চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০৭

0
517

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০৭

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আয়াত আমেনা বেগমের রুমে এসে দেখে আরশ আর আমেনা বেগম বসে গল্প করছে।আয়াত তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।

“ভাইয়া মৌ ভাবি কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে আছে।আর তুই এখানে বসে বসে গল্প করছিস!”

“বিয়ে হতে না হতেই ভাবি ডাকা শুরু করে দিলি।”

“তো ভাবি না ডেকে কি আপু ডাকবো নাকি!তোকে যা বলেছি সেটা কর।”

“আমি কি করবো?”

“তুই গিয়ে মৌ ভাবিকে খাইয়ে দিয়ে আয়।”

“কি?আমি এইসব পারবো নাহ্।এতো মানুষ থাকতে আমি কেনো খাওয়াতে যাবো!”

“ভাইয়া তুই বর্তমানে তার হাসব্যান্ড।এটা তো দায়িত্ব।”

“না আমি পারবো নাহ্।”

আমেনা বেগম আরশের মাথায় হাত রেখে বললো,

“যা না নাতিন মাইয়াডা রে খাওয়ায় দিয়া আয়।মাইয়াডার শরীর ভালা নাহ্।”

“দিদুন তুমিও!”

“হ্যাঁ মুইও।যা এহন।”

আরশ উঠে দাঁড়িয়ে আয়াতকে বললো,

“খাবার এনে দে।”

“ওই তো ট্রেতে খাবার আছে।”

আরশ আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে খাবার নিয়ে মৌয়ের রুমের দিকে গেলো।দরজায় টোকা দিতেই দিথি এসে দরজা খুলে দিলো।

দিথি হাসি দিয়ে বললো,
“আরে জিজু যে।”

আরশ কিছু না বলে মুচকি হাসলো।
“মৌ কোথায়?”

“ঘুমিয়ে আছে।ঘুম ভাঙিয়ে খাইয়ে দিন।”

দিথি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আরশ খাবার নিয়ে টেবিলে রেখে দরজা লক করলো।তারপরে মৌয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মৌ বাচ্চাদের মতো মুখ করে ঘুমিয়ে আছে।যা দেখে আরশ মুচকি হাসলো।

আরশ মৌয়ের মাথায় পাশে বসলো।তারপরে মৌকে ডাক দিলো।

“শিশপ্রিয়া…….”

আরশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার ডাক দিলো,

“শিশপ্রিয়া…….”

এবার মৌ একটু নড়ে উঠলো।চোখ খুলে দেখে আরশ তার মাথার সামনে বসে আছে।মৌ আরশকে দেখে হাসি দিয়ে উঠে বসলো।

“যাক আপনি তাহলে আসলেন।”

“আসলে আমি আসতে চাইনি আয়াত জোর করে পাঠিয়েছে।আপনি কিছু মনে করিয়েন নাহ্।”

মৌ চোখে চশমা পড়ে বললো,

“এই আপনি কি বোকা?আমি কিছু মনে করবো কেনো!আমি আরো খুশি হয়েছি।আর শোনেন আপনি আমার চেয়ে অনেকটাই বড় সো আমাকে তুমি বলবেন।আর আমিও আপনাকে তুমি করেই বলবো।আফটার অল আমার বর বলে কথা।”

মৌ কথাগুলো বলে একটা হাই তুললো।আরশ অবাক হয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশ মনে মনে বললো,

“তার মানে কি মৌ রাগ করেনি?উনি আমাকে মেনে নিয়েছে!এটা কিভাবে সম্ভব?যেই মেয়ে আজকে সকালেও ঝগড়া করলো আমার সাথে সে এখন আমাকে মেনে নিলো।”

আরশকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে মৌ বললো,

“এই যে খাবার নিয়ে কি বসেই থাকবেন নাকি খাইয়ে দিবেন?”

মৌয়ের কথায় আরশের ধ্যান ভাঙ্গলো।আরশ অবাক হয়ে বললো,
“আমি খাইয়ে দিবো?”

“তা কি আপনার ভূত এসে খাইয়ে দিবে!”

“আমি খাইয়ে দিতে পারবো নাহ্।”

মৌ কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,

“আপনি এতো খারাপ?আমি কতটা অসুস্থ আপনি জানেন না!আপনি আমাকে একটু খাইয়ে দিতেও চাচ্ছেন নাহ্।”

মৌ মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।আরশ একটা ঢোক গিলে বললো,

“এতো এক্টিং করতে হবে নাহ্।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।আরশ মৌকে খাইয়ে দিচ্ছে আর মৌ খেয়ে নিচ্ছে।

“আপনি খেয়েছেন?”

