ছদ্মবেশ পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
343

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

লা’শ গুলো ম’র্গে পাঠানোর ব্যাবস্থা করো।

বলেই পাশের রুমে গিয়ে টেবিলে রাখা চায়ের কাপ টা তুলে নেয় রুশান। জানালার সামনে দাড়িয়ে কপির মগে চুমুক দিলে পাশে তার এক সহকারি এসে দাড়ায়। রুশান তার দিকে তাকালে সে বলে,
– স্যার, আমার তো কিছুই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এতো গুলো লোককে ধরেও একটাকেও মুখ খোলাতে পারিনি। সবাই মনে হয় একটাই সংকল্প নিয়ে কাজ করছে যে, ভাঙবে তবুও মচকাবে না৷
রুশান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
– বিষয়টা এমন হলে এতো অত্যা’চারের পরও কেও না কেও মুখ খুলতো। কিন্তু এরা কেওই মুখ খোলেনি। হয়তো ওদেরকেও কোনো না কোনো ভাবে লক করে রাখা হয়েছে। কারণ যারা এসব ক্রাইমের পরিচালনা করে তারা কেউই কোনো বোকা মস্তিষ্কের মানুষ না। সব গুলোই তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। যারা আড়াল থেকেই এদের পরিচালনা করে। আর আমাদের টার্গেট হলো ওসব লোক গুলো। যারা এই খেলার ক্যাপ্টেইন।
পাশ থেকে লোকটা বলে,
– ইদানিং প্রায়ই ক্রা’ইমে দেখি ভার্সিটির কিছু স্টুডেন্ট ও জড়িয়ে আছে। আমি ভাবি ওরা এতো বড় বড় কাজে হাত দেওয়ার সাহস পায় কোথায় থেকে? আর ওদেরকে এসব কাজের’ই বা সন্ধান দেয় কারা?
রুশান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে,
– হয়তো বিভিন্ন ভার্সিটিতেও ওদের ছেলে পেলে মিশে আছে। এতে টিম মেম্বার বৃদ্ধি করছে তারা। জাতীয় পর্যায় থেকে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে তাদের জাল।
– কিন্তু স্যার আমার তো মনে হয় না এভাবে আমরা কিছু খুজে পাবো বলে। এর আগেও কয়েকজন অফিসার এসব কিছুর মুল খুজতে গিয়ে নিজেরাই হারিয়ে গেছে।
রুশান একটু বাকা হাসি দিয়ে বলে,
– তার জন্যই তো আমি সোজা রাস্তায় না হেটে বাঁকা রাস্তাটাই বেছে নিয়েছি। তবে এবার আমাদের নতুন প্লেন তৈরি করতে হবে। সামনে হয়তো অনেক বিপদ পরে আছে যা এখনো আমরা চোখেও দেখিনি। সো আমাদের প্লেন কে নতুন করে আরো স্ট্রং করে সাজাতে হবে।

বলেই ফোনের অন করে দেখে রাত ২ টা ৩০ বাজে। ওয়েল প্যাপারে সুন্দরি একটা মেয়ের ছবে দেখে মুচকি হেসে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো রুশানের পাশের লোক টা। যেটা ছিলো রিমার ছবি। লোকটার এমন হাসির মাঝেও একটা বিষয় মাথায় ঢুকে গেলো রুশানের।
কারণ লোকটা এতোক্ষন গম্ভির থেকে এখন পিকটা দেখা মাত্রই তার মুখের ভঙ্গিমা চেন্জ হয়ে গেলো। আজ হয়তো প্রথম খেয়াল করেছে তাই এমন হেসে দিলো। যদি না দেখতো তাহলে কখনোই হাসতো না।
এখন চিন্তার বিষয় টা হলো, যদি কোনো ভাবে তার শত্রু কেও তার সাথে মিশে গিয়ে এমন করে তার দুর্বলতা টা বুঝে ফেলে তাহলে তার কাজ টা খুব বেশিই কঠিন হয়ে পরবে। কারণ দুর্বল জায়গা খুজে পেলে প্রতিপক্ষকে বসে আনা খুব সহজ। তাই দুর্বলতা আড়ালে রাখাই ভালো।

ফোনের লক খুলে ওয়েল প্যাপার টা চেন্জ করে নিলো রুশান। কারণ সে চায় না এসবের মাঝে রিমার কথা কেউ জানুক বা তার কোনো ক্ষতি হোক।
,
,
অল্প কয়েক দিনেই রাজদের ডিপার্টমেন্ট এর প্রায় সকল স্যার দের প্রিয় হয়ে উঠেছে রাজ। তার আচরণ ও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ টা সকলেরই প্রিয় করে তুলেছে তাকে।

অনেক দিন পর আজ হসপিটাল থেকে কলেজে ফিরলো নাহিদ। তাও হুইল চেয়ারে বসে। ছাত্র রাজনৈতিক দলের সভাপতি ছিলো দেখে ভার্সিটির অনেক রাজনৈতিক ছেলে মেয়ে তার পেছনে আছে।
আর নাহিদের সুবাধে সেই জেলার এনপিও আসছে আজ কলেজে। সারা জেলায় ছাত্র রাজনৈতিক এর মাঝে রাজ করা ছেলেটা আজ হুইল চেয়ারে। অপমানে হসপিটালেই পদত্যাগ করেছে সে। তাই তাকে পদত্যাগএর কারণে বিদায় জানাতে এতো আয়োজন। এর পর সিলেক্ট করা হবে নতুন সভাপতি।

