জোয়ার ভাটা পর্ব-১৭+১৮

0
324

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
পর্ব-১৭

শহরের বাহিরে…। গহীন জঙ্গলের বুক চিঁড়ে, গাড়ি শাই করে চলছে। চারপাশের অন্ধকারের গ্লানি মোচনের চেষ্টা শুধু গাড়ির হেড লাইট। মরিচীকার মতো হারিয়ে যেতে লাগলো দূর-দূরান্তের গাছগাছালি। গাড়িটি ব্রেক কসলো জোরে লেকের সামনে এসে…। মনঃক্ষুণ্ন গ্রীষ্ম লাথি মেরে এক ঝটকায় গাড়ির দরজা খুলে টেনে হিছড়ে বের করলো মার্জানকে। আলো-আঁধারি কিঞ্চিৎ মাত্র। লেকের ধারে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক স্পষ্ট। মার্জানের মুখে গ্রীষ্মের শক্ত হাতের বাঁধনে আর্তনাদ,

“গ্রীষ্ম, গ্রীষ্ম কি করছেন আপনি? ছাড়েন!আমার খুব লাগছে, আহ্!মি: গ্রীষ্ম আমার কথাটা তো শুনবেন।”

গ্রীষ্মের কোনো ভাবাবেগ নেই, অনুভূতি নেই, কুঞ্চিত কঁপালের ফোলা রগ, জানান দিচ্ছে গ্রীষ্মের রাগের বহাল। মার্জানের আপ্রাণ চেষ্টায় ছাড়াতে চাইছে নিজেকে গ্রীষ্মের কাছ থেকে। নিরুপায় মার্জান চিৎকার করেও কোনো কুল-কিনারা পেলো না। নির্জন নিস্তব্ধ এই লোকালয় বিহীন জায়গায় কে আসবে ওঁর সাহায্যে? গ্রীষ্ম এবার মার্জানকে ধাক্কা মেরে ফেললো গাড়ির বনাট এর উপর। ব্যথায় কুকিয়ে উঠবার সময় টুকু পেলো না। চেপে ধরলো গ্রীষ্ম ওঁর সবল, শক্ত পুরুষালী হাত দিয়ে ওঁর টুটি চেপে। ভয়ে, ব্যথায় কথায় ভুলতে গেলো ওঁ, ডাগরডাগর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো সামনের রাগে তপ্ত মানুষটিকে। গ্রীষ্ম দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে বলল এবার,

” কেন! কেন করলে এমন জান! ইউ নো না… হাউ মাচ আই লাভ ইউ? তারপরেও? হোয়াই? হোয়াই? তোমার কাছে বুঝি আমার অনুভূতি, আমার ভালোবাসা এতোটাই ঠুনকো?”

মার্জানের অক্ষি পল্লবে জমা নোনা জল। জলীয় বাষ্পের মতো উড়ে যেতে চাইছে, হাওয়া হয়ে। বিষন্ন মন, মস্তিষ্ক বলছে,

” গ্রীষ্ম এতো ডেস্পারেট কেনো?”

কিন্তু কন্ঠ নালিতে কোনো রা নেই। গ্রীষ্ম মার্জানের এই নিরবতায় আরো ক্ষেপে যাচ্ছে। গাড়ির বুনাটে রাগে ক্ষোভে থাবা মারতেই বিকট শব্দ ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে। মার্জান আতঙ্কে কোনো রকম বলল,

” মি: গ্রীষ্ম আপনি যা ভাবছেন….তেমন কিছুই না বিশ্বাস করুন। আমরা শুধু বন্ধু!”

মার্জানের কথা শেষ না হতেই, গ্রীষ্ম গগনবিদারী চিৎকার করে উঠে,

” কোনো বন্ধু কি তার লেডি বন্ধুকে রিং পড়ায়?”

মার্জার খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই মুহুর্তে ওঁর মনে হচ্ছে ওঁ এখন থেকে যদি ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারতো? গ্রীষ্ম মার্জানের ভীতিজনক মুখ দেখে সরে গেলো ওঁর উপর থেকে। রাগে কাঁপছে ওঁ। লেকের ধারে মার্জানের দিকে পিঠ করে তাকিয়ে রইলো ওঁ। মার্জান ভয়ে ভয়ে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ালো। গ্রীষ্মকে ফাঁকি দিয়ে ওখান থেকে পালাতে চাইলো। ঠিক তখনি মুখ করে আবার চাইলো গ্রীষ্ম। হঠাৎ করেই গ্রীষ্ম কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। ওঁর মুখটা থমথমে। মার্জান নেই, এমন ভাবে উপেক্ষা় করে গিয়ে দাঁড়ালো লেকের ধারে পিঠ করে। গ্রীষ্মের সারা শরীর জ্বলছে, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ওঁ এবার দৌঁড়ে মার্জানের কাছে এলো, চোখে মুখে এখন রাগের জায়গায় চিন্তিত দেখাচ্ছে। মার্জের বাহুতে হাত রেখে জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে উঠলো,
” মা-র্জান… তুমি.. তুমি চলে যাও।”

