গ্রামের লাজুক মেয়ে পর্ব-০৩

0
1022

#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৩…

√-আমিঃ কেমন যেনো মেয়েটা… আমায় দেখলে হি হি করে হাসে, আবার কিছু জিগ্যেস করলেও হি হি করে হাসে, এর কারন কি?? আন্টি…

আন্টিঃ আসলে বাবা, ওর একটা সমস্যা আছে। সেটা হল ও অনেক লজ্জাবতী মেয়ে। যত লজ্জা পায়, তত হাসে… তোমায় হয়তো আগে থেকে চিনে বা নাম শুনছে তোমার, সেই জন্য তোমায় দেখলে লজ্জা পেয়ে হেসে দেয়। খুব লজ্জা ওর। আর এমনিতেও ও খুব হাসতে পারে। লজ্জা পেলেও হাসে, বকা দিলেও হাসে, কান্নার সময়ও কেউ একটু দুষ্টুমি কথা বললেও হি হি করে হেসে দেয়। ওর মন টা খুব ভালো।
কেনো বাবা… ওর হাসি তোমার কাছে খারাপ লাগে নাকি??

আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললামঃ হুমম খুব সুন্দর হাসি তার ?

আন্টিঃ হুমম বুঝতে পারছি, তোমার আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে, তোমার আর রিতুর বিয়ের ব্যাপারে ?

আমি আরেকটু বেশি লজ্জা পেয়ে বললামঃ আন্টি কি যে বলেন। আচ্ছা আন্টি আমরা তাহলে আসি… ?

আন্টিঃ হুমম তোমার মুখের হাসি বলে দিচ্ছে তুমি বিয়েতে রাজি হবে রিতুর সাথে, হা হা হা। আচ্ছা বাবা, তাহলে আসো। যখনি সময় পাবে, এখানে এসে বেড়িয়ে যাবে ওকে…

আমিঃ ঠিক আছে আন্টি।

তারপর আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে CNG করে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসলাম। আন্টি বলছিলো রিতুর বমি হয় বাসে, তাই AC বাসের টিকিট কাটতে গেলেও না পেয়ে চেয়ার কোর্স বাসের টিকিট কাটতে হল। এতো সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে কত পথ CNG করে এলাম, একটাও কথা নেই মেয়ের মুখে। কি মেয়ে রে বাবা। মনে হয় পুতুল নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে হি হি করে… ?

কিন্তু কথা তো আমাকে বলাতে হবে তাকে, যেই ভাবে হল ? আমিও কি কম সয়তান নাকি হুমম ? শত হলেও সে বিয়ান মানুষ, একটু দুষ্টুমি হলে আরকি…

বললাম, চলুন বাথরুমে। কারণ ৩ ঘন্টার মধ্যে আর বাস দাঁড়াবে না কোথাও…
আমার কথা মতো আমার পিছনে হাটতে শুরু করলো। মহিলা বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে আমি একটু দুরে দাড়িয়ে আছি।
পাশে দেখি একটা কুকুর দাড়িয়ে আছে, সয়তানি বুদ্ধি এলো। সে কথা বলবে না, কত তে দেখবো আমি ?…

কুকুর কে হুশশ হুশশ করে বাথরুমের দরজার কাছে পাঠিয়ে দিলাম ?
মানে যখনি দরজা খুলবে রিতু, আর সে ভয় পাবে কুকুর দেখে, তখন ভয় পেয়ে তাকে কুকুর থেকে বাঁচানোর জন্য আমায় বলবে হি হি, আবার এমনি হতে পারে, ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো আমায় লজ্জাবতী মেয়ে, হি হি .. কত বুদ্ধি আমার ?

ঠিক যা চাইছি তাই হল। দরজা খুলতেই কুকুর রিতুর দিকে তাকিয়ে ঘেউ করে উঠলো। রিতু ও ভয়ে আমাকে জোরে করে ডাক দিলো। কিন্তু যা বলে ডাক দিলো, মনটা আমার ভেঙ্গে চুড়ে গেলো ?

