তবু কেন এত অনুভব পর্ব-০৬

0
382

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#৬ষ্ট_পর্ব

রাফি তানাফের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি এনে সবাইকে বলছে “আলুর চাটনিটা না দারুণ হয়েছে।আমি জীবনে ও ভুলবো না মাগো”

ইনান ফোড়ন কেটে বলে “রাফি ভাই এভাবে গরীব দুঃখীদের সেবা করলে আমরাও আপনাদের আপ্যায়ন করার সুযোগ পেতাম আর কি”

রাফি জোরে জোরে মাগো বলতে বলতে বলে “আমি আর সেবা করতে চাইনা। এই সেবা আমার জীবনে কাল হয়ে দাড়িয়েছে”

তানাফ হাসি চেপে ইনানকে বলে “ইনান সবাই যেনো বেরোতে না পারে আজ। আমি ল্যাবে যাচ্ছি একটু পর রাফিকে পাঠিয়ে দিও”

রাফির ফ্রেন্ড বাকি বন্ধুরা বলে ওঠে “কেন কেন? ও একা আজ এত খাবে কেন? আমরা কেন বাদ যাবো। আমরাও খাবো।”

রাফি সবার দিকে তাকিয়ে বলে “থাম ভাই তোরা,এই খাবার সেই খাবার না রে ভাই। এই খাবার খেয়ে আমার পেছনের বা*ম উড়ে গেছে। গত ১০মিনিটে আমার পেছনের বা*ম কলকাতা ঘুরে এসেছে। তোরা খাস না প্লিজ। টয়লেটে বসতে কষ্ট হবে তোদের”

সবাই রাফির কথা শুনে হা হয়ে আছে,ইনানকে তানাফ কল দিয়ে নিয়ে গেছে। রাফি পায়ে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে চেয়ারে এক পা উঁচু করে ঝুলে আছে। সবাই রাফির অবস্তা দেখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফির বাকি বন্ধুরা বলছে “কিরে রাফি! তুই না বসে বান*রের মতো ঝুলছিস কেন?”

ঐ যে আমার পেছনের বা*ম কলকাতায় ট্যুর দিচ্ছে, এই জন্য ঝুলে আছি। মাগো, এত চাটনি জীবনে খাইনি আমি। আল্লাহ গো (রাফি).

দোয়া চিৎকার দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দেয় আর বলে “রাফি সব খুলে বলতো কি হয়েছে আসল ঘটনা। তোর এই হাল কেন?”

বইন তুই তো একদম’ই কথা বলিস না,আমায় একটু বা*ম ঠান্ডা করতে দে (রাফি)

সবাই দোয়ার কথায় সহমত বলে জিজ্ঞেস করতে থাকে, রাফি না পেরে এবার এক এক করে বলতে থাকে
“আর বলিস না,আমাকে খাবার খাওয়াবে বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে, ঐ ব্যাটা আমাকে সরিষার তেল বাঁশের কাঠিতে মাখিয়ে এমন ক্যালানি’টাই না দিলো। আমার পেছনের বা*ম উড়ে গিয়েছে।আমার তো মনে হচ্ছে বা*ম খুলে পরে গিয়েছে নিচে। তোরা একটু ঐ রুমে গিয়ে দেখে আই না, আমার বা*মটা (ব্যাকসাইড) মনে হয় চেয়ারে খুলে পরে গেছে”

রাফির কথা শুনে দোয়া হাসতে হাসতে খাট থেকে মাটিতে বসে পরে,সবাই হাসছে। এদিকে ইনান এসে বলে “রাফি ভাই চলুন আমরা ইন্ডিয়া ঘুরে আসি।”

রাফি ইনানের দিকে করূণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে “আমার বা*ম টা এমনিতেই হারিয়েছি,এবার যেতে দিন আমায়।আমি ইন্ডিয়া যেতে চাইনা”

“আরে রাফি ভাই,আমরা ইন্ডিয়া থেকেই আপনার পেছনের জন্য নতুন বা*ম নিয়ে আসবো চলুন চলুন”
ইনান রাফিকে টানতে টানতে ল্যাবে নিয়ে গেলো।

সবাই রাফি যাওয়ার পর হাসছে আর বলাবলি করছে, এদিকে দোয়া চিন্তায় মগ্ন। দোয়া ভাবছে “কেন রাফিকে এত মারলো? রাফি খাইয়েছে তাই মারলো নাকি গরীব বলে অপমান করেছে এইজন্য মারলো”

