ছদ্মবেশ পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
320

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

যেখানে এতো মানুষ ভয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে সেখানে রুশানের এতো সাহস দেখে সবাই হতবাক।
সামনে বসে থাকা লোকটা রুশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমাকে চেনো তুমি?
রুশান তার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি কোথাও যাওয়ার আগে তার সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে তারপরই যাই।
লোকটা পেকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন জ্বালিয়ে রুশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– অনেক সাহস তোমার। আই লাইক ইট।
রুশান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
– আপনি লাইক করুন বা না করুন তাতে আমার কিছু আশে যায় না। এখন কাজের কথায় আসুন। তুষারকে কেন খুজছিলেন।
– এখানে এসেছো যেহেতু সব যেনেই এসেছো নিশ্চই। এখানে আসার পর থেকেই দেখছি খুব বড় বড় কথা বলছো। যদি এখান থেকে বেড় হতে না পারো তখন?

লোকটার কথায় একটু হাসলো রুশান। তখনই একটা কল এলো লোকটার ফোনে। ফোন রিসিভ করে কথা বলার পর অবাক চোখে রুশানের দিকে তাকালো লোকটা।
রুশান চেয়ার ছেরে উঠে দাড়ালো। সানগ্লাসটা পরে একটু মুচকি হেসে বলে,
– তুষার ভাইয়ের মতো হয় আমার। আজ আসি বস, হয়তো কোনো এক সময় আবার দেখা হয়েও যেতে পারে। শুধু চেহারা টা মনে রাখবেন।
বলেই হাটা ধরে রুশান। পেছন থেকে একটা ছেলে রুশানকে মা’রার জন্য প্রস্তুত হতেই লোকটা হাতে ইশারায় থামতে বলে তাকে। তারপর চুপচাপ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো রুশানের দিকে।
,
,
আজ ফরিদা আন্টি অসুস্থ। সকালে ডাক্তার এসে দেখে গিয়েছিলো। তাই কেউই কলেজে যায়নি আজ। নিবিড় ফরিদা আন্টিকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে বলে, আজকে রেস্ট এ থাকতে।
তারপর কিচেনে গিয়ে দুপুরের জন্য রান্না বসায়। নিবিড়ের একটা গুন হলো, সে ভালো রান্না করতে পারে। আর পাশে নিলয় কাটাকাটি করে সাহাজ্য করছে তাকে।

রান্না মোটামুটি হয়ে গেলে নিলয় ঢাকনা উঠিয়ে মুগ্ধতার সাথে বললো,
– বাহ্ স্মেল টা তো দারুন আসছে। যতটা আশা করেছিলাম তার থেকে অনেক ভালো হয়েছে রান্না।
নিবিড় পাশ থেকে হেসে বললো,
– কেন, তোর ধারণা কি ছিলো?
– আমার ধারণা ছিলো, রান্না করতে এসেছিস হয়তো টুকটাক কিছুটা পারিস। কিন্তু এতো ভালো রান্না করতে পারিস তা জানতাম না। তোর বৌ এর ভাগ্যটা খুব ভালো। যদিও বিয়ে কয়টাকে করবি তারও কোনো নিশ্বয়তা নেই।
নিলয়ের কথায় এবার হো হো করে হেসে দিলো নিবিড়। হাসতে হাসতে বলে,
– এদের একটাকেও বিয়ে করবো না আমি।
নিলয় অবাক হয়ে বলে,
– তাহলে রিলেশন করছিস কেন?
– রিলেশন আর বিয়ে এক না। তুই জানিস, ঐ দিন আমি আমার এক গফ কে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখেছিলাম। তবুও কিছু বলিনি। যে যার মতো থাকুক। কয়দিন এসবের কোনো টাইম থাকবে? রিলেশন করে ওরাও টাইম পাস করে আমিও টাইম পাস করি। তোরা তো ভাবিস আমি খারাপ। কিন্তু আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নিয়ে রিলেশন করিনা। মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে টাইম পাস করি। আর দেখা হয়ে ইমোশনাল ড্রামা করে টাকা নেই এই আর কি। ভালো তো বাসবো শুধু বৌ কে।
নিলয় কিছুক্ষন ধরে লাগাতার হাসলো। তারপর বলে,
– তুই একটা জিনিস ভাই।
নিবির কিছু না বলে চামচ টা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– স্বাদ ঠিকঠাক আছে কি না দেখ।
নিলয় টেস্ট করে বলে,
– পার্ফেক্ট হয়েছে। এতো কিছু কিভাবে শিখলি? কেও বুঝতেই পারবে না যে কে রান্না করেছে।

বিনিময়ে একটু হাসলো নিবিড়। এর পর হাস্যজ্জল মুখটা মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেলো। রান্না শেষে ওগুলো নামাতে নামাতে বলে,
– বাস্তবতা আমাকে অনেক কিছুই শিখতে বাধ্য করেছে। ছোট বেলা থেকেই একা একা বড় হয়েছি। নিজের রান্না নিজেই করতে হয়েছিলো সব সময়। জীবনে অনেক কিছু পার করে এখন আমি তোদের সামনে। আমার গল্পটাও একদিন বলবো তোদের সবাইকে।

