ছদ্মবেশ পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
300

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রাজ ও নিলয় চোখাচোখি হয়ে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। আজ এই দৃষ্টিতে কোনো করুণতা নেই। খুবই ভয়ঙ্কর এই দৃষ্টি।

নিবিড় ও তুষার অপর পাশে দাড়িয়ে আছে। রাস্তায় একটু জেম লেগে যাওয়ায় একটু বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকালো নিবিড়।
পাশ থেকে তুষার এক হাতে নিবিড়ের কাধে বার বার টাচ করলে নিবিড় তার দিকে ফিরে তাকায়। দেখে তুষার একটা সি’এন’জি এর দিকে তাকিয়ে আছে।
আর নিবিড়ের দিকে সেয়ে বলে,
– ভাই দেখ মেয়েটা কতো সুন্দর।
কিন্তু আজ নিবিড় একধম ভদ্র ছেলের মতো অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
– এরা নারী না, এরা বিষধর সাপ। আমি আর এসবের মাঝে নেই। যেই ছোবল খাইলাম। তার চেয়ে বরং সৌন্দর্য টা তুই একাই উপভোগ কর। আমাকে এসবে ডাকিস না ভাই। আমি একধম ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি এখন।
পাশ থেকে নিলয় বলে উঠে,
– আল্লায় তাহলে তোকে হেদায়েত দান করছে?
তুষার হাত নাড়িয়ে বলে,
– আরে ওর এসব মিথ্যা ভাষণ কেন কানে নিচ্ছিস ভাই। শরিরে হয়তো এখনো ব্যাথা আছে তাই এসব বলছে। কয়দিন পর যখন শয়তানে আবার লারা দিবে, তখন দেখিস।
নিবিড় একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
– না ভাই একধম ভালো হয়ে যাবো। আর রিলেশনে জড়াবো না। মেয়েরা হলো বহুরুপি। ওই দিন বিকেলেও সবাই কতো বাবু সোনা ডেকে ডেকে কথা বলেছিলো।

নিলয় অবাক হয়ে বলে,
– মুল কাহিনি টা কি?
তুষার হাসতে হাসতে বলে,
– তোকে বাসায় গেলে বলবো সব।

নিলয় এবার রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– কি হলো ভাই, তুমি আমার দিকে সেই তখন থেকে তাকিয়ে আছো কেন? আসার পর থেকে একটা কথাও বলছো না। অতি কষ্টে পাথর হয়ে গেলে নাকি?
রাজ এবার নিরবতা ভেঙে বলে,
– আমি ভাবছি তুমি নিলয় না অন্য কেউ! এই কয়দিনে এতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শিখলে কোথা থেকে?
নিলয় এবার নিবিড় ও তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– কি রে ভাই, বন্ধু বান্ধরের সাথে একটু শান্তিতে কথা বলতে না পারলে কার সাথে বলতো বল।
নিবিড় তুষার দুজন একই সাথে বলে উঠে,
– তোকে চিনতে আমাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে।

নিবিড় ও তুষারের অনেক কিছুই এভাবে এক সাথে মিলে যায়। সারাক্ষন দুজন এক সাথে থেকে মেয়েদের পিছে ঘুরা আরো অন্যান্য আকাম করতে করতে ধীরে ধীরে একজন আরেক জনের ফটোকপি হয়ে যাচ্ছে।

অনেক ঘুরাঘুরির পর তারা বাসায় এসে পৌছালো তখন প্রায় দুপুর ঘনিয়ে এলো। প্রায় বারোটার কাছাকাছি।

এদিকে ফরিদা আন্টি বাসার মাঝে চুপচাপ গম্ভির হয়ে বসে আছে। রাজ, নিবিড়, নিলয়, তুষার চারজন একসাথে বাসায় প্রবেশ করা মাত্রই ফরিদা আন্টি উঠে দাড়ায়। টপ করে চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরলো তার।

প্রথমেই এগিয়ে গিয়ে নিবিড়কে কাছে টেনে নিয়ে কেঁদে দিলো সে। কারণ রাজ রুশান এরা আসার আগে থেকেই নিবিড় ফরিদা আন্টির সাথে থাকতো। একধম মা ছেলের মতো।
এর পর একে একে সবাইকে ধরে বললো,
– এবাবে উদাও হয়ে গেলে আমাকে না জানিয়ে এটা মোটেও ঠিক করোনি তোমরা।
নিবিড় কথা ঘুরাতে বলে,
– আরে আন্টি আমরা তো নিলয়কে খুজতে বের হয়েছিলাম এক সাথে।

ইমোশনে আন্টি এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি নিলয় কয়েক দিন পর তার সামনে এসে দাড়ালো।
নিলয়ের কান টেনে ধরে বলে,
– বন্ধুদের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া টাও শিখে গেছো দেখছি। অথচ আমি তোমাকে ছোট বাচ্চাদের সাথে তুলনা করতাম।

