ছদ্মবেশ পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
363

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ছেলেটা খাবার নিয়ে দরজার বাইরে দাড়িয়ে দরজায় কয়েকবার টোকা দিয়ে বলে,
– ম্যাম রুম সার্ভিস,,,,
এমন কয়েকবার বললে আরোহি এসে দরজা খুললে ছেলেটা বলে,
– ম্যাম আপনার খাবার।
আরোহি একটু অবাক হয়ে বলে,
– একটু আগে তো আমি খাবারের কথা আরেকজনকে বলেছি, আপনি কে?

ছেলেটার কন্ঠটা একটু অন্য রকম। চিকন শুরে কেমন নাক আর মুখ মিলিয়ে একটা আওয়াজ। মুখে গোফ ও দাড়ি দুটুই আছে। মাথায় একটা কেপ। আরোহির দিকে চেয়ে একটু হেসে বলে,
– জ্বি ম্যাম আপনি ঠিক ধরেছেন। এই রুমে অন্য কেউ সার্ভিস দেয়। বাট সে হুট করেই মাথা ঘুরে পড়ে অসুস্থ হয়ে যায়। এখন থেকে আমিই সার্ভিস দিবো। আপনার কিছু প্রয়োজন হলে সিরেক্ট আমাকে বলবেন। আমার নাম ‘কচি’ ম্যাম।

কচি নামটা শুনে একটু ভ্রু কুচকালো আরোহি। কচি আবার কারো নাম হয় নাকি? তবুও কুচকানো মুখ স্বাভাবিক করে বলে,
– ঠিক আছে ভেতরে দিয়ে যান।
ছেলেটা একটু হেসে বলে,
– জ্বি ম্যাম, থ্যাংক ইউ।
আরোহি হেটে কিছুটা ভেতরে গিয়ে হুট করে থমক দাড়ায়। আবার পেছন ফিরে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আপনাকে কি আমি কোথাও দেখেছি? কেমন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
ছেলেটা হেসে বলে,
– হয়তো এখানে আগে কখনো এসে আমাকে দেখেছিলেন ম্যাম।
আরোহি চট করে বলে,
– না আমি আগে কখনো এখানে আসিনি। তবে আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে। আপনি কে বলুন তো।
ছেলেটা আবার দাত কেলিয়ে বলে,
– তাহলে ম্যাম আপনার কথাও ভুল হচ্ছে। হয়তো কোথাও আমার মতো কাউকে দেখেছেন। তাই এমনটা মনে হচ্ছে। আসি ম্যাম, কিছু প্রয়োজন হলে ডাক দিবেন। নাম, কচি।

আরোহি কেমন যেন কনফিউশনে আছে। যেন এই ছেলেকে কোথাও দেখেছে সে। আর বেশিক্ষন না ভেবে নিজের মাঝে একটা বুঝ দিলো যে, হয়তো ওর মতো এমন অন্য কাউকে দেখেছিলো। অথবা এটা তার মনে ভুল। এমন কিছু হবে হয়তো।

এদিকে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের দাড়ি ও গোঁফ কিছুক্ষন হাত দিয়ে চেপে সামনে হাটা ধরলো রাজ। যেন আরোহি বা তার ফ্যামিলি কারো কাছেই কোনো সন্ধেহ তৈরি না হয়।

যাই হোক, এখানে লোক রেখে যাওয়ার পরও রাজের মনটা কেমন উসকো খুসকো লাগছিলো। এতোগুলো লোক ছড়িয়ে রাখার পরও কারো প্রতি ভরসা পাচ্ছিলো না সে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছিলো তার। তাই আবার ফিরে এসে নিজেই আরোহির রুমের সার্ভিসে জড়িয়ে গেলো। এবার ভালো কিছু হোক বা খারাপ কিছু হোক। নিজেই সামনে থেকে বুঝতে পারবে সব।
,
,
রুশানের টিমের এতগুলো লোক মা’রা যাওয়া লা’শ গুলো নিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবারের লোকজন। কারো না সন্তান কাঁদছে। কারো মা-বাবা, স্ত্রী আত্মিয়-স্বজন কাঁদছে।
চার দিকের কাঁন্না গুলো দু’কান জুড়ে বাজছে তার। কাছের মানুষ গুলো হুট করে এক রাতে এভাবে চলে যাওয়া, তাও এমন নির্মম মৃ’ত্যু সব মিলিয়ে অদ্ভুত রকম এক কষ্ট জেগে উঠলো তার ভেতর। যেই কষ্টে নিশ্চুপ হয়ে থাকা ছারা অন্য কিছু করতে পারছে না সে।

এদিকে উপর থেকে চাপ পড়েছে রুশানের উপর। যত তারাতারি সম্ভব অপরাধী খুজে বের করে, যারা যারা এই হত্যা মাম’লায় জড়িত সবাইকে এরে’স্ট করতে।

মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে একটা চেয়ারে বসে আছে রুশান। হাতে থাকা একটা টেনিস বল বার বার সামনের দেওয়ালে ছুড়ে মারছে আবার কেচ ধরছে।
এমন সময় তার সহকারি আজিম একটা লেপটপ এনে রুশানের সামনে রেখে বলে,
– স্যার, আপনার কথা মতো ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা মেইন রোডের পাশের একটা বাড়ি থেকে গত রাতের সিসি টিভি ফুটেজ কালেক্ট করে নিয়েছি। এতে আমরা একটু হলেও বুঝতে পারবো ঐ রাতে ঐ জায়গায় কারা গিয়েছিলো বা এর আশেপাশে কারা ছিলো।

রুশান চুপচাপ লেপটপ টা হাতে নিয়ে ফুটেজ অন করলো। রিপোর্ট অনুযায়ি জানা যায় যে মার্ডার গুলো হয়েছিলো আনুমানিক ৩-৪ টার মাঝে।
তাই ১ টা থেকে ৪ টা অব্দি এই রাস্তায় কারা প্রবেশ করেছিলো এটাই চেক করছে সে

তখন প্রচুর ঝড় বৃষ্টি চলছে। রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার ছিলো না। তবুও এর মাঝে একজন লোক কে দেখা যাচ্ছে ফুটেজে। গায়ে রেইনকোর্ট পরা। আর মুখটাও পেচিয়ে রেখেছিলো কাপড় দিয়ে। চেনার কোনো উপায় নেই।
এতো ঝড় বৃষ্টিতে এই রাস্তায় সে ছারা আর কেও চলাচল করেনি। একজনই এসেছিলো। তবে সে কে তাও অনুমান করার উপায় নেই। একে তো ঝড় বৃষ্টির কারণে ভিডিও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো না। তার উপর লোকটা নিজেকে এমন আড়াল করে রাখা।
তবে একা একা ঐ জায়গায় গিয়ে সব কিছু ক্রস করে এতোগুলো লোক কে এভাবে হ’ত্যা করা। একজন লোকের পক্ষে এটা কিভাবে পসিবল? বিষয় টা মাথায় ঢুকছে না কারো।

ঐ দিকে নির্জন বিছানায় রিলেক্সে শুয়ে ফোনে কথা বলছে নিলয়ের সাথে। নির্জন ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলে,
– ওদের লোকেশন কোথায় পেয়েছিলে তুমি?
নিলয় একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আমার প্রতি মনে হয় আপনার কনফিডেন্স কমে গিয়েছে আগের থেকে।
নির্জন হাসি দিয়ে বলে,
– কনফিডেন্স তৈরি হয়, আবার চলে যায়। বিষয় টা কোনো ফ্যাক্ট না। মুল কথা হলো, তুমি যতোক্ষন তোমার পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারবে, ততোক্ষন তোমার প্রতি আমার কনফিডেন্স ঠিক থাকবে। আর এসব কাজে শুধু আস্থা রাখলেই হয় না। মাথা খাটিয়ে নিখুত ভাবে কাজ করতে হয়। যেটা তুমি খুব ভালো পারো। তোমার প্রতি মোটামুটি কনফিডেন্স আছে আমার। শুধু নিজের পারফর্মেন্স ধরে রাখার ট্রাই করবে। অল দ্যা বেষ্ট।
,
,
নিবিড়কে ফোন দিয়ে বাইরে ডেকে আনে নীলা। নিবিড় রাস্তায় আসলে নীলা বলে এখন তার সাথে কোথাও যেতে হবে। নিবিড় আপত্তি জানালেও কোনো কথা শুনবে না সে।
নীলা বাবার জন্য শপিং করবে আর নিবিড় তাকে হেল্প করবে।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো নীলা। সাথে নিবিড়কেও তুলে নিলো। নিবিড়ও নিরুপায় হয়ে চলে গেলো নীলার সাথে। শপিং মলে হেটে হেটে বাবার জন্য জামা চয়েস করছে নীলা।
– এই নিবিড় দেখো তো এখানে বাবার গায়ে কোনটা বেশি মানাবে?
নিবিড় কিছুক্ষন খোজাখুজি করে একটা শার্ট দেখিয়ে বলে,
– আমার চয়েস মতো এটা মানাবে ভালো। হয়তো তোমার পছন্দ আমার থেকে ভিন্নও হতে পারে।
নীলা হেসে বলে,
– তোমার চয়েস আসলেই সুন্দর।

