তবু কেন এত অনুভব পর্ব-০২

0
476

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#২য়_পর্ব

“তো মেরি জান।এভাবে আর কত জনের সাথে খেলেছেন? এটা কত নাম্বার টার্গেট মেরি জান।”

মেয়েটি কাঁপা কাঁপা পায়ে পেছনে যেতে যেতে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো, আজমী মেয়েটির আরেকটু কাছে এসে হাতদুটো চেপে ধরলো।

রক্তিম লাল বর্ণ চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে কয়েক ঢোক গিলে মেয়েটি বলে “আমি কিছু করিনি, প্লিজ ছেড়ে দিন।”

ছেড়ে দেওয়ার জন্য এখানে আনা হয়নি মিস,অনেক জ্বালিয়েছেন,এর মাশুল আপনাকে দিতে হবে (আজমী)

“আমি সত্যি বলছি আমি আর করবো না প্রমিস,আমি এভাবে আর ইনভাইটেশন ছাড়া কারো বিয়ে খাবো না। পাক্কা বলছি।মাফ করে দিন আমায় প্লিজ” মেয়েটির কথায় হাত আলগা করে দেয় আজমী। আজমী বুঝে উঠতে পারছেনা মেয়েটি কি বলছে আদো।
আজমী দাঁতে কিড়মিড় করে বলছে “শাট আপ,কথা ঘুরাবেন না।আপনি ভালো করেই জানেন সবটা।নাটক বন্ধ ওকে?”

আজমীর ধমকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে থেমে গেলো মেয়েটি,আজমী ফের মেয়েটিকে বলছে “এভাবে কত ছেলের জীবন নস্ট করেছেন?প্রেমের ফাঁদে ফেলে কত টাকা খেয়েছেন?”

আজমীর কথায় মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে হিসাবের ছক কষতে ব্যাস্ত। আজমী মেয়েটির বাহু ঝাকিয়ে বলে “এন্স্যার মি,ডার্ণ ইট”

মেয়েটি ভাবনার ঘোর কাটিয়ে বলে “আমি কোনো ছেলের জীবন নস্ট করিনি,আমি কিছুই জানিনা। মিথ্যা দোষারোপ কেন দিচ্ছেন আ আ আপনি?”

আজমী রেগেমেগে মেয়েটির গালে যেই না চড় দিতে যাবে, অমনি হঠাৎ আজমীর ফোন বেজে ওঠে।আজমী হাত নামিয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কে যেনো বলছে “স্যার অপারেশন শুরু করবো? পেশেন্টের অবস্তা তেমন একটা ভালো না”

আজমী বলে ওঠে “পার্লস চ্যাক করে আমাকে জানাও,আমি একটু ব্যাস্ত আছি। ইনানকে পাঠাচ্ছি যা দরকার হয় তাকে বলো”

ওকে স্যার বলে অপাশ থেকে ফোন রেখে দেয়। আজমী ফোনের স্ক্রীণ বন্ধ করতেই মেয়েটির চোখ যায় ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে।
মেয়েটি ছোঁ মেরে ফোন হাতে নেয়,ফোনের ওয়ালপেপার দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ।

মেয়েটির হাত কাঁপছে,আজমী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে “কি হলো জান চুপসে গেলেন কেন?এটাই তো হওয়ার ছিলো”

মেয়েটি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে “আ আ আমার ছবি আ আপনার কাছে কেন?”

হাত থেকে আজমী ফোন নিয়ে পকেটে রাখে আর বলে “এটাই স্বাভাবিক নয় কি? আমার সুইটহার্ট এর ছবি আমার ফোনের ওয়ালপেপারের থাকবে এটাই তো হওয়ার ছিলো”

কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে, কয়েকটা ঢোক গিলে মেয়েটি আজমীকে বলে “আমি আপনাকে চিনি না,আপনি এসব কি বলছেন?”

