চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-১৪

0
531

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_১৪

‘আপনি কি জানেন সায়েনের জীবনের একটা কালো অধ্যায় আপনি শুরু করেছেন?? আপনি না আসলে ওর লাইফটা এভাবে শেষ হতো না। এভাবে মুখ লুকিয়ে দূরে সরে যেতে হতো না। আর ওর গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগতো!!জানতে চান তো সায়েন কোথায় আছে কেমন আছে আর কি করছে?? তাহলে এটা জেনে রাখুন যে আমি এর কিছুই জানি না। এই মুহূর্তে সায়েন কোথায় আছে তা আমি কেন ওর কোন আত্মীয় স্বজন ও জানে না আর সেখানে আমি কিভাবে জানব??’
দিশা একটু দম ছাড়লো। তারপর পুনরায় বলতে লাগলো,’জানেন সেদিন রাতে কি হয়েছিল যেদিন আপনি চলে এসেছিলেন ওই চিলেকোঠার ঘর থেকে??ছাদ থেকে নামতেই অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হয় সায়েন। পুরো মহল্লার মানুষ এসে হাজির হয় সায়েনের বাড়িতে। কারণ তারা প্রায়শই আপনাকে আর সায়েনকে একসাথে ছাদে দেখেছে। এমনকি চিলেকোঠার ঘরে যেতেও। সবচেয়ে বড় কথা হলো সেদিন সন্ধ্যায় আন্টি নিজেও আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখেছে। ভাবতে পারছেন সেদিন কোন পরিস্থিতিতে ছিল সায়েন?? নিজের মায়ের কাছে বাবা ভাইয়ের কাছে আর পুরো এলাকাবাসীর কাছে ছোট হয়ে গেছে ও। যে মা ওর গায়ে ফুলের টোকাও দেয়নি সেই মা সেদিন সায়েনের গায়ে হাত তুলেছিল। সবার তিক্ত কথার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আর সেই কথাগুলো যে কি পরিমান নোংরা হতে পারে তা আপনাকে নিশ্চয়ই বলতে হবে না!! আপনি এসবের মধ্যে সায়েনকে ফেলে চলে এসেছিলেন। সায়েনের মা সায়েন আর শাফিন ভাইয়াকে অনেক বেশি শাসন করে রাখে। ছেলেমেয়েকে তিনি আদর্শ ও চরিত্রবান করতে চায়। আর সেখানে এতোবড় আঘাত তিনি কিভাবে সহ্য করবেন। আর এলাকার মানুষ তো আছেই। রাস্তায় দেখা হলেই জিজ্ঞেস করবে “আপনার মেয়ে তো চিলেকোঠার ঘরে একটা ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিল তাই না??” এসব কথা ক’জন বাবা মা মানতে পারে??তাই আন্টি আঙ্কেল ও নিতে পারেনি। সেজন্য এই শহর ছেড়ে চলে গেছে দূরে কোথাও। আমি জানি না ওরা কোথায়
আছে ওরা!!কোন যোগাযোগ ও নেই ওর সাথে।’
দিশা কাঁদছে,সায়েনের কষ্টটা সেও মানতে পারছে না। আরাদ দুহাতে মুখ ঢেকে বসে আছে। দিশার প্রতিটা কথা তীরের মতো আঘাত হানছে তার বুকে। সত্যি সায়েনের জীবনের কালো অধ্যায় সে নিজেই। কেন এরকম নাটক করে সেদিন সায়েনের বাড়িতে থেকে গেল?? তাহলে তো এতো কিছু হতো না। সব দোষ আরাদের। এই আঘাত তো সায়েন কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারবে না। নিশ্চয়ই সে সবকিছুর জন্য আরাদকে দায়ী করছে। করবেই তো কারণ দায়ী তো আরাদই। নিজের উপর রাগ বাড়ছে আরাদের। ছয়টা মাস সে সায়েনের জন্য ছটফট করে কাটিয়েছে। এক নজর সায়েনকে দেখার জন্য তির্থের কাকের মত বসে আছে। কত জায়গায় খোঁজ করেছে সায়েনের তবুও পায়নি। সায়েনের আত্মীয় বলতে লিমাকে চেনে আরাদ। সেখানে খোঁজ করেও কিছু জানতে পারেনি আরাদ। বিষন্ন মন নিয়ে দিনের পর দিন যাপন করছে সে।
দিশা নিজের চোখের পানি মুছে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এতক্ষণ ধরে বসে বসে অনেক কথাই বলেছে সে। চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আরাদ বলে উঠলো,’দিশা যদি কখনো সায়েনের খোঁজ পাও বা সায়েন যদি তোমার সাথে কোনদিন যোগাযোগ করে তাহলে প্লিজ আমাকে জানিও।’