সব ডিপার্টমেন্ট এর ক্যাপ্টেন রা এমপি কে একে একে ফুলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তার মাঝে পদার্থ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট থেকে গেলো রাজ। তার প্রিয় সম্রাট স্যারই ডেকে নিলো তাকে।
রাজ ফুল নিয়ে এগিয়ে গেলো এনপির কাছে ফুল দিয়ে রাজ হাত মিলানোর জন্য হাত বাড়ালে এনপি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে বসে গেলো চেয়ারে। অপমানিত হয়ে সেখান থেকে সরে গেলো রাজ। বিষণ্ন মনে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে মিশে গেলো সেও। রাজের ভাবতেই হাসি পায় একদিন এই এমপি নিজেই তার সাথে হাত মিলাতে আসবে।

অরিন রাজের পাশে দাড়িয়ে বাহু দিয়ে রাজকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে হেসে বলে,
– দেখলে পাওয়ার চিরকাল থাকে না। কতো ছেলেকে মে’রেছে এই নাহিদ। হসপিটালেও পাঠিয়েছে অনেক কে। আর তোমার ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিনই তোমাকে মা’রলো। আর এখন নিজেই হুইল চেয়ারে বসে আছে। তবে কাজটা যেই করুক একধম ঠিক কাজই করেছে। এসব ছাত্র রাজনিতির কারণে সাধারণ ছেলে মেয়েরা ভার্সিটিতে ঠিক মতো শান্তিতে ক্লাসও করতে পারে না।
রাজ একটু হেসে বলে,
– আর কয়েকদিন অপেক্ষা করো, এর পর দেখবে এসব ছাত্র নেতাদের কি বেহাল দশা হয়।
অরিণ কিছু না বুঝে অবাক চোখে রাজের দিকে তাকালো। অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– মানে?
রাজ আবার হেসে বললো,
– এই দেখছো না নাহিদের কি অবস্থা। বাকিরাও এমন হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
– ওহ্।
,
,
দুইটা মেয়ে রেস্টুরেন্টে আসলো। কিছুটা দুরে একটা সিট খালি দেখে ওখানে যেতেই পাশ থেকে একটা ছেলে ইচ্ছে করেই একটা মেয়ের শরিরে হাত লাগালো। যার কারণে মেয়েটা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– এসব কোন ধরনের অভদ্রতা?
ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে বললো,
– ওহ্ সরি,,,
– সরি মানে? গায়ে হাত দিয়ে সরি বললেই সব সমাধান হয়ে যায়।
ছেলেটা এবার মেয়েটার হাত দরে বললো,
– গায়ে হাত দিলেই কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? এখন তো সামনেই ধরলাম, কি করবি এখন কর?
দুর থেকে পুরো বিষয়টা লক্ষ করলো তুষার। সামনে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে বলে,
– হোয়াট ইজ দিস ভাইয়া? এসব কোন ধরনের আচরণ।
ছেলেটা এবার তুষারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
– তোর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে আমার? সা’লা ফ’কিন্নি।
তুষার আবার সামনে গিয়ে বলে,
– রেস্টুরেন্টে সবার সামনে একটা মেয়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না আপনি।
ছেলেটা এবার তুষারের দিকে আঙুল তুলে বলে,
– আমার পরিচয় জানিস তুই?
তুষার মাছি তাড়ানোর মতো করে আঙুল সরিয়ে বলে,
– আপনার পরিচয় যেনে আমি কি করবো?

আর কিছু না বলেই তুশারের গালে একটা ঘু’ষি বসিয়ে দেয় ছেলেটা। আর মুখ দিয়ে অসংখ্য গালি-গালাজ করতে থাকে সে। যা ছিলো তুষারের কাছে অসহ্যকর। তাই সে রাগের মাথায় ছেলেটার বুকে লাথি বসিয়ে দিলে কয়েকটা টেবিল দুড়ে গিয়ে বলে ছেলেটা। হাতাহাতি শুরু হলে সবাই এসে তুষারকে টেনে একপাশে নিয়ে চলে যায়। আর ছেলেটা উঠে বলে,
– শুধু মাত্র একটা ফোন দিলে এমন দশটা রেস্টুরেন্ট ভে’ঙে গুরো গুরো করে ফেলতে দুশ মিনিট সময় লাগবে না। আর তুই আমার গায়ে হাত তুলিস?

হোটেল ম্যানেজার এসো ছেলোটাকে ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আর এসেই তুষারের গালে থা’প্পর মে’রে বলে,
– গেট আউট। আর কখনো যেন তোকে এই রেস্টুরেন্টের আশে পাশে না দেখি।

ছেলেটাও তুষারের দিকে আঙুল দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। যার অর্থ তুষার তার শিকারে পরে গেছে। এখান থেকেই তুষারের শত্রুদের সূত্রপাত হয়েছিলো।

কাস্টমারের সাথে এমন আচরণের জন্য ম্যানেজার গালাগাল করে বের করে দিলো তুষারকে। তুষার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে ইউনিফর্ম খুলো বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। রাস্তার এক পাশ থেকে হাটছে। মাসের আর ৫-৬ দিন বাকি ছিলো। তবুও অর্ধেক মাসের বেতনটাও পেলো না সে।

