চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০১

0
1028

চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋
#পর্ব_০১
#লেখক_ঈশান_আহমেদ

নিজের বিয়ে করা বউকে বন্ধুর পাশে বউ বেশে বসে থাকতে দেখে চমকে গেলো আরশ।সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে নাহ্।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে।আরশ রাইতার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

রাইতা তুমি এখানে?

রাইতা বিরক্ত নিয়ে বললো,

আমি এখানে থাকবো না তো কোথায় থাকবো?

রাইতা আমি তোমার বর।আর তুমি আমার সামনে আমার বন্ধুকে বিয়ে করছো?

রাইতা চোখ রাঙিয়ে বললো,

আরশ জাস্ট স্টপ।তোমার মতো একটা আনস্মার্ট,ইস্টুপিট,বোকা ছেলের সাথে আমার পক্ষে সংসার করা সম্ভব নাহ্।

আরশ নরম সুরে বললো,

রাইতা এগুলো তুমি কি বলছো?

আরশের বন্ধু রাজ পাশে থেকে বললো,

ও কি বলছে তুই কি শুনতে পারছিস নাহ্?

আরশ চোখ রাঙিয়ে বললো,
তুই চুপ কর রাজ।তোর লজ্জা করে না!তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারলি!

রাইতা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
এই সিকিউরিটি….এই পাগলটাকে এখান থেকে বের করে দিন তো।

আরশ অবাক হয়ে বললো,

রাইতা…….

আরশকে কয়েকজন সিকিউরিটি টানতে টানতে বিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।আরশ রাস্তার পাশে বসে বসে কাঁদছে।

“কেনো এমনটা করলে রাইতা?তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি!দুই বছর সংসার করার পরে তোমার মনে হলো আমি আনস্মার্ট,ইস্টুপিট আর বোকা!ওকে।তুমি যখন আমাকে এভাবে অপমান করলে তবে আমিও দেখিয়ে দিবো এই আরশ আহমেদ কি কি করতে পারে!”

আরশ চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো।চোয়াল শক্ত করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে গেলো।

আরশের মা নিপা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
আরশ রাইতার কোনো খবর পেয়েছিস?

আরশ মলিন হাসি দিয়ে বললো,
মা বিয়েটা তুমি এক প্রকার জোর করেই দিয়েছিলে।আমি কখনোই রাইতাকে বিয়ে করতে চাইনি।তবে বিয়ের পরে ও-কে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম।তবে জানো এখন আর বাসি নাহ্।এখন আমি ও-কে শুধু ঘৃণা করি।

আমিন সাহেব আরশের কাঁধে হাত রেখে বললো,
কি হয়েছে বাপ তোর?

“তোমাদের আদরের বউমা উপ্স সরি তোমরা তো তাকে মেয়ে মানো।তোমাদের সেই মেয়ে সেজেগুজে আমার বন্ধুকে বিয়ে করছে।”

আরশ কথাগুলো বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।

নিপা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
তুই কি বলছিস এইসব?

আরশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
যা শুনেছো তাই বলেছি।

আরশ তার রুমে চলে গেলো।আরশ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আসলেই অনেক বোকা।নাহলে এমন একটা মেয়েকে কিভাবে ভালোবাসলাম!আচ্ছা আমাদের তো ডিভোর্স হয়নি।তাহলে ও কিভাবে আরেকটা বিয়ে করে?(আরশ)

আরশ পকেট থেকে মোবাইল বের করে রাইতাকে কল করলো।



রাইতা বসে বসে গয়না খুলছে আর বলছে,

“ওফ!কি বাঁচা যে বাঁচলাম।বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে ওই ইস্টুপিটটা কিছু করতেও পারলো নাহ্।”

হঠাৎ রাইতার ফোনে কল আসলো।তাকিয়ে দেখলো আরশের নামটা ভেসে উঠেছে।রাইতা বিরক্তি নিয়ে বললো,

এই ছেলে আবার কিসের জন্য কল করেছে?বিরক্তিকর!

রাইতা এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করলো,

কিসের জন্য কল করেছো তুমি?

“আচ্ছা আমাদের তো ডিভোর্স হয়নি।তাহলে তুমি আবার বিয়ে করলে কিভাবে?”