দোয়ার কাছে এর কোনো সমীকরণ মিলছে না। দোয়া চুপ করে বসে আছে। এদিকে রাফি তানাফের ল্যাবে গিয়ে আকুতি মিনতি করছে আর বলছে “আমি আর চাটনি খেতে চাই না।মাফ করে দেন ভাই আর গরীব ডাকবো না। সামান্য গরীব বলাতে এত চাটনি দিলেন মাগো।”

তানাফ হাতে গ্লাভস মুখে মাস্ক পরে মেডিসিন এক পাত্র থেকে অন্য পাত্রে ঢালছে। তানাফের এমন লুক দেখে রাফির মুখের আওয়াজ ফুস। রাফি ভাবছে মনে মনে “আমি মনে হয় একে কোথাও দেখেছি। ঠিক মনে পরছে না চেনা লাগছে খুব”

তানাফ রাফির ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বললো “মিস নায়রা শুয়ে পরুন”

রাফি আৎকে ওঠে এই ডাকে, রাফি আমতা আমতা করে বলে “কিহ? মানে কি যা তা বলছেন”

কেন নায়রা চিনতে পারছেন না এখনো? এখন তো আমাকে চেনার কথা। মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস ডক্টর বেশে আছি,দেখুন তো এই বেশে কেমন লাগছে আমায় (তানাফ)

রাফি পকেট থেকে ফোন বের করে আইডিতে লগ ইন করতেই দেখে তার প্রেমিক পুরুষ D.Tanaf Azmi তার সামনে দাড়িয়ে। রাফি তানাফের পা ধরে মাটিতে বসে পরে আর বলে
“বুঝছি ভাই আমার অপরাধ। আমারে ছেড়ে দেন, আমি আর এমন আকাম করবো না।আপনাকে মাস্ক ছাড়া কখনো দেখিনি তাই চিনতে পারিনি,চিনলে আমি দৌড় দিয়া জীবন বাঁচাইতাম।মাফ করে দেন আর করবো না,আল্লাহ গো বসতে পারিনা।বা*ম মাঠিতে খুলে পড়ে গেছে আমার”

তানাফ রাফিকে ধরে সামনে দাড় করায় আর বলে
“ছেড়ে তো দেবোই এক শর্তে,কিন্তু কাজ টা কী ঠিক করলেন? আমার ফিলিংসের মজা নিয়ে কী খুব ভালো করলেন? এখন আমি আপনার ফ্রেন্ড দোয়াকে ভুলবো কী করে? তার ছবি দিয়ে আমাকে ঠকালেন।এখন ভুলে যাওয়ার রাস্তা বলুন। ছবিটা তো তার। আমার ফিলিংস তো তাকে জুড়েই।অপর প্রান্তে ব্যাক্তি আপনি হোন বা সে। মায়ায় তো পড়ে গিয়েছি,মায়া কাটাবো কী করে?উপায় দিন।নয়তো আপনার অবস্তা খুব খারাপ হবে,যতবার’ই দোয়ার ছবি ভাসবে চোখে ততবার’ই আপনাকে তুলে এনে পেটাবো”

রাফি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,এর উওর রাফির কাছেও নেয়।
তানাফ রাফিকে ঝাকিয়ে বলে
“বলুন, আমি কি করবো এখন? আমি তো দোয়াকে জোর করে আমার করতে পারি না। এখানে দোয়ার দোষ নেয়। দোয়াকে আই মিন দোয়ার ছবিকে আমার ফিলিংসকে আমি ভুলে যেতে চাই। কি করবো আমি”

রাফি অস্ফুট স্বরে বলে “দোয়াকে ভালোবাসতে পারেন,আমার বান্ধবী খারাপ না। একটু বেশিই খায় আর কি কিন্তু মেয়ে ভালো। কোনো খারাপ রেকর্ড নেয়।আমাকে তো শালাবাবু ডাকলেন’ই। মনে করেন তাই আমি। কিন্তু দোয়াকে আমার এসব বইলেন না প্লিজ আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে। যা প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো তা তো নিলেন’ই। এখন এসব দোয়ারে বইলেন না প্লিজ। বন্ধুত্ব শেষ হবে আপনার দোয়াও দুরে চইলা যাবে”

