তবু কেন এত অনুভব পর্ব-৪+৫

0
441

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#৪র্থ_পর্ব

“স্যার ছেলেভাবির জন্য কাল একগাদা গোলাপ নিয়ে যাবেন প্লিজ। হাফ ছেলেদের গোলাপ পছন্দ।আমাদের ছেলেভাবি জানের ও খুব পছন্দ হবে নিশ্চয়”

এই বলে ইনান দৌড় দেয় মার খাওয়ার ভয়ে, আজমী ইনানের কান্ডে হাসতে শুরু করে।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পরেছে,দোয়া শুয়ে শুয়ে ভাবছে “রাফির জন্য আবার ফাঁসবো না তো? মনটা কেমন কেমন কাঁচুমাচু করছে। যাবো? না যাই, খাওয়া মিস দেওয়া যাবেনা। রাফি টাকা দিয়ে ট্রিট দিচ্ছে কার কি? নো ঝামেলা ডু ফুর্তি”

দোয়া ভাবতে ভাবতে কবে যে ঘুমিয়ে পরে তার আয়ত্তা নেয়,

এদিকে ইনান বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরেছে,কাল তানাফ স্যারের সাথে চো*র ধরতে যেতে হবে।
ইনানের মনে দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো, ইনান তানাফ স্যারকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে “স্যার কাল আমি কি পড়ে যাবো?”

এটা বলার জন্য কি এত রাতে ম্যাসেজ দিয়েছো ইনান? (তানাফ আজমী)

ইয়ে মানে স্যার কাল যদি সুন্দর করে না যাই, তাহলে তো আমাদেরকেই চো*র ভেবে মানুষ গণপিটুনি দেবে (ইনান)

“তোমার কি মজা লাগছে খুব?ঠিক আছে শাড়ি পড়ে এসো কাল, তাহলে কেউ বুঝতে পারবে না” তানাফ রাগান্বিত হয়ে ম্যাসেজগুলো লিখে পাঠিয়ে দেয়।

স্যার ম্যাসেজটা কি দিয়েছেন দেখতে পারছিনা, পুরোটাই ব্লাংক দেখাচ্ছে, টিপ্পনী কেটে ইনান অফলাইনে চলে যায়।

তানাফ বুঝতে পেরেছে ইনান তানাফকে জ্বালাতে এসেছে। এই ইনানের কাজ হলো আগুনের ভেতর তেল ঢেলে দেওয়া।
তানাফ কাজ বাজ সেরে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাতের প্রায় দেড়টা দোয়ার মেঝো কাকা নাদিম শেখ রুমে রুমে টহল দিচ্ছে আর দেখছে সবাই ঘুমিয়েছে কি না।

এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে খুব,নাদিম শেখ দোয়ার বাবার রুমে উঁকি দিয়ে ভালো করে আয়ত্ত করে নিচ্ছে সবটা। পা টিপে টিপে রুমের ভেতর প্রবেশ করে চারপাশ দেখতে লাগলো নাদিম শেখ। অন্ধকার হওয়াতে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
দেয়াল ধরে ধরে আলমারির কাছে গেলো, আলমারিতে তালা না দেওয়ার ফলে নাদিম শেখ আস্তে আস্তে আলমারির দরজা খুলতে লাগলো। দোয়ার বাবা আজিম শেখ নড়েচড়ে এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে আবার। নাদিম শেখ মনে মনে বলতে লাগলো “রিস্ক হয়ে যাচ্ছে বেশি,এখন কিছু করা যাবেনা। যা করতে হবে দোয়াকে দিয়ে করতে হবে৷ ও হচ্ছে একমাত্র হাতিয়ার।আপাতত এখন যাই। দোয়ামনি তৈরি থাক মা।”

নাদিম শেখ রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো, বিছানায় মেঝো কাকিমা শুয়ে আছে। নাদিম শেখ বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার স্ত্রী চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাদিম শেখ ভয়ে উঠে বসে।