এদিকে নিবিড়ের মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। নীলাকে নিয়ে এই প্রথম শপিংমলে আসলো। নীলাকে একটা গিফ্ট দেওয়াটা,,, মানে না দিলেও বিষয় টা কেমন দেখায়। এদিকে নীলার ডাকে এমনিই বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে,পকেটে খুচরা কিছু টাকা ছারা পুরাই ফাকা।
এখন পকেট খালি বিষয় সেটা না। বিষয় টা হলো খালি পকেটে শপিং করার একটা পথ খুজে বের করতে হবে।
নিবিড় পকেটে হাত দিয়ে চার পাশ টায় কিছুক্ষন হেটে নীলাকে বলে,
– তুমি আরো কিছুক্ষন দেখো, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

বলেই নীলার কাছ থেকে সরে গেলো সে। লেডিস ড্রেস গুলো দেখতে লাগলো এক এক করে। একটা ড্রেস পছন্দ হয়েছে তাও দাম সাড়ে আট হাজার। এদিকে পকেটে নেই আটশ টাকাও।
বিষয়টা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো নিবিড়।
হুট করে একটা আইডিয়া চলে এলো তার মাথায়।
দেখে এক ভদ্রলোক অনেক কিছু শপিং করে সেগুলো রেখে আরো কিছু দেখতে গেলো। আর সেখানের লোক গুলো সব জামার দাম হিসেব করে সেগুলো পেকেট করছে।

নিবিড় চুপচাপ বিড়ালের মতো গুটি গুটি পায়ে হেটে তার পছন্দ হওয়া জামাটা গিয়ে লোকটার শপিং করা জামা গুলোর মাঝে সাবধানে রেখে সরে গেলো সেখান থেকে।
আর ঐ লোকটার শপিং করা জামা গুলোর মাঝে ঢুকে গেলো নিবিড়ের চয়েস করা জামাটাও। সেই হিসেবে দামটাও লোকটার হিসেবেই ঢুকে গেলো।

লোকটা সব ব্যাগ গুলো এক সাথে নিয়ে বলে,
– টোটাল বিল কত হয়েছে?
– জ্বি স্যার, ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।
লোকটা একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে পিন কোর্ড দিয়ে দিলো।

সব শেষে লোকটা শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে বের হওয়ার সময় নিবিড় লোকটার কাছে গিয়ে বলে,
– আঙ্কেল একটা মিষ্টেক হয়েছে। আপনি ভুল করে আমার শপিং ব্যাগটাও নিয়ে এসেছেন।

লোকটা কিছুটা অবাক হয়ে ব্যাগ গুলো দেখলে খেয়াল করে তার এতগুলো জামার মাঝে একটা লেডিস ড্রেস। যেটা সে চয়েস করেনি। নিবিড় হেসে বলে,
– জ্বি আঙ্কেল ওটাই আমার। আপনি হয়তো ভুল করে আপনার গুলোর সাথে নিয়ে এসেছেন।

লোকটা এবার নিবিড়ের দিকে চেয়ে অপরাধী কন্ঠে বলে,
– আমি দুঃখিত বাবা। আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। ওখানে এতগুলোর মাঝে ভুলে তোমারটাও চলে এসেছে। তুমি মনে কিছু নিও না বাবা। আমি আসলেই খুবই দুঃখিত।
নিবিড় ও একটা ভাব নিয়ে বলে,
– আরে না না আঙ্কেল। এমনটা কেন বলছেন? ভুলতো আমাদের মানুষেরই হয় তাই না? এটা কোনো বিষয় না। আমি কিছু মনে করিনি। আসি আঙ্কেল, ভালো থাকবেন।

বলেই আর দেড়ি না করে ব্যাগ টা নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো নিবিড়। নীলার কাছে এলে নীলা বলে,
– এতোক্ষন লাগে?
নিবিড় তার ব্যাগটা পেছনে লুকিয়ে রেখে বলে,
– সরি একটু লেট হয়ে হেছে।
নীলা সামনের দিকে চেয়ে বলে,
– আচ্ছা চলো, সব কমপ্লিট।
নিবিড় আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো নীলার সাথে।

রিক্সায় উঠে নীলার জন্য নেওয়া জামাটা নিলার দিকে বাড়িয়ে দেয় নিবিড়। নীলা অবাক হয়ে বলে,
– আমার জন্য?
নিবিড় মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– হুম,,,
নীলা নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ন্তু তোমার থেকে আমি এটা কেন নিবো?

