চিরকুট প্রেম পর্ব-০৮

0
195

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

অধীর অপেক্ষার পর স’ন্ধ্যা নামল। প্রিয়ার ক্ষ’নে ক্ষ’নে চিরকুট পড়ার ইচ্ছে বেড়েই চলছে। রাহাত পড়াতে আসল। প্রিয়া অস্থির’তার সহিত পড়ল। একটু পর পর ঘড়ির দিকে তাকাল। রাহাত দুচোখ ভরে দেখল প্রিয়ার অস্থি’রতা। প্রিয়ার অস্থি’রতা দেখে ক্ষানি’ক হাসল। প্রিয়ার এই অস্থি’রতাই যেন দেখতে চেয়েছিল।

পড়ানোর সময় ফুরিয়ে গেল। রাহাত বেরিয়ে গেল। প্রিয়ারও অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। প্রিয়া দুরু’দুরু বুকে চিরকুট টা হাতে নিল। এক সমুদ্র অস্থি’রতা নিয়ে পড়তে শুরু করল চিরকুট।

“প্রিয় প্রেয়সী,

অবাক হচ্ছো প্রেয়সী বলছি বলে? তুমি যে আমাকে প্রেমিক পুরুষ নাম দিলে, তাই আমিও তোমাকে প্রেয়সী নাম দিলাম। তোমায় শুধু আমি প্রেয়সী বলে ডাকব। এটা কেবল আমার দেওয়া একা’ন্ত নাম।

প্রেয়সী তুমি এমন কেন করলে বল তো? জানো, অফিসে কাজ ছিল বলে বাচ্চাটার থেকে চিরকুট না নিয়েই চলে গিয়েছিলাম। আজকে সকালে তোমার দেওয়া চিরকুট পড়ে, তারপর চিরকুট লিখে দিয়েছি।

সরি প্রেয়সী। তুমি আমার চিরকুটের জন্য অপেক্ষা করেছিলে। আচ্ছা, আমি তো তোমায় চিরকুট না দিয়ে কল করতে পারতাম। চিরকুটের জন্য অপেক্ষা না করে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারতাম। এই গুলো না করে চিরকুট কেন দিলাম বলো তো?

চিরকুট দেওয়ার কারন হচ্ছে আমি চাই, আমাদের প্রেমটা খাঁটি হোক। এখনকার রিলেশনের মতো আজকে রিলেশনে গেলাম, কয়েকদিন পর একটা ছোট ভূল বুঝাবুঝির জন্য রিলেশন শেষ করে দিলাম এমন না হোক।

আমাদের প্রেমে চিরকুট পাওয়ার অপে’ক্ষা থাকবে, অস্থির’তা থাকবে। যখন চিরকুট হাতে পাবো, চিরকুটের ভাঁজ খুলে চিরকুট পড়বো, তখন হৃদয় জুড়ে থাকবে কেবল ভালোলাগা, ভালোবাসার ছোঁয়া।

প্রেয়সী তুমি কি পারবে না চিরকুটের জন্য অপে’ক্ষা করতে? অপেক্ষা’র শেষে যখন হৃদয়ে ভালোলাগার বাতাস বয়ে যাবে, সেই মূহূর্তের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না? প্রেয়সী তুমি কি মিষ্টি সব অনুভূতি পেতে চাও না?
ইতি
তোমার প্রেমিক পুরুষ।

প্রিয়া চিরকুট টা ভাঁজ ডায়েরির ভাঁজে রেখে দিল। প্রেমিক পুরুষ যেভাবে ভেবেছে প্রিয়া তো সেভাবে ভাবে নি। সে তো এই অস্থির’তা চায় নি। কেবল চেয়েছে চিরকুট।

চিরকুটের ভাঁজে থাকা রঙিন অনু’ভূতি। যেই অনুভূতি সে সারাজীবন পেতে চায়। অদ্ভু’ত ভালোবাসা মিশ্রিত কয়েক গুচ্ছ শব্দ পেতে চেয়েছিল। প্রেমিক পুরুষের ন্যা’য় অপে’ক্ষা চায় নি, অস্থি’রতা চায় নি। অপে’ক্ষা, অস্থি’রতা বিহীন সুখের অনুভুতি গুলো চেয়েছিল।

প্রিয়া এখন অপে’ক্ষা চায়। এক বুক অস্থি’রতা চায়। অপে’ক্ষা, অস্থি’রতার শেষে মি’ষ্টি অনু’ভূতির স্বা’দ গ্র’হণ করতে চায়। প্রেমিক পুরুষের কাছ থেকে জীবনের শ্রে’ষ্ঠ সুখ পেতে চায়।

প্রিয়া রঙিন কাগজ নিল। হাতে কলম তুলল। রঙিন কাগজের পাতায় লিখতে গেল কয়েক গুচ্ছ শব্দ। কাগজের পাতায় ফুটিয়ে তুলতে লাগলো মনের কথা গুলো।

“প্রিয় প্রেমিক পুরুষ,

জানেন, যখন আপনার দেওয়া চিরকুট পড়ে মনের মধ্যে ভালোলাগা বিরাজ করে। মনের মাঝে সুখের অনুভূ’তি হয়, তখন মন আরো ভালোবাগা পেতে চায়। ভালোবাসার সুখ মিশ্রি’ত চিরকুট চায়।

