চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০৩

0
564

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরশ ফ্রেশ হয়ে আসলে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেলো।খাওয়া শেষ হলে আরশ বসে বসে টিভি দেখছে।আয়াত এসে আরশের পাশে বসলো।

“ভাইয়া একটা জিনিস নিয়ে আমি সারাজীবন কনফিউজড থাকবো।”

আরশ আয়াতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,

“কি জিনিস?”

“নানুকে দিদুন বলো নাকি নানু বলবো?”

আয়াতের কথা শুনে আরশ জোরে হেসে দিলো।

“বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস আর এইসব নিয়ে এখনো তুই কনফিউজড থাকিস!”

“তো কি করবো!তুমি বলো দিদুন আর বলি নানু কেমন হয়ে যায় না?”

“সমস্যা কি?আমি দাদাবাড়ির দিক থেকে বলি তুই নানাবাড়ির দিক থেকে বলিস।”

আমেনা বেগম ধীর পায়ে এসে আরশ আর আয়াতের মাঝখানে বসলো।

“নানু…..”

“কি রে আয়াতি!ওই এমনে চিল্লাইতে আছোস কেরে?”

আমেনা বেগমের কথায় আরশ হেসে দিলো।আয়াত মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

“নানু তুমি তো আম্মুর খালা।আর বাবার মা।সো আমি তোমাকে নানু ডাকি আর ভাইয়া ডাকে দিদুন।তোমার সমস্যা হয় না কোনো?”

“সমস্যা হইতো কেরে?জানোস তোর নানি মানে মোর ছোট্ট বইন।সে তো মারা গেলো জটিল রোগ হইয়া।আর তোর নানায় আরেকটা বিয়া করলো।তোর মায় অনেক অবহেলিত ছিলো।তখন আমি তোর মায় রে আমগো বাড়ি লইয়া আসি।তার পরের তে তোর মায় আমগো বাড়িতে থাকতো।আমি নিজেই ওগো দুইজনের বিয়া দিয়া দিছি।জানি মাইয়াডা আমার কাছেই থাকে।আর তোরা দুই ভাই-বোন আমারে যা বইলাই ডাকিস না কেনো আমার কোনো সমেস্যা নাই।”

“বুঝছি আপনার কোনোই সমেস্যা হয় নাহ্।”

আয়াত কথাটা বলে আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।আরশ পাশে বসে হাসছে।যতই উপর দিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করুক না কেনো,ভিতরে ভিতরে সে ঠিকই রাইতার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।

/🦋/

“আম্মু জানো তোমার মেয়েকে তো আজকে মেরেই ফেলছিলো।”

মৌয়ের কথায় মিতা বেগম ঘর গোছানো বাদ দিয়ে মৌয়ের দিকে তাকালো।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি বইছিস এইসব?”

“আরে আম্মু একটা উল্লুক লোক আমার গায়ের উপর গাড়ি তুলে দিচ্ছিলো।”

মিতা বেগম ধমক দিয়ে বললো,
“মৌ মজা করিস আমার সাথে?”

“আরে না আম্মু সত্যি বলছি।”

“তারপরে কি হলো?”

“তারপরে আমি লোকটাকে ইচ্ছামতো বকলাম।দ্যান লোকটা ভয় পেয়ে চলে গেলো।দেখছো তোমার মেয়ের কতো সাহস!”

মৌ কথাগুলো বলে হাত নাড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে।মিতা বেগম এসে নিখুঁত দৃষ্টিতে মৌয়ের সারা শরীর পর্যবেক্ষণ করছেন।মৌ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মিতা বেগম পাশের টেবিলে থাকা চশমাটা নিয়ে মৌয়ের চোখে পড়িয়ে দিলো।

“এটা চোখে পড়ে ঘুরলে এমন কাল্পনিক কাহিনী আর বানাতে পারবি নাহ্।”

মিতা বেগম মৌয়ের রুম থেকে চলে গেলো।মৌ বোকার মতো বসে আছে।

“আম্মু-ও আমার একটু প্রশংসা করলো নাহ্!ধ্যাত ভালো লাগে নাহ্।”

মৌ মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

__🌻__

আরশ মাগরিবের নামাজ পড়ে বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর আকাশ পানে চেয়ে আছে।আগে এমন সন্ধ্যা সে রাইতার সাথে উপভোগ করতো।রাইতা আরশের এক হাত শক্ত করে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকতো।

“মানুষ কিভাবে এতোটা পাল্টে যায়!”