নিলয় ব্যাথায় আর্তনাথ করে উঠলেও বাকি সবাই হাসতে শুরু করলো।
,
,
দুপুরের খাওয়া শেষে রুমে একা বসে লেপটপ অন করে রাজ। ক্রিমিনাল রেকর্ডে নিলয় নামের ৮ জন ছেলেকে কুজে পেলো সে। যারা একবার করে হলেও ধরা খেয়ে ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
কিন্তু ওই আট জনের সাথে কোনো ভাবেই এই নিলয়ের কোনো মিল পায়নি।
তবুও সন্দেহ থেকে যায় মাথার মাঝে। অন্যান্য সাইড খুজতে থাকে সে। কিন্তু না, সন্দেহ জনক কিছুই দেখতে পাচ্ছে না নিলয়ের।

কলেজের কাজে নিলয়ের বাবার আইডি কার্ডের ফটো কপি ছিলো এ বাসায়। ওটা নিয়ে নিলয়ের বাবার ডিটেইলস খুজে বের করে দেখে।
ওর বাবা আসলেই পুলিশের লোক ছিলো। ৮ বছর আগে সিলেটে কোনো মিশনে গিয়ে কিছু সন্ত্রাসিদের হাতে মৃ’ত্যু হয় তার।

তার মানে এটা নিশ্চিত হলো যে নিলয় গাড়িতে যা বলছে তা মোটেও মিথ্যা কিছু বলেনি। তাহলে কি নিলয় বন্ধুদের বাচাতে নিজের অজান্তেই এমনটা করে ফেলেছে? তবুও সন্দেহ থেকে যায় কিছুটা।
,
,
সন্ধার পর,,,
– স্যার আপনি কি একটা বিষয় লক্ষ করেছেন?
টেবিলে দুই হাতের উপর থুতনি টা রেখে প্রশ্ন করে আরোহি।
রাজ বইয়ের থেকে মনোযোগ সরিয়ে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– সোজা হয়ে বসো। আর কি বিষয় সেটা?
আরোহি ওভাবেই থেকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– আপনি।
রাজ একটু অবাক হয়ে বলে,
– মানে?
আরোহি এবার সোজা হয়ে বসে বলে,
– মানে হলো, আপনি যখন প্রথম এসেছিলেন তখন খুব বলদ প্রকৃতির,,,
এতটুকু বললে রাজ আরিহির দিকে তাকাতেই আরোহি থেমে গিয়ে বলে,
– ইয়ে মানে, কেমন যেন ছিলেন। আর এখন একটু স্মার্ট হয়ে গেছেন। পুরোপুরি না, তবে আগের তুলনায় কিছুটা।

রাজ এবার বই বন্ধ করে আরোহির দিকে তাকিয়ে বলে,
– পড়াশোনায় মনোযোগ আছে তোমার? নাকি শুধু এসব নিয়ে ভাবো।
আরোহি এবার একটু রাগ করেছে এমন ভাব নিয়ে বলে,
– ছোট থেকেই পড়াশুনা নিয়ে ভেবে আসছি। আর কতো ভাববো? ওসব ভাবতে এখন আর ইচ্ছে করে না আমার।
রাজ ভ্রু-কুচকে বলে,
– তো কি করতে ইচ্ছে করে?
আরোহি একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলে,
– ভালো একটা মানুষ খুজে প্রেম করতে ইচ্ছে করে।
রাজ অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা,,,,

যা শুনে মুখ চেপে হেসে উঠে আরোহি। কিন্তু তার হাসি বেশিক্ষন রইলো না রাজের ধমক শুনে। রাজ রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,
– থাপ্পর দিয়ে গাল লাল করে দিবো এসব চিন্তা করলে। বয়স কতো তোমার?
আরোহি মুখ কালো করে বলে,
– ১৮ বছর।
রাজ বলে,
– তোমার এখনো প্রেম করার বয়স হয়নি। চুপচাপ পড়া শুরু করো।
আরোহি আবার বললো,
– একটা মেয়ের বিয়ের বয়স হলো ১৮ বছর। আমার তো ১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো আমাকে বিয়ে দিচ্ছেনা তারা।

রাজ এবার হতাশ হয়ে কপালে হাত দিয়ে চুপচাপ আরোহির দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও আরোহিকে এই কয়েক মাসে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে সে। আরোহি এসব অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়। ছোট থেকে ফ্যামিলি প্রব্লেম দেখে বিরক্ত সে। ভালো ও বিশ্বস্ত একজন মানুষের হাত ধরে এসব থেকে দুরে কোথাও চলে যেতে চায় সে।
,
,
রাত তখন ৯ টা। ভেতর থেকে মারের শব্দের সাথে মানুষের আর্তনাথ এর শব্দ ভেষে আসছে কানে।
শার্টের হাতা একটু উপরের দিকে তুলে ভেতরে প্রবেশ করে রাজ। ভেতরে দুইটা লোককে উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে বেধমর মা’রছে কয়েকজন ছেলে।