পিছনে ফিরে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো দিশা তারপর বলল,’সেটা কোনদিন ও হবে না। আমার সাথে ও কখনোই দেখা করবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি চাইলেও কোনদিন ওর সাথে দেখা করতে পারবেন না। যদি না সায়েন চায়।’

আরাদ কোন কথা বলল না। স্থির দৃষ্টিতে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা আবার বলল,’আমার এতোটা কনফিডেন্ট কেন তাই তো?? কারণ সায়েন ওর মায়ের সাথে পরীক্ষা দিতে এসেছিল সেটা কি জানেন আপনি??’

আরাদ অবাক চোখে তাকাল দিশার দিকে বলে,’সায়েন এসেছিল??’

‘হ্যা এসেছিল!! পরীক্ষা দিয়ে আবার চলে গেছে। আপনার এতো পাওয়ার এতো লোকজন থাকতে কেন সেটা ধরতে পারলেন না??আসলে যে নিজে থেকে ধরা দিতে চায় না তাকে কেউ ধরতে পারে না। তাই আপনিও পারেননি। তবে শেষ পরীক্ষার দিন সায়েন আমার সাথে কথা বলেছিল। কিন্তু আমার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বুঝলাম না যে এতকিছুর পরেও কেন সায়েন আপনার কথা জিজ্ঞেস করলো??বলতে পারেন??’

আরাদ আবার চুপ করে আছে। এতকিছু শোনার পর কি বলার আছে ওর?? চোখের পানি ও আসছে না তারাও কঠিন হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে বসে আছে আরাদ। দিশা ততক্ষনে চলে গেছে। জোনায়েদ আরাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,’বাড়িতে যাবি না??’

আরাদ চট করে উঠে দাড়ালো বলল,’আরশি তনয়া কে নিয়ে বাড়িতে যা আমি পরে যাব।’

আরাদ সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। জোনায়েদ আজকে আর আটকালো না আরাদকে। সে আরশি আর তনয়াকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল।

রাস্তার ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছে আরাদ। আর আশেপাশের ব্যস্ত মানুষের চলাচল দেখছে। আচ্ছা মানুষগুলো এরকম কেন??কেন সবসময় নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে??কারো মন খারাপ দেখলে শান্তনা না দিয়ে কেন আরো ভেঙে দিয়ে চলে যায়??যেমনটা সায়েনকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেসময় আরাদের প্রয়োজন ছিল সায়েনের কিন্তু তখন আরাদ ছিল নিজ কাজের ব্যস্ততায়। সেদিন আরাদের উপস্থিতি সায়েনকে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতো না। আরাদ ঠিক কোন না কোন ভাবে সামলে নিতো সায়েনকে। তাহলে এই ছয়টা মাস এভাবে আলাদা থাকতো না দুজনে। না জানি এতগুলো দিন কিভাবে কাটিয়েছে সায়েন??আর পরবর্তী দিনগুলো কিভাবে কাটাবে সে?
তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণের পানিটুকু মুছে বড় একটা শ্বাস ফেলল আরাদ। হাঁটতে লাগলো কোন এক অজানার পথে।

ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছাড়িয়ে গেছে। এখনও আরাদের আসার নাম নেই। নিলিমা বেগম উদাস হয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে। তিনি আরাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হাসি বেগম পানি খাওয়ার জন্য আসতেই নিলিমাকে দেখে বলল,’ভাবি তুমি ঘুমাও নি??রাত তো অনেক হলো!!’