এলে কেন? যাও বাড়ির দলিলপত্রের খোঁজ করো যাও। (মেঝো কাকিমা)

তু তুমি কি যা তা বলছো এসব? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? (নাদিম শেখ)

কি ধরা খেয়ে গেলে? যার ঘরে থাকছো তার বুকেই ছুরি মারতে যাচ্ছো? (মেঝো কাকিমা)

নাদিম শেখ রেগে গলা টিপে ধরে তার স্ত্রীর। কোনোভাবে নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও ছাড়াতে পারছেনা নাদিম শেখের কাছ থেকে। দরজার ধাক্কা খেতেই নাদিম শেখ ভয়ে গলা ছেড়ে দেয়।

দোয়ার মেঝো কাকিমা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, নাদিম শেখ গাল চেপে ধরে বলে “আওয়াজ যেনো বাহিরে না যায়।নাহলে তোর গলা টিপে রক্ত চুষে খাবো। যদি মুখ খুলেছিস তোর একদিন কি আমার একদিন”

দোয়ার মেঝো কাকিমা মুখে কাঁপড় গুজে দিয়ে ওপাশ ফিরে কাঁদছে।

ভোর ফুটে উঠেছে,চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ৷ সবাই ঘুম থেকে ওঠে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।

খাবার টেবিলে মেঝো কাকিমা খাবার সার্ভ করছে৷ দোয়া ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে খেতে বসেছে, আজীম শেখ পত্রিকা পড়ছে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। নাদিম শেখ ব্যাবসার কাজের কথা বলছে আজীম শেখের সাথে।

সবাই খাওয়াদাওয়া কর‍তে ব্যাস্ত, হঠাৎ দোয়ার মা সবার মাঝখানে বলে ওঠে, “কিরে ছোটু তোর গলায় ওটা কিসের দাগ?”

মেঝো কাকিমা তথমথ খেয়ে উড়নার দিয়ে ঢেকে ফেলে, নাদিম শেখ চোখ রাঙ্গিয়ে তার স্ত্রীকে বলছে “উড়না ঠিক করে পর‍তে পারো না? কোনদিন যে ফাঁসি খেয়ে মরে যাও কে জানে”

দোয়ার মেঝো কাকিমা ঢোক গিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে সবার, চোখে পানি ছলছল করছে।
দোয়ার মায়ের চোখ এড়ায়নি এই বিষয়টি। দোয়ার মা সব বুঝতে পেরে চুপ করে আছে।

খাবার সেড়ে যে যার রুমে চলে গিয়েছে। মেঝো কাকিমা বেসিনে প্লেট পরিষ্কার করছে, পেছন থেকে কে যেনো জড়িয়ে ধরলো তাকে। ভয়ে আৎকে ওঠে মেঝো কাকিমা। পেছনে ফিরে দেখে তার বড় মেয়ে পিও দাড়িয়ে আছে। মেয়েকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় মেঝো কাকিমা।

পিও তার মাকে বলছে “মা একেবারে চলে এসেছি হোস্টেল থেকে। আর যাবো না তুমি খুশি তো এবার?”

পিও’র মা পিওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে “হ্যাঁ মা অনেক খুশি। যা তোর বাবার সাথে দেখা করে আয়।রুমে হবে হয়তো”

পিও তার মায়ের কথামতো বাবার সাথে দেখা করতে চলে যায়। নাদিম শেখের সবচেয়ে আদরের মেয়ে হচ্ছে, তার বড় মেয়ে পিও।

পিওকে দেখে নাদিম শেখ খুশিতে গদগদ করছে।পিও বাড়ি ফিরে আসাতে পুরো ঘর খুশিতে হৈ-হুল্লোড়।

দুপুরে দোয়া খেয়ে রেডি হচ্ছে ক্যাফে যাওয়ার জন্য। অলরেডি চারটা মিসড কল দিয়ে দিয়েছে রাফি। দোয়া তৈরি হয়ে সবাইকে মিথ্যে বলে বেরিয়েছে।

