ছেড়ে যাওয়া সেইজন পর্ব-০৯

0
117

#গল্প_ছেড়ে_যাওয়া_সেইজন
#নবম_পর্ব
#রেবেকা_সুলতানা

অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেডি হয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেল।সবাই কতো মজা করছে!অথচ তার মনে এক বিন্দু আনন্দ কাজ করছে না।জেরিন সবার মাঝখান থেকে উঠে গিয়ে গার্ডেনের দিকে যাচ্ছিলো। একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল।মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,”একজনের প্রেমে এমন ভাবে পড়েছি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।এখন আবার।”

মেয়েলি কণ্ঠে একজন বলে ওঠে,”সরি আমি ইচ্ছে করে ধাক্বা দেই নি।প্লীজ কিছু মনে করবেন না। আপনার কোথাও লাগে নি তো।”

জেরিন উঠে জামা ঠিক করতে করতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকায়। মেয়েটাকে দেখে হকচকিয়ে উঠলো জেরিন।”এটা তো মিহান স্যারের হবু বউ। এখানে কি করছে।”জেরিনকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি বলল,”আপনি ঠিক আছেন?”

জেরিন হালকা মাথা নেড়ে বলল,”ঠিক আছি।”

“আরে মারিয়া তুমি এখানে কি করছো?ওদিকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি।নাও বাবুকে নাও। খুব কান্নাকাটি করছে।সামলাও ওকে।”

জেরিনের সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। হিসেবগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।মাথাটা ঘুরে উঠলো।জেরিন নিজেকে ধ্যাতস্ত করে মারিয়াকে বলল,বাবুটা কি আপনার?”

মারিয়া হেসে বলল,”হুম।আমার।”

“আপনার হাজব্যান্ড?”

“এই যে মাত্র চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বাবু দিয়ে গেল উনি আমার পতি।বাবু কান্না করলে সে আর এক মিনিট ও সহ্য করতে পারে না।আমি পাতালে থাকলে ওখানে গিয়ে বাবুরে দিয়ে আসবে।”

“মারিয়া মারিয়া।”

“ওই যে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে।আসছি আমি।”

জেরিন অবাক হয়ে মারিয়ার চলে যাওয়া দেখলো।মনে মনে বলল,”এসব কি হচ্ছে আমার সাথে!তবে কি আমি মিহান স্যারকে ভুল বুঝলাম।”

“কি রে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ওদিকে স্টেজে গান ,নাচ হচ্ছে।একটু পরে কেক কাটা হবে।চল তাড়াতাড়ি।”

শায়লার কথায় জেরিনের হুশ ফিরল। শায়লা জেরিনকে নিয়ে গেল।জেরিনের খুব বোরিং লাগছে।”মম আমার ভালো লাগছে না আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

শায়লা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেরিন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় শুনতে পেলো,”মিস জেরিন আপনি যেখানেই থাকুন প্লীজ স্টেজে চলে আসুন।”

গলাটা জেরিনের খুব চেনা লাগলেও সে পাত্তা দিলো না। ভাবলো অন্য কাউকে ডাকা হচ্ছে।দু’পা ফেলতেই আবার একই কথা শুনতে পেলো। জেরিনের এবার সন্দেহ হলো। মনের সন্দেহ দূর করার জন্য সে স্টেজে দিকে গেল।স্টেজে যেতেই সব লাইটস বন্ধ হয়ে গেল।কেউ এসে জেরিনের চোখ বেঁধে দিলো।জেরিন খুব ভয় পেয়ে গেল।সে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু কারোর কোনো সাড়া শব্দ পেলো না।জেরিন মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগল।কেউ কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,”ভয় পেয়ো না প্রেয়সী আমি তোমার সাথেই আছি। সারাজীবনের জন্য বন্দি করতে এসেছি।নিয়ে যাবো তোমায় আমার মনের রাজ্যে।”

কথাগুলো শুনে জেরিনের আরো বেশি ভয় লাগলো। শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো।কেউ জেরিনের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে স্টেজে নিয়ে গেল।জেরিনকে দাঁড় করিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিলো। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। হঠাৎ লাইট গুলো জ্বলে উঠলো।জেরিনের ভয় কেটে গেল। তাড়াহুড়ো করে স্টেজ থেকে নামবে এমন সময় পেছন থেকে হাতে টান পড়লো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মিহান হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।জেরিন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা।”আমি অতো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।কিভাবে প্রোপোজ করতে হয় ,ইমপ্রেস করতে হয় তা জানা নেই।আমি তোমার ওই রাগভর্তি ঝগড়ুটে মাখা চেহারার প্রেমে পড়ে গেছি। তুমি কি আমার সারাজীবনের ঝগড়া করার পার্টনার হবে রাজকুমারী?”