বাসায় আসার পর থেকেই বিষণ্ন মনে বসে আছে তুষার। মাঝে মাঝে চোখের জল মুছে নিচ্ছে সে। অনেক কষ্টে জবটা ম্যানেজ করেছিলো। প্রতি মাসে কিছু টাকা জমিয়ে আবার বাড়ির জন্যও পাঠাতে হতো তাকে। আর এখন সেটাও চলে গেলো। এখন আরেকটা জব খোজা, নিজের পড়াশুনার খরচ চালানো, মায়ের অপারেশনের জন্য টাকা জমানো। সব কিছু কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। আর চাইলেও সহজে আর এতো ভালো জব খুজে পাবে না সে।

তুষারের মন বিষণ্ন দেখে নিবিড় পাশে বসে কারণ জানতে চাইলো। তুষার সবটা খুলে বললো তাকে। পাশে রাজও ছিলো।
সব শেষে তুষার কেঁদে বললো,
– মায়ের অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আর আমার বাবা নেই। কয়েক বছর আগে মা’রা গেছে। আমাকেই পড়াশুনার পাশাপাশি সংসার চালাতে হয়। এখন তো সেই পথটাও বন্ধ হয়ে গেলো। গত এক বছর ধরে এখানে ওখানে কাজ করে মায়ের অপারেশনের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আর এখন? এখনো দু’লাখের মতো জমানো বাকি। আমি এখন কিভাবে এতো টাকা জোগাড় করবো?

রাজ পাশ থেকে তার কাধে হাত রেখে বললো,
– মন খারাপ করো না। আমরা তো আছি। তোমার মা তো আমাদেরও মায়ের মতো তাই না? প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে তোমার জন্য একটা জব খুজে দিবো। ইন’শা আল্লাহ্ একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।

বলেই সেখান থেকে উঠে চলে গেলো রাজ। রুমে গিয়ে লেপটপ টা নিয়ে বসলো । কিছুক্ষন পর তুষারের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।

‘কনগ্রেচুলেশন তুষার আহমেদ, সাগরপারি সংস্থা থেকে প্রতি বছরই আমরা লটারির মাধ্যমে পাঁচ জন সেরা ভাগ্যবান সিলেক্ট করে নিই। আর এই বছরের সেই পাঁচ জনের মাঝে একজন হলেন আপনি। তাই সাগরপারি সংস্থা থেকে আপনার একাউন্টে ৫ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে। একাউন্ট চেক করে যদি টাকা পেয়ে থাকেন তাহলে Y লিখুন। আর যদি টাকা এখনো না পৌছায় তাহলে N লিখে সেন্ট করুন। ধন্যবাদ।’

তুষার যেন অবাক হয়ে রইলো। সাগরপারি নামের কোনো সংস্থা আছে বা তারা প্রতি বছর মানুষকে এসো টাকা দান করে, তা এই প্রথমবার শুনলো সে। তবুও একাউন্ট চেক করে দেখে সত্যিই তার একাউন্টে কিছুক্ষন আগে পাঁচ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে। যা দেখে কিছুক্ষন স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো তুষার। এটা কিভাবে সম্ভব?

To be continue……..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রাতের বেলায় ছাদের এক কোনে পা ঝুলিয়ে বসে আছে রাজ। হালকা শীতল বাতাস যেন শরিরে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে একটু পর পর। তার চোখে দেখা কিছু ঘটনা যেন এখনো চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে আছে।

প্রায় বছর খানেক আগে ঘটনা সেটা।
চার দিকে নানান ঘটনা ঘটে চলছিলো প্রতিদিন। অনেক মানুষ নি’খোজ হওয়ার ঘটনা কানে আসতো প্রায়ই। সি’আই’ডির কিছু টিম রহস্য খুজতে গেলে কয়দিন পর তারাও কোথায় উধাও হয়ে গেলো তার কোনো খোজ মিলেনি।

রাজ তখনও কিছু কারণে সাধারণ মানুষদের সাথে মিশেই চলতো। পড়ালেখা শেষ করে অনেক বছর পর মাতৃভূমিতে পা রাখায় পর্যটক এর মতোই সারা দেশ ভ্রমন করছিলো। মাতৃভূমি কে তখনো পুরোপুরি দেখা বাকি ছিলো।

অঞ্চল টা ছিলো গ্রাম অঞ্চল। কাধে ব্যাগ নিয়ে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে ছিলো রাজ। হটাৎ খেয়াল করলো কিছু মানুষ দৌড়ে দৌড়ে একটা বাড়িতে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছে। কৌতুহল নিয়ে রাজও এগিয়ে গেলো সেখানে।
ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলে দেখে বাড়ির সামনে উঠানে তিনটা লা’শ শুয়ে আছে। মধ্য বয়সি একজন মহিলা, আর ১৮-২০ বয়সি একটা মেয়ে, আর ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলে। বয়স হয়তো এক বছরের মতো হবে।

রাজ আশে পাশের মানুষদের কথায় বুঝতে পারে দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মহ’ত্যা করেছে মহিলাটি।
মহিলাটার নাম ছিলো সালমা। আর যুবতি মেয়েটার নাম মিম।

বছর খানেক আগে মিম এর ভাই মানে সালমার ঘরে সেই ছোট বাচ্চাটার জন্ম হয়েছিলো। সালমার স্বামী ছিলো একজন দিনমুজুর। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তার উপর আরো পরিবারে আরেকটা সদস্য বেড়েছে। মেয়েটারও বিয়ের বয়স হয়েছিলো। অভাব ছিলো টেনশনের মুল কারণ।
এর পর একজন সালমার স্বামীকে বলে দেশের বাইরে চলে যেতে। ওখানে কাজ করে ভালো ইনকামের সাথে সংসারে অভাব অনটনও দুর হবে। আর সামনে মেয়ের বিয়ে দিতেও অনেক খরচা-পাতির ব্যাপার।