নিবিড়ের গলাটা কেমন ভাড়ি হয়ে এলো। নিলয় কিছু না বলে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো নিবিড়ের দিকে। সারাক্ষন সবাইকে হাসানো ছেলেটার মাঝেও কোনো কষ্টের গল্প লুকিয়ে আছে তা হয়তো বিশ্বাসই হচ্ছে না তার।
নিবিড় সব কিছু নামিয়ে গুছিয়ে নিলো। তারপর নিলয়কে বলে,
– যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ফরিদা আন্টির কাছে যাচ্ছি।
,
,
গতকাল রাজের দেওয়া কাগজ টা আড়ালে বসে সামনে নিয়ে চোখ বুলালো আরোহির মা। দেখে ইংলিশে কিছু লিখেছে রাজ। আরোহির মা আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলো সেটা। যার বাংলা অনুবাদ ছিলো,

‘আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে প্রথম দিন দেখেই বুঝেছিলাম খুব বুদ্ধিমতি একজন মহিলা আপনি। কিন্তু পরিস্থিতি আপনাকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছে। শুনুন, ভয় নিয়ে এক বছর বেচে থাকার চেয়ে প্রতিবাদ করে এক দিন বেচে থাকাটা উত্তম। নিজে বাচুন ও অন্যদের বাচান। আমি আপনাদের হেল্প করতেই এখানে এসেছি। আপনি হয়তো চাইলেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তবুও আপনাকে একটা সূত্র দিচ্ছি আমি।
”রবি কোম্পানি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিজয় দিবসের দিন ইমার্জেন্সি কলের নাম্বার থেকে একটা সংখ্যা বাদ দিয়েছিলো”

কাগজে এতটুকুই লেখা ছিলো। আরোহির মা গুনে গুনে পাঁচ ছয় বার চিঠিটা পড়লো। তবুও সূত্রটার মানে বুঝতে পারছে না। তবে এটা বুঝতে পারলো যে রাজ হয়তো তাকে হ্যাল্প করতে পারবে কিছুটা।
এখন সূত্র টার মানে খুজে বেড় করতে হবে আমাকে। আচ্ছা এটা তার সাথে যোগাযোগের কোনো মধ্যম বলেনি তো? হয়তো কোনো ঠিকানা। নয়তো কোনো নাম্বার?
আরোহির মা একে একে যোগাযোগের সব গুলো মাধ্যম সূত্র টার সাথে মিলিয়েও কোনো উত্তর খুজে পায়নি।

সব শেষে ফোন নাম্বারের সাথে মিলাতে শুরু করলে কয়েকবার ভাবতেই সূত্রের উত্তর টা পেয়ে গেলো সে। রাজ সূত্রের মাধ্যমে তাকে ফোন নাম্বার দিয়েছে। কারণ ডিরেক্ট ফোন নাম্বার লিখলে কাজের মেয়েটা দেখলে বুঝে যেতো।
রবি কোম্পানি মানে 018 আর মুক্তিযুদ্ধের সময় মানে 1971 বিজয় দিবসের দিন মানে ১৬ আর ইমার্জেন্সি কলের থেকে একটা সংখ্যা বাদ দিলে হয় 99 এটাই ছিলো তাহলে সূত্রটা। সব মিলিয়ে দেখে বরাবর ১১ টা সংখ্যার একটা নাম্বার হয়ে গেলো।

কিন্তু সূত্র বের করেও হতাশ হতে হলো তাকে। কারণ সে প্রতিদিন কার সাথে কথা বলে। কোন নাম্বার থেকে কল এসেছে বা কাকে কল দিয়েছে। সব কিছু নির্জন ট্যাগ করে রাখে। আর তার সাথে যেনো বাইরের কেও যোগাযোগ করতে না পারে তার জন্যও কড়া সিকিউরিটি রেখে দিয়েছে। হতাশার নিশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।
,
,
নিবিড় কয়েকটা বিয়ের কার্ড হাতে বাসায় এসে তা সবার মাঝে একটা একটা করে দিতে লাগলো। তাদের পাঁচ জনের জন্য মোট পাঁচটা বিয়ের কার্ড। তুষারের টা ড্রয়ারের মাঝে রেখে দিলো, সে আসলে তারপর দিবে।
রাজ কার্ড হাতে পেয়ে বলে,
– বিয়ে কার? তোমার কোনো বাবুর নাকি?
নিবিড় পাশে বসে বলে,
– আরে না, মিতালির(কলেজ বান্ধবি) বিয়ে।
রাজ তা খুলে চোখ বুলাতে লাগলো।
রুশান ফোনে হাতে বসেছিলো। মিতালির কথা শুনে ফোনের স্কিন থেকে চোখ সরিয়ে বলে,
– মেয়েটা তাহলে ফাইনালি একজনকেই বিয়ে করছে তাই না?
নিবিড় বলে,
– তো বিয়ে কি ৩-৪ জনকে করে মানুষ?
রুশান আবার ফোনের স্কিনে চোখ রেখে হেসে বলে,
– মিতালিও তোর লাইনের মেয়ে। কয়টা ছেলের সাথে রিলেশন করেছে তার কোনো হিসেব নেই।
নিবিড় মাথা তুলে বলে,
– হুম সেটা তো জানি, ওর ১১ টা নাকি কয়টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো। এখন টাকা ওয়ালা দেখে একটার গলায় ঝুলে পরছে।
পাশ থেকে রাজ বলে,
– ওর হবু স্বামী কি জানেনা এসব?
নিবিড় কার্ড টা রেখে বলে,
– পাগল নাকি? বিয়ের সময় কেও হবু বরকে এসব বলে? আর বর তো প্রথমেই বলে দিয়েছিলো, যে মেয়ে একধম ভদ্র হতে হবে। আগে রিলেশন করেছে এমন কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না সে। আর মিতালির ফ্যামিলি তো জানতো না যে মিতালি এতো গুলো রিলেশন কন্টিনিউ করতো। তাই তারাও বললো, মেয়ে আমাদের হিরার টুকরা। বয়ফ্রেন্ড কি, কোনো ছেলে ফ্রেন্ডও নেই তার। এভাবেই বিয়েটা ঠিক হয়ে গেলো তার। আর ১৫ দিন পরই বিয়ে।

