ছেড়ে যাওয়া সেইজন পর্ব-১০

0
127

#গল্প_ছেড়ে_যাওয়া_সেইজন
#দশম_পর্ব
#রেবেকা_সুলতানা

সাজিদ ভয়ংকর রেগে গেল।চিত্রা এই সাজিদকে চিনতে পারছে না।বুঝতে পারছে কেন এই রুমে ঢোকা বারণ। সাজিদ বলল,”শোনো মেয়ে আর কখনও এ রুমের আশেপাশে যেন না দেখি তাহলে কিন্তু…..”

চিত্রা চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো চিত্রার চোখে পানি দেখে সাজিদ নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয় নি।বুঝিয়ে বললেই হতো।”কথায় কথায় এতো পানি আসে কোথা থেকে? চোখের পাশে কি সমুদ্র আছে?”

“সাজিদ ভাইয়া আপনি সবাইকে মিথ্যে বলে বেরাচ্ছেন?”

চিত্রার কথায় সাজিদের বুক কেঁপে উঠলো।”চিত্রা কি সব জেনে ফেলেছে!নাহ আগে জানতে হবে সে কতোটা জানে!”

‘আমায় কি মিথ্যাবাদী মনে হয়?”

চিত্রা সাজিদের দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”এটাই তার প্রমাণ!”

সাজিদ কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন।সাজিদ ঘাবড়ে গেল।”এটা আমার নয়,একটা ফ্রেন্ডের।”

“প্লীজ সাজিদ ভাইয়া আর মিথ্যা বলবেন না। আপনার ফ্রেন্ডের হলে আপনার নাম কেন দেওয়া বলতে পারেন?আমায় কি এতোই বোকা মনে হয়?”

সাজিদ বুঝতে পেরেছে আর লুকিয়ে লাভ নেই।সব প্রকাশ করার সময় এসে গেছে।একদিন না একদিন তো সবাই জানবে।সে জানাটা না হয় চিত্রাকে দিয়ে শুরু হোক।সাজিদ চিত্রাকে বলল,”তোমার উপর অনেক ধকল গেছে সারাদিন। রেস্ট নিতে পারো নি।ওই সোফায় গিয়ে বসো।”

“সাজিদ ভাইয়া কথা ঘোরাবেন না। আপনি আমায় সব বলুন।আমি শুনতে চাই।”

————————————————————————-
জেরিন বারান্দায় বসে আজকের ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবছে।হঠাৎ ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।”রাজকন্যা তোমার জন্য নিচে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসো।”জেরিন দেরি না করে নিচে গেল। দরজা খুলে দেখে মিহান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জেরিনকে দেখে মিহান মুচকি হাসি দিলো।”এতো রাতে এখানে কি করছো?”

“তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।”

“তাই বলে এতো রাতে!ওদিকে সবাই খোঁজাখুঁজি করলে!”

“কেউ খুঁজবে না।চলো গিয়ে একটু বসি।”

জেরিন গার্ডেনের বেঞ্চে বসলো।মিহান এসে তার কোলে শুয়ে পড়লো।”পাগল একটা!”জেরিন মিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করবো মিহান?”

“শুধু একটা করবে?আমি তো ভাবলাম তুমি কথার ফুলঝুরি রেখেছো।আমি আসলে সব কথার গালি সাজিয়ে বসবে।”

“তুমি কি জানতে আমি তোমায় পছন্দ করতাম?”

“হুম জানতাম।”

“কি করে?”

“তোমায় ডায়েরি পড়ে।”

“কিহহহহ !”

“হুম মায়াবতী। তোমার ডায়েরি!!”

“ওটা তো হারিয়ে গেছে অনেক দিন আগে। তুমি কিভাবে পেলে?”

“আমি ভার্সিটিতে জয়েন করার একমাস পর একদিন তুমি আর তোমার ফ্রেন্ডরা মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলে।ভাগ্যক্রমে আমিও সে রেস্টুরেন্টে আমার এক আঙ্কেলের সাথে দেখা করতে যাই।আমি দূর থেকে তোমাদের দেখতে পাই। তোমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে চলে গিয়েছিলে। টেবিলের উপর ডায়েরিটা দেখে ওয়েটার তোমাদের পেছনে দৌড়ে যায় কিন্তু ততক্ষণে তোমাদের গাড়ি ধরা ছোঁয়ার বাইরে।আঙ্কেল যখন ওয়াশরুমে যায় আমি ওয়েটারের থেকে ডায়েরি নিয়ে ব্যাগে রেখে দেই। বাসায় গিয়ে ডায়েরিটা খুলে পড়তে শুরু করি।ওখান থেকে আমি বুঝতে পারি তুমি আমায় ভালবাসো।”

মিহানের কথায় জেরিন লজ্জা পেলো।”তোমার প্রত্যেকটা রুপ খুব অতুলনীয়।রাগলে যেমন অপূর্বা লাগে ঠিক তেমন লজ্জা পেলে অসাধারণ লাগে।মেয়েটা দেখছি আমায় পাগল করে ছাড়বে।”

জেরিন কিছু একটা ভাবলো।তারপর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।মিহান দেখতে পেলো তার প্রেয়সীর মনে মেঘেরা ভীড় করছে একটু একটু করে।যে কোনো সময় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে।মিহান জেরিনের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে মুখোমুখি বসলো। দু’হাত দিয়ে জেরিনের গালটা ধরে বলল,”কি হয়েছে আমার রানী আম্রপালিটার? তার চাঁদপানা মুখটায় অভিমানের ছায়া কেন?