ক্যাফে ইভা,মায়া,রাফি আরো কয়েকজন বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছে আর অপেক্ষা করছে দোয়ার জন্য। দোয়ার পুরো গ্যাং এসেছে ট্রিটের জন্য আজ।

এদিকে তানাফ তৈরি হয়ে বেরিয়েছে ইনানকে নিয়ে, লোকেশন বের করে ফেলেছে তানাফ।
গাড়ি চলছে লোকেশন অনুযায়ী। ইনান তানাফকে বলছে
“স্যার গোলাপ ফুল নেবেন না?ছেলেভাবি জানের খুব পছন্দ হবে”

তানাফ চোখ গরম করে ইনানের দিকে তাকাতেই ইনান কাঁশতে শুরু করে, ইনান আমতা আমতা করে বলে “ছেলেভাবি জান বলতে ওটা বলি নি স্যার। স্যার ভাবুন তো যদি গিয়ে দেখেন, চার পাঁচটা মেয়ের মতো না ভাবি। একদম আমাদের মতো ছেলে। আপনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বিশ্রি হাসি দিয়ে জান বলছে আপনাকে।তখন সিন টা কেমন হবে স্যার যাস্ট ভাবুন একবার। আমি তো ওদিকেই হাত তালি দিয়ে ভাবিকে কংগ্রাচুলেশনস জানাবো”

তানাফ রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে “হোয়াট দা”

অমনি ইনান কথা থামিয়ে ফেলে, গাড়ির জানালার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাঁসছে।
ইনান মনে মনে বলছে “স্যার ছেলেভাবি জানের জন্য শুভকামনা রইলো। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে মা কে হবে!তবে আমি মানিয়ে নেবো স্যার আপনার জন্য৷ আমার প্রিয় স্যার আপনি। আপনার জন্য একটা দামড়া পুরুষকে ভাবি ডাকতে কোনো সমস্যা নেই আমার। গুড লাক স্যার”

গাড়ি এসে পৌছেছে,ততক্ষণে দোয়া চলে এসেছে ক্যাফে। রাফি দোয়াকে দেখে দাড়িয়ে বলে “ইয়ো মামা আজ ট্রীট হবে ট্রীট। একাউন্টে পাঁচহাজার ঢুকেছে৷ কি খাবি বল। সব তোর জন্য আয়োজন। আজ আর কেউ তোকে বাঁধা দেবে না”

দোয়া চেয়ারে বসে বলে রাফিকে “জন্মের খাবার খাওয়াবি মনে হচ্ছে ভাই। আমার তো কেমন কেমন লাগতেছে। আজকে মনে হয় আমি আবারো বিপদে পরবো।”

দোয়ার কথা থামিয়ে দিয়ে ইভা,মায়া বাকিরা বলে ওঠে “আরে ড্যুড আমরা থাকতে ভয় কিসের? নো প্যারা ডু ফুর্তি। ”

এই ওয়েটার মামা এদিকে আসো তো, এখানে যা যা ডেজার্ট আছে সব গুলা দাও৷ টাকা নিয়ে চিন্তা কর‍তে হবে না। তুমি যাস্ট দিয়ে যাও (রাফি)

ওয়েটার রাফির কথামতো এক এক করে সব আনতে লাগলো টেবিলে, টেবিলে খাবার রাখার জায়গা নেয়। রাফি দোয়াকে বলছে “নে মামা শুরু কর। আজকের পর ঢপ মারমু না আমি তওবা করছি। এটাই লাস্ট খানাপিনা আমাদের”

দোয়া খেতে লাগলো মনের সুখে এক এক করে, এদিকে তানাফ ও ইনান হাতে ফুল নিয়ে ক্যাফের ভেতর ঢুকেছে,কিছু খাবে একটু বসবে তার জন্য।

ইনান তানাফকে বলছে “স্যার স্যার ঐ যে দেখুন আমাদের ম্যাডামের মত লাগছে,মানে রিয়াল ম্যাডাম। আপনি তো ফে*ইক ম্যাডামের ফাঁদে পরলেন,”