পাশ থেকে নিলয় জ্বিভে কামড় দিয়ে মাথায় হাত রেখে বলে,
– কি বলিস, এতো বড় প্রতারণা? এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না। ওর মতো একটা মেয়েকে তারা ভদ্র বলে চালিয়ে দিচ্ছে?
নিবিড় হেসে বলে,
– এতো সততা দিয়ে দুনিয়া চলেনা বাচা।
রুশান ফোন টিপতে টিপতে বলে,
– আমার তো একটা টেনশন ঢুকে গেলো মাথায়।
নিবিড় বলে,
– কি টেনশন?
– এতোক্ষন ধরে যে মিতালির সম্পর্কে এতো কিছু বলে ফেললাম তা আমাদের নিলয় মহা দরদির মুখ থেকে লিক হয়ে তা মিতালির বরের কানে কোনো ভাবে চলে গেলে তো সব শেষ।

এই কথাটা এতোক্ষন নিবিড়ের মাথায়ই ছিলো না। জ্বিভে ছোট্ট কামড় দিয়ে নিলয়ের দিকে তাকায় সে। নিলয় নিজের মুখ চেপে ধরে বলে,
– ভাই বিশ্বাস রাখতে পারিস। বোম পরলেও মিতালির কথা কারো কাছে মুখ থেকে বের হবে না আমার।
,
,
বিলেকে ৪ নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেলো নিবিড়। রিক্সায় করে যাওয়া র সময় হটাৎ রাস্তার পাশে চোখ পরে তার। দেখে তার ৬ নাম্বার গার্লফ্রেন্ড রাস্তার পাশে দাড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তেই বুকটা ধুক ধুক করতে লাগলো নিবিড়ের।

To be continue……

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

একটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে রিক্সায় ঘুরার সময় অন্য গার্লফ্রেন্ডের সামনে পরে যাওয়াটা আজ সব চেয়ে বড় ঘুর্ণিঝড় মনে হচ্ছে নিবিড়ের কাছে।
নিবিড় একবার তার পাশে বসে থাকা ৪ নাম্বার বাবুর দিকে তাকাচ্ছে। আরেকবার সামনে দাড়িয়ে থাকা ৬ নাম্বার বাবুর দিকে তাকাচ্ছে।
পাশ থেকে তার ৪ নাম্বার বাবু মানে তিথি নিবিড়ের হাত ধরে বলে,
– হটাৎ রিক্সা থামাতে বললে কেন? আর সামনে মেয়েটা আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?

ফাটা বাশের চিপায় আটকা পরার মতো অবস্থা হলো নিবিড়ের। তিথিকে বসে থাকতে বলে রিক্সা থেকে মেনে গেলো নিবিড়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সামনে দাড়িয়ে থাকা ৬ নাম্বার বাবু মানে মাহিয়ার দিকে।
মাহিয়ার সামনে যেতেই সে তেলে বেগুনে জ্বলে নিবিড়কে বলে,
– ওই মেয়েটা কে? তাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরছিস কেন? কয়টার সাথে সেটিং চলছে তোর? একটা দিয়ে হয় না?
নিবিড় কোনো মতে তাকে থামিয়ে বলে,
– আগে আমাকে পুরো কথা তো বলতে দিবে, নাকি?
মাহিয়া আবারও রেগে বলে,
– কি বলবি তুই? চোখের সামনে অন্য মেয়ে নিয়ে রিক্সায় ঘুরছিস, আর কি বা বলার আছে তোর?
নিবিড় আবার থামিয়ে বলে,
– আগে বলতে তো দিবে তাই না। একসাথে ঘুরলেই কি গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়?
মাহিয়া এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,
– তাহলে কে এই মেয়ে।
নিবির সোজাসুজি ভাবে বলে দিলো,
– আমার বোন। এতোক্ষন যে আমার সাথে এভাবে কথা বলছো, এসব সে শুনলে তো বাসায় গিয়ে এবার মাকে সব বলে দিবে। যে তোমার ছেলে একটা ঝগরাটে মেয়ের সাথে রিলেশন করে। তখন কি মা তোমাকে বৌ বানিয়ে ঘরে তুলবে বলো?

