ডেভিল পর্ব-৭+৮

0
395

#ডেভিল
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

[7]

ওই পালাবি না আজ তোরে খাইছি।কোথায় পালাচ্ছিস দারা, দারা বলছি।ওকে ধরতে গিয়ে সেই লেবেলে একটা ধাক্কা খেলাম।ধাক্কায় সামলাতে না পেরে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম তখনি কে যানি আমায় ধরে ফেললো।চোখ খুলে দেখি নীল ভাইয়া। আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।ছেলেদের চোখ এতো মায়াবি হয়?যেনো চোখে হারিয়ে ইচ্ছে করে।হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে ভাবনা কাটলো আর তখনি যেটা হলো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না–

উনি হাত সরিয়ে নিলেন আর আমি ধপ করে নিচে পড়ে গেলাম।ও বাবাগো কোমরটা আর আস্ত নেই, ভেঙে গেলো গো,এই ডেভিল লোকটা আমায় মেরে ফেললো গো(কান্না করে দিছি,অনেক জোরে ব্যাথা পাইছি,এভাবে কেউ ফেলে দেয়?)

আন্টি__নীল এটা কিরকম ব্যাবহার? ও ব্যাথা পেলো না? ওঠ মা কোথায় লেগেছে দেখি

আমি__কোমরে লেগেছে।ভেঙে গেছে মনে হয়(কান্না করতে করতে)

__এই ছেলেকে নিয়ে আর পারি না

নীল__আমি কি ফিল্মি স্টাইলে ধরেই থাকতাম?পরে যাচ্ছিলো তাই ধরে ছিলাম আর উনি সাহেবা রোমান্স শুরু করছিল, তাই ছেরে দিছি

আমি__মাগো এই লোকটা কি বলছে (অবাকের চরম পর্যায়ে চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে দেখছি)

নীল__মা ওই দেখো এখনো তাকিয়ে আছে।তুমি নিজের চোখে দেখো

আমি__ওরে খাটাস,লুচ্চা, বাদর,বিলাই,হাতি উগান্ডারে আমার মান সম্মান সব শেষ করে দিচ্ছে (নিজের মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে)

আন্টি__নীল চুপ কর।নেহা তুই কিছু মনে করিস না তো।আয় আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি

আমি__মা থাক লাগবে না।আমি নিজেই পারবো।তুমি পারলে তোমার এই খাটাস ছেলের মুখে মলম লাগিয়ে দাও

তারপর ওখান থেকে ইজ্জত ফালুদা বানিয়ে রুমে আসলাম।কোমরটা টনটন করছে।ওই নীলের বাচ্চাকে ছাড়বো না,বিলাইডারে এমন প্যাচে ফেলাবো বুঝাবো নেহা কি। কিন্তু কোমরে খুব ব্যাথা করছে।বড় মুখ করে মলমটাও দিতে দিলাম না।ধুর ভাললাগে না।বিছানায় বসতেই মা(আন্টি) আসলো,হাতে মলম নিয়ে।মাঝে মাঝে মনে হয় আন্টি আমার নিজের মা।

আন্টি__কিরে মা কি ভাবছিস?

__না কিছু না। আচ্ছা আমিতো বারন করছি তারপরেও মলম আনলে কেন?

__মেয়ের সব কথা কি মায়ের শুনতে আচে রে পাগলি?দেখি মলমটা লাগিয়ে দেই

__আমি লাগিয়ে নেই(লজ্জায়)

__থাক আমার সামনে আর লজ্জা পেতে হবে না।দেখি

__তোমায় খুব ভালবেসে ফেলছি গো

__আমিও মাই ডিয়ার

তারপর কোমরে মলমটা লাগিয়ে দিলেন।এখন আর বেশি ব্যাথা নেই।একটু রেস্ট নিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।কারন আজ বাসায় যেতে হবে।নিচে যেতেই আন্টি নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন।আর নীল খাটাসটা সোফায় বসে ফোনে ফুল স্পিডে গেম খেলছে।উনি তো এসময় বাসায় থাকে না,এখন তাহলে বাসায় কেন?যাক উনি থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি। আন্টি নীলাকে বিদায় জানিয়ে সুটকেস নিয়ে গেইটে যেতেই নীল ভাইয়া বাইক নিয়ে সামনে হাজির।”কি ব্যাপার খাটাস টা তো সোফায় বসে ছিল এখানে আসলো কখন”