আজমী মেয়েটির গাল চেপে ধরে বলে
“কেন নায়রা,এখন আমায় চিনতে পারছেন না? দু’দিনে এতটা বদলে গেলেন? লো*ভী দুশ্চরি*ত্রা আপনি। ছিঃ”

আজমীর এই কথায় মেয়েটি হতবাক, মেয়েটি বলে ওঠে “আমার নাম নায়রা না।এসব যা তা কি বলছেন আপনি? আমার নাম মরিয়ম ফাতেহা দোয়া”

আজমী অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে দোয়ার কথায়,দোয়া হাবাগোবার মত দাড়িয়ে আছে। আজমী রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “সব চালাকি সবার সাথে করা যায় না মেরি জান। কখনো নায়রা, কখনো ঈশিকা। এত বহুরু*পী নাম দিয়েও আপনি বাঁচতে পারলেন না। আমার কাছে ধরা দিতেই হলো। হা হা হা”

আজমীর কথা বোধগম্য হলো না দোয়ার। দোয়ার মাথার উপর যাচ্ছে সবটা। দোয়া আজমীকে উপেক্ষা করে এক পা বাড়াতেই, আজমী দোয়াকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় আর বলতে থাকে
“পালানোর চিন্তা ভুলেও করবেন না।নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”

দোয়া উঠে দাড়ায় আজমীর সামনে,আজমী হাতের গ্লাভস খুলতে ব্যাস্ত। দোয়া বলে ওঠে আজমীকে “কে নায়রা? কোন নায়রা? আমায় কেন এনেছেন? কি করেছি আমি?”

আজমী অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, জোরে জোরে হাত তালি দিয়ে বলতে শুরু করে
“ওয়াও মিস নায়রা আপনি এত সাপের খোলস কিভাবে চেঞ্জ করেন বলুন তো,এত ফাস্ট! আপনাকে ডিরেক্টর কেন চোখে দেখে না বুঝলাম না। এত সুন্দর ড্রামাটিক সিন কোনো ডিরেক্টর দেখলে নিশ্চিত আপনাকে নিয়ে নিতো।তো এবার সত্যিটা বলুন আমি আপনাকে কিছু করবো না।কোনো প্রতিশোধ নেবো না, ছেড়ে দেবো। আপনি কেন আমায় ধোঁকা দিলেন? আপনি বলেছিলেন আপনার ফ্যামিলি জোর করে আপনাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, তাই সম্পর্কটা ভেঙ্গে ছিলেন। কিন্তু আপনি মিথ্যা*বাদী। আপনি আমার বন্ধু রিফাতের সাথেও সম্পর্কে ছিলেন,আমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এত নাটক করলেন? আর আজ যখন ধরায় খেয়ে গেলেন নিজের নামটা বদলে নিলেন।”

আজমীর কথা শুনে দোয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরেছে,দোয়া কখনো কারো সাথে সম্পর্ক দুর, সম্পর্কের কথা মাথায় আনে নি। তার জীবন গেলো সিঙ্গেল। তার নামে এত বড় অপবাদ শুনে মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরেছে।দোয়া রাগে চিৎকার দিয়ে ওঠে। আজমী দোয়ার এমন কান্ডে অবাক। আজমী দোয়াকে বলে ওঠে
“আওয়াজ নিচে মিস। ষাড়ের মতো চেঁচালেও কোনো লাভ হবে না।আমার ব্যাক্তিগত রুমে আপনি বন্দি।এখানে আসার কারো সাধ্য নেই”

দোয়া আজমীর কথায় কাঁচুমাচু হয়ে বলে “শুনুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,আমার নাম দোয়া। আমি নায়রা নই। হে ঠিক ঐ ছবিটি আমার। কিন্তু আমি আপনাকে কখনো দেখিইনি।চিনিনা জানিনা,সম্পর্ক অনেক দুরের কথা। আচ্ছা আমার সাথে সম্পর্ক যখন বলছেন তাহলে সম্পর্কের শুরুর মাধ্যমটা নিশ্চয় আপনি জানেন?এবার বলুন শুরুটা কোথা থেকে হয়েছে”