মাহিয়ার অগ্নি মুখ মুহুর্তেই পানি হয়ে গেলো। এবার নিবিড়কে খুব করুন গলায় বললো,
– আমি আসলেই বুঝতে পারিনি নিবিড়। না বুজেই তোমাকে কত কথা বলে ফেলেছি। আ’ম রিয়েলি সরি।
নিবিড় এবার একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আচ্ছা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আমরা রিক্সায় করে যাওয়ার সময় সুন্দর করে আপুকে সালাম দিবে। যেন আপু মনে করে তুমি খুব ভদ্র ও লক্ষ্মী একটা মেয়ে।
মাহিয়া মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সুচক সম্মতি জানালো।

তারপর নিবিড় চলে গেলো রিক্সায় বসে থাকা তিথির কাছে। রিক্সায় উঠতেই তিথি বলে,
– কে এই মেয়ে? আর তোমার সাথে এতো কিসের কথা বলছিলো সে?
নিবির অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
– ধরা পরে গেছি।
তিথি অবাক হয়ে বলে,
– ধরা পরে গেছো মানে?
নিবিড় তাকে অস্থিরতা দেখিয়ে বলে,
– আপুর কাছে ধরা পরে গেছি। এই যে তোমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরছি তা আপু দেখে ফেলেছে। তাই এভাবে বকাবকি করছিলো। আপু বলে, তোর মতো একটা ভালো চরিত্রবান ছেলে কিভাবে মেয়ে নিয়ে রিক্সায় ঘুরে? আমি আজই বাসায় গিয়ে মাকে সব বলবো। এখন কি করবো বলো।
তিথি অবাক হয়ে বলে,
– কি বলো, ও তোমার বোন হয়?
– হুম, তবে অনেক কষ্টে আপুকে বুঝিয়ে এসেছি। এখন চলো তারাতারি এখান থেকে কে’টে পরি। আর শুনো, আপু যাই বলুক তুমি শুধু মিষ্টি করে একটা হাসি দিবে, ওকে?
তিথিও মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সুচক সম্মতি জানালো।

এর পর নিবিড় রিক্সাওয়ালা মামাকে বললো এক টানে চলে যেতে। রিক্সা চালাতে শুরু করলে মাহিয়ার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাহিয়া ভদ্র ভাবে সালাম দিলো তিথিকে। আর তিথিও নিবিড়ের কথা মতো একটু মুচকি হেসে দিলো। সিচুয়েশন টা পার হতেই বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিলো নিবিড়। তিথি তার দিকে তাকালে সে বলে,
– আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। না জানি আপু কি করে?
,
,
সন্ধার পর থেকেই মই নিয়ে বসে আছে আরোহি। আজ দেওয়াল টপকাতে পারছে না। কারণ সিকিউরিটি গার্ড গুলো চার পাশে হাটাহাটি করছে আজ। একটু রেষ্ট নিচ্ছে না। তবুও আরোহি বসে আছে সুজুগের অপেক্ষায়। তারা একটু রেষ্ট নিতে বসলেই পালাবে সে। আর এদিকে এতোক্ষন হয়ে গেলো রাজের এখনো আসার খবর নেই। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছে আরোহি।

হটাৎ পেছন থেকে কারো আওয়াজ পেয়েই চমকে উঠে আরোহি। কাজের মেয়েটা পেছন থেকে এসে বলে,
– এখানে কি করছেন আফা?
আরোহি ভয় পেয়ে গেলো কিছুটা। আমতা আমতা করে বলে,
– স্যা স্যার আসছেনা কেন, আর এসেছে কিনা ওটা দেখতে এসেছি।
কাজের মেয়েটা বলে,
– সারা জীবন শুনে আসলাম স্যার না আসলে সবাই খুশি হয়। আর আপনি স্যার আসছে না দেখে তাকে খুজতে এসেছেন?
আরোহি আবার কথা বানিয়ে বলে,
– স্যার প্রচুর ভালো পড়ায়। একদিন না আসলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যায়। তাই এসে দেখছি যে আসছে কি না?
কাজের মেয়েটা মইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– এটা এখানে কেন?
আরোহি আবার কিছুটা তোতলিয়ে বলে,
– এটা ছারা কি এতো উচু দেওয়াল দিয়ে দেখা যায়?
কাজের মেয়েটা বলে,
– এতো কষ্ট করে স্যার আসছে কিনা খুজে বেড়াচ্ছেন। সত্যিই কি পড়ার জন্য নাকি অন্য কিছু?
আরোহি ভাব নিয়ে বলে,
– কি বুঝাতে চাইছো তুমি?
মেয়েটা একটু হেসে বলে,
– স্যারকে কি আপনার ভালো লাগে?
আরোহি কেমন বিভ্রতিকর অবস্থায় পরে গিয়ে বলে,
– আরে ধুর, ওসব কিছুই না।
মেয়েটা বলে,
– দেইখেন আবার, বড় স্যার এসব জানলে ঐ স্যারকে পাড়া দিয়ে গু’লি করে মা’রবে।