সকালে রাজ ও তার বন্ধুদের বেধে রাখা সেই লোকটা আর তার ছেলেকে। পরনে একটা শর্টপেন্ট ব্যাতিত আর কিছু নেই তাদের। সারা শরিরে মারের দাগ ফুটে উঠেছে।
রাজের ইশারা পেয়ে ছেলে গুলো আবার মারতে শুরু করলো ওদের। আর রাজ একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসে চক্ষু তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

চোখদুটু গতকাল তার থেকেই তৃষ্ণার্থ হয়ে ছিলো। এদের মারের দৃশ্য আর আত্মচিৎকার নিজ চোখে দেখার তৃষ্ণা এটা।
কিছুক্ষন পর রাজ ইশারায় ওদের থামিয়ে দিয়ে ওদের দুজনের সামনে দাড়ায়।

ছেলেটা মাথা তুলে রাজের দিকে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না।
এক হাতে ছেলেটার মুখ উপরে তুলে বলে,
– সবাইকে তুষারের মতো অসহায় ভেবে ভেবে ভুল করাটা সবচেয়ে বেশি বোকামি। উচু আর গর্ত দুটু সময় মনে করে দৌড়াতে থাকলে হয়তো উচু থেকে গড়িয়ে পরতে হবে নয়তো গর্তে হারিয়ে যেতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।

রাজ কিছুটা দুড়ে হেটে একটা পাত্র থেকে এক মুঠো লবন নিয়ে নিলো।
আর সামনে গিয়ে ছিটিয়ে দিলো ঐ লোকটার গায়ে। লোকটার চিৎকারে যেন বন্ধ রুম ফেটে যাওয়ার উপক্রম। এতোক্ষন মা’রের পর ব্যাথার সাথে এখন লবন ছিটানোর জ্বালা পোড়া যেন মৃ’ত্যুর জন্ত্রনার মতো মনে হচ্ছে তার।

রাজ হাত ঝেড়ে আবার চেয়ারে গিয়ে বসলো। এবার ছেলেটার দিকে তাকালো সে। খোজ নিয়ে দেখেছিলো ছেলেটার নামে ৭ টা রেপ কেস আছে। আর একটারও ন্যায্য বিচার হয় নি। ক্ষমতার জোড়ে ছারা পেয়েছে প্রতিবার। বিপরিত মানুষ গুলো ধর্ষনের মামলা করেও কোনো বিচার না পেয়ে কাঁন্না ছারা কিছুই করতে পারেনি।

কিন্তু রাজ বিস্তারিত জানার পর ছেলেটার বিচার হওয়াটা যেন বাধ্যতা মুলক মনে হলো। এসব মানুষ যত দিন মুক্ত বাতাশে ঘুড়ে বেড়াবে ততদিন একের পর এক অপরাধ করেই যাবে।
এদেরকে বাচিয়ে রাখলেও হ’ত্যা করতে হবে তাদের নোংড়া মানসিকতার।

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো রাজ। আজকের পর থেকে ছেলেটা বেচে থাকবে। তবে আর কোনো অসুস্থ মানসিকতা জেগে উঠবে না তার।
চাইলেও আর কারো সাথে অন্যায় করার শক্তিটুকু থাকবে না তার। প্রত্যের ধড়ষকের এমনটাই হওয়া উচিৎ।

এর পর রাজ ইশারা দিতেই দুজন ডাক্তার বেড়িয়ে আসে ভেতর থেকে। রাজ ওদের দিকে চেয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো।
ছেলেটা বিষয়টা বুঝতে পেরে চিৎকার করে উঠলো। রাজের দিকে চেয়ে বার বার অনুরুধ করতে লাগলো একবার মাপ করে দেওয়ার জন্য। এর পর আর কোনো মেয়ের মানুষের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না সে। না কারো সাথে অন্যায় করবে।

কিন্তু ছেলেটার চিৎকার রাজের কান স্পর্শ করছে না। চুপচাপ সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। কারণ রাত গভির হয়ে আসছে। ওদিকে তার জন্য অপেক্ষা করছে তার বন্ধু রা।

To be continue…….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– রুশানের বাড়ির কি যেন জায়গা জমির ঝামেলা বলেছিলো, ওটা কি এখনো মিটমাট হয়নি?
সবার সামনে নাস্তা দিতে দিতে কথাটা বললো ফরিদা আন্টি। নিবিড় খাবার মুখে তুলে বলে,
– কথা হয়নি তার সাথে। বলেছিলো কয়েকদিন লাগতে পারে। বুঝেনই তো, জায়গা জমির ঝামেলা। শেষ হলেই চলে আসবে।

ফরিদা আন্টি নাস্তা মুখে তুলে বলে,
– তুষার কোথায়? নাস্তা করতে ডাকোনি তাকে?
নিবিড় একটু গলা টেনে সিড়ির রুমের দিকে তাকালো। তুষারকে না দেখে বলে,
– হয়তো ফ্রেশ হচ্ছে। চলে আসবে এখুনি।