সালমার স্বামী বিষয়টা শুনার পর থেকেই ওটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। এর পর দু’দিন পর একটা সিদ্ধান্ত নিলো সে। গ্রামের একজন লোক ছিলো সুধের উপর টাকা দিতো। প্রতি লাখে বছরে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই হিসেবে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো দেশের বাইরে থেকে কাজ করে অল্প অল্প শোধ করে দিবে।

এরপর সালমার স্বামী লোকটার সাথে যোগাযোগ করে তাকে টাকা গুলো দিয়ে কিছুদিন পর চলে যায় দেশের বাইরে। এর পর আর খোজ পাওয়া যায় নি তার। এদিক ওদিক ছুটেও স্বামীর কোনো খোজ পেলো না সালমা।
অনেকেই বলেছিলো সে পরিবার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এখন কোনো যোগাযোগ রাখছে না। সহজ ভাষায় যাকে বলে পালানো।
কিন্তু সালমার বিশ্বাস হলো না বিষয় টা। তার বিশ্বাস ছিলো তার স্বামী এমনটা কখনোই করবে না।

অপেক্ষা করতে করতে কয়েক মাস পার হয়ে গেলো একটা ফোনও এলো না। থানায় গিয়ে খোজ নিলে তারাও চেক করে বললো, সে ওই দিন সকাল ৫ টা ৪০ এর একটা বিমানে দেশের বাইরেই গিয়েছে।

ওদিকে যার থেকে ঋণ নিয়েছিলো সেই লোক টা টাকার জন্য জোড় দিতে থাকে। সময় নিতে নিতে আরো কয়েক মাস পার হয়ে যায় সালমার। সেই সাথে সংসার টানতেও হিমশিম খেতে হচ্ছিলো তাদের। একবেলা খায় তো অন্য বেলায় জুটে না। তার উপর আবার এত গুলো ঋণের টাকা।

এর পর লোকটা একটা শর্ত দেয় হয়তো সালমা টাকা পরিশোধ করবে নয়তো তার যুবতি মেয়ে মিম’কে রক্ষিতা করে তার কাছে পাঠাতে হবে। তাও এক দিন দুই দিন না। লোকটা যখন চাইবে তখনই মিম তার রক্ষিতা হতে হবে। মিমের বয়স ছিলো ১৯ বছর। আর লোকটার ছিলো ৫০ এর কাছাকাছি। মেয়ের বয়সি মিমকে রক্ষিতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলো সে। কিচ্ছু বলতে পারেনি সালমা। কারণ ৪ লক্ষ টাকা সুধে বেড়ে এখন ৫ লক্ষ এর কাছাকাছি চলে গেছে। তাদের থাকার ছোট্ট জায়গা টা বেচে দিলেও তার অর্ধেক হবে না।

এক পর এতো কিছু আর সইতে না পেরে মেয়ে মিম ও এক বছরের ছেলেকে নিয়ে আত্মহ’ত্যা করে সালমা। এলাকা বাসি কয়েকজন সুদ দেওয়া ওই লোকটার বিরুদ্ধে মা’মলা করলেও কে’স বেশি দিন টিকেনি। লোকটা কৌশলে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নিয়েছিলো সব। যে স্বামী টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সেটা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহ’ত্যা করেছে সালমা।

পাশের বাড়ির একজন লোকের থেকে বিস্তারিত জানলো রাজ। ঘটনা টা শুনার পর লা’শ গুলো ছবি চোখের সামনে ভেষে উঠতেই চাপা কষ্ট অনুভব হয় রাজের।
এর পর ঠিক করলো সালমার স্বামীকে খুজে বের করবে। তারপর খোজ নিতে নিতে ওই দিন ওই বিমানের সকল যাত্রীদের তথ্য নিলো সে। যারা প্রবাসের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করেছিলো। কিন্তু রাজ সবচেয়ে আশ্চর্য হয় যে, ঐ দিন ওই বিমানে করে যাওয়া সকল প্রবাসির বাড়িতে খোজ নিয়ে জানতে পারে যে তারাও একই কাহিনির শিকার। সবাই বাড়ি থেকে যাত্রা করার পর এই পর্যন্ত ফ্যামিলির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।

সন্দেহ টা তখন থেকে ঢুকেছিলো রাজের মাথায়। কারণ এতো গুলো মানুষ এমনি এমনি হারিয়ে যায় নি। নিশ্চই কোনো কাহিনি লুকিয়ে আছে। আর সবাই অভাবের স্বীকার হয়ে বিদেশ যাওয়ার লোভে না বুঝেই ফ্রট লোকের হাতে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলো।

এর পর এমন আরো অনেক কিছু দেখলো রাজ। কেউ গু’ম এর এর শিকার আবার কেও ফ্রট লোকের শিকার। হটাৎ কয়দিন পর পর ছোট ছোট বাচ্চা হারিয়ে যাওয়া। চার দিকে বাবা মায়েরা বাচ্চাদের কে বাসার মাঝে বন্ধি রেখে দিতো এসব খবর শুনে। যা গ্রাম অঞ্চলে ছেলেধরা নামে পরিচিত।