আরোহি আর কিছু না বলে বিরক্তি প্রকাশ করলো। কেন জানি কথাটা খুব বিরক্তিকর মনে হলো তার কাছে। তাই আর কিছু না বলে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ বাড়ির দিকে চলে গেলো আরোহি।

ওদিকে আরোহির নানার বাড়ির সামনে এসে রাস্তার এক পাশে বসলো রাজ। চায়ের দোকান ছিলো একটা। রাজ চা ওয়ালাকে বলে,
– এক কাপ চা দিন তো আঙ্কেল।
লোকটা চা বানাতে বানাতে বলে,
– আপনি কে মামা, আগে তো কখনো দেখিনি।
রাজ একটু অবাক হলো। ওর দোকানে কি শুধু পরিচিতরাই আসে? অপরিচিতরা কি আসে না? তবুও হাসি মুখে বলে,
– এখানে একটা বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।
লোকটা রাজকে চা দিয়ে বলে,
– আপনি তাহলে নতুন। তাই এই এলাকা সম্পর্কে ধারণা নেই আপনার।
রাজ চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। অবাক হয়ে বলে,
– কেন আঙ্কেল কি হয়েছে?
লোকটা গামছা দিয়ে হাত মুছে বলে,
– এই এলাকায় সন্ধার পর রাতে মানুষ প্রয়োজন ছারা তেমন একটা বের হয় না। শুধু ছিনতাই হয়।

রাজ এবার বুঝলো বিষয় টা। এলাকা টা কেন এতো নিরব। তাই চুপচাপ চা খেয়ে বিল মিটিয়ে দিলো সে।

একটু পরই ফোন আসে রাজের মোবাইলে। রাজ ফোন বের করে দেখে অচেনা নাম্বার। রাজ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কোন মহিলা উত্তেজিত গলায় বলে,
– আমি আরোহির মা বলছি। এটা আমার ভাইয়ের নাম্বার।
রাজ এবার সেখান থেকে হেটে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়ালো।
আরোহির মা আবার বলতে শুরু করলো,
– আমি চাইলেও বেশি সময় কথা বলতে পারবো না। অনেক কষ্টে এই সুজুগ টা ম্যানেজ করেছি। এই অল্প সময়ে আপনাকে যা বলছি তা মন দিয়ে শুনুন।

এতটুকু শুনতেই কে যেন বাইক নিয়ে এসে বাজ পাখির মতো রাজের ফোন টা ছো মে’রে নিয়ে চলে গেলো। রাজ কিছু বুঝে উঠার আগেই বাইক টা চোখের আড়াল হয়ে গেলো। খুব শান্ত ভাবে ওদিকে তাকিয়ে আছে রাজ।

ও পাশ থেকে আরোহির মা কয়েক বার হ্যালো হ্যালো করে বলে,
– আমাকে শুনতে পাচ্ছেন আপনি? আমি বোধ হয় সহজে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো না। তাই এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিচ্ছি আপনাকে।

কিন্তু রাজের কোনো রেসপন্স না পেয়ে একটু পর ফোন কে’টে দিলো আরোহির মা। একটু পর পুনরায় কল দিতেই দেখে রাজের ফোন বন্ধ।
কেমন একটা অস্তিরতা শুরু হয়ে যায় তার মাঝে। রাজের কিছু হয়ে গেলো না তো? কেও আবার বুঝে ফেলেনি তো বিষয় টা?

To be continue…..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

হসপিটালে OT এর বাইরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে তুষার। পাশে তার ছোট বোন তিশা চুপচাপ বসে আছে। আর একটু পর পর চোখ বন্ধ করে কি যেনো বিড়বিড় করছে।
তুষার এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে তিশার পাশে গিয়ে বসলো।
তিশা কাঁতর গলায় খুব করুন ভাবে বলে,
– মায়ের কিছু হবে না তো ভাইয়া? মা ভালো হয়ে যাবে তো?
তিশাকে এক হাতে আগলে ধরে তুষার। অন্য হাত তিশার মাথায় বুলাতে বুলাতে বলে,
– কিছু হবে না। ইন’শা আল্লাহ্ এবার মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। দোয়া কর শুধু।
তিশা আবারও চোখ বন্ধ করে কি যেন বিড় বিড় করতে লাগলো।
তুষার উঠে আবার টেনশনে এদিক ওদিক পায়চারি করতে থাকে। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন শুধু মা আর এই ছোট বোনটাই আছে। মায়ের কিছু হয়ে গেলে যে খুব একা হয়ে যাবে ভাই-বোন দুজন।

কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে গুড নিউজ দিতেই আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা হাসি দেয় তুষার। তিশা দৌড়ে এসে তুষারের সামনে দাড়িয়ে উত্তেজিত গলায় বলে,
– ভাইয়া আমি মায়ের সাথে কথা বলবো।
তুষার জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার বলে,
– এখন দেখা করা যাবে না। রোগির জ্ঞান ফেরার পর দেখা করতে পারবে। আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। আশা করি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি।