জেরিন অন্য পাশ ফিরে চোখে জমে থাকা অশ্রুটা মুছে নিলো।মিহানের খারাপ লাগলো। হঠাৎ মেয়েটার মন খারাপ হলো কেন!জেরিন নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল,”তুমি যদি তখনই বুঝতে পেরেছো আমি তোমায় কতটা চাই তাহলে সেদিন অনুষ্ঠানে তুমি ওই মেয়েটার হাত ধরলে কেন?ও পড়ে যাচ্ছিলো তুমি ওমন করে ওকে ধরলে কেন?”

জেরিনের কথায় মিহান জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। এতোক্ষণে জেরিনের অভিমানের কারণ বুঝতে পারলো।”জানো সেদিন সবাই বলাবলি করছিল ওই মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“আর তুমি সে কথা শুনে বাসায় এসে খুব কান্না করেছো।তাই তো?”

“জানো মিহান মেয়েরা খুব অদ্ভুত।যতো খারাপ , বাজে মেয়েই হোক না কেন সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে ভাগ করতে পারে না।অন্য কারোর সাথে দেখা তো দূর অন্য কারোর মুখে নিজের মানুষটার কথা শুনলে গুমরে গুমরে মরে। আমিও ঠিক তেমনই যে মানুষটা আমার সে শুধুই আমার হয়ে থাকবে। আমার সাথে থেকে অন্য কারোর সাথে কথা বলবে এটা আমার একদম সহ্য হয় না। সেদিনও ঠিক তাই হয়েছে। আমি মারিয়ার সাথে তোমায় দেখে দৌড়ে চলে এসেছি।ওই মুহূর্তগুলো দেখার মতো সাহস আমার ছিল না।”

“বোকা মেয়ে।মারিয়া কে তুমি জানো?”

“না তো। এইজন্য জিজ্ঞেস করলাম কে ও?”

“ও হচ্ছে আমার দূর সম্পর্কের বোন।ওই যে বললাম আমি একটা আঙ্কেলের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওনার মেয়ে।”

“একটা বিষয় ভাবাচ্ছে। সেদিন ওর মধ্যে প্রেগন্যান্সির কোনো লক্ষণ দেখতে পাই নি।।কাল অনুষ্ঠানে দেখি ওর তো একটা বাবু আছে। কিভাবে সম্ভব…..”

“মারিয়ার কোলে তুমি যে বাবুটাকে দেখেছো ওটা ওর বড় বোনের মেয়ে।বাবু হওয়ার সময় মারিয়ার বড় বোন মারা যায়।বাবুটার বাবা দেশের বাইরে থাকে। মারিয়া আর ওর হাসব্যান্ড বাবুটাকে নিজের পরিচয়ে বড় করছে।মারিয়া আমাদের ভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করছেন।সেদিন মারিয়াদের বিদায় সংবর্ধনা ছিল।আসার সময় ওর গাড়ি খারাপ হয়ে যায় তাই ওকে লিফট দিয়েছিলাম।ব্যস এই টুকু।”

জেরিন মিহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকলো।

কিছুদিনের মধ্যেই জেরিন আর মিহানের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের ঠিক তিনদিন পর সাজিদ সকালে এসে শায়লাকে বলল,”মা আমি কালকে লন্ডনে চলে যাচ্ছি। এখানকার সব কাজ হয়ে গেছে। এবার ওখানে গিয়ে বাকিটা গোছাতে হবে।”

“সাজিদ তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন বাবা। কয়েকদিন ধরে দেখছি কেমন যেন শুকিয়ে গেছিস।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।কি হয়েছে তোর বাবা?তুই কি কিছু লুকাচ্ছিস? আমার মনটা খুব কু ডাকছে।মনে হচ্ছে আমি আমার একটা অংশ হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে।বাবা বল আমায় কি হয়েছে?”

সাজিদ ঠোঁটে মিথ্যে হাঁসির রেখা টেনে বলল,”কিছু হয়নি তো মা!দেখো তোমার ছেলে একদম ঠিক আছে।শোনো দুপুরে আমার কিছু অতিথি আসবে। তুমি সব অ্যারেন্ঞ্জ করে রেখো।”

সাজিদ বেরিয়ে গেলো। শায়লার মন থেকে খুঁত খুঁতটা কিছুতেই দূর হচ্ছে না। সাজিদের কথামতো শায়লা সব সাজিয়ে গুছিয়ে নিলো।সাজিদ কল দিয়ে শায়লাকে বলল,”মা বাবাকে বলো বাসায় থাকতে আমি ওনাদের নিয়ে আসছি।”

বসার ঘরে থমথমে পরিবেশ। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।সাজিদ বলল…….

****চলবে****