নীল ভাইয়া __ওঠো

__কোথায়

__আমার কোলে

__আজব তো আমি আপনার কোলে বসবো কেন?

__ও মাই গড! এ মেয়ের মাথায় কি বুদ্ধি বলতে কিছু নেই

__দেখুন আমি যাচ্ছি।যাওয়ার সময়টা অন্তত ভাল ব্যাবহার করেন

__এতো প্যান প্যান না করে বাইকে ওঠো

__না পারবো না

__তা পারবে কেন,পারার মধ্যে তো ঝগরা ছারা কিচ্ছু পারবে না

__আর আপনি কি হ্যা? ঝগড়ু তো আপনি,পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করেন সবসময়

__এতো কথা ভাল লাগছে না তারাতারি ওঠো।নেহাত মা বলেছিল তাই পৌছে দিচ্ছি নইলে তোমার মতো ঝগড়ু মেয়েকে

__আন্টি বলেছিল নিয়ে যেতে আর আমি বলছি লাগবে না।আপনি জান আমি রিক্সার যেতে পারবো

__তোমায় রিক্সায় যেতে দিলে এদিকে মা আমার আস্ত রাখবে না।

__আমি আপনার সাথে যাব না যাব না যাব না

__এই ওঠো বলছি(প্রচন্ড রেগে)

__উঠছি তো, রাগার কি আছে

__এই মামা যাবেন?(একটা রিক্সাওয়ালাকে ডেকে বললো)

__আমি তো বললাম যাবো।

__(রেগে বাইক থেকে নামলো)

__আচ্ছা সব দোশ আমার,আমি নিজেই ঝগড়া করছি আপনার সাথে। সরি ভাইয়া

__এতো কথা কেনো বলো তুমি?

__সরি তো বললাম

নীল ভাইয়া আমার সুটকেস টা রিক্সায় উঠিয়ে দিলেন।আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে রিক্সায় না গিয়ে ভাইয়ার সাথে গেলে ভাল লাগতো।কিন্তু কি আর করার, এই লোকটার এতো রাগ যে কোথায় থেকে আসে কে জানে।রিক্সায় উঠবো এমন সময় নীল ভাইয়া বললো

নীল ভাইয়া __আবার রিক্সায় উঠছো কেন

__তাহলে কিসে যাব?

__আমি কিসের জন্য আছি?

__আপনিই তে আমার ব্যাগ সুটকেস রিক্সায় দিলেন

__তো? তুমি কি সুটকেস, ব্যাগ এগুলা নিয়ে বাইকে যাবা?

__ও আমি বুঝতে পারিনি

__তুমিতো কিছুই বুঝো না।ওঠো

_হুম

তারপর নীল ভাইয়া বাইক স্টার্ট দিলেন।এখন কেনো জানিনা খুব ভাল লাগছে।আচ্ছা হঠাৎ এমন ভাল লাগার কারনটা কি?

নীল ভাইয়া__ধরে বসো নইলে পড়ে যাবা

__আচ্ছা

__এভাবে জরিয়ে ধরছো কেন?আমি কি তোমার জামাই নাকি

__আপনিই তো বললেন ধরতে

__সিম্পিল ভাবে ধরতে বলছি

__ওও আচ্ছা

অনেক হাসি পাচ্ছে। ওনাকে জালাতে এতো ভালো লাগছে যে কি বলবো।একটু যাওয়ার পর উনি হঠাৎ বাইকটা সাইড করলেন।সামনে কিছু ছেলে।আমার ইতিমধ্যে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে নীল ভাইয়াকে নামিয়ে বাকি ছেলেদের দিকে চেনে নিয়ে যেতে লাগলো

চলবে…??

#ডেভিল
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

[8]

ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে নীল ভাইয়াকে নামিয়ে বাকি ছেলেদের দিকে চেনে নিয়ে যেতে লাগলো আর একজন তার জ্যাকেট দিয়ে ভাইয়ার মুখসহ মাথা ঢেকে ওনার ওপর ঝাপিয়ে পড়লো।কেউ পা টানছে তো কেউ হাত টানছে।এসব দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তাই ওদের কাছে গিয়ে একটা ছেলেকে কষিয়ে দিলাম একটা থাপ্পড়। এক থাপ্পড়েই সবাই চুপ হয়ে গেল আর নীল ভাইয়া মাথা থেকে জ্যাকেট খুলে ছেলেদের দেখে অনেক অনেক অবাক হলো।আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে নীল ভাইয়াকে অনেক জোরে জরিয়ে ধরলাম,কারন আমি অনেক ভয় পেয়ে আছি।তখনি–

নীল ভাইয়া __জয়,রাজ,অভি তোরা এখানে?আর জয় তুই দেশে আসলি কবে?

