জলে ভাসা পদ্ম পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
688

#জলে_ভাসা_পদ্ম
#অন্তিমপর্বঃ৬
#রেহানা_পুতুল
পদ্ম মন খারাপ হচ্ছে আমার জন্য? আরিয়ান জিজ্ঞেস করলো।

পদ্ম মাথা উপর নিচ ঝাঁকালো। মুখে কিছুই বলতে পারলোনা। পা ঘুরিয়ে চলে যেতে লাগলে পিছন থেকে হাতে টান পড়ে। একটা কাগজের খাম হাতের মুঠোর ধরিয়ে দিয়ে আরিয়ান চলে গেলো পদ্ম’র সামনে থেকে।

পদ্ম আরিয়ানের যাওয়ার দিকে চেয়ে মনে মনে উচ্চারণ করলো,
অদ্ভুত একটা। ইম্পসিবল একটা।

পরিক্ষার জন্য কষ্ট করে হলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেললো পদ্ম। এই ভিতরে পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো। পদ্ম নওশাদের সাহায্য নিয়ে গ্রামে খালার বাড়িতে গিয়ে উঠলো। কিন্তু হোস্টেল ছেড়ে দেয়নি। আর বাড়িতে যায়নি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ভয়েই। মা ছোটবোনদের নিয়ে বোনের বাড়িতে এলো। পদ্ম’র সাথে পনেরো দিন থাকলো। পদ্ম মাকে ঢাকায় যাওয়া থাকার পুরো ঘটনা খুলে বললো ধীরে ধীরে। রেজাল্ট ও দিয়ে দিলো যথাসময়ে । খুব ভালো রেজাল্ট করলো পদ্ম। আরিয়ান ঢাকায় যেতে বলছে পদ্মকে। পদ্ম ঢাকায় গিয়ে আগের হোস্টেলেই উঠলো। আরিয়ান আর নওশাদ পরামর্শ করে ভালো একটি কলেজে এডমিট করে দিলো পদ্মকে।

পদ্ম কলেজে ক্লাস করছে নিয়মিত। কোচিং এও ভর্তি হয়েছে বন্ধুদের সাথে।
পদ্ম জোহরা বানুর সাথে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখা করে। কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে আবার চলে যায়। পদ্ম এখন আগের সেই অজপাঁডাগায়ের বোকাসোকা মেয়েটি নেই।
দিনে দিনে যেমন সুন্দর, স্মার্ট,লাস্যময়ী হয়ে যাচ্ছে তেমনি নেশাধরা যৌবনবতীও হয়ে যাচ্ছে। চালাক হচ্ছে একা পথ চলে চলে। ক্লাসের একাধিক ছেলে পদ্ম’র পিছনে টইটই করে ঘুরে। কিন্তু পদ্ম পাত্তা দেয়না। তার স্বপ্ন আত্মনির্ভরশীল হওয়া। নিজের পায়ের নিচের মাটিকে খুব শক্ত করে তোলা। যেন শত ঝড় ঝাপটাতেও তলিয়ে যেতে না পারে।

বোধ হওয়ার পর হতেই দেখছে সংসারে অর্থনৈতিক অনটন ও বাবা মায়ের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব।

নওশাদ পদ্ম’র নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছে। মাঝে মাঝে এসে দেখা করে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক এটা ওটা কিনে দিয়ে যাচ্ছে।

দিন গড়িয়ে মাস এলো। মাস গড়িয়ে বছর। বছর গড়িয়ে দুবছর। পদ্ম’র এইচএসসি ফাইনাল ও শেষ হয়ে গেলো। রেজাল্ট দিয়ে দিলো। ভালো রেজাল্ট করেছে। পদ্ম মাকে রেজাল্ট জানিয়েই জোহরা বানু, নওশাদ, আরিয়ানকে জানালো।

নওশাদ পদ্মকে পরে ফোন দিয়ে বলল,পদ্মফুল ভালো রেজাল্ট উপলক্ষে তোমাকে গিফট দিতে চাই।

বল কি নিবে বা কি খাবে?

