ঝরা স্রোতধারা পর্ব-০৫

0
265

#ঝরা_স্রোতধারা
#পর্ব_৫
Tahrim Muntahana

১৩.
অফিস টাইমের একটু আগেই চলে এসেছে রিয়াব। রিয়াবকে দেখেই দারোয়ান চাচার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিছু উপদেশ বানী দিলো যা রিয়াব সাধরে গ্রহন করে নিলো। অফিসে ঢুকতেই ডাক পড়লো এমডির কেবিনে যাওয়ার। রিয়াব মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো। মনে অনেক কিছুই চলছে। যা বুঝার সাধ‍্য কারোর ই নেই। এমডির কেবিনে অনুমতি চাওয়ার আগেই গম্ভীর মুখের কাম ইন শব্দটা শুনে অবাক হলো রিয়াব। পরক্ষণে মুখে হাসি ফুটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হলো একজন ঝাপিয়ে পড়লো রিয়াবের বুকে। চমকে উঠে আকস্মিক দু’পা পিছিয়ে গেলো সে। একটা মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মানুষটা একটি মেয়ে। রিয়াব তা বেশ বুঝতে পারছে। ধপ করে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। অবাকতা কাটিয়ে রাগ ফুটে উঠেছে রিয়াবের মুখে। অনিন্দিতা ও তার বোন ব‍্যতিত তার জীবনে আর কোনো মেয়ে নেই। নিষিদ্ধ!
মানুষটির মুখ দেখে রিয়াবের মুখমন্ডল থেকে রাগান্বিত আভা কেটে হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটিও এবার ফিক করে হেসে দিলো।
রিয়াব কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে বসে পড়লো। রিয়াব প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি হাসি থামিয়ে বললো,

সেদিন তোকে দারোয়ান চাচার জায়গায় বসে থাকতে দেখে অবাক হয়েছিলাম আমি। তুই হয়তো পেছন সাইট দেখে চিন্তে পারিস নি। আমার সেদিন রাগে মাথা গরম ছিলো তাই কথা বলিনি। পরে পাপার কাছে জানতে পারি তোর জব কনফার্ম হয়েছে আমার কোম্পানিতে। আমিও ট্রান্সফার হয়ে চলে এলাম এমডি পদে।

রিয়াব এতক্ষণে বুঝতে পারলো। মেয়েটি হলো অজান্তা। রিয়াবের বন্ধু। ভার্সিটিতে এই একটা মেয়ের সাথে রিয়াবের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। মাঝখানে কাউকে না বলেই এব্রুড চলে যাওয়ায় রিয়াব আর খুঁজ পায়নি। আর তখন রিয়াব অনিন্দিতাকে নিয়ে এত বেশী ব‍্যস্ত ছিলো যে অজান্তার বিষয়ে এত খুঁজ নেওয়ার ভাবনা মাথা তেই আসে নি। অনেক দিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় রিয়াব নিজের কষ্টের কথা ভুলে আড্ডায় মেতে উঠলো। কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর অজান্তা জিজ্ঞেস করলো,

অনিন্দিতার কি খবর? বিয়ে করে ফেলেছিস নাকি সামনে করবি?

কথাটি শুনেই রিয়াবের মুখে উৎফুল্ল ভাবটা উড়ে গেলো। একরাশ বিষণ্নতা এসে ভর করলো। অজান্তার একটু খটকা লাগলো কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই রিয়াব বলে উঠলো,

তুই ওসব বাদ দে। আগে বল তুই হঠাৎ করে এব্রুড চলে গেলি কেনা। আমাকেও কিছু জানালি না।

প্রশ্নটি শুনেও অজান্তার মুখ থমথমে হয়ে এলো। মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,

ভালো লাগছিলো না এখানে। আর এব্রুডের বিজনেসটাই বসে ছিলাম পড়াশোনার পাশাপাশি। বাবা এতবার বলল তাই আবার ফিরে আসলাম।