নিবিড়ও সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– তার মানে কি, আমার দেওয়া কিছু কি তোমার কাছে কোনোই মুল্য নেই?
নীলা এবার কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে,
– আমি কি সেটা বলেছি নাকি? তাছারা, তুমি স্টুডেন্ড মানুষ। অজথা কেন এতো টাকা খরচ করতে গেলে?
নিবিড় একটু ভাব নিয়ে বলে,
– এটা তো সামান্য টাকা। আর তোমার সামনে তো এসব মাত্রই নগন্য। আর আমার প্রিয় মানুষ গুলো আমার কাছে এর চাইতেও বেষ্ট কিছু ডিজার্ভ করে।

To be continue…….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– মামা তোমার কি টয়লেট চাপছে নাকি? এতো তাড়াহুড়োর কি আছে? আস্তে আস্তে চালাও।

নিবিড়ের কথায় এবার রিক্সার গতি আরো কমিয়ে নিলো চালক। নিনিড় একটু হেসে বলে,
– হুম এবার ঠিক আছে।
পাশ থেকে নীলা বলে,
– রিক্সা আস্তে চালাতে বলার কারণ কি?
নিবিড় যুক্তি দেখাতে বলে,
– তুমি বুঝতে পারছো না বিষয় টা? একটা কথা শুনোনি যে, কখনো না পৌছানোর থেকে আস্তে পৌছানো ভালো। মানে হলো, বেশি তাড়াহুড়ো করতে গেলে তো যে কোনো বিপদ ঘটতে পারে। রাস্তাঘাটে কত বিপদ হয় না? তার চেয়ে বরং ধীরে সুস্থে বাড়ি যাওয়া ভালো নয় কি? আধা ঘন্টা লেট হোক না পরব্লেম কি?
নীলা ভেতর ভেতর একটা হাসির আভাস রেখে বলে,
– আসল কথা কি এটা, নাকি অন্য কিছু?
নিবিড় বিরক্তি ভঙ্গি নিয়ে বলে,
– কারো ভালো চাইলেও দোষ। এই মামা তাড়াতাড়ি চালান তো।
নীলা একটু হেসে বলে,
– না মামা থাক দরকার নেই। ধীরে সুস্থেই যান।
বলেই নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় চার পাশে চোখ বুলিয়ে নীলার দিকে চেয়ে বলে,
– পরিবেশ টা খুব সুন্দর না? একধম ইনজয় করার মতো।
নীলা মুখে মুচকি হাসি রেখে বলে,
– হুম খুব।
,
,
ফুরফুরে বাতাশে সমুদ্র সৈকত টা আরো মন মুগ্ধকর করে তুললো। চার দিকে সব পর্যটক ছবি তুলতে ব্যাস্ত।
আরোহি চুপচাপ বসে দেখছে সব। মনটা আজ খুব ফুরফুরে। হটাৎ চোখ পড়লো হোটেলের সেই ছেলেটার উপর। চুপচাপ সাগরপাড়ে বসে ডাব খাচ্ছে সে।
কচি ডিউটি ফেলে এখানে কি করছে? একটু ভ্রু-কুচকালো আরোহি। মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
– মা তোমরা থাকো, ইনজয় করো। আমি একটু চার পাশ টা ঘুরে দেখি।
আরোহির মা তার হাত ধরে বলে,
– কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে কিছু চিনিস তুই?
আরোহি হেসে বলে,
– চিন্তা করোনা মা, হারাবো না। আর হারালেও বাবা দুই মিনিটে খুজে বের করে ফেলবে।

আরোহি গিয়ে কচির(রাজের) সামনে দাড়ায়। কচি আরোহিকে দেখে উঠে দাড়িয়ে বলে,
– আরে ম্যাম আপনি? কিছু লাগবে? যদিও আমি ডিউটির বাইরে কাউকে সার্ভিস দিই না। তবুও আপনার কিছু লাগলে আমি এনে দিবো।
আরোহি তার দিকে চেয়ে বলে,
– না আপাতত কিছু লাগবে না কচি সাহেব। তবে আমি যেখানে যাই সেখানেই আপনাকে দেখতে পাই কেন? আপনি কি আমাকে ফলো করেন?
কচি একটু হেসে বলে,
– আরে না ম্যাম। আমিও সেটাই ভাবি। হুট হাট কিভাবে আপনার সাথে দেখা হয়ে যায়।
আরোহি এবার ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে,
– আপনি কি পার্ট টাইম জব করেন? নাহলে ডিউটি ফেলে এখানে আসলেন কিভাবে?
কচি একটু হেসে বলে,
– আসলে ম্যাম, আপনার রুমের দায়িত্বে যেহেতু আমি আছি। সেহেতু আপনি যতক্ষন রুমে আছেন ততোক্ষু আপনার প্রয়োজনে পাশে থাকাই আমার ডিউটি। আপনি বাইরে আসলে আমার ডিউটিও অফ। তাই আমিও বাইরে চলে এলাম।

আরোহি আবার একটু ভ্রু-কুচকে তাকালো। এমন ডিউটিও হয় নাকি? যাই হোক, সে তো আর এতো কিছু বুঝে না। মনে হচ্ছে বন্ধি পাখিকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাই প্রান খুলে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ছে সে।

