চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-১০

0
459

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_১০

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরশ বসে বসে ভাবছে,

“মৌ এভাবে চলে গেলো কেনো?ও কি আমার উপর রাগ করলো?আমার কপালে কি এমন মেয়েই জুটবে নাকি!যারা কথায় কথায় রাগ করে।রাইতাও তো এমন ছিলো।নাহ্ আমি আর রাইতার কথা ভাববো নাহ্।আচ্ছা মৌ যখন এই বিয়েটা মেনে নিয়েছে তাহলে তো আমারও মেনে নেওয়া উচিত!কারণ বিয়ের সিদ্ধান্ত আমিই নিয়েছি।”

সকাল এগারোটার দিকে সবাই যে যার বাড়িতে পৌঁছালো।আরশকে জোর করে মৌদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কারণ মৌয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব তার বাড়িতে আছে।সেগুলো ছাড়া তো আর সে আরশদের বাড়িতে যেতে পারবে নাহ্।আরশ এসে মৌদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসলো।অয়ন সাহেব এসে আরশের পাশে বসলো।

“আঙ্কেল আমি একটা কথা বলতে চাই।”

অয়ন সাহেব হাসি দিয়ে বললো,

“হ্যাঁ বাবা বলো।”

“আঙ্কেল আমি এখনিই মৌকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই নাহ্।”

মৌ সিঁড়ি দিয়ে নামতে এই কথা শুনতে পেলো সে মুখ গোমড়া করে বাড়ি দিয়ে বের হয়ে গেলো।আরশ মৌকে বাড়ি দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখে বললো,

“আঙ্কেল ও এভাবে কোথায় গেলো?”

“ওর বাচ্চা গ্যাংয়ের কাছে।তুমি কেনো মৌকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাও না বাবা?”

“আঙ্কেল আমি চাই আমাদের বিয়েটা আবার জেনো হয়।মানে আমার আর মৌয়ের বিয়েটা অনেক ধুমধাম করে করতে চাই।”

আরশের কথা শুনে অয়ন সাহেব হেসে দিলো।

“তোমার কথায় আমি অনেক খুশি হয়েছি বাবা।আমিও চাই আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে জাঁকজমক করে দিতে।আমি আমিনের সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করে ফেলবো।তবে হ্যাঁ তুমি কিন্তু বিয়ের আগপর্যন্ত মৌয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা করো।মেয়েটা বড্ড অভিমানী।”

“ওকে আঙ্কেল সমস্যা নেই।”

মিতা বেগম নাস্তা নিয়ে এসে বললো,

“আরশ তুমি কিন্তু দুপুরে না খেয়ে যাবে নাহ্।আপাততঃ এই নাস্তাগুলো খাও।”

“আন্টি আমি পরে আসবো নে।আজকের মতো যাই।”

“নাহ্ আমি কোনো কথা শুনতে চাই নাহ্।”

মিতা বেগমের এহেন কথায় আরশ হাসি দিলো।

“আন্টি মৌ তো এতোদূর জার্নি করে এসে কিছু খায়নি।আমি বরং ও-কে ডেকে নিয়ে আসি।ও-কে কোথায় পাবো?”

অয়ন সাহেব মৃদু হেসে বললো,

“আমাদের বাগানেই পেয়ে যাবে।’

আরশ মুচকি হেসে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

মিতা বেগম হাসি দিয়ে বললো,

” যাক আমাদের জামাই কিন্তু অনেক ভালো।কত খেয়াল আমার মেয়ের প্রতি।”

/🌻/

মৌ শিশ মেরে বাগানের টেবিলের উপর বসলো।তার আশেপাশে পাঁচ-ছয়টা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে।মৌ তাদের উদ্দেশ্য করে বললো,

“ভাই সকল আমার মনের দুঃখ তোমাদের আর কি বলবো!আমার হাবিজি আমাকে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিতে চায় নাহ্।আমাকে নাকি আমার বাড়িতেই থাকতে হবে।কেয়া কারু ম্যায়!”

মৌ কথাগুলো বলে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার এক্টিং করছে।বাচ্চাগুলো কি বুঝলো কে জানে!সবগুলো এগিয়ে এসে মৌকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

আরশ মৌয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ সব কথা শুনছিলো।আরশ তো হাসতে হাসতে শেষ।আরশ হালকা করে গলা ঝাড়া দিলো।

মৌ তার পিছনে ফিরে আরশকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।পরক্ষণেই মুখ ভেঙচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।আরশ মৌয়ের কাছে এগোতেই বাচ্চাগুলো দৌড় দিয়ে চলে গেলো।আরশ বাচ্চাগুলো দৌড়ানোর দিকে তাকিয়ে আছে।তারপরে মৌয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।সে দেখলো মৌ চোখের চশমা খুলে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে।তাই আরশ গলা অন্যরকম করে বললো,

“আমি কে বলো তো বাছাধন।”

মৌ ঠোঁট উল্টে বললো,

“আপনি আমার একমাত্র হাবিজি।”

আরশ অবাক হয়ে জিগাসা করলো।

“তুমি বুঝলে কিভাবে?”