রিয়াবের খটকা লাগলেও কিছু বললো না। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ম‍্যানেজারের রুমে চলে এলো। তাকে এক্সট্রা কেবিন দেওয়া হয়েছে। ম‍্যানেজার রিয়াবকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলো। রিয়াব বসে বসে সবকিছু দেখতে রাখলো। মাথাতে অনেক কিছুই চলছ। তাকে খুব ভেবে এগোতে হবে।
হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই নড়েচড়ে বসে অনুমতি জানালো রিয়াব। অজান্তা, তার বাবা আর ম‍্যানেজার এসেছে। অজান্তার বাবা এসেই রিয়াবকে জড়িয়ে ধরলো পরম স্নেহে। রিয়াব কিছুটা থমকালো। কতদিন বাবার আদর পায়না। একটু তো ইমোশনাল হবেই। কিন্তু রিয়াব ইমোশন কে পাত্তা না দিয়ে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তখনই প্রবেশ করলো দারোয়ান চাচা। অজান্তার বাবা বললো,

তুমি আমাদের পরীক্ষায় সফল হয়েছো। সেদিন দারোয়ানের কিছুই হয়নি। তার মেয়ে একদম সুস্থ। আমরাই তোমার সততা আর পরোপকারিতা দেখার জন‍্য এমন প্লেনটা সাজাই। এর আগেও অন‍্যান‍্য লোককে এমন ট‍্রাপে ফেলে দেখেছি একজন আর তুমি ব‍্যাতিত কেউ সফল হয়নি। পরোপকারিতা না থাকলে তুমি আমার কোম্পানির জন‍্য এতটাও ভাববে না যা আমরা অর্ডার দিবো সেটাই করবে। আর সততা ধৈর্যশক্তি না থাকলে জীবনে সফলতা সম্ভব না। আমার কোম্পানির জন‍্য এমন যোগ‍্য নিষ্ঠাবান এমপ্লয় ই দরকার। এখন অজান্তা তুমি ম‍্যানেজার মিলে আমার কোম্পানিটা আবার আগের পজিশনে নিয়ে আসো। এটাই প্রত‍্যাশা।

বিনিময়ে রিয়াব শুধু মুচকি হাসি উপহার দিলো। ভেতরে তার অন‍্যকিছু চলছে। কি চলছে বোঝার উপায় নেই।

১৪.
অনিন্দিতাকে নিয়ে তাহিব আজ শপিংমলে এসেছে। ঢাকায় আসার পর অনিন্দিতাকে নিয়ে বের হওয়া হয়নি। সেই যে ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখে, কথাও বলে না, প্রয়োজনেও মেয়েটিকে কথা বলানো যায়না। মেয়েটাকে একটু সহজ করা দরকার। সামনে তো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। সেসবের জন‍্য তো প্রস্তুত করতে হবে! শক্ত থাকতে হবে তাকে।

কিন্তু এখন তাহিবের মনে হচ্ছে এখানে এসে কোনো লাভ ই হয়নি। অনিন্দিতা শুধু তার পিছুপিছু হাটছে। কোনো কিছুতেই তার আগ্রহ নেই। তাহিবের একটু রাগ হলো। সবসময় এমন করার মানে আছে? সেও তো মানুষ। তারও অনুভূতি আছে। রাগ হয়, কষ্ট হয়! এটাতো অনিন্দিতাকে মানতে হবে। তার কি দোষ? সে তো একজনের প্ল‍্যান গুটি মাত্র। ধর্মমতে বিয়ে করেছে সে। পূর্ণ অধিকার আছে তার উপর। যার এতটুকুও ফলায় নি সে।

তাহিব মাথা ঝেড়ে নিলো। কিসব ভাবছে সে? ছি! এই তার মনে ছিলো। মেয়েটার জীবনে অন‍্যকেউ ছিলো। যাকে সে তার কিশোরি বয়স থেকে ভালোবেসে এসেছে। সে তো মেয়েটিকে মাত্র ছয়মাস ধরে চিনে। আর রিয়াব! সে তো অনিন্দিতাকে হৃদয়ে ধারণ করেছে সেই কবে থেকে। রিয়াবের সাথে তার তুলনা হয়! কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে যে তুলনা চলে না। সে তার মতো করে ভালোবাসে মেয়েটিকে। স এই ভালোবাসায় মেয়েটির জীবনে কাল হবে জানলে এই ভুল সে করতো না।