ডাকটা ছিলো এমন ” ভাইয়া, ওই ভাইয়া, কুকুর আমায় কামড় দিচ্ছে ”

পৃথিবীতে এতো কিছু থাকতে শেষ মেশ ভাইয়া বলেই ডাকতে হল ?
ভাঙ্গা মন দিয়ে কুকুর কে তাড়িয়ে দিলাম।

তাকে নিয়ে বাসে উঠে গেলাম। বাসের ভিতরে রিতু গিয়ে বললো ” ভাইয়া, আমি কিন্তু জানালার পাশে বসবো ”
আবারও সেই ভাইয়া। হয়েছে আমার প্রেম করা বুঝতে পারছি। সুন্দরী মেয়েরা কেনো যে ভদ্র ছেলেদের ভাইয়া বলে বুঝতেও পারি না এটা । সেই জন্য এদের কপালে ভদ্র ছেলেও জুটে না।
বললাম,, আচ্ছা আপনি বসুন জানালার পাশে…

আমি বাসের থেকে বের হয়ে এসে একটা দোকানে গেলাম।
একবার নাহয় ভাইয়াই বলছে, তাহলে কি সুন্দরী মেয়ের আশা ছেড়ে দিবো বুঝি..
দেখি আরেকবার চেষ্টা করে অন্য নামে ডাকাতে পারি কিনা..

আমি আবার সব সময় কোথাও বাসে করে গেলে, অনেক শুকনো খাবার নিয়ে যায় সাথে। আর এখন তো সুন্দরী মেয়ে পাশে, আরো বেশি করে নিতে হবে, দেখাতে হবে না আমার মন কতটা উদার ?

আমরা ২ জন থাকলেও…
চিপস ৬ টা…
প্যাকেট জুস ৬ টা…
বোতল জুস ৬ টা…
বড় দুইটা চকলেট বক্স… আইসক্রিম ২ টা…
ঝালমুড়ি প্যাকেট ৬ টা…
চকলেট বিস্কুট প্যাকেট ৬ টা…
ক্রিম বিস্কুট প্যাকেট ৬ টা…
ললিপপ ১২ টা…
আরো কয়েক রকম চকলেট…
একটু গরম থাকায় লাচ্ছি ২ টা সহ সব নিলাম।

ও মোর খোদা, সব কিছু প্যাকেট করে দিলো দোকানদার ভাই। হয়ে গিয়েছে প্রায় হাফ বস্তা.. ?

সব কিছু নিয়ে বাসের মধ্যে ঢুকতেই দেখি রিতুর বিষন্ন মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেনো খুজতেছে।

আমি কাছে গিয়ে বললামঃ কি খুঁজছেন?

চোখ দিয়ে পানি বের করে দিয়ে বললোঃ আপনি কোথায় ছিলেন ভাইয়া?

আমিঃ কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?

রিতুঃ এই ভাবে আমায় একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলেন? যদি গাড়ি ছেড়ে চলে যাইতো?

~ আমি মনে মনে ভাবি, পাগলী টা আমায় নিয়ে কত টেনশন হচ্ছে। একদিনেই হয়তো আমার প্রেমে পড়ে গেলে ~

আমিঃ আমার জন্য খুব টেনশন হচ্ছিল বুঝি?

রিতুঃ না তো। আপনার জন্য টেনশন হবে কেনো আমার?

আমিঃ তাহলে যে চোখে পানি? সাথে কান্না..?

রিতুঃ সেটা তো আমার জন্য। আমি যদি হারিয়ে যেতাম। তাহলে বাসায় কিভাবে যেতাম। আর আমি শুনছি, সুন্দরী মেয়েদের একা হারিয়ে গেলে ছেলেরা ধরে নিয়ে বিয়ে করে নেয়, আমার কি হত তখন ? আমিও তো সুন্দরী তাই না ভাইয়া..?

~ মনে মনে ভাবছি, পাগলী দেখি নিজের প্রশংসা নিজেই করে। যদি তার সাথে আমার বিয়ে হয়, বিয়ের পর কত প্রশংসা করতে হবে তার চেহারার, আল্লাহ জানে ~

আমিঃ হুমম আপনি খুব সুন্দরী।

রিতুঃ ধন্যবাদ ভাইয়া।

রিতু চোখের পানি মুছতে শুরু করলো। আমি পাশে গিয়ে বসলাম। বাস ছেড়ে দিয়েছে। জানালা দিয়ে প্রচুর বাতাস আসছে। আমি মাঝে মাঝে লুকিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি। সে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে বুঝতে পারছে না। আমি মাঝে মাঝে অনেক কিছু দেখিয়ে বলে দিচ্ছি এটার নাম কি, ওটার নাম কি, সে শুধু মাথা নেড়ে হুমম বলছে।
খুব একটা রোমান্টিক ব্যাপার। জীবনে প্রথম কেনো মেয়ের এতো কাছে বসে আছি, আবার তার সাথে কথাও বলছি। একটা অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।