অপরাধিদের অনেক প্লেন আছে। তারা একটা আতঙ্ক বেশি দিন রাখে না। কয়েক দিনে বেশ কিছু বাচ্চা নিয়ে গেলে এর পর তা অফ করে দিতো। কয়দিন পর শুরু হতো নতুন আতঙ্ক। যার কারণে আইনের লোকেরাও কোনো কিছুর কুল কিনারা খুজে পেতো না।
,
,
নিবিড় পাশে এসে দাড়ালে ভাবনার ঘোড় কাটে রাজের। নিবিড় তার পাশে বসে একটু দুষ্টো হাসি দিয়ে বলে,
– কার কথা ভাবছো রাজ? অরিন নাকি আরোহি?
রাজ একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– এমনটা মনে হওয়ার কারণ?
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– মনে হলো আর কি। এতো গভির ভাবে তো কেউ তাদের প্রেমিকার কথাই ভাবে।
রাজ এবার সোজাসুজি ভাবে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার মাথায় কি মেয়ে ছারা আর কিছু আসেনা?
নিবিড় বসা অবস্থায় সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– মাথায় আসার দরকার কি? আমার হৃদয়ের ওয়েলপ্যাপারেই তো মেয়েদের ছবি টাঙানো।
বলেই একটা গান ধরে,

‘আহা কি জাদু করলি, ওরে ও পাগলি,
তোদের ভুলে থাকা যায় না।
আমি যেদিকে তাকাই তোদের দেখতে পাই,
চার দিকে মনে হয় আয়না।’

রাজ একটু মুচকি হেসে বলে,
– ব্রাদার আমি কিন্তু তোমার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। আর বেশি দুরে না।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– আমার ভবিষ্যৎ উজ্জল হয়ে আয়নায় চকচক করে বলেই সুন্দরি মেয়েরা আমার ভেতর নিজেকে দেখতে পায়।
রাজ খুব বেশি হাসে না প্রয়োজন ছারা। তবুও নিবিড়ের কথায় হাসি পাচ্ছে তার। কি যে আছে এই ছেলের কপালে। ভাবতেই মায়া লাগে খুব।
নিবিড় আবার বলে,
– আচ্ছা, তোমার বাড়ি না গ্রামে? এবার কিন্তু তুমি বাড়ি গেলে তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে যেতে হবে। আমি কখনো গ্রামে যাইনি।
রাজ এবার কিনার থেকে পা তুলে ছাদে উঠে দাড়িয়ে বলে,
– খেয়েছো?
– না,,,
– চলো খেতে হবে। ক্ষুধা লেগেছে খুব।
বলেই হাটা ধরলো রাজ। পেছনে নিবিড় উঠে হাত হালকা দুই দিকে নিয়ে বির বির করে বলে,
– হটাৎ কি হলো আবার?
,
,
দরজার ঠক ঠক আওয়াজ কানে আসলে তইয়্যবা বেগম ভেতর থেকে উচু গলায় আওয়াজ করে,
– কে?
দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ আসে,
– মা আমি তোমার তুষার।
তুষারের ছোট বোন তিশা তখন পড়ছিলো। ভাইয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভাইয়া, তুমি এসেছো?
তুষার একটু মুচকি হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– হুম চলে এসেছি। এবার বেশ কয়েকদিন থাকবো তোদের সাথে।
তীসা হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– সত্যি?
– হুম,,
বলেই বোনকে নিয়ে ভেতরে আসলো তুষার। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভালো আছো মা?
তইয়্যবা বেগল ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
– ছেলেকে দেখলে প্রত্যেক মায়ের মনই ভালো হয়ে যায়।
তুষার একটু হেসে পাশে খাটের উপর বসলো। দেখে ছোট বোন পাশে দাড়িয়ে গালে হাসি রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার বুঝতে পেরে ব্যাগ থেকে চকলেটের বক্স টা বের করে তিশাকে দিয়ে বলে,
– কম করে খাবি। নাহলে দাতে পোকা ধরে যাবে।

তইয়্যবা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ভার্সিটি বন্ধ দিয়েছে নাকি বাবা?
– না ছুটি নিয়ে এসেছি। এবার তোমার অপারেশন টা শেষ করে তারপর একেবারে যাবো মা।
তইয়্যবা বেগমের চোখ দুটু ছলছল করে উঠলো। ছেলে মনে হয় অনেক বড় হয়ে গেছে।
,
,
ওদিকে ভার্সিটিতে কয়েকটা ছেলে তুষারের ছবি নিয়ে একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করছে তাকে কোথায় দেখছে নাকি?
কিন্তু সবারই একই উত্তর, দেখেনি।
বেশ কিছুক্ষন খোজাখুজি করে একটা ছেলে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করে বলে,
– ভাই, সালাকে কোথাও খুজে পাইনি। ভার্সিটিতেও খুজেছি এখানেও আসেনি। মনে হয় ভয়ে কোথাও পালিয়েছে।
অপর পাশ থেকে লোকটা বলে,
– যেখানেই পালাবে, খুজে নিয়ে আয়। গর্তের ভেতরে ঢুকলেও টেনে নিয়ে আমার সামনে হাজির করবি। আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার সাহস টা কোথায় পায়, তা একটু দেখে নিই আমি।

To be continue…….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রাজ আর অরিণ গেট পেড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে লোকটা ফোন রেখে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। রাজের সামনে তুষারের ছবিটা ধরে বলে,
– এই ছেলেটাকে দেখেছেন কোথাও?
রাজ ছবিটা হাতে নিয়ে লোকটাকে বললো,
– তাকে খুজছেন কেন?
লোকটা একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– দেখেছেন কিনা সেটা জিজ্ঞেস করছি। এতো কথা জিজ্ঞেস করতে বলিনি আপনাকে।
রাজ জানলেও চুপ করে রইলো। পাশ থেকে অরিণ ছবিটা নিয়ে বললো,
– এটা তুষার না? তোমার ফ্রে,,,,