ওদিকে আজ একটু দেড়ি করে উঠলো তুষার। তবুও শরির ক্লান্ত হয়ে আছে। অলসতা কাটাতে ছাদে গেলো একটু হাটাহাটি করবে ভেবে। গায়ে একটা সেন্টু গেঞ্জি আর পরনে একটা হাপ পেন্ট।
দুই হাত দুই দিকে মেলে দিয়ে ক্লান্তি ছাড়াতেই খেয়াল করলো পাশের বাড়ির ছাদে মেয়েটা টপ গুলোতে পানি দিচ্ছে।
কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে এক দৌড়ে রুমে চলে আসে তুষার।

রুমে এসেই পেষ্ট আর ব্রাশ নিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো 5G গতিতে। এক সেকেন্ড সময়ও অপচয় করা যাবে না।
ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়েই দ্রুত শার্ট-পেন্ট পরে, হাতে ঘড়ি লাগিয়ে জুতা গুলো খুজতে লাগলো। তার পর খুজে বের করে জুতা পারে সানগ্লাস টা হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো ছাদে। ছাদের ঐ মেয়েটাকে ইম্প্রেস করতে হবে।

একেবারে ফিটফাট হয়ে ছাদে গিয়ে দাড়ায় তুষার। কিন্তু ততোক্ষণে মেয়েটা চলে গেলো ছাদ থেকে। হালকার উপর একটা ছ্যাকা খেলো তুষার। তার এতোক্ষন ধরে সাজগোছ সব বৃথা গেলো।

কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করেও ঐ মেয়েটাকে আর দেখলো না। ওদিকে বাকিদের নাস্তা প্রায় শেষের দিকে। নাস্তা শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিলো তারা। তুষার ওভাবেই মুখ গোমড়া করে নিচে চলে আসলো।

আসার পর নিবিড় একটু উপর নিচে তাকিয়ে বলে,
– কিরে এভাবে জামাই সেজে সকাল সকাল কোথায় রওনা দিলি?
তুষার চুপচাপ থেকে কিছুক্ষন পর বলে,
– কোথাও যাচ্ছি না। ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছি।
নিবিড় ফোন দেখে বলে,
– ভার্সিটির তো এখনো দুই ঘন্টা বাকি।
তুষার বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ঘ্যান ঘ্যান করিস না তো।
,
,
ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার পর অরিণ একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে রাজের হাতে দিলো। যেখানে ছিলো একটা পাঞ্জাবি। রাজ প্রথমে অবাক হলেও পরে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। কারণ কারো গিফ্ট ফিরিয়ে দেয় না রাজ। কিন্তু অরিনার বার এমন করে তারে ঋণী করে দিচ্ছে। রাজ এখন পর্যন্ত নিজে থেকে কিছুই দিতে পারেনি তাকে।
এর মাঝে একটা মেয়ে একটা ফুল হাতে তাদের সামনে দাড়ালো। অরিন বসার জায়গা করে দিয়ে বলে,
– কিরে তিথি, ফুল কার জন্য নিয়ে এলি?
তিথি ফুলটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি নিয়ে আসিনি। আমাকে দিয়েছে একজন।
অরিণ একটু হেসে বলে,
– মানে প্রপোজ?
তিথি লজ্জা ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলে,
– হুম, তবে এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। বেস্ট ফ্রেন্ড হটাৎ প্রপোজ করে বসছে। না পারছি এক্সেপ্ট করতে, আর না পারছি ফিরিয়ে দিতে।
অরিণ বলে,
– বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছে তাতে কি? এতে আরো সুবিধা ভালো। তোদের এক সাথে দুইটা সম্পর্ক থাববে। আর একজন আরেকজনের সাথে মন খুলে সব শেয়ার করতে পারবি। কোনো জড়তা থাকবে না। তোর যদি মনে হয় ছেলেটা ভালো। তুই তার সাথে ভালো থাকবি বা সে তোকে ভালো রাখবে। তাহলে এক্সেপ্ট করে ফেল। বেস্ট ফ্রেন্ড জীবন সঙ্গি হলে তা তো আরো সুন্দর। সারা জীবন সে শুধু তোর স্বামী না একজন ভালো বন্ধুও হবে।

অরিণের কথা গুলোয় কেমন অদ্বুত অনুভূতি হলো রাজের মাঝে। এটা আজ নতুন করে শুরু নয়। বেশ কয়েক দিন ধরে অনুভূতি গুলো কেমন অবাধ্য মনে হচ্ছে তার। কিছুতেই কন্ট্রোলে তাকে না। আউট অফ কন্ট্রোল।
তাই রাজ একটু জড়তা নিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা আমি আসি হ্যা, বাকিরা অপেক্ষা করছে।

বলেই আর এক সেকেন্ড দাড়ালো না রাজ। হনহন করে চলে গেলো। কিছুটা দুরে গিয়ে আবার পেছন ফিরে অরিনের দিকে তাকালো সে। মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলে আবার উল্টো দিকে ঘুরে তা আড়াল করে নেয় রাজ।