তুষারে হাস্যজ্জল মুখ। ফোন বের করে কল দিলো রাজ, রুশান, নিবিড়, নিলয় এদের। কিন্তু রাজের ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা হলো না তার সাথে। রুশানও ফোন রিসিভ করলো না।
নিবিড় মেসেন্জারে তার বাবুদের সাথে চ্যাট করছিলো। তখনই তুষারের ফোন পেয়ে একটু বিরক্ত হলো সে। ফোন রিসিভ করে গুড নিউজ শুনতেই হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। সেও হাসি মুখে নানান প্রশ্ন করতে লাগলো। বন্ধুত্ব বোধ হয় এমনই হয়, একজনের খুশিতে অন্য জনের আনন্দ। একজনের দুঃখে অন্য জনের কষ্ট।
নিবিড় ঢাকায় ফেরার কথা জিজ্ঞেস করলে তুষার বলে আরো সাপ্তাহ্ খানেক লেগে যাবে ঢাকায় ফিরতে।
,
,
এদিকে অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও রাজ বাসায় না ফিরায় টেনশন শুরু হয় সকলের। রুশানের বেলায় তেমন একটা টেনশন করেনা কেও। কারণ রুশান প্রায়ই কি কাজে চলে গিয়ে কোনো রাত ফিরেও আসে না। ফোন করে জানিয়ে দেয় যে আজ আসতে পারবে না। তুষার আর নিবিড় অনেকবার জিজ্ঞেস করলেও কি কাজে ব্যাস্ত থাকে তা বলে না রুশান। তাই তারাও আর জোড় করেনা এসব নিয়ে।
কিন্তু রাজের বেলায় এমন দেড়ি হওয়ায় টেনশন টা বেড়েই গেলো সকলের। তার উপর আবার ফোনও বন্ধ রাজের। এতো রাতে কোনো দুর্ঘটনায় হলো না তো আবার?

রাত প্রায় বারোটার দিকে বাসায় ফিরে রাজ। ফরিদা আন্টি সহ বাকিরা এগিয়ে নানান প্রশ্ন জুড়ে দিলো। কিন্তু রাজের মনটা বিষণ্ন হয়ে থাকায় কারো কথার উত্তর দিলো না।
নিবিড় পাশ থেকে আবার বলে,
– যেখানেই যাও ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন?
রাজ এবার শান্ত ভাবে বলে,
– বন্ধ করিনি ওটা ছিন’তাই হয়ে গেছে।
– তার মানে তুমি ছিন’তাইকারির কবলে পরেছো? এ জন্য তোমাকে আগেই বলেছিলাম নতুন শহরে এসেছো একটু সাবধানে চলতে। এমন হাবাগুবা ছেলে দেখলে তো তারা ছিনতাই করবেই। তোমার ভাগ্য ভালো যে পেন্ট সহ খুলে নেয়নি।
রাজ এবার হতাশার দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– মজা নিচ্ছো তুমি?
নিবিড় এবার হেসে বলে,
– আচ্ছা বাদ দাও যা গেছে ফোনের উপর গেছে। তোমার কিছু হয়নি এটাই অনেক। কারণ ফোন গেলে যাক। তুমি বেচে থাকলে এমন অনেক ফোন কিনতে পারবে। যাও এখন ফ্রেশ হয়ে ওসব চিন্তাও ধুয়ে ফেলো।
রাজ আর কিছু না বলে রুমের দিকে চলে গেলো। তার বিষন্ন মন ফোনের জন্য নাকি অন্য কিছুর জন্য এটা বাকিরা কিভাবে বুঝবে?
,
,
কলেজ ফাকি দিয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটছে অরিণ। আজ আবার বাবার থেকে অনেক কষ্টে গাড়ি কলেজে নিয়ে আসার অনুমতি পেলো। সমস্যা টা হলো গাড়ি হলো একটা। তার বাবা ওটা নিয়ে অফিসে আসা যাওয়া করে। আর অরিণ মাঝে মাঝে নিয়ে আসার অনুমতি পায়।

তেমনই আজ গাড়ি নিয়ে কলেজে এসে গেটের বাইরে দাড়ালো অরিণ। রাজকে ডেকে বললো গারিতে উঠতে। রাজ প্রথমে অসম্মতি জানালে অরিণ তাকে জোড় করে তুলে চলে যায় সেখান থেকে।
রাস্তায় গাড়ি ছুটে চলছে। অরিণ ড্রাইভ করছে আর রাজ পাশে বসে আছে। অরিণ গাড়ির স্প্রিড বাড়ানোর সময় রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– সিট বেল্ট বাধতে পারো?
রাজ একটু অবাক হলেও পরে বুঝতে পারলো অরিণ কেন এমনটা জিজ্ঞেস করেছে। কারণ তার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে যে কেউই বুঝবে যে গাড়ির সম্পর্কে তেমন একটা দারণা নেই তার।
রাজের হাসি পেলেও তা কোনো মতে দমিয়ে রেখে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– আসলে কখনো বাধি নি তো তাই জানিনা টিক কিভাবে বাধতে হয়।
অরিণ এবার গাড়ি থামিয়ে রাজের বেল্ট টা ধরে শিখিয়ে দিচ্ছে যে, এভাবে ঘুরিয়ে এনে তারপর এখান দিয়ে সেট করে নিতে হয়।