নিলিমা সেদিকে তাকালো উদাস হয়েই বললো,’কি করব আরাদ তো এখনও ফিরলো না।’
হাসি চেয়ার টেনে বসে বলল,’কি করবে এখন আর?? তোমার ছেলে যেভাবে ওই মেয়ের পিছনে পরেছে মনে হয় তো আজীবন ওই মেয়ের পিছনেই দৌড়াবে। এভাবে তো চলবে না। মেয়েটা চলে গেছে ফিরবে কি ফিরবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। আরাদের জীবনটা নষ্ট হতে দিও না ভাবী। আমি বলি কি আরাদকে বিয়ে দিয়ে দাও। দেখবে ভালো হবে। প্রথমে আরাদ অমত করবে কিন্তু পরে ঠিকই মেনে নেবে।’

নিলিমা ভেবে দেখল যে হাসি ঠিক কথাই বলেছে। এভাবে নিজের একমাত্র ছেলের জীবন কিছুতেই উচ্ছন্নে যেতে দেবে না তিনি একদমই না। যেকরেই হোক আরাদকে বিয়ে দিতেই হবে। ওনাদের কথার মধ্যেই আরাদ ফিরে আসলো। চোখদুটো তার অসম্ভব লাল।নাকটাও লাল হয়ে আছে। এলোমেলো পায়ে হেঁটে কয়েক সিঁড়ি উঠতেই নিলিমা বলে উঠলেন,’দাড়া,এতো রাত করলি কেন??’

আরাদ পিছনে না তাকিয়েই জবাব দিলো, ‘তুমি জেগে আছো কেন??আমি খাবো না। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’

আরাদ সিঁড়ি ভেঙে উপরে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। নিলিমা হতাশার শ্বাস ফেললো। হাসি এগিয়ে এসে বলল, ‘দেখলে আরাদকে?? এভাবে আর কতদিন চলবে??ভাবি নিজের ছেলের ভালো চাও তো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও।’

নিলিমা মাথা নেড়ে চলে গেল। হাসি বেগম ও নিজের রুমে চলে গেছে।
রুমে ঢুকেই গায়ের শার্টটা খুলে ছুঁড়ে ফেলল আরাদ। আজকে অনেক ড্রিংক করেছে সে। কিন্তু নেশা কিছুতেই ধরছে না তার। বারবার সায়েনের মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। সায়েকে একটু দেখার জন্য ছটফট বাড়ছে আরাদের। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো সে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,’কোথায় তুমি সায়েন??প্লিজ একটিবার দেখা দাও?ফিরে আসো প্লিজ??’
চোখজোড়া টানছে আরাদের। এভাবে সায়েনের নাম যপ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো সে।

ভার্সিটির প্রথম দিন আজকে। আরশি আর তনয়া বেশ উৎফুল্ল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে বসেছে দুজন। আরশি মা’কে জিজ্ঞেস করল,’ভাইয়া কোথায় মা??বলো না আজকে যেন আমাদের ড্রপ করে দেয়??’

নিলিমা গম্ভীর মুখে বললেন,’আরাদ অফিসে চলে গেছে।’

আরশি মুখটা ছোট করে বলল,’ওহ।’

আরশি আর কোন কথা বলল না। আরাদের মনের অবস্থা সেও বুঝতে পারছে। বোন হয়ে ভাইয়ের মনের অবস্থা তাকে তো বুঝতেই হতো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে করে ওরা বেড়িয়ে গেল। তামিম ও ওদের সাথেই বের হয়েছে। তনয়া বলে উঠলো,’ভাইয়া ইদানিং বেশি আপসেট থাকে। ভাবী এমন করলো কেন বল তো??একটু ভাইয়ার কথা ভাবলেও তো পারতো।’

আরশি বিরক্তসূচক শব্দ বের করলো মুখ দিয়ে তারপর বলল,’এখন এসব নিয়ে ভাবছিস কেন?? ভাইয়া সব সামলে নেবে।’

‘আর কিভাবে সামলাবে?? এতগুলো দিন তো পার হয়ে গেলো। ভাইয়া আর আগের মতো নেই রে!!কথায় কথায় বকে না,ধমকায় না, শাসনও করে না।’

‘শাসন করলে বুঝি ভালো লাগতো তোর??’