জয়__আজকেই আসলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এসে ভুল করছি।এ মেয়েটা কে রে?এতো জোরে কেউ মারে?

নীল ভাইয়া __ও নীলার বান্ধবী

রাজ__দোস্ত ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে না তো?

অভি__মামা ঠিক কইছোস। এই জন্যই বলি ও এতো পাল্টে গেছে কেমনে

তারপর সবাই মিলে নীল ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে নিচে ঘাসের ওপর ফেলে উল্টাউল্টি শুরু করলো।আর এগুলা দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছি না।তবে বেশি অবাক হয়নি কারন অনেক দিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হলে এরকম একটু আদটু পাগলামি করেই।এই যেমন নীলার সাথে যদি অনেকদিন পর দেখা হয় তাহলে ও আমার চুল ছিড়ে এলোমেলো করে ফেলে।এগুলা হলো ভালবাসার বহিপ্রকাশ। তারপর নীল ভাইয়া এক এক করে ওনার বন্ধুদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।”আমায় বাসায় পৌছে দিয়ে দেখা করবে “একথাটা বলে আমরা আবার রওনা হলাম।মনে মনে আমার অনেক ভাল লাগছে কারন নীল খাটাস টার উধম কেলানি কইছে আজ এমন কেলানি দিনে একবার করে দিলে খুব একটা খারাপ হতো না।উফফ খুব খুদা লাগছে পেটে ব্যান্ড বাজতেছে।আসার সময় একটু খেয়ে এসছি।

__ভাইয়া

__কি হলো

__খুদা লাগছে

__আর একটু অপেক্ষা করো। একটুপরি বাসায় পৌছাবো।

__আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।

__বলতে না বলতেই?

__আমি কিন্তু কেদে দিবো।এ্যায়ায়া এ্যায়ায়া

__ইউ ফুল কি করছো হ্যা?এটা রাস্তা বুঝেছো? কোনো সার্কাস না(ধমক দিয়ে)

__কি লোকরে বাবা একটু খেতেই তো চেয়েছি(মনে মনে)

উনি ওনার মতো বাইক চালাতেই আছেন।পুরায় অসহ্য একটা লোক।কোনো ফিলিংস নেই মনে হয় রোবট।ধুর ভাল্লাগেনা

কিছুদূর যাওয়ার পর একটা নদীর সাথে ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে থামলেন।

__এখানে থামালেন কেন?

__তোমার নাকি খুদা লাগছে?তাইতো দারালাম

__আমি এই ছোট্ট স্যাতস্যাতে দোকানে খাব?

__তো?

__আমি পারবো না।আপনি চলুন আমি বাসায় গিয়েই খাবো

__কখনো তো এগুলা দোকানে খাওনি একবার খেয়ে দেখো ভাল লাগবে

__ঠিক আছে আপনি যখন এতো করে বলছেন তখন খাওয়া যেতে পারে

__জ্বি না। আমি মোটেও এতো করে বলছি না।জাস্ট সিম্পিল যেটা বলা লাগে তাই বলছি

||
||
মামা খুব স্পেশাল করে দুইটা চা করে দেন তো(দোকানির উদ্দেশ্য)

দোকানি__এই নেন

আরে নেহা কোথায় গেল?এখানেই তো ছিল।দোকানে কিছু লোককে বললে তাদের উত্তরটা ছিল না সূচক ।চারিদিকে অনেক খুজেও নেহাকে খুজে পাচ্ছে না নীল।নেহাকে না পেয়ে নীলের সারা শরীর শিহরিত হতে লাগলো।নীল যখন চা নিতে ব্যাস্ত তখন নেহা কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

বুঝলাম না একা একটা মেয়ে কোথায় গেল?ওতো এখানে কিছুই চিনে না।কোথায় গেল,ওর নাম্বারো তো নেই আমার কাছে কি করে খুজে পাবো এবার?এইই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না।আচ্ছা নীলার কাছে নিশ্চয়ই ওর নাম্বার আছে।নীলাকে ফোন করি