“হ্যাঁ দিদুন জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।”

“যাক ভালো।”

দুজনের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে।মৌয়ের খাওয়া শেষ হলে আরশ উঠে হাত ধুয়ে এসে মৌকে ঔষধ খাইয়ে দিলো।

“আচ্ছা তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো আমি যাচ্ছি।”

আরশ বিছানা থেকে উঠে যেই যেতে যাবে মৌ পিছন থেকে আরশের হাত টেনে ধরলো।আরশ পিছনে ফিরতে মৌ আরশের হাত ধরে টান দিলো।আরশ বিছানার উপরে বসে পড়লো।মৌ আরশের মুখের কাছে মুখ এনে বললো,

“আজকে তো আমাদের বাসর।আর আপনি আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছেন?”

আরশ একটা ঢোক গিললো।

“বা বা বাসর মা মানে?”

আরশ তুতলিয়ে কথাটা বললো।আরশকে তোতলাতে দেখে মৌ জোরে হেসে দিলো।আরশ হা হয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ হাসি থামিয়ে বললো,

“এমনি যা অ্যাটিটিউড নিয়ে ঘুরেন মনে তো হয় ভাবের শেষ নেই।আর সেই ছেলেই আমার কাছে এসে তোতলাচ্ছে!”

আরশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

“এতে এতো হাসার কি আছে!আমি অবাক হয়ে গেছিলাম তাই ওমন করে ফেলেছি।”

মৌ আর কিছু না বলে মুচকি হেসে আরশের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।

“আরে কি করছো?”

“মাথায় হাত বুলিয়ে দেও।তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো।”

মৌ চোখ বন্ধ করে ফেললো।আরশ বাধ্য হয়ে মৌয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরশ মৌয়ের এতোটা চেঞ্জ দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেছে।

আরশ কিছুক্ষণ মৌয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।মৌয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মৌ ঘুমিয়ে পড়েছে।আরশ মৌয়ের চোখ থেকে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলো।তারপরে মৌকে ভালোভাবে শুইয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।রুম থেকে বের হয়ে আরশ করিডোর দিয়ে হাঁটছে।হঠাৎ দেখলো রাইতা আর রাজ একটা বেঞ্চে বসে আছে।রাইতা রাজের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে আর বিভিন্ন কথা বলছে।

আরশ তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাঁটা শুরু করলো।আরশ দেখলো দিথি আর তুর দাঁড়িয়ে হাসছে আর গল্প করছে।আরশ তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।আরশ ভ্রু কুচকে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

তুর আরশকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

“কিরে আরশ তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

“বোঝার চেষ্টা করছিলাম তোদের মধ্যে কি চলছে।”

দিথি মুচকি হেসে ওদের সাথে থেকে চলে গেলো।আরশ তুরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“তার মানে ভাবি পেয়ে গেছি আমি।”

তুর মাথা নিচু করলে বললো,

“মেইবি।”

/🌼/

রাইতা রাজের কাঁধে মাথা রেখে আছে আর রাজ তার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।রাজ মনে মনে বললো,

“এই মেয়ে এতো ন্যাকামি করে আর এতো বকবক করে আরশ কিভাবে সহ্য করতো কে জানে!যাক একটু সহ্য করি কিছুদিন দ্যান ও-কে তো……..”

রাজ আর কিছু না বলে বাঁকা হাসি দিলো।

—|🌻|—

আরশ আর তুর দাঁড়িয়ে গল্প করছে হঠাৎ করে রিয়া এসে আরশকে জড়িয়ে ধরলো।আরশ কিছু বুঝে উঠার আগে রিয়া বললো,

“আরশ তুমি প্লিজ মৌকে ডিভোর্স দিয়ে দেও।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”

আরশ চোখ বন্ধ করে এক ঝটকা দিয়ে রিয়াকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।

“রিয়া একদম এইসব অসভ্যতা আমার সাথে করতে আসবে নাহ্।আমি এগুলো পছন্দ করি না।এরপরে এমন কিছু করলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।আর শুনে রাখো আমি বিবাহিত।মৌ আমার বউ।আর আমি কখনোই তোমার মতো একটা মেয়ের জন্য মৌকে ডিভোর্স দিবো এটা ভুলেও ভেবো নাহ্।”

রিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো।
“আমি কেমন মেয়ে হ্যাঁ?”

“তুমি যে এতোক্ষণ মুহিত আঙ্কেলের ছেলে মায়ানের সাথে এক রুমে ছিলে তা কিন্তু আমি ভালো করে জানি।”

আরশের কথায় রিয়া চুপ হয়ে গেলো।ভয়ে মুখ চুপসে গেছে তার।আরশ আর কিছু না বলে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো।তুরও আরশের পিছুপিছু চলে গেলো।

||🦋||

দিথি রুমে গিয়ে দেখলো মৌ ঘুমিয়ে আছে।

“বাহ্ আমার জিজু তো হেব্বি রোমান্টিক।কি সুন্দর কম্বল গায়ে দিয়ে গিয়েছে।আমি তো ভালো করেই জানি মৌ জীবনেও নিজের গায়ের কম্বল নিজে দিবে না।সো আরশ জিজুই দিয়ে গিয়েছে।”

#চলবে…………………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]