বলেই নিজ থেকে দূরে ঠেলে দিলো। মার্জান এবার আর কাল বিলম্ব না করে দৌঁড় দিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে মার্জানের কানে এলো ভাড়ী কিছু পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার। মার্জানের পা সেখানেই এঁটে গেলো। ভয়ে ভয়ে চোখ পিছনে ফিরিয়ে তাকাতেই এক আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে মার্জান। উল্টো পথে আবারো দৌড়ে যায় লেকে কাছে। কোনো কিছু না ভেবেই ঝাপিয়ে পড়লো পানিতে। গ্রীষ্ম হেঁটে চলছে, ওঁ বুক পর্যন্ত পানি পর্যন্ত নেমে এসেছে। মার্জান পিছনে থেকে চিৎকার করে ডাকছে,

” মি: গ্রীষ্ম? মি: গ্রীষ্ম কি করছেন আপনি? ফিরে আসুন।”

গ্রীষ্মের কন্ঠ এবার ভার,
” মার্জান মরতে না চাইলে এখান থেকে চলে যাও।”

কিন্তু মার্জানের কর্ণপাত যেন হলো না। মার্জান নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পিছনে টানলো। তাতে লাভ হলো না, উল্টো মার্জানকে হেঁচকা টান মেরে ঢুবি দিলো পানিতে। মার্জান এবার পানির ভিতর নিজের হাত পা ছুঁড়তে লাগলো। শ্বাস নিতে পারছে না ঠিক মতো। ফুসফুসে যেন পানি ভরে যাচ্ছে ওঁর। মার্জানের শ্বাস বেড়িয়ে পড়বে ঠিক এমন টাইমে মার্জান গ্রীষ্মের হাত আলগা হতে দেখেই মার্জান ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। সাঁতরে কিছুটা দূরে যেতেই গ্রীষ্মকে পানির নিজে তলিয়ে যেতে দেখে টেনে পাড়ে নিয়ে এলো। গ্রীষ্ম জ্ঞান হারিয়েছে। গায়ে প্রচন্ড জ্বড়। শুধু বিড়বিড় করছে কিছু। মার্জানের এক বার মস্তিষ্ক চাইলে, যে ব্যক্তি ওকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলো, তাকে এখানে এভাবেই ফেলে চলে যাক। কিন্তু ওঁর মন বলল, নাহ্… লোকটি এখন হুঁশে নেই। মার্জান মনের কথা প্রাধান্য দিলো, গ্রীষ্মের ফোন থেকে রায়হানকে ফোন দিতেই, আধ ঘন্টার মাঝেই উপস্থিত হলো এম্বুলেন্স সহ। মার্জান হতবাক। গ্রীষ্ম শুধু বেহুঁশ হয়েছে এর জন্য এত কিছু কেন? এম্বুলেন্সের সাথে আসা ডাক্তার এদিকে গ্রীষ্মকে গাড়িতে তুলে নিলো। প্রাথমিক পর্যবেক্ষনের পর বলে উঠলো,

” উনার এ্যাটাক এসেছিলো।”

মার্জান চোখ ছোট ছোট করে চাইলো,

“এ্যাটাক? কিসের এ্যাটাক?”

রায়হান কথা পাল্টে ডাক্তারকে যেতে বলল। কাক ভেজা মার্জানকে বলে উঠলো,

” ওঁর বাইপোলার ডিসওর্ডার আছে, বলেছিলাম আপনাকে?”

মার্জানের মনে পড়তেই আঁতকে উঠলো। চট জলদি বলে উঠলো,

” আপনার বন্ধুকে বলবেন, আমার এবং আমার ছেলে থেকে দূরে থাকতে।”

রায়হান আহাম্মক বনে গেল। এর পর বলে উঠলো,

” ঠিক বুঝলাম না।”

“আপনার বুঝে কাজ নেই, আমার মেসেজটা উনার কাছে পৌঁছে দিবেন। উনার মতো ডেঞ্জারাস ব্যক্তি, যার জন্য একটু আগে প্রায় মেরেই ফেলেছিলো, তার সাথে কোনো সম্পর্ক আমার নেই। ”