রাজ মুহুর্তেই অরিণের থেকে ছবিটা নিয়ে নিলো। আর হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে অরিণকে।
তারপর লোক গুলো তে বললো,
– চিনি ছেলেটাকে। আমাদের সাথে পড়ে ছেলেটা। গত দু’দিন ধরে দেখছি না তাকে।

নিলয় ও নিবিড় ভেতরে এসে রাজকে কয়েকটা লোকের সাথে দেখে সেখানে এগিয়ে গেলো। নিবিড় আগ বারিয়ে বিষয়টা জানতে চাইলো।
যা বুঝলো তাতে মনে হলো লোক গুলো তুষারকে মা’রার জন্য খুজে বেড়াচ্ছে। তাই জানলেও তাদেরকে তুষারের ঠিকানা দিলো না।

পাশ থেকে মুখ পাতলা নিলয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিবিড় বুঝতে পেরে নিলয়ের হাত ধরে বলে,
– আমাদের না একটা দরকারি কাজ ছিলো? ক্লাস শুরু হলে তো সব ভেস্তে যাবে, চল চল,,,,
বলেই নিলয়কে টেনে অনেকটা দুরে নিয়ে গিয়ে বলে,
– জায়গা বে-জায়গা বুঝিস না, সালা মদন। যেখানে সেখানে তোর পাটা গাল টা খুলে দিতে হবে?
নিলয় বলে,
– আরে দেখছিস না ওরা তুষারের খোজ করছিলো। তো আমরা তো জানি তুষার কোথায়?
নিবিড় কপালে হাত রেখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,
– ওরা তুষারকে জামাই বানাতে খুজে বেড়াচ্ছে না। মা’রতে খুজছে। এখন তুই যদি ওদেরকে গিয়ে বলে দিস যে, আমি জানি কোথায়, আর সে আমাদের বন্ধু। তাহলে সবার আগে আমাদের ধরে বানাবে। সো, চুপ থাক। কেও জিজ্ঞেস করলে বলবি যে, জানিনা।
নিলয় অসহায় ভাবে বললো,
– কিন্তু মিথ্যা বলার তো মোহা পাপ।
নিবিড় এবার রেগে বলে,
– আরেকটা কথা বলবি তো, তোর সততা তোর পাদ-দেশ দিয়ে দিবো সালা।
,
,
রাতে বেলকনিতে বসে ঐ দিন বিয়ে বারিতে নাম্বার নেওয়া মেয়েটাকে ফোন দিলো নিবিড়। এর আগেও কয়েকবার কথা বলেছে মেয়েটার সাথে। এখন প্রায়ই হালকা পাতলা কথা হয় তাদের। ধরতে গেলে একটা ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক হয়ে গেছে।

একবার কল করতেই রিসিভ করলো মেয়েটা। মেয়েটা নিবিড়ের গলা শুনেই বললো,
– আচ্ছা আপনার মতলব টা কি বলুন তো। এতো ঘন ঘন ফোন দেন কেন?
নিবিড় একটু আহ্লাদী স্বরে বলে,
– আমি কল করে দেখে কি আপনি বিরক্ত হন? বিরক্ত হলে আর কখনো ফোন দিবো না।
মেয়েটা ওপাশ থেকে বলে,
– আমি কি সেটা বলেছি নাকি? মানে একটা মানুষ আরেকটা মানুষের সাথে এভাবে যোগাযোগ রাখার পেছনেও তো কোনো কারণ তাকে তাই না? ওটাই জিজ্ঞেস করেছি।
নিবিড় একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
– ইদানিং কেন যানি মনে হচ্ছে আর বেশি দিন বাচবো না।
মেয়েটা একটু অবাক হয়ে বলে,
– কেন?
– মাঝে মাঝে মনে হয় বুকের উপর খুব ভাড়ি কিছু বসে আছে। আর তা বার বা আ’ঘাত করে যেন বুকটাকে ভেঙে চুরমার করে ফেলছে।
মেয়েটা একটু সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো,
– কি বলেন? এতো সিরিয়াস বিষয় হলে ডাক্তার দেখাচ্ছেন না কেন?
নিবিড় আবার বলে,
– সব অসুখ কি আর ডাক্তার সারাতে পারে বলুন?
– ব্যাথা কি প্রায়ই হয় নাকি হটাৎ হটাৎ?
নিবিড় এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলে,
– তোমার সাথে কথা না বললেই এমন হয়।
মেয়েটার সিরিয়াস ভাব মুহুর্তেই অবাক ভাব হয়ে গেলো। সাথে লজ্জাও পেলো কিছুটা। মেয়েটাকে নিরব থাকতে দেখে নিবিড় বলে,
– যখন তোমার সাথে কথা বলি, তখন মনে হয় বুকের ভেতর থেকে এক ঝাক পাখি উড়ে চলে গেলো। নিজেকে হালকা মনে হয় খুব। প্রান ভরে নিশ্বাস নিতে পারি তখন।
মেয়েটা এবার লজ্জা কাটিয়ে একটু হাসি দিয়ে বলে,
– কথা না বললে তো আর এমন রোগে আক্রান্ত হতেন না, তাই না?
নিবিড় বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,
– তাহলে একজন গায়েবি হ’ত্যাকারি হিসেবে তোমার নামও ইতিহাসের পাতায় লিখা হয়ে যাবে।
নিবিড়ের কথায় হো হো করে হেঁসে উঠে মেয়েটা। আর হাসতে হাসতে বলে,
– কয়টা মেয়ে পটিয়েছেন জীবনে?
নিবির অবাক হয়ে বলে,
– মানে?
– মানে বুঝাতে চাইছি, আপনি যে প্রতিদিন আমার সাথে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলেন। এসব শুনে তো মনে হয় না আপনি এসবে নতুন, মনে হয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ আপনি।
নিবিড় এবার একটু অভিমানি স্বরে বলে,
– তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি প্লে-বয়? আসলে তোমরা মেয়েরা এমনই। কখনো সত্যিকারের ভালোবাসা টা বুঝতে না। আর তুমি ভাবছো আমি তোমাকে পটানোর জন্য এসব বানিয়ে বলছি? মোটেও না। আমি শুধুই আমার জীবনে তৈরি হওয়া প্রথম অনুভূতি গুলো তোমার সাথে শেয়ার করছি। আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো করবো না অনুভূতি শেয়ার। যে অনুভূতি বুঝেনা তাকে বলেই বা কি লাভ?