মৌ উঠে দাঁড়িয়ে আরশের গলা জড়িয়ে বললো,

“তুমি আমার আশেপাশে থাকলেই আমি তা অনুভব করতে পারি।তোমাকে চোখে দেখার প্রয়োজন হয় নাহ্।তবে আরেকভাবেও বুঝতে পারি সেটা হলো তোমার শারীরিক গঠন।”

আরশ মৌয়ের কথায় মুচকি হাসলো।মৌয়ের গলা থেকে চশমাটা নিয়ে মৌয়ের চোখে পড়িয়ে দিলো।

“এটা গলায় না ঝুলিয়ে চোখে পড়তে হয় মিস. উপ্স মিসেস.শিশপ্রিয়া।”

আরশের কথায় মৌ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

“ওয়াও!মাই হাবিজি তো দেখি রোমান্টিক হয়ে গেছে।”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ মৌয়ের কোমর চেপে ধরলো।তারপরে মৌয়ের কপালে তার থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

“বউ যদি এতো রোমান্টিক হয় বরকে তো হতেই হবে।নাহলে ছোট্ট আরশ আসবে কি করে!”

“তাহলে কি বাসর এই বাগানেই করবে?”

মৌয়ের কথায় আরশ কেঁশে দিলো।মৌকে ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে বললো,

“মৌ বাসরের কথা এখনি বলা লাগলো তোমার!যেই একটু রোমান্টিক হতে যাই সেই তুমি এইসব লজ্জাজনক কথা বলো।”

আরশ কথাগুলো বলে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।আরশের কথায় মৌ জোরে হেসে দিলো।আরশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আরশের কলার টেনে বললো,

“তুমি কি বাচ্চা নাকি?আগেও তো একটা বিয়ে করেছো।এতো লজ্জা পেলে চলে!আর বাসর না করলে বাচ্চা কি আকাশ থেকে আসবে?”

মৌয়ের কথার কোনো উত্তর দিলো নাহ্ আরশ।মৌয়ের এক হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।

“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?”

“অনেকক্ষণ ধরে কিছু খাওনি।তাই বেশি বকবক করছো।”

“একটু আগে যা করলে তা কি মিথ্যা ছিলো হাবিজি?”

“সবটাই সত্যি ছিলো।জাস্ট একটু টাইম দেও আমায়।সবটা ঠিক হয়ে যাবে।তবে একটা জিনিস হলো আমার লজ্জা একটু বেশি।আর একটু বোকা টাইপের।এই কারণেই হয়তো রাইতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”

মৌ কিছু না বলে চুপচাপ আরশের সাথে হাঁটছে।

আরশ মৌকে বাড়ির ভিতরে এনে তার পাশে বসা করালো।আরশ মৌকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলো।মৌও আরশকে খাইয়ে দিলো।যা দেখে অয়ন সাহেব আর মিতা বেগম তৃপ্তির হাসি দিলো।

|🦋|

দুপুরের খাওয়া শেষ হলে মৌ আরশকে তার রুমে নিয়ে আসলো।আরশ মৌয়ের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।হঠাৎ মৌ এসে আরশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

“কি হয়েছে মৌ?”

“তুমি আমাকে এখন তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে নাহ্ কেনো?”

আরশ মুচকি হেসে মৌয়ের হাত ধরে তার সামনে আনলো।

“মৌ আমি চাই আমাদের বিয়েটা লোকচক্ষুর সামনে হোক।অনেক ধুমধাম করে বিয়ে করতে চাই তোমাকে।তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”

“কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না।”

“এর আগে লাগতো কিভাবে?”

“তখন তো আর তোমাকে কাছে পাওয়া সম্ভব ছিলো নাহ্।এখন যখন কাছে পেয়েছি তখন ছাড়তে ইচ্ছে করবে নাকি!”

মৌয়ের কথায় আরশ মুচকি হাসলো।মৌ কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,

“হাবিজি বেবি আরশ কবে দিবে আমায়?”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ শুকনো ঢোক গিলে বললো,

“মৌ এই কথা এখন বাদ দেও।আগে বিয়ের ঝামেলা শেষ হোক তারপর।”

মৌ হাসি দিয়ে বললো,

“সত্যি?”

“হুম।”

মৌ আরশকে জড়িয়ে ধরলো।আরশও মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

/🌼\

রাইতা রাজের বাড়িতে এসে তার রুমের বিছানায় বসে আছে।রাইতা আগের দিনের কথাগুলো ভাবছে।আরশ আর তার সুখের সংসারই ছিলো।হঠাৎ একদিন রাজের আগমন ঘটলো আরশদের বাড়িতে।কিভাবে জেনো রাইতা রাজের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো।রাজের সাথে লুকিয়ে দেখা করতো।রাজের আপন বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই।এই কথা শোনার পরে রাইতার রাজের প্রতি এক প্রকার মায়া জন্মে গেলো।সে আরশকে ইগনোর করতে শুরু করলো।তবে যতোই যাই হোক আরশ আর রাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য।আরশের মতো পারফেক্ট হাসব্যান্ড পাওয়া অসম্ভব বললেই চলে।

“আরশ কেনো জানি তোমাকে ছেড়ে চলে আসার জন্য আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে।”

!🍁!

