চিরকুট প্রেম পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
421

#চিরকুট_প্রেম
#শেষ_পর্ব
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

প্রিয়া হাতের কাগজটা যথা স্থানে রেখে দেয়। মনের ভিতরের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে বেরিয়ে যায় রাহাতের রুম থেকে। রাহাতের আম্মু সামনে গিয়ে বলে,

“খালামনি রাহাত ভাইয়ার রুমে রাহাত ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া, দুজনের একজনও নেই।

“হয়ত ছাদে গেছে। তুই গিয়ে দেখে আয়।

প্রিয়া ছাদে যেতে অগ্রসর হয়। সিঁড়ি বেয়ে যতই ছাদের কাছাকাছি যাচ্ছে, হৃদস্প’ন্দন ততই দ্রুত গতিতে লাফা’চ্ছে। প্রিয়া ছাদের দরজার কাছে আসতেই নিলয়ের বলা কথায় থমকে যায়। নিলয় রাহাতকে বলছে,

“রাহাত আমার আর তোর পছন্দ সবসময় একই হয়। প্রিয় মানুষটার ক্ষেত্রেও যদি এইরকম হয়, তাহলে কি করবি?

নিলয়ের প্রশ্নে রাহাত মৃদু হাসল। রসিকতার সহিত বলল,

“আমি আর তুই ভাগ করে নিব।

নিলয় রাহাতের ঠাট্টা বুঝতে পেরে মুচকি হাসল। নিজের মুখভঙ্গি আগের ন্যায় করে বলল,

“এটা মোটেও রসিকতার কথা না। আমি সিরি’য়াস রাহাত।

নিলয়ের কথায় রাহাত নিলয়ের চোখের দিকে তাকাল। শীতল কন্ঠে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলল,

“প্রিয় মানুষ এক হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে প্রিয় মানুষটা আমাদের মধ্যে যাকে বেছে নিবে সেই হবে লাকি।

নিলয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আবারও রাহাতকে প্রশ্ন করে,

“প্রিয়া কি তোর প্রিয় মানুষ?

রাহাত ভনিতা করে বলে,

“তোর প্রিয় মানুষ হলে আমারও প্রিয় মানুষ।

রাহাত কথাটা বলে নিচে যাওয়ার জন্য উদ্য’ত হচ্ছে দেখেই প্রিয়া সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেল। রাহাতদের সোফায় বসে হাঁপাতে লাগলো। রাহাত ছাদ থেকে নেমে প্রিয়াকে দেখেও দেখল না ভাব করে রুমে চলে গেল।

রাহাতকে রুমে যেতে দেখে প্রিয়া উঠে দাঁড়ালো। রাহাত আর নিলয়, দুজনের যেকোনো একজন চিরকুট দিয়েছে। দুজন এখন দু জায়গায়। এখনই সময় যেনে নেওয়ার কে প্রেমিক পুরুষ।

প্রিয়া আবারও সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেল। নিলয় যদি তার প্রেমিক পুরুষ হয়। ভাবতেই প্রিয়ার বুকের ধুকপু’কানি বেড়ে যায়। প্রিয়া ছাদে গিয়ে দেখে নিলয় আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া নিলয়কে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে গলা খাঁকারি দিল।

নিলয় পিছন ফিরে প্রিয়াকে দেখে মুচকি হাসল। প্রিয়াও নিলয়ের হাসির পরিবর্তে মৃদু হাসল। নিলয় আগে বলল,

“তুমি তো অনেকক্ষণ আগে এসেছো।‌ ইশ’শ‌ আমার তো খেয়ালই ছিল না।

প্রিয়া নিলয়ের কথার উত্তর দিল না। বুকের ধুক’পুকানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রিয়া এদিক-সেদিক চেয়ে নিজেকে ধাত’স্থ করল। চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিল। আমতা-আমতা করে নিলয়কে জিঙ্গেস করল,

“প্রেয়সীকে আপনি কতটুকু ভালোবাসেন?

প্রিয়ার প্রশ্নে নিলয় অবাক হলো। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো। প্রেমিক পুরুষের তো অবাক হওয়ার কথা না। প্রেয়সীর কথা শুনে ভ্যাবা’চ্যাকা খেয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়ার কথা। সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির মুখে এর লেশ মাত্র নেই। নিলয় অবাক ক’ন্ঠে বলল,

“প্রেয়সী কে? আমি প্রেয়সীকে কেন ভালোবাসবো?

“আপনি প্রেয়সীকে সত্যি চিনেন না?

“না। কে প্রেয়সী?

নিলয়ের কথায় প্রিয়ার বুঝতে বাকি রইল না চিরকুটের আসল কে। কে তার প্রেমিক পুরুষ। প্রিয়া নিলয়কে বলল,

“প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসা হচ্ছে প্রেয়সী।

প্রিয়ার হেঁয়ালি মাখানো কথার অর্থ বোধগম্য হলো না নিলয়ের। প্রিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রিয়া নিচে নামতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নিলয় ডাক দিতে গিয়েও ডাক দিল না।

প্রিয়া রাহাতের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো রাহাত বিছানায় বসে অফিসের কি সব কাগজপত্র দেখছে। প্রিয়া রুমে গিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রাহাতের উদ্দেশ্যে বলল,

“জানেন প্রেমিক পুরুষ? আমার ভীষণ বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।

প্রিয়ার কথায় রাহাত ভরকে যায়। কন্ঠ’নালিতে শব্দ আটকে যায়। রাহাত এক দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে ভেবে পায় না। রাহাতের অব’স্থা দেখে প্রিয়া মুচকি হাসে। ভনিতা করে বলে,

“কি হলো প্রেমিক পুরুষ? বিয়ের কথায় ভ’য় পেলেন বুঝি?

