চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০৮

0
503

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০৮(বোনাস)

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরশ রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।তুর এসে তার পাশে দাঁড়ালো।

“ঘুমাবি নাহ্ আরশ?”

“মানুষের জীবন আসলেই অনেকটা রহস্যময়।আমার জীবনের কথাই ভাব।এখানে আসলাম পিকনিকে আর কেমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো।যার ফল মৌ এখন আমার স্ত্রী।বিশ্বাস কর আমার দ্বিতীয় বার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই ছিলো নাহ্ কিন্তু আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তা তো হবেই।”

আরশ কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তুর আরশের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“আরশ এগুলো নিয়ে আর ভাবিস নাহ্।মৌ একটু পাগলি টাইপ হলেও ওর মনটা অনেক ভালো।আমি যতদূর ও-কে চিনি তাই মনে হয়।”

আরশ বিড়বিড় করে বললো,

“হ্যাঁ আর একটু বেশিই চালাক।”

তুর ভ্রু কুচকে বললো,

“কিরে আরশ তুই কি কিছু বললি?”

“আরে না চল ঘুমাতে যাই।”

আরশ আর তুর বিছানায় শুয়ে পড়লো।তুর ঘুমিয়ে গেছে তবে আরশের চোখে ঘুম নেই।

“আচ্ছা মৌ এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কিভাবে?আর ও এমন লুচু টাইপের বিয়েভ করছে কেনো?ও-কে দেখলেই তো এখন আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।”

আরশ একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো।

/🌻/

সূর্যের আলো চোখে পড়তে মৌয়ের ঘুম ভাঙ্গলো।মৌ মুচকি হেসে উঠে বসলো।চশমাটা চোখে দিয়ে বেলকনিতে গেলো।বেলকনি দিয়ে নিচে তাকাতে দেখলো আরশ আর তুর মিলে গাড়ি নিয়ে কোথাও চলে গেলো।আরশকে দেখে মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।

“যাক সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার বরবাবুর মুখটা দেখতে পেলাম।”

মৌ ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,

“ইশ!আমি কি লুচু হয়ে গেছি।”

মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“মানুষের জীবন কতটা অদ্ভুত।আমি একসময় বিয়ে করতেই চাইতাম নাহ্।সেই আমি এখন আমার বরকে চোখে হারাচ্ছি!একেই হয়তো ভালোবাসার টান বলে।আরশ আমি কখনোই তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো নাহ্।আমাদের আগামীর দিনগুলো সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ।”

মৌ মুচকি হেসে রুমে আসলো।রুমে এসে দেখে দিথি এখনো ঘুমিয়ে আছে।

“অসুস্থ ছিলাম আমি আর পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে উনি!”

মৌ মুখ ভেঙচি কেটে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মৌ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে দিথি বসে বসে হাই তুলছে।মৌ টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে দিথির পাশে এসে বসলো।

“কিরে গাধি কখন উঠলি?”

“দেখ মৌ সকাল সকাল আমাকে এইসব বলে ডাকবি নাহ্।”

“এ্যা আসছে!ন্যাকি কোথাকার।আচ্ছা শোন আরশ আর তুর ভাইয়া কোথায় গেলো এতো সকালে?”

“মেইবি বাজার করতে।আজকে তো আমাদের পিকনিক।”

“ওহ্ হ্যাঁ কালকে যা হলো ভুলেই গিয়েছিলাম।আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে নে।আমি একটু দিদার সাথে দেখা করে আসি।”

“দিদা কে আবার?”

মৌ হালকা করে দিথির মাথায় চাটা মেরে বললো,

“আরশের দিদুন।”

“বাব্বাহ্।”

মৌ হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আমেনা বেগমের রুমে গিয়ে কলিং বেল বাজালো।আয়াত এসে দরজা খুলে দিলো।আয়াত হাসি দিয়ে বললো,

“ভাবি রুমে এসো।”

মৌ মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করলো।মৌ রুমে ঢুকে দেখলো আমেনা বেগম বিছানায় বসে পান চিবোচ্ছে।মৌ গিয়ে তার পাশে বসলো।

“কেমন আছেন দিদা?”

“ওমাহ্ এ দি আমার নাতবউ।হয় ভালা আছি।তুই কেরম আছোস?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

আয়াত পাশে থেকে বললো,

“ভাবি তোমার জ্বর কমেছে?”

“হ্যাঁ।”

“এখন কেমন লাগছে?”