কথাটা বলে আরশ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠলো।মোবাইলটা বিকেল বেলা আয়াতকে দিয়ে কিনে আনিয়েছে।মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো তুর কল করেছে।আরশ কলটা রিসিভ করলো।

“কি রে কি শুনছি এইসব?রাজ নাকি রাইতা ভাবিকে বিয়ে করেছে?”

“তুর তুই কি এগুলো জিজ্ঞেস করার জন্য কল করেছিস?”

“সরি রে দোস্ত।আসলে আমি তোকে কল করেছি অন্য একটা কারণে।”

“কি কারণে?”

“বাবা ঠিক করেছে তার বন্ধুদের ফ্যামিলি সঙ্গে নিয়ে পিকনিকে যাবে।আর আমিন আঙ্কেল তো বাবার বেস্টফ্রেন্ড সো তোদেরও যেতে হবে।”

“কিন্তু বাবা তো দেশে নেই।”

“আঙ্কেল আসলেই তো যাবো।”

“ওকে বাড়ির বাকিরা যেতে পারে।তবে আমি যাবো না।”

“দেখ আরশ তুই যদি না যাস তাহলে আমিও কিন্তু যাবো নাহ্।”

“এটা কোন টাইপের কথা?”

“তোর যেতে হবে।”

“আচ্ছা দেখি।”

“আগে বল যাবি তারপরে!”

আরশ বাধ্য হয়ে বললো,

“আচ্ছা আমি যাবো।”

“এই নাহলে আমার বন্ধু!ওকে আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

তুর কলটা কেটে দিলো।আরশ মোবাইলটা রেখে আবার কফির কাপে চুমুক দিলো।

/✨/

রাইতা বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো রাজ এসে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।রাইতা কিছুটা বিরক্ত হলো।তবে রাজকে দেখে হাসি দিলো।আরশ যখন এমন করতো তখন সে আরশকে অনেক কথা শুনিয়ে দিতো।কিন্তু রাজের বেলায় ব্যাতিক্রম!

“রাই বেবি আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো তা ঠিক করে ফেলেছি।”

রাইতা এক্সাইটেড হয়ে বললো,

“কোথায়?”

“ক্রমশ প্রকাশ্য।যখন যাবো তখনই দেখবে।”

/🌿\

মিতা বেগমের ডাকে সকালে মৌয়ের ঘুম ভাঙ্গলো।মৌ ঘুম থেকে উঠে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

“কি রে তোকে এখনো আমার ডেকে ঘুম থেকে উঠাতে হবে?কত বেলা হয়ে গেছে খেয়াল আছে?দুইদিন পরে যেই মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে সেই মেয়ে এতো বেলা পর্যন্ত নাকি পড়ে পড়ে ঘুমায়!”

“উফ আম্মু সকাল সকাল এই বিয়ে নামক প্যারার নাম নিও না তো।আমি বিয়েসাদী করবো নাহ্।সারাজীবন কুমারী হয়ে থেকে যাবো।”

“চুপ কর।আর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।”

“আজকে তো কলেজ নেই আম্মু।”

“কালকে আমরা পিকনিকে যাবো।তোর বাবার বন্ধুদের পরিবারের সাথে।”

“তা আজকে সকালে উঠে কি করবো?”

মিতা বেগম মৃদু হেসে বললেন,

“তোর শপিং করা লাগবে না?”

শপিংয়ের কথা শুনে মৌ এক লাফে বিছানার উপরে উঠে দাঁড়ালো।

“আম্মু এটা তো আগে বলবে!”

মৌ চোখে চশমা পড়ে বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিলো ওয়াশরুমের দিকে।

মিতা বেগম মৌয়ের কান্ডে হাসতে হাসতে শেষ।মিতা বেগম মৌয়ের রুম থেকে নিচে গেলো।মৌ রেডি হয়ে নিচে নামতেই অয়ন সাহেবের মুখোমুখি হলো।

“কিরে মিথি মা তুই এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো?”