রাত সাড়ে বারোটা বাজে।আরশ তার বেলকনিতে বসে গিটারে টুংটাং করছে।হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠলো।আরশ কিছুটা অবাক হলো এতোরাতে কল আসায়।সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে ‘শিশপ্রিয়া’ নামটা ভেসে উঠেছে।আরশ ভ্রু কুচকে কলটা রিসিভ করলো।

কল রিসিভ করতেই মৌ বললো,

“কি করো হাবিজি?”

“এইতো গিটার বাজাচ্ছিলাম।তুমি এতো রাতে না ঘুমিয়ে কল করলে কেনো?”

“আমার আইসক্রিম খেতে মন চাইছে।”

“হোয়াট?এতো রাতে?”

“হ্যাঁ।প্লিজ আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে চলো।”

“তোমার আব্বু-আম্মু আমাকে রাগ করবে।”

“আরে গাধু তুমি হলে আমার বিয়ে করা বর।তোমাকে কোন দুঃখে রাগ করবে!এখন যদি তুমি আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে না নিয়ে যাও।তাহলে তোমার সাথে আর কথা নেই।আর হ্যাঁ গাড়ি না তোমার বাইক নিয়ে আসবে।আয়াত বলেছে তোমার বাইক আছে।”

মৌ কথাগুলো বলে কলটা কেটে দিলো।আরশ মোবাইল হাতে নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

“এ আমি কোন পাগলিকে বিয়ে করলাম!”

আরশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে গায়ে একটা চাদর প্যাঁচিয়ে নিলো।কারণ শীত ভালোই পড়েছে।বাইক বের করে মৌদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।মৌদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে মৌ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আরশ হাত নেড়ে মৌকে নিচে নামতে ইশারা করলো।

আরশকে দেখে মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।সে হাত দিয়ে ইশারা করে আরশকে দাঁড়াতে বলে নিচে নামলো।

“ওয়াও!তুমি সত্যি এসেছো?”

“না আসলে তো তুমি আবার………….থাক এইসব বাদ দিয়ে উঠে বসো।”

মৌ আরশের পিছনে উঠে বসলো।

“তুমি এভাবে চাদর প্যাঁচিয়ে রাখছো কেনো?এখনো তো ওতো শীতই পড়েনি।”

“বাইকে উঠেছো তো।একটু পরে বুঝবে।”

আরশ বাইক চালানো শুরু করলো।মৌ শীতে কাঁপছে।সে আরশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আরশ বুঝতে পারলো মৌয়ের শীত লাগছে।আরশ বাইক থামিয়ে বললো,

“মৌ একটু বাইক থেকে নামো।”

“কেনো?”

“নামতে বললাম তো।”

মৌ আর কথা না বাড়িয়ে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো।আরশ তার গা থেকে চাদরটা খুলে মৌয়ের গায়ে প্যাঁচিয়ে দিলো।

“তুমি এটা আমাকে দিয়ে দিলে!তোমার শীত করবে নাহ্?”

“আমার গায়ে তো জ্যাকেট আছে প্রবলেম নাই।”

“আমিও তো হুডি পড়ে আছি।”

“তারপরেও তো তোমার শীত লাগছে মৌ!আমার চেয়ে এটা তোমার বেশি দরকার।”

মৌ আর কিছু না বলে মুচকি হেসে বাইকে উঠে বসলো।বাইকে উঠে আরশকে জড়িয়ে ধরলো।আরশ আবার বাইক চালানো শুরু করলো।একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো দুজনে।

“এতোরাতে কি খাবো আমরা?”

মৌয়ের কথায় আরশ অবাক হয়ে বললো,

“তোমার না আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো!”

“ওটা তো একটা বাহানা।আমার তো ইচ্ছে ছিলো আমার হাবিজির সাথে পথের অলিগলি ঘুরে দেখার।”

মৌয়ের কথায় আরশ মুচকি হেসে বললো,

“কিছু তো খেতেই হবে।বলো কি খাবে?”

“আমার তেমন কোনো ইচ্ছে নেই।একটা অর্ডার দিলেই হলো।”

“ওকে তাহলে বার্গার আর কফি খাই।”

“দেখো আগে এতো রাতে পাও নাকি এগুলো।”

“আরে মৌ এটা সারারাত খোলা থাকে।আর চারিপাশে তাকিয়ে দেখো আমাদের মতো অনেক কাপল আছে।”

মৌ চারিপাশে তাকিয়ে দেখছে।আরশ উঠে গিয়ে অর্ডারটা দিয়ে আবার মৌয়ের সামনে এসে বসলো।মৌ আরশকে দেখে বললো,

“তাহলে তুমি আমাদের কাপল হিসেবে মেনে নিয়েছো?”

“না মেনে কি উপায় আছে!”

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]