‘তা লাগতো না। তবে এমন দেখেও তো ভালো লাগছে না।’
আরশি একটু নড়েচড়ে বসল বলল,’এক কাজ করলে কেমন হয়??আমরা ভাবিকে খুঁজে বের করি আর ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দেই।’

তনয়া মুখ ভেঙিয়ে বলল,’হুহ!!এতোই সহজ??যেখানে ভাইয়া পারলো না সেখানে আমরা?? তাছাড়া আমরা তো কখনো দেখিনি ভাবিকে খুঁজব কিভাবে??’

তামিম ওদের দুজনের কথায় বিরক্ত। মেয়ে মানুষ খুব বেশি কথা বলে। কথার ঝুড়ি খুলে নেয়। সেখান থেকে একটার পর একটা কথা বের করতেই থাকে। তবে সে ঝুড়ি কোন সাধারণ ঝুড়ি নয়। কখনোই খালি হয়না সে ঝুড়ি। সবসময় ভর্তি থাকে। তামিম একটা ধমক দিয়ে বলল,’আলাদিনের যাদুর চেরাগ দিয়ে খুজবি তাহলেই পেয়ে যাবি।’
আরশি ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,’তোমাকে বেশি কথা বলতে হবে না। চুপ থাকো,নিজে তো খুজবে না তাই আমাদের ভাবি আমরাই খুঁজব।’

তারপর আর কেউ কোন কথা বলল না। তামিম ওদের ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে নিজেও চলে গেল।

অফিসের কাজ শেষে বেশ রাত করেই বাড়িতে ফিরল আরাদ। কাজে সে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। অনেক ভুল করে ফেলেছে আজকে। জোনায়েদ তা বারবার সংশোধন করেছে। বাড়ি ফিরতেই বেশ অবাক হয় আরাদ। আজকে সবাই জেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সবাই আরাদের জন্য অপেক্ষা করছে। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে গেল সে বলল,’সবাই জেগে আছো যে??কোন সমস্যা??’

নিলিমা বলে উঠলো,’দেখ আরাদ অনেক হয়েছে। মানছি তুই ওই মেয়েটাকে ভালোবাসিস। কিন্তু মেয়েটা তো চলে গেছে তাই না??সে আর ফিরবেও না। তাহলে তুই কেন এভাবে থাকবি??’
কপালে ভাঁজ পড়লো আরাদের বলল,’কি বলতে চাও তুমি??’
এবার হাসি বেগম মুখ খুললেন,’আমরা চাই তুই বিয়ে কর। নতুন জীবন শুরু কর। আমরা তোর ভালো চাই আরাদ তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,,,’

কথা শেষ করার আগেই হুংকার ছাড়লো আরাদ। ত্যাজি কন্ঠে বলল,’এসব বলার মানে কি??তোমরা বলবে আর আমি বিয়ে করবো? তোমরা কিছু জানো না??সবই তো বলেছি আমি। এমন তো নয় যে আমার সম্পর্কে তোমরা কিছুই জানো না??আমি ক্লিয়ার করে বলে দিচ্ছি যে আমি বিয়ে করব না। আমার শুধু সায়েনকেই চাই। ও যদি না আসে তাহলে ও ওকেই চাই আমার। সবচেয়ে বড় কথা হলো আজকে সায়েন যেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য আমি দায়ী। তাই বলছি এই বিষয়ে আমাকে আর টেনে এনো না।’

গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল আরাদ। ওর কথার পিঠে কেউ টু শব্দ করতে পারলো না। নিলিমা বেগম অলরেডি কেঁদে ফেলেছেন। হাসি বেগম শান্তনা দিচ্ছে। ইমজাদ আগে থেকেই ছেলে সম্পর্কে অবগত। আরাদকে সেও কিছু বলতে পারবে না। যদি আবার কিছু করে বসে?? একমাত্র ছেলে তার। হতাশ হয়ে তিনি রুমের দিকে পা বাড়ালেন। নিলিমা বেগম কেঁদেই চলেছেন। হাসি বেগম বোঝাচ্ছেন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে হলেও আরাদকে রাজি করাতে।

নিজের রুমে গিয়ে হাতঘড়িটা খুলে মেঝেতে ফেলে দিলো আরাদ। ঘড়িটা টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রাগ মাথায় চড়ে বসেছে ওর। বাড়ির লোকগুলো কেমন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এদের সামলানো কষ্টকর হয়ে যাবে। একে তো সায়েনকে খুঁজছে আরাদ আরেকদিকে মা আবার উঠে পড়ে লেগেছে বিয়ের জন্য। আরাদ বুঝেছে কাকিমনি ছাড়া এটা কেউ করতে পারে না। এখন দু’জনে মিলে ব্লাকমেইল করা শুরু করবে আরাদকে।

ঠিক তাই হলো। পরেরদিন থেকে শুরু হলো নিলিমা বেগমের ব্লাকমেইল। খাওয়া দাওয়া তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। রুমে দরজা আটকে বসে আছে। বাইরে থেকে সবাই ধাক্কাধাক্কি করছে কিন্তু সে দরজা খুলছে না। তনয়া বিরক্ত হয়ে আরশিকে বলল,’তোর মা একটু বেশি বেশি করছে। কোথায় ভাইয়াকে একটু বুঝবে তা না??’

‘তোর মা’ই তো নষ্টের মূল। বিয়ের কথা বলার দরকার কি ছিল?? এখন নতুন ড্রামা শুরু হবে।’

‘দুজনই একই রকম। দেখি কি হয়??’

আরাদ দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু ওর মা খুলছে না। শেষে আরাদ রাজি হলো বিয়ে করতে। খুশিতে নিলিমা বেগম দরজা খুললেন সাথে একগাদা মেয়েদের ছবি হাতে। ছবিগুলো আরাদের হাতে দিয়ে বললেন,’এর মধ্যে থেকে একটাকে চয়েজ কর তাহলেই হবে।’

আরাদ শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,’বিয়ে আমি করব!! কিন্তু আমার সময় প্রয়োজন। তাছাড়া আমাকে কিছুদিনের জন্য আমেরিকা যেতে হবে। নেক্সট ডিল ওখানে ফাইনাল হবে। তাই আমাকে সেখানে যেতে হবে। তাই আমার সময় চাই মা।’

নিলিমা বেগমের খুশী হারিয়ে গেল। কিন্তু কিছু বলারও নেই। তবে আরাদ রাজি হয়েছে এটাই অনেক। সময় নিক তাতে কোন সমস্যা নেই।
আরাদ চলে গেল।

একসপ্তাহ পর ওর ফ্লাইট। বাংলাদেশ ছাড়বে সে। মা’কে আটকানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আরাদের তখন মাথায় আসছিলো না। কিন্তু সায়েনকে খুঁজে পেতে হলে তো ওকে বাংলাদেশ ছাড়লে চলবে না!!! এ নিয়ে দোটানায় পড়ে গেছে আরাদ। অবশেষে সব দায়িত্ব জোনায়েদের ঘাড়েই পড়লো। জোনায়েদ আরাদকে আস্বস্ত করলো,সে সায়েনকে খোঁজার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সায়েন নাই বা ফিরলো আরাদের কাছে। অনন্ত ওর পরিবারের সবার কাছে ক্ষমা তো চাইতে পারবে আরাদ। যদিও এতে সবকিছু ঠিক হবে না তবুও ক্ষমা চাইবে আরাদ। নাহলে জীবনেও শান্তি পাবে না সে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,