“একদম ফিট আছি।”

আমেনা বেগম মৌয়ের হাত ধরে বললো,

“শোন মাইয়া তোরে একখান কথা কই।রিয়া নামের একখান ছেড়ি আছে না!ওইডার তে সাবধানে থাকবি।কারণ হেতির চোখ আমার নাতিনের দিকে।হেয় আমার নাতিনরে পছন্দ করে।”

“পছন্দ করেও লাভ নেই দিদা।ও আমাকে আর আরশ সাহেবকে কখনোই আলাদা করতে পারবে নাহ্।তুমি একদম নিশ্চিত থাকো।”

মৌ আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াত পাশে থেকে বললো,

“এই নাহলে আমার ভাবি।”

_🦋_

রাইতা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।রাজ তার পাশে বসে আছে।

“আচ্ছা আরশ কি কষ্ট পাচ্ছে রাইতাকে আমার সাথে দেখে?নাকি পাচ্ছে না।ও যদি কষ্ট নাই পায় তাহলে তো আমি শান্তি পাবো নাহ্।আমার তো মনে হচ্ছে ও এখন সুখেই আছে।আর এই রাইতা নামক প্যারাটাকে আমার ঘাড়ে নেওয়াই ভুল হয়েছে।আরশ আমি তোকে শান্তিতে থাকতে দিবো নাহ্।”

রাজ কথাগুলো বলে রাগে ফুসছে।

/✨\

আরশ আর তুর হোটেলের পাশের খোলা জায়গায় চুলা বানিয়েছে।আরশ আর তুর বসে বসে চা খাচ্ছে।আরশ সামনে তাকিয়ে দেখলো মৌ আর আয়াত তাদের দিকে আসছে।মৌ আরশকে দেখে চোখ মারলো।আরশ তা দেখে গরম চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলেছে।মৌ তাড়াতাড়ি এসে আরশের ঠোঁটে পানির ছিটা দিলো।আরশ কিছুটা শান্ত হয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে বসে আছে।মৌ আরশের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“এখানে আছো বলে ঠোঁটে পানির ছিটা দিলাম।যদি রুমে থাকতে তাহলে ঠোঁট জোড়ায় ভালোবাসার ছোঁয়া লেপ্টে দিতাম।”

মৌয়ের কথায় আরশ ঢোক গিললো।যা দেখে মৌ মিটিমিটি হেসে আয়াতকে নিয়ে চলে গেলো।

মৌ আর আয়াত যেতে তুর আরশকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রে আরশ ভাবি কানে কানে কি বললো?”

আরশ তুরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“তোর ভাবি বলেছে তোকে জেনো পানিতে চুবিয়ে মারি।”

তুর বুঝতে পারলো আরশ ক্ষ্যাপে গেছে।তুর আসতে করে চেয়ার থেকে উঠে হোটেলের ভিতরে দৌড় দিলো।আরশ তার জায়গায় চুপ করে বসে রইলো।

!🌿!

মিতা বেগম মৌয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“তোদের বিয়েটা এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে দু’জন দুজনকে মেনে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।তবে তুই আগের মতো পাগলামি বাদ দে।এখন একটু নিজের মধ্যে ম্যাচুরিটি আন নাহলে সংসার করতে পারবি নাহ্।”

“ছিঃআম্মু।তুুমি আমাকে ভরসা দেওয়ার বদলে উল্টা ভয় দেখাচ্ছো!”

“হয়েছে এখন একদম বাচ্চামো করবি না।আচ্ছা মৌ সেদিন কি আরশ তোর সাথে কিছু করেছিলো?”

“নাহ্ আম্মু।উনি জাস্ট আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গিয়েছিলো।তবে এটা আমি কারো কাছে প্রমাণ করতে পারবো নাহ্।আমি হোটেল কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি সিসিটিভি ফুটেজের জন্য।বাট কপাল খারাপ হলে যা হয়।হোটেলটা তো নতুন।আর এটা হোটেলেও না বাংলো বাড়ি টাইপের।এখানে সিসিটিভি এখনো লাগানো হয়নি।”

মৌ কথাগুলো বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।মিতা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“যা হওয়ার হয়ে গেছে।আর মানুষের কথায় কান দিয়েও লাভ নেই।তারা যা বলার বলবেই।”

/🥀|_

“রাজ আমি তোমাকে একটা বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই।”

রাজ বসে বসে কফি খাচ্ছিলো হঠাৎ রাইতা এসে এই কথা বললো।

“কি জিজ্ঞেস করবে তুমি রাই?”

