ঝরা স্রোতধারা পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
475

#ঝরা_স্রোতধারা
#সমাপ্তি_পর্ব
Tahrim Muntahana

২১.
রিয়াব চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। মাথায় অসহ‍্য যন্ত্রণা করছে। মনে হচ্ছে মাথাটা কেউ পায়ের নিচে পিষে দিচ্ছে। এরমধ‍্যে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে চোখ খুলে অনিন্দিতাকে দেখে মাথার সাথে সাথে বুকের ব‍্যাথাটাও যেন বেড়ে গেলো। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে একদম অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। পড়নের শাড়িটাও ঠিক নেই। কুচি নষ্ট হয়ে গেছে, মাঝেমধ‍্যে ভাজ পড়েছে, দৌড়াদৌড়িতে পিন খুলে আচলের একাংশ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই রূপে যেন মেয়েটিকে আরো আবেদনময়ী লাগছে। রিয়াব চোখ ফিরিয়ে নিলো। অনিন্দিতা কিছু না বলেই রিয়াবের বুকে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো। রিয়াব চুপ করে আছে। সে জানে তার কাছে বেশী সময় নেই। এই বুঝি প্রাণপাখিটা উড়াল দিবে। ঝাপটে ধরলো নিজেও। অনিন্দিতার গলা কাঁপছে। অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বলতে পারছে না। বুক থেকে মাথা উঠিয়ে একপলক রিয়াবকে দেখে নিলো। আর যদি না দেখতে পায়!
সে চলে গেলে মেয়েটা যে বাঁচতে পারবে না ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে রিয়াব। অনিন্দিতা আবার রিয়াবের বুকে মুখ গুজলো। হালকা স্বরে বলে উঠলো,

একদিন বলেছিলাম না? অনিন্দিতা শুধু তার রিয়াবের। আমি কিন্তু এখনো রিয়াবের ই আছি। অন‍্যকারোর বউ হয়েও রিয়াবের আছি। মনপ্রাণ সব যে রিয়াবের কাছে। রিয়াবই যে বেঁচে থাকার কারণ। কিন্তু রিয়াব চলে গেলে অনিন্দিতা কি করবে? বলো বলো? অনিন্দিতার কোনো কাজ আছে পৃথিবীতে? তার কাজই তো ছিলো রিয়াবকে নিয়ে কল্পনার সাগরে ভেসে বেড়ানো। কিন্তু যে পৃথিবীতে রিয়াবের শ্বাসপ্রশ্বাস চলবে না সেই পৃথিবীতে অনিন্দিতার শ্বাসপ্রশ্বাস কিভাবে চলে? এ নিয়ম আলাদা বুঝি। উহু রিয়াব অনিন্দিতা এক। সব সময় এক ই থাকবে। বাঁচবে একসাথে মরবেও একসাথে। বলেছিলাম না যেদিন, যখন রিয়াব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ঠিক তার আগে অনিন্দিতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কথা রাখলাম কিন্তু! অপারে দেখা হবে তো!
অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়! অপেক্ষ…..

অনিন্দিতা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রিয়াবকে। শরীরটা কেমন ঝাকুনী দিয়ে উঠলো। কথাগুলোও কেমন শুনাচ্ছিলো। রিয়াব নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছে ওরা। এইভাবে দুজনকে একসাথে দেখে তাহিবের বুকের ভেতর কেমন জ্বালা করছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার। সে তো ভালোবেসে ছিলো। তার ভালোবাসা সত‍্য ছিলো! রিহা দৌড়ে কেবিনে ঢুকে পড়লো। হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। তার ভাইকে ছাড়া কেমন করে থাকবে সে। রিয়াব বোনের মাথায় হাত রেখে আশ্বস্ত করলো সে উপর থেকে সবসময় দেখবে তার কলিজাকে। তখনও জড়িয়ে আছে অনিন্দিতা। রিয়াবের চোখ কেমন গোলা হয়ে আসছে। এমন সময় ডক্টর এসে বললো আরেকবার ভালোভাবে চেকআপ করবে। যদি অপারেশন করলে ঠিক হয়। তাদের তো সার্থকতা এখানেই।

