তখন অপরাজিতা পর্ব-০৭

0
46

তখন অপরাজিতা -৭

১৩
অয়নিতাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে।
বেশ কিছুটা রক্ত বের হয়ে গেলেও রক্ত দিতে হয়নি যে, এটাই ভালো। হাসিব একদিন হসপিটালে গিয়েছিল, অয়নিতা কথা বলেনি খুব একটা, “হু হা” ছাড়া কিছু। হাসিব একবার ভেবেছে জিজ্ঞেস করবে না, তারপরেও একটা সময় সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করেছে, অয়নিতা কেন করলে এমন?

অয়নিতার মনে হয়েছে, বলে দেই আপনার জন্যই তো! কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু বলেনি, মাথা নিচু করে ছিল।
অয়নিতার মা সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে যোগাযোগ করেছেন। একটু সুস্থ হলে কাউন্সেলিং এর জন্য নিয়ে যাবেন ।

বৃহস্পতিবারে হাসিব এলো একটু তাড়াতাড়িই। মণিকা বাসায়ই ছিলেন। হাসিব মণিকার সাথে কথা বলে, অয়নির রিডিংরুমে এলো।

রুমে ঢুকেই হাসিব অয়নিকে জিজ্ঞেস করল, কী খেয়েছো আজ?
অয়নি বললো, নরমাল খাবারই খাচ্ছি এখন।
-মেনু কী ছিল আজকে?
-আমি চিকেন খেয়েছি।
-ওহ আচ্ছা, তুমি কী শুধু চিকেনই খাও?
-না ভাইয়া, যে মাছে কাটা নেই, ওটাও খাই।
-গত সপ্তাহে নায়েরার বাসায় মেনু কী যেন বলেছিলে?
-আলুভর্তা, ডাল, ডিমভাজি, অয়নি উত্তর দিলো, কিন্তু অবাক হয়ে গেল, গত সপ্তাহে কথায় কথায় গল্প করেছিল, কিন্তু ভাইয়া মনে রেখেছেন!

হাসিব ওর টেবিলে বসে বলল, অয়নিতা, এটা তোমার রিডিং রুম তো? তাই না!
অয়নি ভীষণ অবাক হয়ে বলল, জি ভাইয়া।
হাসিব জিজ্ঞেস করলো, এখানে কত বই আছে?
অয়নি চারপাশে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া মামণির বইও আছে, আমার সাতশ এর মতো বই আছে।
হাসিব বলল, বাহ, বেশ ভালো কালেকশন। রুমটা তো এয়ারকন্ডিশনড?
অয়নি আরো অবাক হলো, এসি চলছে, রুমে শীতকালীন শীতলতা!

-জি ভাইয়া!

হাসিব বলল, আমরা চার ভাইবোন, বাবা স্কুল টিচার ছিলেন, আমরা লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়তাম।
খুব ইচ্ছে করতো নিজে কিছু বই কিনি, কিন্তু হাতে কখনোই টাকা থাকতো না, পরে কিছু বই কিনেছি কিন্তু নিজের লাইব্রেরি এখনো করা হয়নি। আমাদের বাড়িতে ফ্যান ছিল দুইটা। একটা দাদুর জন্য কেনা হয়েছিল, আর একটা বাবা চালাতেন। প্রচন্ড গরমে, আমাদের ভরসা ছিল হাতপাখা। মাঝে মাঝে আমরা নিতাম কাড়াকাড়ি করে। অবশ্য পরে বেশ কয়েকটা ফ্যান কেনা হয়েছিল। একথা বলছি কারন, তুমি যেটা পেয়ে গেছ অলরেডি, তোমারই অপরদিকের চেয়ারে বসা একজন সেটা স্বপ্ন দেখেও পায়নি। তুমি ইচ্ছে হলেই চিকেন না হয় কাটা ছাড়া মাছটা খাও। তোমার বন্ধু নায়েরাদের বাসায় কেন আলুভর্তা ডাল খাওয়া হয়েছে জানো, কারণ ওটা ছিল মাসের শেষের দিক। তাই হিসেব করে মেনু সেট করা হয়েছে। ওরা কিন্তু সারামাস এভাবেই খায়। জিজ্ঞেস করে দেখো, ওরা কাটা ছাড়া মাছ কি সেটা আলাদা করতে পারবে না।

আমাদের বাড়িতে মুরগী রান্না হতো মাসে একদিন। সেদিন চাচাতো ভাই বোনদেরও মা ডাকতেন। ছোট একপিস মাংস একপিস আলু আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল। বাকি দিন গুলো ছোট মাছ, আর সবজি ডালই চলতো আমাদের। যে স্বাচ্ছন্দ্য তুমি পাচ্ছ, বেশিরভাগ মানুষের সেটা নেই। এভাবে কখনো ভেবেছ?

অয়নিতা কথার মোড়টা বুঝলো এবার। একটু থেমে বললো, স্যার আপনার বাবা নিশ্চয়ই আরেকটা বিয়ে করেননি?

হাসিব চুপ হয়ে গেল একবার, তারপরে বলল, দেখো সবার জীবন তো একই ভাবে চলে না তাই না! তোমার মা তো আছেন তোমার জন্য। তিনি নিজে কিন্তু পারতেন, আবার বিয়ে করে একটা নতুন জীবন শুরু করতে। তোমাকে যদি হোস্টেলে দিয়ে দিতেন, তাহলে? তিনি তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। হয়তো তিনি ব্যস্ত, কিন্তু তোমার একটা নিশ্চিন্ত জীবনের জন্য, তাকে তো ভালো কিছু করতেই হতো তাই না!
কখনো কী মা কো জিজ্ঞেস করেছ, তার একা লাগছে কী না!

অয়নির এবার খারাপ লাগতে শুরু করল। ঠিকই তো, ও ঘুমিয়ে পড়লেও মা উঁকি দিয়ে দেখে যায়, কিন্তু ও তো কখনো যায়নি এভাবে মায়ের কাছে! হাসিব বলল, আজ পড়াবো না, জীবনকে পজেটিভ ভাবে নাও! কাল শুক্রবার, আমি সকালে এসে তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে যাবো, আমার আরো কয়েকজন স্টুডেন্ট থাকবে, তোমার চাইতে একটু সিনিয়র, ওরা এডমিশন টেস্ট দেবে এবার।
অয়নি মাথা নাড়ল।
হাসিব চলে গেল সেদিনের মতো। অয়নি বের হয়ে মায়ের রুমে গেল, মণিকা বসেই ছিলেন। অয়নি মাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগল। মণিকা অয়নিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন।

চলবে

শানজানা আলম