#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
প্রকৃ’তির স্বভা’বেই রাত পেরিয়ে সকাল হলো। প্রিয়া প্রতিদিনের মতো সকাল ৮ টা বাজতেই ছুট লাগালো নদীর পাড়ে। নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল বাচ্চাটা তার অপে’ক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া বাচ্চাটার কাছে গিয়ে প্রথমে সুন্দর একটা হাসি দিল। একটা চকলেট বাড়িয়ে দিল বাচ্চাটার দিকে। বাচ্চাটা হাত বাড়িয়ে চকলেটটা নিতেই প্রিয়া রঙিন কাগজটা বাড়িয়ে দিতেই প্রিয়া অদ্ভু’ত এক আ’র্জি করে বলল,
“পিচ্চি, তোমার ভাইয়াকে এই কাগজটা দিয়ে বলবে বিকালে যেন আরেকটা কাগজ তোমাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
বাচ্চাটা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা।
বাচ্চাটা চলে গেল। প্রিয়া কিছুক্ষণ নদীর পাড় থেকে বাসায় ফিরে গেল। বাসায় গিয়েই নিলয়কে কল না দিয়ে রাহাতকে কল দিল। হঠাৎ করেই প্রিয়ার কল পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকালো রাহাত। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে প্রিয়া বলল,
“আমি কলেজে যাব। অফিস যাওয়ার সময় আমাকে কলেজে নামিয়ে দিবেন।
প্রিয়ার কথায় রাহাত অবা’ক হলো। কেননা প্রিয়া কলেজে গেলে সব সময় নিলয়কে কল দিয়ে বলে। কিন্তু আজকে হু’ট করে কি মনে করে কল দিল। রাহাত কিছু বলছে না দেখে প্রিয়া কল কেটে দিল। রাহাত হাঁ করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল।
ঘড়ির কাঁটা ৯ টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। প্রিয়া নাস্তা করল, কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। ঘড়ির কাঁটা ৯ টায় পৌঁছাতেই নিচ থেকে গাড়ির হ’র্নের শব্দ এলো। প্রিয়া ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুট লাগালো নিচের দিকে।
রাহাত প্রিয়ার বাসার নিচে গাড়ি থামিয়ে হ’র্ন বাজাতেই নিলয় অবাক ক’ন্ঠে রাহাতকে জিঙ্গেস করল,
“গাড়ি থামালি কেন?
রাহাত সাথে সাথেই বলল,
“প্রিয়া কলেজে যাবে।
রাহাত কথাটা বলতেই নিলয়ের বুকের মাঝে চিন’চিন ব্যা’থা অনুভব হলো। নিলয় বির’স কন্ঠে বলল,
“তোকে কল দিয়ে বলছে?
“হ্যাঁ।
“প্রিয়া তো সবসময় আমাকে কল দিয়ে বলে। হঠাৎ তোকে কল দিল কি মনে করে?
“সেটা আমি কি করে বলবো।
ওদের কথার মাঝেই প্রিয়া গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ির ভিতর গিয়ে বসতেই প্রিয়ার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। প্রিয়া মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখল নিলয়ের মেসেজ। প্রিয়া চোখ তুলে একবার নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মেসেজটা পড়ল,
“তুমি আমাকে কল না দিয়ে রাহাতকে কল দিয়ে কলেজে যাওয়ার কথা বললে।
প্রিয়া নিলয়ের মেসেজ পড়ে মুচকি হাসল। নিলয়ের মেসেজের উত্তরে বলল,
“কালকে রাহাত ভাইয়া আমাকে একটা কথা বলে অবাক করে দিয়েছিল। তাই আমি আজকে উনাকে কল দিয়ে অবাক করলাম। আপনি বুঝি ক’ষ্ট পেলেন?