তানাফ ইনানের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে যেনো গিলে খাবে। ইনান তানাফের চোখ দেখে বাকিকথা গিলে নেয়।

তানাফ চালাকি করে ফেইক একাউন্ট থেকে বিকাশ নাম্বার দেওয়া ফোন নাম্বারটিতে ফোন দেয়, অমনি রাফি খাওয়া বন্ধ করে এদিক ওদিক তাকায়।

তানাফের একটু সন্দেহ লাগছে,তানাফ আবারো ফোন দেয়। রাফির বান্ধবী ইভা আর দোয়া বলে ওঠে “আগে দেখ বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে কি না,রিসিভ কর। পরে খাস”

রাফি ফোন হাতে নিয়ে, কল কেটে দেয় আর বলে “চিনিনা এডা ক্যাডা,দূর খাইতে থাক মামু। খা খা। দোয়া তোরে কি দিমু বল।”

তানাফের কল রিজেক্ট করাতে তানাফ এবার শিউর হয়ে গিয়েছে। তানাফ তাদের কান্ড দেখছে বসে বসে। এদিকে ইনান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইনান তানাফকে বলছে “স্যার ঐ যে চুলে লাল ব্যান্ড বাঁধা হাতে রুমাল বাঁধা ছেলে ভাইটিই মনে হয় আমাদের ছেলেভাবি জান। বাহ কি সুন্দর হাসি যেনো মুক্তো ঝড়ছে। দেখুন না স্যার কিভাবে খাচ্ছে,আহহ মনে হচ্ছে খাবার গুলো ব্যাথা পাবে বলে আস্তে আস্তে চিবোচ্ছে”

তানাফ রাগে হাতের সামনে থাকা গ্লাস এক হাতে চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। হাত গড়িয়ে র*ক্ত পরছে। ইনান ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বিড়বিড় করে বলছে “ছেলেভাবি জানকে মনে হয় পছন্দ হয় নি স্যারের।স্যারের কান্ড দেখে আমার মনে একটাই গান বাজছে, আমি পারি না আর পারি না।আমি কেন মরি না।”

চলবে…

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#৫ম_পর্ব

“ছেলেভাবি জানকে মনে হয় পছন্দ হয় নি স্যারের।স্যারের কান্ড দেখে আমার মনে একটাই গান বাজছে, আমি পারি না আর পারি না।আমি কেন মরি না।”

তানাফ ওয়েটারকে ডেকে টিস্যু নিয়ে র*ক্ত গুলো পরিষ্কার করছে। রাফি তার দলবল নিয়ে খাওয়াদাওয়া করছে মজা মাস্তি করছে। হঠাৎ রাফি খেয়াল করে দেখে তানাফ আর ইনান তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।

রাফি মনে মনে বলছে “আহারে এই অসহায় মানুষগুলোকে কেউ দেখে না। আজ টাকা নেই বলে কিছু খেতেও পারছে না। কপাল সব’ই কপাল।”

রাফি হাত দিয়ে ইশারা করে ইনানকে ডাকছে, ইনান তানাফের দিকে তাকিয়ে বলে “স্যার ছেলেভাবি জান আমাদের ইশারা দিয়ে ডাকছে। এটাই গ্রীন সিগ্ন্যাল স্যার। গিয়ে ঝটপট প্রপোজ করে দিন হাটু গেড়ে”

তানাফ রাগে কিড়মিড় করতে করতে ইনানকে বলছে “ইনান তুমি চুপ করবে? নাকি দিবো এক চড়। চলো, আমার আগে একটা কথাও বলবে না তাদের সামনে। এক্ষুনি মুখে লাগাম লাগাও।যা বলার আমি বলবো। যা করার আমি করবো। ওকে? ওরা কেউ যেনো কিছু বুঝতে না পারে”