পদ্ম উমম…একটু ভেবে জানালো,
ঢাকায় এতদিন ধরে আছি। কোথাও ঘুরে বেড়ানো হয়নি আমার।

ওহ শিউর। কাল সকালে রেডি হয়ে থেকো। আমি আসবো নিতে। তারপর যেথায় ইচ্ছে সেথায় নিয়ে যাবো।

পরেরদিন নওশাদ বাইক নিয়ে অপেক্ষা করে। পদ্ম নিচে নেমে আসে। বাইকের কাছে এসেও,ওয়াও নিউ বাইক? কবে নিয়েছেন? উফফস বাইকে চড়া আমার কাছে দারুন এনজয়ের।

নওশাদ বেহুঁশের মতো উচ্ছ্বসিত পদ্মকে দেখছে।

পদ্ম নওশাদের চোখের সামনে তিন আঙ্গুলের তুড়ি বাজিয়ে, হেই মিস্টার এনি প্রবলেম?

নওশাদ চকিতে চাইলো। বলল,ওহ বাইক মাত্র কয়দিন হলো কিনেছি।ওঠে বস ভালো করে।

পদ্ম বলল, মাইন্ড করবেন না। ভয় করে। জড়িয়ে ধরে বসলে সেফটি ফিল করতাম।

নওশাদ বলল,বাইকে যে কেউই হোক না কেন,ধরে বসলেই নিরাপদ।
পদ্ম নওশাদের পিছনে বসে একহাত দিয়ে নওশাদের পেট পেঁচিয়ে ধরে বসল। নারায়ণগঞ্জ জিন্দাপার্কে নিয়ে গেলো পদ্মকে। সারাদিন সব ঘুরে ঘুরে দেখালো নওশাদ পদ্ম’র হাত ধরে ধরে। পদ্ম যা খেতে চাইলো খাওয়ালো। সব টাটকা খাবার পাওয়া যায় এখানে।

খালের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি তালগাছে। এ তালগাছ থেকে পাড়া তালের আঁটির দাম একটু বেশী হলেও বেশ সুস্বাদু। পদ্ম একের পর এক অনেকগুলো আঁটি খেয়ে ফেলল।
পদ্ম বলল,কি যে ভালোলাগছে নওশাদ ভাইয়া। বোঝাতে পারবোনা। উফফস!

নওশাদ না বোঝার ভান করে জানতে চাইলো আমাকে না এ জায়গাকে?

পদ্ম নওশাদের হাতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে, এ অবারিত সবুজ! এ স্বচ্ছ জলরাশি! গাছের শাখায় শাখায় অগনিত পাখির কলরব! গাছে গাছে রঙিন ফুলের সমারোহ আমাকে উম্মনা করে দিয়েছে নওশাদ ভাই। বলেই খুশীতে নওশাদের হাত চেপে ধরলো পদ্ম।

নওশাদ বলল,দেখো প্রতিটি গাছের উপরে ছোট্ট কুঁড়েঘর। আর গাছের গোড়ায় দুজন করে সিরিয়াল। উঠলে আর কেউই নামতে চায়না।

মজাতো! গ্রামে থাকতে কত গাছের ডালে চড়ে উল্টো হয়ে কলাবাদুড সাজতাম। পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দিতাম। আমিও যাই উঠি।

যাও সিরিয়ালে দাঁড়াও।
আপনি উঠবেন না?
নওশাদ পদ্ম’র চোখে চোখ রেখে, এখানে প্রেমিক প্রেমিকা ছাড়াই কেউই উঠেনা। সো…

পদ্ম সিরিয়ালে দাঁডিয়ে উঠতে গেলেই, গাছের নিচে দায়িত্বরত ছেলেটা পদ্মকে বাধা দেয়।
এখানে সিংগেল উঠা যাবেনা। পদ্ম নওশাদের হাত ধরে টেনে এনে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। সাথে সাথেই আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নামলো। তারা কুঁড়েঘরটির ভিতরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসলো দরজা থেকে সরে গিয়ে। তবুও প্রবল বৃষ্টির ঝাপটায় পদ্ম ও নওশাদ একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে।

নওশাদের মনে পড়ে গেলো দুদিন আগে নানু জোলেখা বানুর বলা কথাগুলো।
হ্যাঁরে নওশাদ পদ্মকে তোর কেমন লাগে?
ভালো লাগে নানু। কেন?