বলেই গটগট পায়ে জায়গায় ত্যাগ করলো মার্জান।

——-

প্রতিটি মানুষের নিজস্ব গন্তব্য রয়েছে। যার জন্যই ছুটে চলে প্রতিবার মানুষ, লড়াই করে, কেউ বাঁচার, কেউ জেতার, আবার কেউ নিজেকে সমতল থেকে আকাশ পানে পৌঁছোবার। তেমনি ছুটছে মার্জান। সময়ের গতিপথের সাথে তাল মিলিয়ে এই এক মাসের কঠোর পরিশ্রমের ফল পাবার পথে…. মার্জান হাতের মুঠো মক্ত করে চেপে ধরে আছে। আজ ওঁর শোর প্রথম পর্ব টিভিতে আসতে চলছে। এই টিভি শোর উপর ডিপেন্ড করছে অনেক কিছু। মার্জান জানে, সুরভি আর রিয়ানার সাথে ওঁ কখনো টাকার জোরে পারবে না… কিন্তু মার্জানের ট্যালেন্টের জোরে রিয়ানাকে হারিয়ে ফেলা ওঁর কাছে অনেক সহজ… তাই তো… তাই ওঁ বেছে নিয়েছে এই পথ…। মার্জানের ধ্যান ভঙ্গ হলো, কারো হুট করে দিয়া ধাক্কায়… মার্জান পিছনে ফিরে চাইতেই দেখতে পায় রিয়ানাকে.. রিয়ানা মুচকি হাসছে… ওঁর পেটে হাত বুলিয়ে এবার বলে উঠলো,

” মার্জান.. তুমি এত সহজে জিতবে? তা ভেবো না.. কারণ তোমার শো এর ঠিক আগেই আমার শো হবে। বুঝতেই পারছো? কোথায় যাবে তোমার শো এর রেটিং?”

বলেই হাত উঁচু করে একে বারে নিচে নামিয়ে বলে উঠলো,
” একে বারে মাটিতে… মুখ থুবড়ে পড়বে আরকি…!”

বলেই খিল খিল করে হাসলো রিয়ানা। মার্জান এবার হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে শ্বাস ছাড়লো,

” জানো তো রিয়ানা.. খালি কলসি বাজে বেসি.. আবার যত গর্জে তত বর্ষে না। এই প্রবাদ গুলো ক্লাস নাইন-টেনের বইয়ে অহরাহ আছে জানো তো…। ”

রিয়ানা বুঝতে পারলো না,
“মানে?”
মার্জান হেসে বলল,
” বেশি বেশি বাদাম খাও রিয়ানা.. তোমার বাচ্চাটাও না আবার তোমার মতো বেকুব হয়। ”

বলেই মার্জান স্থান ত্যাগ করলো। পিছনে ফেলে গেলো রিয়ানার থমথমে মুখ। মার্জান জানে, ওঁর শোর ট্রেলার যখন বের হয়েছিলো, দর্শকদের সাড়া পেয়েছিলো খুব। এমন কি ফেবুর হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং প্রথম নাম্বারে ছিলো। তাই মার্জানের তেমন টেনশন হচ্ছে না, ওঁর শোর রেটিং হাই লেবেলের না হলেও খারাপ-ও হবে না। তাই রিয়ানার বক বক বন্ধ করতেই এই প্রন্থা অবলম্বন করলো ওঁ। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা সময় মতো ঢং ঢং বাজিয়ে চলল। উৎসুক দৃষ্টিতে মার্জানের টিমেরা একে অপরের হাত ধরে আছে। ৩০ মিনিট শো এর সময় পাড় হতেই যেন সবাই শান্তির শ্বাস ছাড়লো। সায়ন এসে জানালো,

” কাল সকাল পর্যন্ত আমাদের হাতে রেজাল্ট চলে আসবে।”

এই খুশির ঠেলায় মার্জান নির্ঝর আর শীপ্রাকে কল করলো, দু’জনকে লাভ ফ্যারিতে আসতে বলে ওঁ নিজেও বেড়িয়ে গেলো ওখান থেকে। রেস্টুরেন্টে পৌঁছে বুকিং করা টেবিলে বসে পড়লো ওঁ। শীপ্রা আর নির্ঝর আসবার নাম নেই। অপেক্ষাকৃত মার্জান এবার ফোন স্ক্রল করলো। নম্র হাতে নিজ পেইজে লগিং হতেই অসংখ্য মেসেজে অবাক ওঁ। সকলের গুড উইসেস, তো অন্য দিকে কিছু নিন্দুকের তোপ। মার্জান নিন্দাসূচক কথা বার্তা অ্যাভয়েড করলো। এবং যারা উইশেস করেছে তাদের ধন্যবাদ জানালো। মার্জানের ঠোঁটের কোনে আজ অনেক দিন পরে মন খোলা হাসি। কিন্তু তা আর রইলো না বেশিক্ষণ.. ওঁর ফোনে ভেসে উঠলো, ” সামার কলিং”

মার্জান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। ওই ব্যক্তিটি আজ পাঁচ দিন যাবত ওঁকে কল করেই যাচ্ছে। মার্জান পাত্তা দিচ্ছে না.. সাত দিন আগের কাহিনি মনে হলে এখনো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়…। সেদিন যদি মার্জান মারা যেতো? কি হতো ওঁর, কি হতো ওঁর ছেলের…। মার্জান ভাবতে পারলো না ফোন কেঁটে দিয়ে ব্ল্যাক লিষ্টে ফালিয়ে দিলো গ্রীষ্মের নাম্বার। ততক্ষণে শীপ্রা দৌঁড়ে এসে ঝাপটে ধরলো ওঁকে। শীপ্রার মুখের টান টান হাসি দেখে খুশি মার্জান নিজেও,

” কি ব্যাপার এত খুশি যে? লাভের সাথে সব ঠিক ঠাক বুঝি?”