ইনান মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে তানাফের সাথে রাফিদের টেবিলে চলে গেলো। রাফি তানাফ ও ইনানকে দেখে সকলকে বলছে “এই তোরা একটু চুপ কর। নতুন গেস্ট আমাদের। ওদেরকে ও ফিফটি ফিফটি দে। দেখ মুখটা ওদের খুব শুকনো। আজ টাকা থাকলে তোদের আমাদের মতো ওরাও খেতে পারতো। আমাদের সকলের উচিৎ গরীবদের পাশে দাড়ানো। তোরা সাইডে চাপ। বসতে দে”

তানাফ দাঁতে দাঁত চেপে সব কথা হজম করছে। ইনান মিটমিট করে হাঁসে একবার,আরেকবার তানাফের দিকে তাকিয়ে দুঃখি দুঃখি ফেইস করছে।

দোয়া তানাফকে দেখে মুখে খাবার নিয়ে তাকিয়ে আছে। খাবার খাচ্ছেও না,ফেলছেও না।
দোয়া সামনে রাখা প্লেটের খাবারগুলো দূরে ঠেলে দেয় ভয়ে৷ রাফি দোয়ার কান্ডে দেখে হেসে বলে “বাহ দোয়া তোর আজ সুবুদ্ধি হয়েছে, কিভাবে নিজের খাবার অনাহারীদের মুখে তুলে দিলি।স্যালুট মামা।তোকে পরে আবার ট্রিট দিবোনে মামা।”

তানাফ একবার দোয়ার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার রাফির দিকে।
মাঝখানে ইনান ফোড়ন কেটে বলে “স্যার একটা কথা বলবো? ছেলেভাবি জান কিন্তু অমায়িক দানশীল,রাতে চু*রি করে দিনে দান করে। এমন ভাবি কিন্তু আর একটাও হয় না দুনিয়াতে”

তানাফ ইনানের হাত চেপে চুপ করিয়ে দেয়। রাফি তানাফ আর ইনানকে বসতে দেয়, রাফি নিজের খাবারের ভাগটুকু তাদের দিয়ে বলে “নিন খান, আহ রে কি অবস্তা। খান খান যা ইচ্ছা খান।আমি বিল দেবো। মানুষ মানুষের জন্য। ইসস দুনিয়া বড়ই কঠিন।মানুষের পোশাকে সব প্রকাশ পায় না আজ বুঝেছি। ইসস হাতটা একদম কেটে গিয়েছে। খাবারের জন্য মারপিট করেছিলেন বুঝি? আমাকে বলতেন আমি ফ্রীতে খাওয়াতাম।কেন মানুষের মার খেতে গেলেন ভাই।নিন খান”

তানাফ রাগ হজম করে খাবার মুখে দিয়ে দোয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে চিবিয়ে খাচ্ছে খাবারগুলো। দোয়া ভেতরে ভেতরে শেষ। দোয়া মনে মনে বলছে “মক্কেলটা এখানে এলো কি করে? আসলো আসলো আমার সামনেই আসতে হলো আল্লাহ। মনে হচ্ছে এখানে ঘুর্ণিঝড় হবে। পরিস্থিতি খুব ঠান্ডা এখন।”

ইনান খাচ্ছে আর দোয়াকে বলছে “ম্যাডাম খেয়ে নিন। ফ্রী সার্ভিস মিস করিয়েন না।”

দোয়া ইনানের কথা শুনে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়। দোয়া ঘামছে রীতিমতো। এদিকে তানাফ দোয়ার দিকে তাক করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দোয়া মনে ভয় চেপে সাহস করে বলে ফেলে তানাফকে
“এই যে মিস্টার,সেদিন খাইয়েছিলেন।আজ আমার ফ্রেন্ড আপনাকে খাওয়াচ্ছে হিসাব বরাবর।।নিন খান”

তামাফ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “মানুষ মানুষের জন্য”
রাফি দোয়ার কথার মানে খুঁজতে ব্যাস্ত,রাফি কিছু বলতে যাবে দোয়াকে তার আগেই ইনান কথা ঘুরিয়ে ফেলে, ইনান বলে ওঠে মাঝখানে “আজকের খাবারগুলো আজীবন মনে থাকবে স্মরণীয়”

