে যাচ্ছিলাম তখন আন্টি বললোঃ কোথায় যাও বাবা?

আমিঃ ব্রাশ আনতে যাচ্ছি আন্টি?

আন্টিঃ তুমি কি বিকালেও ব্রাশ করো সব সময়?

আমিঃ না তো আন্টি। সকালে ও রাতে।

আন্টিঃ এখন তো বাবা বিকাল হয়েছে, সকাল বা রাত না…

~ কি যে লজ্জা পেলাম বলে বুঝাতে পারবো না। মাথা নিচু করে বললাম, ওহহ।

পাশের রুমের দরজার সাইড থেকে কে যেনো হি হি করে হেসে দিলো।
মেয়েদের হাসি, হাসিটাও তো অনেক সুন্দর।
কিন্তু হাসি শুনা মাত্র মাথায় রক্ত উঠে গেলো। কেমন মেয়ে রে বাবা, আমার কথা নিয়ে মজা করে।

আমিঃ… আন্টি ওখানে এই ভাবে হাসলো কে? ?

~ আর তখনি ওই রুমের দরজা টা ঠাসস করে আটকে গেলো…

আন্টিঃ রিতু হেসেছে হয়তো…

আমিঃ কোন রিতু?

আন্টিঃ তুমি যাকে নিয়ে যেতে আসছো…

আমিঃ ওহহ আচ্ছা।

~ আস্তে করে সাইড হয়ে রুমে চলে গিলাম। খুব রাগ হচ্ছে আমার। ভাবি তার বোনের এতো এতো প্রশংসা করলো, এই নাকি তার বোন। আমার কথায় হাসে কত বড় সাহস। মেজাজ টায় গরম হয়ে গেলো। এর সাথে আমি সারাজীবন থাকবো কি করে, ধুর ছাই, প্রেমের কিছু কই প্রেমই করবো না ?

মেজাজ গরম করে বসে আছি। রাত ৮ টার দিকে আন্টি খেতে ডাকলেন। প্রথমে মানা করলেও আন্টির জোর করাতে খেতে গেলাম টেবিলে। আন্টি বসতে বললো, আমিও চুপ চাপ বসে আছি। দেখলাম আন্টি সব কিছু দুই প্লেটে দিচ্ছেন। একটা আমার সামনের প্লেটে, আরেকটা পাশের খালি চেয়ারের সামনে রাখা প্লেটে। আমি কিছু না বলে চুপ করে দেখছি।

আন্টির খাবার দেওয়া শেষ হলে বললাম.. এই প্লেট কার জন্য?
আন্টি বললো..এটা রিতুর জন্য, বাবা…

মেয়েটার নাম নেওয়াতে আমার রাগ উঠতে লাগলো। আন্টি বললো তুমি খেতে থাকো, আমি রিতুকে নিয়ে আসছি।

আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে খেতে শুরু করলাম। কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম পাশের চেয়ারে কে যেনো বসলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা রিতু। রাগে তার দিকে একটুও চোখ ঘুরালাম না, খেয়েই যাচ্ছি।

১০ মিনিট পর আন্টি রান্না করে গেলেন। এই তো সুজুগ, পাজি মেয়েকে জিগ্যেস করবো কেনো আমার কথায় হাসলো? এতো সাহস কোথা থেকে পেলো এই মেয়ে…

চোখ দুটো হয়তো আমার লাল হয়ে গিয়েছে এতো রাগ তখনো।
রাগি মুখ নিয়েই ঝারি দিবো এমন নিয়ত করে তার দিকে তাকাতেই দেখি ?…

OMG…. ??
এটা দেখি একটা পরী…
মায়াবী চোখ। চিকন ভ্রু, পাতলা ঠোঁট, মায়াবী তার মুখ, মুখ টা এতো ফর্সা যে মনে হচ্ছে দুধের চেয়েও বেশি ফর্সা…

কিসের ঝারি, কিসের রাগ..
সব যেনো তাকে দেখে মাটি হয়ে গেলো। কত সুন্দর করে মুখে ভাত তুলে নিচ্ছে। চোখ আর সরাতে পারছি না। এক ভাবে তাকিয়ে আছি, হয়তো সে বুঝতে পারে নাই এখনো যে আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে । আমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছি। কত সুন্দর রে, ক্রাশ খায়ছি গো আমি..

এমন সময় পিছন থেকে আন্টি বলে উঠলোঃ কি বাবা, রিতুকে কিছু বলতে চাও??