__হ্যালো নীলা

__হ্যা ভাইয়া বল

__নেহার নাম্বারটা মেসেজ করে দে তো

__কেনো ভাইয়া কিছু হয়েছে?

__কিছু হয়নি যেটা বললাম সেটা কর।ওর নাম্বারটা আমায় মেসেজ করে দে।

একটু পর মেসেজে পাওয়া নেহার নাম্বারটায় ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। এবার আরো টেনশন হচ্ছে।এখানে কোথায় খুজবো ওকে।এই জায়গাটাতো আমিও ঠিক করে চিনি না।কয়েক বার নেহা নেহা বলে ডেকেও কোনো লাভ হলো না।এবার মেজাজটা চরম পর্যায়ে চলে গেছে।

আরে ওইটা কি? নদীর পাড়ে একটা মেয়ে দারিয়ে মনে হচ্ছে?কে মেয়েটা? আরে মেয়েটাকে তো নেহার মতোই লাগছে।ওটাই নেহা নয়তো??

নদীর পাড়ের দিকে যেতে লাগলাম। কেনো জানিনা মনে হচ্ছে এটা নেহা।আরেকটু যেতেই পুরোটা বুঝতে পারলাম, হ্যা এটা তো নেহাই। আজ ওর খবর আছে।

নেহা আমায় আসতে দেখে মহা খুশিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এদিকে তো আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। ওর কাছে যেতেই গালে কষে একটা চর বসিয়ে দিলাম।

__তোমার মাথায় কি মিনিমাম সেন্স নাই হ্যা?এভাবে কেউ না বলে চলে আসে?তোমার কতো খুজেছি তার কোনো ধারনা আছে??আর এখানল একা একা আসার সাহস কোথায় পেলে? (প্রচন্ড রেগে কথাগুলা বললাম)

__(গালে হাত দিয়ে চুপ করে দারিয়ে আছে)

__কি হলো কথা বলছো না কেনো?আমার কথাকু শুনতে পারছো না?আজ যদি তোমার কিছু হতো তাহলে সবাইকে আমি কি বলতাম?মাথায় কি বুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই

__সরি(নিচু স্বরে)

__ধুর রাখো তোমার সরি।এখানে আসার আগে আমায় বললে কি হতো?

__আসলে আমি বুঝতে পারিনি

__তা পারবে কেনো, সবসময় তো আবেগে মেতে থাকো

__সরি বললাম তো।এরকম আর হবে না

__হলেও আমার কিছু যায় আসে না

__আমি কি এমনি এসছি নাকি?দেখছেন কতো সুন্দর কাশফুল? এগুলা নেওয়ার জন্যই তো এসেছি(হাতে রাখা অনেকগুলা কাশফুল দেখিয়ে বললো)

__তুমি কাশফুল লেওয়ার জন্য এখানে এসছো?(অবাক হয়ে)

__নয়তো কি। আপনিতো আমায় কিছু বলতেই দিচ্ছেন না শুধু বকেই যাচ্ছেন। (কাদতে কাদতে)

কথাগুলি কান্না করতে করতে বললো। এবার আমার নিজের ওপর একটু রাগ হচ্ছে। মেয়েটাকে এতো জোরে চর দেওয়াটা ঠিক হয়নি।ফর্সা গালগুলা লাল হয়ে গেছে।

__খুব লেগেছে?

__না(চোখের জল মুছে অন্যদিকে ঘুরে)

__কি করবো বলো রেগে গেলে মাথাটা ঠিক থাকে না

__সেজন্য এতো জোরে মারবেন?

__আমিতে এতো জোরে মারতে চাইনি।তাছাড়া আমার কতো টেনশন হচ্ছিল জানো?পৃথিবী অব্ধকার হয়ে গেছিল

__হইছে। এখন আমায় মারার শাস্তি আপনায় পেতে হবে

__শাস্তি?? কি শাস্তি??

__আমি ওই নৌকায় উঠবো আর আপনি আমার নৌকার মাঝি হবেন

__বল্লেই হলো নাকি? আমি নৌকা চালাতে পারিনা

__এ্যায়ায়ায়া(কান্না করতে করতে)

__না না না না পারি তো।যাও তুমি ওঠো

__গুড বয়

__(উফফ কি পাগলি মেয়েরে বাবা)

নৌকায় উঠে লাঠি দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নেহার কাছে আনলাম।