বিনিময়ে রাজ কিছু না বলে একটু হাসলো। অরিণ আবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটতে শুরু করলো। রাজ পাশ থেকে বলে,
– আমরা কোথায় যাচ্ছি?
অরিণ ড্রাইভ করতে করতে বলে,
– কোথাও না। আজ তোমাকে এ শহরের অনেক টা জায়গা ঘুড়ে দেখাবো।
রাজ কিছু না বলে কিছুক্ষন নিরব থাকলে অরিণ বলে,
– তোমার নাকি ফোন ছিনতাই হয়ে গেছে?
রাজ অবাক হয়ে বলে,
– তুমি কিভাবে যানো?
– নিবিড় বলেছে।
– ওহ আচ্ছা।
এর পর অরিণ একটা ফোনের বক্স এগিয়ে দিয়ে বলে,
– দেখো তো এটা পছন্দ হয়েছে কি না?
রাজ এবার পুরোপুরি অবাক। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– ফোন? কার জন্য?
অরিণ হেসে বলে,
– তোমার জন্য। দেখো পছন্দ হয় কি না?
রাজ ওটা হাতে নিয়ে বলে,
– কিন্তু তুমি আমাকে ফোন গিফ্ট করছো কেনো?
– কেন বন্ধু হিসেবে কি দিতে পারি না? আর তোমার ফোনও তো ছিন’তাই হয়ে গেছে তো সবার সাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে?
রাজ তার দিকে চেয়ে বলে,
– তার মানে করুণা দেখাচ্ছো?
অরিণ হেসে দিয়ে বলে,
– এই আমি কিন্তু একধম ও এমনটা মাথায় আনিনি। আমি ফ্রেন্ড হিসেবেই গিফ্ট করেছি তোমাকে।
রাজও হেসে বলে,
– তাহলে ঠিক আছে।

রাজ বাসায় আসার পর পরলো আরেক বিপদে। আর তা ছিলো নিবিড়কে নিয়ে। বেচারার ধারণা অরিণ রাজের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সব সময় তো সাথে লেগেই থাকে। আর কলেজ ফাকি দিয়ে রাজকে নিয়ে লং ড্রাইভে চলে গেলো। তার উপর আবার ফোনও গিফ্ট করেছে। নির্ঘাত অরিণ রাজের প্রেমে পরেছে।
রাজ লজ্জায় কিছু বলতেও পারছে না আর নিবিড়কেও থামাতে পারছে না। বাকিরাও বিষয় টা নিয়ে নিবিড়ের সাথে তাল মিলিয়ে ভালোই মজা নিচ্ছে।
রাজ অতিষ্ঠ হয়ে চলে যাওয়ার সময় নিবিড় তাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বলে,
– ভাই আগেও বলেছিলাম এখনো বলছি। একবার প্রেম করে দেখো। সব কিছু রঙিন মনে হবে তখন। আর অরিণ নিজেই তোমার উপর ফিদা সেখানে আর কি লাগে বলো।
– ধ্যাত,,,
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো রাজ।
ফ্রেন্ডস মহল টা এমনই কোনো ভাবে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলেও সেটাকে টেনে বাকিরা রিলেশন অব্দি নিয়ে যাবে।
,
,
কেটে গেলো আরো কয়েক দিন। এদিকে মিতালির বিয়ের সময়ও নিকটে চলে আসলো। কালকের পর পরশুই বিয়ে।
মা মোটামুটি সুস্থ হলে তুষারও চলে আশে ঢাকায়। এখন ফ্রেন্ডস মহল পরিপূর্ণ।

পাঁচ জন মিলে বিয়েতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাঁচ জনে টাকা তুলে ভালো দেখে একটা দামি গিফ্ট নিয়ে চলে গেলো বিয়েতে।
বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই একেকজন একেক কাজে লেগে পরলো। নিলয় চলে গেলো বরের সাথে ছবি তুলতে।

রাজ আর রুশান গিয়ে একে একে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে। সেখানে সব গেষ্টদের মাঝে একজন লোক রুশানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আর বিড়বিড় করে বলছে,
– ও মাই গট ছেলেটা তাহলে এই বেশে আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রুশানকে দেখে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো লোকটার।

লোকটার এমন আচরণ রুশানের তীক্ষ্ম দৃষ্টি এড়ালো না। রুশানের চোখাচোখি হয়ে যেতেই সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করায় ব্যস্ত হয়ে পরলো লোকটা।

আর নিবিড় চলে গেলো কোথায় সুন্দরি মেয়ের দেখা পাবে সেই খোজে। আর তুষার লেগে আছে তার সাথে। নিবিড় কিভাবে মেয়ে পটায় তা আজ শিকবেই শিখবে। নিবির বার বার তুষারকে বলছে নিলয়ের সাথে গিয়ে ছবি তুলতে। কিন্তু তুষার আজ পিছু ছারবে না নিবিড়ের। মেয়ে পটানোর কৌশল আজ শিখেই ছারবে সে।