বলেই ফোন কেটে দিলো নিবিড়। বাইরের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো সে। মেয়েটার মাঝে নিশ্চই এবার একটু একটু করে ভাবনা তৈরি হবে।

হটাৎ মনে হলো তুষারের কথা। তুষারের নাম্বারে ফোন দিলো সে। তুষার তখন ছোট বোনের সাথে লুডু খেলছিলো। হটাৎ নিবিড়ের ফোন আসায় ফোন টা নিয়ে বাইরে এসে বসলো সে।
– কিরে কেমন আছিস, লাভ গুরু?
নিবিড় বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ফাজলামি করিস না। সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ফোন দিয়েছি।
– কি?
– যেই ছেলেটাকে মে’রেছিলি ওর বাবা তো অনেক পাওয়ারফুল মানুষ। আর খুব ডেঞ্জারাস।
তুষারের মুখটা ফেকাসে হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। নিবিড় কে জিজ্ঞেস করে,
– কেন কি হয়েছে?
– তোকে সব জায়গায় খুজে বেড়াচ্ছে। ভার্সিটিতে গিয়েও একে একে সব জায়গা খুজেছে আজ। যে কোনো যায়গা থেকে তোকে খুজে বের করবে তারা।
– এখন কি করবো আমি?
– এক কাজ কর, কয়েকদিন চুপচাপ বাড়িতেই থাক। এখন একধম ঢাকায় আসিস না। আমরা দেখছি কিছু করা যায় কি না?
– তারা অন্যায় করবে আর আমরা কিছু বললেও দোষ?
– আচ্ছা বাদ দে, আন্টি কেমন আছেন?
– হুম, ভালো আছে। আজকে৷ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। দুই এক দিনের মাঝেই অপারেশন করিয়ে নিবো। এখনো সব মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। বাকিটা আল্লাহর হাতে। দোয়া করিস।
– হুম আন্টিকে আমার সালাম জানাবি।

নিবিড় ফোন রাখার পর রুশান পাশে এসে বলে,
– তুষারকে কারা খুজছে?
নিবিড় সবটা বললো তাকে। রুশান বাইরে ছিলো দেখে বিষয় টা জানতো না। এখন নিবিড়ের কাছে শুনলো পুরো কাহিনি।
পুরোটা শুনে রুশান আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো নিবিড়ের পাশে। আর ফোনে মেসেজের শব্দ আসতেই ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে নিবিড়।
,
,
রাজ পড়া বুঝাচ্ছে আর আরোহি আঙুলে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ তা লক্ষ করলে আরোহির দিকে তাকিয়ে বলে,
– কিছু কি বলবে?
আরোহি এবার অভয় পেয়ে বলে,
– আগামি কাল আমাকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবেন?

রাজের চোখ দুটু যেন বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বলে কি এই মেয়ে? হোম টিচারের সাথে সিনেমা দেখতে চায়? কি সাংঘাতিক।
রাজের এমন অবাক ভঙ্গি দেখে আরোহি বলে,
– এমন হাবার মতো চেয়ে আছেন কেন? আমি কখনো হলে গিয়ে সিনেমা দেখিনি। খুব ইচ্ছে আছে দেখার। আর কালকেও আম্মু বাসায় থাকবে না। নানুকে দেখতে যাবে। তাই আপনার কাছে নিজের ইচ্ছে টা শেয়ার করলাম।

মা কালকে বাসায় থাকবে না। কথাটা শুনতেই রাজ অন্য চিন্তায় ডুবে গেলো। আরোহির বকবক গুলো আর কানে পৌছাচ্ছে না তার। একটা সাদা কাগজ নিয়ে তার মাঝে কিছু লিখলো। তারপর প্রতিদিন তাকে নাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে ডেকে ট্রে টা নিয়ে যেতে বলে। পাশ থেকে আরোহি বলে,
– আপনি চলে গেলে সে সব কিছু গুছিয়ে নেয়। এখন ডাকতে হবে না।
রাজ আরোহিকে বলে,
– এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো তো।
আরোহি শুনেই খুশি মনে উঠে চলে গেলো পানির জন্য। সেই সুজুগে রাজ, সেই মেয়েটাকে ট্রে এট সাথে কাগজটাও দিয়ে বলে,
– এটা সোজা গিয়ে ম্যাডাম কে দিবে।
এর পর মেয়েটা চলে গেলো আর আরোহিও পানি নিয়ে আসলো।