এসব ভাবতে ভাবতেই চোখে পড়লো অনিন্দিতার দিকে। সে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে কাউকে খুঁজছে। কেমন অস্থির লাগছে। অসুস্থ হয়ে পড়লো না তো মেয়েটা? দৌড়ে এলো তাহিব। জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দিলো না অনিন্দিতা। তাহিব আর কিছু বলবো না। এসব ব‍্যবহারে সে অভ‍্যস্ত হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই অনিন্দিতা বলে উঠলো,

ভালোবাসা স্বচ্ছ সুন্দর এক অনুভূতি। যে অনুভূতির জোরে হৃদয়ে থাকা মানুষটিকে আমরা উপলব্ধি করি। মানুষটার উপস্থিতি হৃদয়ে কড়া নাড়ে। আশেপাশে থাকলে নিজেকে কেমন সুখি সুখি লাগে। মনে হয় রঙিন পৃথিবীর শুভ্রনীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। তাকে ডেকে কানে কানে ভালোবাসি বলেই লুকিয়ে পড়ি। সে খুঁজবে আমাকে আবার নতুন করে প্রেমে পড়বে। যার উপস্থিতি মন কে অশান্ত করে তুলবে। ঠিক যেমন এখন আমার মনটা অশান্ত হচ্ছে। তার উপস্থিতি আমার হৃদয়ে জানান দিচ্ছে। সে আছে। দূর থেকে দেখছে আমায়। সামনে আসতে বলুন না। আমিও দেখবো। অশান্ত নির্জিব চোখজোড়া কে একটু শান্ত করবো। সামনে আসতে বলুন না!

অনন্দিতার কথায় তাহিব জমে দাড়িয়ে আছে। নিজের স্ত্রী সামনে দাড়িয়ে অন‍্যছেলের জন‍্য প্রেমময় কথা বলছে সেটি কোনো স্বামীর ভালো লাগবে না। তাহিব সবার থেকে আলাদা নয়। তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে গলাটা কেউ চেপে ধরেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেমন। রিয়াবের জায়গায় যদি সে থাকতো! কতই না ভালো হতো। দু’চোখ ভরে দেখতো মেয়েটিকে। আলতো হাতে একটু ছুঁয়ে দিতো। ভালোবাসার কথা বলতো আর অনিন্দিতা লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকাতো। সুযোগ বুঝে সেও মিশিয়ে নিতো নিজের সাথে। ইশ ভাবতেই মনের ভেতর সুখকর অনুভূতি হচ্ছে! যা ইহজীবনে সম্ভব না!

অনিন্দিতা কথাগুলো সত‍্য প্রমাণ করে রিয়াব বেরিয়ে এলো একটা দোকান থেকে। অনিন্দিতা চুপ হয়ে গেলো। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো বহু পরিচিত সেই স্নিগ্ধ মুখের দিকে। মনে হচ্ছে কত জনম দেখে না। রিয়াব নিজেও তাকিয়ে আছে সেই ছলছল চোখের অধিকারী মেয়েটির দিকে। যে এখন অন‍্যকারো বউ, অন‍্যকারো অর্ধাঙ্গিনী। বুকে কেমন চিনচিন ব‍্যাথা করছে। না আর দাড়ানো যাবে না। হাত পা অশার হয়ে আসছে। রিয়াব চোখ নামিয়ে নিলো। উল্টো পথে হাটা ধরলো। নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায়না সে। সামনে যে তারজন‍্য অনেক পরীক্ষা আসবে।

রিয়াবের চলে যাওয়ার দিকে অনিন্দিতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মন বলছে ছুটে গিয়ে মানুষটির হাত ধরে আটকে দিতে। একদম বুকের মধ‍্যে ঢুকে যেতে। যেখানে শুধু তার বসবাস। অনিন্দিতা তাই করলো। একসময় থাকতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে রিয়াবের হাত ধরে বসলো! রিয়াব থমকে দাড়িয়ে পড়লো। শরীরে অদ্ভূত শিহরন হচ্ছে। কতদিন পর প্রিয় মানুষটির স্পর্শ! চোখ যেন মানতে চাইছে না। বুকের কষ্টের সাথে সমান তালে নিজের অপারগতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। চোখের পলক ঘনঘন ফেলে নোনাপানিটুকু আটকানোর বৃথা চেষ্টা করেও লাভ হলো না। সেই নির্লজ্জের মতো গালকে ছুঁয়ে দিলো।
অনিন্দিতার বুক বারবার উঠনামা করছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রিয়াব ঠিক বুঝতে পারলো। ঝটপট ঝাপটে নিলো বুকের মাঝে। শান্ত হয়ে গেলো অনিন্দিতা। একদম মিশে রইলো বুকের সাথে। আহ কি শান্তি! এ যেন সুখের রাজ‍্য!