শীপ্রার মুখ নীল আকাশে ছেয়ে যাওয়া কালো বাদলের মতো হয়ে গেলো,

” তোকে তো বলেইছি আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”

কিন্তু পরক্ষণেই হেসে একটি এ টি এম কার্ড দেখিয়ে বলে উঠলো,

” খুশি এই কারনো, কেউ একজনের আজ পকেট খালি হতে চলেছে… ”

বলেই খিল খিল করে হাসলো শীপ্রা। মনের মাঝে নিরব প্রতিশোধের স্পৃহায় পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। মার্জান বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে ফেললো,

” তো আজ তায়ান শাহ্.. সোয়াহা… হতে চলেছে।”

বলেই দু’জনে আবারো হেসে উঠলো। মার্জান দরজার দিকে তাকিয়ে আবার বলল,

” আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি, তুই বরং বস, নির্ঝোর এসে খুঁজবে না হয় আমাদের।”

শীপ্রা সম্মতি জানালো। মার্জান হাতের পার্স তুলে গটগট করে চলে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।

ওয়াশরুমের ভিতরে ফিনাইলের তীব্র গন্ধ, পানির কলকলানির শব্দ। মার্জান নিজের মুখে পানি ছিটা দিয়ে আয়নায় তাকাতেই প্রায় চমকে গেলো। সামনে ব্যক্তিটিকে দেখে পিছনে ফিরলো সঙ্গে সঙ্গে,

” ভাদ্র? ”

ভাদ্র মিটিমিটি হাসছে। মার্জানের খুব কাছে এসে মার্জানের এক গাছি চুল সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

” কেমন আছো, মার্জান…! তুমি আগে থেকে এখন অনেক প্রখর, আবেদনময়ী হয়ে গেছো। তোমাকে দেখে আমার পুরোনো প্রেম প্রেম ভাবটা মাথা নাড়ািয়ে উঠছে কি করা যায়? বলতো?”

মার্জান দাঁত কিড়মিড় করে চর বসিয়ে দিলো ভাদ্রের গালে। ভাদ্র গালে হাত বুলিয়ে হাসলো,

” উফ… তোমার স্পর্শে এখনো অনেক উঞ্চতা খুঁজে পাচ্ছি ঠিক আগের মতো… আমার কামুকতা এবার কিন্তু বড্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

বলেই দু’পা এগিয়ে এসে মার্জানের বাহু চেপে ধরে কাছে টেনে নিলো। মার্জানের গাড়ো গোলাপি ঠোঁটের দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
” তোমার দেহ একান্ত করে পাবার জন্যই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম মার্জান। সেদিন তোমার সব শোনা উচিত ছিলো না। না হলে… আজ তুমি আমার ঘরনি হতে, আর প্রতিটি রাত আমাদের রঙিন হতো।”

মার্জান এবার থুতু মেলে দিলো ভাদ্রের মুখে। ভাদ্র এতে ক্ষেপে গেলো। আরো কিছু করবার আগেই মার্জান ওঁর কনুই দিয়ে পেট বরাবর মারলো। ব্যথায় দু’কদম পিছিয়ে গেলো ওঁ, মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো রক্ত। ভাদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যে মেয়ে মুখ
খুলতে ভয় পেত ওঁর সামনে?আজ ওই মেয়ে ওঁর গায়ে হাত তুলছে? ভাদ্রের পুরুষত্ব আঘাত পড়লো যেন, তেড়ে এসে মার্জানের চুলের মুঠি ধরতেই একটি পুরুষ্টু হাত ওঁর নাক বরাবর ঘুষি মারতেই ছিটকে ভেসিনের উপর বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। মাথা ফেঁটে এবার ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কঁপালে হাত দিয়ে রক্ত দেখতেই কেঁপে উঠলো ওঁর রূহ। এত রক্ত… এত.. কিন্তু কে এমন করলো দেখবার জন্য সামনে তাকাতেই মুখ হা হয়ে গেলো,

” মি: গ্রীষ্ম? আপনি এখানে?”

নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে প্রশ্ন করলো ভাদ্র।

” আমার কি অন্য কোনো জায়গায় থাকার কথা মি: ভাদ্র। আপনি আমার গার্লফ্রেন্ডের গায়ে হাত দিবার সাহস কেথা থেকে পান?”

গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল গ্রীষ্ম। ভাদ্রের যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়.. ওঁ এখানে এসেছিলো আজ গ্রীষ্মের সাথে মিটিং করতে। মার্জান যখন ওয়াশরুম আসে চোখ পড়ে ছিলো ভাদ্রের। আবার রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই মার্জানকে দেখে ছিলো গ্রীষ্ম। এবং ওঁকে কল করেছিলো, ওঁ মাফ চাইবা কিন্তু মার্জানকে ওয়াশরুম যেতে দেখে ভাদ্র নিজেও অর্ধেক মিটিং রেখে উঠে ওয়াশরুমের কথা বলে চলা যায়… অনেক সময় অতিবাহিত হতেই গ্রীষ্ম নিজেও যায় সেখানে।

ভাদ্র বলল,

” ওঁ আপনার গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো? আপনি মজা করছেন মি: গ্রীষ্ম? আপনি কি জানেন ওঁর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো? এবং ওঁ আমাকে ঠকিয়ে অন্য কারো সাথে রাত্রিযাপন করেছে?”

মার্জান চকিতে তাকালো গ্রীষ্মের দিক। কেন যেন ওর কাছে গ্রীষ্মের ভাবাবেগ দেখতে ইচ্ছে করলো। মন থেকে কে যেন বার বার বলছে, গ্রীষ্ম কাকে বিশ্বাস করবে? কিন্তু গ্রীষ্মের ভাবলেশহীন মুখ দেখে কিছু টের পাচ্ছে না। কিন্তু পরক্ষণেই মার্জানের মনস্পর্শ করলো গ্রীষ্মের কথায়,

“মার্জানের পাষ্ট কি ছিল, তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। আমি ওঁর ফিউচার দ্যাটস ইট।”

ভাদ্র থামবার পাত্র নয়,
” মি: গ্রীষ্ম ওঁ এক বাচ্চার মা।তাও আবার কোন লোকের যা ও নিজেও জানে না..।”

গ্রীষ্মের আবারো ভাবলেশীন উত্তর,
” আই ডোন্ট ক্যায়ার”

এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মার্জানের চোখের কোন থেকে। মার্জান ওঁর বড় বড় চোখ দিয়ে দেখছে এই ব্যক্তিটিকে… সত্যি? সত্যি কি গ্রীষ্ম ওঁকে এত ভালোবাসে? কিন্তু আবারো সেদিন রাতের ভয়ংকর দৃশ্য মনে পড়তেই মার্জান এক ছুটে চলে গেলো সেখান থেকে। গ্রীষ্ম নিজেও গেলো ওঁর পিছন পিছন। পিছনে রয়ে গেলো ভাদ্র। যার চোখ মুখে ভেসে উঠছে প্রতিহিংসার আগুন।

মার্জান শীপ্রার কাছে এসে দাঁড়লো, হাত টান দিয়ে বলে উঠলো,

” এখান থেকে চল।”

মার্জানের গুমোট মুখ দেখে বলে দিচ্ছে, কিছু একটা হয়েছে। শীপ্রা কিছু জিজ্ঞেস করবে, এর আগেই গ্রীষ্মের কন্ঠ ভেসে উঠে,

” জান… কেন আমায় ইগনোর করছো? আমি তোমাকে সবটা বলতে চাই, প্লিজ শোনো আমার কথা।”

মার্জান শোনে না শীপ্রাকে টেনে বেড়িয়ে যায় ওখান থেকে। এদিকে নির্ঝোর গ্রীষ্মকে মার্জানের সাথে দেখে কষ্টে কান্না করে ফেলে, কেন, কেন গ্রীষ্ম ওঁকে নয়, মার্জানকে পছন্দ করে? কি নেই ওঁর সবই তো আছে? তবে ওঁর থেকে সুন্দর। নির্ঝোরের মনের কোনে একটি ক্ষোভ তৈরি হয়, গ্রীষ্মকে পাবার নেশায় কাঠগড়ায় দাড় করালো বন্ধু নাকি ভালোবাসা… ওঁর কাছে গ্রীষ্মই তো সব? তাই নয়কি? নির্ঝোর নিজের অভিনয়ের কাজে লাগিয়ে চোখের পানি মুছে এগিয়ে আসে গ্রীষ্মের কাছে,

” মি: গ্রীষ্ম? কেন আই হ্যাল্প ইউ? মার্জান আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।”

গ্রীষ্ম যেন আশার আলো খুঁজে পেলো। মার্জানকে কাছে পাবার লোভে পা বাড়ালো হয়তো নির্ঝোরের করা কোনো শক্ত ফাঁদে….!