কাজের মেয়েটা ছিলো একটু চালাক। দরজার বাইরে এসে কাগজ টা খুলে দেখে এর মাঝে কি আছে?
কিন্তু হতাশ হতে হলো তাকে। কাগজের লেখা গুলো ইংলিশে থাকায় পড়তে পারলো না সে। তাই কাগজ টা আবার আগের মতো করে সোজা ম্যাডামের কাছে চলে গেলো মেয়েটা।
রাজ আগেই বুঝতে পেরেছিলো এই বাড়ির সবাই খুব কেয়ারফুলি চলা ফেরা করে। তাই সব কিছু ইংলিশে লিখলো যাতে মেয়েটা দেখলেও কিছু বুঝতে না পারে।

আরোহি পানির গ্লাস টা সামনে দিয়ে হাসি মুখে বলে,
– এবার বলুন, কালকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাবেন তো আমাকে?
রাজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আরো আধা ঘন্টা বাকি আছে। তাই একটু চালাকি করে বইটা নিয়ে বেশ কিছু পড়া সিলেক্ট করে নিলো। যা আধা ঘন্টায় কমপ্লিট করা সম্ভব না।
আর সেগুলো আরোহিকে দেখিয়ে বলে,
– আধা ঘন্টার মাঝে এগুলো কমপ্লিট করে দিতে পারলে নিয়ে যাবো, নয়তো না।
আরোহি একটুও চাপ নিলো না। যা দেখে অবাক হলো রাজ। আরোহির মনোযোগ এখন সোজা বইয়ের ভেতর। আর রাজের চিন্তাধারা মিথ্যা করে আধা ঘন্টার আগেই সব কমপ্লিট করে ফেললো আরোহি। অথচ অন্য সময় হলে এই পড়া দুই দিনেও কমপ্লিট করতে পারতো না সে। মেয়েটার মেধা আছে মানতে হবে। তবে তা খরচ করতে চায় না।
,
,
বড় একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো রুশান। তুষার যেই ছেলেটাকে মে’রেছিলো ওই ছেলেদের বাড়ি এটা।
সানগ্লাস খুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। ভেতরে গিয়ে দেখে অনেক মানুষ। কয়েকজনের হাতে লাঠি। তারা একটা লোককে বেধরম মা’রছে। লোকটার শরির থেকে রক্ত ঝড়তে শুরু করলো তবুও তারা থামছে না।
লোকটা ছিলো আইসক্রিম এর দোকানদার। তুষারের সাথে ঝামেলা হওয়া ছেলেটা তার দোকানে আইসক্রিম খেয়ে টাকা না দেওয়ায় লোকটা টাকা চেয়েছিলো। আর ছেলেটা বাজে ব্যাবহার করলো লোকটা প্রতিবাদ করেছিলো। তার শাস্তি স্বরুপ ধরে এনে এভাবে মার’ধর করছে তাকে।
আর ছেলেটার বাবা একটা চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে আর বিষয় টা উপভোগ করছে।

আর ছেলেটা রুম ঘর থেকে বেড়িয়ে তাদের সামনে মা’র খাওয়া লোকটা ছুটে ছেলেটার পা ধরে বলে,
– ভাই, আর জীবনে এমনটা করবো না। প্রয়োজনে প্রতিদিন আমার দোকানে এসে যা আইসক্রিম লাগে নিয়ে যাবেন। কোনো টাকা দিতে হবে না। আজকের মতো মাপ করে দিন আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই।

ছেলেটা একটু হাসলো। আর ছেলেটার বাবা তার লোক গুলোকে ইশারা দিকে তারা ছেরে দেয় ওই আইসক্রিম ওয়ালাকে।
তারপর রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি চাই তোমার?
রুশান দুই হাত পকেটে গুজে বলে,
– বাড়িতে মেহমান আসলে কি এভাবে দাড় করিয়েই কথা বলেন?
লোকটা এবার হাত দিয়ে পাশের একটা চেয়ারে ইশারা করে বলে,
– বসো এখানে। আর কি কাজে এসেছো তা বলো।
রুশান এবার পাশে না গিয়ে এক হাতে চেয়ার টা টেনে লোকটা মুখোমুখি হয়ে বসে। যা দেখে আশে পাশের সবাই অবাক হয়ে তাকায় রুশানের দিকে।
রুশান পায়ের উপর পা তুলে বসে এক হাতে সানগ্লাস টা খুলে বালি তাড়ানোর মতো করে ফু দিয়ে বলে,
– তুষার আমার ফ্রেন্ড। শুনলাম তুষারকে নাকি আপনার পোলাপান খুজে বেরাচ্ছে। আপনি নাকি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু তুষার একটা কাজে আটকা পরে যাওয়ায় আপনার আমন্ত্রন গ্রহন করতে পারেনি। তার বদলে আমি এসেছি। কিছু বলার থাকলে আমাকে বলতে পারেন।

বলেই সানগ্লাস টা মুছে সামনে থাকা টেবিলে রাখলো রুশান। আর লোকটার দিকে তাকায় উত্তরের অপেক্ষায়। আশে পাশে বসে থাকা সবাই দাড়িয়ে যায় রুশানের কথা শুনে। কিন্তু তাতে একটুও ভ্রু-ক্ষেপ হলো না রুশানের। পায়ের উপর পা তোলা অবস্তায় সামনে থাকা সরবতের গ্লাস টা মুখে তুলে নিলো সে।

To be continue……..