((– ভয়ে ছিটকে উঠছি। আন্টি যে কখন পিছনে এসে দাড়িয়েছে বুঝতেও পারি নাই। আল্লাহ জানে, কতক্ষণ আমার তাকিয়ে থাকা দেখছে আন্টি। কতটা না খারাপ ভাবছে যে আমি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকি, নিজের উপর এখন ঘৃণা হচ্ছে, ছি… -))

আমি আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললামঃ না আন্টি.. কিছু তো বলবো না।

এবার ও এই মেয়ে হি হি করে হেসে দিয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। আন্টিও হেসে দিলো আমার দিকে তাকিয়ে। মাঝ খানে আমি জোকার হয়ে গেলাম। সালা, আসছিলাম প্রেম করতে ঢাকা, হয়ে গেলাম হাসির পাত্র। কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলাম।

টিভি দেখছি। ঘুম ঘুম এসেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১০ টা বাজে।
ভাবলাম বাথরুম থেকে আসে ঘুমিয়ে পড়ি, তাই বাথরুমে কাছে যেতেই বাথরুমের দরজা খুলে রিতু বের হয়ে এলো।

দুই জন সামনাসামনি এখন। দুই জন দুই জনের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি তার চোখের দিকে, সে আমার চোখের দিকে। সেই একটা রোমান্টিক দৃশ্য ??

বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হালকা করে একটা কাশি দিলাম।
আবারও সেই একি কাজ। আমার দিকে তাকিয়ে হি হি করে হেসে দিয়ে চলে গেলো..
আমায় দেখে এতো হাসির মানেই বুঝি না আমি। আমাকে কি সে জোকার মনে করে নাকি, ফাজিল মেয়ে ?

নাকি আবার তার মাথায় কেনো সমস্যা আছে?? মানে পাগলী টাগলী নাকি আবার… ?

ঠিক এবার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ভাবি তার বোন কেনো আমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, মানে পাগলী বোন আমার ঘারে চাপাতে চাই।

বাথরুম থেকে রুমে গিয়ে দোয়া পড়ে, ওই রিতু পাগলীর চিন্তা মাথা থেকে ফেলে আরামে একটা ঘুম দিলাম ?

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে বসে আছি সেই ম্যাডামের অপেক্ষায়। সে রেডী হলে তাকে নিয়ে ফরিদপুরের দিকে রওনা হব।
একটা জিনিস বুঝতে পারলাম, এই মেয়ে কথা বলে খুব কম। অন্য মেয়েদের মত বাচাল না সে। এখনো একটা শব্দ ও তার মুখের পেলাম না। কত ভালো মেয়ে গো সে.. ??

নাকি আবার বোবা সে ?

ধুর টেনশনে আমি শেষ। তাহলে কি সত্যি আবার বোবা নাকি এই মেয়ে। চিন্তায় হয়তো মরেই যাবো ?

এমন সময় আন্টি এসে বললোঃ বাবা রিতু রেডী হয়েছে। আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দেও তাহলে… সকাল সকাল গেলে ফেরী ঘাটে জ্যাম কম হবে।

আমিঃ জি আন্টি…

রুম থেকে বের হয়ে বাইরে এলাম। আন্টি বললো রিতুর রুমের থেকে রিতুর ব্যাগ নিয়ে আসতে। তাই আবার ফিরে তার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি সে বোরকা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে, কি পাগলী মেয়ে ?… বোরকা পড়ে আবার আয়নায় নিজেকে দেখছে হা হা…

আমি, রিতুকে উদ্দেশ্য করে বললামঃ আপনার ব্যাগ কোনটা?

মেয়েটা আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমিও উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছি।

আবার বললামঃ আপনার ব্যাগ কোনটা? যেটা নিতে হবে?

এবারও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হি হি করে হেসে দিলো.. ?

অনেক হয়েছে আর না। আমি শিওর এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে। নিশ্চিত পাগলী মেয়ে ওনি.. কথা নাই বার্তা নেই, শুধু হি হি করে হাসে। কোন পাগলীর পাল্লায় পড়লাম রে ।
আর কিছু না বলে দেখলাম খাটের উপর একটা ব্যাগ, ব্যাগ টি নিয়ে বাইরে চলে আসলাম। আন্টির কাছে গিয়ে আন্টিকে বললাম…

আমিঃ আন্টি একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না?

আন্টিঃ বলো বাবা…

আমিঃ এই মেয়ের কি মাথার তার ছিঁড়া আছে?

আন্টিঃ কেনো বাবা? কি হয়েছে?

আমিঃ কেমন যেনো মেয়েটা… আমায় দেখলে হি হি করে হাসে, আবার কিছু জিগ্যেস করলেও হি হি করে হাসে, এর কারন কি?? আন্টি…

আন্টিঃ আসলে বাবা, ওর একটা সমস্যা আছে। সেটা হল……….~ গল্প চলবে ~