অরিণের দিকে চেয়ে তিথি বলে,
– আচ্ছা তোর আর রাজের মাঝে কি কোনো কিছু চলছে? আই মিন রিলেশনশিপ?
অরিণ মাছি তাড়ানোর মতো বিষয়টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
– আরে ধুর, রিলেশনশিপে কেন যাবো? তাও আবার ওর মতো একটা ফকিন্নির সাথে? পড়াশুনায় ভালো আমায় হেল্প করে দেখে ফ্রেন্ড বানিয়ে রেখেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। নাহলে ওর মতো ক্ষেত ছেলের সাথে আমি কোন দুঃখে মিশতে যাবো?
তিথি একটু হেসে বলে,
– এভাবে বলছিস কেন? শুনলে কষ্ট পাবে।

ওদিকে নিবিড়, নিলয় অপেক্ষা করছে রাজের জন্য। আর তুষারকে মুরাদ নামের একটা ছেলে এসে একটু আগে ডেকে নিয়ে গেছে।

নিলয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– কিরে ভাই, রাজের পিরিত এখনো শেষ হয় নি?
নিলয়ের কাধে হাত রেখে ভড় দিয়ে দাড়িয়ে নিবিড় বলে,
– ভাই একটা কথা তো নিশ্চই শুনেছিস, পিরিতি কাঠালের আটা লাগলে পরে ছারে না। ওদেরও এমন অবস্থা হয়েছে। কাঠালের আটায় আটক হয়েছে দুজন, তেল ছারা ছাড়বে না এই আটা। আর বর্তমানে এমনিতেই তেলের অনেক সংকট। সো ছাড়াছাড়ির কাজ নেই।

এর মাঝে তুষার ফিরে এলো। তুষারের দিকে চেয়ে নিবিড় বলে,
– মুরাদ কেন ডেকেছিলো তোকে?
তুষার বলে,
– এমনি কয়েক দিন পর দেখা হয়েছে তাই কথা বলতে।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– ভাই আমারে ওসব শিখাতে আসিস না। মুরাদের সাথে মাঝে মাঝে কেন মিশতে যাস তা কি আমি বুজি না ভাবলি? মুরাদ কেন আমাদেরকে না ডাকে তোকে ডাকে? কারণ রতনে রতন চিনে, মাতালে চিনে মাতাল। নিশ্চই আজও কোথাও বোতল ম্যানোজ করে এসেছিস। শুনে ওসব ছাই পাশ খেয়ে রাতে বাসার কিনারেও আসবি৷ না। বুঝলি মামা?

তুষার একটু অনুরুধের স্বরে বলে,
– আজকে না। কালকে পার্টি। প্লিজ মামা এমন করিস না। একধম মুখ ফ্রেশ করে তারপর বাসায় যাবো। কোনো গন্ধ থাকবে না।
তারপর নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আর তুই। তোর তো আবার মুখ পাতলা। এসব আবার কাউকে বলে বেড়াবি না প্লিজ।
,
,
সন্ধার পর থেকেই নেমে গেলো সেই লোক গুলো। উদ্দেশ্য শতাধিক মানুষ গা’য়েব করা। কারণ এই সময় টা সবচেয়ে উত্তম। বাজার গাট ভর্তি থাকে। রাস্তা ঘাটে ছেলেদের আড্ডা শুরু হয়। কেউ নিরিবিলি হেটে হেটে ফোনালাপে ব্যাস্ত তাকে। আর চার পাশ টা অন্ধকার। জানাজানি হতে হতে গভির রাত হয়ে যাবে। আর এর আগেই তাদের কাজ শেষ।

মোট ৪৭ টা টিম। প্রত্যের টিমে ৩-৪ জন করে। তার মাঝে টিম লিডার একজন করে।

আর রুশানের নেতৃত্যে ওদের ফলো করে রেখেছে তার টিম। ওদের ৪৭ টা টিমের পেছনে রুশানের একজন একজন মেম্বার নজর রেখেছে। প্রত্যেক জনই ছদ্মবেশে। কেউ পাগল সেজে, কেও সি’এন’জি র ড্রাইভার সেজে। এক কথায় কেও যেন চিনতে না পারে ওই ভাবে ফলো করছে তারা। তবে সবাই কান টুপির ভেতর লুকানো ব্লুটুথ এর সাহাজ্যে রুশানের সাথে কন্টাক্ট রেখেছে। শুধু অর্ডার পাওয়ার অপেক্ষায়।

অপরাধীরা কিছুক্ষন পর পর কোথাও দাড়িয়ে ফোনে কন্টাক্ট করে। এর পর আবার চলে যায় অন্য দিকে। আর পেছন পেছন ফলো করে রুশানের টিমও।

তাড়াহুরা করে সব করছে না তারা। আস্তে ধিরে করছে সব৷ দেখতে দেখতে রাত ৯ টা বেজে এলো। একটা ছাউনির নিচে বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে। ভাই-বোন নাকি ক্যাপল তা বোঝার উপায় নেই। আর ওদের চার পাশে ঘুর ঘুর করছে দুইটা লোক। আর তার থেকে বেশ কিছুটা দুড়ে হাতে একটা থালা আর ভর দেওয়ার জন্য লাঠি নিয়ে ভিক্কুক সেজে একপা একপা করে হাটছে রুশান। চেনার কোনো উপায় নেই। মাথাটার মাঝে কান ও চুলের অংশ টা গামছা দিয়ে পেচিয়ে রেখেছে।

কিছুক্ষন পর রুশান শান্ত ভাবে একটা সংকেত দিলো সবাই প্রস্তুত হতে। আর প্রত্যেকে অপরাধীদের টিম ক্যাপ্টেনকে টার্গেট করতে। সবাই দুর থেকে চুপচাপ তাই করলো। সময় তখন ৯ঃ১৫ মিনিট।
রুশানের ইশারা পেতেই এক সাথে গু’লি চললো দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
অপরাধীদের টিম লিডার গুলো ঢলে পরেছে একে একে। এর পর আরো কয়েক রাউন্ড করে চলতেই পাশের বাকিরাও ঢলে পরলো। কয়েক সেকেন্ডের মাঝই হয়ে গেলো সব।

এক মুহুর্তও দেড়ি না করে রুশানের টিমের সকল মেম্বার একে একে সরে গেলো নিজেদের অবস্তান থেকে। রুশানও থালা আর লাঠি ফেলে সরে গেলো সেখান থেকে। এখানে আর থাকা নিরাপদ নয়।

অপরাধীদের ৪৭ টা টিমে মোট মানুষ ছিলো দেড়শ এর কাছাকাছি। সবাই শেষ হয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে। হয়তো এর মাঝে দু’একটা টার্গেট মিস হতে পারে।

রুশাণ হাটতে হাটতে ফোন বের করে। দেখে গ্রুপে একে একে মেসেজ আসছে, Done, Done, Done এমন অসংখ্য মেসেজ। রুশান হাসির রেখা টেনে ‘গুড জব’ বলে কেটে দিলো গ্রুপ কল।
সবাই কান থেকে ব্লুটুথ খুলে পকেটে পুড়ে নিজেদের জায়গা থেকে গাড়িতে উঠে গেলো।

রাত তখন ১২ টা। দু’একটা শুট মিস হয়ে যাওয়ায় বেচে গেলো কয়েকজন। ওরা একে একে ফোন দিতে লাগলো তাদের মেইন বসের কাছে। যে এই ৪৭ টা টিমকে এতোদিন পশিক্ষন দিয়ে সব বুঝিয়ে তারপর পাঠিয়েছিলো। আর এখন আড়াল থেকে সব পরিচালনা করছে।

একটা লোক কাপা কাপা গলায় বলে,
– ভ ভা ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে। হুট করে কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই আমাদের সব লোকে শু’ট করা হয়েছে। কেউ আর বেচে নেই। আমি নিজে কোনো মতে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।

অন্ধকারে বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকা ভয়ঙ্কর মুখটা গর্জন ছাড়ে,
– হোয়াট ননসেন্স, এক সাথে শু’ট করা হয়েছে মানে? এটা কিভাবে সম্ভব। মজা করছিস না তো? যদি এমনটা হয় একটাও ঘা’ড়ে মা’থা থাকবে না মাইন্ট ইট।
ওপাশ থেকে আবার কাপা গলায় আওয়াজ আসে,
– ভাই, আপনার সাথে মজা করার দুঃসাহস বা বড় কলিজা কোনোটাই আমাদের নেই। আমাদের প্রত্যেকটা টিম হাওয়াই বাজির মতো সেকেন্ডেই উড়ে গেলো।

ফোন রেখে শান্ত হয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকে সেই ভয়ঙ্কর চেহারায় অধিকারি ছেলেটা। এতো গভির প্লেন কিভাবে সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেলো তা মাথায় আসছে না তার।

ভেতরে রুমের মাঝে লাইট জ্বলে উঠলো। চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বেলকনিতে আসে তুষার। দেখে নিলয় বেলকনির গ্রিল ধরে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে গম্ভির মুখ নিয়ে। হয়তো খুব চিন্তিত সে।
তুষার একটা হাই তুলে বলে,
– কিরে ভাই, এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে তোকে না পেয়ে খুজে দেখি এখানে এসে দাড়িয়ে আছিস। কোনো সমস্যা?

তুষারের কন্ঠ শুনতেই নিলয় নিজেকে মুহুর্তেই স্বাভাবিক করে নিলো। দুশ্চিন্তার ছাপ টা মুহুর্তেই লুকিয়ে তা হস্যজ্জল মুখে পরিনত করে নিলো। যেন এক জাত অভিনেতা সে।

To be continue………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

এক সাথে এতো গুলো মানুষকে শু’ট করাটা কোনো সহজ বিষয় না। বিষয়টা কিছুতেই মাথায় নিতে পারছে না নিলয়। বিশেষ করে সিক্রেট তথ্য ফাস হলো কি করে?

তুষারকে দেখেই নিজের অস্থিরতাকে গুছিয়ে ফেললো নিলয়। পুনরায় মুখে হাবাগুবা ভাবটা ফিরিয়ে এনে হাস্যজ্জল মুখে তুষারের দিকে তাকায়।
তাষার ঘুমু ঘুমু চোখে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
– এতো রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছিস?
নিলয় ঠিক আগের মতোই তার হাবাগুবা চেহারায় বলে,
– আসলে ঘুম আসছিলো না। জানিস, একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। তাই আর জোড় করেও ঘুমাতে পারছিলাম না দেখে এখানে এসে দাড়িয়ে আছি।

তুষার আর কিছু না ভেবে বলে,
– খারাপ স্বপ্ন তো কত মানুষই দেখে। তাই বলে কি এভাবে সারা রাত দাড়িয়ে থাকবি নাকি? চল ঘুমাতে চল।
নিলয় বেশি কিছু বললো না। তুষারের সাথে ভেতরে এসে নিজের মতো করে চুপচাপ শুয়ে পরে।
ঘুমের অভিনয় করলেও ঘুম আসছে না তার। কারণ এতো বড় একটা ঘটনা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। নির্জন ভাই নিশ্চই ফোন দিবে খবর পাওয়া মাত্রই।
,
,
ঘটনা টা রাত ৯ টার দিকে ঘটায় রাতের মাঝেই ফেসবুক ইউটিউবে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। এই জেলায় এতোটা লা’শ পাওয়া গেছে। ঐ জেলায় এতোটা পাওয়া গেছে। সব গুলোর মাথায় শু’ট করা হয়েছে। তবে কে করেছে তার কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি। বিশেষ করে ফেসবুক ইউটিউবে কিছু ভিডিও ক্রিয়েটর রা তা টেনে টুনে আরো বড় আকারে তৈরি করে ফেলছে।

ওদিকে ভোর হতেই বাসায় প্রবেশ করে রুশান। তার এতো বুদ্ধির মাঝে এই জিনিস টা ছিলো সবচেয়ে বড় বোকামি। যে কয়দিন আগে রুশান বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। আর রাতে এতো গুলো মানুষ খু’ন হওয়ার পরদিন সকালেই সে বাসায়। বিষয়টা মোটেও নিলয়ের দৃষ্টি এড়ানোর মতো না৷ কারণ রুশান নিজেও নিলয়ের পরিচয় জানে না আর নিলয়ও জানে না রুশানের পরিচয়।

নির্জন তখন সুইমিংপুলের মাঝে রিলেক্স মুডে ছিলো। পাশ থেকে একজন লোক এসে খবর দেয় এতো গুলো মানুষের মৃত্যুর খবর। তাও সব গুলোই ছিলো পশিক্ষন সম্পন্ন গ্যাং লিডার।
খবর শুনে উত্তেজনা তৈরি হয়নি নির্জনের মাঝে। রিলেক্স মুডে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে সে। চার পাশ টায় ভয়ানক নিস্তব্দতা।

নিস্তব্দতা ভেদ করে নির্জন ওভাবেই শান্ত গলায় বলে উঠে,
– নিলয়কে খবর দাও, আর ইমিডিয়েটলি এখানে আসতে বলো।
পাশের লোকটা ভদ্রতা নিয়ে বলে,
– জ্বি স্যার।
,
,
একে একে মৃত্যুর সংখ্যা বের হলো ১৪৩ জন। যার মাঝে ৪৭ জনের নামে পুরোনো ক্রাইম রেকর্ড খুজে পাওয়া যায়।

এক রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এক সাথে ৪৭ জন মাফিয়াকে শুট করা হয়েছে। জানা যায় এদের মাঝে সকলেই বড় বড় ক্রাইমের সাথে জড়িত ছিলো। তবে কে বা কারা এতো গুলো মানুষকে একই টাইমে শুট করেছে, সেই ব্যাপারে এখনো কিছুই জানা যায় নি।

টিভিতে সংবাদ ভােসে আসতেই একটু মুচকি হাসে রুশান। রাজ দুই কাপ চা নিয়ে পাশে এসে বসলো। রুশানের দিকে এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
– ভাই আমার মাথায় ধরছে না। একই টাইমে এতো গুলো মানুষকে এক সাথে শুট করা টা কিভাবে পসিবল? তাও এক জায়গায় না। দেশের বিভিন্ন জায়াগায়।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রুশান একটা হাসি দিয়ে বলে,
– পসিবল হয়েছে বলেই তো টিভিতে নিউজ এসেছে তাই না?

বিনিময়ে কিছু বললো না রাজ। একটু রহস্য জনক হাসি দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভির দিকে তাকায়।
এর মাঝে নিবিড় আর তুষারও এসে জয়েন হলো তাদের মাঝে।

নিবিড় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
– গত কাল রাত থেকে ফেসবুকে ডুকতেই পারছিনা এসব নিউজের কারনে। সবার একটাই দাবি খুনিদের বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

পাশ থেকে তুষার বলে,
– মানুষ না বুঝেই একটা নিউজ পেলে ওটা নিয়ে লাফাতে থাকে। নিউজের সত্যতা যাচাই করেও না। আর এখন তো আবার সকল মানুষ পল্টি খেলো। যখন জানতে পারলো যে যারা মারা গেলো তারা প্রত্যেকেই স্মাগলিং এর সাথে জড়িয়ে আছে। আর প্রত্যেকের নামেই বড় বড় ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। গত কাল রাতেও, খুনির বিচার চাই, বিচার চাই বলা লোক গুলো এখন সবাই চুপ।