দোয়া কিছুটা আঁচ করতে পারলেও এতটা গুরুত্ব দেয় না, দোয়া মনে মনে বলে “ক্যাফ যেহেতু সবাই আসবে, ভুল করে দেখা হতেই পারে। সব কিছু সিরিয়াস নিস না দোয়া।”

রাফি ওয়েটারকে বিল পে করে বলে “চল এবার উঠি,আজ আমার টাকাগুলো সার্থক। কোনো অনাহারী ব্যাক্তিদের পেটে দিয়ে। সব খারাপের পেছনে কিছু ভালো উদ্দেশ্য থাকে, একদম সঠিক আজ প্রমাণ পেলাম”

রাফি দোয়া বাকিরা সবাই যেই না উঠতে যাবে ঠিক তখনি তানাফ বলে ওঠে “কোথায় যাচ্ছেন ভাই,গরীবদের ও কিছু সুযোগ দিন আপ্যায়নতা করার।”
দোয়া তানাফের কথা বুঝে গিয়েছে, দোয়া বুঝতে পেরেছে আজ বিপদ আছে সবার কপালে।দোয়া যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানাফ ইশারা দিয়ে ইনানকে বলে দোয়াকে নিয়ে যেতে।
ইনান সকলের সামনে ইনিয়ে বিনিয়ে দোয়াকে নিয়ে যায়।

তানাফ রহস্যময় হাসি দিয়ে মনে মনে বলছে “মেরি জান আমার সমান বুদ্ধি নিয়ে আপনাকে আরো একবার জন্মাতে হবে। ভেবেছিলেন ওদের সবটা বলে দিবেন।আহ হা আমি থাকতে এটা হতে দেই কি করে?”

তানাফ রাফিকে আর বাকিদের বলছে “চলুন আমাদের একটু সুযোগ দিন আপনাদের আপ্যায়ন করার”

রাফি খুশিতে গদগদ করে মনে মনে বলছে “ওরে সা*লা এত দেখছি সোনায় সোহাগা। কপালে এত বড় সারপ্রাইজ থাকবে আগে জানলে এভাবে টাকা নিয়ে গরীবদেরো খাওয়াতাম, নিজেও খেতাম। পাপ সাফ হয়ে যেতো”

তানাফ সবাইকে গাড়িতে বসিয়ে ইনানকে পাঠিয়ে দেয় তাদের কাছে। ইনান তাদের নিয়ে রওনা হয়।

এদিকে তানাফ দোয়াকে নিয়ে আলাদা গাড়ি করে রওনা দিয়েছে, দোয়া তানাফকে বলছে “কেন এসব করছেন? কি কারণে?”

তানাফ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “জান আমার শালাবাবুকে আদর করবো না!এটা আপনি কি বললেন”

দোয়া বিরক্তি নিয়ে চুপ করে আছে, দোয়া আছে এই লোকের সাথে সে কখনো কথায় পেরে উঠবেনা। তাই দোয়া চুপচাপ বসে বসে ভাবছে
“রাফিরে আজ মনে হয় তোর কপালে মেহমানের আদর জুটবে। কেন যে ভিখারি অনাহারী বলতে গেলি। দেখ এবার তোর জন্য আমরা সবাই ফাঁসবো। মাইর একটাও মাটিতে পরবেনা। আল্লাহ আমাদের এই মক্কেলের হাত থেকে বাঁচাও”

তানাফ দোয়ার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ দেখে বলে “যতই ডাকুন। বাঁচাতে আসবেনা কেউ।”

তানাফের কথায় দোয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়,দোয়া মনে মনে বলে “এই মক্কেলকে টেরো*রিস্ট ভাবছিলাম,এটা দেখতেছি মনোবিজ্ঞানী”