ডক্টরের কথায় রিয়াব হাসলো। তার যে আর সময় নেই সে ঠিক বুঝতে পারছে। সে এও জানে যে ডক্টরটা সত‍্যটা জেনেও বৃথা চেষ্টা করছে। হয়তো পরে যেন আফসোস না করতে হয় তাই। ডক্টরদের বাঁধা দিলো না সে। দেখুক তারা। তার বাঁচার আশা নেই। একজন নার্স এসে অনিন্দিতাকে সরতে বললো। কোনো রেসপন্স নেই।কাঁধে ঝাকুনি দিলেও সাড়াশব্দ মিলছে না। রিয়াবের ভ্রু কুচকে এলো। রিয়াব উঠাতে চাইলো কিন্তু শক্তিতে পেরে উঠছে। খুব দুর্বল লাগছে। শরীর মনে হয় অবশ হয়ে যাচ্ছে।

নার্সটি এবার অনিন্দিতার দুই কাঁধ ধরে উঠালো। সাথে সাথেই অনিন্দিতা মাথাটা এলিয়ে দিলো পাশে। আতকে উঠলো সবাই। কি হলো? প্রেশার নিতে পারেনি মন হয়। জ্ঞান হারিয়েছে? ডক্টর তাড়াতাড়ি পালস চেক করলো। চমকে উঠলো ডক্টর। বিষণ্ন মুখে মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো ,

সি ইস নো মোর!

আতকে উঠলো সবাই। রিয়াবের মনে হলো হৃদয়টা কেউ খুবলে তুলে নিচ্ছে। তাহিব একদম শটান হয়ে দাড়িয়ে আছে। তার হৃদ স্পন্দন যেন থেমে গেছে। এই দুনিয়ার কোনো কিছুই তার কানে আসছে না। শুধু একটা কথায় ঘুরছে, সে ইস নো মোর! এরই মাঝে ডক্টর বলে উঠলো,

দেখেই বুঝা যাচ্ছে এতদিন সে একটা শোকে জীবন পার করেছে। দিনে দিনে এবনরমাল হয়ে উঠেছিলো। হঠাৎ এত শকড সহ‍্য করতে পারেনি তার মস্তিষ্ক। প্রিয় মানুষটির ছেড়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। একের পর এক ধাক্কায় উনি ব্রেন স্ট্রোক করেছে।

ডক্টররা নিজেরাও অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেমেয়ে দুটোর দিকে। ভালোবাসা প্রখরতা কতটুকু উপলব্ধি করতে পারছে তারা। একজনের অসুস্থতা যেন আরেকজনের জন‍্য মৃত‍্য সমতূল‍্য! রিয়াবের কানে একটাই কথা বারবার বাজছে

বলেছিলাম না যেদিন, যখন রিয়াব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ঠিক তার আগে অনিন্দিতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কথা রাখলাম কিন্তু! অপারে দেখা হবে তো!
অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়!

রিয়াবের আর সহ‍্য হলো। তার যাবার সময় হয়ে গেছে। মাথাটা মনে হচ্ছে ব‍্যাথার বাক্স। একসময় মাথায় হাত দিয়ে একনজর সবাইকে দেখেই নেতিয়ে পড়লো বিছানায়। পরপর এমন ঘটনায় সবাই বাকরুদ্ধ। শ্বাসের শব্দটাও কেমন বাজে লাগছে। ঘরটাই মনে হচ্ছে এতটা উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে শরীরের সাথে সাথে মনটাও পুড়ছে, জ্বলছে!