——–

মৃণাল ওঁর মমিকে কিছু দিন যাবৎ মনমরা দেখে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। মার্জান মৃণালের ফোনটাও নিয়ে নিয়েছে, যার জন্য কিছুতেই কথা বলতে পারছে না মৃণাল গ্রীষ্মের সাথে। মৃণাল এবার বায়না ধরলো,

” মমি, প্লিজ ফোনটা দাও।”
“নো”
মৃৃণালের বাচ্চা বাচ্চা ফেইসের কালার টা অসুস্থর জন্য ফ্যাকাসে হয়ে গেছে দিন দিন। মার্জানের মায়াও লাগে খুব। মৃণাল আহ্লাদে আপ্লুত হয়ে বলে উঠলো,

” মমি ইউ লাভ মি না? প্লিজ ফোনটা দাও, আই প্রমিজ, আই ডোন্ট কল আঙ্কেল সামার।”

মৃণালের মুখের এমন ভঙ্গিমায় খুব আদর আদর পায় মার্জানের, কখনো মনে হয় ছেলেটির উপর না ওঁর নিজেরই নজর লেগে যায়? মার্জান কিছুটা ঝুঁকে ছেলেকে কঁপালে চুমু খেলো। ফোনটা হাতে দিয়ে বলে উঠলো,

” প্রমিজ মনে থাকে যেন?”

মৃণাল দাঁত বের করে হাসলো। মার্জান ওঁর পাশেই বসে ফল কেঁটে খাওয়াতে লাগলো ছেলেকে। ঠিক তখনি ওঁর ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ এলো। যা দেখে মার্জানের হুঁশ উঁড়ে গেলো ওঁর। মার্জান ফোন হাতে ধরে নিজেকে ধাতস্থ করলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে ভাদ্র ফোন করলো মার্জানকে,
“বেবি ডোন্ট ওয়েস্ট টাইম.. আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি”
মার্জান নিজেকে সংযোগ করে বলল,
“ভাদ্র তোমার নরকেও জায়গা হবে না।”
ভাদ্র ঘর কাপিয়ে হাসলো,
” যুদ্ধ আর ভালোবাসা সব কিছুই জায়েজ আছে বেবি”
মার্জান ফোন কেঁটে দিলো রাগে। কিন্তু পরক্ষণেই কুটিল হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,
” ভাদ্র সময় তো আমি গুনছি, তোমার সর্বনাশ দেখার জন্য।”

চলবে,

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১৮।

রাতের মধ্য ভাগ হতে চলেছে। হাতের দু’আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট জ্বলে পুড়ে ওভাবেই শেষ হচ্ছে। নিকোটিনের টিমটিম আলো আঁধারের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে। হুট করে নিভে গেলো আলো। গ্রীষ্ম আবার নতুন করে আরেকটি সিগারেট ধরালো। এবার ওঁর দু’ঠোঁটের মাঝে রেখে টান দিয়ে নাক মুখ দিয়ে ছাড়লো ধোঁয়া। বড্ড আনচান আনচান করছে ওঁর মন। লাভ ফ্যারি হোটেলের সামনেই গাড়ির সিটে হেলে বসে আছে গত দু’ঘন্টা যাবত। মনের মাঝে অজস্র প্রশ্ন,

” ভাদ্রের সাথে আবার কি করতে এসেছে মার্জান?”

এই প্রশ্নটা যেন আরো বেশি খোঁচাচ্ছ ওঁকে। গ্রীষ্ম কয়েকবার লাভ ফ্যারির ভি আই পি রুমের দিকে হাত বাড়িয়ে দরজার কঁড়া নাড়তে গিয়ে থেমে গেছিলো। চোখে শুধু ভাসছে, রুমটির ভিতর ঢুকছে ওঁরা এক সাথে। গ্রীষ্মের মাথার রগ টান টান হয়ে উঠেছে। ওঁ মাথার চুল টেনে ধরলো। এই মুহুর্তে ওই রুমটি থেকে মার্জানের চুলের মুঠি ধরে টেনে বের করে আনতে ইচ্ছে হলো ওঁর। ঘন্টা দু’য়েক এর আগের ঘটনা মনে করতে লাগলো গ্রীষ্ম। গ্রীষ্ম লাভ ফ্যারির প্রাইভেট রুমে বসে ছিলো রায়হানের সাথে। রায়হান ওঁর নিজের বিজনেস প্লেস তৈরি করতে চায়। এবং প্রথম ডিল গ্রীষ্মের সাথেই করবে, এই নিয়ে দু’জনের মাঝে চলছিলো ডিসকাশন। কিন্তু তাদের কথোপকথনের মাঝে নির্ঝরের কল আসে, নির্ঝরের কথা অস্পষ্ট শোনাতে ওঁ চলে আসে করিডরে। ঠিক তখনি অপেন হয় লিফট। মার্জানকে এখানে হন্তদন্ত হয়ে আবার আসতে দেখে ভ্রুকুচকা ওঁ। কিন্তু পরক্ষণেই মার্জানকে ভাদ্রের রুমে যেতে দেখে মাথার উপর বাজ পাড়লো যেন ওঁর। গ্রীষ্ম চোখ খুললো। হাতে নিকোটিন আবার জ্বলে পুড়ে ছাই, ওঁ আবার ধরালো। আজ ওঁ এখানেই অপেক্ষা করবে, হ্যাঁ এখানেই, মার্জানের কাছে ওঁর কৈফত চাই। কিন্তু গ্রীষ্মের আর বেশিক্ষণ থাকা হলো না… ওঁর বাসা থেকে রহিম চাচার ফোন এলো। গ্রীষ্ম বিরক্তি নিয়ে চোখ কুচকালো। বার কয়েক কেঁটে দিয়েও লাভ হলো না.. ফোন তুলতেই চিন্তিত হয়ে উঠলো ওঁর মুখ। গলা দিয়ে বেড় হলো একটি শব্দ,

