তবু কেন এত অনুভব পর্ব-০৮

0
380

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#৮ম_পর্ব

নাদিম শেখ কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
” কি*ডনি নিয়ে ফেলুন পেশেন্টের,যত চাইবেন তত দেবো। ডিল করুন আপনার’ই লাভ ”

তানাফ টাকার বান্ডিল গুলো হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে,নাদিম শেখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করছে সব। তানাফ নীরবতা ভেঙ্গে নাদিম শেখ’কে বলে
“এই অল্প টাকায় কেউকে খু*ন করতে পারবো না,আরো টাকা নিয়ে আসুন ”

নাদিম শেখ তোতলাতে তোতলাতে বলে
” মা মা মানে? কিসের খু*ন? আমি কি*ডনি নিতে বলেছি, খু*ন কেন? ”

আমি এত জিলাপির প্যাচ বুঝিনা,আমি সোজা স্ট্রিক্ট ফরওয়ার্ড। কি*ডনি নেওয়া মানে সুস্থ ব্যক্তিকে মৃ*ত্যুর কাছে ঠেলে দেওয়া। একেবারে না মে*রে আস্তে আস্তে মে*রে ফেলা যাকে বলে। আমি সেই জিনিস টা’কেই শর্টকাটে খু*ন বলি৷ ক্লীয়ার? (তানাফ)

নাদিম শেখের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে, নাদিম শেখ কপালের ঘাম মুছে অস্ফুট স্বরে বলে
” আমি বাকি টাকা নিয়ে আবারো আসবো ”

নাদিম শেখ টাকাগুলো রেখে চলে যায়, তানাফ টেবিলের একপাশে কোনায় বসে চেয়ারে পা রেখে বলে ” আমি জানতাম আপনার ভেতর ঘাপলা আছে,তাই সুযোগ খুঁজছিলাম। এবার আমি আমার ওয়েতে চলবো। ”

____________________________

সবাই এক রুমে বসে আছে, সকলের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে রাফির চিৎকারে, গভীর রাত। রাফি চিৎকার করছে “আমার বা*ম গেলো রে গেলো৷ কেউ আমার বা*মকে ধর একটু বুঝা এভাবে যেনো না জ্বলে। মাগো।”

ইভা বিরক্তি নিয়ে রাফিকে থামিয়ে দিয়ে বলে “উফফ তোর জন্য আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো,কি সুন্দর সালমান খান এসে আজ আমায় প্রপোজ করেছিলো। যেই না চু*মু খাবো তার আগেই স্বপ্ন মাটি করে দিলি ধ্যাত”

ইভার কথায় ইনান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলছে
” এরা একেকটা দেখছি সেই লেভেলের চাপা*বাজ।”

ইভা এবার বলতে শুরু করে “জানিস সেদিন রাতে শাহরুখ খান আমার রুমে এসেছিলো। আমি তো ভয়ে শেষ। এত রাতে প্রেস মিডিয়া আমার ঘরের সামনে দাড়ালে আমার তো মানসম্মান শেষ। তাই শাহরুখ খানকে বললাম, ওগো এভাবে রাত বেরাতে দেখা করতে এসো না। লোকে মন্দ বলবে। শাহরুখ কী বললো জানিস?”

সবাই ইভার আষাড়ে গল্প শুনার জন্য ওৎ পেতে আছে, ইভা আবারো নড়েচড়ে ওঠে বসে আর বলে “শাহরুখ বলছিলো, জাব থাক হে জান,মে তোমারে সাথ হি রাহুঙ্গি। আমি তো খুশিতে জড়িয়ে ধরেই ফেললাম। তারপর শাহরুখ খান প্রেস মিডিয়ার জন্য আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো মুম্বাই”

সবাই গাল টিপে হাসি থামিয়ে স্যাড স্যাড ফেইস করে বলছে “আহারে ইভু এক রাতের মধ্যে শাহরুখ স্যার তোর কাছে এসেও গেলো আবার চলেও গেলো। ইসস, ব্যাপারটা খুব খারাপ হলো”