২২.
রিয়াব-অনিন্দিতার মৃত‍্যর তিনটা মাস হয়ে গেছে। সময় চলে গেলেও কিছু মানুষের জীবন থমকে গেছে সেই তিনমাস আগেই। দুজনকে একসাথে মাটি দেওয়া হয়েছে। অনিন্দিতার পরিবার, তাহিব, রিহা, মাহদী ও তার বাবা-মা এদের জীবনগুলো যেন রাতের আধারের মতোই নিকষ কালো হয়ে গেছে। আর সবাই কিছুটা স্বাভাবিক হলেও স্বাভাবিক হয়নি তাহিব এবং রিহা।

তাহিব প্রায় সময় দুজনের কবরের সামনে বসে থাকে। অঝর ধারায় কান্না করে মনের অভিব‍্যক্তি প্রকাশ করে। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্য করে এত কথা তারা কি শুনতে পায়! তাহিবের বিশ্বাস দুজন উপরে একসাথে বসে তার কথা শুনছে। আর উপহাস করছে। তার ভাগ‍‍্যই যে উপহাসের। তার জন‍্য সে কাউকে দোষ দিতে পারেনা। রিয়াব, অনিন্দিতা কারোর না। দোষী তো সে। যার জন‍্য দুটো প্রাণ অকালে ঝরে গেছে!

আজকেও এসেছে তাহিব। ফজরের আযান দিতেই নামাজ পড়ে হাটতে হাটতে কবরের সামনে উপস্থিত হয়েছে। যেখানে শুয়ে আছে দুজন ভালোবাসার মানুষ। যাদের ভালোবাসা এতই প্রখর একজনের মৃত‍্যতে আরেকজন মৃত‍্যকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে। তাহিব আগে কবর যিয়ারত করে দোয়া পড়লো। এ তার নিত‍্যদিনের কাজ। তারপর রিয়াবের কবরের দিকে তাকিয়ে বলল,

তুমি মহাপুরুষ জানো! পৃথিবীতে মহাপুরুষ অন‍ন‍্য ভবনা, তাদের আবিষ্কার রেখে গেছে আর তুমি ভালোবাসার প্রতীক হয়ে রয়ে গেছো। জানো আমার এখনো রিয়াব হতে ইচ্ছে করে। তাই বলে আফসোস হয় তা কিন্তু না। তোমাদের মধ‍্যে যে আমি আছি এরজ‍ন‍্যই নিজেকে ধন‍্য মনে করি।

ঠোঁট হাসি রেখে কথা গুলো বলতে বলতে একসময় অনিন্দিতার কবরের সামনে বসে পড়লো। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে।

আচ্ছা একটু ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হতো। অভিনয়ের ভালোবাসা হলেও মন্দ ছিলো না বলো। ওইটুকু সুখ আমার কাছে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থাকতো। তোমাকে খুব ভালোবেসেছিলাম অনিন্দু। বিশ্বাস করো আমার ভালোবাসা সত‍্যি ছিলো। ঠিক ছিলো না ভালোবাসার মানুষটা। যে অন‍্যতে মত্ত থাকতো। অন‍্যের ভালোবাসার রাজ‍্যে ভেসে বেড়াতো। অপারে ভালো আছো নিশ্চয়ই। আচ্ছা তুমি তো বলেছিলে অপেক্ষা করবে রিয়াবের জন‍্য। রিয়াবকে পেয়েছো? সেখানে সুখে আছো তোমরা না? আমি যদি তোমাদের কাছে চলে আসি মেনে নিবে? তোমার আশেপাশে থাকতে যে আমার নিজেকে দারুণ সুখী মনে হয়! এই না! আমি আবার নিজের কথা ভাবছি। তোমাদের মধ‍্যে যাওয়ার আর সাহস নেই আমার। ভালো থেকো অপারে। আমার জীবন সময়ের স্রোতধারায় ভেসে যেতে থাকবে! যার একমাত্র কারণ আমি নিজেই!

আর বসলো না তাহিব। ছুটে এসে গাড়িতে বসলো। নিজেকে মৃত মনে হচ্ছে তার কাছে। আর পারছে না। একটা ভুল! সেই একটা ভুল তার জীবন কে এই জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে। যদি সে অনিন্দিতা-রিয়াবের জীবনে না আসতো, সম্পর্ক জানা সত্তেও অজান্তার কাছে না বলতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। কিন্তু নিয়তির বাইরে কে? নিয়তি যে বড্ড দহন দিচ্ছে তাকে। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কি কোনো উপায় নেই?