আজমী পকেট থেকে ফোন বের করে নায়রা আহমেদ একটা ফেসবুক একাউন্ট চ্যাক করে, নায়রা আহমেদ একাউন্টটি থেকে গত নয়দিন আগে আজমীকে ব্লক করা হয়। আজ হঠাৎ একাউন্ট থেকে ব্লক খোলা। আজমী চোখ বড় বড় করে নায়রার কনভার্চেশনে যায়, দুটো ম্যাসেজ এসেছে ঐ আইডি থেকে। ম্যাসেজে লেখা
“সরি জান আমার ভুল হয়েছে।আমার এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। আমি ফিরে এসেছি। আচ্ছা শুনুন না,আজ আমার বেস্টির বার্থডে একটা গিফট দিবো ভাবছি, কিছু না দিলে খারাপ দেখায়,এখন হাতে টাকা ও নেই।কি করবো বুঝতে পারছিনা”

আজমী ম্যাসেজটুকু পড়ে থ বনে গেলো। সামনে তাহলে কে দাড়িয়ে আছে। তার মানে আজমী কি কোনো ফাঁদে পা দিলো! আজমী নায়রার একাউন্টের এক্টিভ স্ট্যাটাস দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সাতাইশ মিনিট আগে একাউন্টটি অনলাইনে ছিলো।
আজমী সোফায় ধপ করে বসে পরলো। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে আজমীর। আজমী দোয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দোয়া অনবরত বলেই যাচ্ছে “কি হলো বলছেন না কেন? কেন আমায় আটকে রেখেছেন?”

আজমী কি বলবে তা ভেবে কুল পায় না,আজমী ভাবতে লাগলো “নায়রা এখানে হলে,নায়রার একাউন্ট সাতাইশ মিনিট আগে এক্টিভ হলো কি করে? এতদিন যেই মেয়ে আমাকে এড়িয়ে গেছে সম্পর্ক বিচ্ছেদের সুযোগ খুঁজে এসেছে,সে আজ হঠাৎ ফিরে এলো কেন? আমি তো এই রুমে আধঘন্টা যাবত আছি তাহলে কী করে সম্ভব? উফফ হিসাব মিলছে না।”

আজমী মাথা ধরে বসে আছে, ইনান এসে আজমীকে বলে “স্যার পেশেন্টের অপারেশন সাক্সেস।”

আজমী ইনানকে বিদায় দিয়ে দোয়ার সামনে দাড়ায়, দোয়া প্রশ্নের উওর না পেয়ে অপেক্ষা করছে। আজমী পকেট থেকে দোয়ার ফোন বের করে দোয়ার হাতে দেয়। দোয়া হতভম্ব হয়ে আছে আজমীর হঠাৎ শান্ত রুপ দেখে। দোয়া আজমীর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে বলে “আমার ফোন আপনার কাছে কেন? না জানিয়ে কারো ফোন ধরা ব্যাড ম্যানার্স। আর শুনুন আমি নায়রা নই আমি দোয়া। আমাকে যেতে দিন প্লিজ”

আজমী কোনো কথা না বলে দাঁতে কিড়মিড় করছে, দোয়া আজমীর অবস্তা বুঝতে পেরে ভয়ে কয়েক ঢোক গিলে মনে মনে বলতে শুরু করে “এই রে বেশি বলে ফেললাম মনে হয়। পরিস্থিতি হাতের বাহিরে,বেশি রেগে গেলে আমার এখানেই হাজতবাস করা লাগবে।উফফ খিদে লেগেছে। কফি টা ভালো ছিলো। ঐ লোকটা যদি আবার আসতো কিছু অফার করতো। খেয়ে বিদায় নিতাম। উরিম্মা এত খিদে লেগেছে আমার”

আজমী কোনো কথা না বলে রুম ত্যাগ করেছে। দোয়া পায়চারি করছে এদিক থেকে ওদিক। দোয়া তার বন্ধুদের জানিয়ে দেয় ফোনে

তোরা কই? এদিকে আমার ষষ্টিরগুষ্টি ভেস্তে গেলো (দোয়া)

আরে তোকেই তো খুঁজছিলাম, ফোনটা ও বন্ধ করে রাখলি। ভাবলাম বাড়ি চলে গেছিস না জানিয়ে,কই এখন তুই (রাফি)

না রে ভাই আর বলিস না। আমি এক মক্কেলের ফাঁদে পরেছি। সে আমায় আটকে রেখেছে। আমায় উদ্ধার কর। (দোয়া)