রাইতা জোরে হেসে বললো,
“আরে বোকা!তোমার মনে হয় আমাদের হয়নি।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।সেদিন যে তোমাকে একটা ফাইল দিয়ে বলেছিলাম বাবা সাইন করতে দিয়েছে।ওই ফাইলের মধ্যেই আমাদের ডিভোর্স পেপার ছিলো।”

আরশ রাগের কারণে মোবাইলটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।মোবাইলটা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।তার রুমের একপাশের দেয়ালে তার আর রাইতার অনেক ছবি লাগানো ছিলো।আরশ গিয়ে ছবিগুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো।

“তোমার মতো মেয়ের অস্তিত্ব আমি আমার জীবনে রাখবো নাহ্।”

/🌼/
রাজ রাইতার হাত ধরে বললো,

আচ্ছা আরশকে ডেকেছিলে কিসের জন্য?

ও নিজের চোখে জানি আমাদের বিয়েটা দেখতে পারে।

আমরা কি ঠিক করলাম রাইতা?

আমার যা করেছি একদম ঠিক করেছি রাজ।



“আরশ বাবা দরজারটা খোল।”

নিপা বেগম খাবার হাতে আরশের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।একভাবে আরশের নাম ধরে হেঁকে যাচ্ছে তবে আরশের কোনো সারাশব্দ নেই।

আরশ ফ্লোরে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।চোখ-মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।তাকে এক পলক দেখলে যে কেউ ঘাবড়ে যাবে।

“আরশ দরজা খোল।কিছু খেয়ে নে।”

নিপা বেগমের কণ্ঠ আরশের কানে বেজে যাচ্ছে।তবে সে টু শব্দ পর্যন্ত করছে নাহ্।হঠাৎ কি ভেবে যেনো উঠে দাঁড়ালো।চোখ-মুখ হাত দিয়ে মুছে দরজার ছিটকিনি খুলে দিলো।

নিপা বেগম আরশকে দেখে আটকে উঠলেন।একদিনে ছেলেটার কি হাল হয়েছে!নিপা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে প্রবেশ করলেন।

“মা আমার খিদে নেই।তুই এইসব নিয়ে যাও।”

আরশ স্বাভাবিক ভাবে বললো।নিপা বেগম আরশের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“কখনো কোনো ঠকবাজের জন্য কষ্ট পেতে নেই।যে তোকে ঠকিয়েছে তাকেও উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত।”

“যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম তাকে কিভাবে কষ্ট দিবো আমি!”

আরশের কথায় নিপা বেগম কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলেন।আরশের হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালেন।নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে ছেলের মুখের সামনে ধরলেন।

“খেয়ে নে বাবা।”

“মা আমার খেতে ইচ্ছা করছে নাহ্।”

“তুই না খেলে আমি আর তোর বাবাও কিন্তু খাবো নাহ্।”

“মা…..”

আরশ আর কিছু নাহ্ বলে খাবারটা মুখে নিলো।

“আমাকে এমন ইমোশনালি ব্লাকমেইল করা বন্ধ করো।”

আরশের কথায় নিপা বেগম মৃদু হাসলেন।আরশের খাওয়া শেষ হলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“এখন ঘুমিয়ে পড়।অনেক রাত হয়ে গেছে।আর উল্টাপাল্টা কিছু নিয়ে চিন্তা করবি নাহ্।”

নিপা বেগম আরশের রুমে থেকে চলে গেলেন।আরশ উঠে দাঁড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।পরক্ষনেই আরশ তার চোয়াল শক্ত করে চোখ মুছে ফেললো।

“নাহ্ আমি আর কাঁদবো নাহ্।আমার নিজেকে শক্ত করে তৈরি করতে হবে।নাহলে যে কেউ এভাবে ঠকিয়ে চলে যাবে।”

আরশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে তার রুমে চলে আসলো।রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।দুচোখে ঘুম নেই।তবে ঘুমানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

||🌻||

সকালবেলা আয়াতের ডাকে ঘুম ভাঙলো আরশের।

“কি রে শাঁকচুন্নি সকাল সকাল এমন চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো?”

“ভাইয়া একদম আমাকে এইসব বলবে নাহ্।তুমি ঘুম থেকে না উঠলে আমি কি করবো!”

“আরে কালকে সারারাত ঘুম হয়নি।সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছি।”

“ভাইয়া সবটা শুনে অনেক খারাপ লাগছে।”

“এগুলো ভুলে যা।আর তুই কখন এসেছিস নানা বাড়ি থেকে?”