২৩.
রিহা জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছে নিজেকে ঘরে বন্ধী করে। রাতদিন চুপটি করে রিয়াব যে ঘরে থাকতো সেখানে বসে থাকে। কখনো কান্নার শব্দ আসে তো কখনো হাসি। মাহদী নিজের প্রেয়সীর এমন অবস্থা মেনে নিতে পারে না। ভেতর থেকে সে নিজেও ভেঙে পড়েছে। আর সন্তানরা ভালো না থাকলে কোনো বাবা-মা ভালো থাকতে পারে?

আজ মাহদী পণ করেছে যে করেই হোক রিহা কে ওই ঘর থেকে বের করবে। আর কতদিন এভাবে চলবে। একবেলা দুবেলা দুমুঠো খেয়ে কতদিন বাঁচা সম্ভব। দুর্ঘটনা সবার জীবনেই ঘটে। হয়তো তাদের জীবনের দুর্ঘটনাটা অধিক দহনের কিন্তু এইভাবে থমকে থাকলে তো জীবন চলবে না। যতদিন বেঁচে আছে সংগ্রাম করেই বাঁচতে হবে।
রিহা বিছানায় শুয়ে ভাইয়ের কথায় ভাবছিলো। কতশত ভালোবাসাময় স্মৃতি! ভাবতেই রিহার শরীর হিম হয়ে আসে। অসহ‍্য যন্তণায় কাতরে উঠে হৃদয়।
এমন সময় মাহদী এসে বলল,

রিহুপাখি এ কেমন বিচার তোমার। আমাকে কি মানুষ মনে হয়না? আমিও তো একটা রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। হৃদয় আমারো আছে। কষ্টের অনুভূতিটা আমারো আছে। যাকে বড় ভাইয়ের আসনে বসিয়েছি তার এইভাবে চলে যাওয়া আমার হৃদয়ে দাগ কাটে না?তিনটা মাস ধরে নিজের ভালোবাসার মানুষটা ঘর বন্ধী। আমার কষ্ট হয়না? তুমি তো ভাইয়ের মৃত‍্যতে নিস্তেজ হয়ে গেছো, কিন্তু আমি? একদিকে ভাইয়ের অকাল মৃত‍্য , অন‍্যদিকে বউ এর এমন জীবন! আমি কেমন থাকতে পারি ভেবে দেখেছো একবার? মানুষ মরণশীল। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। তাই বলে এইভাবে নিজেকে কষ্ট দিলে সে ফিরে আসবে? আচ্ছা বলো তো ভাইয়া ভালো আছে তোমাকে এমন দেখে? তার কষ্ট হচ্ছে না? তোমাকে ভালো, সুখে রাখতে মানুষটা কত ত‍্যাগ করেছে তার প্রতিফল এইভাবে দিচ্ছো? আচ্ছা থাকো তুমি এইভাবে। আর কিছুই বলবো না। আমিও চলে যাবো যেদিক দু চোখ যায়। এই কষ্ট আর সহ‍্য হচ্ছে না!

মাহদী কিছুক্ষণ বসে চলে আসতে নিবে ওমনি দরজা খোলার শব্দে থেমে যায়। রিহা দাড়িয়ে আছে দরজা ধরে। হঠাৎ ই সে দৌড়ে এসে মাহদীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। সে এতকিছু ভেবে দেখেনি। আর ভাবা উচিত ছিলো। নিজেকে অপরাধী ভেবে এতদিন গুমরে গুমরে কষ্ট পেয়েছে। আর না! এখন থেকে বাঁচতে হবে। পরিবারের মানুষগুলোর জন‍্য হলেও তাকে বাঁচতে হবে।