প্রিয়ার পা’ল্টা প্রশ্নে ল’জ্জা পেল নিলয়। প্রিয়াকে প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি। এখন প্রিয়া ভাববে? নিলয়ের অস্ব’স্তি দেখে হাসল প্রিয়া।
রাহাত প্রিয়াকে কলেজে নামিয়ে দিল। প্রিয়া কলেজে গিয়ে ক্লাস করল। ক্লাস শেষে যথারীতি বাসায় চলে গেল। বাসায় গিয়ে প্রিয়া অধী’র আগ্র’হে বিকেলের জন্য অপে’ক্ষা করতে লাগল।
এক দিক দিয়ে প্রিয়ার ভয় হচ্ছে। চিরকুট দাতা যদি চিরকুট না দেয়? প্রিয়া যদি তার অপেক্ষার ফল না পায়? প্রিয়া নিজেই নিজের মনকে সান্ত’না দিল চিরকুট দিবে বলে।
অপেক্ষা করতে লাগলো ঘড়ির কাঁটায় ৪ টা বাজার আশায়। ৪ টা বাজার আগেই প্রিয়া ছু’ট লাগবে নদীর পাড়ে। কিন্তু অপেক্ষার পথ দীর্ঘ হয়। প্রিয়ার অপেক্ষা’র প্রহ’র যেন শেষই হতে চায় না। ধীরে ধীরে অপেক্ষা’র অবসা’ন ঘটবে।
প্রিয়ার অপেক্ষা’র অবসা’ন ঘটিয়ে বিকেল হলো। ঘড়ির কাঁটা ৪ টার কাছাকাছি পৌঁছাল। প্রিয়া নদীর পাড়ে ছুটে গেল চিরকুটের টানে। নদীর পাড়ে কত মানুষের মেলা।
প্রিয়া তার কাঙ্খি’ত মানুষটাকে পেল না। ঘড়ির কাঁটা আপন গতিতে ঘুড়তে লাগলো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা পাওয়া গেল না। মন খারাপেরা প্রিয়ার দরজায় কড়া নাড়লো। প্রিয়া স্বই’চ্ছায় মন খারাপকে আপন করে নিল।
প্রিয়া মন খারাপ নিয়েই অপেক্ষা করতে লাগলো। যদি বাচ্চাটার আসতে দেরি হয়? বাচ্চাটা এসে যদি প্রিয়াকে না পায়? এই কথা গুলো ভেবেই প্রিয়া বাচ্চাটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
প্রিয়া ৫ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। কিন্তু বাচ্চাটার দেখা পেল না। তাহলে কি চিরকুট দাতা চিরকুট লিখে দেয় নি? প্রেমের শুরুতেই প্রেমিকার কথা অমা’ন্য করছে? প্রিয়ার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল।
বিষ’ন্ন মনে বাসায় ফিরল প্রিয়া। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে রইল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। সন্ধ্যায় রাহাত আসলো। প্রিয়া পড়তে বসল ঠিকই কিন্তু পড়ায় মন দিতে পারল না। রাহাত প্রিয়ার মুখের দিকে তাকাল। প্রিয়ার মুখের ভাবগতিক বুঝতে পারল। প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভেবে প্রশ্ন করল,
“মন খারাপ?
প্রিয়া চোখ তুলে রাহাতের দিকে তাকাল। চোখ নামিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না।
রাহাত আর কিছু বলল না। পড়িয়ে প্রিয়াদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। বাসায় রেখে গেল বিষ’ন্ন প্রিয়াকে। প্রিয়া একরাশ মন খারাপ নিয়েই রাত পাড় করল।
আবারও একটা নতুন সকাল নেমে এলো। প্রিয়া একবার ভাবল আজকে চিরকুট আনতে যাবে না। চিরকুট দাতার উপর তার এক আকাশ সমান অভিমান রয়েছে।
প্রিয়া তার অভিমানে অটুট থাকতে পারল না। সঠিক সময়ে গিয়ে পৌঁছাল নদীর পাড়ে। বাচ্চাটা একটা রঙিন কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ার অপেক্ষা’য়। প্রিয়া যেতেই কাগজটা বাড়িয়ে দিল প্রিয়ার দিকে। প্রিয়া চিরকুট হাতে নিয়ে বাচ্চাটাকে জিঙ্গেস করল,
“পিচ্চি, তুমি কি তোমার ভাইয়াকে বলোনি বিকেলে কাগজ দেওয়ার কথা?
“ভাইয়া কালকে আমার থেকে কাগজটা নেয় নি। আজকে সকালে কাগজ নিয়ে, আমাকে এই কাগজটা দিয়েছে।
প্রিয়া কিছু না বলে নদীর পাড়েই চিরকুটের ভাঁজ খুলতে গেলে, বাচ্চাটা আটকিয়ে বলে,
“ভাইয়া বলেছে কাগজটা রাতে পড়তে।
বাচ্চাটার কথায় প্রিয়া একটা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলল। অপেক্ষা এত কষ্টের কেন? অপেক্ষার প্রহর এত বেদনাদা’য়ক কেন? প্রিয়ার অপেক্ষার যে শেষই হয় না।
#চলবে