চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০২

0
665

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরশ অফিসে এসে তার কেবিনের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তার।

কেবিনের দরজায় টোকার আওয়াজে আরশ চোখ খুলে তাকালো।দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলো কেবিনের বাইরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,যা গ্লাসের দরজা হওয়ার কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

আরশ ঠিক হয়ে বসে বললো,

“কামিং”।

দরজা ঠেলে মেয়েটা আরশের কেবিনে প্রবেশ করলো।মেয়েটাকে আগে দেখেছে বলে আরশের মনে হচ্ছে নাহ্।মেয়েটা আরশের সামনে এসে দাঁড়ালো।আরশ তখন বললো,

” আপনি কে?”

মেয়েটা মৃদু হেসে বললো,

“স্যার আমি আপনার পি.এ।”

“আগের পি.এ-এর কি হয়েছে?”

“উনি অজানা কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।”

“তো আপনাকে কে পি.এ-এর চাকরিটা দিলো?”

“আমিন আহমেদ স্যার।”

আরশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“বাবা?”

“জ্বি।”

“দেখুন আমার পি.এ-র প্রয়োজন নেই।আমি বাবার সাথে কথা বলে নিবো।আপনি আসতে পারেন।আর আমি আপনার চাকরির ব্যবস্থা অন্য পোস্টিংয়ে করে দিবো।”

মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে আরশের কেবিন থেকে চলে গেলো।আরশ পকেটে হাত দিয়ে দেখে মোবাইল নেই।তখন তার মনে পড়লো কালকে রাতে যে সে তার মোবাইল ভেঙে ফেলেছে।

“মোবাইলের তো দরকার।আগে একটা একটা মোবাইল কিনতে হবে।”

আরশ তার কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো।

/🌻/

মৌ সিএনজিতে করে যাচ্ছে আর তার বান্ধবী দিথির সাথে বলছে,

“জানিস ইচ্ছা করতেছিলো লোকটাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ফেলে দিতে।আমাকে সাইকো বলা!”

“তা তুই বা কেনো অপরিচিত একজনের সাথে ঝগড়া শুরু করেছিলি?”

মৌ চশমা ঠিক করে চোখ রাঙিয়ে বললো,

“ঝগড়া করবো নাহ্ মানে?উনি আমার গায়ের উপর গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলো!”

“নিশ্চয়ই তুই চশমা ছাড়া রাস্তা পাড় হচ্ছিলি আর গাড়ির সামনে পড়ে যাচ্ছিলি!”

দিথির কথায় মৌ চুপ হয়ে গেলো।দিথি মৌয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“চশমা পড়ে চললে কি হয়?”

“তুই তো জানিস ভালো করে চশমা পড়লে আমাকে সবাই কিভাবে ক্ষ্যাপায়!”

“মৌ কারো কথায় কান দেওয়ার কোনো মানে নেই।তোর যেটাতে সমস্যা হয় তুই কেনো সেটা করবি!আল্লাহ না করুক এমন চশমা ছাড়া রাস্তা পাড় হতে গিয়ে যদি তোর বড় কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যায়!তখন কি হবে?আর লোকটা তো তোকে ভালো কথাই বলেছে তাই-না!”

মৌ এতোক্ষণ চুপচাপ দিথির কথা শুনতে ছিলো।ভ্রু জোড়া নাচিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,

“আসলে তুই ঠিকই বলেছিস।এখন থেকে আমি সবসময় চশমা পড়ে চলবো।লোকে যাই বলুক আই ডোন্ট কেয়ার।”

কথাটা বলে মৌ একটা শিটি মারলো।সিএনজির সামনে বসে থাকা দুজন লোক মৌয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।মৌ শুকনো একটা ঢোক গিললো।

“আরে গাধি!রাস্তার মধ্যে এইসব করতে হয় নাহ্।”

