তবু কেন এত অনুভব পর্ব-০১

0
736

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#সূচনা_পর্ব

“স্যার ম্যাডামকে খুঁজে পেয়েছি,ঐ যে মহা সানন্দে ম্যাডাম মুরগির লেগ পিচ টানছে” একটানা ফোনে কথাগুলো বলে খানিকটা মুচকি হাসলো এসিস্ট্যান্ট ইনান।

ইনানের কথায় ইনানের বস আজমী ক্ষেপে ওঠে আর বলে “শাট আপ ইনান,লেগ পিচ টানছে মানে কি?ঠিক করে বলো সত্যিই কি তুমি খুঁজে পেয়েছো?”

ইনান ধমকে তথমত খেয়ে বলে “ইয়ে মানে স্যার, খাচ্ছে ঐ আর কি। এবার কিন্তু সত্যি সত্যি ম্যাডামকে পেয়েছি। ছবি পাঠাবো?”

তাই পাঠাও,তোমার কোনো বিশ্বাস নেই। প্রতিবার ম্যাডাম পেয়েছো বলে অন্য মেয়েকে তুলে এনেছো। এবার অন্তত আমায় ছবি পাঠিয়ে উদ্ধার করো (আজমী)

আচ্ছা স্যার, লেগ পিচ খাচ্ছে ঐ অবস্তায় ছবি তুলবো, নাকি অপেক্ষা করবো খাবার শেষ করার (ইনান)

এবার আজমী বেশ রেগে যায় ইনানের কথায়, আর বলতে শুরু করে “আরে হা*দা*রাম গর্দ*ভ,খাওয়ার জন্য একটু অপেক্ষা কর ভাই। এতটুকু কমন সেন্স কি নেই।উফফ”

ইনান আজমীর ধমকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফোন রেখে দেয় আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে
“যাহ বাবা,ম্যাডাম খাচ্ছে এটা বললেই দোষ। আজমী ভাই যত নন্দ ঘোষ।”

ইনান খাবার টেবিলে গিয়ে একপাশে বসে, মুখে একহাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ মহা সানন্দে মুরগির লেগ পিচ খাওয়া মেয়েটি খেয়াল করে ব্যাপারটা। ডাগর ডাগর চোখ করে ইনানকে দেখছে আর মনে মনে বলছে

“এরে ভাই এটা কোন আইটেম,কোত্থেকে এলো। এভাবে দেখছে কেন আমায়? মনে হয় ক্যামেরাম্যান, এদের কাজ’ই হচ্ছে কে কতটুকু বেশি খাচ্ছে তা ক্যামেরার মাধ্যমে তুলে ধরা। আচ্ছা এই ক্যামেরাম্যানের হাতে ক্যামেরা নেই কেন! সে কি ক্যামেরা ছাড়াই আমাকে নজর রাখছে। নাকি সে বুঝতে পেরেছে,আমি ইনভাইটেশন ছাড়া খেতে এসেছি।না না থাক এত বেশি খাবো না।পরে পেট খারাপ হবে। উঠে যায় বাপু।রিস্ক নেওয়া চলবে না”

যেই বলা সেই কাজ, খাবার টেবিল থেকে ওঠে গিয়ে সোজা বেরিয়ে পরলো। ইনান মেয়েটির পিছু পিছু গেলো। আড়চোখে মেয়েটি ইনানকে দেখে ঘাবড়ে যায়। ইনান মেয়েটিকে দেখে বলে “ম্যাডাম দাড়ান, আপনার কয়েকটা ছবি তুলবো”

মেয়েটি এবার ভয়ে কাঁপতে থাকে আর মনে মনে বলে “আল্লাহ এই লোকটা আমার ছবি তুলতে চাইছে কেন? তার মানে বুঝে গিয়েছে সব। আল্লাহ রক্ষা করো। আমি আর এভাবে বিনা ইনভাইটেশনে কারো বিয়ে খাবো না। এবারের মত বাঁচাও আল্লাহ।প্লিজ প্লিজ”