আচ্ছা আসতেছি আমরা। ঠিকানা বল। (রাফি)

ঠিকানা আমি জানিনা ভাই। আচ্ছা আমি জানালা দিয়ে বাহিরের প্লেসটা দেখে তোকে জানাচ্ছি (দোয়া)

দোয়া ফোন হাতে নিয়ে জানালার পাশে দাড়িয়ে বাহিরে দেখছে আর ফোনে বলছে “শোন বাহিরে বড় বড় টিউবলাইট, হাঙ্গরের মত বড় দরজা বুঝলি? হা করে আছে।”

দুর কি ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিস এগুলা।এগুলা গুগলেও নেই। কোনো সাইনবোর্ড দেখতে পাস কি না দেখ, ওটার নাম বল এটলাস্ট (রাফি)

আচ্ছা দাড়া। কে বি ফাংশন লিখা আছে (দোয়া)

“ঠিক আছে, আমরা আসতেছি” এই বলে ফোন রেখে দেয় রাফি।

দোয়া পায়চারি করছে রুমে খিদের জ্বালায়। ইনান এসে তালা খুলে দোয়াকে বলে “ম্যাডাম আমি এসে গেছি। আমাকে খুঁজছিলেন তাই না?”

দোয়া ইনানকে দেখে মৃদু হেসে বলে “ইয়ে হ্যাঁ, না মানে নাহ তো।”

বুঝেছি,স্যার আজকে ক্ষেপেছে। কি খাবেন বলুন? বার্গার নাকি বিরিয়ানি? (ইনান)

দোয়া করূণস্বরে বলে “বিরিয়ানি খেলে কি আপনার স্যার বকবে? না মানে আমার পছন্দ একটু”

ইনান মুচকি হেসে বলে “আরে না ম্যাডাম,যা চাইবেন সব পাবেন”

আপনি অনেক ভালো,ঐ মক্কেল আস্ত গরু,একটু পর এসে থ্যারাপি দেয়। আমার জ্বীভ টা পুড়ে গিয়েছে মা গো (দোয়া)

ইনান বুঝতে পেরে খাবার আনতে চলে যায়, এদিকে আজমী বেরিয়েছে বাহিরে।

ইনান খাবার এনে দোয়াকে দিয়ে বলে “ম্যাডাম খেয়ে নিন। আপনার তো বাড়ি যেতে হবে। স্যার বলেছে আপনাকে দিয়ে আসতে”

কেন? আমি বাড়ি যাবো কেন? (দোয়া)

আপনি কি এখানে থাকতে চাইছেন? (ইনান)

না মানে, আমার বন্ধুরা আসবে আমাকে নিতে,আপনার আর কষ্ট করতে হবে না হেহে (দোয়া)

স্যারের আদেশ,অমান্য করলে আমার চাকরি যাবে সাথে আপনার লাইফ। তাই আমার সাথে বাড়ি যাবেন। (ইনান)

দোয়া ইনানের কথায় কিঞ্চিৎ মন খারাপ করে আবারো বলে ওঠে “আচ্ছা এই খাওয়ার সার্ভিস টা কি শুধু এখানেই পাওয়া যায় ফ্রীতে,আর কোথাও পাওয়া যায় না? না মানে আমার বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসা যায় না?”

ইনান হো হো করে হেসে ওঠে দোয়ার কথায় আর বলে “আপনি স্যারের গার্লফ্রেন্ড, আপনার জন্য তাই এই ব্যবস্থা। আপনি চাইলে স্যারের অনুমতি নিয়ে বাড়িতে পার্সেল পাঠানোর ব্যবস্থা আমি কর‍তেই পারি”

দোয়া খাবার মুখে নিয়ে কাঁশতে শুরু করে আর বলে “না না দরকার নেই। আমি মক্কেলের ফাঁদে আর পরতে চাইনা। আমার আর খাওয়া লাগবেনা। আমি শিক্ষা হয়ে গেছি”

দোয়া মনে মনে বলে “বিনা দাওয়াতে খেতে গিয়ে এই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, আর না বাপু।এবার থেকে বিনা দাওয়াতে কোথাও হাম*লা দেবো না।নয়তো নিজে মাম*লা খাবো উল্টো”

চলবে