তাই তো মনের চাওয়াটাকে প্রাধা’ন্য দিয়ে বিকেলের মধ্যেই আরেকটা চিরকুট চাইলাম। কিন্তু প্রকৃতি হয়তো চায়নি অপেক্ষা বিহীন চিরকুট।‌ অবশেষে প্রকৃতির চাওয়াটাই পূরন হলো।

জানেন প্রেমিক পুরুষ? আমি এখন অপে’ক্ষা চাই। অস্থির’তাকে বিদায় দিয়ে এক মুঠো সুখ কুড়িয়ে নিতে চাই। প্রেমিক পুরুষের যোগ্য প্রেয়সী হতে চাই। প্রেমিক পুরুষের নিকট থেকে ভালোবাসার চিরকুটের জন্য অপেক্ষা করতে চাই।
ইতি
আপনার প্রেয়সী

প্রিয়া চিরকুট টা ভাঁজ করে রাখল। অপেক্ষা করতে লাগলো সকালের। আঁধার ভেদ করে সকালের আলো ফুটল। প্রিয়া চিরকুট নিয়ে গেল নদীর পাড়ে। বাচ্চাটার হাতে দিয়ে এল চিরকুট।

নদীর পাড়ে প্রতিদিন চিরকুট দেওয়া-নেওয়া হতো। নদীর পাড়েই প্রকৃতি লিখল একটা চিরকুট প্রেমের মহাকাব্য। নদীর পাড় সাক্ষী হলো সেই প্রেমের। আকাশে-বাতাসে ছড়াতে লাগল প্রেমের মি’ষ্টি গ’ন্ধ। যে গ’ন্ধে মু’গ্ধ হচ্ছে প্রকৃতি।

প্রেমিক পুরুষের চিরকুটে ভালোলাগার, ভালোবাসার ছোঁয়া’য় জুড়িয়ে যাচ্ছে প্রিয়ার হৃদয়। মু’গ্ধ হয়ে বরন করছে ভালোবাসার মিশ্রিত সুখ।

চিরকুট পড়ে কখনো হাসছে, কখনো ল’জ্জায় মুখশ্রী রঙিন হচ্ছে। চিরকুটের ভাঁজে ভাঁজে লিখছে, মনের অনু’ভূতি গুলো। যা কেবল চিরকুট দাতা’কেই বলা যায়। যেই অনু’ভূতির অংশীদার কেবলই প্রেমিক পুরুষ।

চিরকুট প্রেমে আস’ক্ত হচ্ছে দুই কপোত-কপোতী। চিরকুটের ভাঁজে আদান-প্রদান করছে কত-শত স্ব’প্নের কথা। কত-শত ভালোবাসার কথা। এতো ভালোবাসার মাঝেই কেটে যাচ্ছে কিছু রঙিন দিন।

প্রেমিক পুরুষ আর প্রেয়সীর প্রেমের দিন যায়, মাস যায়। দেখতে দেখতে কেটে যায় বছর। দুজনের মাঝে বাড়াতে থাকে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা।

সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় সব কিছু। পরিবর্তন হয় প্রিয়া। কেবল পরিবর্তন হয় না চিরকুটের অনুভূতি। প্রথম চিরকুট পেয়ে যেমন অনুভূতি হতো এখনও ঠিক আগের মতোই অনুভূতি হয়।

রাহাত এখন আর প্রিয়াকে পড়ায় না। সেই সূত্রে প্রতিদিন সন্ধ্যা’য় ওদের দেখাও হয় না। আজকে প্রিয়া বিকেল বেলায় রাহাতদের বাসায় এলো।

বেশ কিছুক্ষণ কাটাল রাহাতদের বাসায়। রাহাত, নিলয় অফিস থেকে বাসায় এলো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। রাহাত আর নিলয়ের একটা অভ্যাস আছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ওদের চা লাগে।

রাহাতের আম্মু চা নিয়ে এসে চায়ের ট্রে টা প্রিয়ার হাতের দিয়ে বলল,
“প্রিয়া মা, চায়ের কাপ দুটি একটু রাহাত আর নিলয়ের রুমে দিয়ে আয় তো।

প্রিয়া চায়ের ট্রে হাতে নিল। প্রিয়া ট্রে হাতে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল রাহাতের রুমে দিকে। রাহাতের রুমে গিয়ে রাহাত আর নিলয় কাউকেই দেখতে পেল না। ওয়াশরুমেও কাউকে পেল না।

প্রিয়া চায়ের ট্রে টা রাহাতের টেবিলের উপর রাখল। রাহাতের টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেল।‌ প্রিয়া আগ্রহ নিয়ে কাগজটা হাতে নিল। কাগজে চির পরিচিত হাতের লেখা দেখে প্রিয়ার বুক কেঁপে উঠলো। বেড়ে গেল হৃদস্প’ন্দন। কার এই হাতের লেখা? নিলয়ের নাকি রাহাতের?

#চলবে