তুষার ঘুরতে ঘুরতে কিছুক্ষন পর লক্ষ করে নিবিড় কতোগুলো মেয়ের মাঝখানে বসে হেসে হেসে গল্প করছে। আর মেয়েগুলো খুব সুন্দর ভাবেই আড্ডা জ্বমিয়েছে তার সাথে।
যা দেখে তুষার ভেতর ভেতর জ্বলতে শুরু করলো। যেখানে তুষার একটা মেয়ের সামনে দাড়ালে হাই হ্যালো কেমন আছেন ছাড়া কিছুই খুজে পায় না। আর সেখানে কি না নিবিড় কত সুন্দরেই মেয়েদের সাথে মিশে যায়।

না আজ যাই হোক, নিবিড়ের মতো সেও মিশে যাবে মেয়েদের সাথে। তাই তুষার আর দেড়ি না করে মেয়েদের মাঝখানে নিবিড়ের পাশে বসে পরলো। আর মেয়ে গুলোর উদ্দেশ্যে নিবিড়কে দেখিয়ে বলতে শুরু করলো,
– নিবিড় আমার ফ্রেন্ড। আমার খুব ভালো বেষ্টফ্রেন্ড ও। সে তোমাদেরকে ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছে তাই না? তাহলে আমিও তোমাদের ফ্রেন্ড। আমার সাথেও আড্ডা দাও তোমরা।

মেয়ে গুলো হা করে তাকিয়ে তাকে তুষারের কথাবার্তা শুনে। তুষারের আড়াল থেকে নিবিড় মাথার কাছে আঙুল ঘুরিয়ে মেয়েদেরকে ইশারা দিয়ে বুঝায় যে, তুষার পাগল।
একটা মেয়ে বিষয় টা বুঝতে পেরে তুষারকে বলে,
– আচ্ছা ভাইয়া তোমার সাথে আমরা পরে আড্ডা দিবো। এখন চলে যাও। ওই যে ওখানে ছোট বাচ্চারা খেলা করছে ওখানে গিয়ে ওদের সাথে খেলা করো। আমরা পরে তোমাকে ডেকে নিবো আড্ডা দেওয়ার জন্য।
তুষার এবার নিরাশ হয়ে নিবিড়ের দিয়ে চেয়ে আস্তে করে বলে,
– প্লিজ ভাই একটার সাথে অন্তত ফ্রেন্ড বানিয়ে দে।

নিবিড়ও তখন ভাব নিয়ে নিলো। আর পল্টি মেরে বলে,
– আচ্ছা তুই যা ওখানে বাচ্চাদের সাথে খেলা কর। পরে ভাইয়া তোকে ডেকে নিবো।
তুষার করুন গলায় বলে,
– থাকি না কিছুক্ষন।
ওখানে একটা মেয়ে পাগল সহ্য করতে পারেনা। তাই নিবিড়ের ইশারায় তুষারকে পাগল মনে করে ঝাড়ি মেরে বলে,
– ঐ মিঞা আপনাকে যেতে বলছিনা যাচ্ছেন না কেন?
নিরুপায় হয়ে সেখান থেকে উঠে কিছুটা দুড়ে সরে এলো তুষার। পেছন ফিরে আবার অসহায় হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকায়। আর ভাবতে থাকে, নিবিড় কিভাবে মেয়েদের সাথে এতো সহজে মিশে যায়?

ওদিকে সবচেয়ে বড় কান্ড টা ঘটিয়ে দিলো নিলয়। বরের সাথে ছবি তুলতে তুলতে পরিচিত হয়ে যায় সে। নিলয় মিতালির ফ্রেন্ড বিষয়টা জানার পর মিতালির হবু বর নিলয়কে আস্তে করে বলে,
– মিতালি মেয়ে কেমন? আপনি তো ফ্রেন্ড আপনি ভালো জানেন।
নিলয়ও হেসে বলে,
– অনেক ভালো মেয়ে মিতালি।
তখন বর আবার বললো,
– আচ্ছা মিতালি কি কোনো রিলেশনে ছিলো?
নিলয় এবার চার দিকে চেয়ে বলে,
– ওটা কাউকে বলতে নিষেধ করেছে।
মিতালির হবু বড়ও খুব চালাক ছিলো তাই বললো,
– আরে আমরা তো এখন ভাই ভাই, আমাকে বললে কিছু হবে না।
নিলয় এবার চার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভেবে বলে,
– আপনি কাউকে বলবেন না তো?
– না বলবো না।
নিলয় এবার সুন্দর করেই বলতে শুরু করলো,
– মিতালির ১১ টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো। সাকিব, সুজন, সাব্বির, জানি, নিরব, মামুন, নবি আরো কে কে জানি ছিলো। একটা ধরতো একটা ছাড়তো। কয়দিন আগে একটা ছেলের সাথে ধরাও খেয়েছিলো। তাই তো ওর বাবা ওকে তারাতারি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। যেন বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যায়। আর শুনুন, আপনাকে কিন্তু আমি এসব খুব বিশ্বাস করে কথা গুলো বলেছি। আপনি আবার কাউকে বলবেন না প্লিজ।

To be continue…..