দু হাত দূরে দাড়িয়ে নিজের বউকে অন‍্যের বুকে মিশে থাকতে দেখছে তাহিব। এটা কি পরকীয়া? তাহিব মনে আওড়ালো কথাটা। পরকীয়া হবে কেন! ওরা কি আড়ালে লুকিয়ে দেখা করছে নাকি! তার সামনে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। এটাকে ছেলেমানুষী মনে হলো তাহিবের। সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। অথচ দুজনের কারো খেয়াল নেই। তাহিবের কষ্টে বুক টা খা খা করছে। কিন্তু কেন জানি এগোনোর সাহস হলো না তার। বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করলো না। ওইভাবেই দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর রিয়াবের খেয়াল হলো সে কি করছে। অন‍্যের বউকে তার সামনেই জড়িয়ে ধরে আছে। এ কেমন অসভ‍্যতা। সে এতটা বিবেকহীন হয়ে গেছে, নাকি ছেলেমানুষী বেড়েছে তার। হঠাৎ করেই রিয়াবের মনে হলো অনিন্দিতা নড়াচড়া করছে না। শুধু হালকা শ্বাস নিচ্ছে। ধপ করে মাথায় একটা কথায় মনে হলো বেশী স্ট্রেস অনিন্দিতা নিতে পারে না। বুকের থেকে উঠাতে নিবে, অনিন্দিতা শক্ত করে রিয়াবের শার্ট ধরে আছে। রিয়াবের চোখটা আবার ছলছল করে উঠলো। এতটা ভরসা করতো মেয়েটি তাকে, তার পরিবর্তে সে কি দিলো? হতাশা, কষ্ট! নিজের থেকে ছাড়িয়ে অনিন্দতার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অনিন্দিতা ঢলে প ড়ছে। মানে অজ্ঞান হয়ে গেছে। রিয়াব ফট করে তাহিবের দিকে তাকালো। ছেলেটির মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভেতরে ভেতরে কতটা পুড়ছে। রিয়াব তাকাতেই তাহিব নড়েচড়ে উঠলো। অনিন্দিতার কি হয়েছে দেখতেই এগিয়ে এলো। রিয়াব অনিন্দিতাকে তাহিবের হাতে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো নিয়ে যেতে। তাহিব মাথা নেড়ে সায় দিতেই রিয়াব ছুটলো উল্টো পথে। কষ্ট হচ্ছে, ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। রিয়াবের যাওয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে তাহিব অনিন্দিতাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো। জ্ঞান ফেরানো টা জরুরী।

সেইদিনের পর থেকে অনিন্দিতা আরো নির্জিব হয়ে গেছে। জোর করে খেতে বললে খায় নাহলে খায়না। কথা তো সেই কবেই ভুলে গেছে। এ কেমন জীবন! তাহিব ভেবে পায়না। নিজেও তাল মিলিয়ে নিয়েছে এমন জীবনের সাথে! তা ছাড়া উপায় আছে!

১৫.
সকাল সকাল রিয়াবের বাংলোতে হাজির হয়েছে অজান্তা। রিয়াব ঘুমে তাই জানে না। রিহার সাথে বেশ ভাব জমিয়েছে সে। রিহার তো অজান্তাকে দারুণ পছন্দ হয়েছে। আড্ডার মাঝখানেই অজান্তা রিহাকে বলে উঠলো,

আচ্ছা রিহা আমি তোমাকে রিহুরানী বলে ডাকি?