তানাফ কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো। তানাফ কি বলবে ভেবে না পেয়ে রাফিকে বলতে লাগলো “বেশি ওকালতি করবেন না। শুয়ে পরুন”

রাফিকে মেডিসিন দেওয়া হয়৷ রাফি মনে মনে বলছে “মক্কেলডা ভালো বুদ্ধি নিলো না আমার। পরে ঠ্যালা বুঝবে। মানুষ হিসেবে মক্কেল এত খারাপ না।ক্যালানি দিয়া আবার সেবাও করে, আফটার অল আমার প্রেমিক বইলা কথা। দুর দুর কি ভাবতাছি, ছিঃ রাফি তুই কী গে? কি ভাবিস এগুলো।”

রাফি গুনগুন করে বলছে আর জ্বীভে কামড় দিয়ে দুই হাতে তওবা কান টানছে, ইনান রাফির দিকে তাকিয়ে বলে “কি ভাই শপথ নিতেছেন নাকি? আর কারো টাকা না মে*রে খাওয়ার!”

রাফি মৃদু হেসে বলে “আমি আর জীবনেও এমন করবো না। আমি চাটনি খেয়ে শপথ আগেই নিয়া নিছি”

ইনান রাফির কান্ডে খিল খিল করে হেসে ওঠে।
রাফি রুমে চলে আসে, সবাই উদ্ধীগ্ন রাফির অবস্তা বুঝার জন্য। রাফি হিরোর মত রুমে এন্ট্রি নিয়ে বলে “দেখলি ভাইজানকে কত মেহমানদারি করলো। তোদের কপাল খারাপ আমার মত হতে পারলি না”

দোয়া বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে “একটু আগে না তুই বললি মামা তোর ব্যাকসাইড কলকাতায়?”

রাফি শাহরুখ খানের মতো পোজ নিয়ে বলে “বারে বারে দেশো মে এছে ছোটি ছোটি বাথে হোতি রেহতি হে”

দোয়া দাঁতে কিড়মিড় করে বলে “কি এমন হলো যে তুই পল্টি খেয়ে গেলি মামা!”

রাফি হেসে বলে “আরে দুর আমারে নিয়ে গিয়া মাফ চাইছে, বলছে ভাই ভুল কইরা ধইরা আইনা তোমারে পিডাইছি মাফ কইরা দেও।সবার সামনে মাফ চাইতে লজ্জা পাইতেছে তাই আলাদা ভাবে নিয়া গিয়া মাফ চাইছে। তোগো রাফি এক পিচ বুঝলি”

সবাই খুশিতে বলে ওঠে “রাফি ভাই জানতাম তুই দিল দরিয়া,ব্যাটা ভুল করছে মাফ চাইছে এতেই খুশি। নইলে ব্যাটারে ধইরা আমরাই দিতাম”

রাফি ঠিক ঠিক বলে পোজ নিয়ে হাটছে রুমে, ওদিকে সবাই চুপসে গেছে পেছনে তানাফকে দেখে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
রাফি পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলতে শুরু করে “ব্যাটায় ভাবছিলো পিডা দিয়া আমারে পার পাইয়া যাইবো। আমার চোখ দেইখা দুই মিনিট ও গেলো না ভয়ে মাফ চাইতে নিয়া গেলো। এবার বুঝ আমি কি চিজ। আ*গুন আ*গুন জলন্ত আ*গুন।”.

সবাই ইশারা দিয়ে রাফিকে চুপ করতে বলে, রাফি অনায়াসে কারো কথার পরোয়া না করে বলেই যাচ্ছে। এদিকে ইনান রাফির কাঁধে হাত দিয়ে পেছন থেকে ডাকছে, রাফি বারবার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলতে থাকে ” দুর ছাড়ো মিয়া,কইতে দেও।তো বুঝলি দোস্তরা। এই রাফির গায়ে হাত তোলা এত সোজা না। আ*গুনে হাত দিলে পুড়ে ছাই হইয়া যাইবো সব। আজকের মতো মাফ কইরা দিছি ব্যাটারে। খুব কান্নাকাটি করছে পা ধইরা তাই। নাইলে দেখতি আজকে রাফির কেরামতি”

সবাই কপালে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আড়াল করছে নিজেদের। এদিকে রাফি বলেই যাচ্ছে।
তানাফ দরজার সামনে দাড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে রাফির কথা শুনছে।