কচি হাটতে হাটতে বলে,
– আপনি কিন্তু খুব ভালো মনের একজন মেয়ে। মানে এতো বড় ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরা সাধারণত একটু অহংকারি হয়। আপনার মাঝে তা একধমই নেই।
আরোহিও হাটতে হাটতে বলে,
– এতো অহংকার করা ভালো না। এই সুন্দর ফুরফুরে প্রকৃতির মতো নিজের মনটাকে পরিষ্কার রাখলেই জীবন সুন্দর।
কচি একটু হেসে বলে,
– আপনার চিন্তা ভাবনা সুন্দর।
আরোহি হাটতে হাটতে বলে,
– গত কালকের ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না। হুট করে আপনাকে কেমন চেনা চেনা লাগছিলো তো তাই ওভাবে বলেছিলাম। এর পর বিষয়টা একটু ভেবে দেখে বুঝলাম, আসলে আপনি আমার পরিচিত না। আমার হোম টিচারের সাথে আপনার চেহারার কিছুটা মিল আছে।
কচি আবার হেসে বলে,
– এটা আবার বলতে ম্যাম। আমিও মাঝে মাঝে অনেক জায়গায় গিয়ে মনে হয় এটা আমার পরিচিত ওটা আমার পরিচিত। কিন্তু কেউই আমাদের পরিচিত না। হয়তো পরিচিত কারো সাথে চেহারার কিছুটা মিল থাকার কারণে এমনটা মনে হয়।

আরোহি ফুরফুরে মনে বলে,
– জানেন আমার হোম টিচারের মনটাও অনেক ভালো। আমার ভালো বন্ধুও সে। আমার আগে পড়তে ভালো লাগতো না। তার কাছে পড়া শুরু করার পর থেকে পড়তে কিছুটা ভালো লাগে আমার। তার দেওয়া পড়া হোমওয়ার্ক এসব কমপ্লিট করতেও এখন এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
কচি হাটতে হাটতে প্রশ্ন করে,
– ভালো পড়াতে পারে মনে হয়?
আরোহি বলে,
– হুম সেটা ঠিক। বাট তার সাথে কথা বলতেও আমার ভালো লাগে। কয়দিন আগে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। আমি নামাজ পড়ে কত দোয়া করেছি যেন সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। কেন যেন নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন। কেমন কেমন যানি লাগছিলো আমার।
আরোহির কথা শেষ হতেই কচি থমকে দাড়িয়ে যায়। আরোহি পেছন ফিরে বলে,
– কি হলো,,,,
কচি ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,
– একটা কাজ মনে পড়েছে আমার। এখন আসি ম্যাম, পরে কথা হবে।
,
,
তুষার রাস্তার পাশ ধরে হাটছিলো। একটা মেয়ে ডাক দেয় তাকে। তুষার ডানে বামে তাকিয়ে বলে,
– আমাকে বলছেন?
মেয়েটা সামনে এগিয়ে এসে বলে,
– হ্যা। আমি আপনার সাথে একই কলেজে পড়ি তাই আপনাকে চিনি আমি।
তুষার একটু নার্ভাস হয়ে বলে,
– আচ্ছা এখন কেন ডেকেছেন সেটা বলুন।
মেয়েটা সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
– আমার নাম সাথি। আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলতে চাই না। যা বলার সরাসরিই বলবো। আপনাকে কলেজে দেখার পর থেকে কেন জানি আমার খুব ভালো লাগতো। এর পর আপনার এক ফ্রেন্ত নিবিড় ভাইয়ার কাছে আপনার বিষয়ে জানতে চাইলাম। সেও বললো আপনি খুব ভালো, ভদ্র একটা ছেলে। আমি
অনেক ভেবে দেখিছি। আপনাকে আমার ভালো লাগে। তাই গুরিয়ে পেচিয়ে না বলে ডিরেক্টই বলছি, আই লাভ ইউ।

তুষার কয়েকবার চোখ কচলে নিজের গালে নিজে কয়েকটা চর দিলো। না এটা তো স্বপ্ন না, বাস্তবই দেখছে সে। কিছুক্ষনের জন্য টাসকি খেয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা হাতের তুড়ি বাজালে হুঁশ ফিরে তুষারের।
তুষার এবার বলে,
– তার মানে কি আমরা রিলেশনে যাবো?
সাথি মুচকি হেসে বলে,
– হুম তুমি রাজি থাকলে।
তুষার এবার সাথির হাত ধরে বলে,
– আমি রাজি। এবার এদিকে আসো আমার সাথে।
সাথিও গেলো তুষারের সাথে। তুষার তাকে একটা ফুচকার দোকানের সামনে বসিয়ে ফুচকা ওয়ালাকে বলে,
– মামা যা যা চায় সব দিবেন।
বলেই সাথিকে গিয়ে বলে,
– তুমি এখানে একটু ওয়েট করো। আমি শুধু যাবো আর আসবো।
সাথি মাথা কাত করে সম্মতি জানালো।