“এইতো সকালবেলা।নানুও এসেছে আমার সঙ্গে।”

“তার মানে আমার বুড়ি ডার্লিং চলে এসেছে।আচ্ছা তুই নিচে যা আমি ফ্রেশ হয়েই আসছি।”

আয়াত হাসি দিয়ে চলে গেলো।আরশ মলিন হাসি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিচে নামলো।

“আরশ তুই কি অফিসে যাবি?”

“হুম বাবা।”

“তোর মন-মেজাজ ভালো আছে?”

“জ্বি বাবা।আমার মন একদম ঠিক আছে।আর কিছু মানুষকে জীবন থেকে মুছে ফেলাই ভালো।”

আমেনা বেগম লাঠি ঠুকঠুক করতে করতে আরশের সামনে এগিয়ে আসলো।আমেনা বেগমকে দেখে আরশের মুখে হাসি ফুটলো।আরশ এগিয়ে গিয়ে আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।

“দিদুন কেমন আছো তুমি?”

“এইতো নাতিন ভালোই আছি।তবে তোর লিগ্গা আমার বহুত কষ্ট হইতাছে।”

“দিদুন এইসব ভেবে একদম কষ্ট পাবে নাহ্।তোমার নাতিন ঠিক আছে।সকালে জার্নি করে এসেছো এখন রেস্ট নেও।আমি অফিস থেকে এসে জমিয়ে আড্ডা দিবো।”

আরশ মুচকি হাসি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে রওয়ানা দিলো।হঠাৎ করে আরশের গাড়ির সামনে হালকা গোলাপি রঙের থ্রি-পিস পড়া একটা মেয়ে এসে পড়লো।আরশ সেই মুহূর্তে ব্রেক কষলো।মেয়েটা রাস্তায় পড়ে গেলো।আরশ দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে গেলো।মেয়েটা হাঁটুতে হাত দিয়ে বসে আছে।মুখের উপর চুল পড়ে থাাকায় মুখটা দেখা যাচ্ছে নাহ্।

“আর ইউ ওকে?”

মেয়েটা মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে আরশের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।রাস্তা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গা থেকে ময়লা ঝাড়লো।রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যাগটা তুলে কাঁধে নিয়ে আরশকে বললো,

“দেখে গাড়ি চালাতে পারেন নাহ্?সামনে যে কলেজ চোখে পড়ে নাহ্ আপনার?এতো জোরে গাড়ি চালালে তো যে কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।”

আরশ এতোক্ষণ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনতে ছিলো।আরশ নিজেকে সামলে বললো,

“দেখুন আপনি দৌড়ে এসে গাড়ির সামনে পড়েছেন এতে আমার কোনো দোষ নেই।চোখ দুটো ব্যাগে করে নিয়ে না ঘুরে চোখের জায়গায় রাখলেই পারেন।”

“কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”

“ব্যাগে যে চশমাটা আছে সেটা পড়ে নিন।”

“আপনি জানলেন কিভাবে ব্যাগে চশমা আছে?”

“ব্যাগটা যখন রাস্তায় পড়েছিলো তখন দেখেছি।আর আপনি যে চোখে কম দেখেন সেটা বুঝেছি আপনার তর্ক করা দেখে।”

“এই একদম বেশি কথা বলবেন নাহ্।আমি যদি একটা শিশ মারি তাহলে কলেজের সবাই ছুটে আসবে।”

মেয়েটার কথায় আরশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।

“শিশ মানে?”

“ইশ্ আসছে আমার ইংরেজ বাবু।শিশ মানে শিটি।বুঝেছেন?”

আরশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“কোথা থেকে এই পাগল এসে যে জুটলো!”

মেয়েটা ব্যাগ থেকে চশমাটা বের করে চোখে পড়ে বললো,

“এই যে শুনে রাখুন আমি হলাম মিথিয়া ইসলাম মৌ।আমার সাথে একদম ঝামেলা করতে আসবেন নাহ্।তাহলে কিন্তু আপনারই সমস্যা হবে।”

আরশ চোখ রাঙিয়ে বললো,

“সাইকো।”

মৌ চোখ রাঙিয়ে বললো,

“কি বললেন?”

“যা শুনেছেন।”

আরশ আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

“আমিও দেখে নিবো আপনাকে।আমাকে অপমান করা!”

মৌ বিড়বিড় করতে করতে কলেজের ভিতরে চলে গেলো।

#চলবে…………………….