রাহাত আমতা-আমতা করে বলে,

“কে প্রেমিক পুরুষ?

প্রিয়া আবারও মুচকি হেসে বলে,

“কেনো? আপনি।

প্রিয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাহাত ধম’ক দিতে যেতেই প্রিয়া আবারও বলল,

“প্রিয়া, রাহাত ভাইয়াকে ভয় পায়। প্রেয়সী তার প্রেমিক পুরুষকে ভয় পায় না।

প্রিয়ার কথায় রাহাত এবার মুচকি হাসল। হাতে থাকা অফিসের কাগজগুলো রেখে প্রিয়ার কাছে এসে বসে বলল,

“তা প্রেয়সী প্রেমিক পুরুষের কাছে কি চায়?

“প্রেয়সী এখন শুধু চিরকুট চায় না। চিরকুটের সঙ্গে চিরকুট দাতাকেও চায়।

রাহাত ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

“মানে?

“আমি বিয়ে করবো।

প্রিয়ার কথায় রাহাতের অবাক হওয়ার সীমা বেড়ে যায়। অবাক কন্ঠে বলে,

“বিয়ে করবে মানে। বিয়ে করবে বললেই কি বিয়ে হয়ে যাবে?

“আপনি বললে তো হবে।

রাহাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে নিলয় বলে,

“রাহাত তুই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেল। বাসার সবাইকে আমি রাজী করাবো।

রাহাত প্রশ্নোক্ত দৃষ্টিতে তাকাতেই নিলয় বলল,

“তোদের মধ্যে কি চলছে বুঝতে পারছি না। তবে এইটুকু বুঝতে পারছি যে প্রিয়া তোকে চায়। প্রিয় মানুষ ধরা দিলে তাকে আপন করে নিতে হয়। তুই তো আপন করে নেওয়ার বদলে অহেতুক প্রশ্ন করছিস।

রাহাত বাসায় কাউকে কিছু না বলে প্রিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। কাজী অফিস যাওয়ার আগে বিয়েতে সাক্ষী থাকার জন্য বন্ধুদের আসতে বলল। কাজী অফিসে গিয়ে করে ফেলল বিয়ে।

বিয়ে করে বাসায় গিয়ে দেখল দুই পরিবার ওদের বিয়েটা খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে। সবটাই নিলয়ের ম্যাজিক। নিলয় ছিল বলেই কেউ অমত করেনি। রাহাত কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকাল।

প্রিয়াকে সুন্দর একটা শাড়ি পড়ানো হলো। প্রিয়া নিজে নিজেই সাজলো। বাসর ঘর সাজানোর দায়িত্বটা পড়েছে নিলয়ের কাঁধে। নিলয় অবশ্য বেশ সুন্দর করেই বাসর ঘর সাজালো।

প্রিয়াকে বাসর ঘরে বসিয়ে রাখা হলো। রাহাত বাসর ঘরে ঢুকতেই প্রিয়া রাহাতকে সালাম করল। রাহাত প্রিয়াকে খাটে বসিয়ে নিজেও প্রিয়ার পাশে বসল। প্রিয়াকে প্রশ্ন করল,

“এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?

“আজকে জানতে পারলাম আপনি আমার প্রেমিক পুরুষ। আমার ইচ্ছে ছিল যখন প্রেমিক পুরুষকে চিনতে পারবো, তারপর আসন্ন পূর্নিমার দিন তাকে বিয়ে করবো। কিন্তু আমার কপাল দেখুন। আজকে জানতে পারলাম আপনি প্রেমিক পুরুষ আর আজকেই পূর্নিমা।

“পূর্নিমার দিন কেন বিয়ে করার শখ জাগলো?

“আমার প্রেমিক পুরুষের শখ জাগেছিল প্রেয়সীকে নিয়ে জোৎস্না বিলাস করার। প্রেমিক পুরুষের চাওয়াটাকে প্রাধা’ন্য দিতেই পূর্নিমার দিন বিয়ে করলাম।

প্রিয়ার কথায় রাহাত হাসল। প্রিয়ার হাত ধরে বলল,

“বারান্দায় জোৎস্নার আলো ভরপুর। আজ তাহলে প্রেয়সীকে নিয়ে জোৎস্না বিলাস করি।

রাহাতের কথায় প্রিয়া মুচকি হাসল। রাহাত প্রিয়ার হাত ধরে প্রিয়াকে বারান্দায় নিয়ে গেল। বারান্দায় একটা চেয়ারে রাহাত বসল। প্রিয়াকে টান দিয়ে রাহাতের কোলে বসালো।

রাহাত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার প্রেয়সীর দিকে। জোৎস্নার আলোয় প্রিয়ার মুখখানি আরো উজ্জ্বল লাগছে। রাহাত প্রিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

“জানো প্রেয়সী? প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সীকে ভীষণ ভালোবাসে। প্রেমিক পুরুষের রন্দ্রে-রন্দ্রে প্রেয়সীর বসবাস।

রাহাতের কথায় প্রিয়া মুচকি হাসল। ক্ষানিক পরে জিঙ্গেস করল,

“আমাদের চিরকুট প্রেমের কি এখানেই সমাপ্তি ঘটবে?

রাহাত প্রিয়াকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

” চিরকুট প্রেম শেষ হওয়ার নয়। আগের মতো হয়তো প্রতিদিন চিরকুট দেওয়া-নেওয়া হবে না। কিন্তু যখন প্রেয়সীর অভিমান হবে, চিরকুটের কাগজে প্রেমিক পুরুষকে জানিয়ে দিবে সে অভিমানী বার্তা। সুখের অনুভূ’তি হলো জীবন্ত রাখতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থেকে যাবে চিরকুট প্রেম।

সমাপ্ত