“তুমি বলেছিলে আমরা হানিমুনে যাবো।কিন্তু আমরা এখানে পিকনিকে এসেছি।এটা কেনো আমায় আগে বলোনি তুমি?আর এটাও তো বলোনি মুহিত আঙ্কেল তোমার কাকা।আর আমরা তাদের সাথেই এই পিকনিকে এসেছি!”

“তোমাকে এগুলো কে বললো?”

“তোমার কাকি।”

রাজ হাসি দিয়ে বললো,

“আরে এখন আমরা পিকনিকে এসেছি এখান থেকে গিয়ে হানিমুনে যাবো।”

“আমাকে মিথ্যা বলার কি দরকার ছিলো রাজ?”

“এটা মিথ্যা নাহ্ বেবি।সারপ্রাইজ।”

“এমন সারপ্রাইজ আমার পছন্দ নাহ্।”

রাইতা কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রুম থেকে বের হতেই তার মৌয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো।মৌকে দেখে রাইতা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।রাইতা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“এই মেয়ে দেখে চলতে পারো নাহ্?”

মৌ চশমাটা ঠিক করে হাসি দিয়ে বললো,

“প্রত্যেক বার আমার শুনতে হয় চশমা পড়িনা তাই চোখে দেখি না।কিন্তু আজ আমি চশমা পড়েছিলাম।আর আপনি রুম থেকে অতি দ্রুত গতিতে বের হয়েছেন।সো দোষটা আপনার।”

“এই একদম আমার মুখে মুখে কথা বলবে নাহ্।”

“আর সত্যি কথা কি জানেন আপু আমি আপনাকে খুঁজছিলাম।”

“তুমি আমাকে খুঁজছিলে কিসের জন্য?”

“এই তো থ্যাংকস দেওয়ার জন্য।”

“থ্যাংকস দিবে কিসের জন্য?”

“আপনি যদি আরশকে ডিভোর্স না দিতেন তাহলে তো আমি ও-কে পেতাম নাহ্।আপনি ও-কে ডিভোর্স দিয়েছেন বিধায় আমি এমন একজন মানুষকে পেয়েছি।”

“তোমার আরশকে ভালো মনে হচ্ছে?ও তো একটা ননসেন্স।”

মৌ ধমকের সুরে বললো,

“ব্যাস!আমি আরশের নামে আর একটিও বাজে কথা শুনতে চাই না।কে কেমন সেটা আমি ভালো করেই জানি!আর শুনেন আগে নিজের সংসার সামলান।আপনার বর্তমান বরের চোখও তেমন ভালো নাহ্।”

মৌ কথাগুলো বলে চশম ঠিক করে দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেল।রাইতা হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“ও কি বলে গেলো?রাজের চোখ ভালো না মানে?”

|💚|

আরশ চারিদিকে মৌকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে নাহ্।হঠাৎ সে লক্ষ করলো মৌ বাংলোর বাগানে বসে আছে।আরশ গিয়ে মৌয়ের সামনে দাঁড়ালো।

“আরে হাবিজি যে!বসুন আমার পাশে।”

“মৌ এভাবে না বসে থেকে আমাদের সাথে গিয়ে কাজ করলেও তো পারো!”

মৌ উঠে আরশের সামনে দাঁড়ালো।

“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি কোনো কাজ করিনা?”

“অবিয়াসলি করো না।কারণ সবাই ওখানে কাজে বিজি আর তুমি এখানে বসে গুণগুণ করে গান গাচ্ছো!”

“এই একদম আমাকে উল্টাপাল্টা কিছু বলবে না।তুমি তো জানো আমি যে অসুস্থ।”

“ওহ্ আচ্ছা আয়াতকে বললে এখন সুস্থ হয়ে গেছো।আর যেই কাজের কথা বললাম সেই আবার অসুস্থ!”

মৌ আরশের কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আরশ মুচকি হেসে মৌয়ের থুতনি ধরে মুখ উপরে তুলে বললো,

“একটু আকটু কাজ না পারলে আমার মা মানে মিসেস.নিপা বেগম তোমাকে বাড়ি দিয়ে বের করে দিবে।”

মৌ মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

“আমার শ্বাশুড়ি মা তোমার মতো নাহ্।”

মৌ আর না দাঁড়িয়ে হনহন করে হেঁটে আরশের সামনে থেকে চলে গেলো।

“আরে ও চলে গেলো!ও-কে যেটা দিতে আসলাম সেটাই তো দেওয়া হলো নাহ্।”

আরশ তার পিছন থেকে একটা ব্যাগ সামনে আনলো।ব্যাগ ভর্তি চকলেট।মৌ চকলেট খেতে খুব পছন্দ করে তাই আরশ এটা নিয়ে এসেছে।

#চলবে…………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]