চন্দ্ররাতের মায়া পর্ব-০৪

0
205

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৪]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

– আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো,আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করবেন না প্লিজ

– গুড।এমন ব্যাবস্থা করবেন যেনো নন্দিতা আর কখনোই মা হতে না পারে।আর যদি এর বেতিক্রম করেছেন তো নিজের মেয়ের মুখের বাবা ডাক শুনতে পারবেন না। গট ইট।

– আমি করবো।যা বলবেন তাই করবো।আপনারা আগে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন

– হা হা হা,যা বলেছি সেটা করবি,তা না করে তোর মুখে এতো কথা ফুটছে কেন?

তখনই ডাঃসিহাব ফোনের অপর পাশ থেকে চিৎকারের আওয়াজ পায়।এটা যে তার আদুরে মেয়ের গলা সেটা বুঝায় অভিপ্রায় রইলো না।ডাঃসিহাব আকুতি-মিনতি করতে লাগলো-

– প্লিজ এরকম করবেন না।আমি আর কিছু বলবো না।

– গুড।কাজ শেষে তোর মেয়ে ঠিকি বাড়িতে পৌঁছে যাবে।

টুট টুট শব্দ করে ফোনটা কেটে গেলো।ডাঃসিহাবের সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। এটা কিভাবে করবে সে? এর মতো বড় পাপ যে আর হয় না।কিন্তু নিজের মেয়েকে বাঁচাতে এটা তাকে করতেই হবে।একরাশ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অপারেশনটা শেষ করলো।নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো।আজ তার জন্য একটা মেয়ে মা ডাক শুনতে পারলো না,একটা ছেলে বাবা হতে পারলো না,বাবা ডাক শুনতে পারলো না।বাবা,মা ডাক শুনার মতো এতো সুন্দর অনুভূতি সে নিজের হাতে কেটে ফেললো।এই পাপ কিভাবে খেয়া করবে? এর শাস্তি যে তাকে পেতেই হবে।শুধু অপেক্ষা।

অপারেশন শেষে নন্দিতার মায়াবী মুখখানা দেখে ডাঃসিহাব নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারলো না।অজ্ঞানরত নন্দিতার পা ছুঁয়ে বললো

– আমি অন্যায় করেছি আপনার সাথে।মাতৃসত্তাকে আমি শেষ করে দিয়েছি।একটা মেয়ের জীবনে সব থেকে বড় পাওয়া হলো সন্তানের মুখে মা ডাক শুনা।আমি সেই পথ আজ নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছি।আমার কোনো ক্ষমা নেই।আমার কোনো ক্ষমা নেই।

কয়েক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে নন্দিতার পায়ের ওপর পড়লো।ডাঃসিহাব স্বাভাবিক হয়ে অ্যাফ্রোন দিয়ে বেড় হতেই দেখলো তীব্র দরজার সামনে দারিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে দারিয়ে আছে।তাকে দেখতে পেয়েই তীব্র বললো

– ডাঃ আমার স্ত্রী কেমন আছে?ও ঠিক আছে তো?

– আপনি চিন্তা করবেন না মিঃতীব্র। উনি একদম ঠিক আছে।এখন ঘুমাচ্ছে।ওনাকে এখন ডিস্টার্ব না করলেই ভালো হয়।

– ডাঃ আমি কি দেখতে পারি? আমি কোনো কথা বলবো না শুধু দেখবো

– হুম।

নন্দিতাকে দেখার অনুমতি পেয়ে যেনো তীব্রর ভেতর খুশির বাঁধ ভেঙ্গেছে। সে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ওটির ভেতরে গেলো।দূর থেকেই নন্দিতাকে দেখে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে বাহিরে বেড় হয়ে আসে।বেড় হয়ে দেখে সামনের ওয়েটিং চেয়ার গুলিতে ভাবী বসে আছে। তীব্রকে দেখে সে বললো

– তীব্র, মা এখন সুস্থ।ডাক্তার রিলিজ করে দিয়েছে।দ্রুত ডাক্তারের কাছে আনায় তেমন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারেনি। বাবা,মা নিচে আছে।তুমি ওনাদের নিয়ে বাড়িতে যাও,বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।সারারাত ঘুমাও নি।তোমার ঘুম দরকার

– আমি যাবো না ভাবী।নন্দিতা জেগে উঠলে আমায় না পেলে মন খারাপ করবে।

– ডাক্তার বলেছে ১২ ঘন্টার আগে ওর ঘুম ভাঙ্গবে না।এতক্ষণ করবা কি? বরং তুমি যাও,আমি আছি এখানে।আসার সময় রহিমের মা কে বলে স্যুপ নিয়ে আসিও।নন্দিতাকে এখন বাইরের খাবার খাওয়ানো যাবে না।

– ভাবী, তোমাকে কি বলে যে কৃতজ্ঞতা জানাবো

– এইই,আমি কি বাইরের কেউ নাকি হ্যা? এখন যাও তো।তেমাকে দেখে আমার হিংসা হয়,নন্দিতাকে কত্ত ভালোবাসো।আর আমারটাকে দেখো, সারাদিন ওয়েব সিরিজ,নাটকের শুটিং করতেই যায়।