মনে পড়লো ওই খাবার গুলো কথা। খাবার গুলো তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম এগুলো আপনার জন্য। আমার হাত থেকে নিয়ে সব দেখতে লাগলো কি কি ভিতরে…

~ আমিতো মনে মনে হেব্বি খুশি। রিতু হয়তো এখন বলবে, আমার জন্য এতো কিছু এনেছেন, এগুলো আমি খুব পছন্দ করি, আপনি আমার মনের কথা জানলেন কি করে, তাহলে কি আপনি আমার মনের ভাষা বুঝতে পারেন….
এগুলো মনে মনে ভাবছি, আর লজ্জা পেয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি, মনে হচ্ছে কেউ হয়তো আমায় সুরসুরি দিচ্ছে ☺..~

রিতু আমার দিকে আড় চোখ তাকিয়ে বললোঃ এগুলো কি আপনি বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন, আপনার বাচ্চা কাচ্চার জন্য? ?

~~ও মা গো, কত রোমান্টিক ভাবার মধ্যে এই মেয়ে কি বললো এটা, এটা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বিয়েই করলাম না, বাচ্চা কাচ্চা পেলাম কোথায় ?~~

আমি চোখ গরম করেঃ কি বলছেন এগুলো? আমার বাচ্চা কাচ্চা আছে নাকি? ওগুলো আপনার জন্য?

রিতুঃ আপনার কেনো ছেলে মেয়ে নেই?

আমিঃ না নেই ?

রিতুঃ আপনার কি কেনো শারীরিক সমস্যা আছে, কেনোদিন বাবা হতে পারবেন না?

আমিঃ কি বলছেন এগুলো, আমার শারিরীক সমস্যা থাকবে কেনো হুমম?

রিতুঃ তাহলে কি আপনার স্ত্রীর সমস্যা?

আমিঃ কি বলছেন এগুলো? আমার স্ত্রীর হবে কেনো, আমিতো এখনো বিয়ে করি নাই ?

রিতুঃ তাহলে কি আপনি চিরকুমার থাকবেন? জীবনে বিয়ে করবেন না?

আমিঃ বিয়ে করবো না নামে? বিয়ের বয়স হলে ঠিক বিয়ে করবো ?

রিতুঃ আপনি এতো বড় হয়েছেন এখনো বিয়ে করেন নাই কেনো? আমাদের ওখানে তো এই বয়সের চেয়ে কত আগে বিয়ে করে… ?

আমিঃ কত বছর বয়সে বিয়ে করে শুনি??

রিতুঃ ধরুন, ২৫-৩০ বছর বয়সে ছেলেরা বিয়ে করে আমাদের ওখানে।

আমিঃ এই যে ম্যাডাম, আমাকে কি আপনার বুড়ো মনে হয়?

রিতুঃ কেনো? আপনি বুড়ো নন?

আমিঃ মেজাজ গরম করাবেন না কিন্তু, আমার কি চুল পাকা দেখেছেন?

রিতুঃ না তো। আপনার চুল হয়তো কালো করছেন সব।

~~ মাথায় রক্ত উঠে গেলো, রাগের ঠেলায় এক টা চুল উঠাতে গিয়ে ২৫-৩০ টা চুল উঠে গিয়েছে, ও মা গো, কত ব্যাথা ~~

আমিঃ এই দেখুন আমার চুল, এগুলো কি আপনার কাছে কালো রং করা মনে হল?

রিতু হাতে চুল নিয়ে বললোঃ দেখে তো মনে হচ্ছে, রং করেন নাই ?

আমিঃ তাহলে আমাকে বুড়ো বলছেন কেনো?

রিতুঃ তাহলে যে বুবু বললো…(বুবু মানে আমার শুবশ্রী ভাবি)………~ গল্প চলবে ~

বিঃদ্রঃ শুভ রিতুর ঝগড়া কত দুর যায়, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব…