ছদ্মবেশ পর্ব-২২+২৩+২৪

0
335

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

কিছুক্ষন পর খাওয়া দাওয়া শেষে কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে নিবিড়ের। সামনে নিরা বসে আছে আর পাশে তাকিয়ে দেখে তার ৪ নাম্বার বাবু ওয়েটারের ড্রেস পরে দাড়িয়ে আছে। আর তার পেছনে একে একে নিবিড়ের সব বাবু এসে দাড়ালো।
ওদের মাঝে একজন খুব নরম স্বরে বলে,
– খুব ঘুম পাচ্ছে বাবু? কাঁথা-বালিশ এনে দিবো?

নিবিড় মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা করেও কিছু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না। সামনে সব ঘোলা ঘোলা লাগছে তার। দুই হাতে চোখ কচলে তাকালে হালকা ঝাপসার মাঝে দেখতে পেলো ৭-৮ টা মেয়ে তার সামনে। মাথাটা ভাড় হয়ে আসছে ধিরে ধিরে। টেবিলে মাথা রেখে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে নিলো সে।

এক ঘুমে কতোক্ষন ছিলো ঠিক মনে নেই তার। হটাৎ এক বালতি পানি মুখের উপর পরতেই চোখ খুলে তাকায় সে।
মাথাটা কয়েকবার ঝাকি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে। তারপর মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে তার সব বাবু সেখানে উপস্থিত। আর প্রত্যেকের হাতে একটা করে লাঠি।
নিবিড়ের ঘুমের ঘোর কাটেনি পুরোপুরি। বাচ্চাদের মতো তাকিয়ে বলে,
– আমি কোথায়?
একটা মেয়ে লাঠি হাতে সামনে এগিয়ে এসে বলে,
– তুমি এখন শশুর বাড়িতে বাবু।
নিবিড় আবারও অবুজের মতো নিষ্পাপ কন্ঠে বললো,
– কার?
একটা মেয়ে এবার নিবিড়ের গাল টিপে ধরে রাগী গলায় বলে,
– হারামি এখনো কিছু মাথায় ঢুকছে না তোর?

নিবিড় এবার নড়ে চরে উঠতেই দেখে তার হাত পা বাধা। আর সামনে তার একে একে সব বাবু লাঠি হাতে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এবার বিষয়টা মাথায় ঢুকলো তার, যে সে ভালোই বিপদে পরেছে। একটা শুকনো ঢোক নিয়ে বলে,
– আপনারা কারা?
একটা মেয়ে রাগি গলায় বললো,
– এখন চিনতে পারছিস না আমাদের?
নিবিড় জায়গায় অস্বিকার করে বলে,
– না তো কে আপনারা?
এবার নিরাও বলে,
– এখন আমাকেও চিনতে পারছো না বাবু?
নিবিড় এবার নিরার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলে,
– আপনি কে?

এবার আরেকটা মেয়ে রেগে এসে বলে,
– মাদার*** এর সাথে এখনো কিসের কথা? লাঠি একটা একটা তার পেছন দিয়ে দিলেই তো সব মনে পরবে।
নিবিড় আবারও অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
– আপনার মুখের ভাষা এতো খারাপ কেন আপু?
– হালা*** এখন তোর আপু হয়ে গেছি তাই না? এই তোমার দাড়াই আছো কেন? বানাও সালারে।

নিবিড় আর কিছু বলে উঠার আগেই শুরু হয়ে গেলো তামিল সিনেমার মা’ইর। মা’ইর হচ্ছে জোড়ে কিন্তু সাউন্ড কম।

কিছুক্ষন পর শান্ত হলো মেয়ে গুলো। নিবিড় একেবারে লুলা হয়ে গেছে।
একটা মেয়ে সবাইকে থামিয়ে বলে,
– একে মে’রে কোনো লাভ হবে না। ওর ** টা কেটে দিলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে এমন করার সাহস পাবে না।

মুহুর্তেই নিবিড় চিৎকার করে বলে উঠে,
– না না না আপু, আপনি আমার ধর্মের বোন। আপনি আমার আপু, আমার মা, চাচি, খালা সব। আমি আর জীবনেও কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না।
একটা মেয়ের মায়া হলো নিবিড়ের প্রতি। বেচারাকে এতোক্ষন ধরে অনেক মে’রেছে। তাই মায়া দেখিয়ে বলে,
– আচ্ছা ও যেহেতু কথা দিয়েছে যে আর কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন করবে না। তাহলে এখন ছেরে দে তাকে।
আরেকটা মেয়ে বলে,
– দাড়ান আপু, ওকে আগে শপথ করানো দরকার।
তারপর নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– বল, আমি শপথ করিতেছি যে,,,
নিবিড়ও ভয়ার্ত গলায় বলে,
– আমি শপথ করিতেছি যে,,,
তারপর মেয়েটা বলে,
– জীবনে সব মেয়েকে নিজের বোনের নজরে দেখিবো।
নিবিড় এবার থেমে গিয়ে বলে,
– তাহলে বৌ হবে কে?
আশে পাশের সব মেয়ে এবার কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে।

রাত তখন প্রায় ১১ টা। মেয়েগুলো নিবিড়কে রাস্তায় একা ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। ঢুলতে ঢুলতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নিবিড়।
শরিরের ব্যাথায় সামনের দিকে পা বাড়ানোর শক্তিটুকু পাচ্ছে না সে। তবুও হেটে চলছে। যাই হোক বাসায় তো পৌছাতে হবে।
কিছুটা গিয়েই একটা দেওয়াল ধরে কিছুক্ষন দাড়ায় সে। আবার কিছুটা হেটে আরেকটা দেওয়াল ধরে দাড়ায়। এভাবেই হাটতে হাটতে বাসার দিকে চললো সে।

বাসায় এসে গেটে কয়েকবার টোকা দিলে দাড়োয়ান চোর চোর বলে চেচানো শুরু করলো। নিবিড় ক্লান্ত গলায় বার বার বলছে,
– চাচা আমি নিবিড়।
কিন্তু চাচার কানে সেই কথা পৌছাচ্ছে না। কিছুক্ষনের মাঝে তুষার লাঠি নিয়ে বেড়িয়ে আসে। আর তার পিছে রাজ আর রুশান।
তুষার গেট খুলেই দেখে বাইরে গেটের সাথে হেলান দিয়ে ক্লান্ত শরির নিয়ে নিচে বসে আছে নিবিড়। তুষার এবার লাঠি ফলে নিবিড়কে ধরে তোলে।
রুশান সামনে এগিয়ে এসে আরেক হাত তার কাধে নিয়ে নিবিড়কে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
– কিরে কারা মে’রেছে তোকে?
তুষার বলে,
– কে মা’রবে আর? নিশ্চই কোনো মেয়ের সাথে আকাম করতে গিয়ে মানুষের হাতে ধরা পরে রাম কেলানি খেয়ে এসেছে।
নিবিড় ক্লান্ত গলায় বলে,
– ছি ছি ভাই এসব কি অপবাদ দিচ্ছিস। আমি এতোটাও খারাপ না। জীবনেও এসব করতে যাইনি আমি।
তুষার তাকে ধরে হাটতে হাটতে বলে,
– তাহলে এই অবস্থা কে করেছে তোর?
পাশ থেকে রাজ বলে,
– ভাই দেখছো ও ক্লান্ত, আগে ওকে ঘরে নিয়ে চলো, তারপর না হয় এসব জিজ্ঞেস করবে।
,
,
রাগে হটাৎ ফোন দিলো রিমা। রুশান ঘুমু ঘুমু চোখে ফোন রিসিভ করে বলে,
– হুম বল, এতো রাতে ফোন দিলি কেন?
রিমা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– কেন ফোন দিলে কি সমস্যা? আর প্রেমিক-প্রেমিকারা তো গভির রাত অব্দি ফোনে কথা বলে কাটিয়ে দেয়।
রুশান হাই তুলে বলে,
– ওসব আলগা পিরিত আমার নেই। ভোর রাত অব্দি জেগে বাবু সোনা ডাকার মাঝে ভালোবাসার প্রকাশ হয় না। আর এসব কথা আমাকে শুনাচ্ছিস কেন? আমি কি তোর বর নাকি প্রেমিক কোনটা?
রিমা এবার কিছুটা রেগে বলে,
– আমি আপনার কিছুই না?
রুশান স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– হুম, খালাতো বোন।
– শুধুই খালাতো বোন? তাহলে ওই দিন গলার মাঝে লেখাটা লিখেছেন কেন?
– ওটা লিখেছি যেন তুই হিজাব পরে চলিস তাই।
রিমা অভিমান করে বলে,
– তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, তাই তো?
রুশান আবার হাই তুলে তুলে বলে,
– আমি কি সেটা বলেছি নাকি?
রিমা একটু হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– তার মানে ভালোবাসেন তাই তো?
রুশান আবার বলে,
– আমি কি সেটাও বলেছি নাকি?
রিমার রাগ হলো একটু। তবুও তা সামলিয়ে বলে,
– আচ্ছা যাই হোক, আজ কয় তারিখ?
রুশান এক কাত হয়ে শুয়ে বলে,
– কেন ২২ তারিখ।
রিমা একটু মুচকি হেসে বলে,
– আর ৩ দিন পরে কি? মনে আছে কিছু?
রুশান একটু দুষ্টুমি করে বলে,
– হুম মনে আছে তো।

রিমার কেমন জানি খুব আনন্দ হলো ভেতর ভেতর। তার মানে রুশাম বিশেষ দিনের কথা ঠিকই মনে রেখেছে। তবুও উৎসাহ নিয়ে বলে,
– বলেন তো কি?
রুশান স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– আজ ২২ তারিখ মানে ৩ দিন পর হবে ২৫ তারিখ। এটা তো সবাই জানে।
রিমা এবার রাগে ‘ধুর’ সুচক শব্দ উচ্চারণ করে ফোন রেখে দিলো। ফোন রেখে আবার ঘুমিয়ে গেলো রুশান।
,
,
গভির রাতে খুব জ্বর উঠলো নিবিড়ের। ঘড়ির কাটা তখন ৩ টা পার হয়ে গেলো। নিবিড়ের এমন অবস্থা দেখে ঘুমায়নি তুষার।
তুষার পাশে বসে নিবিড়ের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।
আর নিবিড় বিড় বিড় করে বলছে,
– ভাই, মেয়ে মানুষ যে এতো ভয়ঙ্কর তা আগে জানতাম না আমি। বিশ্বাস কর ভাই, ওরা সবাই মিলে আমাকে মারতে মারতে মারতে মারতে,,,,
তুষার এবার নিবিড়ের বিড়বিড় থামিয়ে বলে,
– ভাই চুপচাপ শুয়ে থাক তো। ওসব মনে করতে থাকলে জ্বর আরো বাড়বে তোর।
,
,
পরদিন সকালে রুমে নাস্তা নিয়ে আসে ফরিদা আন্টি। নিবিড়ের কপালে হাত রেখে দেখে জ্বর এখনো পুরোপুরি ছারেনি। হাতে কয়েকটা মারের দাগ দেখে বলে,
– ইশ একেবারে ঝাঝড়া করে ফেললো। দেখি জামা খোলো তো।
নিবিড়ের একটু লজ্জা লাগলেও ফরিদা আন্টি তার টি-শার্ট খুলে পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু মা’র আর মা’রের দাগ।
তবে তিনি সবচেয়ে বড় অবাক হয়েছে নিবিড়ের পিঠে বড় একটা কা’টা দাগ দেখার পর। দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরুনো এই দাগ।
কৌতহল বসত সে প্রশ্ন করলো,
– তোমার পিঠে এই কাটা দাগ টা কিসের নিবিড়?
নিবিড় স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– আমি নিজেও জানিনা আন্টি। তবে ছোট থেকেই দেখছি এটা।
ওটা নিয়ে আর প্রশ্ন করলো না সে। নিবিড়কে আবার টি-শার্ট পরিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। যেন নিবিড় তার নিজেরই ছেলে।

To be continue……..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে চার পাশ। রাতে যে একটু পরিবেশ শীতল হওয়ার বিপরিতে গরমই পরছে বেশি। মাথার উপর ফ্যান টা শা শা করে ঘুরছে। তার নিচে দুটি চেয়ারে সামনাসামনি বসে আছে রুশান আর সেই লোকটা। ফ্যান এর বাতাশেও এই গরম গোছাতে পারছে না। লোকটার কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে গলায় নেমে এলো।

রুশান একটু পাশে ফিরে তার সহকারি আজিমকে বললো,
– এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো তো।

কিছুক্ষনের মাঝেই আজিম এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলে রুশান তা টেবিলে রেখে লোকটাকে ইশারা করে বলে,
– হালকা কথা বলতে গিয়েই অনেক হাপিয়ে গেছেন। এবার পানি খেয়ে একটু শান্ত করুন নিজেকে।
লোকটা গ্লাস হাতে নিয়েই ঢক ঢক করে সব পানি শেষ করে এক হাতে মুখ মুছে আবার রুশানের দিকে তাকালো।

সামনে টেবিলে একটা পেপার পরে আছে। যেখানে একটা লোক মিসিং এর খবর ছাপানো। সাথে একটা ছবিও এড করে দিয়েছে। লোকটা আর কেও না, রুশানের সামনে বসে থাকা সেই লোকটাই।

লোকটা পানি খেয়ে গ্লাস রাখার পর রুশান তার দিকে একটু ঝুকে বসে প্রশ্ন করলো,
– তো কোথায় যেন ছিলাম আমরা?
লোকটা একটু ঘাবড়ে যাওয়ার হালকা চমকে বলে,
– কোথায়?
রুশান এবার একটু হেসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– ভয় পেয়েছেন?
তার পর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– যাই হোক, আপনাদের প্লেন টা কি ছিলো?
লোকটা এবার মনে করতে পেরে বলে,
– ওহ্ হ্যা, এবারের প্লেন টা বড়। এক রাতে নেমে শতাধিক মানুষ কালেক্ট করতে হবে। সেটা হোক বাচ্চা, হোক প্রাপ্ত বয়স্ক। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৪৭ টা টিম ছড়িয়ে যাবে। প্রত্যেক টিমে লিডার থাকবে এক জন করে।

রুশান এবার কিছুটা সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– কোন দিন সেটা?
হটাৎ করে রুশানের এমন অগ্নি মাখা প্রশ্নে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো লোকটা। তারপর শান্ত ভাবে বলে,
– ২৭ তারিখ রাতে।

আজ ২৩ তারিখ। তার মানে খুব একটা বেশি বাকি নেই। সময় খুবই সীমিত। এর মাঝে সব কিছু প্লেন করে সাজাতে হবে। যা এতোটাও সহজ কাজ নয়। প্রয়োজনে লাইফ রিক্স নিতে হবে। তবুও এটা শতাধিক মানুষের জীবনের প্রশ্ন।

হয়তো বিষয়টা ঘটে গেলে কয়েকদিন সোশাল মিডিয়া তোলপাড় থাকবে। অপরাধী দের খুজে বেড়াবে। এর পর কয়েক দিন পার হলেই সবাই ভুলে যাবে সব।
তাই যা করার সময় থাকতেই করতে হবে।

৪৭ টা টিম দেশের কোন কোন জায়গায় কাজ করবে তা লোকটার থেকে জেনে নিলো রুশান। তারপর প্রধান সহকারি আজিমকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে।

আজ রাত পার হলেই কালকে ২৪ তারিখ। বাকি থাকে মাঝখানে ২৫-২৬ দুই দিন। ২৭ তারিখ সহ তিন দিন। এর মাঝেই সব করতে হবে। তাছাড়া ২৫ তারিখে আবার রিমার বার্থ-ডে। যাই হোক এখন বার্থ-ডে সেলিব্রেট করার সময় নয়। এটা শতাধিক মানুষের বাচা ম’রার প্রশ্ন।
,
,
আজ ২৪ তারিখ। ব্যাগ গোছগাছ করছে রুশান। ২৭ তারিখের আগে আর এখানে ফেরা হবে না।
রুমে এসে নিবিড় তার পাশে এসে বসলো। নিবিড় এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছে। দুই দিন কষ্ট পেয়ে আজ একটু ভালোর দিকে৷ প্রেম করার স্বাদ বরাবরের মতো মিটে গেছে তার।

নিবিড় পাশে বসে বলে,
– ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছিস ভাই। আমাদের ছেরে চলে যাবি নাকি?
রুশান একটু হেসে বলে,
– না রে, বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে ইমার্জেন্সি। জায়গা-জমির ঝামেলা। হয়তো কয়েকদিন আর ফেরা হবে না। মিস করবো তোদের।
বলেই ব্যাগ কাধে নিয়ে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো রুশান। নিবিড় ও তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– সাবধানে যাবি।

এর পর রুশান একই কথা বলে একে একে সবাইকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আজ কেন যানি একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে তার। যদি মিশন থেকে বেচে ফিরতে না পারে তাহলে এটটাই হয়তো সবার সাথে শেষ দেখা তার।
,
,
একটা বড় কেক নিয়ে প্রথমেই চলে গেলো রিমাদের বাসায়। আরিশা আন্টি তখন দুপুরের জন্য রান্না বসিয়েছে। রুশানকে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। কারণ আজ না বলেই হটাৎ করে এসে পরেছে।

আরিশা আন্টির হাতে কেকের বক্সটা এদিয়ে দিয়ে বলে,
– এখানে কেক আছে। রিমার প্রিয় চকলেট কেক। কালকে ওর জন্মদিন। কালকে আমি থাকতে পারবো না। একটা জরুরি কাজ পরে গেছে। তাই আজকেই নিয়ে আসলাম। এটা ফ্রিজে রেখে দিবেন। রিমাকে বলার দরকার নেই। কালকে সময় হলে বের করে ওর সামনে দিবেন। আমার হাতে তেমন একটা সময় নেই। এখন গেলাম আন্টি। দোয়া করবেন আমার জন্য।

বলেই আবার বেড়িয়ে গেলো রুশান। কেকের বক্স টা হাতে নিয়ে ‘থ’ হয়ে দাড়িয়ে রইলো আরিশা আন্টি। কিছুই মাথায় ঢুকলো না তার। তার বেশিক্ষন না ভেবে চুপচাপ কেক টা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলো সে।
,
,
আজ ২৫ তারিখ। ২৭ তারিখের মিশন হলেও আজ রাতটা খুব ভয়ঙ্কর একটা রাত। কেন ভয়ঙ্কর তা একটু পর বুঝতে পারবেন।

রুশান নিজের টিম সেট করতে ব্যস্ত। কে কোন জায়গায় থাকবে, কার কাজ কি তা সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে। সেই সাথে সে নিজেও মেইন জায়গাটা বেছে নিয়েছে।

আর এদিকে রুশানের নিয়ে আশা চকলেট কেকটা রিমার সামনে এনে রাখলো তার মা। রিমার মন টা আনন্দে নেচে উঠলো যখন শুনলো রুশান নিয়ে এসেছে এটা। তার মানে রুশানও এসেছে আজ।

কিন্তু যখন শুনতে পেলো রুশান আসেনি। বরং গতকাল এটা দিয়েই আবার চলে গেছে, তখন রিমায় সব খুশি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে সামনে থাকা কেকটা ছুড়ে ফেলে দিলো সে। ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো কেক। রাগি দৃষ্টিতে রিমা বলে উঠে,
– আমি কারো দায়িত্ব বা করুনা হতে চাইনি। আর কাউকে বলিওনি দায়িত্ব পালন করতে বা করুনা দেখাতে। কি এমন বিজি থাকে যে আসার সময় পায় না? আমি কি তার কাছে কেক চেয়েছি? নানি শুধুই নিজের দায়িত্ব ভেবে এটা দিয়ে গেছে। এসব করুনা করা জিনিস আমার লাগবে না।
বলেই সেখাত থেকে চলে গেলো রিমা।

আরিশা আন্টি আর গিফ্টের পেকেট টা তাকে দিলো না। কারণ এই মুহুর্তে এর ভেতর অমুল্য রতন থাকলেও তা এই কেকের মতোই হবে। আর গিফ্ট শব্দটাই তো অমুল্য। যার কোনো মুল্য নেই।
,
,
কেও ভাবেনি আজ ২৫ তারিখে এসে সেই কয়েকদিন আগে তুষারের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। সব তো ঠিকঠাকই ছিলো।
এদিকে রুশানও নেই। সে চলে যাওয়ার খবর শুনতেই তাদের সেই শত্রুতা আবার জেগে উঠলো।

নিলয়ও নেই রুশানও নেই আজ ফ্রেন্ডস মহলে আছে শুধু তিনজন। রাজ, নিবিড় আর তুষার। বাসা থেকে নে নেমে রাস্তার পাশে সিমেন্টে বাধানো একটা জায়গায় বসলো তারা। নিবিড় কিছুটা হেটে একটা দোকান থেকে তিন জনের জন্য তিন কাপ চা নিয়ে আসলো। তিন বন্ধু মিলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো আর গল্প করছে নিজেদের মতো। আজ শুক্রবার হওয়ায় রাজও যায়নি আরোহিকে পড়াতে। তাই তিনজন এক সাথেই।

ফ্রেন্ডস মহলে এক দুইজন উদাও হয়ে গেলে তা খালি খালি মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। ওদেরও তাই হচ্ছে। নিলয় নেই রুশান নেই শুন্যতা তো অনুভব হবেই। আর এতোদিন খুজেও নিলয়ের কোনো খোজ পাওয়া গেলো না।

হটাৎ পেছন থেকে কয়েকজন লোক এসে রাজ, নিবিড়, ও তুষারের মুখে রুমাল চেপে ধরলো। প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারলেও, পরক্ষনে আর কিছু মনে নেই তাদের।
সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়ায়। আর লোক গুলো চার দিকে তাকিয়ে ওদের তিনজনকে গাড়িতে তুলে নিয়েই আবার স্বাভাবিক ভাবে রাস্তায় ছুটে চললো।

To be continue…….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিমা চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে মায়ের রুমে যায়। দেখে মায়ের রুমের ওয়াড্রপ এর উপর একটা গিফ্টবক্স রাখা।
তখন রাগ থাকলেও এখন কিছুটা কমেছে তার। তাই হাত বাড়িয়ে গিফ্টবক্স টা হাতে তুলে নিলো। যেটা কেকের সাথে রুশান দিয়ে গিয়েছিলো।
ওটা নিয়ে নিজের রুমে হাটা ধরলে ড্রয়িং রুমে কিছুক্ষন দাড়ায় সে। সন্ধায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া কেক টা সরিয়ে ফ্লোর টা পরিস্কার করে নিলো তার মা।
কেন জানি নিজের মাঝে একটা অপরাধবোধ জেগে উঠলো রিমার মাঝে।
সাত পাচ না ভেবে চুপচাপ চলে গেলো নিজের রুমে। খাটের উপর বসে একটা ছুরি নিয়ে আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো বক্স টা।
খুলেই একটু অবাক হলো সে। এটা তার ১৯ তম জন্মদিন। তার মানে সে বড় হয়েছে। এমন মেয়েকে শাড়ি, চুড়ি এসব গিফ্ট দেওয়া মানায়। কিন্তু রুশান দিলো সেই বাচ্চাদের মতো একটা টেডি। আশ্চর্য এই ১৯ বছর বয়সে এসে এই পুতুল দিয়ে কি করবো? আবার কিন্তু রাগ হচ্ছে তার।

ওমা সাথে দেখি একটা নীল চিরেকুটও আছে। রাগের মাঝে একটু হাসলো রিমা৷ মুখ ফসকে হেসে ফেলা যাকে বলে।
হেলান দিয়ে বসে টেডি টা এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে চিরেকুট টা মেলে ধরলো সে।
যেকানে প্রথা সম্বোধন টাই হলো ‘টিয়া পাখি’। রিমার মুখে হাসি ফুটলো। কতো সুন্দর একটা সম্বোধন।
যাই হোক এবার চিঠিতে যাই।

প্রিয় টিয়া পাখি,
‘ প্রথমেই স্যরি বলছি এই জন্মদিনে তোর পাশে থাকতে না পারার জন্য। তোকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার পরও তোর স্পেশাল দিনে আমি তোর পাশে থাকতে পারছি না। কারণ তো নিশ্চই আছে তাই না? নিশ্চই রাগ করে আছিস?
আচ্ছা এক কাজ কর চিঠি টা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়া। দাড়িয়েছিস? এবার রাগি মুখ টা নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখ কেমন লাগে। কি, তাকিয়ে একটু পর হেসে দিলি তাই তো? এবার রাগি লুক আর হাস্যজ্জল লুক এর মাঝে একটু পার্থক্য খোজার চেষ্টা কর।
আচ্ছা ওসব কিছু বাদ। তুই এতো কিছু বুঝবি না। তাই প্রথমেই সম্বোধন টা ‘টিয়া পাকি’ দিয়েছি। কারণ এই পাখি বুঝে কম চিল্লায় বেশি। ঠিক তোর মতো।

এতটুকু পড়েই এবার রাগ উঠলো রিমার। প্রত্যেক জায়গায় সুন্দর মুহুর্ত টায় এক টা না একটা কিছু করে রাগ উঠিয়ে দেয় এই ছেলে। এটা কি তার স্বভাব নাকি ইচ্ছা করেই এমন করে, রাগানোর জন্য। শেষে আবার লিখে দিলো,
‘হ্যাপি বার্থ-ডে আমার টিয়াপাখি টা।’

রিমা রাগে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
– গুষ্টি কিলাই তোর সম্বোধনের। আমি টিয়া পাখি হলে তুই,,,,,
কিছু বলতে চেয়েও খুজে পাচ্ছে না হয়তো। এর মাঝেই মা রুমে আসার শব্দ পেতেই চিঠি টা পেছনে লুকিয়ে নিলো রিমা।
,
,
রাজ চোখ মেলে তাকালে দেখে অন্ধকার একটা রুমে তাদের তিনজনকে বেধে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে আসা লাইটের মৃদ আলোয় ভেতরটা ঝাপসা হয়ে দেখা যাচ্ছো অল্প অল্প করে।
রাজ মাথা তুলে কয়েক বার ডাক দিলে চোখ খোলে নিবিড় ও তুষার দুজনই। তাদেরও পরিস্থিতি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে গেলো। তুষার ছোটার জন্য একটু জোড়া জোড়ি করলেও লাভ হলো না।
নিবিড় ভয়ার্ত গলায় বলে,
– ভাই এটা কি স্বপ্ননাকি বাস্তব?
রাজ চুপ থাকলে তুষার বলে,
– আমারও তো একই প্রশ্ন।
নিবির আবার বলে,
– বাস্তব হলে এই আমরা কোথায় ফেসে গেলাম। কয়দিন আগে তো আমার গার্লফ্রেন্ড গুলো আমাকে এভাবেই বোধে রেখেছিলো।
তুষার বলে,
– ভাই এখন গার্লফ্রেন্ডের চিন্তা বাদ দিয়ে এখান থেকে বাচার উপায় বের কর। এটাও বুঝতে পারছি না এটা কোন জায়গা।

এদিকে চুপচাপ বসে আছে রাজ। চোখ দুটু রক্তিম হয়ে উঠেছে তার। যেন সব এলোমেলো করে দিবে সে। কারণ লাইফে তাকে এভাবে বেধে রাখার সাহয় দ্বিতীয় কেউ করেনি।

তখনি দরজার আওয়াজ হলো। সেই সাথে অন্ধকার ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। আর একটা ছেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
তুষার চিনতে পারলো তাকে। সেদিনের রেস্টুরেন্টে ঝামেলা হওয়া সেই ছেলেটা। শুনেছিলো অনেক আগে তুষারকে খুজেছিলো তারা। এর পর আর খোজেনি। কেন খোজেনি সেটা জানেনা সে। ভেবেছিলো হয়তো ওরা আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না তাই।

এর মাঝেই ছেলেটা একটু হেসে তুষারের সামনে বসলো। আর বলে,
– মেয়ের সামনে সেদিন খুব তো হিরো গিরি দেখালি। আজ দেখা তোর হিরোগিরি।
তুষার ঠান্ডা মাথায় বলে,
– দেখুন আমি মোটেও হিরো গিরি দেখাই নি। একজন মেয়ের সাথে অন্যায় হচ্ছিলো আমার যে টুকু কর্তব্য ছিলো আমি তাই করতে চেয়েছি। ঝামেলাটা আপনিই বড় করেছেন।

ছেলেটা হাসতে হাসতে বলে,
– সেদিনের বুকের ব্যাথা টা আজও কমেনি। আর তোকে না মা’রা পর্যন্ত কমবেও না। সাথে তোর বন্ধুরাও বিপদে পরে গেলো।
বলেই মুখ দিয়ে কয়েকবার ‘চু’ সুচক শব্দ করলো সে।
এর পর আবার বলে,
– তোর আরেকটা ফ্রেন্ড আছে না? রুশান না কি যেন নাম? পাঠিয়েছিলি না? সেদিন এসে অনেক বড় ফাপর নিয়েছিলো, বাবার কারণে কিছু বলতে পারিনি। এখন তাকে বল কিছু করে দেখাতে।

এর মাঝে রাজের ফোন টা বেজে উঠলো। ছেলেটা রাজের পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করে দেখে অরিণ নামের একটা নাম্বার থেকে ফোন?
ছেলেটা একটু হেসে বলে,
– গার্লফ্রেন্ড নাকি?
রাজ গম্ভির হয়ে চুপ করে রইলো। ছেলেটা আবার বলে,
– তাকে কি জানানো উচিৎ না? যে তোদের তিন জনের অগ্রিম মৃত্যুর খবর। না থাক, শক্ড হতে পারে।
বলেই আবার রাজের পকেটে ফোন টা রেখে দিয়ে বলে,
– ওকে গুড নাইট। কালকে সকালে দেখা হবে আবার।
বলেই লাইট অফ করে আগের মতো দরজা বন্ধ করে চলে গেলো ছেলেটা।
,
,
এদিকে নিজের টিমের প্রধান লোকদের একসাথে নিয়ে একটা বড় টেবিলে একটা ছক বানিয়ে নিলো রুশান। কে কোন দায়িত্যে থাকবে একে একে সবািকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে। কারণ সবাই এক সাথে থাকতে পারবে না একে একে আলাদা হয়ে যেতে হবে সবাইকে। হয়তো মা’রো, নয়তো ম’রো। হয়তো মে’রে আসবে, নয়তো ম’রে আসবে। তবুও যেন নিজের দায়িত্ব থেকে এক কদম পিছু পা না হাটে কেউ।
সবাই মনোযোগ দিয়ে ছক দেখছে আর রুশান যা যা বুঝাচ্ছে তা বুঝে নিচ্ছে। আজ রাত পার হলেই কালকে ২৬ তারিখ। আর কালকের মাঝেই সব টিম সাজিয়ে তুলতে হতে।

তাদের ৫০ জন ৫টিমে ভাগ হলো। আর মিশনের সময় সবাই একা একা ওদের পিছু নিবে। যেই জয়গা টা সবচেয়ে ঝুকি পূর্ণ ওখানে দুইজন থাকবে।
,
,
পাখির কিচিরমিচির ডাক কানে ভেসে আসে। পূর্ব দিগন্তে সূর্যের সোনালি আলো ফুটে উঠেছে। যা নতুন দিনের সূচনা। ধীরে ধীরে এই সোনালি রং সাদা হয়ে উঠবে। সেই সাথে বাড়তে থাকবে তেজও।

এদিকে সকাল হতেই রাজ, নিবিড় ও তুষারকে রুম থেকে বের করে একটা আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। ঘর থেকে বাইরে। বাড়ির পেছন টায়। দুই হাত উপরে বেধে ঝুলন্তের মতো করে বাধা হলো তাদের। আর ছেলেটা ও তার বাবা টেবিলে বসে ওদের নানার কথা জিজ্ঞেস করছে। নিবিড় মাঝে মাঝে উত্তর দিলেও বাকি দুই জন চুপ হয়ে আছে।
নিলয় এখানে থাকলে হয়তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা করে ফেলতো।

লোকটা কোমড় থেকে একটা পি’স্তল বেড় করে টেবিলের উপর রাখলো। প্লেন হলো ওদের তিন বন্ধুকে এক সাথে গু’লি করে মা’রা।
তুষারের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করলো। কারণ তার কিছু হয়ে গেলে তার মা ও বোনের কি হবে?
রাজ এখনও নিশ্চুপ। গত কাল থেকে একটা কথাও বলেনি সে। শুধু চোখ দুটু রক্তিম হয়ে আছে তার।

ওদের তিন বন্ধুকে নিয়ে হাসাহাসি করছে ওখানে থাকা সব মানুষ। এর মাঝে বাইক নিয়ে কারো আগমন ঘটায় সবাই হাসি থামিয়ে সেদিকে তাকায়। দেখে হেলমেট পরা একটা কম বয়সি ছেলে বাইক থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আর এসেই ওদের সকলের সামনে চেয়ার টেনে বসে গেলো। দেখে মনে হচ্ছে বুকে একটু ভয় ডর নেই। তবে হেলমেট পরে থাকার কারণে কেও চিনতে পারছে না তাকে। দুই পা এদের সামনে টেবিলে উঠিয়ে বসলো ছেলেটা। ওর কান্ডে আশে পাশের সবাই হতবাক। কে এই ছেলে?

ছেলেটা হেলমেট খোলার পর। লোকটা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। গাল হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। শরির জুড়ে অদ্ভুত এক কাপুনি সৃষ্টি হলো তার। হেলমেট খোলা মাত্রই এই ছেলেটাকে চিনতে এক মুহুর্তও দেড়ি হয়নি তার।
অজান্তেই মুখ দিয়ে ফিস ফিস করে বেড়িয়ে যায়,
– নিলয় আপনি,,,,,
এর মাঝেই নিলয় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– মুখ একধম বন্ধ।
তাদের মাঝে ফিস ফিস কথা গুলো ওরা ছারা আশে পাশের তেমন কেও শুনতে পায় নি।
নিলয় উঠে দাড়িয়ে বলে,
– ওরা তিনজনই ফ্রেন্ড হয় আমার। ওদের গায়ে একটা ফুলের টোকা পরলেও প্রতিটা বু’লেট তোদের বাপ ছেলের বুকে গিয়ে পরবে।

বলেই টেবিল থেকে পি’স্তলটা নিয়ে রাজ, নিবিড় আর তুষার কে বেধে রাখা দড়ির দিকে তিন রাউন্ড চালানো নিলয়। একধম নির্ভুল টার্গেটে বাধন খুলে যায় ওদের তিনজনেরই। আর নিলয় হাতের ইশারায় ডেকে ওদের নিয়ে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।

নিবিড় ও তুষারের মুখ একধম বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। সেই সাথে অবাকের চরম পর্যায়ে রাজ নিজেও।
নিলয়ের মতো একটা ভিতু ও সরল প্রকৃতির একটা ছেলের এমন রুপ যেন নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না তারা। এটা কি সত্যিই নিলয়? নাকি ওর রুপে অন্য কেও?

মেইন রোডে এসে নিলয় একটা ছেলেকে বাইক টা দিয়ে দিয়ে ওদের তিনজনের সাথে হাটতে লাগলো। হয়তো ছেলটার বাইক, এমন কিছু হবে।
আর মুচকি হেসে বলে,
– কিরে ফাপর টা কেমন নিলাম আজ?
নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ভাই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা তুই? আর এতো দিন কোথায় ছিলি তুই? তোকে কতো খুজেছি আমরা।
নিলয় হেসে বলে,
– তোরা বন্ধুকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও সে তোদের ভুলে যায় নি। বন্ধুর বিপদ শুনে আর রাগ করে থাকতে পারিনি। ছুটে চলে এলাম।

বলেই পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা ছোট ট্রাক দাড় করার সে। আর ড্রাইভারকে বলে,
– ভাই আমরা একটু সামনে যাবো, নিয়ে যাবেন?
লোকটা হয়তো ভালো ছিলো তাই বলে,
– আচ্ছা উঠেন।
নিবিড়, তুষার প্রথমেই উঠে গেলো। এর পর রাজকেও তুলে নিলো তারপর নিলয় নিজেও উঠে গেলো।

গাড়ি চলছে। সেই সাথে উড়ছে সবার চুলও।
তুষার এখনো অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– ভাই আজ কি দেখালি এটা। তুই কি মাফিয়া দলের কেউ?
নিলয় হাসতে হাসতে বলে,
– ভাই বিশ্বাস কর আমি নিজেও জানিনা এতো বড় ফাপর আমি কিভাবে নিয়েছি। তোদের বাচাতেই হবে এটা ভেবে কিভাবে যেন হয়ে গেছে এটা।

নিবিড় পাশ থেকে পোড়ন কেটে বলে,
– সব না হয় মানলাম আমাদের বাচাতে তোর শরিরে একটা আলাদা হিট চলে এসেছিলো। কিন্তু তুই গুলি চালানো শিখলি কিভাবে? তাও আবার এতো নির্ভুল?
নিলয় বলে,
– আমার বাবা ছিলো পুলিশ অফিসার। স্বপ্ন ছিলো আমাকেও পুলিশ অফিসার বানানো। তাই আমাকে একটা ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করেছিলো ছোট কালে। সেখান থেকেই এই পি’স্তল চালানো শিখেছি।

নিবিড় ও তুষার দুজনই এক সাথে বলে,
– তোকে যেন আজ চিনতেই কষ্ট হচ্ছে আমাদের। মনে হচ্ছে একটা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে পার করছি সব।
বিনিময়ে একটু হাসলো নিলয়। চুপচাপ খোলা আকাশের নিচে ছুটে চললো সবাই।

অপর দিকে রাজের মুখে নেই কোনো প্রশ্ন, নেই কোনো অবাক হওয়ার ছাপ। শুধু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। নিলয়ও রাজের দিকে তাকাতেই চোখচোখি হয়ে যায় দুজন।

চোখাচোখি হয়ে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। আজ এই দৃষ্টিতে কোনো করুণতা নেই। খুবই ভয়ঙ্কর এই দৃষ্টি।

To be continue…………..