ভাবছি মা মরা তুই। পদ্ম’র মতো নরম নিরীহ শিক্ষিত একটা মেয়েকে বিয়ে করলে হয়তো ভালো থাকবি।

নানু পদ্মকে বোনের চোখে দেখি আমি। এটা অসম্ভব।

দেখস। কিন্তু সেতো তোর বোন না। মানুষ এমন কতজনকেই ভাই ভাবে বোন ভাবে। একটা সম্বোধন করে ডাকতে হয়। তাই ডাকে। পরে বিয়ে করেনা? আমার মনে হয় মন্দ হবেনা। ভেবে দেখিস তুই।

আচ্ছা এটা বিবেচনার বিষয় নানু।

নানু ভুল কিছু বলেনি। আমার জন্য পদ্ম পারফেক্ট মেয়ে। নওশাদের কল্পনা থেকেও যা ছিলো অদৃশ্য। লক্ষ কোটি যোজন দূরে। কিন্তু জোলেখা বানু বলার পর হতেই তা তীরের মতো সব ভেদ করে এখন কল্পনার দুয়ারে চলে এসেছে। আড়চোখে পদ্মকে দেখছে। ভেজা পাতলা সিল্কের ওড়নাটি লেপ্টে আছে পদ্ম’র সুডৌল বুকের উপরে। পদ্ম’র গোলাপি অধরখানি কাঁপছে হিম হয়ে। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। পদ্ম বলল,চলেন নেমে যাই।

পদ্ম শুনো।
বলেন নওশাদ ভাই।

নওশাদ তড়িতেই গলায় আসা বাক্যটি গিলে ফেললো। কথা ঘুরিয়ে,
না মানে তোমার ওড়নাটা ঠিক করে পরে নাও।

পদ্ম লজ্জিত হলো খানিকটা। চোরাচোখে নিজের বুকের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে বুঝে নিলো কিছু। অন্যদিকে ঘুরে ওড়না হাতে নিয়ে ভালো করে ঝেড়ে পানি ঝরিয়ে পরে নিলো।

ওরা ফিরে গেলো বাসায়। এভাবে পদ্ম’র আবদার অনুযায়ী মাঝে মাঝেই পদ্মকে নিয়ে নওশাদ এখানে ওখানে যায়। হাত ধরে নানা কিছু দেখায়। ছবি, সেলফি তোলা হয় নানা পোজে দাঁড়িয়ে। দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। এতে নওশাদ প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে দূরত্ব বজায় রেখেই।

পদ্ম ঢাকার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলো। হোস্টেল ছেড়ে হলরুমে উঠে গেলো। এদিকে মাঝে মাঝে ভিডিও কলে আরিয়ানের সাথেও কথা হয়। নওশাদের সাথে কোন কোন স্থানে ঘোরা হয় তাও শেয়ার করা হয় আরিয়ানের সাথে।

বেশকিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। পদ্ম সেকেন্ডে ইয়ারে উঠে গেলো। এখন আর আরিয়ানের হেল্প বা কারো হেল্প নেয়না। অনেকগুলো স্টুডেন্টকে প্রাইভেট পড়ায়। এতে বেশ চলে যায় তার।
একদিন রাতে আরিয়ান পদ্মকে মেসেজ দিলো,
‘ নওশাদের সাথে তোলা তোমার সব ছবিগুলো দাওতো। দেখবো। ‘

পদ্ম তেমন কিছুই মনে করলোনা। একে একে অনেকগুলো ছবি দিয়ে দিলো । আরিয়ান ছবিগুলোকে দেখলো জুম করে নানাভাবে পরখ করে। পদ্মকে কিছুই বললনা।

আরিয়ান একদিন নওশাদকে ফোন দিয়ে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
দাদী নাকি তোকে প্রস্তাব দিয়েছে পদ্মকে বিয়ে করার জন্য?