প্রায় আধা ঘন্টা পর ফিরে এলো তুষার। হাতে একটা স্ট্যাম্প তার। এদিকে সাথি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত। একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– কোথায় ছিলে এতোক্ষন।
তুষার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উত্তেজিত ভাবে স্ট্যাম্প আর একটা কলম এদিয়ে দিয়ে বলে,
– এখানে একটা সাইন করো।
সাথি একটু অবাক হয়ে বলে,
– কি এটা?
তুষার বলে,
– এটা একটা ১০০ টাকার স্ট্যাম্প। যেখানে তোমার নাম লেখা আছে। সাথে লেখা আছে, তুমি নিজের স্ব-ইচ্ছায় আমার সাথে রিলেশনে যাচ্ছো। যা কিছুই হোক, কখনো আমার ছেরে যেতে পারবে না। তাই আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সুবিধার্থে এই স্ট্যাম্পে তুমিও সাইন করে রাখো আমিও সাইন করে রাখলাম।

তুষারের কথা শেষ হওয়া মাত্রই সাথি ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় তুষারের গালে। তুষার গালে হাত দিয়ে যেন বেকুব বনে গেলো। তার দোষটা কি সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে।
সাথি কাগজটা ছিড়ে তুষারের মুখের উপর মেরে বলে,
– একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যেটা প্রয়োজন হয় তা হলো ভালোবাসা আর একে অপরের প্রতি বিশ্বাস। যা তোর মাঝে একটুও নেই। আমারই ভুল হয়েছে তোকে এসব বলে। তোদের মতো ছেলেদের ভালোবাসার কথা না বলে যদি এভোয়েড করতাম তখন ঠিকই পেছন পেছন ঘুরতি। যত্তসব ফালতু।

তুষার কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে শক্ড হয়ে দাড়িয়ে থেকে সাথির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর পেছন পেছন দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,
– আমি শুধু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এমনটা করেছি। ডোন্ট এভয়েড মি সাথি। প্লিজ ট্রাস্ট মি।

To be continue……….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

চোখে মুখে মা’রের দাগ নিয়ে রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে আছে তুষার। রাস্তায় সাথীর পিছু নিয়ে বার বার সরি বলায় বিরক্তিবোধ করছিলো সাথী। তখন কয়েকজন ছেলে বিষয়টাকে ইভ’তেজিং মনে করে সামনে এগিয়ে আসে।
তুষার তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভাই আমি কোনো ইভতেজার না। সে আমার গার্লফ্রেন্ড হয়।
তখন একটা ছেলে সাথীকে ডেকে বলে,
– আপু, আপনি চেনেন তাকে?
সাথী বিরক্তি নিয়ে বলে,
– না ভাই, তখন থেকে আমাকে বিরক্ত করে চলছে।
বলেই সেখান থেকে হাটা ধরলো সাথী। পেছন থেকে তুষার কয়েকবার ডাক দিলেও তাকালো না সে। এদিকে ছেলে গুলো তুষারকে চ’র থা’প্পর ঘু’সি মে’রে টাকা ফোন সব নিয়ে নিয়েছে তুষারের থেকে।

মুখে মা’রের দাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তুষারের। এক সাথে চার পাঁচটা ছেলের সাথে একা ঝামেলা করেও লাভ নেই। উল্টো মা’ইর কয়েকটা আরো বেশি পড়বে।

রাস্তার পাশের একটা দোকানদার থেকে একটা ফোন নিয়ে নিবিড়কে ফোন দেয় সে। রাস্তার নাম বলে বিষয়টা জানায় যে কয়েকটা ছেলে তাকে মে’রে টাকা ফোন সব নিয়ে নিয়েছে।
মেয়ে ঘটিত বিষয় নিয়ে মা’র খাওয়াটা হাস্যকর হলেও নিবিড়ের মাঝে এই মুহুর্তে হাস্যকর মনে হচ্ছে না। বন্ধুকে মে’রেছে মানে বিষয়টা খুবই সিরিয়াস।

নিলয় তখন বসে বসে ফোন টিপছিলো আর রুশান দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই কয়দিন অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর দিয়ে।
নিলয়ের সামনে গিয়ে বিষয়টা জানায় নিবিড়। নিলয় ফোন পকেটে নিয়ে জুতা পড়ে নিয়ে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই নিবিড় বলে,
– রুশানকেও ডাকবো কি?
নিলয় রুশানের দিকে একবার চেয়ে বলে,
– বাসায় ফিরার পর বলছিলো প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। এরপর খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। হয়তো ক্লান্ত। ঘুমাক সে, ডাকার দরকার নেই। ঘুমের ডিস্টার্ব হবে।

বলেই নিবিড়কে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিলয়। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর সেখানে পৌছে গেলো তারা। দেখে তুষার গাছের নিচে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে চুপচাপ।
তুষার কে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখে কয়েকটা ছেলে ক্যারাম খেলছে। তুষার চোখের ইশারায় দেখিয়ে দেয়, ঐ ছেলেগুলো।

