চিরকুট প্রেম পর্ব-০৬

0
177

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃলক্ষী_দেব

প্রিয়ার অপেক্ষা’র প্রহ’র শেষ হয়ে ধরনী’তে সকাল নামল। ঘুম থেকে উঠেই ছুট লাগালো সেই নদীর পাড়ে। যেখানে একটি বাচ্চা চিরকুট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া বাচ্চা’টির সামনে যেতেই বাচ্চাটা রঙিন কাগজ এগিয়ে দিল প্রিয়ার দিকে। প্রিয়া কাগজটা হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল। এই কাগজ যে তার চিরকুট দাতার। কাগজের ভাঁজে এক ঝাঁক ভালোলাগার অনুভূতি আছে।

প্রিয়া বাচ্চাটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। বাচ্চা’টার দুগালে হাত রেখে দুগালে দুইটা চু’মু খেল। প্রিয়া চুমু দিতেই বাচ্চাটা খিল’খিল করে হেসে উঠল। প্রিয়া বাচ্চাটাকে বলল,

“আচ্ছা পি’চ্ছি। তোমাকে কাগজটা দিতে যে বলে সে কি তোমার নিজের ভাই হয়?

বাচ্চা’টা মাথা নাড়িয়ে বলে,

“আমার কেউ হয় না।

প্রিয়া বাচ্চাটার কথায় অবা’ক হয়ে বলে,

“তাহলে তুমি আমাকে কাগজটা দেও কেন?

“তোমাকে কাগজটা দিলে ভাইয়া আমাকে অনেক গুলো চক’লেট কিনে দেবে। তাই দেই।

বাচ্চাটার কথায় প্রিয়া হেসে ফেলল। হাসি হাসি মুখে বাচ্চাটাকে বলল,

“ওহ আচ্ছা। তাহলে ঘু’ষ নেওয়া হচ্ছে।

প্রিয়ার কথায় বোধহয় বাচ্চাটা ল’জ্জা পেল। ল’জ্জার মাথাটা নিচু করে ফেলল। প্রিয়া এটা দেখে মুচকি হেসে বলল,

“থাক পি’চ্ছি আর ল’জ্জা পেতে হবে না।

প্রিয়া উঠে দাঁড়ালো। চিরকুট নিয়ে রওনা হলো বাসার দিকে। চিরকুট পড়ার জন্য মন যে ছট’ফট করছে। প্রিয়া নদীর পাড় থেকে বাসায় গেল। রুমে গিয়ে দরজাটা ঠা’স করে বন্ধ করে দিল।

বিছানায় বসে চিরকুটের ভাঁজ খুলল। রঙিন কাগজে শব্দ গুচ্ছের মেলা দেখা যাচ্ছে। প্রিয়া একটা শ্বাস ফেলে চিরকুট পড়া শুরু করল।

“শুনো কন্যা,
তোমার দেওয়া চিরকুট প্রেম নামটা আমার মনের মধ্যে গেঁথে আছে। কি সুন্দর নাম, চিরকুট প্রেম। আর কি বললে তুমি? তোমার চিরকুট আমার পছন্দ হবে না। বিশ্বাস করো, আমার চিরকুটের থেকে তোমার চিরকুট জীব’ন্ত এক অনুভূতি। যা শুধু বার বার পড়তেই মন চায়।

আচ্ছা কন্যা,
তুমি কি জোৎ’স্না রাত দেখেছো? কখনো কি রাত জেগে গায়ে মেখেছো জোৎস্না’র আলো? জানো? আমার একটা ইচ্ছে জেগেছে। তোমায় নিয়ে জোৎ’স্না বিলাস করার। আমার ইচ্ছেটা পূরণ করবে কি?

প্রিয়া চিরকুট টা ভাঁজ করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ইশশ’শ! কত ই’চ্ছে, জোৎ’স্না বিলাস করবে। প্রিয়ার মুখে বেশ ক্ষানি’কটা ল’জ্জার আভা ফুটে উঠল।

অচেনা মানুষের একটা ছোট চিরকুট। অচেনা মানুষের চিরকুট পড়ে ল’জ্জা এ কথা কখনো ভেবেছিল প্রিয়া? কিন্তু আজ অচেনা মানুষের চিরকুট পড়েই মুখে ল’জ্জার আভার দেখা মিলছে।