কথাটি শুনেই রিহার অনিন্দিতার সেই সরল মুখটা ভেসে উঠলো। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। এ ডাক যে তার বড্ড প্রিয়। হঠাৎ ই রিহা গম্ভীর হয়ে বলে উঠলো,

না এই নামে শুধু একজনই ডাকে। সে হলো অনিন্দুভাবি।

অজান্তার মুখটা একদম চুপসে গেলো। কোথাও যেন একটু রাগ ও প্রকাশ পেলো অনিন্দিতার উপর। দূরে থেকেও আষ্টেপৃষ্টে রয়ে গেছে জীবনের সাথে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অজান্তা মেকি হেসে বলল,

আচ্ছা বাদ দাও রিহা। ওইসব মনে করে মনখারাপ করো না। অতিত মনে রেখে বসে থাকলে চলবে না, অতিত কে মনে রেখেই ভবিষ‍্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আর তোমার ভাইয়ের কথাটাও তো ভাবতে হবে তাইনা? নাকি ভাইয়াকে এইভাবেই কষ্ট পেতে দেখবে!

রিহা চমকে তাকালো অজান্তার দিকে। সত‍্যি তো! ভাইয়াকে সে কেন ভালো থাকতে বলছে না? কেন কষ্ট পেতে দেখছে? তার তো উচিত ভাইয়া কি করে ভালো থাকবে সেটি দেখা। এসব ভেবে রিহা অজান্তার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো। অজান্তা একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে রিহার হাতটি ধরলো। চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করে বলল,

একজন নারী যেমন একজন ছেলেকে কষ্টের মুখে ফেলতে পারে তেমনি একজন নারীই একজন ছেলেকে সেই কষ্টের মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে সুখ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ভালোবাসা প্রয়োজন। আমি রিয়াবকে সেই ৫ টা বছর ধরে চিনি। অনিন্দিতা ওর জীবনে কি সেটাও জানি। কিন্তু একজনের জন‍্য তো জীবন থেমে থাকে না। কোনো মেয়ের ভালোবাসায় পারে তোমার ভাইকে এই কষ্ট থেকে বের করতে। নাহলে তোমার ভাই গুমরে গুমরে শেষ হয়ে যাবে।

অজান্তার চোখ দুটোও ছলছল করে উঠলো। রিহা কিছুক্ষণ সেই চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ রিহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। একপ্রকার লুফে নিলো অজান্তার হাত নিজের হাতে মুঠোয়। অজান্তা খানিকটা চমকে উঠলো। রিহা ব‍্যতিব‍্যস্ত হয়ে বলে উঠলো,

তুমি! তুমি আমার ভাইটাকে বাঁচাবে? তুমি তো সেই ৫ বছর ধরে ভাইয়াকে চিনো। আমার ভাইটাকে বাঁচাও না। তুমিই ভালোবাসো না!

অজান্তা ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে রইলো রিহার দিকে। রিহার চোখে তীব্র অনুনয় প্রকাশ পাচ্ছে। অজান্তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। রিহা খুশিতে জড়িয়ে ধরলো তাকে। অজান্তা হেসে বলল,

আমার বেস্টফ্রেন্ড আর ছোট্ট বোনটার জন‍্য নাহয় কিছু করি! আর আমার জীবনেও তেমন কোনো পুরুষ নেই। রিয়াব কে ভালো করে চিনি। ওর মতো জীবনসঙ্গী পাওয়া সোভ‍াগ‍্যের ব‍্যাপার। সেই সুযোগ আমি পেয়েছি ছাড়বো কেন!

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রিহা অজান্তাকে রিয়াবের ঘরে পাঠিয়ে দিলো রিয়াব কে ডেকে তোলার জন‍্য। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে রিয়াব। সারারাত না ঘুমিয়ে শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে এসেছিলো। অজান্তা সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গেলো। রিয়াবের মাথার কাছে বসে তাকিয়ে রইলো মুখটার দিকে। বিষণ্ন মুখটায় কতটা মায়া। আজ তার কাছে রিয়াব কে নতুন লাগছে। সে নতুন ভাবে রচনা করবে রিয়াবকে নিয়ে। অনেক অনেক ভালোবাসবে। এত ভালোবাসবে যে অনিন্দিতা নামক কেউ যে তার জীবনে ছিলো ভুলেই যাবে। ভাবতেই অজান্তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তারপর আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো। দু তিনবার ডাকার পরেই রিয়াব উঠে পড়লো। নিজের রুমে মেয়েলি আওয়াজ তাও অন‍্যরকম ভেবেই তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলো। অজান্তাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। অজান্তা কিছু বলবে তার আগেই রিয়াব উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তার মুখেও হাসি লেগে আছে। অন‍্যরকম হাসি!

চলবে….?