নিলয় আর কিছু না বলে চুপচাপ সেখানে এগিয়ে গিয়ে একটা ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ক্যারামের স্ট্রাইকার টা হাতে নিয়ে চুপচাপ কয়েকটা গুটি পকেট করে শান্ত বাবে বলে,
– আমি দেখিনি একটু আগে এখানে কি হয়েছে। আর শুনতেও চাইনা। তুষারকে মে’রেছে কে?
ওখানের একটা ছেলে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– তুই কে? আর তোর কাছে কেন কৈফিয়ত দিয়ে যাবো?
নিলয় এবার ছেলেটার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার বন্ধুকে মে’রেছিস তাই আমার কাছে কৈফিয়ত দিবি।
ঐ ছেলেটা এবার হাসতে হাসতে বলে,
– সালা প্রতিশোধ নিতে আসছে।

বলেই নিলয়ের দিকে এগিয়ে আসলে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দেয় নিলয়। আঘাত টা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে, ছেলেটা টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে ক্যারামের বোর্ড টা নিয়ে নিচে পরে যায়।
তা দেখো ওখানের আরেকটা ছেলে এগিয়ে এলে তাকেও সেম ভাবে আঘাত করে।
কিছুক্ষনের জন্য যেন শুধু ঠাস ঠাস শব্দই কানে এলো সবার। ছেলে গুলোর মাঝে চারজনই একেকটা চর খেয়ে নিচে পড়ে আছে।
গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়, তুষার, নিবিড়ের দিকে। কিছুক্ষনের জন্য যেন দুই কান দিয়ে কিছুই শুনছে না তারা। শুধু শো শো করে শব্দ শুনছে কান দিয়ে।
,
,
মাগরিবের আজান দিলো একটু আগে। এখনো ঘুমিয়ে আছে রুশান। পাশে ফোনের রিংটোনে ঘুমটা কিচুটা হালকা হলো তার। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে চার পাশে ফোনটা খুজে হাতে পেয়ে রিসিভ করে কানে তুলে আবার শুয়ে রইলো সে। ওপাশ থেকে রিমা বলে,
– কোথায় থাকেন হুম? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি।
রুশান ঘুমু ঘুমু চোখে বলে,
– ঘুমিয়ে ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।
রিমা বিষয়টা হজম করে নিয়ে বলে,
– পরশু থেকে আমাদের এইচ’এস’সি এক্সাম শুরু জানেন তো।
রুশান ছোট করে বলে,
– হুম,,,
রিমা বলে,
– আসবেন না?
রুশান এবার শোয়া থেকে উঠে বসে। মাথাটা এখনো ভাড় লাগছে। একটা হাত তুলে বলে,
– আমি গিয়ে কি করবো?
রিমা একটু রাগি গলায় বলে,
– কি করবেন মানে? আমাকে সিট নাম্বার খুজে দিবেন।
-রামিম ভাইয়া কোথায়? সে খুজে দিবে সিট নাম্বার।
– ভাইয়ার তো অফিস আছে। সে সকাল সকাল বেড়িয়ে যায়। আর আমার একটা ছোট্ট ইচ্ছা আছে।
রুশান ভ্রু-কুচকে বলে,
– সেটা আবার কি?
রিমা হেসে বলে,
– পরিক্ষার প্রথম দিন আমি আপনার সাথে হলে যাবো। একটা বাইকে করে হিরো-হিরোইনের মতো স্লো-মোশনে কলেজে এন্ট্রি নিবো আমরা।
রুশান বলে,
– এক্সাম দিতে যাবি, নাকি শুটিং করতে যাবি?
রিমা একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– আরে শুনেন পুরো কথা। এরপর আপনি আমাকে সিট নাম্বার খুজে দিবেন। এর পর পরিক্ষা শুরু হলে আপনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন। এর পর আমার এক্সাম শেষ হলে আপনি আবার আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসবেন।
রুশানও এবার তার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
– তারপর সবাই ভাববে রিমাকে তার বয়ফ্রেন্ড কত কেয়ার করে। এটা নিয়ে বাকি বান্ধবিদের সামনে একটা ভাবের উপর থাকবেন তাই তো?
রিমা একটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে,
– হুম,,,
রুশানও এবার তার পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো করে বলে,
– কিন্তু এটা নিয়ে এতো ভাব নেওয়ার কিছু নেই। বাকিরা ভাববে ভাই তার বোনকে পরিক্ষার হলে নিয়ে এসেছে।
রিমা এবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– মানে কি, আমার একটা রোমান্টিক মুডে বা’হাত না ঢুকালে কি আপনার শান্তি হয় না?