অচেনা, অজানা একটা মানুষ হৃদয় জুড়ে বিরাজ করছে। অদ্ভু’ত ভাবে মস্তি’ষ্ক বার বার অচেনা মানুষ’টার কথাই ভেবে যাচ্ছে। অচেনা মানুষটাকে চেনার তী’ব্র নে’শা জাগ’ছে অন্ত’রে।

প্রিয়া চিরকুট বুকে নিয়ে শুয়ে রইল। কত, শত বার চিরকুটের ভাঁজ খুলল। আবারও ভাঁজ করে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখল চিরকুট খানা।

বারবার চিরকুট পড়ার কারণে চিরকুটের একেকটা শ’ব্দ মনের মাঝে গেঁথে আছে। প্রিয়া এবার চিরকুটের ভাঁজ না খুলেই নিজে‌ নিজে আও’য়াল চিরকুটের মধ্যে থাকা শ’ব্দ গুচ্ছো।

সারাদিন চিরকুট দাতার চিরকুটের উত্তরে কি লিখবে ভাবতে থাকল প্রিয়া। চিরকুট লিখবে, লিখবে করেও সারাদিনে লেখা হল না। ধরনীর বুকে স’ন্ধ্যা নেমে এল। প্রিয়া ব্যা’গ থেকে রঙিন কাগজ বের করল। হাতে কলম তুলল।

প্রিয়া কাগজে কলমটা দিয়ে লিখতে যাওয়ার আগেই রুমে এসে হাজির হলো রাহাত। রাহাতকে দেখেই অপ্রস্তু’ত হয়ে যায় প্রিয়া। তড়িঘড়ি করে ব্যাগের নিচে কাগজটা রেখে দিল।

প্রিয়ার এসব কর্ম’কাণ্ড রাহাতের চোখ এড়া’য়নি। প্রিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাহাত ঠিক সময়েই এসেছে। প্রিয়া ঘড়ির টাইম দেখে মনে মনে বলল,

“ধু’র লিখতে যাওয়ার আর সময় পেলাম না। এই খা’টাশ ব্যা’টা আসার সময়ই লিখতে গেলাম।

রাহাত চেয়ার টেনে বসল। হাতের মোবাইলটা পকেটে রেখে পড়াতে শুরু করল। পড়ানো শেষ করে চেয়ার ঠেলে উঠে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই প্রিয়া বলে উঠলো,

“রাহাত ভাইয়া, নিলয় ভাইয়া তো আমাকে তুমি করে বলে। আপনি কেন তুই করে বলেন?

প্রিয়ার প্রশ্নে রাহাত আবারও চেয়ারে বসল। প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুই কি চাস আমি তোকে তুমি করে বলি?

রাহাতের প্রশ্নে অপ্রস্তু’ত হয়ে গেল প্রিয়া। সে তো এমনটা চায় নি। হঠাৎ করেই প্রশ্নটা মাথায় এল তাই করল। প্রিয়া রাহাতের থেকে চোখ ফিরিয়ে আমতা-আমতা করে বলল,

“আমি তো সে…

প্রিয়া কথাটা শেষ করতে পারল না। কথা শেষ হওয়ার আগেই রাহাত হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলল,

“যাকে তুমি করে বলতে হয়, আমি তাকে তুমি করেই বলি। সে যদি বুঝতে না পারে এটা তার ব্যর্থ’তা।

প্রিয়া ফ্যাল’ফ্যাল দৃষ্টিতে রাহাতের দিকে তাকিয়ে রইল। রাহাতের কথার ভাবা’র্থ বুঝতে পারল না প্রিয়া। রাহাত চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে চলে গেল।

রাহাত চলে যেতেই প্রিয়া রাহাতের বলা কথাটা বেমালু’ম ভুলে গেল। মাথার মধ্যে ঢুকে গেল চিরকুট লিখার কথা। প্রিয়া আবারও কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসল। রঙিন কাগজে কলম দিয়ে লিখতে শুরু করল নিজের মনের কথা গুলো।

“শুনো মেয়ে, শুনো কন্যা এই গুলো কি? আপনি কি আমার নাম ভুলে গেলেন? নাকি আদো নাম জানেনই না?

শুনেন, আপনি তো আমাকে ধরা দিবেন না। আমি আপনাকে কি নামে ডাকবো? আপনি তো আমার প্রেমিক। তাই না? শুনছেন আমি আপনাকে প্রেমিক পুরুষ বলে ডাকব।

আমায় নিয়ে জোৎ’স্না বিলাস করতে চান। আপনার এই ইচ্ছে সময় পূরণ করবে। আমি না।

#চলবে