” আসচ্ছি!”

না চাইতেও স্থান ত্যাগ করলো গ্রীষ্ম। হওয়ায় ভেসে আসচ্ছে এ সি কামরাটিতে লেমন ফ্লেভারের সুবাস। মার্জানের এই সুবাসটি অন্য সময় হলে নাক টেনে নিজের ভিতরে ভোরে নিতো। কিন্তু এই মুহুর্তে কাঁটার মতো বিঁধছে শরীরে। তার উপর ভাদ্রের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বেখাপ্পা লাগছে খুব। মনে হচ্ছে ক্ষুদার্ত কোনো কুকুরের সামনে এক টুকরো মাংস। মার্জান নিজে সংযত রাখার চেষ্টা করলো। ভাদ্র মুখ খুললো,

” মার্জান… মাই ডিয়ার মার্জান, তোমাকে কাছে পাবার আশায় দেখো কতটাই না আজ কাহিল আমি!”

মার্জান মনে মনে হাসলো। ভাদ্র এবার কিছুটা গা ঘেষে বসলো ওঁর পাশে। মার্জান স্বরে যেতে গিয়েও থেমে গেলো। মার্জানের চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো আবার ফিসফিস করার মতো,

” আই মিসড ইউ সো মাচ্।”

মার্জান ধারালো দৃষ্টিতে তাকালো,
” বাট আই হেইট ইউ। আমি আমার মার ঠিকানা চাই।”

বলেই হাত বাড়ালো ভাদ্র। ভাদ্র ফিক করে হাসলো,

” আগে আমারটা পাই। ”

বলেই আরো কাছে এলো। মার্জান ওঁর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো,

” আমি এবার তোমার কোনো কথায় আসছি না।”

ভাদ্র এবার দু’হাত তুলে ফেললো,

” ওকে ফাইন। এমনিতেও তোমার কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই।”

বলেই ভাদ্র উঠে গেলো, ওর পার্সোনাল ব্যগের কাছে। এই সুযোগ ভাদ্রের সার্ভ করা ড্রিংসে নেশার ঔষধ মিলিয়ে দিলো মার্জান। ভাদ্র ততক্ষণে একটি কাগজ হাতে নিয়ে ফিরে এসে বসলো ওঁর পাশে। কাগজটি দিয়ে বলল,

” এখানেই পেয়ে যাবে তাকে।”

মার্জান কাগজ তুলে অ্যাড্রেস দেখল। এবং প্রশ্ন করলো,

” আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো? যে তুমি আমায় ঠকাচ্ছো না?”

ভাদ্র ওঁর ড্রিংসের গ্লাস হাতে তুলে চুমুক দিলো। বলে উঠলো,

” এছাড়া কোনো পথ তোমার কাছে আছে কি? আর এমনিতেও টগর আন্টিকে দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই। যা আমার ছিলো, সব পেয়ে গেছি।”

মার্জান হতাশার শ্বাস ছাড়লো। ভাদ্র ওঁর ড্রিংকস খতম করেই মার্জানের হাতে ধরিয়ে দিলো অন্য গ্লাসটি, মার্জান না চাইতেও কিছুটা খেলো। পরমুহূর্তেই চক্কর মারলো যেন মাথায়। ভাদ্রের মাথাও তখন নেশা চড়ে উঠেছে। মার্জানকে ওঁ ঘোলা দেখতে শুরু করেছে। মার্জানের দিকে হাত বাড়াতেই মার্জান ইচ্ছে করেই বাকি ড্রিংকস টুকু ফাললো ওঁর উপর। এবং অতি ভদ্রের সাথে বলল,

” মাই এপোলোজাইজ। ”

বলেই উঠে দাঁড়ালো। ভাদ্র ওঁর জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে উঠলো,

” সমস্যা নেই আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি। ”