আর বলবেন না ভাই। হুম বলছে।

এতে তোর কি মত?

আমার আপত্তি নেই। কারণ সবভাবে বিবেচনা করে দেখলাম মন্দ হয়না।

পদ্ম জানে বিষয়টা?

আরেহ নাহ। পরে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই ভিতরে তার সাথে অনেক ঘোরাঘুরি হয়েছে। একটা গুড় বন্ডিং হয়েছে। আমার প্রতি তার মতিগতি বুঝেই প্রপোজাল দিবো। প্রেম করার জন্য নয়। একবারে বিয়ের প্রস্তাব।

তোর কি মনে হয় পদ্ম রাজী হবে তোকে বিয়ে করতে?

অবশ্যই মনে হয়। নাহ হওয়ার উল্লেখযোগ্য কোন কারণ দেখিনা। ওকে যদি সেদিন আমি না আনতাম। আজ কোথায় থাকতো সে। সুতরাং আমার উপর পদ্ম অনেকভাবেই কৃতার্থ।

কবে প্রপোজাল করার ইচ্ছে তোর?

এইই থার্ড় ইয়ারে উঠলে বা সেকেন্ড ইয়ারের লাস্টের দিকে। না হয় পরে যদি অন্য কারো সাথে প্রণয় ঘটে যায়।

হুম মন্দ হয়না পদ্ম তোর বউ হলে।

আরিয়ান ভাই আপনি এতে অখুশি?

একদম না ভাই। তুই আমার পর? তোর ভালো থাকাই যে আমার প্রতিদিনের প্রত্যাশা। দরকার হলে তোর হয়ে আমিই তাকে বলবো।

তাহলেতো ভীষণ ভালো হয় ভাই। ওদের কথা শেষ হয়।

পদ্ম থার্ড ইয়ারে উঠে গেলো। জোলেখা বানু বেশী অসুস্থ হওয়ায় পদ্ম এই কয়দিন তার কাছেই আছে। বলি বলি করে চাপা স্বভাবের নওশাদ আর বলতে পারছেনা বিয়ের কথা।

আরিয়ান দাদীকে দেখতে আর বাবার ব্যবসার কাজে ঢাকায় এলো। শুনে পদ্ম ভীষন আন্দোলিত হয়। নিজের অজান্তেই মনের আকাশে শরতের শুভ্র মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। লুকিয়ে হারায় কাশফুলের ভীড়ে। পলকে পলকে শিহরিত হয়।

সুন্দর কিছু সুন্দর পরিবেশেই উপস্থাপন করতে হয়। তাই একি বাসায় থেকেও পদ্মকে কিছু বলেনি আরিয়ান।
আরিয়ান পদ্ম’র সাথে দেখা করতে যায় একটি ক্যাফেতে। হাতে থাকা একগুচ্ছ রক্তিম গোলাপ পদ্ম’র হাতে দিয়ে,
হেই পদ্ম, কেমন আছ? বেশ আকর্ষণীয় লাগছে তোমাকে। আমি শিউর। এই শহরের হাইহিল পরা আর বব কাটা চুলের ফ্যাশনেবল গার্লস ও পিছিয়ে থাকবে তোমার চেয়ে। আর দেখলেতো সময় মানুষকে কিভাবে মজবুত করে তৈরি করে। কি ছিলে আর কি হলে। কতটা পরিনত আজ তুমি। কতটা আত্মনির্ভরশীল আজ তুমি। তোমায় দেখে জ্বলে পুড়ে ছারখার হবে সেই নিন্দুকবাসীরা।

পদ্ম আপ্লুত হয়। শিহরিত চোখে আরিয়ানকে দেখে। পদ্ম’র পছন্দের মেন্যু অর্ডার দেওয়া হয়। যদিও পদ্ম বলছে কিছুই খেতে ইচ্ছে করছেনা।