ইনানের ডাকে মেয়েটির ঘোর ভাঙ্গে, ইনান মেয়েটির কয়েকটা ছবি নিয়ে আজমীকে পাঠিয়ে দেয়।
আজমী ছবিগুলো জুম করে দেখে ভড়কে যায় খানিকটা।
আজমী কাঁপতে থাকে রাগে, হাতের মুষ্টিবদ্ধ এক করে আজমী দেয়ালে ঘুষি দেয়।

মেয়েটিকে দেখার পর আজমীর ভেতরে থাকা রাগ বেরিয়ে আসে৷ আজমী দাঁত কটমট করতে করতে ইনানকে ফোন দেয় আর বলে “ফরেন তাকে তুলে নিয়ে আসুন। ইনিই সেই মেয়ে। কুইক”

ইনান আজমীর কথামতো মেয়েটিকে বলে “আপনি কি আমার সাথে যাবেন? স্যার বলেছে যেতে”

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে “আমি কোথায় যাবো? আমায় মাফ করে দিন।আমি আর এমন ভুল করবো না। প্লিজ দয়া করুন”

ইনান মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে “মাফটা স্যারের কাছ থেকে চাইবেন,আমি মাফ করে দেওয়ার মত কেউ না ম্যাডাম।”

দুটো মহিলা এসে মেয়েটিকে নিয়ে যায়, ইনান গাড়ি বের করে ড্রাইভিং সিটের পাশে অপেক্ষা করছে মহিলাগুলোর জন্য।

মেয়েটি কাঁদো কাঁদো অবস্তাই মহিলা দুটোকে বলছে “আমি আর এমন করবো না।আমায় ছেড়ে দিন।প্লিজ দয়া করুন। আমি আসলে বুঝতে পারিনি প্লিজ”

মহিলা দুটো মুর্তির মতো চুপচাপ হয়ে আছে,মুখে কোনো কথা নেই। মনে হচ্ছে তাদের কেউ হায়ার করে এনেছে।

ইনান ইশারা দিয়ে মহিলা দুটোকে গাড়িতে বসতে বলে মেয়েটির পাশে,তারা সকলে গাড়িতে বসামাত্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি যেনো ঝড়ের গতিতে ছুটছে নিজ গন্তব্যে।

মেয়েটি আকুতি মিনতি করেই চলেছে,বার-বার সর‍্যি বলছে কেউ কথা কানেই নিচ্ছে না।

গাড়ি গন্তব্যে এসে পৌছে গেছে। মেয়েটিকে মহিলা দুটো একটা ঘরে নিয়ে যায়। রুমের মধ্যে তালাবদ্ধ করে মহিলা দু’টো চলে যায়।

মেয়েটি ফ্লোরের উপর বসে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে নিজেকে বলছে “এটা কি হলো আমার সাথে,একটু নাহয় খেলাম। তার জন্য এতকিছু করার কোনো মানে হয়? সিনেমার মতো এখানে এনে আটকে রেখেছে আমায়। কেউ তো আসলো না বাঁচাতে। এখন আমি কি করি!দোয়া তুই ভাব ভাব।এখান থেকে পালাতে হবে। আল্লাহ জানে আমার বাকি বন্ধুবান্ধব গুলো এখনো গিন্ডি পিন্ডি গিলছে নাকি আমার খোঁজ করছে। রাফি,ইভা,মায়া তোরা কোথায় গেলি আমাকে বাঁচা। আমি তো আটকে গেলাম রে বিনা দাওয়াতে খেতে এসে”

মেয়েটি উঠে দাড়িয়ে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলো,আশেপাশে সাজানো চিত্রকল্প।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রুম। মেয়েটি ধীর পায়ে এগিয়ে ভেতরে গেলো। বেসিন দেখতে পেয়ে হাত ধুয়ে নিলো। চোখেমুখে পানি ছিটা দিলো। আয়নায় নিজেকে দেখছে বার-বার। কাজল লেপ্টে গিয়েছে চোখে। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কাজল সেট করলো।

শান্ত মেয়ের মতো সোফাই এসে বসে। একটু পর রুমের তালা খুলে ইনান এসে মেয়েটিকে বলে “ম্যাডাম চা খাবেন নাকি কফি?”