“চুপ কর তো।যে যাই বলুক আমার তাতে কিছু যায় আসে নাহ্।”

মৌয়ের কথায় দিথি হেসে দিলো।মৌ-ও তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো।

__🦋__

আরশ মোবাইল শপে ঢুকে একের পর একটা মোবাইল দেখে চলেছে।তবে কোনোটাই কেনো জানি তার ভালো লাগছে নাহ্।হঠাৎ একটা মোবাইল তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।সেই মোবাইলটা ধরে বললো,

“আমার এই মোবাইলটা লাগবে।”

“স্যার এটা অলরেডি একজন অর্ডার দিয়ে ফেলেছে।”

“উনাকে এমন আরেকটা মোবাইল দিয়ে দিন অথবা উনাকে বলুন অন্য একটা পছন্দ করে নিতে।এটা আমার পছন্দ হয়েছে।”

“সরি স্যার এমন কোনো নিয়ম নেই।আর স্যার এই মোবাইলটা এক সেটই রয়েছে।আপনি চাইলে উনার সাথে কথা বলতে পারেন।উনি যদি রাজি হয় তাহলে আমরা আপনাকে এই মোবাইলটা দিতে পারবো।”

“যিনি এই মোবাইলটা চয়েজ করেছেন উনি কোথায়?”

লোকটা একদিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,

“ওই যে।”

লোকরা যে দিকে তাকিয়ে আছে আরশ সেদিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।কারণ তার সামনে রাজ আর রাইতা দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।আরশ কিছু না বলে মোবাইলটা রেখে শপ থেকে বের হতে যাবে এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা খেলো।ধাক্কা খেয়ে আরশ দুই কদম পিছিয়ে গেলো।

মৌ নিজের হাত চেপে ধরে বললো,

“ওরে মা রে!আমার হাতটা ভেঙেই গেলো।”

আরশ সামনে তাকিয়ে দেখলো মৌ দাঁড়িয়ে আছে হাত চেপে ধরে।আরশ চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললো,

“উফ!আরেক সাইকো এসে হাজির হলো।”

মৌ চশমা ঠিক করে সামনে তাকিয়ে দেখে সকালের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।মৌ চোখ ছোট ছোট করে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি আপনি?আমাকে তো সকালবেলা অন্ধ বললেন!নিজের কি অবস্থা?”

আরশ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“এই দেখুন আমি আপনাকে একবারও অন্ধ বলিনি।আর বললেও বা কি হয়েছে আপনি তো অন্ধই।আর এখন দোষটা আমারই।আমি জোরে হেঁটে যাচ্ছিলাম।সো সরি।”

আরশ মৌকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার সামনে থেকে চলে গেলো।মৌ পিছন থেকে শিটি বাজালো।শিটির শব্দে আরশ পিছনে ফিরে তাকালো।মৌ জোরে চিৎকার করে বললো,

“চোখ দুটো পকেটে করে নিয়ে না ঘুরে চোখের জায়গায় রাখলেই পারেন।”

কথাটা বলে মৌ মুচকি হেসে দিথির হাত ধরে চলে গেলো।

আরশ ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিলো।বাহ্!ট্যালেন্ট আছে দেখছি।”

আরশ মুচকি হেসে শপিংমল থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

||✨||

নিপা বেগম মুখ মলিন করে আমেনা বেগমের সামনে বসে আছে।

“কিরে বউ তোর কি হইছে?তুই এমনে মুখ কালা কইরা বইসা আছোস কেরে?”