নিবিড় মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,
– আমরা এমনই। ভালো খারাপ না ভেবেই মিডিয়া যা বলে তা নিয়েই লাফাই। আর মিডিয়াও এখন ভালো খারাপ না ভেবে যা তা নিউজ ছাপায়। আগে মানুষ মিথ্যা বলতো, আর মিডিয়া সত্য খুজে বেড়াতো। আর এখন মিডিয়ার কথায় জনগন সত্য খুজে পায়না।

রাজও রুশান দুজনই চুপচাপ বসে আছে। আর নিবিড় ও তুষার নিজেদের মাঝে আলোচনা করতে ব্যাস্ত। আর নিলয় তো অনেক আগেই বেড়িয়ে গেলো নির্জনের ফোন পাওয়া মাত্রই।
,
,
একটা গাড়ি এসে থামে নিলয়ের সামনে। ওটাতে উঠে আবার কিছুটা দুরে নেমে গেলো। তারপর ওখান থেকে আরেকটা গাড়ি এসে নিয়ে যায় তাকে। এভাবে কয়েকটা গাড়ি চেন্জ করে করে নিজের গন্তব্যে পৌছালো সে।
বিশাল একটা বাড়ি। নির্জন থাকে এখানে। চার পাশে সিকিউরিটি গার্ডে ঘেরা। এটা নির্জনের নির্দিষ্ট বাড়ি না। এমন একাধিক বাড়ি আছে বিভিন্ন যায়গায়। একেক সময় একেক বাড়িতে রিলেক্স করে। বেশির ভাগই থাকে দেশের বাইরে। আর ফ্যামিলি থাকে অন্য যায়গায়। ফ্যামিলিকে তেমন একটা সময় দেয়না বললেই চলে। তার বিজনেস, টাকা আর একাধিক নারীর প্রতি আসক্তিটা বেশি।

নিলয় সোজা গিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। কোনো গার্ডের কাছে জবাবদিহি করতে হয়নি তাকে। কারণ নির্জনের কাছে নিলয় প্রায়ই আশে বলেই সকলের পরিচিত মুখ সে।

বাড়ির ভেতরে সুইমিংপুল টার কাছে অর্ধউলঙ্গ কয়েকটা মেয়েকে নিয়ে বসে আছে নির্জন। নিলয় কোনো সংকোচ ছারাই গিয়ে তার পাশে বসে।
নির্জন ইশারা করলে মেয়ে গুলো ও বাকিরা সরে যায় সেখান থেকে।

– বলেছিলে সব প্লেন মাফিকই হচ্ছে, তাহলে এমনটা হওয়ার কারণ কি?
খুব শান্ত ভাবেই প্রশ্ন করে নির্জন।
নিলয় নিচের দিকে চেয়ে বলে,
– বিষয়টা হয়তো আমাদের মাঝ থেকে আগেই কেও বাইরে প্রকাশ করেছিলো৷ নাহলে এমনটা হওয়ার কথা না।
নির্জন খুব শান্ত ভাবেই কথা বলে। এখনও নিলয়ের দিকে চেয়ে শান্ত ভাবে বলে,
– তোমার প্রতি আমার কনফিডেন্স ভালো বলেই এই বিষয়ে কোনো জবাবদিহি চাইবো না আমি। কারণ লাইফে ফাষ্ট কোনো কাজে ধরা খেয়েছো তুমি। যেটা একধমই অবিশ্বাস্য। তবে জবাবদিহি চাইবো এটা নিয়ে যে, বিষয়টা কে পাস করেছে তা এখনো আমি জানতে পারলাম না কেন? অথবা তাকে মে’রে ফেলা হয়নি কেন?

নিলয়ও খুব শান্ত ভাবে বলে,
– তারাতারিই হয়ে যাবে তা।
– গুড, আর তোমার টিমের ৪৭ টা মেইন স্ট্রাইকার চলে গেলো। তোমার কি মনে হয়না দলকে আবার সাজিয়ে নিতে হবে?
নিলয় একটু হেসে বলে,
– এই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।
– তোমার প্রতি কনফিডেন্স আছে বলেই আমি নিশ্চিন্তে আছি। তবে এখন থেকে সাবধানে কাজ করবে আর চোখ কান খোলা রাখবে।

নিলয় উঠে দাড়ালো। বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে সেখান থেকে। পরিস্থিতি কিভাবে হাতে আনতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে তার। বিপদ ডালে ডালে চললে, সে চলে পাতায় পাতায়।

ঘরের খবর বাইরে কিভাবে গেলো, আর কেই বা এসব করলো? কে তার এতো গুলো টিম মেম্বারকে মে’রেছে?
বের করতে হয়তো খুব একটা সময় লাগবে না তার। হায়াত ফুরিয়ে এসেছে ওদের। নাহলে যে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারবেনা সে।

To be continue……….