__নাও ওঠো

__নৌকাটা এতো দুলছে কেনো? উঠতেই তো পারছি না

__তো আমি কি করবো?এমনিতেই পারবা।

__হাতটা ধরেন

__পারবো না

__এ্যায়ায়ায় এ্যায়ায়া

__কই দাও হাত দাও (হাত বারিয়ে দিলাম)

__এক কথা একবার বললে শুনেন না কেন হুম?

নেহার হাত ধরে নৌকায় তুলতেই ও ইচ্ছে করেই আমায় জলে টেনে ফেলে দিলো।আমার সারা শরীর ভিজে গেছে।রক্ত মাথায় উঠে গেছে,আর ওদিকে পাগলিটা হেসেই যাচ্ছে।ওর হাসিটা দেখে কেন জানিনা সব রাগ নিমিষেই হারিয়ে গেলো।হাতে তালি দিচ্ছে আর খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে।

নীল__হোয়াট দ্যা হেল?

আমি__দারান আগে হেসে নেই

__আমি কি সার্কাস দেখাচ্ছি (ধমক দিয়ে)

__আপনায় দেখে হাসি আটকাতে পারছি না

__তবে রে

বলেই নীল ভাইয়া আমার হাত টেনে জলে নিয়ে যেতে চাইলে আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বাধা দিলাম।কিন্তু উনি হার না মেনে আমায় কোলে তুলে জলে ফেলে দিলো।কোলে নেওয়ার ব্যাপারটা আমার তেমন একটা ভাল লাগেনি। লজ্জা করছে অনেক।আমিও সব ভুলে ওনাকে শক্ত করে ধরে ছিলাম।পানিতে ফেলে দেওয়ার পর —

নীল ভাইয়া__এবার হাসো?

আমি__(চুপ করে আছি)

__আময় ফেলে দিয়েতে খুব মজা নিচ্ছিলে এবার কি হলো?

__আমি ফেলেছি সে জন্য আপনিও ফেলে দিবেন?

__নীল কখনো কারো ধার বাকি রাখে না

__আপনি খুব পঁচা

__সেটা আমি জানি

__আমার যদি জ্বর হয় তখন?

__হলে হবে তাতে আমার কি

__আমি অসুস্থ হলে আন্টিকে বলে দিবো সব আপনার জন্য হইছে

__যা ইচ্ছে বলতে পারো।কোনো সমস্যা নাই

__আপনি একটা।

__এখন কি এখানেই থাকবো নাকি যাবো?

__হুম চলেন।

উনি জল থেকে উঠে যেতে লাগলো আর আমিও পিছন পিছন হাটছি।বাইকের কাছে যাওয়ার পর

নীল ভাইয়া__এই নাও এটা পড়ো (বাইক থেকে ওনার একটা জ্যাকেট দিয়ে বললেন)

__আমি এটা পড়বো?

__হ্যা

__এটাতো ছেলেদের

__তো কি হইছে?এই ভেজা শরীরে গেলেতো অসুস্থ হয়ে পড়বে।এটা পড়ো

__আপনি কি পড়বেন?আপনারো তো ঠান্ডা লাগবে

__আমার চিন্তা তোমায় করতে হবে না। যা বলছি তাই করো।আর তোমার তো খুদা লাগেছে।কিছু খাবে?রুটি আর চা খাবা?

__না কিছু খাবো না।বাসায় চলেন।

তারপর চুপচাপ জ্যাকেটটা পড়ে নিলাম।ভাইয়া বাইক স্টার্ট করলেন।গোধুলি লগ্ন পরে গেছে।চারিদিকটা কতো সুন্দর লাগছে।ইচ্ছে করে এই অপরুপ যায়গায় হারিয়ে যাই।আজ কাল তো সব কিছু যান্ত্রিক মনে হয়,নিঃপ্রান,কেমন জানি রোবট হয়ে গেছে সবাই।আচমকাই বাইক থামালেন।সামনে তাকিয়ে দেখি আমার বাসায় চলে আসছি।আমি নামতেই বাপি বেড় হলো।

বাপি__কিরে মা এতো দেরি হলো কেনো?রিক্সায় তোর লাগেজ গুলা সেই কখনি এসেছে কিন্তু তুই নেই,আর তোর ফোন বন্ধ কেনো?কোনো বিপদ হয়ে ছিল?