তানাফ গুণগুণ করে গান গাইছে আর ড্রাইভ করছে। দোয়া ভয়ে চুপসে আছে।

সবাই পৌছে গেলো, রাফি ইভা মায়া বাকি বন্ধুরা রুম দেখে থ হয়ে আছে। ইভা রাফিকে বলছে “কাদের গরীব বলে খাইয়ে টাকা নস্ট করলি।এখানে তো দেখি এলাহি কান্ড। মনে হচ্ছে আমরা ট্রেপে পরছি।”

রাফি ইভাকে থামিয়ে দিয়ে বলে “আরে ট্রেপ হলে দোয়া কি ঐ পোলার সাথে একা একা আসতো? দেখ তো দোয়া কত নরমাল”

সবাই মাথা নাড়িয়ে রাফির কথায় সম্মতি দেয়,এদিকে ইনানের জন্য দোয়া কেউকে কিছু বলতে পারছে না।

তানাফ একটা রুমের মধ্যে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে, ইনানকে কল দিয়ে বলে তানাফ “আসার সময় একটা সরিষার তেল আনিও তো”

ইনান তানাফকে জিজ্ঞেস করে “স্যার কেন?”

যা বলছি তাই করো (তানাফ)

ইনান তানাফের কথামতো সরিষার তেল বাটি করে রুমে নিয়ে যায়, সবাই ইনানের হাতে সরিষা তেলের বাটি দেখে হা হয়ে আছে। এদিকে দোয়া ছক মেলাতে ব্যাস্ত। দোয়া মনে মনে বলছে
“এই তেলের বাটি কীজন্যে? কি করবে এটা দিয়ে? বুঝলাম না কিছু। মতলব টা কি”

তানাফ তিনটা চিকন বাশেঁর কাটি একত্রে করে সরিষার তেল মাখিয়ে নিচ্ছে।
ইনান তা দেখে শিউরে ওঠে আর বলে “ইসস আজ ছেলেভাবী জানের খুব লাগবে পেছনে”

তানাফ ইনানকে বলে ওঠে “আসো তোমাকে দিয়ে শুরু করি”

ইনান কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। রাফি ইনানকে দেখে বলে “তেল কীজন্য? চাটনির জন্য নাকি? উনি কি বাবুর্চি? রান্না করছে বোধহয়”

ইনান হাসি চেপে রেখে বলে “আজ্ঞে হ্যাঁ ঠিক”

রাফি দোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “মামা আজ জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে”

একটু পর ইনানকে তানাফ ফোন দিয়ে রাফিকে নিয়ে যেতে বলে।

ইনান রাফির দিকে তাকিয়ে রাফিকে বলে “চাটনি টেস্ট করতে চলুন। এত খাওয়ালেন।হকদার আপনি। আসুন”

রাফি নাঁচতে নাঁচতে ইনানের সাথে চলে গেলো। দোয়া মনে মনে বলছে “ব্যাপারটা সুবিধার লাগছেনা। খতিয়ে দেখতে হয়”
দোয়া পা টিপে টিপে যখন’ই রুমে যাবে অমনি বাকিরা বলে ওঠে, “আরে রাফিকে খেতে দে,রুম ছোট তাই একজন একজন করে খাওয়াচ্ছে”

দোয়া পা বাড়িয়ে আবার পা পিছিয়ে নেয়। ভেতর থেকে ঠাস ঠুস শব্দ আসছে। ইনান বাহিরে দাড়িয়ে হাঁসছে।

একটু পর রাফি তানাফের সাথে বের হয়। রাফি হাঁটতে পারছে না। সবাই রাফির অবস্তা দেখে বলে “কিরে বেশি খেয়ে ফেলেছিস নাকি ভাত?”

তানাফ রাফি গালে হাত দিয়ে বলে “আমার শালাবাবু কেমন খাওয়াদাওয়া করেছে সবাই জিজ্ঞেস করুন”

রাফি চেয়ারে বসতে গিয়ে আবার দাড়িয়ে পরলো। পেছনে ব্যাথা করছে রাফির। রাফির তানাফের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি এনে সবাইকে বলছে “আলুর চাটনিটা না দারুণ হয়েছে।আমি জীবনে ও ভুলবো না মাগো”

চলবে।