আরিয়ান বলল,খাও তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। শেষে বলব সেটা।

পদ্ম’র তর সইছেনা। দ্রুত খাওয়া শেষ করে শোনার অপেক্ষায়।

এখানে শুনবে না রিকশায় করে যেতে যেতে।
পদ্ম আদুরে আদুরে গলায় নেকি ভাব এনে বললো, রিকশায় যেতে যেতে।

রিকশায় চড়লো দুজন, পদ্ম আরিয়ানের হাত শক্ত করে ধরলো, এবার শুনিতো।

পদ্ম আসলে প্রস্তাব দাদি দিয়েছে। আমিও কাজে ঢাকায় আসছি। তাই আমাকেই বলতে হচ্ছে কারো হয়ে।
পদ্ম স্তব্দ হয়ে গেলো কারো হয়ে শুনেই।

নওশাদ তোমাকে পছন্দ করে। ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায় যদি তোমার আপত্তি না থাকে। সে পারছেনা বলতে। সংকোচবোধ করছে। তাই তার হয়ে আমিই প্রোপোজাল দিলাম তোমাকে।

পদ্ম নরম স্বরে বললে আপনি ঘটক হলেন কবে থেকে?

এই এখন থেকে।

পদ্ম নিরুত্তর। দুজন বাসায় ঢুকে পড়লো। পদ্ম রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো এক ক্রুশ অভিমানে। ভাবলো কি আর হলো কি।

আরিয়ান নিজের রুমে ঢুকে ভাবনার অতলে ডুবে গেলো। বুঝে নিলো পদ্ম তাকে পছন্দ করে। রাতের নির্জন পরিবেশে পদ্ম’র রুমে যায়।

পদ্ম ঘাবড়ে যায় আরিয়ানকে দেখে। আরিয়ান পদ্মকে দুহাতে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। রাজী মেয়ে?

পদ্ম দুহাতে ঠেলে আরিয়ানকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

পরের দিন শিশির ভেজা ভোরে পদ্ম বাসা থেকে হলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আরিয়ান বিনিদ্ররজনী পার করেও সকালে উঠে চলে যায় পদ্ম’র রুমে।
খালি রুম। সারা বাসার কোথাও পদ্ম নেই। বালিশের নিচে ছোট্ট একটি চিরকুট পায়।

‘ প্রিয় আরিয়ান আমি তোমার বা নওশাদের কারোই হওয়া সম্ভব নয়। জলে ভাসা পদ্ম আমি। তোমাদের দুজনের আনুকুল্যে থেকে আমার মাঝে থাকা রূপ,রঙ,আর গুনাবলীগুলো বিকশিত ও উদ্ভাসিত হয়েছে পরিপূর্ণভাবে। তারজন্য আজন্ম কৃতজ্ঞতা তোমার ও নওশাদের কাছে। আর আমার সেসব সৌন্দর্যকে ভেবেই না হয় তোমরা কিছুদিন মনে রেখো আমায়।
আমি আমার মতো ভালো থাকার চেষ্টা করবো আমার ভুবনে। নানুকে আমার হৃদয় উপচানো ভালোবাসা। তুমি, নানু,নওশাদ আমার অন্তরের ছোট্ট কুঠুরিতে জ্বলজ্বল করে জ্বলবে অনন্তকাল। যে কালের কোন শেষ নেই। ‘
ইতি — জ্বলে ভাসা পদ্ম।

আরিয়ান মুহুর্তেই পদ্মকে ফোন দিলো। কিন্তু বারবার ফোন দিয়েও পেলোনা। সুইচড অফ। অতঃপর গভীর দীর্ঘস্বাস ফেলে মনে মনে উচ্চারণ করলো,
‘ জীবন তৃপ্তি দেয় যতটুকু অতৃপ্তি দেয় তার চেয়েও বেশী। ‘

(সমাপ্ত)