“মা আরশের মনটা ভালো নেই।ছেলেটা উপরে যতই ভালো দেখাক না কেনো ভিতরে ভিতরে অনেক কষ্টে আছে।আমি তো মা সবটা বুঝতে পারি।”

“আমি চইলা আইছি তুই এতো চিন্তা করিস নাহ্।আমার নাতিন রে আমি ঠিক কইরা ফেলুম।”

আমেনা বেগমের কথায় নিপা বেগম মৃদু হাসলেন।

আরশ বাড়িতে এসে দেখে আমেনা বেগম আর নিপা বেগম বসে বসে গল্প করছেন।আরশ মুচকি হেসে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।

“বাহ্ শ্বাশুড়ি আর বৌমা তো দেখছি ভালোই গল্প করছো ”

“আরশ তুই এসেছিস!আয় বাবা বস।”

“আম্মু আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তারপরে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খাবো।”

আয়াত এসে আরশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“কিন্তু বাবা তো সিঙ্গাপুর গিয়েছে?”

“বাবা সিঙ্গাপুর গিয়েছে?”

নিপা বেগম আরশের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“হ্যাঁ।তুই অফিসের যাওয়ার একটু পরেই বের হয়ে গেছে।আসলে তোকে কালকেই জানাতে চেয়েছিলো কিন্তু……”

নিপা বেগমকে থামিয়ে আরশ বললো,

“আচ্ছা আম্মু আমি বাবার সাথে ফোনে কথা বলবো নে।”

আরশ হঠাৎ কপালে হাত দিয়ে বললো,
“ওফ শিট!”

“কি হয়েছে ভাইয়া?”

“আরে কালকে আমি আমার মোবাইলটা ভেঙে ফেলেছি।আজকে মোবাইল কিনতে গিয়ে……..”

আরশ আর কিছু না বলে থেমে গেলো।নিপা বেগম এগিয়ে এসে বললো,

“মোবাইল কিনতে গিয়ে কি হয়েছে?”

আরশ মৃদু হেসে বললো,

“কিছু নাহ্ আম্মু।”

আরশ সিঁড়ি বেয়ে উঠে তার রুমের দিকে চলে গেলো।

/🌼/

মৌ পা টিপে টিপে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে।মিতা বেগম এসে মৌয়ের কান টেনে ধরলো।

“আউ!আম্মু লাগছে তো।”

“চুপ কর।দুপুর তিনটা বেজে গেছে।তোর কলেজ শেষ হয় সাড়ে বারোটায়।এতোক্ষণ তুই কইছিলি?”

“আম্মু তুমি আসলে বোকা হয়ে গেছো।আমার হাতের ব্যাগগুলো দেখেই তো বুঝতে পারছো আমি কোথায় ছিলাম!”

মিতা বেগম মৌয়ের কান ছেড়ে তার হাতের দিকে তাকালো।দেখলো মৌয়ের হাতে চার-পাঁচটা শপিং ব্যাগ।

“মৌ তোর এতো শপিং করা লাগে কিসের জন্য?”

“ইটস’ মাই হবি।সো তুমি আমাকে একদম কিছু বলবে নাহ্।”

মৌ নাক টেনে তার রুমের দিকে চলে গেলো।মিতা বেগম দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,

“পাগলি মেয়ে আমার।”

`🌸′

রাইতা বসে বসে তার নখে নেইলপালিশ দিচ্ছে।রাজ এসে রাইতার পাশে বসলো।রাজ রাইতার কাঁধে মাথা রেখে বললো,

“রাই বেবি হানিমুনে তুমি কোথায় যেতে চাও?”

রাইতা নেইলপালিশ রেখে রাজের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।রাজ রাইতার কোনো উত্তর না পেয়ে তার মুখের দিকে তাকালো।

“কি হয়েছে রাই বেবি?”

“তুমি আমাকে এখনই হানিমুনে নিয়ে যাবে?”

“ইয়েস।”

“জানো এই দুই বছরে ওই আরশ আমাকে না হানিমুনে নিয়ে গেছে না কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেছে!বিরক্তিকর ছেলে একটা।”

“ওর কথা দেও তো।”

রাইতা রাজকে জড়িয়ে ধরলো।রাজ রাইতার কাঁধে মুখ গুঁজে বাঁকা হাসি দিলো।

#চলবে………………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]