ইনান ডাগর ডাগর চোখ করে ইভার কথাগুলো গিলছে। রাফি বা*ম মাজতে মাজতে দাড়িয়ে পরে আর বলে “তোরা আছিস ইভুর নাটকীয় মিথ্যা কাহিনি নিয়ে, এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছি ”

ইনান রাফির কথায় সাড়া দিয়ে বলে ” কিসের চিন্তা রাফি ভাই? ”

রাফি ফিল্মি ভাব নিয়ে হাটতে হাটতে বলছে ” আমার বাবা দু’টো বি এম ডব্লিউ কিনে দিয়েছিলো।গাড়ির চাবি গুলো হারিয়ে ফেলেছি। ”

সবাই রাফির কথায় হা করে আছে। সবাই একে অপরকে বলাবলি করছে “কিরে রাফির বাবার তো সি এন জি আছে শুনেছিলাম, সি এন জির কারখানা আছে জানতাম। রাতারাতি বি এম ডব্লিউ এলো কেমনে? মনে হয় এই শালা চাঁপা* মারতেছে”

এদিকে রাফি বলেই যাচ্ছে একের পর এক ” জানিস তোরা, তোদের আজ এ দিন দেখতে হতো না। যদি আমার বাবার বিল্ডিংটা তৈরি হতো। উফফ এসিটা কেউ বাড়িয়ে দাও,আমার আবার এসি ছাড়া থাকতে সমস্যা হয়। চিন্তা করিস না কাল আমার বাবার একটা উড়োজাহাজ ল্যান্ড করবে মাটিতে,তোদের নিয়ে ওটা করে আফগানিস্তান ট্যুর দেবো। আমার আবার রিকশাতে চড়ার অভ্যাস নেই। ”

ইনান নীরব দর্শকের মতো বসে আছে আর শুনছে রাফির কথা। ইনান মনে মনে বলছে ” ভাগ্যিস এখানে বিলগেটস নেই। নাহলে এই রাফি ভাবির চাঁপা শুনে সে দেড়মাস পাগল থাকতো ”

সবাই রাফির কথায় খুশিতে গদগদ করছে আর বলছে, “রাফি ভাই তুমি আসলেই একটা চিজ। বি এম ডব্লিউ থাকা স্বত্তেও কত সাধারণ ভাবে চলো ”

রাফি হেসে হেসে সবাইকে বলছে “বুঝতে হবে আমি একটা আগু*ন তাই নিভে থাকি ঠান্ডা হয়ে। নয়তো তোরা জ্বলে যাবি ”

ইনান মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে “এইতো আমি সিলিন্ডার আছি তো। আমি আপনার সব আগু*ন নিভিয়ে দেবো তানাফ স্যারকে দিয়ে। ”

তানাফের কথা ইমানের মুখে শুনতেই রাফি খানিকটা চুপসে যায়। রাফি আমতা আমতা করে বলে
” আরে ইনান ভাই আপনার তানাফ স্যার তো আমার ছোট ভাই। আগে প্রতিবার মহল্লার ছেলেগুলোর থেকে মার খেয়ে এসে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতো। আমি ও কী করবো ছোটভাই বলে কথা তাই গিয়ে সবার ঝগড়া মিটমাট করতাম। ”

ইনান মনে মনে বলে “ব্যাটা তুই বড়ই চাঁপাবাজ। দাড়া আমি রেকর্ড করি” ইনান ফোনে রেকর্ড চালু করে দেয়।

এদিকে রাফি বলেই চলেছে ” তানাফ সেই ছোটবেলায় হাফ প্যান্ট একটা পরতো। নাক দিয়ে লোল পরতো তখন, আমার কাছে আসতো আমাদের ব্যাচের ছেলের সাথে তাকে খেলায় নেওয়ার জন্য। এদিকে আমি তানাফ এর বড় ভাই ছিলাম তাই আবদার ফেলতেও পারছিলাম না। খুব কান্নাকাটি করতো খেলায় নেওয়ার জন্য। তাই পকেট থেকে বিশ টাকার নোট একটা ধরিয়ে দিতাম আর বলতাম, যা কিছু খেয়ে নে। পরে আবার আসিস আবার টাকা দেবোনে তোকে। ”