জেরিন মিহানের কথা শুনে মুচকি হাসলো। জেরিনের চোখ দুটো শায়লা আর চিত্রাকে খুঁজে বেরাচ্ছে।শায়লা আর চিত্রা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জেরিনকে ইশারা দিলো। জেরিন তাদের ইশারা বুঝতে পেরে ফুলগুলো হাতে নিলো।মিহান জেরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।এ যে এক অদ্ভুত অনুভূতি। হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার আনন্দ স্বর্গ সুখের মতো।মিহান জেরিনকে নিয়ে শায়লার সামনে এসে দাঁড়ালো।শায়লা বলল,”মিহান বাবা তোর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।তুই না থাকলে আমার মেয়েটার এতো পরিবর্তন হতো না।”

“না আন্টি এমন করে বলো না আমি তো কিছুই করি নি।জেরিন এতো মিষ্টি একটা মেয়ে তাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না।”

শায়লা আর মিহানের কথা শুনে জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।”এক মিনিট তোমরা কি একে অপরের চেনো আগে থেকেই।”

শায়লা অট্টহাসি দিয়ে বলল,”পাগলি মেয়ে একটা।মিহান হচ্ছে তোর রাশেদা আন্টির ছেলে।মিহান যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ওরা বিদেশে চলে যায়। দুইবছর আগে রাশেদা চলে আসে কিন্তু মিহান তার পড়াশোনার জন্য আসতে পারে নি।রাশেদা তোকে দেখেই পছন্দ করে মিহানের জন্য।আমাকে জানানোর পর আমি বললাম তুই আমার কথায় রাজি হবি না।তাই মিহান তোর কলেজে টিচার হিসেবে জয়েন করে। অবশ্য তোর বাবাও সব জানতো।”

সব শুনে জেরিনের চক্ষু চড়কগাছ।”এতোসব কান্ড করলে আমায় একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না!যাও তো কথাই বলবো না তোমাদের সাথে।”

জেরিন চলে যেতে নিলে রাশেদা এসে বলে ,”তোমার যাওয়ার সব পথ বন্ধ বুঝলে।তোমায় আর কোথাও যেতে দেবো না।মিহান এই নে আংটি টা জেরিনকে পরিয়ে দে।”

মিহান জেরিনকে আংটি পরিয়ে দিলো।সবাই তাদের জন্য দোয়া করলো।”চলো সবাই খেয়ে নেবে। অনেকক্ষণ ধরে না খেয়ে আছো।চিত্রা মা আয় !”

সবাই হাসি মজা করে খাওয়া শেষ করলো।সাজিদ এসে শায়লাকে বলল,”মা আমার এই ফাইলটা তোমার কাছে রাখো।আমার জরুরি কাজ আছে। তুমি এটা বাসায় নিয়ে যেও।”

ফাইলটা শায়লাকে দিয়ে সাজিদ বেরিয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আড্ডা দিলো।”রাশু এবার আমরা রওনা দেই বুঝলি। অনেক রাত হয়ে গেছে।”

“আজ রাতটা থেকে যাও না।”

“না রে ।তোর ভাইজান একা আছে।কখন কি লাগে না লাগে।আমায় ছাড়া তো তার চলেই না।”

শায়লার কথায় রাশেদা হেসে বলল,”বিয়ের এতো বছর পরও ভাইজান তোমায় চোখে হারায়।”

“যা বলেছিস!আচ্ছা এবার আমরা আসি।”

শায়লা চিত্রা আর জেরিনকে নিয়ে বাসায় এলো।শায়লা আর জেরিন ভেতরে চলে গেল।চিত্রা নেমে বাসায় ঢুকবে তখনই ড্রাইভার বলল,”ম্যাডাম এই ফাইলটা বড় ম্যাডাম গাড়িতে রেখে গেছে।”

চিত্রা বুঝতে পারলো এটা সাজিদের সেই ফাইলটা।ড্রাইভারের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে সাজিদের স্টাডি রুমের দিকে গেল।সাজিদ কাউকে এ রুমে ঢুকতে দেয় না।শায়লা চিত্রাকেও বলেছে এ রুমে না আসতে। কিন্তু চিত্রার খুব কৌতুহল!”কি এমন আছে এই রুমে যার জন্য সাজিদ ভাইয়া সবার প্রবেশ বন্ধ করে দিলো।”

চিত্রা দরজা খুলে ভেতরে গেল। রুমে একপাশে ছোট খাটো একটা লাইব্রেরী হরেক রকম বই সাজানো আছে। টেবিলের উপর কতকগুলো ফাইল এলোমেলো ভাবে রাখা।রুমটা খুব সুন্দর তবে সংরক্ষিত করে রাখার মতো কিছুই চোখে পড়লো না চিত্রার।তার হাতে থাকা ফাইলটা টেবিলের একপাশে রেখে চলে আসছে হঠাৎ সামনে একটা কাগজের টুকরো চোখে পড়লো। সাজিদের কোনো দরকারি কাগজ ভেবে চিত্রা কাগজটা হাতে নিলো।কাগজটা হাতে নিয়ে চিত্রার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,”এটা কিছুতেই হতে পারে।”
চিত্রার মনে হচ্ছে সে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। ঘুম ভাঙলে সব ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ পেলো।চিত্রা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। নড়াচড়া করার এক ফোঁটা শক্তি নেই।যেন এক নিমেষে সব শক্তি ফুরিয়ে গেল।”তুমি এ রুমে কি করছো?মা তোমায় বলে নি এই রুমে আমি ছাড়া আর কেউ আসতে পারবে না।”

সাজিদের কথায় চমকে উঠলো চিত্রা।ভয়ংকর রেগে গেল।চিত্রা এই সাজিদকে চিনতে পারছে না।চিত্রা বুঝতে পারছে কেন এই রুমে ঢোকা বারণ সবার।সাজিদ বলল…….

****চলবে****