– আচ্ছা ভাবী আমি আসি থাহলে।তুমি খেয়াল রেখো।

তীব্র নিচে আসতেই দেখলো তার বাবা শেখর চৌধুরী,মা রামেয়া চৌধুরী দারিয়ে আছে।তীব্র দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।আর অভিমানী সুরে বলে ” তুমি এমনটা কেন করলে মা,আমার কথা মনে পড়লো না? তোমাদের কিছু হলে আমি যে সহ্য করতে পারিনা”। ছেলের এরুপ মায়াবী ভালোবাসার সুর শুনে রামেয়া চৌধুরীর চোখে জল চলে এলো।

বাড়িতে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে তীব্র নাশতার জন্য নিচে আসলো।সকাল থেকে কিছুই পেটে যায়নি তীব্রর।সে নিচে এসে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা আপেলে কামড় দিয়ে খাবার আনতে বললো।শেখর চৌধুরী খবরের কাগজ হাতে নিয়ে তীব্রর সাথেই টেয়ায়টায় বসলেন।খবরের কাগজ টেবিলে ঠাস করে রেখে তীব্রকে বলতে লাগলো

– দেশটার কি হচ্ছে দিন দিন? ছেলে-মেয়েরা নিজেদের বাবা-মাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? তাহলে এই শিক্ষা দিয়ে করবেটা কি? যদি বৃদ্ধ বাবা মায়ের যায়গা না দিতে পারে,তেমন ছেলের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।পাষাণ হয়ে গেছে সবাই

– বাবা,তুমি এসব নিয়ে খেবে কিছু করতে পারবে?শুধু শুধু মাথা গরম করছো।

– করবো,আমাকে কিছু একটা করতেই হবে

– কি করবে শুনি?

– শোন তীব্র,আমাদের পুকুরটা ভরাট করে সেখানে বৃদ্ধাশ্রম করে দিতে কেমন হয়? কত অসহায় বাপ-মায়ের যায়গা হবে সেখানে ভাবো একবার?

– বাবা, তোমায় নিয়ে আমার গর্ব হয়।তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।মানুষের জন্য এতোকিছু করেও তোমার শান্তি নেই।এই বয়সেও তুমি অন্যর কথা ভাবছো।

– ভাবতে হয় রে বাপ।সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে, সেগুলো ভালো কাজে না লাগালে তাকে যে অপমান করা হবে

– আচ্ছা বাবা মা কোথায়,? এসব শুনে আবার বিষ খেয়ে বসলে কি করবে? হাহাহহা

– গাধা মহিলাকে জানাবো না।কথাটা আমাদের মধ্যে থাকবে,ওকে? ( ডান হাতটা তীব্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে)

– ওকে।

– আরেকটা কাজ করো ঝটপট।ওই গাধা মহিলা আসার আগেই। তোমার বড় ভাইয়ার রুম থেকে লকারে রাখা দলিলটা নিয়ে আসো,দেখি ওখানে কতটুকু যায়গা আছে।

– ঘরে তো কেউ নেই।ভাবী হসপিটালে।ভাইয়া নতুন নাটকের শুটিং করতে ব্যাস্ত।না বলে যাওয়াটা কেমন দেখায় না বাবা?

– ধুর,বড় ভাইয়ের ঘরে যাবে,সেখাবে এতো ভাবার কি আছে, যাও নিয়ে এসো।

তীব্র তার ভাইয়ার ঘরের দিকে গেলো।দরজা লক করা নেই।দরজাটা সামান্য আটকে রাখা।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লকারটা খুললো।এই লকারের একটা পিন আছে।যেটা শুধু শেখড় চৌধুরী, তীব্র আর তার ভাইয়া জানে।আর কেউ জানেনা। লকারটা খুলতেই সেখানে অনেক কাগজের মধ্যে সেই পুকুরের দলিলটা খুজতে বেশ সময় লেগে গেলো।অবশেষে খোঁজা খুজি শেষে দলিলটা পাওয়া গেলো।দলিলটা হাতে নিয়েই দলিলের ভাজ থেকে একটা পেনড্রাইভ ফ্লোরে পড়ে গেলো।

আরেহ? লকারের মধ্যে এই পেনড্রাইভটা কেন? এটাতো ভাইয়ার কম্পিউটারের সাথে থাকে সবসময়। এখানে তার করা শুটিং এর ভিডিওগুলি রেখে দেয়।এটা এখানে থাকার কথা নয় তো।

তীব্রর মনে একটু খটকা লাগলো।পেনড্রাইভে কি আছে সেটা দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগলো।আবার অন্যর জিনিস দেখা কেমন এটা ভেবেও পিছুপা হচ্ছে। কিন্তু না মনকে মানাতে এর ভেতরে এমন কি আছে সেটা দেখতেই হবে।নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে,নইলে লকারে রাখার তো কারন নেই।

দলিলগুলি বিছানায় রেখে তীব্র ওর ভাইয়ার কম্পিউটার ওপেন করলো।কম্পিউটারে কোনো পাসওয়ার্ড দেওয়া নেই।পাসওয়ার্ড না দেওয়ার কারন হলো ভাইয়া পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেনা।যাইহোক,পিসিতে পেনড্রাইভটা ঢুকিয়ে ভেতরে থাকা ফাইলে যেতেই তীব্র একটা ভিডিও পায়।পেনড্রাইভে শুধু একটা ভিডিও দেখে তীব্রর খটকাটা বেড়ে যায়।ভিডিওটা ওপেন করতেই যা দেখতে পেলো সেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।চোখ বড় বড় করে মনিটরের দিকে চেয়ে রইলো। ভাইয়ার পেনড্রাইভে এই ভিডিও কিভাবে??

চলবে?