ইনান কথাগুলো কোনোভাবে হজম করে হাসি চেপে রেখেছে,ওদিকে সবাই রাফির কথায় থ বনে গেলো। দোয়া সবার মাঝখানে বলে ওঠলো “তাহলে ক্যাফে চিনলি না কেন মামা? ”

আরে ক্যাফে কীভাবে চিনবো? এখন তো বড় হয়ে গেছে। চেনার উপায় আছে আর? আজ যখন রুমে নিয়ে গেলো তখন হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নিজের পরিচয় দিলো (রাফি)

সবাই একে অপরের মুখ দেখছে৷ ইভা রাফিকে বলে ওঠে
“এই তোরা চুপ করবি? তোদের জন্য তোদের জিজু শাহরুখ কিন্তু রাগ করছে। তোরা একটু চুপ কর। তোদের জন্য শান্তিমতো কথাও বলতে পারছিনা তার সাথে ”

সবাই ইভার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলছে “সত্যি? শাহরুখ খান কল দিয়েছে? প্লিজ প্লিজ কথা বলিয়ে দে একবার। ”

ইভা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো,ফোনে কোনো কলের ছিটেফোঁটা নেই। ইভা বারান্দায় গিয়ে সকলকে দেখিয়ে বিড়বিড় করছে, সবাই ইভার পেছনে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে, ব্যাপারটা সত্য কি না মিথ্যা যাচাই করার জন্য। সবার সাথে সাথে ইনান ও পেছনে দাড়িয়ে আছে। অমনি ইভার ফোনে সিম কোম্পানি থেকে কল আসে।

সবাই হতভাগার মতো একে অপরের মুখ দেখছে। ইনান হেসে বলে
” কথার বলার সময় আবার কল আসে কীভাবে, এটা কি নতুন সিস্টেম হয়েছে নাকি নেটওয়ার্কের? ”

ইভা আমতা আমতা করে বলে ” আমার বয়ফ্রেন্ড শাহরুখ নতুন অপারেটর চালু করেছে, এমন সিস্টেম আমার মোবাইলে আছে৷ দামী মোবাইল শাহরুখ গিফট করেছে। তোমাদের মতো গরীব নাকি আমি? ”

ইনান ইভাকে বলে ” আরে কী বলেন? সত্যি? আমার ফোনেও এমন আপডেট আছে, আমার নানা বিল গেটস বলেছিলো এমন আপডেট একমাত্র আমার ফোনেই দিবে। আমি কিন্তু বিল গেটস এর নাতি বুঝলেন। আমি গরীব নয়। এইতো সেদিন আমার নানাকে বললাম, মেসির সাথে দেখা করবো। আমার নানা মেসিকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আসছে। তারপর মেসি আমাকে বললো,
‘এত কষ্ট করে নানাকে ইনফর্ম করার কী দরকার ছিলো, আমাকে ফোন দিলেই হতো। আমি খেলার মাঠ ছেড়ে দৌড়াতে দৌড়াতে প্লেনে উঠতাম আপনার জন্য’।
আমি মেসিকে বললাম, আরে সমস্যা নেই, ইনান এখন খুব বিজি চোর ধরতে। মেসি হাতজোড় করে বললো আমাকে, আপনি যখন ডাকবেন তখন’ই আমি আসবো, আপনার নানা বিল গেটস বড় ভালো মানুষ। চোর ধরে দেশকে বাঁচান। আমি ও খেলা বাদ দিয়ে আপনার সাথে সি আই ডি রুপে যোগ দিতে চাই।
আমি মেসির কথায় এতটা খুশি হলাম যে ফিফা তে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিয়েছিলাম। ”

ইনানের কথায় সকলের মুখে তালা পড়ে গেছে,সবাই এক এক করে রুমে এসে

চলবে।