“আমি শপিংয়ে যাবো বাবা।”

“সবে মাত্র নয়টা বাজে আরেকটু পরে বের হলেও তো হয়।”

“নাহ্ আমি সবার আগে সেরা জিনিসটা কিনবো।”

মৌ ব্রেকফাস্ট করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

অয়ন সাহেব হেসে বললো,

“আমার একটা মেয়ে হয়েছে বটে শপিং পাগলী।”

||💫||

আরশ ব্রেকফাস্ট শেষ করে বললো,

“আম্মু আমি এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।আজকে তো অফিস নেই।সো বাবাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় নিয়ে আসি।”

“আচ্ছা যা।”

আরশ গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে জ্যাম দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছা করে জ্যাম তৈরি করেছে।কারণ কিছুটা দূরে একটা মেয়ে একটা গাড়ির উপরের দাঁড়িয়ে কিছু বলছে আর লোকজন সেটা শুনছে।তবে দূরত্বের কারণে আরশ কিছু শুনতে পারলো না।আরশ গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গেলো।মেয়েটাকে দেখে আরশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ এটা আর কেউ না মৌ।

আরশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

“এখানেও এই মেয়ে।”

মৌ একটা শিটি মেনে চিৎকার করে বললো,

“আমি স্কুটি দিয়ে যাচ্ছিলাম।আর এই লোক গাড়ি নিয়ে এসে আমার স্কুটির সাথে লাগিয়ে দিয়েছে।এটা কি উচিত আপনারা বলুন!”

“আমি এমন কিছু করিনি।উনি নিজে এসে আমার গাড়ির সাথে উনার স্কুটি লাগিয়ে দিয়েছে।”

“এই বুড়ো বেটা একদম মিথ্যে বলবি নাহ্।এখন শুধু তোর গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছি।একটু পরে কিন্তু তোর গাড়িকে মেরে পুঁতে ফেলবো।”

আরশ মৌয়ের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে।আরশ মৌয়ের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে মৌয়ের চোখে চশমা নেই।আরশের বুঝতে বাকি নেই এই মেয়ে আবার ঝামেলা শুরু করেছে।এখন যদি এখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারে মৌ চশমা ছাড়া চোখে দেখে না।তাহলে নির্ঘাত গণধোলাই খাবে।আরশ আর কিছু না ভেবে মৌয়ের সামনে দাঁড়ালো।চশমা না থাকায় মৌ ভালো করে বুঝতে পারলো না তার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে।

“গাড়ির উপর থেকে নামুন।”

“এই কে রে আপনি?”

“আমি যেই হই না কেনো!আপনি আগে গাড়ি থেকে নামুন।”

মৌ গাড়ির উপর থেকে লাফ দিয়ে রাস্তার উপর পড়লো।হাঁটুতে হাত দিয়ে বললো,

“আউ!”

আরশ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“আপনারা যে যার মতো কাজে যান।এই মেয়েটার মাথায় একটু প্রবলেম আছে।বেশি বকবক করে।”

আরশের কথায় সব লোক চলে গেলো।যার গাড়ির উপর মৌ দাঁড়িয়ে ছিলো সে জেনো এক প্রকার গাড়ি নিয়ে দৌড় দিলো।মৌ উঠে আরশের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।আরশ মৌয়ের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে চশমা গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে।

“চশমাটা পড়ুন।নাহলে বুঝবেন না আমি কে!”

“আমি আপনার ভয়েস শুনে ভালো করেই বুঝতে পারছি আপনি হলেন কালকের উল্লুকটা।এই যে শুনেন আমি যদি একটা শিটি মারি তাহলে যেই পাব্লিকগুলোকে পাঠিয়ে দিলেন তারা এসেই আপনাকে মজা বুঝাবে।”

“ওহ্ আই সি।আপনাকে তাহলে শিশপ্রিয়া বলেই ডাকা যায় তাই-না?”

মৌ চোখে চশমাটা পড়ে নিলো।মৌ ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“আমি কি বলছি আর আপনি কি বলতেছেন?”

“আপনার সাথে এই নামটা যায়।আর শুনেন আমি যদি ওই লোকগুলোকে বলতাম আপনি অন্ধ।তাহলে আপনার কি অবস্থা হতো!”

মৌ চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মৌ একটা ঢোক গিললো।মৌয়ের মুখ দেখে আরশের খুব হাসি পাচ্ছে।তারপরেও নিজেকে সংযত করছে।মৌ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“আপনি কিন্তু আমাকে বেশি কথা বলছেন।”

আরশ হালকা কেশে বললো,

“আরে নাহ্।আমি তো কম কথাই বলেছি।”

মৌ কিছু না বলে নাকের ডগা থেকে চশমাটা উচু করে আরশের সামনে দিয়ে মুখ ভেঙচি কেটে চলে গেলো।

“শিশপ্রিয়ার তেজও আছে তাহলে।”

আরশ মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

#চলবে…………………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]