বলে ওয়াশরুমে গেলো ওঁ। সেই সুযোগে রুমের দরজা খুললো মার্জান সঙ্গে সঙ্গে, ওঁর মতেই কাপড় আর গেট আপ পড়া মেয়ে ঢুকে পড়লো কামরায়। মার্জান ঢুলকে ঢুলতে পাশেই আরেকটি রুমে ঢুকে গেলো। এদিকে ভাদ্র কাপড় পাল্টে একটি তয়াল গায়ে জড়িয়ে কামরায় এলো। ঘোলাটে মার্জানের কাছে গিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। মেয়েটিও ওঁর সাথে তাল মিলিয়ে চলে গেলো বিছানায়। এদিকে হুঁশ ছাড়া ভাদ্র টেরই পেলো না.. কখন ওঁর ভিডিও তৈরি হয়ে গেলো। মার্জান ঢুলতে ঢুলতে পাশের ঘরে এসে দরজা লাগলো। এই রুমে ছিলো ভাদ্রের সাথে মেয়েটি। যাকে ভাড়া করে এনেছিলো মার্জান। মার্জানের শরীর জ্বলছে, সে ঢুলছেও খুব, নির্ঘাত ভাদ্র বজ্জাত টা ওঁর ড্রীংকসে কিছু মিলিয়েছে। মার্জান এবার অনুভব করলো, ওঁর শরীরে অদ্ভুত কিছু শিহরণ খেলা করছে। ওঁর মনে পরে গেলো বিগত ছয় বছর আগের সেই রাতটির ঘটনা। ঠিক একই রকম লেগেছিলো তখন, সেদিনের সেই কালরাত্রিতেই অল্প বয়সে মা হতে হয়েছিলো তাকে। যদিও মৃণালকে পেয়ে খুব খুশি ওঁ। কিন্তু একই অবস্থা আবার পড়ে নিজেকে ঘৃণিত মনে হচ্ছে। চটজলদি ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে ঢলে ঢলে পরিস্কার করতে লাগলো নিজেকে, উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে মার্জান সেখানেই জ্ঞান হারায়….

————

নিস্তব্ধ করিডোরে গ্রীষ্মের দ্রুত পায়ের শব্দ চলছে। খানিক দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালো হসপিটালের ভি আই পি ওয়ার্ডের সামনে। রহিম চাচা গ্রীষ্মকে দেখেই বলে উঠলো,

” বেগম সাহেবা ঠিক আছে এখন। আপনার দাদি এসেছেন ছোট সাহেব?”

গ্রীষ্মের মাথার রগ দাঁড়িয়ে গেল। অনিতার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,

” মা.. আমি তোমাকে আষাঢ়ের মতো ছেঁড়ে যাবো না। কেন ভয় পাও প্রতিবার? দাদিজান কখনো আলাদা করতে পারবে না তোমার থেকে আমাকে।”

অনিতা পিটপিট করে চোখ খুললো। টেনশনে পুরো মুখ নীল যেন। অনিতা গ্রীষ্মের হাত টেনে নিজের হাতে নিলো ব্যথিত কন্ঠে বলল,

” আষাঢ় চলে যাবার শোক সিতে পেরেছিলাম তুমি ছিলে বলে, কিন্তু মা-জানের জেদ এবার কেড়ে নিয়েি ছাড়বে তোমায়।”

আবার ফুপিয়ে উঠলো অনিতা। আষাঢ় ছিলো গ্রীষ্মের জমজ ভাই, যে নিখোঁজ হয়েছে আজ ছ’বছর। কোনো রকম খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওঁর। এবার তো ধরেই নিয়েছে মারা গেছে সে। কিন্তু গ্রীষ্ম তা বিশ্বাস করতে রাজি নয়। মোটেও নয়। গ্রীষ্ম ওঁর মাকে শুয়ে দিয়ে বের হয়ে এলো। এবার ওঁর দাদিজানের সাথে শেষ বারের মতো কথা বলা দরকার। কিন্তু বাড়ি ফিরে পাওয়া গেলো না তাকে। জানা গেছে, উনি কোনো হোটেলেই উঠেছেন। অনিতা যতদিন আছে এ বাড়িতে থাকবেনা এখানে। তাই গ্রীষ্ম বাহিরে পা বাড়ায় কিন্তু তখনি টুং করে শব্দ হয় ওঁর ফোনে।নির্ঝোরের নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও আসে ওঁর ফোনে। না চাইতেও অপেন করে ওঁ।মার্জানের সাথে ভাদ্রের অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো গ্রীষ্মের ঘরের সকল আসবাব নিমিষেই ঝংকার শব্দ তুলে মাটিতে গাড়া গড়ি করতে লাগলো। কয়েক টুকু কাঁচের টুকরো বিঁধে গেছে হাত পায়ে… ফিনকি দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে রক্ত……

চলবে,