২৪.
অজান্তা! সব কষ্টের মূলে যে ছিলো সেও কিন্তু ভালো নেই। সেও শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু ওই বদ্ধ কারাগারে নয় বর্তমানে তার স্থান হয়েছে মানসিক ভারসাম‍‍্যহীন দের সাথে। এককথায় যাকে পাগল বলে। হ‍্যাঁ অজান্তা নামটা এখন পাগলদের খাতায়।

তাহিব অজান্তাকে জেলে দিলেও অজান্তার বাবা কোনো প্রতিবাদ করেনি। তার মেয়ে দুটো মানুষকে মানসিক কষ্ট দিয়েছে, একজন মেয়েকে ঠেলে দিয়েছে এবনরমাল জীবনে, দুজন ছেলের সকল সুখ কেড়ে নিয়েছে, একজন বোনের থেকে তার প্রথম সম্বল ভাইকে কেড়ে নিয়েছে। তার কঠিন শাস্তির প্রয়োজন। তাই আদালত থেকে অজান্তার জন‍্য উকিল হায়ার করতে বললেও সে একদম সাফ সাফ জানিয়ে দেয় একজন খুনীকে সে কিছুতেই সার্পোট করবে না। নিজের মেয়ে বলেও না। আদালত অজান্তার বাবার সততা আর ন‍্যায় দেখে মুগ্ধ হয়েছে। স‍্যালুট জানিয়েছে তার মনোভাব কে। কিন্তু তিনিও তো বাবা! মেয়ে যত বড়ই অন‍্যায় করুক না কেন, বাবার মন তো পুড়বেই। সেও ভালো নেই। সন্তানহীন ভালো থাকা যায়?

আদালত অজান্তাকে যাবতজীবন দিয়েছে। পুলিশে দেওয়ার পর থেকেই অজান্তা একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলো। তার গিল্টিফিল হচ্ছিলো। বারবার রিয়াবের রক্তমাখা মুখটা ভেসে উঠছিলো দুচোখে। অনিন্দিতার কান্নারত বিলাপগুলো তার মনের মধ‍্যে পশুত্বটা কে একদম দূরে ছুড়ে ফেলেছিলো। এরপর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। নিজেকে আঘাত করে জখম করতে থাকে। আবার একসময় একা একাই হাসতে থাকে, অনেকসময় অনিন্দিতা নাম বলে আর ভেতরের রাগ প্রকাশ করে। উচ্চস্তরের অফিসারকে জানালে তারা অজান্তাকে এসাইলামে ভর্তি করে দেয়। এরপর থেকে অনিন্দিতার জীবন কাটছে পাগলদের সাথেই। কিন্তু তার মন থেকে অনিন্দিতা রিয়াব নাম দুটো সরে না। মনে হয় কেউ খুদাই করে লিখে দিয়েছে! অজান্তার জীবনের সমাপ্তি কি এসাইলামে পাগলদের সাথেই হবে? পাগলের মাঝেই থমকে থাকবে তার জীবন? নাকি ভালো হয়ে আবার সেই বদ্ধ কারাগারে জীবনকে বয়ে নিতে হবে?

২৫.
সবার জীবন ঝরা স্রোতধারায় ভেসে যাচ্ছে। সময়ের ধারায় যেভাবে যাচ্ছে সেভাবেই নিচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে সবার জীবন কি ঝরা স্রোতধারার মতোই ভাসতে থাকবে? নাকি তারা কালো অধ‍্যায় টাকে মনের মধ‍্যে দাফন করে ভালো থাকার চেষ্টা করবে? জীবন তো চালাতে হবে! সময় বহমান! সময় কারো জন‍্যই থেমে থাকেনা। তাই কালো কিছু অতিত, খারাপ কিছু ঘটনার জন‍্য ভবিষ‍্যতটাকে আটকে না রাখাই ভালো। কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই সবাই কে চলে যেতে হবে এই মায়াময় পৃথিবী থেকে। ভালোবাসাগুলো ভালো থাকুক। এপার নাহয় অপার!

___________ সমাপ্ত ___________