__আরে বাপি এতো চিন্তা কোরো না তো।আমার কিচ্ছু হয়নি চার্জ নেই তাই ফোনটা ওফ হয়ে গেছে

বাপি__আমি কতো চিন্তায় ছিলাম।তোর গা দিয়ে তো পানি পড়ছে।ভিজলি কিভাবে?

__ও কিছু না বাপি পড়ে একসময় বলবো

__এই ছেলেটাকে তো চিনলাম না(ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো)

আমি__বাপি উনি নীল ভাইয়া। নীলার ভাইয়া।

নীল ভাইয়া __আঙ্কেল ভাল আছেন? (বাপির উদ্দেশ্য বললেন)

বাপি__হ্যা বাবা ভাল আছি।এই দেখেছো এতো কিছুর মধ্যে তোমায় ভেতরে ডাকতেই ভুলে গেছি। আসো ভেতরে আসো

নীল ভাইয়া__আঙ্কেল আজ থাক।অন্য একদিন আসবো নি

বাপি__কোনো কথা শুনবো না। চলো

বাপি জোর করে নীল ভাইয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে গেলেন।।

বাপি__তোমাদের দুজন ই তো ভিজে আছো।এক কাজ করো চেঞ্জ হয়ে নাও তারপর অনেক গল্প করবো আজ।এই নেহা মা নীলকে একটু দেখিয়ে দে তো।নীল তুমি নেহার সাথে যাও আমি বাজার থেকে আসছি কারন আজকেই তো আসলাম তাই বাজার করা নেই। বুঝতেই তো পারছো

নীল ভাইয়া __হ্যা আঙ্কেল সমস্যা নাই আপনি যান।

আমি__এইযে মিঃ আমার পিছু পিছু আসেন (ভাইয়া কে বললাম)

আর উনি বাধ্য ছেলের মতো আমার পিছন পিছন আসছেন।ওনাকে আমার রুমে নিয়ে এসে ওয়াসরুম দেখিয়ে দিলাম।উনি ওয়াসরুমে যাওয়ার পর আমি অন্য ওয়াসরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।

ও মাই গড আমার জামা কাপর তো আমার ঘরে রাখা আছে।সাথে নিতে ভুলে গেছি।এবার আনবো কিভাবো?এখানে তো একটা টাওয়াল ছাড়া কিছুই নেই।নীল ভাইয়া মনে হয় এখনো ওয়াসরুমেই আছে এই টাওয়ালটা পেচিয়ে চট করে নিয়ে আসি।তারপর চুপিচুপি আমার রুমে চোখ বুলালাম।নীল ভাইয়া কই?রুমে তো দেখতে পাচ্ছি না।যাক এখনো তাহলে বেড় হয়নি এই সুজগে জামা কাপর গুলা নিয়ে তারাতারি পালাই।বিছানা পাশে জামাগুলা রাখা ছিল।জামা নিয়ে পিছন ঘুরতেই দেখি নীল ভাইয়া দারিয়ে আছে।হঠাৎ দেখে ভয়ে হাত থেকে জামাগুলা মাটিতে পড়ে গেল।আর আমি এক হাত দিয়ে টাওয়ালটা সামলাচ্ছি। এই সময়ে হারামি টাওয়ালটাও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
ওদিকে নীল ভাইয়া এক পা এক পা করে আমার দিকে এগোতে লাগলো। আর ভয়ে আমার শরীর হীম হতে লাগলো। উনি এক পা এগোচ্ছেন আর আমি এক পা করে পিছনে যাচ্ছি। একসময় পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম।নীল ভাইয়া একিভাবে এগোচ্ছে তো এগোচ্ছে।

আচ্ছা উনি এভাবে আমার দিকে এগোচ্ছে কেন?ইচ্ছে করছে বিলাইটার লম্বা লবা চুলগুলা ছিড়ে ফেলি।এক পর্যায়ে উনি এতোটাই আলায় কাছে আসলেন যে ওনার নিশ্বাস আমায় মুখে এসে পড়ছে।ভয়ে আর লজ্জায় আমি চোখ বন্ধ করলাম।উনি হাত দিয়ে আমার সামনের চুলগুলা সরিয়ে দিয়ে নখ দিয়ে আমার ঠোঁটে হালকা স্পর্স করলো।খুব জেরে চোখ বন্ধ করে আছি।এরপর যা হলো সেটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।

চলবে?