রুশান আবার একটা হাই তুলে বলে,
– ভাল্লাগে,,,,
রিমা এবার বিষয়টা বাদ দিয়ে বলে,
– আসবেন কিনা বলেন,,,,
রুশান বলে,
– দেখি আসতে পারি কি না। এখন পড়া বাদ দিকে এতো পক পক করছিস কেন? ফোন রেখে পড়তে বস।
বলেই ফোন রেখে দেয় রুশান। রিমা কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে নিজের মাঝে ‘ধ্যাৎ’ সূচক একটা শব্দ উচ্চারণ করে বসে থাকে পড়ার টেবিলে। মাকে রুমের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ফোনটা এক পাশে ছুড়ে পেলে দিয়ে বই কুলে পড়তে শুরু করলো সে। যেন এক দিনেই বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে।
,
,
নির্জন আর নিলয় বসে আছে এক সাথে। নিলয় কম্পিউটারে নানান ডকুমেন্টস ঘাটাঘাটি করছে। আর পাশে বসে তা দেখে যাচ্ছে নির্জন।
ঘাটতে ঘাটতে নির্জ একটা বিষয় লক্ষ করে নিলয়কে বলে,
– কোম্পানি গুলো ভিন্ন হলেও সব জায়গায় একই লোকের সাইন। আর তা হলো ইকবাল সানি।
নিলয়ও স্কিনে চোখ রেখে বলে,
– হ্যা সেটাই তো দেখছি।
নির্জন একটু ভাবান্তর হয়ে বলে,
– এই ইকবাল সানি কয়টা কোম্পানি পরিচালনা করে?
নিলয় আরো কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে বলে,
– আরেকটা জিনিস লক্ষ করেছেন?
নির্জন নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– না, কি সেটা?
নিলয় স্কিনের দিকে চেয়ে থাকা অবস্থায় বলে,
– এই ইকবাল সানির নামে যা যা পরিচালনা হচ্ছে তা কিছুই ইকবাল সানির নয়। রাজ চৌধুরি নামের কোনো ব্যাক্তির হয়ে সব জায়গায় কাজ করছে এই ইকবাল সানি।
নির্জন অবাক হয়ে বলে,
– এই রাজ চৌধুরিটা আবার কে?
নিলয় এবার কম্পিউটার রেখে নির্জনের দিকে চেয়ে বলে,
– ইকবাল সানিকে দিয়ে সব করাচ্ছে সে। নিজে কখনো সামনে আসেনি। হয়তো বা দেশের বাইরে থাকে, নয়তো নিজের পরিচয় হাইড রেখে পরিচালনা করে সব। তবে তার সব কোম্পানির প্রোডাক্টই এখন মার্কেট জুড়ে।
নির্জন এবার হেলান দিয়ে বসে বলে,
– কি এমন লোক যার পরিচয় এখনো আমাদের হাতেই আসেনি?

নিলয় হেসে বলে,
– আসল মালিককে খুজে পাচ্ছিনা বলেই তো কোম্পানি গুলো এমন তৈ তৈ করে উড়ছে। ইকবাল সানিকে কিছু করেও লাভ নেই। কারণ এসব কিছুই তার না। আবার এখানে আরেকটা পয়েন্ট আছে। ইকবাল সানি বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন লোক দিয়ে পরিচালনা করায়। তারা জানে তারা ইকবাল সানির হয়ে কাজ করছে। বাট ইকবাল সানি নিজেও কাজ করছে অন্য কারো আন্ডারে।

নির্জন এবার একটু ভাবান্তর হয়ে বলে,
– রাজ চৌধুরি কে? আর কোথায় থাকে? এসব তথ্য কালেক্ট করার চেষ্টা করো। পারলে তার সাথে কন্টাক্ট করারও ট্রাই করো। কোনো ভাবে কোনো খোজ পাওয়া যায় কি না দেখো।
নিলয় এবার উঠে বলে,
– আপাতত ইকবাল সানির সাথে কন্টাক্ট করছি আমি। দেখি তার থেকে কিছু জানা যায় কিনা।
,
,
পরদিন ইকবাল সানির সাথে একাকি মিটিং এর ব্যাবস্থা করলো নিলয়। যদিও এক দিনের মাঝে এটা করা সহজ কাজ ছিলো না৷ বাট নির্জনের কাছেও এসব অসাধ্য নয়।

ইকবাল সানির কিছু আলোচনা শেষ হলে নিলয় চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– আমি মুলত এই সব কোম্পানির মালিকের সাথে কন্টাক্ট করতে চাইছি। যার কারণে আপনার কাছে আসা।
ইকবার সানি একটু মুচকি হেসে বলে,
– সরি মি. নিলয়। আপনি হয়তো একটা কথা জানেন না যে, আমাদের স্যার মানে রাজ চৌধুরি শুধু তাদের সাথেই দেখা করে, যাদের সাথে সে নিজে দেখা করতে চায়। তাই এই ক্ষেত্রে আমি কিছুই করতে পারছি না। তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছারা কিছুই করার নেই আমার।

To be continue………….