ইনান রাফির কাঁধে হাত দিয়ে কানের পাশে গিয়ে বলে “আ*গুন ভাই আমি সিলিন্ডার বলছি।কৃপা করিয়া যদি একটু এদিকে তাকাইতেন।আমি আগুন নিভাইতাম আর কি”

রাফি আওয়াজ শুনে থমকে যায়,হাটু কাঁপছে রাফির। রাফি হাঁটু কাঁপা পা নিয়ে ইনানের সামনে ফিরতেই দেখে তানাফ দরজায় দাড়িয়ে রাফির সব কথা শুনে ফেলেছে।
রাফি হাঁটু কাঁপতে কাঁপতে ওখানেই প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে।

সবাই রাফির কান্ডে ভয়ে চুপসে আছে। তানাফ হাসি চেপে রেখে রাগান্বিত স্বরে বলে “সবাই সবার পরিবারকে জানিয়ে দিন আজ বাড়ি যেতে পারবেন না।”

সবাই এক এক করে পরিবারকে বলছে ফোনে, তারা সবাই দাওয়াত খেতে এসেছে। ইনান তানাফের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে
“স্যার এরা সবাই মনে হয় দোয়া ম্যাডামের চ্যালাপেলা। খালি খায় খায়। এখানে বিপদে আছে জেনেও পরিবারকে খাওয়ার কথা বলছে। ভাবুন তো স্যার, ভুল করে যদি দোয়া ম্যাডাম আপনার জীবনে আসে,সে সময় অসময়ে কিছু খেতে না পেরে আস্ত আপনাকে খাওয়া শুরু করবে। আমি তখন আপনাকে হারিয়ে ফেলবো প্রিয় স্যার।”

তানাফ গম্ভীর গলায় বলে ওঠে ইনানকে “কোন খাওয়ার কথা বলছো ইনান,”

ইনান দাঁত বের করে বলে “কোন খাওয়াটাই খাওয়াতে চাইছেন স্যার দোয়া ম্যাডামকে,আমি তো খাবার-দাবারের কথা বলছিলাম স্যার হেহে”

তানাফ বেশি কথা না বাড়িয়ে বলে “ইনান খুব বদ*মাশ হয়েছো তুমি।*

ইনান তানাফের কানের পাশে গিয়ে বলে “স্যার বদ*মাশ ফেলুন, এই রাফি ভাই তো ছুছু করে ভিজিয়ে দিলো।”

তানাফ রাফির কাঁধে হাত রেখে বলে “শালাবাবুকে এই চাপার জন্য কোন চাটনি দিলে ভালো হয় গাইস?”

রাফি হাঁটু কাঁপাতে কাঁপাতে বলছে তানাফকে “আমার দুই নাম্বার পেয়েছে খুব”

সবাই নাক চেপে ধরে বলে “রাফিকে ছেড়ে দেন, ও এখানে শুভকাজ সেরে ফেলবে ভয়ে।”

ইনান তানাফের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে “স্যার ছুছু করলে মানা যায়,এখন যদি এখানে ধ্বংস করে দেয় পঠি করে, তখন পারফিউম কোম্পানির ব্যাবসায় সবুজ বাতি জ্বলবে। তার চেয়ে ছেড়ে দিন রাফি ভাইকে। আমার ব*মি ব*মি পাচ্ছে স্যার ছেড়ে দিন”

তানাফ ইনানের কথা হাসি চেপে রেখে ইনানকে বলে “গিয়ে ড্রেস দাও ওঁকে, আর রুমটা ক্লিন করতে বলো সার্ভেন্টদের। সবাইকে অন্যরুমে শিফট করিয়ে খাবারের ব্যাবস্থা করো। সবার খাওয়া হলে রাতে তোমার ম্যাডামকে আমার রুমে পাঠাবে”

স্যার একটা প্রশ্ন! ছেলেভাবি জানকে পাঠাবো নাকি দোয়া ম্যাডামকে পাঠাবো? রাতে একটু সাবধানে থাকিয়েন স্যার, যাতে আপনাকে গিলতে না পারে দোয়া ম্যাডাম। আপনি বললে আমি দরজার বাহিরে পাহারাদার হয়ে থাকবো। আপনাকে নজরে রাখবো। (ইনান)

বেশি কথা না।যা বলেছি তাই করো তুমি,দোয়াকে পাঠিয়ে দিও। (তানাফ)

চলবে।