মেয়েটি অবাক পর্যায়ে তাকিয়ে আছে,ইনান মেয়েটিকে আবারো বলে “ম্যাডাম চা নাকি কফি? জলদি বলুন আমার তাড়া আছে।”

মেয়েটি ইনানের কথা শুনে মনে মনে বলে “ওরেব্বাস, এখানেও ফ্রীতে খাবার দাবার চলে দেখতেছি। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় ঢুকলো না। এভাবে আটকে রেখে কে মেহমানদারি করে? আরেকটুর জন্য হার্ট এট্যাক করতাম ধ্যাত।”

ইনান বলে ওঠে “ম্যাডাম?”

ক ক কফি, তোতলাতে তোতলাতে বলে মেয়েটি, ইনান আদেশ অনুযায়ী কফি আনতে চলে গেলো, আবারো রুম তালাবদ্ধ করে।

“আরে বোকা দোয়া, তোর ফোন থাকতে এতক্ষণ কেন বসে বসে মাছি মারলি? দু একটা সেল্ফি অন্তত নিতে পারতি। আগে বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে জানিয়ে দে” মনে মনে কথাগুলো বলে মেয়েটি ব্যাগের চেইন খুললো। চেইন খুলে যা দেখলো তাতে চক্ষু তার চড়কগাছ। ব্যাগের ভেতর ফোন নেয়৷

কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার,এবার সত্যিই ভয় হচ্ছে মনে। চারদিকে খুঁজতে লাগলো ফোন। কিন্তু পেলো না। ততক্ষণে ইনান চলে এসেছে, ইনান এসে মেয়েটিকে সোফায় দেখতে না পেয়ে ভয়ে আৎকে ওঠে। ইনান বিড় বিড় করে বলছে “আল্লাহ রে,ম্যাডাম ভেগে গেলে আমার চাকরি শেষ। ম্যাডাম গো ম্যাডাম আপনি কই?”

মেয়েটি ইনানকে দেখে তথমত খেয়ে বলে “ঐ যে ওয়াশরুম ওয়াশরুম। ঐ? গিয়েছিলাম হেহে”

ওহ তাই বলেন ম্যাম। স্যার যদি আইসা আপনাকে না দেখতো। তাইলে আমার চাকরি আপনার গলা দুইটাই শেষ করে দিতো (ইনান)

খানিকটা ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে কফির গ্লাস নিয়ে সোফায় বসে।

ইনান কফি দিয়ে চলে যায়, মেয়েটি কফির স্ট্রো হাতে নিয়ে কফি নাড়ছে আর ভাবছে আনমনে “কি করে এখান থেকে বেরোনো যায়।”

অমনি পাশে কে যেনো বলে ওঠে “কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মিস,খান খান। আমার অতিথি বলে কথা৷আপ্যায়ন তো করতেই হয়।”

মেয়েটি কথাটি শোনামাত্র চোখ ডাগর ডাগর করে দাড়িয়ে যায়, মেয়েটি রীতিমতো কাঁপছে। পাশে তাকিয়ে দেখে মুখে মাস্ক, দুই হাতে গ্লাভস লাগানো একটা লোক দাড়িয়ে আছে। মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। চোখগুলো দেখে মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে চোক জোড়া।

মেয়েটি খানিকটা দূরে গিয়ে তাকায়,অমনি লোকটি চিৎকার দিয়ে বলে “খান বলছি।এক্ষুনি ফিনিশ করুন”

ভয়ে গরম গরম কফি এক চুমুকে খেয়ে নেয় মেয়েটি,খাওয়ার পর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে তার। গরম কফি হওয়াতে জ্বীভ তার খানিকটা পুড়ে গিয়েছে।

ছেলেটি পকেট থেকে ফোন বের করে মেয়েটির দিকে একবার তাকাচ্ছে,আবার ফোন দেখছে। তারপর অট্টহাসি দিয়ে বলে
“তো মেরি জান।এভাবে আর কত জনের সাথে খেলেছেন? এটা কত নাম্বার টার্গেট মেরি জান।”

মেয়েটি কাঁপা কাঁপা পায়ে পেছনে যেতে যেতে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো

চলবে,